Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

বস্তু ও ধাতব কৌশল নিয়ে কেন পড়বেন?

মানব সভ্যতার ইতিহাস থেকে আজ আমরা সবাই জানি কীভাবে একসময়ের বনমানুষ কালের বিবর্তনে আজকের সভ্য জগতে পা রেখেছে। এই বিবর্তনের পরিক্রম হাজার বছরের, লক্ষ বছরের। আমরা জেনেছি কীভাবে প্রকৃতির কাছে অসহায় আদিম মানুষ একসময় পাথরের সাথে পাথর ঘষে আগুন তৈরি করতে শিখল। সময়ের প্রভাবে তারাই সেই পাথরের তৈরি নানা অস্ত্র তৈরি করে নিজেদের রক্ষা করেছে, বন্য পশু-পাখি শিকার করেছে। আবার তারাই একসময় বন্য প্রাণীদের পোষ মানিয়ে এক নতুন সমাজের সৃষ্টি করেছে। গোড়াপত্তন করেছে কৃষিভিত্তিক সমাজের।

ইতিহাসে সেই সময় প্রস্তর যুগ নামে পরিচিত। এরপর একসময় আমরা বিভিন্ন ধাতুর সাথে পরিচিত হতে লাগলাম। জানতে লাগলাম, ধাতুর তৈরি সামগ্রী আরও বেশি টেকসই ও কার্যক্ষম। শুরু হলো ব্রোঞ্জ যুগ, যার ভিত্তি ছিল তামা-টিনের তৈরি সংকর ধাতু ব্রোঞ্জের নানা অস্ত্র, কৃষি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী। পরিশেষে এলো লৌহ যুগ যা খ্রিস্টপূর্ব ৫০০-১,০০০ বছরের দিকে শুরু হয়ে আজ অব্দি চলছে।

ব্রোঞ্জ যুগের নানা অস্ত্র; Image Courtesy: Getty Images

 

মানব সভ্যতার ইতিহাস থেকেই আমরা জানতে পারি, আমাদের সভ্যতা কতটা ধাতু নির্ভর। কীভাবে লোহা, তামা, টিন, সোনা-রূপার মতো ধাতু নিষ্কাশন ও ইঞ্জিনিয়ারিং করে আমরা এই বর্তমান সভ্যতার বিকাশ ঘটিয়েছি। সময়ের প্রভাবে সেই ধাতুবিদ্যারও বিকাশ হয়েছে। এখন আমরা শুধু ধাতু না, বরং সিরামিক্স, গ্লাস-পলিমারসহ নানা রকমের বস্তু নিয়েই প্রতিনিয়ত গবেষণা করে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিয়েছি সুগভীর সমুদ্রগর্ভে, সৌরজগতের গ্রহ-উপগ্রহে, এমনকি সৌরজগতের বাইরের অসীম মহাকাশেও। এসবই সম্ভব হয়েছে প্রযুক্তির উন্নয়নের পাশাপাশি বস্তু ও ধাতব কৌশলের আশীর্বাদে।

বিজ্ঞানের উন্নয়নে আজ আমরা অনেক অলীক কল্পনাকে বাস্তবে রুপ দিতে সক্ষম হয়েছি। আর এজন্য দিন-রাত গবেষণা করে চলেছেন অসংখ্য বিজ্ঞানী। কেউ কাজ করছেন ইলেকট্রনিক্স নিয়ে, কেউ বা গাড়ির মোটর নিয়ে, কেউ কেউ হয়তো করছেন ন্যানোটেকনোলজি নিয়ে। বিজ্ঞানের এই জগতে বিচরণ করতে যেমন গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়নের কোনো বিকল্প নেই, তেমনি ইঞ্জিনিয়ারিং এর দুনিয়াতেও এই ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্সের কোনো জুড়ি নেই।

আমরা যে বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংই পড়ি না কেন, তাকে বাস্তবরূপ দিতে প্রয়োজন কাঁচামাল। হোক সে উচ্চ তাপসহনীয় সিরামিক্স বা অতি সূক্ষ্ণ সিলিকন চিপস- ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্সকে লাগবেই। তাই অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সাথে তালে তাল মিলিয়ে চলতে হয় ম্যাটেরিয়ালস ইঞ্জিনিয়ারিংকেও। সেজন্য বস্তু ও ধাতব কৌশলকে আরও এগিয়ে নিতে প্রয়োজন প্রচুর পড়াশোনা ও অবিরাম গবেষণা। এ লক্ষ্যেই বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্সকে একটি মৌলিক বিষয় হিসেবে পড়ানো হয়।

ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্সের সীমানা কত দূর?

আকাশে উড়ে চলা উড়োজাহাজ, আটলান্টিকের উপর ভাসমান টাইটানিক, রেসিং ট্র্যাক কাঁপানো ফেরারি, মাটির উপর দাঁড়ানো সুউচ্চ বুর্জ দুবাই, সৌরজগতের সীমানা পেরিয়ে যাওয়া ভয়েজার- কোথায় নেই ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স? কীসের সাথে কী মিশালে টাইটানিকের হাল আরও মজবুত হত? কী কাঁচামাল ব্যবহার করলে বোয়িং প্লেনের নির্মাণ খরচ কমানো সম্ভব? কী করলে ভবনের রডে মরিচা কম পড়বে? গাড়ির বডিকে একইসাথে হালকা ও মজবুত কীভাবে বানানো যায়? সোলার প্যানেলে কীসের প্রলেপ ব্যবহার করলে তা আরও কার্যকর হবে? এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর রয়েছে ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্সে। এর আওতা কত দূর পর্যন্ত বিস্তৃত? এর উত্তরে বলা চলে, মানব সভ্যতার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমরা এর সীমা থেকে বের হতে পারব না!

সৌরজগতের সীমানা ছাড়িয়ে যাওয়া ভয়েজার-১; Image Courtesy: SSPL/Getty Images

 

বাংলাদেশে বস্তু ও ধাতব কৌশল

অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও রয়েছে ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)-এ বস্তু-ধাতব কৌশল বিভাগ দিয়েই দেশে এ বিষয়ের যাত্রা শুরু। কালক্রমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, কুয়েট, চুয়েট ও রুয়েটেও চালু হয়েছে এই আকর্ষণীয় ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের কার্যক্রম।

ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্সে পড়তে চাইলে কী করা লাগবে?

এই বিষয়ে সম্মানে ভর্তি হতে চাইলে প্রথমে শিক্ষার্থীদের এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষাতে নিজের মেধার পরিচয় দিয়ে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিতশাস্ত্রে নিজের দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। এরপর অনার্সের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে মেধাতালিকা অনুযায়ী এই বিষয়ে আবেদন করতে হবে।

গ্র্যাজুয়েটদের ভবিষ্যৎ

ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স গ্র্যাজুয়েটদের জন্য সামনে অনেক রাস্তাই খোলা থাকে। প্রথমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা কী করতে চান। যদি তারা সরাসরি চাকরিতে ঢুকতে চান, তবে তাদের জন্য চাকরির বাজার বেশ সমৃদ্ধ। দেশের শীর্ষস্থানীয় সব স্টিল ইন্ডাস্ট্রিগুলোই ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স গ্র্যাজুয়েটদের সন্ধান করে থাকে। সেখানে তারা সফলতার সাথে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন। এছাড়া দেশের নানা গ্লাস-সিরামিক্স, প্লাস্টিক প্রতিষ্ঠানগুলোতেও রয়েছে চাকরির সুযোগ। তবে সিভিল-মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের মতো ম্যাটেরিয়ালস ইঞ্জিনিয়ারদেরও চাকরির অনেক সুযোগ থাকে অবকাঠামো নির্মাণের সাথে জড়িত কোম্পানিগুলোতে।

যদি কেউ শিক্ষকতাকে নিজের লক্ষ্য বলে মনে করে, তার জন্য রয়েছে নানা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ। কেউ যদি সম্মানে মেধার পরিচয় দিয়ে উত্তীর্ণ হয়, সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও নানা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টেও শিক্ষকতার সুযোগ থাকে তাদের। সেখানে তারা শিক্ষকতার পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি নানা প্রজেক্টেও উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করে দেশের উন্নয়নে অগ্রগণ্য ভূমিকা রাখতে পারেন।

বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (BCSIR); Image Courtesy: Manik Shaha/Wikimedia Commons

 

বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন; Image Courtesy: বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়

 

তবে আবার যদি কেউ মনে করেন যে তিনি গবেষণাধর্মী কাজেই নিজেকে নিয়োজিত রাখবেন, তার জন্যও রয়েছে আকর্ষণীয় সুযোগ। বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (BCSIR), বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন (BAEC) এর মতো বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানেও ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ডের দক্ষ গবেষক নিয়োগ দেয়া হয়।  

উচ্চশিক্ষার সুযোগ 

এমআইটি; Image Courtesy: John Phelan/Wikimedia Commons

ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্স গ্রাজুয়েটদের উচ্চশিক্ষায় রয়েছে অনেক সুযোগ। এসবের মধ্যে রয়েছে পৃথিবীর শীর্ষস্থানীয় সব বিশ্ববিদ্যালয়েই মাস্টার্স, পিএইচডি করার সুবর্ণ সুযোগ। ইউরোপ, আমেরিকা, এশিয়ার এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিভাগে সব সময়েই গবেষণাধর্মী নানা প্রজেক্টের কাজ চলমান থাকে। তাই তারা সব সময়েই উচ্চশিক্ষার উৎসুক মেধাবী গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের ফান্ডিং দিয়ে থাকে। ম্যাটেরিয়ালস গ্র্যাজুয়েটদের শুধু এখানেই নয়, বরং সিভিল-মেকানিক্যাল, ইলেক্ট্রিক্যাল, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর নানা ক্ষেত্রেও ক্যারিয়ার গড়তে পারে। উচ্চশিক্ষার পর শিল্পোন্নত দেশে তাদের চাকরি করারও অনেক সুযোগ রয়েছে।

উচ্চশিক্ষার জন্য যেসব দক্ষতার প্রয়োজন

উচ্চশিক্ষার জন্য আবেদন করতে একজন গ্র্যাজুয়েটের বেশ কিছু দক্ষতার পরিচয় দিতে হয়। এর মধ্যে রয়েছে একাডেমিক ফলাফল, ইংরেজি বা অন্যান্য ভাষার উপর দক্ষতা, টেকনিক্যাল স্কিল, কমিউনিকেশন স্কিল ইত্যাদি।

একাডেমিক ফলাফল: শীর্ষ পর্যায়ের সব বিশ্ববিদ্যালয়ই তাদের শিক্ষার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে একাডেমিক রেজাল্টের (সিজিপিএ) উপর বেশি গুরুত্ব প্রদান করে। মূলত সিজিপিএ দিয়ে তারা মূল্যায়ন করে যে, সেই শিক্ষার্থী তার একাডেমিক ক্যারিয়ারে কতটুকু আন্তরিক। ভালো সিজিপিএ-ধারী শিক্ষার্থীরা তাই সেখানে বেশি প্রাধান্য পায়। তবে রেজাল্ট খারাপ হলেই যে তার আর উচ্চশিক্ষার সুযোগ নেই এমনটাও নয়। বরং অন্যান্য ব্যাপারে দক্ষতার পরিচয় দিয়ে সেই ঘাটতি পূরণ করার পথ সবসময়েই প্রায় সময়েই খোলা থাকে।

ভাষার দক্ষতা: বাইরের দেশে পড়তে গেলে প্রায় সময়েই সেই দেশের ভাষায় দক্ষতা মূল্যায়ন করা হয়। বেশিরভাগ দেশেই নিজের ইংরেজি ভাষার উপর দক্ষতার প্রমাণ দেখালেই চলে। তবে জার্মানি, জাপান, ফ্রান্সের মতো দেশগুলোতে তাদের নিজেদের ভাষার উপরেও দক্ষতা বিবেচনা করা হয়।

আমেরিকাতে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রায় সব সময়েই জিআরই পরীক্ষায় ভালো স্কোর দেখাতে হয়। এর পাশাপাশি টোফেল বা আইইএলটিএস পরীক্ষাতেও নিজের সফলতা দেখাতে হয়। তবে ইউরোপ-কানাডা-অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোতে শুধু আইইএলটিএস পরীক্ষা দিয়েও নিজের ইংরেজি ভাষার দক্ষতার প্রমাণ দেয়া যায়।

টেকনিক্যাল দক্ষতা: উচ্চশিক্ষার জন্য ম্যাটেরিয়ালস সায়েন্সে তাত্ত্বিক জ্ঞান ছাড়াও ব্যবহারিক দক্ষতা থাকাও আবশ্যক। এজন্য শিক্ষার্থীর গবেষণার অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দেয়া হয়। এরকম প্রায়ই দেখা যায় যে, একটা ভালো গবেষণাপত্র বের করতে পারলে তার একাডেমিক রেজাল্ট আশানুরূপ না হলেও তাকে উচ্চশিক্ষায় বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়। এছাড়া ম্যাটল্যাব, সলিড-ওয়ার্কস, ম্যাটেরিয়াল স্টুডিও, প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজে নিজের দক্ষতার পরিচয় দিতে সক্ষম হলে শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি ও ফান্ডিংয়ের সম্ভাবনাও অনেক গুণ বেড়ে যায়।

পরিশেষে বলা চলে, বস্তু ও ধাতব কৌশলে নিজের আগ্রহ, ভালোবাসা ও নিবেদন থাকলে যে কেউ এক্ষেত্রে নিজেকে সফল করে তুলতে পারবে- এ কথা নিঃসন্দেহে বলাই যায়।

This is a bengali article discussing the career opprotunities in Materials Science and Engineering.

Feature Image: Advanced Science News

Related Articles