Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রোম সাম্রাজ্যের উত্থান (পর্ব ১৫): দ্বিতীয় পিউনিক যুদ্ধ ২১৭-২১৫ খ্রি.পূ.

এবার একটু স্পেনের দিকে চোখ ফেরানো যাক।

ব্যাটল অফ ইব্রো (২১৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)

২১৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দের শেষে পাব্লিয়াস সিপিও রোন নদী পর্যন্ত চলে গিয়েছিলেন হ্যানিবালের মোকাবেলা করতে। হ্যানিবাল ইটালির পথে শুনে তিনি ভাই গেনিয়াস কর্নেলিয়াস সিপিওর অধীনে ২৫,০০০ সেনা রেখে তিনি ইটালি ফিরে আসেন। কর্নেলিয়াস সিপিও ২১৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোন নদী ধরে মেসালিয়ার অন্তর্গত এম্পোরিয়ামে এসে নামলেন। তিনি আশেপাশের স্প্যানিশ অনেক এলাকা শক্তি খাটিয়ে অথবা মৈত্রীচুক্তির মাধ্যমে দখল করে নিলেন। এই এলাকার দায়িত্বে থাকা কার্থেজিনিয়ান কমান্ডার হ্যানোকে পরাজিত ও বন্দি করলেন তিনি।

সিপিওর আগমনে স্পেনের জেনারেল হাসড্রুবাল নড়েচড়ে বসলেন। ৮,০০০ পদাতিক ও ১,০০০ অশ্বারোহী নিয়ে তিনি এগিয়ে এলেন। কিন্তু শীতকাল চলে আসায় তিনি ইব্রো নদীর দক্ষিণে শিবির স্থাপন করলেন।

ইব্রো নদী; Image source: britannica.com

শীত শেষ হলে হাসড্রুবাল স্থল ও জলপথে সিপিওর ওপর মিলিত আঘাত হানার পরিকল্পনা করলেন। তিনি স্থলে আর হ্যামিলকারের অধীনে ৪০টি জাহাজের বহর ইব্রো নদী ধরে অগ্রসর হলো। সিপিও হাসড্রুবালকে আক্রমণ করলেন না। তিনি তার ৩৫টি জাহাজ নিয়ে হ্যামিলকারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লেন। প্রায় তিরিশটির মতো কার্থেজিনিয়ান জাহাজ নষ্ট করে রোমান বাহিনী জয়লাভ করে। হাসড্রুবাল তীরে থেকে কিছুই করতে পারলেন না।

জলপথে সিপিওর ওপর মিলিত আঘাত; Image source: pinterest.ca

এই যুদ্ধের পর সিনেট নতুন করে স্পেনের গুরুত্ব অনুধাবন করে। তারা বুঝতে পারে যে, হ্যানিবালকে হারাতে হলে স্পেনে তার শক্ত ঘাঁটি ধ্বংস করে দিতে হবে। তাই পাব্লিয়াস সিপিওর অধীনে আরো রোমান সেনা স্পেনে এসে পৌঁছে।

কান্নের যুদ্ধ (২১৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)

ভারো ও পওলাস প্রায় ৮০,০০০ পদাতিক ও ৬,০০০ অশ্বারোহীর বিশাল বাহিনী একত্র করলেন। বসন্তের শুরুতে হ্যানিবাল তার শীতকালীন আবাস ছেড়ে বেরিয়ে এলে তারা কার্থেজের বিচ্ছিন্ন ছোট ছোট সেনাদলের বিরুদ্ধে হামলা করে তাদের খাদ্য সরবরাহে বাধা দিতে থাকলেন।

হ্যানিবাল রোমানদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য আপুলিয়ার ছোট গ্রাম কান্নের নিকটবর্তী প্রান্তরে এসে ছাউনি ফেললেন। অ্যালবিনিয়াসের হাতে কিছু সেনা দিতে কন্সালরা তাকে গলদের অঞ্চলের দিকে যেতে বলে হ্যানিবালের মুখোমুখি হলেন। প্রায় আশি হাজারের মতো রোমান পদাতিক সংখ্যায় কার্থেজের পদাতিকের প্রায় দ্বিগুণ। কিন্তু ১০,০০০ অশ্বারোহী কার্থেজিনিয়ান যোদ্ধা রোমান ঘোড়সওয়ারের তুলনায় বেশি। কান্নের সমতল প্রান্তর কার্থেজের সুদক্ষ অশ্বারোহীদের জন্য অত্যন্ত অনুকূল ছিল।

হ্যানিবাল দুই বাহুতে অশ্বারোহীদের সাজালেন, এবং মধ্যভাগে রাখলেন পদাতিকদল। তার উদ্দেশ্য ছিল রোমের বাহিনী যখন আঘাত করবে, তখন তার দলের মাঝের অংশ পেছনের দিকে আস্তে আস্তে সরে যেতে থাকবে এবং পদাতিকদের দুই পাশ অশ্বারোহী যোদ্ধাদের দিকে সরে যাবে। এর ফলে যে ফাঁকা জায়গা তৈরি হবে সেখানে রোমের সেনাদল ঢুকে পড়বে। এরপর হ্যানিবালের অশ্বারোহীরা দুই পাশ থেকে চেপে আসলে রোমান সেনাবাহিনী চারিদিক থেকে বেষ্টিত হয়ে যাবে। তিনি বাম বাহুতে হাসড্রুবাল আর ডান বাহুতে হ্যানো, মতান্তরে মাহারবালকে নেতৃত্ব দিলেন, আর নিজে এবং ম্যাগো থাকলেন মাঝখানে।

 কান্নে যুদ্ধের পরিকল্পনা; Image source: legioilynx.com

হ্যানিবালের কৌশল এমনভাবে সফল হলো, যা তিনি হয়তো কল্পনাও করেননি। রোমান পদাতিক বাহিনী কার্থেজের সেনাদলের মধ্যভাগে আঘাত করলে তারা পিছিয়ে গিয়ে রোমানদের আরো ভেতরে টেনে নেয়। এদিকে হ্যানিবালের অশ্বারোহী যোদ্ধারা রোমান অশ্বারোহীদের পরাজিত করে দুই পাশ থেকে রোমান পদাতিকদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। চারদিক থেকে ঘিরে রোমান সৈন্যরা কচুকাটা হতে থাকে। কন্সাল পওলাস, প্রাক্তন কন্সাল রেগুলাস আর সার্ভিলিয়াস, মিউসিনিয়াস ছাড়াও আশিজনের মতো রোমান সিনেটর নিহত হন। ৪৫,০০০ এর মতো পদাতিক আর ২,৭০০ অশ্বারোহী রোমান সেনা নিহত হয়, এবং ৫,০০০-৬,০০০ বন্দি হয়। কার্থেজের পক্ষে ৫,০০০-৬,০০০ যোদ্ধা নিহত হয়। খুব কম সংখ্যক রোমান সেনা প্রাণ নিয়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এই পরাজয় ছিল রোমের ইতিহাসে অন্যতম শোচনীয় পরাজয়।

রোমের শোচনীয় পরাজয়; Image source: medium.com

কান্নের যুদ্ধ ইতিহাসের এক অভূতপূর্ব ঘটনা। হ্যানিবালের নেতৃত্বগুণ আর উচ্চতর সমরকৌশলের চূড়ান্ত নিদর্শন কান্নে। যে ডাবল এনভেলপমেন্ট কৌশল অবলম্বন করে তিনি সংখ্যায় দ্বিগুণেরও বেশি রোমান সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করে দেন, তা এখনও মিলিটারি স্কুলে পড়ানো হয়।

কান্নের যুদ্ধের ফলাফল

এই প্রথম রোমের মিত্রদের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হলো। আপুলিয়ার বহু নগর হ্যনিবালের পক্ষে চলে যায়। সিরাকিউজ তার আনুগত্য স্বীকার করে। মেসিডোনিয়া থেকে দূত হ্যানিবালের সাথে দেখা করে। কাপুয়া শহর তাদের দরজা কার্থেজের জন্য খুলে দেয়।

ঐতিহাসিক কান্নে; Image source: Ancient History Encyclopedia

এদিকে রোমে তখন চলছে শোকের মাতম। কান্নের যুদ্ধের কিছুকাল পরেই অ্যালবিনিয়াসের সেনাদলকেও কার্থেজিনিয়ানরা ধ্বংস করে দেয়। এমন কোনো পরিবার ছিল না যার কোনো না কোনো সদস্য এই দুই যুদ্ধে প্রাণ হারায়নি। কিন্তু মধ্যেও সিনেট কার্থেজের পাঠানো শান্তিচুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। মার্কাস জুনিয়াস পেরা ডিক্টেটর নিযুক্ত হন। অবিলম্বে সেনাবাহিনী পুনর্গঠন শুরু হয়। প্রকাশ্যে কান্নাকাটি নিষিদ্ধ করা হয়। অস্ত্র বহনে সক্ষম সকল পুরুষকে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে বলা হয়। সামরিক বয়স সীমার নিচের ছেলেদের এমনকি অনেক দাসের হাতেও অস্ত্র তুলে দেয়া হয়। শহরের প্রতিরক্ষা শক্তিশালী করা হয়।

হ্যানিবাল রোম আক্রমণ করার চেষ্টা করলেন না। এখানে জনপ্রিয় একটি গল্প হলো, হ্যানিবাল যখন রোমে হামলা না চালানোর সিদ্ধান্ত নিলেন, তখন তার অশ্বারোহী কমান্ডার মাহারবাল হাহাকার করে বলেছিলেন, “হ্যানিবাল, তুমি জানো কীভাবে যুদ্ধে জিততে হয়, কিন্তু কীভাবে এই বিজয় কাজে লাগাতে হয় তা তুমি জানো না।” যদিও এই কথার সত্যতা নিয়ে আধুনিক ঐতিহাসিকরা সন্দেহ পোষণ করেন।

হ্যানিবালের সিদ্ধান্ত ছিল সঠিক। যুদ্ধে হ্যানিবালেরও যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। তার পক্ষে বিরাট ও দুর্ভেদ্য রোম অবরোধ করা সম্ভব না। সেজন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও লোকবল তার নেই। মধ্য ইটালি, দক্ষিণের গ্রীক নগর রাষ্ট্র এবং ল্যাটিয়ামের অন্যান্য এলাকা রোমের পক্ষে শক্ত অবস্থানে ছিল। উপকূল পাহারা দিচ্ছিল রোমান নৌবাহিনী। তাছাড়া কান্নের যুদ্ধে রোমান বাহিনী সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেলেও ইটালির অন্যান্য এলাকাতে রোমের গ্যারিসন ছিল। হ্যানিবাল রোম অবরোধ করার চেষ্টা করলে তারা এদিকে চলে আসবে, ফলে সামনে রোম এবং পেছনে তাদের আগত সেনাদলের মাঝখানে পড়ে হ্যানিবালের অবস্থা কান্নের মতো হতে পারে।

নোলার প্রথম যুদ্ধ (২১৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)

হ্যানিবাল কাপুয়াকে ঘাঁটি করে নেপলস দখলের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এদিকে দক্ষিণ ইটালির অনেক শহর এবং ম্যাগনা গ্রেসিয়া বেশ কিছু রাজ্য তার দলে চলে আসে। হ্যানিবাল এবার কাপুয়ার কাছাকাছি নোলা শহরের উপকণ্ঠে এসে পৌঁছলেন। শহরের সিনেটের সাথে যখন আলোচনা চলছিল তখন নোলার প্রতিনিধিরা ক্যাসিলিনামে রোমান কম্যান্ডার মার্সেলাসের সাথে দেখা করে সাহায্যের আবেদন জানান। তিনি তাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে শহরে এসে পৌঁছলেন।

 নোলার যুদ্ধের পরিকল্পনা; Image source: writeopinions.com

নোলার প্রথম যুদ্ধে রোমান বাহিনীকে মার্সেলাস তিনভাগে সাজান। সবথেকে শক্তিশালী ভাগ শহরের মধ্য দরজার পেছনে, আর বাকি দু’ভাগ অন্য দুই দরজার প্রহরায় নিযুক্ত করা হয়। হ্যানিবাল যখন দেখলেন নগর প্রাচীরের ওপর কোনো পাহারা নেই এবং রোমানরা শহরের ভেতরে, তখন তিনি কিছু যোদ্ধাকে ক্যাম্পে পাঠালেন প্রাচীর ভাঙার উপযুক্ত যন্ত্রপাতি নিয়ে আসতে। ইত্যবসরে মার্সেলাসের ইঙ্গিতে রোমান বাহিনী অতর্কিতে সবগুলো দরজা খুলে কার্থেজিনিয়ানদের উপর হামলা করে। হ্যানিবাল পিছিয়ে এলেন এবং নোলা ত্যাগ করতে বাধ্য হন।

ক্যাসিলিনাম অবরোধ (২১৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)

নোলা থেকে হ্যানিবাল মার্সেলাসের  ছেড়ে আসা ক্যাসিলিনামের দিকে যাত্রা করলেন। এখানে কঠোর অবরোধ জারি করেও তিনি শহর দখল করতে পারলেন না। তাই ক্যাসিলিনামের ঘাঁটিতে তার বাহিনীর কিছু সেনা রেখে শীত কাটাতে তিনি কাপুয়া চলে এলেন।

নোলার দ্বিতীয় যুদ্ধ (২১৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)

ইটালির ছোটখাটো কিছু নগর দখল করে নিলেও এই সময় হ্যানিবালের চোখ ছিল নোলার দিকে। বসন্তে তিনি প্রথমে ক্যাসিলিনাম আবার অবরোধ করলেন। শেষ পর্যন্ত নগরবাসী মুক্তিপণের বিনিময়ে শহর খালি করে দিলে তিনি ক্যাসিলিনাম দখল করে নেন। এবার তিনি পরিপূর্ণ মনোযোগ ফেরালেন নোলার দিকে।

নতুন রোমান কন্সাল কুইন্টাস ফ্যাবিয়াস ও গ্র্যাকাস তখন হ্যানিবালের পক্ষে চলে যাওয়া নগরগুলোকে আবার বিভিন্ন পন্থায় রোমের দিকে নিয়ে আসছিলেন। এই পরিস্থিতিতে আবার মার্সেলাসের ঘাড়ে দায়িত্ব পড়লো নোলা রক্ষার। পুনরায় হ্যানিবাল আর মার্সেলাস মুখোমুখি হলেন। এবারও ফল আগের মতোই। রোমানদের পরাজিত করে হ্যানিবাল নোলা অধিকার করতে পারলেন না।

আইবেরার লড়াই (২১৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ)

এদিকে স্পেনে দুই সিপিও ভাই মিলে ইব্রোর উত্তরে রোমের প্রভাব ক্রমশ বিস্তার করে চলছিলেন। এবার তারা সিদ্ধান্ত নিলেন নদী পার হয়ে এর দক্ষিণ অংশে অনুপ্রবেশ করার।

হাসড্রুবাল এই সময় প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ইটালিতে হ্যানিবালের সাথে যোগ দেবার জন্য। ২১৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে কার্থেজ থেকে হিমিলকোকে পাঠানো হয় স্পেনের দায়িত্ব বুঝে নিতে। হাসড্রুবাল এবার যাত্রা শুরু করলেন। তিনি যাতে হ্যানিবালের সাথে যোগ দিতে না পারেন সেজন্য সিপিওরা তার রাস্তা আটকাল। ছোট্ট শহর আইবেরার কাছে দুই বাহিনী ক্যাম্প করল।

হাসড্রুবালের পরাজয়; Image source: turningpointsoftheancientworld.com

লড়াইয়ের জন্য হাসড্রুবাল পদাতিক সেনা মধ্যভাগে রেখে অশ্বারোহীদের পার্শ্ব বাহিনী হিসেবে নিযুক্ত করলেন, যারা রোমান অশ্বারোহীদের বিপরীতে অবস্থান নিল। যুদ্ধের শুরুতেই হাসড্রুবালের স্প্যানিশ সৈন্যরা পালিয়ে গেলে রোমানরা তার দুর্বল মধ্যভাগ ছিন্নভিন্ন করে দেয় এবং অশ্বারোহী যোদ্ধাদের পাশ থেকে আক্রমণ করে বসে। হাসড্রুবাল পরাজিত হলেন।

This Bengali article is a part of the series on the Rise of Ancient Rome. This describes the events of the 2nd Punic War in 218 B.C.

Necessary reference books are mentioned below.

1. Owens, E. (2017). THE SECOND PUNIC WAR 220-202 BC. In The “The Encyclopedia of Ancient Battles”, First Edition. Edited by Michael Whitby and Harry Sidebottom. John Wiley & Sons Ltd. DOI: 10.1002/9781119099000.

2. Boak, A. E. R. (2010) History of Rome to 565 A. D. The Project Gutenberg EBook

3. Pennell, R. F. (2009). History of Rome from the Earliest times down to 476 Ad. Project Gutenberg.

 Feature Image: Knowledge@Wharton 

Related Articles