Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রোম সাম্রাজ্যের উত্থান (১০ম পর্ব): প্রথম পিউনিক যুদ্ধ – সাগরপথের লড়াই এবং রোমের বিজয়

প্রথম পিউনিক যুদ্ধে রোম ও কার্থেজের মধ্যে বেশ কয়েকটি নৌযুদ্ধ সংঘটিত হয়। সেগুলোর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো লিপারার যুদ্ধ (LIPARA -২৬০), মাইলির যুদ্ধ (MYLAE-২৬০), টিনডারিসের যুদ্ধ (TYNDARIS -২৫৭), ইকনোমাসের যুদ্ধ (ECNOMUS -২৫৬) এবং ইজেট দ্বীপপুঞ্জের যুদ্ধ (AEGATES ISLANDS-২৪১)।

Source: weaponsandwarfare.com

লিপারার যুদ্ধ

সিপিও আফ্রিকানাসের দাদা কন্সাল গেনিয়াস কর্নেলিয়াস সিপিওর অধীনে রোমান নৌবাহিনীর সতেরটি জাহাজ সিসিলির উত্তর উপকূলে কার্থেজের মুখোমুখি হয়। কার্থেজের পক্ষে নেতৃত্বে ছিলেন বুথেস ও হ্যানিবাল। যুদ্ধে রোমানরা পরাজিত হয় এবং কন্সাল সিপিও কার্থেজের সেনাদের কাছে আটক হন।

Source: ouritaliandream.wordpress.com

মাইলির লড়াই

সিসিলির উত্তর-পূর্ব উপকূলে গাইয়াস ডুলিয়াস রোমান নৌবাহিনীর মূল অংশ নিয়ে হ্যানিবালের সাথে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। কার্থেজের ১৩০টি জাহাজের বিপরীতে রোমানদের প্রায় সমসংখ্যক জাহাজ ছিল বলে অধিকাংশ ঐতিহাসিক মনে করেন। এই লড়াইয়ে কর্ভাস তার পূর্ণ ক্ষমতা দেখায়। কর্ভাসের তাণ্ডবে কার্থেজ পঞ্চাশটির মতো জাহাজ হারায়, যেসবের মধ্যে তাদের পতাকাবাহী জাহাজও ছিল। হ্যানিবাল পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ডুলিয়াস তার পেছন পেছন ধাওয়া করে সার্ডিনিয়া পর্যন্ত চলে যান এবং সেখানে তাকে আবার পরাজিত করেন। হ্যানিবালের নেতৃত্বে আস্থা হারিয়ে তার অধীনস্থরাই তাকে গ্রেফতার করে কার্থেজে পাঠিয়ে দেয়, যেখানে তাকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়। 

মাইলির যুদ্ধ; Source: alchetron.com

ডুলিয়াস যুদ্ধলব্ধ বিস্তর মূল্যবান জিনিস রোমে পাঠিয়ে দেন। তার জন্য সিনেট শহরে জয়োৎসবের আয়োজন করে। ধ্বংসপ্রাপ্ত কার্থেজিনিয়ান যুদ্ধজাহাজের অগ্রভাগ খচিত একটি কলাম রোমের ফোরামে স্থাপন করা হয় যেখানে উল্লেখ আছে ডুলিয়াস ১৩টি কার্থেজিনিয়ান যুদ্ধজাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছিলেন এবং ৩১টি দখল করেছিলেন।

Source: drc.ohiolink.edu

টিনডারিসের সংঘর্ষ

সিসিলির উত্তর-পূর্ব উপকূলে টিনডারিস অন্তরীপ। এখানেই ২৫৭ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমান কন্সাল রেগুলাস কার্থেজের জাহাজ দেখতে পেয়ে তাড়া করেন। হ্যামিলকারের অধীনে কার্থেজিনিয়ান জাহাজ ঘুরে দাঁড়ালে রোমান নৌবহর বেশ বিপদে পড়ে। দশটি রোমান জাহাজ শত্রুরা দখল করে নেয়। কেবল রেগুলাসের জাহাজ তাদের নাগালের বাইরে চলে আসতে সক্ষম হয়। ইতোমধ্যে রোমানদের সাহায্যকারী জাহাজ এসে পৌঁছলে পাশার দান উল্টে যায়। কার্থেজের দশটি জাহাজ রোমানরা দখল করে নেয়, আরো আটটি জাহাজ ডুবে যায়। 

Source: usni.org

ব্যাটল অফ ইকনোমাস

ইকনোমাসের অন্তরীপের অবস্থান সিসিলির দক্ষিণ উপকূলে, পশ্চিম ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে। এখানেই রোম ও কার্থেজের মধ্যে ঘটেছিল প্রাচীন পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ, এবং এই অঞ্চলের সর্ববৃহৎ নৌযুদ্ধ। কার্থেজের নেতৃত্বে ছিলেন হ্যামিলকার এবং হ্যানো, সেই হ্যানো যিনি এর আগে অ্যাগ্রিগেন্টামে রোমের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। তাদের সাথে ছিল ৩৫০টি যুদ্ধজাহাজ আর প্রায় ১,৫০,০০০ সেনা। রোমান নৌবাহিনী পরিচালনা করছিলেন রেগুলাস ও ভালসো।

Source: mikeanderson.biz

কর্ভাসের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়ার জন্য হ্যামিলকার তার জাহাজগুলোকে অনেকটা অর্ধচন্দ্রাকারে সাজালেন। পরিকল্পনা ছিল রোমান জাহাজ যখন অর্ধচন্দ্রের মধ্যবর্তী স্থানে আঘাত করবে তখন পাশ থেকে এর বাহুতে থাকা কার্থেজিনিয়ান জাহাজ শত্রুকে দুই পাশ থেকে চেপে ধরবে। প্রায় চল্লিশ বছর পর বিখ্যাত কার্থেজিনিয়ান জেনারেল হ্যানিবাল অনেকটা এরকম কৌশলেই কান্নের যুদ্ধে রোমান বাহিনীকে শোচনীয়ভাবে পরাস্ত করেন। তবে হ্যামিলকার তো আর হ্যানিবাল নন। তাছাড়া হ্যানিবালের মতো করে সেই কৌশলের সফল প্রয়োগের দৃষ্টান্ত পাওয়া দুঃসাধ্য।

ইকনোমাসের যুদ্ধ; Source: dickinson.edu

যুদ্ধ শুরু হলে রোমান বহর ত্রিভুজের আকারে কার্থেজের অর্ধচন্দ্রকে আঘাত করে। এই অংশ হ্যামিলকার তার সমর কৌশলের সাথে সাযুজ্য রেখে ইচ্ছাকৃতভাবেই খানিকটা দুর্বল রেখেছিলেন। কিন্তু এর ফল হলো উল্টো। রোমান জাহাজের আঘাতে কার্থেজের বিন্যাস মাঝখান থেকে দুই টুকরো হয়ে গেলো। দুই রোমান কন্সাল আলাদা আলাদাভাবে তখন এই দুই অংশকে পরাজিত করেন। এই যুদ্ধে কার্থেজ তার সুবিখ্যাত নৌবাহিনীর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ হারায়।

ইকনোমাসে বিজয়ের ফলাফল

জলে-স্থলে সব জায়গায় রোমানদের কাছে পরাজিত কার্থেজ পিছু হটতে থাকে। বিজয়ী রোমান বাহিনী আফ্রিকার উপকূলে অবতরণ করে। কার্থেজের ৬৫ কিলোমিটার পূর্বে ক্লুপিয়া শহরে রোমানরা ঘাঁটি স্থাপন করে। শীত চলে আসতে থাকায় রেগুলাসকে রোমান বাহিনীর নেতৃত্বে রেখে ভালসো নৌবহর নিয়ে সাময়িকভাবে রোমে ফিরে যান। কথা ছিল তিনি বসন্তে আবার ফিরে আসবেন এবং পূর্ণ রোমান বাহিনী নিয়ে দুই কন্সাল কার্থেজ আক্রমণ করবেন।

রেগুলাস; Source: alchetron.com

কিন্তু রেগুলাস ছিলেন অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী। মাত্র দুটি রোমান লিজিয়ন নিয়েই তিনি কার্থেজের দিকে যাত্রা করলেন। এ খবর পেয়ে কার্থেজ ব্যস্ত হয়ে স্বল্প প্রশিক্ষিত একটি সেনাদল গঠন করে ইকনোমাসে পরাজিত হ্যামিলকারের কাছে এর দায়িত্ব অর্পণ করল। কার্থেজের নিকটবর্তী অ্যাডিসে দুই বাহিনীর মোকাবেলায় রেগুলাস তার বাহিনীকে দু’ভাগে ভাগ করেন। এই দুই অংশ দুই পাশ থেকে কার্থেজের বাহিনী উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের সম্পূর্ণভাবে পরাস্ত করে।

Source: ancient.eu

ভীত কার্থেজ রেগুলাসের কাছে শান্তিচুক্তির প্রস্তাব পাঠায়। এদিকে রেগুলাস রোমান বাহিনীর ক্ষমতায় অতি অহংকারী হয়ে উঠেছিলেন। তিনি কার্থেজের দূতদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন, এবং চুক্তির শর্ত হিসেবে কার্থেজের সামরিক ক্ষমতা বিলোপ, সিসিলি ও ইতালি থেকে কার্থেজের অপসারণ এবং বিশাল পরিমাণ অর্থ রোমকে ক্ষতিপূরণের দাবী করেন। কার্থেজ এই চরম অপমানজনক শর্ত প্রত্যাখ্যান করে।

এমন সময় কার্থেজে উপস্থিত হলেন স্পার্টান মার্সেনারি জেনারেল জ্যান্থিপাস। অভিজ্ঞ এই জেনারেলের প্রশিক্ষণে কার্থেজের যোদ্ধারা দ্রুতই দক্ষ হয়ে ওঠে। তার অধীনে বর্তমান তিউনিসের কাছে কার্থেজ বাহিনী রেগুলাসকে পরাজিত করে। এই যুদ্ধে জ্যান্থিপাস হস্তিবাহিনী দিয়ে রোমান বাহিনীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেন এবং এর ফলে তার যোদ্ধারা তাদের সহজে হারিয়ে দিতে পারে। শৃঙ্খলিত রেগুলাসকে কার্থেজের রাস্তায় প্রদর্শন করে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়।

Source: pinterest.com

রেগুলাসের পরাজয়ের পর রোমের পদক্ষেপ

রেগুলাসের পরাজয়ের সংবাদ পেয়ে অবিলম্বে সিনেটের আদেশে ২৫৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দে কন্সাল পলাস ও নোবিলিয়র ৩৫০টি জাহাজ নিয়ে যাত্রা করেন। উদ্দেশ্য ছিল ক্লুপিয়া থেকে রেগুলাসের বেঁচে যাওয়া সেনাদের উদ্ধার করে আনা। এই বাহিনী উত্তর আফ্রিকার হার্মিয়াম অন্তরীপে কার্থেজের ২০০ জাহাজের বহরকে বিধ্বস্ত করে।

রোমান নৌবাহিনীর বিপর্যয়

সেনাদের উদ্ধার করে ফিরে আসার সময় সিসিলির কাছে প্রচণ্ড ঝড়ে পড়ে রোমের বিরাট সংখ্যক জাহাজ ধ্বংস হয়ে যায় এবং হাজারের উপর রোমান সেনা ডুবে যায়। মাত্র আশিটি জাহাজ ধুঁকতে ধুঁকতে বন্দরে এসে পৌঁছে। এই ঘটনা রোমের নৌশক্তির বিপর্যয় ডেকে আনে। জাহাজ নতুন করে তৈরি করা যায়, কিন্তু অভিজ্ঞ ও দক্ষ নৌসেনা গড়ে তোলা অনেক সময়ের ব্যাপার। সিনেট দ্রুতই ২২০টি নতুন জাহাজ তৈরির নির্দেশ জারি করে এবং নতুন করে নৌসেনা নিয়োগ ও প্রশিক্ষনের বন্দোবস্ত করা হয়। নতুন জাহাজের সাহায্যে ২৫৪ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমানরা সিসিলির উত্তরপশ্চিমে প্যানোরমাস শহরে কার্থেজের ঘাঁটি দখল করে নেয়। কিন্তু পরের বছরই আবার এক ঝড়ে নতুন রোমান নৌবহর ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

Source: nationalgeographic.com

কার্থেজের শক্তিবৃদ্ধি

রোমের নৌ সক্ষমতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি কার্থেজ তাদের হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পাচ্ছিল। ২৫১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে হ্যানোর সন্তান জেনারেল হাসড্রুবাল কার্থেজের সেনাদল নিয়ে সিসিলিতে প্রবেশ করেন। তার লক্ষ্য ছিল প্রাথমিকভাবে প্যানোরমাস পুনরুদ্ধার করা। হাসড্রুবালের সাথে ছিল হস্তিবাহিনী।

প্যানোরমাস অধিকার করে ছিলেন রোমান কন্সাল মেটেলাস। তিনি পরিখা খনন করে সেখানে বর্শাবাহী সেনা বসান, যাদের কাজ ছিল যুদ্ধের সময় বর্শা নিক্ষেপ করে হাতিগুলোকে আহত করে। এই কৌশলে কাজ হলো। আহত হাতি দিগভ্রান্ত হয়ে নিজের বাহিনীর উপর দিয়েই ছুটে গেল। হাসড্রুবাল শোচনীয়ভাবে পরাস্ত হলেন। তাকে কার্থেজে ফিরিয়ে নিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হলো।

লিলিবিয়াম অবরোধ

সিসিলিতে কার্থেজের সর্বশের শক্ত ঘাঁটি লিলিবিয়াম। পাইরাস লিলিবিয়াম জয় করতে এসেই সিসিলি হারিয়েছিলেন। ২৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে সিনেট সিদ্ধান্ত নেয় লিলিবিয়াম জয় করার। তৎকালীন কন্সাল রেগুলাস (পূর্ববর্তী রেগুলাসের ভাই) ও ভালসো লিলিবিয়াম ঘিরে ছাউনি ফেললেন। কিন্তু প্রাকৃতিকভাবেই দুর্ভেদ্য লিলিবিয়ামে সাগরপথে কার্থেজ রসদপত্র সরবরাহ করতে পারত। সুতরাং অবরোধের কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছিল না।

এই পরিস্থিতিতে রোমান সিনেট নতুন করে নৌবাহিনী গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। ১২০টি জাহাজের একটি বহর তৈরি করা হয়। ২৪৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দে লিলিবিয়ামের নিকটে ড্রেপেনা বন্দরে কন্সাল পুলচার এক সুবর্ণ সুযোগ পেয়ে যান। কার্থেজের নৌবহর অসতর্ক অবস্থায় রোমান বাহিনীর নাগালে চলে আসে। কিন্তু তার গড়িমসির কারণে তারা নিজেদের গুছিয়ে নেয়ার সময় পেয়ে যায় এবং রোমান নৌবাহিনীর মাত্র ৩০টি জাহাজ ফিরে আসতে সমর্থ হয়। একই সময় কন্সাল পলাসের নেতৃত্বে থাকা রসদ সামগ্রীর এক বহর সিসিলির কাছে সমুদ্রে ঝড়ের কবলে পড়লে বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়। পর পর অনেকগুলো নৌবহর ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় সিনেট বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়ে। এছাড়াও পিউনিক যুদ্ধের ফলে কোষাগারে টান পড়ায় নতুন করে জাহাজ নির্মাণ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এই ঘটনার প্রায় সাত বছর পর পর্যন্ত রোমানরা সাগরে নতুন কোনো নৌবহর নামায়নি।

যুদ্ধে দীর্ঘ সময় ধরে একধরনের অচলাবস্থা বিরাজ করতে থাকে। এরই মধ্যে সিসিলির পশ্চিমে কার্থেজের সেনাবাহিনীর দায়িত্ব নেন হ্যামিলকার বার্কা নামে এক কার্থেজিনিয়ান জেনারেল। তিনি এরিক্স পর্বতে ঘাঁটি গাড়লেন যেখান থেকে বহু চেষ্টার পরেও রোমানরা তাকে হটাতে পারছিল না। বরং নিজের অবস্থান থেকে তিনি ইতালির উপকূল ধরে মাঝে মাঝেই হামলা করতেন। তবে এতেও অচলাবস্থা কিন্তু দূর হলো না।  

ইজেট দ্বীপপুঞ্জের যুদ্ধ

রোমানরা বুঝতে পারলো একমাত্র সাগরপথ ছাড়া লিলিবিয়াম দখল করার আর কোনো রাস্তা নেই। কিন্তু তাদের নেই নৌবহর, অন্যদিকে যুদ্ধ চালাতে গিয়ে কোষাগারের এমন অবস্থা যে নতুন করে আবার নৌবাহিনী সাজানোর মতো পর্যাপ্ত অর্থও নেই। তখন সব রোমান অভিজাত পরিবার এক চরম ঝুঁকি নিল। তারা ব্যক্তিগত অর্থে নির্মাণ করলো প্রায় ২০০ জাহাজের এক বহর। এই জাহাজগুলোও ধ্বংস হয়ে গেলে রোমানরা নিশ্চিতভাবেই যুদ্ধে হেরে যেত। শুধু তা-ই না, সব রোমান অভিজাতকে পথে বসতে হত।

সিসিলির পশ্চিম উপকূল ঘেঁষে কয়েকটি ছোট দ্বীপের সমষ্টি ইজেট। ২৪১ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মার্চে এখান দিয়ে কার্থেজ থেকে মালামাল বোঝাই জাহাজ যাচ্ছিল সিসিলি। সেখানে কার্থেজের সৈন্যদের খাদ্য ও সরঞ্জামাদি সরবরাহ করতে। হ্যানো নামে এক অ্যাডমিরাল ছিলেন এই বহরের নেতা। রোমান নৌবাহিনী এবার এই সুবর্ণ সুযোগ কাজে লাগাতে বদ্ধপরিকর হলো। ফুঁসে উঠা ঝড়ের ছত্রচ্ছায়ায় রোমের যুদ্ধজাহাজ কার্থেজের নৌ শক্তিতে হানল মরণ আঘাত। মালামালের ভারের কারণে কার্থেজের জাহাজগুলোর গতি ও ক্ষিপ্রতা অনেক কমে গিয়েছিল। সুতরাং রোমান যুদ্ধজাহাজ খুব সহজেই তাদের ঘায়েল করতে পারল। ১২০টি জাহাজ হারিয়ে কার্থেজের মূল শক্তি, এর নৌবাহিনী একেবারে ভেঙে পড়ল। দীর্ঘ এই যুদ্ধ চালাতে গিয়ে রোমের মতো তাদেরও রাষ্ট্রীয় অর্থ প্রায় নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল। তাই নতুন করে ধ্বংস হয়ে যাওয়া এই জাহাজগুলো নির্মাণের প্রয়োজনীয় উপকরণ যোগানোর সামর্থ্য তাদের ছিল না।

ইজেট দ্বীপপুঞ্জের যুদ্ধ; Source: illustratedcuriosity.com

প্রথম পিউনিক যুদ্ধের সমাপ্তি

হ্যামিলকার বার্কা কার্থেজের পক্ষে শান্তিচুক্তির অনুরোধ বয়ে নিয়ে আসলেন। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর দুই পক্ষই প্রায় নিঃশেষিত। তাই হ্যামিলকার বার্কা রোমের উপর চাপ দিয়ে মোটামুটি নমনীয় শর্তে শান্তিচুক্তি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই চুক্তির ফলে কার্থেজ ইতালি থেকে তাদের উপস্থিতি প্রত্যাহার করে নেয়, তবে কর্সিকা ও সার্ডিনিয়াতে তাদের নিয়ন্ত্রণে হস্তক্ষেপ না করতে রোম অঙ্গীকার করে। এছাড়াও রোমকে বিরাট পরিমাণ অর্থ যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে কার্থেজ সম্মত হয়। আজকের দিনে এই অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় তিন মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর এক-তৃতীয়াংশ শুরুতে এবং বাকি অংশ দশ বছরের কিস্তিতে।

কোনো পক্ষই আসলে এই চুক্তিতে সন্তুষ্ট ছিল না। রোমের কাছে প্রচুর অর্থ, সময় ও লোকবল খরচ করার পর এই প্রাপ্তি ছিল যৎসামান্য। আর কার্থেজ সিসিলি পরিত্যাগ করতে আসলে অনিচ্ছুক ছিল। দুই পক্ষের কাছেই এ ছিল সাময়িক বিরতি, যখন তারা নিজেদেরকে পরবর্তী সংঘর্ষের জন্য প্রস্তুত করছিল। রোম ও কার্থেজ উভয়েই বুঝতে পারছিল যে, একপক্ষ সম্পূর্ণ নতজানু না হওয়া পর্যন্ত এই যুদ্ধ কখনোই পুরোপুরিভাবে শেষ হবে না।

This is the 10th part of the series on Rise of Rome. This article describes the naval warfare during the Punic War and the conclusion of the war.

References:

1. Carthage: Ancient Phoenician City-State. 

2. Punic Carthage. 

3. Mark, J. J. (2020, February 29). Carthage. 

4. Carthage 

5. Eckstein, A. (2017). THE FIRST PUNIC WAR AND AFTER, 264–237 BC. In The “The Encyclopedia of Ancient Battles”, First Edition. Edited by Michael Whitby and Harry Sidebottom. John Wiley & Sons Ltd. doi: 10.1002/9781119099000.

6. Pennell, R. F. (2009). History of Rome from the Earliest times down to 476 Ad. Project Gutenberg.

7. Taylor, D. (2017). Roman republic at war - a compendium of roman battles from 498 to 31 bc. Pen & Sword Books Ltd

Feature Image: Wikimedia Commons

Related Articles