Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

হায়ারোনিমাস বশ্চ: ওলন্দাজ রেনেসাঁর স্বর্গ-নরকের রূপকার এক অমর চিত্রশিল্পী

ইতালিতে রেনেসাঁ চলাকালীন সম্পূর্ণ নতুন উদ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পকলার অনাবিষ্কৃত নতু্ন দিগন্ত অনুসন্ধানের আন্দোলন শুরু হয়। প্রথম দিকে এই আন্দোলন শুধু ইতালিতে সীমাবদ্ধ থাকলেও পরে ইউরোপের অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ে এবং ইতিহাসের মোড় বদলে দেয়। ইউরোপের আল্পস পর্বতমালার উত্তরাঞ্চলে সংঘটিত আন্দোলন ‘নর্দার্ন রেনেসাঁ’ নামে খ্যাত, যা এ অঞ্চলের শিল্পকলাকে অভূতপূর্ব নান্দনিক স্তরে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। এ সময় হল্যান্ডে যে কয়েকজন চিত্রকর তাদের চিত্রকর্মের জন্য অমর হয়ে আছেন, তাদের মধ্যে হায়ারোনিমাস বশ্চ অন্যতম। 

হায়ারোনিমাস বশ্চের সম্ভাব্য প্রতিকৃতি
হায়ারোনিমাস বশ্চের সম্ভাব্য প্রতিকৃতি; Image source: muzaart.com

রেনেসাঁকালীন চিত্রশিল্পের কথা মনে হলে সবার আগে দ্য ভিঞ্চি, মাইকেল এঞ্জেলো বা সাঁন্দ্রো বতিচেল্লির অপার নান্দনিকতার কথা মনে হবে। সে তুলনায় হায়ারোনিমাস বশ্চ অনেকটাই ব্যতিক্রম। তার বাইবেলীয় ঘটনা নিয়ে আঁকা ছবিগুলো অদ্ভুত সব বিবরণে সমৃদ্ধ। মানুষ, জীবজন্তু, দানব, খ্রিস্টান সাধু-সন্ত, কাল্পনিক প্রাণী সব মিলিয়ে তার চিত্রকর্ম অন্যরকম আবহ তৈরি করে, যা এক অর্থে এমন এক সংবেদনের জন্ম দেয়, যা শুধুমাত্র নান্দনিকতা দিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়।

বশ্চ আনুমানিক ১৪৫০ খ্রিস্টাব্দে হল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। একেবারে প্রথমদি কের ওলন্দাজ চিত্রশিল্পীদের মধ্যে তিনি অন্যতম প্রধান। ‘দ্য টেম্পটেশন অব সেইন্ট অ্যান্থনি’, ‘দ্য মার্টায়ারডোম অব সেইন্ট জুলিয়া’, ‘দ্য গার্ডেন অব আর্থলি ডিলাইটস’, ‘দ্য লাস্ট জাজমেন্ট’, ‘টেরেরেস্ট্রিয়াল প্যারাডাইস’, ‘শিপ অব ফুলস’, ‘এলিগরি অব গ্লুটনি অ্যান্ড লাস্ট’, ‘ডেথ অ্যান্ড দ্য মাইজার’ প্রভৃতি তার বিখ্যাত ও আলোচিত ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এর মধ্যে ‘দ্য গার্ডেন অব আর্থলি ডিলাইটস’ শুধু অদ্ভুত নয়, এক কথায় অতুলনীয়।

বাইবেলীয় সৃষ্টিতত্ত্ব, স্বর্গ-নরকের সুখ ও শাস্তির অভূতপূর্ব বর্ণনা, অনন্যসাধারণ অঙ্কনশৈলী ও গভীর অন্তর্দৃষ্টির জন্য এই ছবিটি আজ অবধি ব্যাপক আলোচিত হয়েছে। এর বিষয়বস্তুর আড়ালে থাকা বাস্তবতা নিয়ে জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। অনেক চিত্রসমালোচক এতে সিক্রেট সোসাইটি কাল্টের চিহ্ন দেখেছেন, আবার অনেকে পুরনো ওলন্দাজ লোককথার ছাপ পেয়েছেন। তিনি নেশায় বুঁদ হয়ে ছবি আঁকতেন- এমন কথাও প্রচলিত আছে তার নামে। আনুমানিক ১৫১৬ সালে এই শিল্পী মৃত্যুবরণ করেন।

দ্য গার্ডেন অব আর্থলি ডিলাইটস
দ্য গার্ডেন অব আর্থলি ডিলাইটস; Image source: mymodernmet.com

খুব কম শিল্পীর জীবনই হায়ারোনিমাস বশ্চের মতো রহস্যে ঢাকা। ধারণা করা হয়, শিল্পী জীবনের একপর্যায়ে তিনি অভাবিত জনপ্রিয়তা উপভোগ করেছিলেন। হল্যান্ড, স্পেন, অস্ট্রিয়া ও ইতালির শিল্পকলা সমঝদারগণ তার ছবির গুণগ্রাহী ছিলেন। কিন্তু তারপরও ইতিহাসবিদগণ তার সম্পর্কে সামান্যই জেনেছেন। বশ্চ কোনো ডায়েরি, চিঠি বা অন্য কোনো দলিল রেখে যাননি।

চিত্র সমালোচকগণ বলেন, বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন সংগ্রহশালায় তার ২৫টি পেইন্টিং ও ২০টি ড্রয়িং রয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে, বশ্চ কখনও তার আঁকা ছবিতে তারিখ দিতেন না। ফলে ছবি আঁকার সময়কাল বা তার তৎকালীন বয়স একরকম অন্ধকারেই থেকে গেছে। জানা যায়, তিনি সম্ভবত হল্যান্ডের হার্টোগেন বশ্চ মিউনিসিপ্যালিটিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতামহ, ঊর্ধ্বতন পিতামহ এবং বংশের অনেকেই চিত্রশিল্পী ছিলেন।

বশ্চের পিতা এন্তোনিয়াস ভন আকেন ‘ব্রাদারহুড অব আওয়ার ব্লেসড লেডি’ নামে এক খ্রিস্টান সংঘের শিল্প উপদেষ্টা ছিলেন। সম্ভবত ১৪৮০ সালের দিকে বশ্চ একই সংঘে যোগ দেন। একই বা কাছাকাছি সময়ে তিনি অ্যালিয়েট গ্যজেয়ার্ট ভ্যান ডেন মার্ভেন নামক এক ধনী সওদাগরের কন্যাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর তারা ওইরস্কটে বসবাস করতে থাকেন।

‘ব্রাদারহুড অব আওয়ার ব্লেসড লেডি’র রেকর্ড থেকে জানা যায়, হায়ারোনিমাস বশ্চ ১৫১৬ সালে দেহত্যাগ করেন। ‘চার্চ অব সেইন্ট জন’ এ তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এই বিখ্যাত শিল্পীর জীবনের মতো তার নামও রহস্যাবৃত। হায়ারোনিমাস, জেরোনিমাস, জেরোয়েন, জেরোম এমন অনেক নামেই তাকে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। ১৬০৪ সালে ওলন্দাজ শিল্প ইতিহাসবিদ ও বশ্চের প্রথম জীবনীকার ক্যারেল ভ্যান মেন্ডার ‘অ্যারোনিমাস’ নাম ব্যবহার করেন। ষোড়শ শতকের শিল্প সমালোচক হোসে দ্য সিগুয়েনজা এই শিল্পীর নাম ‘জেরোনিমো’ ব্যবহার করেন। নামের প্রথমাংশের মতো শেষাংশও রহস্যাবৃত। ধারণা করা হয়, তার জন্মস্থান হার্টোগেনবশ্চের শেষাংশ তার নামের সাথে যুক্ত হয়ে প্রচারিত হয়েছিলো। ‘ব্রাদারহুড অব আওয়ার ব্লেসড লেডি’ অনুযায়ী, তার লিপিবদ্ধ নাম ছিলো অ্যান্থনিসেন ভান অ্যাকেন।

প্রায় ৫০০ বছর আগে হায়ারোনিমাস বশ্চ মারা গেলেও তার আঁকা একটি ছবির কারণে সমসাময়িক গায়ক, শিল্পী, লেখক, কোরিওগ্রাফার ও ডিজাইনাররা আজও নতুন সৃষ্টির খোরাক পান। হ্যাঁ, তা হচ্ছে এক ও অদ্বিতীয় ‘দ্য গার্ডেন অব আর্থলি ডিলাইটস’। এর বিষয়বস্তু ও শিল্পশৈলীর বৈশিষ্ট্য আগেই বলা হয়েছে। ১৯৮৯ সালে ব্রিটিশ রক ব্যান্ড ‘এক্সটিসি’ তাদের নতুন এলবাম ‘অরেঞ্জস অ্যান্ড লেমনস’ এর জন্য ‘গার্ডেন অব আর্থলি ডিলাইটস’ নামে একটি ট্র্যাক রেকর্ড করে।

২০১২ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত ফ্যাশন প্রতিষ্ঠান ‘ক্রিশ্চিয়ান ডিওর’ এর ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালনকারী র‍্যাফ সিমোনস ২০১৫ সালে এই পেইন্টিংটির আলোকে একটি সম্পূর্ণ ফ্যাশন কালেকশন প্রস্তুত করেন। কোরিওগ্রাফার ও পরিচালক মার্থা ক্লার্ক এই অমূল্য পেইন্টিংটির উপরে একটি থিয়েটার প্রোডাকশন তৈরি করেন। ড. মার্টিন্স বশ্চের আঁকা স্বর্গ-নরকের ছবি ডিজাইন হিসেবে ব্যাগ, বুটজুতা আর শুতে ব্যবহার করেছেন। ক্রাইম ফিকশন লেখক মাইকেল কনেলি তার এক ডিটেকটিভ চরিত্রের নাম রেখেছিলেন হ্যারোনিমাস হ্যারি বশ্চ।

ড. মার্টিনস বশ্চের আঁকা স্বর্গ নরকের ছবি ডিজাইন হিসেবে ব্যাগ, বুটজুতা আর শু তে ব্যবহার করেছেন
ড. মার্টিনস বশ্চের আঁকা স্বর্গ নরকের ছবি ডিজাইন হিসেবে ব্যাগ, বুটজুতা আর শুতে ব্যবহার করেছেন; Image source: beautifuldecay.com

‘দ্য গার্ডেন অব আর্থলি ডিলাইটস’ ছাড়াও বশ্চ ‘দ্য লাস্ট জাজমেন্ট’ ও ‘দ্য হেওয়াইন ট্রিপটিক’ নামে কাছাকাছি আঙ্গিকের দুটো উল্লেখযোগ্য ছবি এঁকেছিলেন। শিল্পের দিক থেকে ‘আর্থলি ডিলাইটে’র সমতু্ল্য না হলেও বিষয়বস্তু ফুটিয়ে তোলার ভঙ্গিতে তিনটি ছবিতেই অনেক মিল রয়েছে। ছবিগুলোতে মানবজীবনের সামগ্রিক অভিজ্ঞতার প্রতীকী ব্যঞ্জনা; পার্থিব, স্বর্গীয় ও নারকীয় দৃশ্যের মনোরম এবং ভয়াবহতা অদ্ভুতভাবে পরিস্ফুট হয়ে উঠেছে। কল্পনার এমন অসামান্য চিত্রায়নকে সম্ভব করে তুলবার কারণেই হয়তো এর আঙ্গিক ও বিষয়ের উৎস নিয়ে জল্পনা কল্পনার শেষ নেই ।

দ্য লাস্ট জাজমেন্ট
দ্য লাস্ট জাজমেন্ট; Image source: eclecticlight.co

ধারণা করা হয়, খ্রিস্ট ধর্মীয় উৎসাহে রচিত এই ছবিগুলো সেসময় বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলো। সম্ভবত ১৫১৭ সালে ‘গার্ডেন অব আর্থলি ডিলাইটস’ ব্রাসেলসের রাজপ্রাসাদে প্রদর্শিত হয়েছিলো। দুঃখজনক হলেও সত্য, তার বেশ কিছু পেইন্টিং কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। তবে স্পেনের দ্বিতীয় ফিলিপের মতো ক্ষমতাবান ও ধনী শিল্পরসিকরা উদ্যোগ নেওয়ায় অনেক ছবি মাদ্রিদের জাদুঘরে স্থান পেয়েছে। বশ্চের চিত্রকর্ম বর্তমানে ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল গ্যালারি অব ওয়াশিংটন, নিউ ইয়র্কের মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্ট ও জগদ্বিখ্যাত লুভর মিউজিয়ামের শোভা বাড়াচ্ছে।

‘দ্য টেম্পটেশন অব সেইন্ট এন্থনি’ ছবিটির প্রকৃত চিত্রকরের বিষয় নিয়ে একবার বিশেষজ্ঞ মহলে সন্দেহের উদ্রেক হয়েছিলো। অনেকে ধারণা করেছিলেন, এটি বশ্চের কোনো শিষ্যের আঁকা হয়ে থাকবে। তবে ২০১৬ সালে বিশেষজ্ঞদের একটি দল অনেক গবেষণার পর নিশ্চিত হন, বশ্চই ছবিটির প্রকৃত চিত্রকর। ‘বশ্চ রিসার্চ অ্যান্ড কনজার্ভেশন প্রজেক্ট’ নামের সংগঠন ছবিটির ব্রাশ স্ট্রোকের বৈচিত্র্য ও অন্যান্য বৈশিষ্ট্য দেখে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন।

দ্য টেম্পটেশন অব সেইন্ট এন্থনি
দ্য টেম্পটেশন অব সেইন্ট এন্থনি; Image source: colourlex.com

মজার ঘটনা হচ্ছে, এই অমিত প্রতিভাবান শিল্পীর কোনো নির্ভরযোগ্য প্রতিকৃতি পাওয়া যায় না। তবে অনেকে বলে থাকেন, তার ছবির ভেতরেই নিজের প্রতিকৃতির ছাপ রেখে গেছেন। শিল্প ইতিহাসবিদ হ্যান্স বেল্টিং মনে করেন, ‘দ্য গার্ডেন অব আর্থলি ডিলাইটস’ ছবিখানির নরকের দৃশ্যে যে মুখাবয়ব দর্শকের চোখে পড়ে, তা বশ্চের প্রতিকৃতির ভিন্ন উপস্থাপন ছাড়া আর কিছুই নয়।

কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় হচ্ছে, এই ছবিটির অনাবিষ্কৃত অনেক বিষয় এখনও বিস্ময় জাগায়। ২০১৪ সালে অ্যামেলিয়া নামক একজন ব্লগার ছবিটির নরকের দৃশ্যে এক অদ্ভুত ব্যাপার খেয়াল করেন। তিনি দেখতে পান, নরকে শাস্তিপ্রাপ্ত একজন পাপীর শরীরের পেছনের অংশে মিউজিক্যাল নোটেশনের মতো কিছু অক্ষরের সারি মুদ্রিত আছে। তিনি এই নোটেশন বিবর্ধিত করে এর পাঠোদ্ধার করেন এবং আধুনিক সঙ্গীতের ছাঁচে ফেলে ‘সিক্স হানড্রেড ইয়ারস ওল্ড বাট সং ফ্রম হেল’ নামে একটি কম্পোজিশন তৈরি করেন!

এই কালজয়ী শিল্পীর স্মৃতি চির জাগরুক রাখতে ভক্ত, শিল্পরসিক ও অনুরাগীরা নানা আয়োজন করে থাকেন। এর মধ্যে ‘দ্য অ্যানুয়াল বশ্চ প্যারেড’ নামের একটি নৌভ্রমণ উৎসব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সাধারণত প্রতি বছর জুন মাসে হল্যান্ডের ডোমেল নদীতে এটি অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। হায়ারোনিমাস বশ্চের চিত্রকলার থিম অনুকরণে নির্মিত নৌযানের আকর্ষণে অনেক উৎসুক মানুষ নদীর তীরে সমাবেত হন।

This article is about life and works of world famous Dutch painter Hieronymus Bosch.

Hieronymus Bosch was an early Dutch painter. He was also one of the early pioneers of northern renaissance. 

References:

01. http://mentalfloss.com/article/83945/8-bizarre-facts-about-hieronymous-bosch

02. https://www.biography.com/people/hieronymus-bosch-9220497

03. http://www.anothermag.com/art-photography/8600/ten-things-you-might-not-know-about-hieronymus-bosch

 

Related Articles