Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

রোম সাম্রাজ্যের উত্থান (২য় পর্ব): যমজ ভাইদের গল্প ও রোম প্রতিষ্ঠার মিথলজি

আগের পর্বে রোম প্রতিষ্ঠার প্রারম্ভে ইতালির তৎকালীন ভৌগলিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছিল, যা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ও গবেষণার মাধ্যমে প্রমাণিত। এই পর্বের আলোচনায় আমরা প্রমাণিত তথ্য-উপাত্ত থেকে দূরে সরে মিথোলজির দুনিয়ায় প্রবেশ করবো। রোমানরা কীভাবে তাদের উৎপত্তি বর্ণনা করত তা জানার জন্যই এর অবতারণা। তাদের দৃষ্টিতে রোম কখন, কীভাবে স্থাপিত হয় সেখান থেকে তাদের সামাজিক ও ধর্মীয় বিশ্বাসের পরিচয় পাওয়া যায়।

আগেই বলা হয়েছিল যে, রোম কোনো একক জাতিগোষ্ঠীর আবাস ছিল না, বরং ভিন্ন ভিন্ন জাতি মিলে নতুনভাবে তৈরি করেছিল রোমান সভ্যতা। এখনকার সময় আমরা জানি, প্রায় সব বড় বড় সভ্যতাই এভাবে সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু ওই সময়ে বড় সভ্যতাগুলো, যেমন- গ্রীক সভ্যতা, তাদের একক জাতি হিসেবে অভ্যুদয়ের কাহিনী জাহির করত এবং তাদের দেবতাদের নানাভাবে এই গল্পে জড়িত করত। এর মাধ্যমে তারা বোঝাতে চাইত যে, জাতি হিসেবে তারা দেবতাদের আশীর্বাদধন্য এবং তাদের আভিজাত্য জন্মসূত্রে প্রাপ্ত। রোমানরা প্রথমদিকে তাদের মিশ্র জাতসত্ত্বার জন্য তাই অনেক বিদ্রুপ হজম করেছিল। এ কারণে রোম যখন নগণ্য একটি শহর থেকে শক্তিশালী একটি রাজ্যে পরিবর্তিত হতে শুরু করে তখন এর অধিবাসীরাও কোনো সম্ভ্রান্ত জাতি বা রাজবংশের সাথে নিজেদের যোগসূত্র স্থাপন করতে হন্যে হয়ে ওঠে, যার দ্বারা তারা তাদের মর্যাদা ও ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারবে।

এর সূত্র ধরে তৎকালীন অনেক ঐতিহাসিক, যেমন- লিভি, মিথোলজিকাল কাহিনীর অবতারণা করেন। তারা ছাড়াও সমসাময়িক গ্রীক ঐতিহাসিকরাও রোম প্রতিষ্ঠার মিথ বর্ণনা করেছিলেন। এরকম প্রায় পঁচিশটির মতো মিথ রয়েছে। তবে রোমানরা রেমুস ও রোমুলাস নামে দুই যমজ ভাইয়ের হাত ধরে রোম নগর প্রতিষ্ঠা হয় বলে বিশ্বাস করত, এবং তাদের ধর্মীয় আচারেও সেটার প্রতিফলন ঘটাত। অনেক আধুনিক ঐতিহাসিকের মতে, রোমের অধিবাসীরা শহরের নাম থেকে এর প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রথম রাজার নাম দেয় রোমুলাস, যা ল্যাটিনে রোম উচ্চারণের খুব কাছাকাছি। নিকটবর্তী রেমারিয়া নামে আরেকটি ছোট শহর ছিল, যার প্রথম রাজা ছিলেন রেমুস। কিছু আধুনিক ঐতিহাসিক বিশ্বাস করেন- রোমানরা এদেরকেই দুই যমজ ভাই হিসেবে দাবি করে।

রেমুস ও রোমুলাস ঘটনাই ছিল রোম প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে প্রচলিত ও জনপ্রিয় কাহিনী। লিভি ও অন্যান্য রোমান ইতিহাসবিদ আরও একধাপ এগিয়ে রেমুস ও রোমুলাসকে ট্রোজান রাজপুরুষ ইনিয়াসের বংশধর বলে দাবি করতে থাকেন, যার মধ্যে সুপ্রাচীন ও মর্যাদাবান ট্রোজান জাতির সাথে রোম তাদের যোগসূত্র স্থাপন করতে সমর্থ হয়। ইনিয়াসের দ্বারা রোম প্রতিষ্ঠা হয় বলেও কেউ কেউ মত দেন, তবে রোমানরা ইনিয়াসকে প্রতিষ্ঠাতা নয় বরং তাদের পূর্বপুরুষ বলেই মনে করত। সেই কাহিনী না বললে রেমুস ও রোমুলাসের গল্প অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।

ইনিয়াসের অভিযান ও রোমের পত্তন

Source: metmuseum.org

ট্রয় তখন দাউ দাউ করে জ্বলছে। গ্রীক বাহিনী নির্বিচারে চালাচ্ছে হত্যাযজ্ঞ। নারী-পুরুষ, রাজা-প্রজা কেউই তাদের থেকে নিরাপদ নয়। এতকিছুর মধ্যেও ইনিয়াস ও এন্টেনর নামে দুই ট্রোজান রাজপুরুষকে তারা হত্যা করেনি, কারণ তারা প্রথম থেকেই হেলেনকে ফিরিয়ে দেবার জন্য বলে আসছিলেন এবং যুদ্ধের পূর্বে তাদের সাথে গ্রীকদের খুবই সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। তাই গ্রীকরা তাদের না মেরে ট্রয় থেকে নির্বাসন দেয়।

ইনিয়াস ও এন্টেনর তাদের অনুসারীদের নিয়ে নিজ নিজ জাহাজে করে বের হয়ে যান। এন্টেনর বিভিন্ন জায়গা ঘুরে শেষ পর্যন্ত অ্যাড্রিয়াটিকের উপসাগরীয় অঞ্চলে আল্পসের কাছাকাছি তাদের বসতি গড়ে তোলেন। কালক্রমে তাদের উত্তরসূরিরা ভেনেশি জাতি হিসেবে পরিচিত হয়। অন্যদিকে ইনিয়াস অনেক বছর ধরে সমুদ্রে ঘুরতে থাকেন। তিনি মেসিডোনিয়া হয়ে সিসিলিতে আসেন এবং শেষপর্যন্ত ভূমধ্যসাগর হয়ে টিবের নদী ধরে ল্যাটিয়াম এলাকাতে নোঙর ফেলেন। ট্রোজান পুরুষদের ইচ্ছা ছিল কিছু সময় এখানে বিশ্রাম নিয়ে নতুন রাজ্যের সন্ধানে আবার পাল তোলার। কিন্তু সাগরে ঘুরতে ঘুরতে ততদিনে ট্রোজান নারীরা ক্লান্ত ও বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলেন। তারা আর কোথাও যেতে চাইছিলেন না। এ পরিস্থিতিতে রোমা নামে এক ট্রোজান নারীর নেতৃত্বে তারা সব জাহাজে আগুন লাগিয়ে ট্রোজানদের সেখানেই থেকে যেতে বাধ্য করেন। তখন ইনিয়াসের নেতৃত্বে ট্রোজানরা টিবের নদীর ধারে তাদের শহর গড়ে তোলেন এবং রোমার নামে তার নামকরণ করেন রোম।

রোমুলাস ও রেমুসের উপাখ্যান

ইনিয়াস ও ল্যাটিনাসের গল্প: ইনিয়াসের যাত্রার শেষটাই লিভি ও সমসাময়িক ইতিহাসবিদেরা একটু ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে রোমুলাস ও রেমুসের ঘটনা পর্যন্ত টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন। রোম প্রতিষ্ঠার তিনশ বছর আগে এই ঘটনার সূত্রপাত। তাদের ভাষায়- ট্রোজানরা যখন ল্যাটিয়ামে পৌঁছে তখন সেখানকার প্রধান শহর ছিল লরেন্টাম, যা শাসন করছিলেন ল্যাটিনাস। ট্রোজানরা তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী সংগ্রহের জন্য আশেপাশের এলাকায় অভিযান চালালে স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে তাদের বচসা শুরু হয়। এর পথ ধরে ল্যাটিনাস সেনাবাহিনী নিয়ে তাদের দমন করতে এগিয়ে আসেন। এখানে এসে প্রাচীন ঐতিহাসিকদের মধ্যে দুই ধরনের মত পরিলক্ষিত হয়, তবে উভয়ক্ষেত্রেই ফলাফল ছিল একই। লিভি দুই মতামতকেই বর্ণনা করেছেন।

প্রথম মত ছিল যুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং ট্রোজানরা জয়লাভ করে। ল্যাটিনাস পিছিয়ে তার শহরের ভেতর চলে যান এবং ইনিয়াসের সাথে শান্তিচুক্তি করে তাদের সেই অঞ্চলে বসবাসের অনুমতি দেন। দ্বিতীয় মতে, যুদ্ধের দামামা বেজে উঠলে ল্যাটিনাস এগিয়ে গিয়ে ট্রোজান দলপতির সাথে কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ইনিয়াস তাকে ট্রয়ের পতন ও তাদের নির্বাসনের ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা করলে ল্যাটিনাস অভিভূত হন এবং যুদ্ধ স্থগিত করে ইনিয়াসকে তার বাসভবনে আমন্ত্রণ জানান। সেখানে তিনি নিজ কন্যা ল্যাভিনিয়াকে তার হাতে সম্প্রদান করেন এবং তাদের সেই এলাকায় থাকার অধিকার দেন। ইনিয়াস তখন ট্রোজানদের থাকার জন্য একটি নগর গড়ে তোলেন এবং স্ত্রীর সম্মানে এর নাম রাখেন ল্যাভিনিয়াম।

Source: britannica.com

অ্যাসকানিয়াস ও অ্যালবা লংগা: ইনিয়াস ও ল্যাভিনিয়ার ঘরে জন্ম নেয় অ্যাসকানিয়াস। ইনিয়াসের মৃত্যুর সময় অ্যাসকানিয়াস ছোট থাকায় ল্যাভিনিয়া তার পক্ষে শাসনকাজ পরিচালনা করতে থাকেন। এই সময়ের মধ্যে ল্যাভিনিয়াম দ্রুত সমৃদ্ধশালী হয়ে উঠতে থাকলে এর জনসংখ্যাও অনেক বেড়ে যায়। অ্যাসকানিয়াস দায়িত্ব নিয়ে তাই অ্যালবা পাহাড়ের ঢালে নতুন আরেকটি শহর গড়ে তোলেন, নাম রাখেন অ্যালবা লংগা। ল্যাভিনিয়াম থেকে অ্যালবা লংগা তৈরির মধ্য দিয়ে কেটে যায় ত্রিশ বছর। অ্যাসকানিয়াস ও তার বংশধরেরা যুগের পর যুগ অ্যালবা লংগা শাসন করে আসছিলেন। এই ধারায় রাজা প্রকাসের ঘরে দুই সন্তান হয়, নুমিটর ও অ্যামুলিয়াস।

নুমিটর ও অ্যামুলিয়াসের দ্বন্দ্ব: প্রকাস মারা যাওয়ার পর প্রথমে নুমিটর রাজা হলেও শীঘ্রই অ্যামুলিয়াস তাকে উৎখাত করেন। পরাজিত ও হতাশ নুমিটর পাহাড়ে ঘেরা তার নিজস্ব এলাকায় পালিয়ে যান। অ্যামুলিয়াস নুমিটরের ছেলেকে হত্যা করেন ও তার কন্যা রিয়া সিলভিয়াকে দেবী ভেস্টার পৌরহিত্যে বাধ্য করেন। দেবী ভেস্টার সেবক হিসেবে রিয়া সিলভিয়া কুমারী থাকার শপথ নেন, ফলে তার দিক থেকে নুমিটরের বংশে উত্তরাধিকারী আসার সম্ভাবনা রহিত হয়ে যায়।

রোমুলাস ও রেমুসের জন্ম: মানুষ ভাবে এক, আর হয় আরেক। সিলভিয়ার উপর চোখ পড়ে দেবতা মার্সের। রোমানদের ধর্মে যুদ্ধের এই দেবতার আসন প্রধান দেবতা জুপিটারের ঠিক পরেই। রিয়া সিলভিয়া একদিন মন্দিরের জন্য বনের ঝর্না থেকে পানি আনতে গেলে নেকড়ে বাঘের তাড়ায় এক গুহাতে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। সেখানেই মার্স তাকে প্রলুব্ধ করে তার সাথে মিলিত হন। এর ফলশ্রুতিতে ডেমিগড (মানব ও দেবতার মিলনে সৃষ্ট সন্তান) দুই যমজ ভাই রোমুলাস এবং রেমুসের জন্ম হয়।

Source: romecabs.com/blog

এদিকে ভেস্টার কাছে করা শপথ ভঙ্গের অভিযোগে অ্যামুলিয়াস নির্দেশ দেন সিলভিয়া ও তার সন্তানদেরকে এনো নদীতে ছুঁড়ে ফেলে দিতে। সেখান থেকে সিলভিয়াকে তুলে এনে দেবতারা তাদের মাঝে স্থান দেন। এদিকে শিশু রোমুলাস এবং রেমুসকে নিয়ে ঝুড়ি টিবের নদীতে চলে আসে। বছরের ওই সময়ে টিবেরের পানি প্রবল প্রতাপে দু’কূল ছাপিয়ে অদূরে গাছগাছালিতে আচ্ছাদিত পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত চলে যাচ্ছিল। সেখানে প্যালাটাইন পাহাড়ের গোড়াতে মাথা তুলে দাঁড়ানো এক ডুমুর গাছের  নিচে এসে উল্টে যায়। সেই থেকে বহু শতাব্দী পর্যন্ত রোমানরা এই স্থানে জন্মানো ডুমুর গাছগুলোকে পবিত্র মনে করত।

Source: romecabs.com/blog

সেই সময় মাদি এক নেকড়েবাঘ এসেছিল পাহাড়ের পাদদেশে তৃষ্ণা মেটাতে। বাচ্চার কান্না শুনে নেকড়ে এগিয়ে যায় এবং শিশু রোমুলাস ও রেমুসকে আবিষ্কার করে। সে তাদেরকে নিয়ে গিয়ে মাতৃস্নেহে লালন করতে থাকে। মার্সের সেবক কাঠঠোকরা পাখি বাচ্চাদের খাবার এনে দেয় এবং তাদেরকে যেন কোনো পোকামাকড় কামড়াতে না পারে সেজন্য সারাক্ষণ তাদের মাথার উপরে পাখিরা উড়তে থাকে। দিনের পর দিন এই দৃশ্য দেখতে পেয়ে ফ্যাস্তুলাস নামে এক রাজকীয় রাখাল কৌতূহলী হয়ে পড়ে এবং ঘটনা জানার জন্য সেখানে চলে আসে। তখন নেকড়েমাতা রোমুলাস ও রেমুস যাতে মানুষের মধ্যে ফিরে যেতে পারে তার জন্য তাদের ফ্যাস্তুলাসের হাতে তুলে দেয়।

Source: britannica.com

নুমিটরের সাথে মিলন: ফ্যাস্তুলাসের স্ত্রী ল্যারেনশিয়া তাদের সন্তানদের সাথে রোমুলাস ও রেমুসকে একই স্নেহে বড় করে তোলে। দুই ভাই খুব শক্তিশালী, সাহসী এবং এডভেঞ্চারপ্রিয় হিসেবে বেড়ে ওঠে। তবে রেমুস ছিল কিছুটা রগচটা, যেখানে রোমুলাস অনেকটা ধীর-স্থির স্বভাবের। রোমুলাস ও রেমুস একটা দল গড়ে তুলে আশেপাশের এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে। এতে প্রতিবেশীরা শঙ্কিত হয়ে ছলচাতুরীর মাধ্যমে রেমুসকে ধরে নিয়ে যায় সেই এলাকার মালিক নুমিটরের কাছে। তাকে দেখে নুমিটরের মনে চাঞ্চল্য উপস্থিত হয়। তার নাতিরা বেঁচে থাকলে তো আজ এরকম টগবগে যুবকই হত! রেমুসের চেহারার দেখেও তার মনে সন্দেহ তৈরি হয়। তবে কি তার নাতিরা বেঁচে আছে? সে যখন জানতে পারে রেমুসের এক যমজ ভাই আছে তখন তার সন্দেহ আরো জোরালো হয়ে ওঠে।

এদিকে রেমুসকে বাঁচাতে ভাই রোমুলাস ও পালক বাবা ফ্যাস্তুলাস নুমিটরের দরবারে এসে উপস্থিত হয়। ফ্যাস্তুলাস এতদিনে রোমুলাস ও রেমুসের আসল পরিচয় সম্পর্কে অবহিত হয়েছিল, কিন্তু উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষায় সে তা প্রকাশ করা থেকে বিরত ছিলে। এখন নুমিটরের সামনে দাঁড়িয়ে সে তাদের রাজরক্তের কথা জানিয়ে দেয়। বছরের পর বছর ধরে আত্মগ্লানিতে ভুগতে থাকা নুমিটর তার নাতিদেরকে পেয়ে খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। রোমুলাস ও রেমুস তার কাছ থেকে সব জানতে পেরে প্রতিশোধের শপথ নেয়। তারা ও তাদের সঙ্গীসাথীরা মিলে রাজপ্রাসাদ আক্রমণ করে এবং অ্যামুলিয়াসকে হত্যা করে নুমিটরকে আবার অ্যালবা লংগার সিংহাসনে বসায়।

রোমের প্রতিষ্ঠা: কিছুদিন পরে নিজেদের জন্য স্বতন্ত্র একটি শহর প্রতিষ্ঠা করার মানসে রোমুলাস ও রেমুস টিবেরের তীরে এসে উপস্থিত হয়। এখানে এসে দুই ভাইয়ের মধ্যে মনোমালিন্যের সূচনা ঘটে। এর সঠিক কারণ জানা না গেলেও কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন- শহরের নাম কী হবে, ঠিক কোথায় তা গড়ে উঠবে (এক ভাই চাইছিল প্যালাটাইন পাহাড়ে, আর এক ভাই চাইছিল অ্যাভেন্টাইন পাহাড়ে), এর প্রথম শাসক কে হবে। কাজেই দুই ভাই দেবতাদের পক্ষ থেকে ইশারার প্রার্থনা করে নিজ নিজ পছন্দের পাহাড়ে আরোহণ করে।

দিন গিয়ে রাত আসে। এমন সময় রেমুস দেখে ছয়টি শকুন তার মাথার উপর দিয়ে উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে উড়ে যাচ্ছে। একে দেবতাদের ইশারা ধরে নিয়ে সে উল্লসিত হয়ে পড়ে। কিন্তু পরদিন ভোরে রোমুলাসের মাথার উপর দিয়ে বারটি শকুন উড়ে গেলে সংখ্যার বিচারে ভারি হওয়ায় সে দাবি করে দেবতাদের রায় তার পক্ষেই গিয়েছে। যদিও নিয়মানুসারে প্রথম যে ইশারা পাবে তারই বিজয়ী হবার কথা, কিন্তু রোমুলাস ও তার অনুসারীদের দল ভারি হবার কারণে রেমুস অনিচ্ছাসত্ত্বেও তার কথা মেনে নিতে বাধ্য হয়।

রোমুলাস তার পছন্দের জায়গায় রোমের গোড়াপত্তন করে এবং শহর সুরক্ষার জন্য পরিখা খনন করা দেয়াল দিয়ে শহর ঘিরে দেয়। তখন রেমুস অট্টহাসি দিয়ে লাফিয়ে দেয়াল পার হয়ে যায় এবং তার এ সমস্ত ব্যবস্থা একেবারেই অকিঞ্চিৎকর করে বলে তাকে বিদ্রুপ করতে থাকে। সে তখনও রোমুলাসের কাছে পরাজয় নিয়ে ভেতরে ভেতরে রাগান্বিত ছিল। কিন্তু তার তীক্ষ্ণ বাক্যবাণ সহ্য করতে না পেরে রোমুলাস, অন্য মতে তার সমর্থক সেলের, তাকে হত্যা করে ফেলে। এখান থেকেই রোমানদের মধ্যে সাবধানবানীর প্রচলন হয়- রোমের দেয়াল যে-ই জোরপূর্বক অতিক্রম করতে চেষ্টা করবে তাকেই মরতে হবে।

Source: pinterest.com

এদিকে রেমুসকে হত্যা করার পর রোমুলাসের মনে অনুশোচনা হয়। সে সবরকম আরাম আয়েশ ছেড়ে দেয় এবং রাজকার্যেও মন দিতে পারছিল না। তখন রেমুসের আত্মা তার পালক বাবা-মায়ের কাছে এসে রোমুলাসের পাপ মোচনের রাস্তা বলে দেয়। সেই মোতাবেক মৃত ব্যক্তিদের জন্য রোমে প্রতিবছর উৎসব পালনের সূচনা হয় এবং রেমুসের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য রাজার সিংহাসনের পাশেই তার জন্য আরেকটি সিংহাসন, রাজদণ্ড ও অন্যান্য রাজকীয় চিহ্নের ব্যবস্থা করা হয়।

রোমানরা ইনিয়াসের বংশধর হিসেবে রোমুলাস ও রেমুসের রোম প্রতিষ্ঠার কাহিনীকেই তাদের গোড়াপত্তনের ইতিহাস বলে মানতো এবং প্রতি বছর এপ্রিল মাসের একুশ তারিখ ‘ফেস্টিভ্যাল অফ পেইলস’ এর অংশ হিসেবে তা উদযাপন করত। মূলত একটি মিথ হলেও এই কাহিনী রোমান মানসে অনেক বড় প্রভাব বিস্তার করেছিল, এবং তারা ট্রোজান জাতির উত্তরপুরুষ হিসেবে গর্ব অনুভব করত।

This is a bengali article on the history of the rise of the rome.

Reference:

  1. The History of Rome, G. B. Niebuhr, translated by Julius Charles Hare & Connop Thirlwall; Cambridge University Press, 2010; pp. 158-173
  2. Livy on the Founding of Rome

Feature Image: reaction.life

Related Articles