আচ্ছা, কার্লোস ব্র্যাথওয়েট এখন ঠিক কোথায় আছেন? রোসো, রোসো! হুট করে প্রশ্নটা করলাম বলেই বিচলিত হয়ে যেতে হবে, এমন তো কোনো কথা নেই। গুগল নামের আশ্চর্যপ্রদীপ যতই বলুক, তিনি এখন ক্যারিবীয় কোনো সাগরপাড়ে বসে হাওয়া খেয়ে বেড়াচ্ছেন, তৎক্ষণাৎই আপনার হৃদযন্ত্র তো বিদ্রোহ করে বলে বসছে, ‘আরে না, তিনি তো এই হৃদয়ে আছেন!’ কলকাতার নন্দনকাননে সেই যে বছরচারেক আগে রূপকথাসম এক ফাইনাল জিতিয়েছিলেন, এরপর থেকে তার জায়গা তো ওখানটাতেই।
সে ম্যাচের আগে টি-২০ ম্যাচে মাঠে নেমেছিলেন সাতবার, ওয়ানডে ম্যাচেও তাই। টি-২০ তে ব্যাটিং পাননি তিন ম্যাচেই, আর সাত ওয়ানডেতে তো পাননি কোনোটিতেই। যে কয়বার ব্যাটিং জুটেছিল, তাতেও নেমেছিলেন সাত নম্বরের পরে। সে ম্যাচের পরেও যে নিজেকে একেবারে আমূল বদলে ফেলতে পেরেছিলেন, ব্যাটে বইয়ে দিয়েছিলেন রানের বন্যা, বল হাতে হয়ে উঠেছিলেন ওয়াসিম আকরাম, এমন নয়। কার্লোস ব্র্যাথওয়েট স্বপক্ষে সাফাই গাইতেই পারেন, ‘অমরত্ব পাবার জন্যে রান আর উইকেট পেতেই হবে, এমন নয় তো!’
উল্টো করেও তো বলা যায়, রান আর উইকেট পেলেই দর্শকদের মনে আসন গেড়ে বসা যাবে, এমনও তো নয়। যদি এমন হতোই, তবে নিচের কয়েকজনকে এভাবে চিনিয়ে দেয়ার প্রয়োজন হতো না বৈকি! বছরশেষে শীর্ষ রানসংগ্রাহক আর উইকেটশিকারীর তালিকায় প্রথম সারিতে থাকলেও, তাদের সঙ্গে আপনার প্রথম পরিচয় হতে পারে আজই!
ডিন এলগার
সম্ভবত, যে মুহূর্তে ডিন এলগার নামটির সঙ্গে আপনার বেশ ভালোভাবে পরিচয় ঘটলো, ততদিনে তিনি পার করে ফেলেছেন জীবনের বত্রিশ বসন্ত, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার পরিচয়েও পার করে ফেলেছেন সাত বছর, নামের পাশে যোগ করেছেন ১২ টেস্ট শতক।
২০১৭-য়ের শুরু থেকে হিসেব করলে ডিন এলগার রান করেছেন ৪৩ ছুঁইছুঁই গড়ে। ডেভিড ওয়ার্নার, জো রুট, কিংবা তার নিজ দলীয় অধিনায়ক ডু প্লেসি, কারোরই রান নেই তার চেয়ে বেশি। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে মাঝের সময়টায় রান করেছেন ২০৪৬, তার স্বীয় দলের বাকিদের চেয়ে অনেক বেশি। সম্পূরক তথ্য হিসেবে যোগ করে দেয়া যায়, ২০৪৬ রানের মাঝে ১২৮১ রানই এসেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে, বর্তমান ক্রিকেটে ব্যাটিং করার জন্যে সবচেয়ে কঠিন উইকেটে।
২০১৭ সালের আইসিসি আর ইএসপিএন ক্রিকইনফোর টেস্ট দলে জায়গা করে নিয়েছিলেন যদিও, কিন্তু নিজের মূল্য পেয়েছিলেন কই? ক্রিকইনফো তার প্লেয়ার প্রোফাইল সর্বশেষ আপডেট করেছিল সেই ২০১২ সালে, টুইটারে তার ফলোয়ার সংখ্যা মেরেকেটে ২৩ হাজার, (চেন্নাই সুপার কিংসের ম্যানেজারের ফলোয়ার সংখ্যা তার ছয়গুণ!) তার সংগ্রামী ইনিংসগুলোও আলোচনায় আসে খুব কমই।
বলা ভালো আসার সুযোগ পান না। কখনো রাবাদা ম্যাচে দশ উইকেট নিয়ে, কখনো স্টিভেন স্মিথ ব্রেইন-ফেড কাণ্ড ঘটিয়ে কিংবা স্মিথেরই কেপটাউন কেলেঙ্কারিতে ডিন এলগার আড়ালেই পড়ে থাকেন!
পড়বেন না জানি, তবে লেখকের চরম সৌভাগ্যক্রমে এলগার যদি লেখাটা পড়েও ফেলেন, এতটুকু পড়ে বোধহয় মুচকি হেসে উঠবেন তিনি। ওই হাসিটাই যে তার ট্রেডমার্ক!
ব্র্যাডলি-জন ওয়াটলিং
জনপ্রিয় ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোর পাতা খুলুন। সার্চ করুন ‘বিজে ওয়াটলিং’ লিখে, প্রথম যে দুটি আর্টিকেল আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠবে, তাই প্রমাণ করে দেবে তিনি কতটা অবমূল্যায়িত। ক্রিকেটপাড়ায় এমনিতেই ফিসফিস শোনা যায়, নিউজিল্যান্ডের পারফরম্যান্স ঠিক চোখে পড়ে না কারো, নিউজিল্যান্ডের হয়ে ক্রিকেট খেলা বিজে ওয়াটলিংয়ের ক্ষেত্রে তো আরও না।
তার টেস্ট অভিষেক সেই ২০০৯ সালে। এরপর থেকে আজ অব্দি টেস্ট খেলেছেন ৫৫টি, ৪০ ছাড়ানো গড়ে রান করেছেন ২,৮৮৭, উইকেটের পেছনে ক্যাচ নিয়েছেন কিংবা স্ট্যাম্পিংয়ের কারণ হয়েছেন ২১৪ বার। প্রতিটি সংখ্যাই বর্তমানে খেলছেন এমন উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যানদের মাঝে সবচেয়ে বেশি। তবুও ডি কক কিংবা বাটলার-বেয়ারেস্টোদের ভিড়ে ওয়াটলিং যেন সৎ-ছেলে।
প্রথম কারণ হতে পারে, তিনি নিউজিল্যান্ডের হয়ে খেলেন বলে। ভৌগোলিক বৈপরীত্যের কারণে তার খেলা দেখার সুযোগটাও দর্শকদের হয় না তেমন। দ্বিতীয় কারণ হিসেবে দাঁড় করানো যায় ম্যাককালামের প্রভাবকে। শান্তশিষ্ট নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসের সবচেয়ে উত্তেজক ক্রিকেটারের কাছ থেকে গ্লাভস নিয়েছিলেন বলেই হয়তো আরও কম চোখে পড়ে ওয়াটলিংকে।
নইলে বেসিন রিজার্ভের অপরাজিত ১৪২, কিংবা হেডিংলির ১২০ এর কথা আপনি আজই প্রথম জানবেন কেন!
জেসন হোল্ডার
তার আক্ষেপ সবচেয়ে ভালো বোঝার কথা এ দেশের ক্রিকেট সমর্থকদেরই। সাকিব আল হাসানের হাত ধরে ‘ছোট দেশের বড় তারকা’ এই শব্দবন্ধের সঙ্গে তো আমাদের পরিচয় কম দিনের নয়। রেকর্ডের পাতায় একের পর এক আঁকিবুঁকির পরেও সাকিব যেন ক্রিকেট বিশ্বের মনোযোগ কেড়ে নিতে পারেননি বহুদিন। অবশ্য ২০১৯ বিশ্বকাপে যা করে গিয়েছেন, তাতে এখন আর মনোযোগ সরানোর উপায় নেই সাকিব থেকে!
চাইলে তাই সাকিবের সেই আক্ষেপের ব্যাটনটা হস্তান্তর করা যায় হোল্ডারের হাতে। আইসিসি অলরাউন্ডার র্যাংকিংয়ে সাকিবকে সরিয়ে নাম্বার ওয়ান টেস্ট অলরাউন্ডার হয়েছেন তো বেশ কিছুদিন আগেই। ২০১৬ সালের অক্টোবরেও যার বোলিং গড় ছিল ৪৯.৬৯, সেই সংখ্যাটি এখন দাঁড়িয়েছে ২৭ এ। বিগত তিন বছরের কথা ধরলে যা দাঁড়াচ্ছে ২০.৬৫-তে। আইসিসি টেস্ট বোলার র্যাংকিংয়েও তিনি আছেন চার নম্বরে, সাথে যোগ করুন ৩৩ ছাড়ানো ব্যাটিং গড় আর সময়ে কিংবা দুঃসময়ে বুক চিতিয়ে লড়াই করা সেঞ্চুরিগুলোকে। তবুও কোথায় যেন একটা খামতি থেকেই যাচ্ছে।
এই উইন্ডিজ সর্বজয়ী সেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ নয়। জেসন হোল্ডারও একজন ক্লাইভ লয়েড নন!
আজহার আলী এবং আসাদ শফিক
প্রথমবার আন্তর্জাতিক মঞ্চে নামার আগে বা পরে, ক্রিকেটারদের উদ্দেশ্যে এই প্রশ্নটা ছুটে যাবেই, ‘আচ্ছা, কাকে যেন আদর্শ মানেন?’
আজহার আলী আর আসাদ শফিকও মানেন। অবশ্য যদি না-ও মানতেন, তবুও তাদের জন্যে আদর্শ তৈরি করাই ছিল। ফিক্সিংয়ের কালো থাবা থেকে পাকিস্তানকে মুক্ত করে নাম্বার ওয়ান টেস্ট টিমের স্বীকৃতি এনে দেয়ায় মূল কৃতিত্বের দাবিদার যে দুজন, সেই মিসবাহ-উল-হক আর ইউনিস খানের রেখে যাওয়া জুতোতেই যে পা গলিয়েছেন আজহার আলী আর আসাদ শফিক।
পরিসংখ্যান বলছে, এখনো ঠিক মিসবাহ আর ইউনিসকে ভুলিয়ে দেবার মতো কিছু করতে পারেননি দুজনে। শেষ কয়েক বছরে আসাদ শফিক যেন নিজেকে হারিয়ে খুঁজছেন, আজহার আলীও আর দলে অপরিহার্য কোনো নাম নন পাকিস্তান ক্রিকেটে। বিপরীতে, মিসবাহ হয়ে গিয়েছেন পাকিস্তান ক্রিকেটের সর্বেসর্বাই, আর টেস্ট ক্রিকেটে পাকিস্তানের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় ইউনিস খানের নাম যে আরও অনেকদিনের জন্যে সুরক্ষিত, সে-ও তো নিশ্চিত। পাকিস্তানকে তাই বারেবারেই জপতে হচ্ছে, ‘মিস-ইউ!’
আজহার আলী আর আসাদ শফিক অবশ্য দাবি করতেই পারেন, কেবল মিসবাহ আর ইউনিসের সঙ্গেই কেন তুলনা হবে? পাকিস্তানের সর্বকালের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় দুজনেই ঢুকে গিয়েছেন সেরা দশে, ছাড়িয়ে গিয়েছেন হানিফ মোহাম্মদ, সাঈদ আনোয়ারদের মতো কিংবদন্তিদেরকে। দুজন মিলে শতকের দেখা পেয়েছেন ২৭ বার আর অর্ধশতকের দেখা পেয়েছেন ৫৪ বার।
মিসবাহ-ইউনিস নাই-বা হলেন। যা রেখে যাচ্ছেন, উত্তরপ্রজন্মের জন্যে তা পেরোনোও তো যথেষ্ট কঠিন!
দিমুথ করুণারত্নে
তাকে নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। যে লোক সর্বশেষবার একদিবসী ক্রিকেট খেলেছিলেন বছরচারেক আগে, তাকেই যদি বিশ্বকাপের আগে-আগে দলের অধিনায়কত্ব দিয়ে দেয়া হয়, তাহলে আলোচনা হওয়াটা আশ্চর্যের নয় মোটেই।
অথচ অধিনায়কত্ব কিন্তু তিনি এর আগেও করছিলেন। ওয়ানডে দলে যেমন-তেমন, তবে তাকে ছাড়া শ্রীলংকা দল মাঠে নামানোই তো দায় এখন! শ্রীলংকা টেস্ট দলের অধিনায়কও তিনি। নেতৃত্ব বেশ ভালোই দিচ্ছেন, ২০১৭ সালের শুরু থেকে ছয় টেস্ট সিরিজে মোটে দুইবার পরাজয় তো তেমন কিছুরই ইঙ্গিত করে। এতেও তুষ্ট না হলে তুলে আনা যায়, দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে শ্রীলঙ্কার সেই মিরাকলের কথা! দক্ষিণ আফ্রিকাকে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে হোয়াইটওয়াশের স্বাদ দেয়া তো মিরাকলই!
ব্যাট হাতেও করুণারত্নে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সামনে থেকেই। ২০১৭ সালের শুরু থেকে রান করেছেন ২,১৮০, বর্তমান ক্রিকেটের ওপেনারদের মাঝে সবচেয়ে বেশি। রান করার চেয়েও বেশি কথা বলা উচিত যে কন্ডিশনে তিনি রান করেছেন তা নিয়ে। কথা বলা উচিত, দুবাইয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে করা ১৯৬ রানের ইনিংস নিয়ে, যা নিশ্চিত করেছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে অ্যাওয়ে সিরিজ জয়। কথা বলতে হবে, দেশের মাটিতে ধুলি ওড়া স্পিন পিচেও যেভাবে ব্যাট করে গিয়েছেন সাবলীল গতিতে, তা নিয়ে।
অবশ্য এত ফুসরতই বা কোথায় পাওয়া যাবে! স্ট্রোকের ফুলঝুরি ছোটানো ডজনখানেক শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানের ভিড়ে তার মতো ধৈর্যের প্রতিমূর্তি নিয়ে কথা খরচের সময় কোথায়!
কেমার রোচ
বাংলাদেশের ক্রিকেটের দুঃসময়ের ভক্ত-সমর্থক হয়ে থাকলে, কেমার রোচ নামটি এক নস্টালজিয়া। ২০০৯-ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলোয়াড় বিদ্রোহ-সাকিব আল হাসান-বিদেশের মাটিতে প্রথম টেস্ট সিরিজ জয়, কিছু মনে পড়লো কি?
ফাঁকেতালে কেমার রোচের অভিষেক হয়েছিল সে সিরিজেই। অভিষেক সিরিজেই গতির ঝড়ে আর ১৩ উইকেট নিয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন অমিত সম্ভাবনার, সেই সম্ভাবনা যেন ফুল হয়ে ফুটতে শুরু করেছে শেষ কয়েক বছরে।
বাজে ফর্ম আর চোটের কারণে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বাইরে ছিলেন ২০১৬ সালের গোড়া থেকে বছর দেড়েক। ২০১৭ সালের আগস্টে দলে ফেরত আসতেই যেন নতুন করে খুঁজে পেয়েছেন নিজেকে। নতুন অ্যাকশনে কিছুটা গতি কমলেও উইকেট তুলে নিয়েছেন ৭১টি। এ সময়কালে উইকেটপ্রতি রান খরচ করেছেন মাত্র ২১.২৮ করে, যা ছাড়িয়ে গিয়েছে জেমস অ্যান্ডারসন, স্টুয়ার্ট ব্রড, ট্রেন্ট বোল্ট, মিচেল স্টার্ক কিংবা জশ হ্যাজলউডের রেকর্ডকেও। কী আশ্চর্য দেখুন, কেমার রোচ তাদের সাথে এক কাতারে উচ্চারিত হন না কখনোই।
কোর্টনি ওয়ালশ আর কার্টলি অ্যামব্রোসের বিদায়ের পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফাস্ট বোলাররা খুব একটা নজর কাড়তে পারেননি কখনোই। ওয়েস্ট ইন্ডিজ মানেই এখন ফ্রিল্যান্সার কিছু ক্রিকেটার, টি-২০য়ের ফেরিওয়ালা তকমা নিয়ে ঘুরে বেড়ানো ক্রিস গেইল, কিয়েরন পোলার্ড, আন্দ্রে রাসেল কিংবা সুনীল নারাইন। কেমার রোচের মতো নির্ভেজাল টেস্ট বোলারের জন্যে সে পৃথিবীতে জায়গা কোথায়!
নিল ওয়াগনার
নিউজিল্যান্ডের পেসারদের জাদুকরী বোলিংয়ের কথা আপনি পত্রিকার পাতায় হরহামেশাই পড়েন। পড়েন ট্রেন্ট বোল্টের কথা, মুগ্ধ হন ট্রেন্ট বোল্টের সুইংয়ে, আপনার জন্যেই এড শিরানের সঙ্গে বোল্ট ছবি তুলে আপলোড করেন ইনস্টাগ্রামে। তাতে আপনার মুগ্ধতা বাড়ে, আর নিল ওয়াগনার পড়ে যান আরও আড়ালে।
অথচ, রেকর্ড ঘেঁটে জানা যায়, ২০১৬ সালের শুরু থেকে বোলিং গড়, স্ট্রাইক রেট কিংবা ইকোনমি রেট সবখানেই ট্রেন্ট বোল্টকে ছাড়িয়েছেন ওয়াগনার। বোল্টের কাজ যখন ইনিংসের শুরুর দিকে প্রতিপক্ষকে সুইং বিষে নীল করেই থেমে যায়, ওয়াগনারের বোলিং শুরু হয় তখনই। লম্বা স্পেলে একের পর এক বাউন্সারের ফণা তুলে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানশিপের চূড়ান্ত পরীক্ষাই নিতে নামেন যেন। পরিসংখ্যান বলছে, এই একমাত্রিক বোলিং বেশ কাজেও দিয়েছে। শেষ চার বছরে ছয়বার পাঁচ উইকেট দখল তো তেমনটাই বলে। নিউজিল্যান্ডের হয়ে দ্রুততম ২০০ উইকেটের মাইলফলকে স্যার রিচার্ড হ্যাডলিকে ছাড়ানো সম্ভব হবে না যদিও, তবে ট্রেন্ট বোল্টকে পেরিয়ে তালিকার দুয়ে উঠে আসা তো কেবলমাত্র আনুষ্ঠানিকতারই অপেক্ষা।
মজাটা কোথায় জানেন? এমন রেকর্ডের পরেও ইনস্টাগ্রামে ওয়াগনারের পোস্টে কমেন্টসংখ্যা একবারই দুই অঙ্ক ছুঁয়েছে, এবং সে ছবিতে ট্রেন্ট বোল্ট আছেন।
দিলরুয়ান পেরেরা
ক্রিকইনফোর জনপ্রিয় ক্রিকেট লিখিয়ে অ্যাণ্ড্রু ফিদেল ফার্নান্দো তো ২০১৮ সালের ইংল্যান্ড-শ্রীলংকা সিরিজ চলাকালীন সময়ে বলেই বসেছিলেন,
বর্তমান সময়ে তার (দিলরুয়ান পেরেরা) চেয়ে বেশি নিভৃতচারী ক্রিকেটার আর একজনও নেই!
অথচ হবার কথা ছিল কিন্তু ঠিক এর উল্টো। শ্রীলঙ্কার উইকেট স্পিনারদের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে চিরকালই, আর রঙ্গনা হেরাথ সাবেক ক্রিকেটার তালিকায় নাম লেখানোর পরে শ্রীলংকার বোলিং আক্রমণের নেতৃত্বটা উঠেছিল পেরেরার হাতেই। এবং পরিসংখ্যান সাক্ষ্য দিচ্ছে, মুরালি (২২.৭২) আর হেরাথের (২৮.০৭) পরে শ্রীলংকার সেরা স্পিনার এই পেরেরাই (৩৪.০৩)। কোনো রকম দুসরা, ক্যারম বল জাতীয় বৈচিত্র্যের অধিকারী না হয়েও এমন রেকর্ড একজন ফিঙ্গারস্পিনারের জন্যে গর্ব করার মতোই!
তার অভিষেকের পর থেকে শ্রীলংকা যে কয়বার বিজয়ীর বেশে মাঠ ছেড়েছে, প্রায় প্রতিবারই পেরেরা অবদান ছিল উল্লেখযোগ্য। কখনো তিনি অবদান রেখেছেন আবুধাবিতে প্রতিপক্ষের টপ-অর্ডার ধ্বসিয়ে দিয়ে, কখনো বা দুবাইয়ের মতো ম্যাচ বাঁচানো অর্ধশতক তুলে। শ্রীলংকা খেলছে এমন সিরিজগুলোতে শীর্ষ উইকেটশিকারীর তালিকায় তার নাম থাকে সবার উপরের দিকে।
তবুও, পেরেরা বললে কুশল আর থিসারার নামটাই কেন যেন সবার আগে মনের কোণে ভেসে ওঠে।
কেশব মহারাজ
অভিষেক টেস্ট খেলেছিলেন ২০১৬ সালের নভেম্বরে। তারপর হতে আজ অব্দি খেলা ২৭ টেস্টে উইকেট তুলে নিয়েছেন ঠিক ১০০টি। একই সময়কালে দক্ষিণ আফ্রিকান বোলারদের মধ্যে তার চাইতে বেশি উইকেট পেয়েছেন একজনই, কাগিসো রাবাদা।
এরপরেও আগামী মাসের শেষাংশে দক্ষিণ আফ্রিকা যখন আতিথ্য দেবে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলকে, নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না, কেশব মহারাজ সেই দলে থাকবেন কি না! কাগিসো রাবাদা, লুঙ্গি এনগিডি, ভারনন ফিল্যান্ডার কিংবা এনরিখ নর্টেদের ভিড়ে একাদশে জায়গা পাওয়ার শঙ্কা থাকাটা খুবই স্বাভাবিক।
এমন তীব্র অনিশ্চয়তার মাঝেও যে কয় ম্যাচে সুযোগ পেয়েছেন তাতেই তিনি প্রমাণ করেছেন নিজের সামর্থ্য। অভিষেকের পর থেকে আজ অব্দি পাওয়া উইকেটসংখ্যায় ছাড়িয়ে গেছেন সাকিব, মঈন আলী আর ইয়াসির শাহদের মতো স্পিনারদের, সামনে আছেন কেবল নাথান লায়ন, রবিচন্দ্রন অশ্বিন আর রবীন্দ্র জাদেজা। সর্বশেষ ভারত সফরের আগে স্পিনবান্ধব এশিয়ায় খেলেছিলেন মোটে দুই টেস্ট, এর মাঝেই এক ইনিংসে দখল করেছেন নয় উইকেট। পাঁচ উইকেটের ল্যান্ডমার্ক ছুঁয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকা আর নিউজিল্যান্ডের মতো কন্ডিশনে। তবুও, বিগত কয়েক দিনে কেশব মহারাজ সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছিলেন খুব সম্ভবত, ভাইটালিটি ব্লাস্টে তার শরীরের পেছনদিকে বল লাগার পরে।
এই সুযোগে কেশব মহারাজের কাছে একটু ক্ষমাপ্রার্থনা করেই নিতে হচ্ছে। লিখতে বসার আগে বেশ কিছুবার গায়ে বল লাগার ওই ক্লিপিংটা দেখলেও লেখক কেশব মহারাজকে ঠিক ঠাউরে উঠতে পারেননি।
প্রিয় পাঠক, রোর বাংলার ‘খেলাধুলা’ বিভাগে এখন থেকে নিয়মিত লিখতে পারবেন আপনিও। সমৃদ্ধ করে তুলতে পারবেন রোর বাংলাকে আপনার সৃজনশীল ও বুদ্ধিদীপ্ত লেখনীর মাধ্যমে। আমাদের সাথে লিখতে চাইলে আপনার পূর্বে অপ্রকাশিত লেখাটি সাবমিট করুন এই লিঙ্কে: roar.media/contribute/