দলের ১১ নাম্বার ব্যাটসম্যান ব্যাট হাতে ক্রিজে আসেন দলের রান সংখ্যা কিছু রান যোগ করতে কিংবা অপর প্রান্তে থাকা ব্যাটসম্যানকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য। তখন তাদের মূল কাজ দাঁড়ায় উইকেটে টিকে থাকা। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে শ্রীলঙ্কার ঐতিহাসিক এক উইকেটের জয়ে কুশল পেরেরার সাথে জুটি বেঁধে দলের জয়ে অবদান রেখেছিলেন ১১ নাম্বার ব্যাটসম্যান বিশ্ব ফার্নান্ডো। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ১১ নাম্বার ব্যাটসম্যানের এমন অবদান রাখার ঘটনা বহুবার ঘটেছে। ১১ নাম্বার ব্যাটসম্যানের দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলার ঘটনার সাক্ষী হয়েও আছে ক্রিকেট বিশ্ব। এখন পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটে ১১ নাম্বার ব্যাটসম্যানরা ১১ বার দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলার কীর্তি গড়েছেন।
নতুন দুই টেস্ট খেলুড়ে দেশ আফগানিস্তান বনাম আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার প্রথম টেস্ট ম্যাচেও এমন ঘটনা ঘটেছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করতে নামা আয়ারল্যান্ড ১৭২ রানে সবক”টি উইকেট হারায়। তাদের পক্ষে সর্বোচ্চ রান করেন ১১ নাম্বার ব্যাটসম্যান টিম মুরতাঘ। টেস্ট ক্রিকেটে ১১ নাম্বার ব্যাটসম্যানের খেলা দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের ইনিংসগুলো সম্পর্কে জেনে আসা যাক।
১. ফ্রেড স্পফোর্থ – ৫০ রান
১৮৮৫ সালের ২১শে মার্চ, মেলবোর্নে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয় অস্ট্রেলিয়া। টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামা স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া ৯৯ রানে নয় উইকেট হারিয়ে বসে। নয় উইকেট হারানোর পর ক্রিজে আসেন ১১ নাম্বার ব্যাটসম্যান ফ্রেড স্পফোর্থ। তিনি শেষ উইকেট জুটিতে হিউ ট্রাম্বলের সাথে ৬৪ রান যোগ করে দলকে ১৬৩ রানের সংগ্রহ এনে দেন। ৬৪ রানের জুটিতে স্পফোর্থ একাই করেন ৫০ রান, যা দলের পক্ষের সর্বোচ্চ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের ইনিংস এসেছে হিউ ট্রাম্বলের ব্যাট থেকে। তিনি ৩৪ রানে অপরাজিত ছিলেন।
কোনো ১১ নাম্বার ব্যাটসম্যানের দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলার ঘটনা স্পফোর্থের বদৌলতে ক্রিকেট বিশ্ব দেখেছিলো। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যর্থ হয়েছিলেন। প্রথম ইনিংসে ১৬৩ রান সংগ্রহ করার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ১২৫ রানে গুটিয়ে যায়। ইংল্যান্ড তাদের প্রথম ইনিংসে ৩৮৬ রান সংগ্রহ করেছিল এবং শেষপর্যন্ত ইনিংস ও ৯৮ রানের ব্যবধানে জয় তুলে নেয়।
২. টম ম্যাককিবিন – ১৬
১৮৯৬ সালের ১০ই আগস্ট, লন্ডনে সফরকারী অস্ট্রেলিয়া মুখোমুখি হয় ডব্লিউ. জি. গ্রেসের ইংল্যান্ড। ম্যাচে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইংল্যান্ড। ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ড ১৪৫ রান সংগ্রহ করেছিলো। জবাবে অস্ট্রেলিয়া উদ্বোধনী উইকেট জুটিতে ৭৫ রান যোগ করার পরেও মাত্র ১১৯ রানে সবক’টি উইকেট হারিয়েছিলো।
ইংল্যান্ড তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি। মাত্র ৮৪ রানে গুটিয়ে যায়। যার ফলে জয়ের জন্য অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন পড়ে ১১১ রানের। এই রানই অস্ট্রেলিয়ার জন্য পাহাড়সম হয়ে পড়ে। ইংল্যান্ডের দুই বোলার ববি পিল এবং জে.টি হার্নের ধ্বংসাত্মক বোলিংয়ে মাত্র ৪৪ রানে সবক’টি উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। তাদের রান সংখ্যা আরও কম হতে পারতো, যদি না শেষ উইকেট জুটিতে হিউ ট্রাম্বল এবং টম ম্যাককিবিন ১৯ রান যোগ করতেন। একপর্যায়ে অস্ট্রেলিয়ার সংগ্রহ ছিলো নয় উইকেটে ২৫ রান। সেখান থেকে ১১ নাম্বার ব্যাটসম্যান ম্যাককিবিন ১৬ রানের ইনিংস খেলে দলকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচাতে চেয়েছিলেন। তিনিই অস্ট্রেলিয়ার একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে ঐ ইনিংসে দুই সংখ্যার রান করেছিলেন।
৩. বার্ট ভগলার – ৬২* রান।
১৯০৬ সালের ৩০শে মার্চ, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কেপটাউনে সিরিজের ৫ম এবং শেষ টেস্ট ম্যাচে মুখোমুখি হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। সিরিজ শুরু হওয়ার আগে দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে বাজি ধরার লোক খুব কমই ছিলো। কারণ তখন দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে শক্তির দিক থেকে ইংল্যান্ড বেশ এগিয়ে ছিলো। সিরিজের প্রথম টেস্টে নাটকীয়ভাবে এক উইকেটে জয় পাওয়ার বদলে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। দ্বিতীয় টেস্টে নয় উইকেটে এবং তৃতীয় টেস্টে ২৪৩ রানের জয় তুলে নিয়ে সিরিজ জিতে নিয়েছিল তারা। সিরিজ ৪র্থ টেস্টে চার উইকেটে পরাজিত হওয়ার পর ৩০শে মার্চ কেপটাউনে সিরিজের শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলতে নেমেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।
সফরকারী ইংল্যান্ড টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ১৮৭ রান সংগ্রহ করেছিল। জবাবে ৮৭ রানে পাঁচ উইকেট পড়ে গেলেও জর্জ ফকনারে ৪৫ রান এবং স্নুকের ৬০ রানের উপর বড় করে লিড নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। দলীয় ২৩৯ রানে ৯ম উইকেটের পতন ঘটলে ক্রিজে আসেন ১১ নাম্বার ব্যাটসম্যান বার্ট ভগলার। তিনি শেষ উইকেট জুটিতে অধিনায়ক পার্সি শেরওয়েলের সাথে ৯৪ রানের জুটি বেঁধেছিলেন। আউট হওয়ার আগে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬২ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। তার এই ইনিংসের কল্যাণে দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংসে ৩৩৩ রান তোলে এবং ইংল্যান্ডকে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩০ রানে গুটিয়ে দিয়ে ইনিংস ও ১৬ রানের ব্যবধানে জয় পায়।
৪. আসিফ মাসুদ – ৩০* রান
১৯৭৫ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি, লাহোরে সিরিজে প্রথম টেস্টে স্বাগতিক পাকিস্তানের বিপক্ষে টসে জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েডের সিদ্ধান্তকে যথার্থ প্রমাণ করেন অ্যান্ডি রবার্টস। তার নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে পাকিস্তানের টপ-অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা বড় ইনিংস খেলতে পারেনি। পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা উইকেটে থিতু হতে পারলেও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। তাদের প্রথম সারির আট ব্যাটসম্যানের মধ্যের সাতজন দুই অংকের রান করেছিলেন।
টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার দিনে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রান করেছিলেন ১১ নাম্বার ব্যাটসম্যান আসিফ মাসুদ। তিনি যখন ক্রিজে আসেন তখন পাকিস্তানের সংগ্রহ নয় উইকেটে ১৪২ রান। তিনি এবং ইনতিখাব আলম শেষ উইকেট জুটিতে ৫৭ রান যোগ করে দলকে ১৯৯ রানের পুঁজি এনে দিয়েছিলেন। তার ব্যাট থেকে এসেছিলো দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩০ রানের ইনিংস।
পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসে ১৯৯ রানের জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজও প্রথম ইনিংসে বড় সংগ্রহ দাঁড় করাতে পারেনি। তারা সবক’টি উইকেট হারিয়ে ২১৪ রান সংগ্রহ করে। ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে দুই দলের ব্যাটসম্যানরাই জ্বলে ওঠে। পাকিস্তান সাত উইকেটে ৩৭৩ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে। জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ চার উইকেট ২৫৮ রান তোলার পর ম্যাচ ড্র ঘোষণা করা হয়।
৫. জয়ন্ত আমেরাসিংহে – ৩৪ রান
১৯৮৪ সালের ৯ই মার্চ, ক্যান্ডিতে সিরিজের প্রথম টেস্টে নিউ জিল্যান্ডের মুখোমুখি হয় শ্রীলঙ্কা। সফরকারী নিউ জিল্যান্ড টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ব্যাট করতে নেমে উদ্বোধনী উইকেট জুটিতে ৯৭ রান যোগ করেন নিউ জিল্যান্ডের ওপেনাররা। ওপেনারদের বিদায়ের পর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে নিউ জিল্যান্ড। একাদশের প্রথম আট ব্যাটসম্যানের সবাই বিশোর্ধ্ব রান করলেও অর্ধশত রানের ইনিংস খেলেছেন মাত্র একজন, যার দরুন নিউ জিল্যান্ডের প্রথম ইনিংস থেমে যায় ২৭৬ রানে।
নিউ জিল্যান্ডের প্রথম ইনিংসে ২৭৬ রানের জবাবে শুরু থেকেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে শ্রীলঙ্কা। দলের আট ব্যাটসম্যান দুই অংকের রান করলেও শ্রীলঙ্কার ইনিংস থেমে যায় ২১৫ রানে। একপর্যায়ে আট উইকেটে ১৩২ রান এবং নয় উইকেটে ১৫৫ রান ছিলো শ্রীলঙ্কার। সেখান থেকে শেষ উইকেট জুটিতে ৬০ রান যোগ করেছিলেন জয়ন্ত আমেরাসিংহে এবং ভিনোথেন জন। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৩৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন ১১ নাম্বার ব্যাটসম্যান জয়ন্ত আমেরাসিংহে।
দ্বিতীয় ইনিংসে নিউ জিল্যান্ড আট উইকেটে ২০১ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করলে শ্রীলঙ্কার সামনের জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৬৩ রানের। চতুর্থ ইনিংসে জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে রিচার্ড হ্যাডলি এবং স্টিফেন বুকের বোলিং তোপের মুখে পড়ে মাত্র ১৮ রানে ছয় উইকেট হারিয়ে বসে শ্রীলঙ্কা। অর্জুনা রানাতুঙ্গার ৪৭ বলে ৫১ রানের ইনিংস ছাড়া আর কেউই নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। ফলে মাত্র ৯৭ রানে সবক’টি উইকেট হারিয়ে ১৬৫ রানে পরাজিত হয় শ্রীলঙ্কা।
৬. তালহা জুবায়ের – ৩১ রান
২০০৪ সালের ১৭ই ডিসেম্বর। চট্টগ্রামে ভারতের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে রাহুল দ্রাবিড়ের ১৬০ রান, গৌতম গম্ভীরের ১৩৯ রানের উপর ভর করে ৫৪০ রান সংগ্রহ করেছিল ভারত। জবাবে মোহাম্মদ আশরাফুলের অপরাজিত ১৫৮ রানের ইনিংসের সত্ত্বেও বাংলাদেশ ৩৩৩ রানে সবক’টি উইকেট হারিয়ে ফলো-অনে পড়ে।
ফলো-অনে পড়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ইরফান পাঠানের বিধ্বংসী স্পেলে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। মাশরাফি বিন মর্তুজা ৯ম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হয়ে যখন সাজঘরে ফেরেন, তখন বাংলাদেশের সংগ্রহ মাত্র ৮৪ রান। শেষ উইকেট জুটিতে নাজমুল হোসেন এবং তালহা জুবায়ের ৪০ রান যোগ করে দলকে একশোর নিচে অল আউট হওয়ার লজ্জা থেকে বাঁচান। ৪০ রানের জুটিতে তালহা জুবায়েরের সংগ্রহ ছিল ২৪ বলে ৩১ রান, যা ছিল বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত সংগ্রহ।
৭. স্টিভ হার্মিসন – ৪২ রান
২০০৫ সালের ২রা জানুয়ারি, কেপটাউনে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে মাঠে নামে ইংল্যান্ড। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে জ্যাক ক্যালিসের ১৪৯ রানের দুর্দান্ত ইনিংসের উপর ভর করে দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৪১ রান সংগ্রহ করে। জবাবে ইংল্যান্ড মাত্র ১৬৩ রানে অল আউট হয়ে ফলো-অনে পড়ে। ইংল্যান্ডকে ফলো-অনে না পাঠিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে স্বাগতিকরা। দক্ষিণ আফ্রিকার লক্ষ্য ছিলো ইংল্যান্ডকে একেবারে ম্যাচ থেকে ছিটকে দেওয়া। সেই পরিকল্পনায় তারা সফল হয়েছিলো। দ্বিতীয় ইনিংসে আট উইকেটে যখন ২২২ রান তুলে ইনিংস ঘোষণা করে তখন তাদের লিড দাঁড়ায় ঠিক ৫০০ রানে।
দক্ষিণ আফ্রিকার দেওয়া ৫০১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে ইংল্যান্ড। অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস, রবার্ট কি, মাইকেল ভন এবং ফ্লিনটপরা উইকেটে সেট হওয়ার পরেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ফলে ২৫৩ রান তুলতে নয় উইকেট হারিয়ে পরাজয়ের প্রহর গুনছিল ইংল্যান্ড। ৯ম উইকেটের পতন ঘটার পর ক্রিজে আসেন স্টিভ হার্মিসন। তিনি শেষ উইকেট জুটিতে ম্যাথু হগার্ডের সাথে ৫১ রান যোগ করেছিলেন। যার মধ্যে তার ব্যাট থেকেই এসেছিল ৪২ রান। এনটিনির বলে আউট হওয়ার আগে ৪২ বলে সাতটি চার এবং একটি ছয়ের মারে তিনি দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪২ রানের ইনিংস খেলেন। তার এই ইনিংসটি শুধুমাত্র হারের ব্যবধান কমিয়ে ১৯৬ রান করতে সাহায্য করেছিল।
৮. নাথান লায়ন – ১৪ রান
২০১১ সালের ৯ই নভেম্বর, কেপটাউনে সিরিজের প্রথম টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ পেয়ে মাইকেল ক্লার্কের অনবদ্য ১৫১ রানের ইনিংসের উপর ভর অস্ট্রেলিয়া ২৮৪ রান সংগ্রহ করে। ২৮৪ রানের সংগ্রহ নিয়েই অস্ট্রেলিয়াকে প্রায় ফলো-অনে ফেলে দিচ্ছিল অস্ট্রেলিয়া। শেন ওয়াটসন এবং রায়ান হ্যারিসের বোলিং তোপের মুখে পড়ে মাত্র ৯৬ রানে গুটিয়ে যায় স্বাগতিকদের প্রথম ইনিংস।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়াও ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে। ফিল্যান্ডার, মরনে মরকেল এবং স্টেইনের বোলিং তোপের মুখে পড়ে মাত্র ২১ রানে নয় উইকেট হারিয়ে সবচেয়ে কম রানে অল আউট হওয়ার লজ্জার রেকর্ড গড়ার সম্মুখীন হয়েছিলো তারা। তাদেরকে বড় ধরনের লজ্জার হাত থেকে বাঁচান নাথান লায়ন এবং পিটার সিডল। তারা শেষ উইকেট জুটিতে ২৬ রান যোগ করেছিলেন। শেষ উইকেটে ২৬ রানের জুটি গড়ার পরও অস্ট্রেলিয়া ৪৭ রানে সবকটি উইকেট হারায়। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ১৪ রান করেছিলেন ১১ নাম্বার ব্যাটসম্যান নাথান লায়ন। প্রথম ইনিংসে ৯৬ রানে অল আউট হয়ে ১৮৮ রানে পিছিয়ে থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা শেষপর্যন্ত কেপটাউন টেস্টে আট উইকেটে জয় পেয়েছিল।
৯. অ্যাস্টন আগার – ৯৮ রান
অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটে অ্যাস্টন আগার বোলিং অলরাউন্ডার হিসাবে খেলেন। বাঁহাতি স্পিন বোলিংয়ের পাশাপাশি লোয়ার মিডল-অর্ডারে বেশ কার্যকরী ব্যাটসম্যান তিনি। তবে অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে নিজের অভিষেক টেস্ট ইনিংসে ব্যাট করেছেন ১১ নাম্বারে। শেষ ব্যাটসম্যান হিসাবে ব্যাট করতে নেমে তিনি নিজের জাত চেনান।
২০১৩ সালের ১০ই জুলাই, নটিংহ্যামে অ্যাশেজের প্রথম টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামে অস্ট্রেলিয়া। টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া ইংল্যান্ড তাদের প্রথম ইনিংসে ২১৫ রান সংগ্রহ করেছিল। জবাবে জেমস অ্যান্ডারসনের বোলিং তোপের মুখে পড়ে মাত্র ১১৭ রানে নয় উইকেট হারিয়ে বসে অস্ট্রেলিয়া। এরপর দলের শেষ ব্যাটসম্যান হিসাবে ব্যাট করতে নামেন অভিষিক্ত অ্যাস্টন আগার। তিনি শেষ উইকেট জুটিতে ফিল হিউজেসের সাথে ১৬৩ রান যোগ করেছিলেন। এর মধ্যে তার অবদান ১০১ বলে ১২টি চার এবং দুটি ছয়ের মারে ৯৮। মাত্র দুই রানের জন্য সেঞ্চুরি থেকে বঞ্চিত হলেও দলকে ২৮০ রানের পুঁজি এনে দিয়েছিলেন তিনি।
নটিংহ্যামে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের এই ম্যাচে ইংল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংসে ইয়ান বেলের ১০৯ রান এবং স্টুয়ার্ট ব্রডের ৬৫ রানের উপর ভর করে ৩৭৫ রান সংগ্রহ করেছিল। ফলে অস্ট্রেলিয়ার সামনে জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩১১ রানের। এই লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দুই ওপেনার উদ্বোধনী উইকেট জুটিতে ৮৪ রান তোলেন। দুই ওপেনার দ্রুত বিদায় নেওয়ার পরও একপর্যায়ে তিন উইকেটে ১৬১ রান ছিলো অস্ট্রেলিয়ার। ১৬১ রান থেকে তিন রান যোগ করতে আরও তিন ব্যাটসম্যানের উইকেট হারায় তারা। শেষ ব্যাটসম্যান হিসাবে জেমস প্যাটিনসন যখন ক্রিজে আসেন তখন দলের সংগ্রহ ছিলো ২৩১ রান। তিনি এসে জুটি বাঁধেন উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান হ্যাডিনের সাথে। এই দুজন অস্ট্রেলিয়াকে প্রায় জিতিয়েই দিচ্ছিল। জয় থেকে মাত্র ১৪ রান দূরে থাকতে ৭১ রান করা হ্যাডিন, অ্যান্ডারসনের বলে আউট হলে অস্ট্রেলিয়ার স্বপ্ন ভাঙে।
১০. শেন শিলিংফোর্ড – ৫৩* রান
২০১৪ সালের ৮ই জুন, কিংস্টনে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে মাঠে নামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে কেন উইলিয়ামসন এবং জেমস নেশামের শতকের পাশাপাশি রস টেইলর, টম লাথাম ও বিজে ওয়াটলিংয়ের অর্ধশতকের উপর ভর করে সাত উইকেটে ৫০৮ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে। জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাদের প্রথম ইনিংসে মাত্র ২৬২ রানে গুটিয়ে গিয়ে ফলো-অনে পড়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ফলো-অনে না পাঠিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে নিউ জিল্যান্ড আট উইকেটে ১৫৬ রান করার পর ইনিংস ঘোষণা করে।
প্রথম ইনিংসের লিডসহ ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জয়ের জন্য ৪০৩ রানের টার্গেট দেয় ব্ল্যাক-ক্যাপসরা। জবাবে উইন্ডিজ ব্যাটসম্যানরা দুই স্পিনার মার্ক ক্রেইগ এবং ইশ সোধির সামনের অসহায় আত্মসমর্পণ করে। স্কোর বোর্ডে ১৩৪ রান জমা করতেই নয় উইকেট হারিয়ে পরাজয়ের অপেক্ষা করেছিল তারা। তখন ব্যাট হাতে ক্রিজে এসে নিজের মতো করে ধুন্ধুমার ব্যাটিং করতে থাকেন শেন শিলিংফোর্ড। ১১ নাম্বারে নেমে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৩ রান করে অপরাজিত ছিলেন। তিনি মাত্র ২৯ বলে তিনটি চার এবং পাঁচটি ছয়ের মারে ৫৩ রান করে পরাজয়ের ব্যবধান কমিয়ে ১৮৬ রান করেছিলেন।
১১. টিম মুরতাঘ – ৫৪* রান
১১ নাম্বার ব্যাটসম্যান হিসেবে দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলার সর্বশেষ কীর্তি গড়েছেন আয়ারল্যান্ডের ১১ নাম্বার ব্যাটসম্যান টিম মুরতাঘ। আয়ারল্যান্ড বনাম আফগানিস্তানের ঐতিহাসিক টেস্ট ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে আফগানিস্তানের স্পিনারদের সামনে আয়ারল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। মাত্র ৮৫ রান তুলতেই নয় উইকেট হারিয়ে একশোরর নিচে অল আউট হওয়ার সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিল। দলের বিপর্যয়ের মুখে ব্যাট করতে নেমে দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছিলেন ১১ নাম্বার ব্যাটসম্যান টিম মুরতাঘ। তিনি এবং জর্জ ডকরেল শেষ উইকেট জুটিতে ৮৭ রান যোগ করে দলকে ১৭২ রানের পুঁজি এনে দেন। ৮৭ রানের জুটিতে তার ব্যাট থেকে আসে অপরাজিত ৫৪ রান। প্রথম ইনিংসে ৫৪ রানের ইনিংস খেলার পর দ্বিতীয় ইনিংসেও প্রতিরোধ গড়েছিলেন মুরতাঘ। এবার জেমস ক্যামেরুনের সাথে শেষ উইকেট জুটিতে ৫৮ রান যোগ করেন তিনি। যার মধ্যে তার অবদান ২৭ রান।