Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

প্রধানমন্ত্রীত্বকালে জাস্টিন ট্রুডোর কিছু সমালোচিত ঘটনা

গণতান্ত্রিক পরিবেশ, কার্যকর সিভিল সোসাইটি আর বাকস্বাধীনতার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই কানাডার গণতন্ত্র বিশ্বের কাছে অনুসরণী মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচিত সরকারগুলো কথা বলেছে মানবতার পক্ষে, মানবাধিকার আর সংখ্যালঘুদের অধিকার সংরক্ষণে ভূমিকা রেখেছে বিশ্বব্যাপী। সংকটকালে সহায়তা করেছে বিশ্বের বিভিন্ন নিপীড়িত গোষ্ঠীকে, যার একটা প্রকাশ ছিল একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধেও। কানাডার সরকারের অকুন্ঠ সমর্থন ছিল মুক্তিকামী বাঙালিদের প্রতি।

প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো 

বাবা পিয়েরে ট্রুডো ছিলেন কানাডার দীর্ঘকালীন প্রধানমন্ত্রীদের একজন। ফলে জাস্টিন ট্রুডো স্বাভাবিকভাবেই বড় হয়েছেন রাজনৈতিক পরিবেশের আবহে, রাজনীতিতেও জড়িয়েছেন যুবক বয়সেই। গোছানো বক্তব্য আর সুন্দর বাচনভঙ্গি দিয়ে নজর কাড়তে শুরু করেন রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই।
ফেডারেল এমপি হিসেবে ট্রুডোর যাত্রা শুরু হয় ২০০৮ সালের নির্বাচনের জয়ের মাধ্যমে। বিশাল জয় পান ২০১১ সালের ফেডারেল নির্বাচনেও, কিউবেকের আসন থেকে। দুই মেয়াদেই ভূমিকা রাখেন বিভিন্ন ইস্যুতে বিরোধীদলীয় ক্রিটিক হিসেবে। স্বীকৃতিস্বরূপ পান রানী এলিজাবেথ ডায়মন্ড জুবিলী মেডেল ফর কানাডা।

২০১৩ সালে লিবারেল পার্টির লিডার নির্বাচিত হওয়ার পরেই চলে আসেন কানাডার রাজনীতির পাদপ্রদীপের আলোয়, লিবারেল পার্টিকে পরের ফেডারেল নির্বাচনে এনে দেন সংখ্যাগরিষ্ঠতা।

২০১৫ সালের নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে ট্রুডো ক্যাবিনেটে সমান সংখ্যক নারী পুরুষ নিয়ে আলোড়ন তৈরি করেন, ব্যাখ্যা করেন যুগের চাহিদা হিসেবে। প্রথম মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ট্রুডো বিপুল অবকাঠামোগত উন্নয়ন শুরু করেন, ইতিবাচক ভূমিকা রাখেন অভিবাসন, ধর্মীয় স্বাধীনতা আর সম-অধিকারের ক্ষেত্রেও।

বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় কানাডার প্রধানমন্ত্রী; Image Source: AP News  

আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সমান নজর কেড়েছেন জাস্টিন ট্রুডো। দেশে আশ্রয় দিয়েছেন ২৫ হাজার সিরিয়ান শরণার্থীকে, বিরোধিতা করেছেন ট্রাম্পের মুসলিমপ্রধান দেশগুলোর শরণার্থী গ্রহণে নিষেধাজ্ঞার উপর। আমেরিকায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচিত হওয়ার পর ট্রুডো আবির্ভূত হন মুক্ত গণতান্ত্রিক বিশ্বের নেতা হিসেবে। পেয়ে যান বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা।

ট্রুডো তার প্রথম মেয়াদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিগুলোর প্রায় ৯২ ভাগ পূর্ণ করেছেন, দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হয়ে বর্তমান বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় রাখছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। তার সরকার দায়িত্ব নিয়েছে নাগরিকদের বেতন, বাসা ভাড়া, খাদ্যের মতো মৌলিক বিষয়গুলোর। দুর্যোগকালীন সময়ে তার নেতৃত্ব প্রশংসিত হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। তবুও গত মেয়াদের বেশ কয়েকটি স্ক্যান্ডাল নাড়িয়ে দিয়েছিলো ট্রুডোর ভিত, ২০১৯ এর ফেডারেল নির্বাচনে কমিয়েছে লিবারেলদের আসন। 

মহামারীকালে ট্রুডোর নেতৃত্ব প্রশংসা কুড়িয়েছে বিশ্বব্যাপী; Image Source: Toronto Star  

 

দ্য আগা খান ফাউন্ডেশন বিতর্ক 

প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পরের বছর, ২০১৬ সালে বড়দিনের ছুটি কাটাতে ট্রুডো পরিবারসহ যান শিয়াদের আধ্যাত্মিক নেতা আগা খানের ব্যক্তিগত মালিকানাধীন বাহামা দ্বীপে। সপ্তাহব্যাপী এ ভ্রমণে ট্রুডো ভাঙেন বেশ কয়েকটি ফেডারেল ইথিকস রুল। প্রথমত, কানাডার কোনো মন্ত্রী বিনামূল্যে কোনো ব্যক্তিগত ভ্রমণ সুবিধা নিতে পারেন না। বাহামা দ্বীপে ট্রুডো আগা খানের ব্যক্তিগত হেলিকপ্টার ব্যবহার করে ভাঙেন ফেডারেল ইথিকস রুলের ১২ তম সেকশন। দ্বিতীয়ত, আগা খান ফাউন্ডেশনের সাথে কানাডার সরকারের দীর্ঘদিন থেকেই বাণিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে, সরকার থেকে এখন পর্যন্ত তারা প্রায় ৩৩০ মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার পেয়েছে উন্নয়ন বরাদ্দ হিসেবে।

জাস্টিন ট্রুডো ও আগা খান; Image Source: The Post Millinnial  

ইথিকস কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ট্রুডো আগা খান ফাউন্ডেশনের সাথে সরকারের সম্পর্ক নিয়ে নীতিনির্ধারণী অবস্থানে ছিলেন। ফলে ট্রুডো এড়াতে পারেননি কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট, ভেঙেছেন কানাডার ফেডারেল ইথিকস রুলের ১১তম ধারা। প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ট্রুডো ইথিকস রুল ভেঙে পড়েন ব্যাপক সমালোচনার মুখে। ধ্বস নামে এপ্রুভাল রেটিং। ২০১৫ সালে ট্রুডোর এপ্রুভাল রেটিং যেখানে ছিল ৬০ শতাংশ, এই স্ক্যান্ডালের পরে ট্রুডোর এপ্রুভাল নেমে হয় ৪৩ শতাংশ।

ভারত সফরে কূটনৈতিক বিপর্যয়

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ট্রুডো আসেন ভারত সফরে। প্রটোকল ভেঙে রাষ্ট্রপ্রধানদের বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানানোকে রীতি বানিয়ে ফেলা মোদি যাননি ট্রুডোকে অভ্যর্থনা জানাতে। তাজমহল দেখতে গেলে অভ্যর্থনা জানাননি উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী, এদিকে দেখাই করেননি পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী। বিশ্বের সব প্রান্তে উষ্ণ অভ্যর্থনা পেতে অভ্যস্ত ট্রুডোর জন্য এই অভিজ্ঞতা ছিল রীতিমতো অনাকাঙ্ক্ষিত। ভুগিয়েছে ট্রুডোর সসফরসূচিও।

ভারত সফরকালে ট্রুডো; Image Source: CNBC.com 

ভারতের এই শীতল আচরণের কারণ, ট্রুডোর সরকারে রয়েছেন চারজন শিখ মন্ত্রী, যারা দীর্ঘদিন ধরেই পাঞ্জাবের বিচ্ছিন্নতাবাদী ‘খালিস্তান’ আন্দোলনের সমর্থন দিয়ে আসছেন, দিয়েছেন বিবৃতিও। কানাডিয়ান শিখদের ভোটব্যাংকের জন্য ট্রুডোও সমর্থন দিয়েছেন এই আন্দোলনকারীদের, আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন দিল্লীতে আয়োজিত ডিনারে।

সব মিলিয়ে ভারতের পক্ষ থেকে এই শীতল আচরণ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয় কানাডিয়ান গণমাধ্যমগুলোতে। দিল্লীকে কম অগ্রাধিকার দিয়ে সফরের শুরুতে আগ্রা, হায়দ্রাবাদ ঘুরে বেড়ানোকে অনেক কানাডিয়ান মনে করেছেন ট্যাক্সের টাকায় ট্রুডোর ফ্যামিলি ট্যুর হিসেবে।

এসএনসি-লেভালিয়ন বিতর্ক 

মুয়াম্মার গাদ্দাফির আমলে কানাডাভিত্তিক নির্মাণ প্রতিষ্ঠান এমএনসি-লেভালিয়ন বিভিন্নভাবে প্রায় ৪৮ মিলিয়ন কানাডিয়ান ডলার ঘুষ দেয় গাদ্দাফি সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে। উদ্দেশ্য ছিল প্রভাব খাটিয়ে প্রকল্প হাতিয়ে নেওয়া। অডিটে এ বিষয়টি ধরা পড়ার পর মামলা হয় ক্রিমিনাল কোর্টে। লিবারেল সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই এই কোম্পানি সরকারদলীয় এবং বিরোধীদলীয় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদধারীকে প্রভাবিত করতে থাকে আইনের ধারা পরিবর্তনের জন্য।

বিভিন্ন এমপির সাথে এই প্রতিষ্ঠান ৫১টি মিটিং করে, প্রভাবিত করার চেষ্টা করে প্রধানমন্ত্রীর অফিসকেও। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে ২০১৯ এর ফেব্রুয়ারিতে, গ্লোব এন্ড মেইলের রিপোর্টে। দ্রুতই তদন্ত শুরু করে ইথিকস কমিশন। প্রধানমন্ত্রীকে সরাসরি দায়ী না করলেও ট্রুডো আবার আটকে যান কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট এর ধারা ভাঙার জন্য। ব্যাপক সমালোচনার মুখে পদত্যাগ করতে হয় ট্রূডোর ক্যাবিনেটের তৎকালীন আইনমন্ত্রী ও এটর্নি জেনারেল জডি উইলসন রায়বোল্ডকে। সরে দাড়ান প্রধানমন্ত্রী প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি গ্রিরাল্ড বাটও। একটা সময় পদত্যাগ করতে হয় ফাইন্যান্স সেক্রেটারি জেন পিলপটকেও। উইলসন আর পিলপটকে ট্রুডো বহিষ্কার করেন দল থেকে। নির্বাচনের বছরের শুরুতে এই স্ক্যান্ডাল ধ্বস নামায় ট্রুডোর জনপ্রিয়তায়, এপ্রুভাল রেটিং নেমে যায় ৩৭ শতাংশে।

আরাবিয়ান গালা নাইটের ছবি বিতর্ক

ট্রুডো তখন ওয়েস্ট পয়েন্ট গ্রে একাডেমির শিক্ষক। এরাবিয়ান থিমে আয়োজিত গালা নাইটে ট্রুডো হাজির হলেন আলাদিনের সাজে, মুখ আর হাত কালো করে।
দীর্ঘদিন পর ছবিটি গণমাধ্যমে আসে ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে টাইম ম্যাগাজিনের রিপোর্টের পর। ছবিটি প্রকাশের পরপরই সমালোচনার মুখে পড়েন ট্রুডো।
বিশ্লেষকরা এই সাজকে ব্যাখ্যা করেন বর্ণবাদ হিসেবে, কৃষাঙ্গ মানুষের প্রতি অবজ্ঞা হিসেবে। প্রতিবাদ আসে ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ কানাডিয়ান মুসলিম থেকেও।

 আলাদিনের সাজে ট্রুডো; Image Source: Time Magazine 

অন্যান্য ইস্যুগুলোর মতোই কানাডিয় জনগণের কাছে এই ইস্যুতেও নিসংকোচে ক্ষমা চান ট্রুডো, প্রতিশ্রুতি দেন ভবিষ্যতে আর এমন কিছু না করার। এই বিতর্কগুলোর ফলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে ট্রুডোর জনপ্রিয়তায়। লিবারেল পার্টির জনপ্রিয়তা নেমে যায় কনজারভেটিভদের নিচে। এগুলো ট্রুডোকে বারবার প্রশ্নের মুখে ফেলেছে নির্বাচনকালীন সময়েও। এর একটা প্রভাব পড়ে ২০১৯ এর নির্বাচনেও। পার্লামেন্টে আসন সংখ্যা ১৮৪ থেকে নেমে হয় ১৫০, গঠন করতে হয় মাইনরিটি সরকার।

This article is written in Bangla about the recent scandals of Canadaian PM, Justin Trudeau.

All the necessary links are hyperlinked inside. 

Feature Image:  The New York Times.   

Related Articles