Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ল্যাটিনো, হিস্প্যানিক, ল্যাটিনেক্স, চিকানো শব্দগুলো যেভাবে প্রচলিত হলো

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস নিয়ে কথাবার্তা বলতে গেলে প্রায় অবধারিতভাবে ল্যাটিনো, ল্যাটিনেক্স, হিস্প্যানিক, চিকানো এই শব্দগুলো চলে আসে। একটি শব্দ মানুষের মুখে উচ্চারিত হতে হতে একটা সময়ে এসে ব্যবহারে এতটা সাবলীল, স্বাভাবিক হয়ে আসে যে এর উৎপত্তি নিয়ে প্রশ্নই জাগে না। এই শব্দগুলো দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার প্রায় ১৮% মানুষকে নির্দেশ করা হয়।

হিস্প্যানিক বনাম ল্যাটিনো

স্প্যানিশ শব্দ ‘ল্যাটিনোঅ্যামেরিকানো’কে সংক্ষেপে ল্যাটিনো বলা হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত যেসব অধিবাসীর পূর্বপুরুষ ল্যাটিন অ্যামেরিকা থেকে আগত তারাই ল্যাটিনো নামে পরিচিত। উল্লেখ্য যে এদের মাঝে ব্রাজিলীয়রাও অন্তর্ভুক্ত। অন্যদিকে হিস্প্যানিক বলতে স্প্যানিশ ভাষা ব্যবহার করা ল্যাটিন অ্যামেরিকানদের বোঝানো হয়ে থাকে। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জ বা স্পেনের আদিম অধিবাসীদের কেউও হতে পারেন হিস্প্যানিক। কেউ একইসাথে ল্যাটিনো এবং নন হিস্প্যানিক হতে পারেন, একজন স্প্যানিয়ার্ড হতে পারেন হিস্প্যানিক এবং নন ল্যাটিনো আর একজন কলম্বিয়ান দুটি পরিচয়ই বহন করেন।

আদমশুমারিতে হিস্প্যানিক শব্দটিকে ব্যবহারের উদ্যোক্তা গ্রেস ফ্লোরেস হিউজ; Image Source: mediapolicycenter.org

যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রথমবারের মতো ১৯৮০ সালের আদমশুমারিতে ‘হিস্প্যানিক’ শব্দটি ব্যবহার করে। ১৯৬০ এর বিভিন্ন আন্দোলন, ১৯৭০ এর উত্তপ্ত সংসদীয় বিতর্কই মূলত ১৯৮০ এর এই ঘটনার দিকে ধাবিত করে। ১৯৮০ সালের আগে ল্যাটিন অ্যামেরিকার বংশোদ্ভূতদেরকে আদমশুমারিতে স্প্যানিশ অথবা শ্বেতাঙ্গ হিসেবে গণনা করা হতো। এতে করে ম্যাক্সিকান অ্যামেরিকানরা কিছুটা বিপাকে পড়ে। তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তারা দরকারি সম্পদ পাচ্ছিলেন না বলে দাবী ওঠে। চাকরির বেশ কিছু প্রশিক্ষণ থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছিলেন বলেও অভিযোগ আসে। এই পরিস্থিতিতে ন্যাশনাল কাউন্সিল অভ লা রাজা (অধুনা ইউনিডো-ইউএস) আদমশুমারি ব্যুরোকে তাদের শ্রেণিবিন্যাসের নীতিতে পরিবর্তন আনার অনুরোধ জানায়। 

খাবার টেবিলে হাসিখুশি একটি হিস্প্যানিক পরিবার; Image Source: unsplash.com

ইউনিভার্সিটি অভ ক্যালিফোর্নিয়া বার্কলের সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক জি ক্রিস্টিনা মোরা এ বিষয়ে বলেন,

১৯৬০ এর শেষ এবং ৭০ এর শুরুর দিকে আদমশুমারি ব্যুরোর কর্মকর্তারা এবং নিক্সন সরকারের বিভিন্ন আমলারা চিন্তাভাবনা শুরু করেন নতুন গোষ্ঠীটিকে কী নামে ডাকা যায়। হিস্প্যানো শব্দটির সাথে সাদৃশ্য থাকায় হিস্প্যানিক শব্দটার কথা বেশিরভাগের মাথায় আসে এবং পরবর্তীতে মানুষ এটিকে গ্রহণ করেছিল তার একটি বড় কারণ ছিল এই শব্দটিকে অনেক বেশি আমেরিকান মনে হয়েছিল তাদের কাছে। তৎকালীন ডিপার্টমেন্ট অভ হেলথ, এডুকেশন অ্যান্ড ওয়েলফেয়ারের সেক্রেটারি গ্রেস ফ্লোরেস হিউজ প্রশাসনিকভাবে ব্যবহারের জন্য হিস্প্যানিক নামটি প্রস্তাব করেন। তবে এর আগেও জনমুখে এই শব্দটি প্রচলিত ছিল। হিস্প্যানিক শব্দটি বা প্রকৃতপক্ষে সুনির্দিষ্টি একটি গোষ্ঠীর নিজেদের পরিচয়ে পরিচিত হয়ে উঠার পেছনে শুধু আমলাতান্ত্রিকতা বা আন্দোলনকারীদের ভূমিকাই ছিল না, একটি শব্দকে একটি সম্প্রদায়ের একান্ত পরিচয় হিসেবে জনপ্রিয় এবং স্বীকৃত করে তোলার পেছনে ইউনিভিশন এবং টেলিমান্ডোর মতো গণমাধ্যমেরও বিরাট অবদান আছে।

১৯৮০ সালে সর্বপ্রথম সরকার পক্ষ থেকে হিস্প্যানিক শব্দটি ব্যবহৃত হলেও ১৯৯০ পর্যন্ত সময় লেগেছিল সমাজের সর্বস্তরে শব্দটির জায়গা করে নিতে। ১৯৯০ নাগাদ দু’বার আদমশুমারি হওয়ায় দেশের জনগণ বিশেষত হিস্প্যানিকরা নিজেদের নব্য পরিচয় নিয়ে আত্ম সচেতন হয়ে উঠতে পেরেছিল। এর পাশাপাশি ইউনিভিশন এবং টেলিমান্ডো দেশ জুড়ে হিস্প্যানিক সম্প্রদায়কে একীভূত করতে এবং তাদের নিজেদের অস্তিত্বকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলতে ভূমিকা পালন করেছিল।

ল্যাটিন অ্যামেরিকার সিংহভাগ উপনিবেশায়িত হয়েছিল স্পেনের শাসনে। আবার হিস্প্যানিক শব্দটার মাঝে কেমন একটু স্পেনের গন্ধ পাওয়া যায়। এই দু’য়ে মিলে একটা নতুন ঝামেলার সৃষ্টি হলো। উপনিবেশায়নের অভিযোগে স্পেনকে সাব্যস্ত করে হিস্প্যানিক শব্দটির সমালোচনা শুরু হলো। এই জায়গাটিতে হিস্প্যানিকের বিকল্প হিসেবে ল্যাটিনোর আগমন ঘটল। ল্যাটিনো বলতে ল্যাটিন অ্যামেরিকা থেকে আগতদেরকে নির্দেশ করা হয় যাতে করে ব্রাজিলের অন্তর্ভুক্তি হলেও বাদ পড়ে যায় স্পেন।

মানচিত্রে ল্যাটিন অ্যামেরিকা এবং ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ; Image Source: pngfuel.com

কলম্বিয়ান লেখক হোসে মারিয়া তোরেস কাইসেডোর কল্যাণে ল্যাটিনো অ্যামেরিকা শব্দটি তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করে। এই শব্দটি পুরোপুরিভাবে স্প্যানিশ ছিল এবং পরবর্তীতে সংক্ষিপ্ত হয়ে ল্যাটিনো হয়ে যায়। ইউনিভার্সিটি অভ শিকাগোর যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক র‍্যামন এ গুতিরেজের মতে, ল্যাটিনো শব্দটির গ্রহনযোগ্যতার পেছনে রাজনৈতিক কারণ বেশ প্রকট। ১৮০৮ থেকে ১৮২১ সালের মাঝে ল্যাটিন অ্যামেরিকান দেশগুলোর স্বাধীনতা লাভই ল্যাটিনো শব্দটির জনপ্রিয় হয়ে যাওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ বলে মনে করেন তিনি।

লিঙ্গ নিরপেক্ষ ল্যাটিনেক্স 

ল্যাটিনো বা ল্যাটিনা দুটি শব্দই সম্প্রদায়ের পাশাপাশি নির্দিষ্ট ব্যক্তির লিঙ্গের প্রতিও নির্দেশ করে থাকে। একটি শব্দের মাঝে (বিশেষত সেটি যখন কোনো সম্প্রদায়ের পরিচায়ক হয়ে থাকে) ব্যক্তি বিশেষের লিঙ্গের উপস্থিতি পরিহার করে চলার লক্ষ্যেই ল্যাটিনেক্স শব্দটির আবির্ভাব। লিঙ্গ নিরপেক্ষতাকে উৎসাহিত করতে বা আরও সুনির্দিষ্টভাবে বললে বাইনারি পরিচয়কে (পুরুষ অথবা নারী) এড়িয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে ল্যাটিনেক্স শব্দটির যাত্রা শুরু হয়। 

বাইনারি পরিচয়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনরত জনতা; Image Source: time.com

ভাষার মাঝেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুরুষতান্ত্রিকতা লুকিয়ে থাকে। ধরা যাক বেশ কয়েকজন নারী একসাথে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। স্প্যানিশ ভাষায় নারীদের দলটিকে ল্যাটিনাস বলা হবে। একাধিক পুরুষকে বোঝাতে ল্যাটিনোস ব্যবহার করা হয়। এবার খেয়াল করার বিষয় হচ্ছে যদি কোনো দলে নারী পুরুষ উভয়ই থাকেন? যদি বিশাল সংখ্যক নারীর সাথে একজন পুরুষও থাকেন তবুও ওই দলটিকে ল্যাটিনোস বলা হবে। অর্থাৎ এখানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা কাজ করবে না বরং পুরুষের উপস্থিতিই সর্বোচ্চ প্রাধান্য পাবে এবং সে অনুযায়ী ভাষা কাজ করবে। 

হোসে মারিয়া, যার কারণে ল্যাটিনো অ্যামেরিকা মানুষের মুখে মুখে চালু হয়েছিল; Image Source: flickr.com

ল্যাটিনেক্স শব্দটির মাঝে ‘এক্স’ এর উপস্থিতির সাথে এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের স্বার্থও কিছুটা জড়িত আছে। এই সম্প্রদায়ের সকলেই ব্যক্তির বাইনারি পরিচয়ের বিপক্ষে। এদের মাঝে আবার কেউ কেউ আছেন যারা নিজেরাও ঠিক নিজেদের লৈঙ্গিক পরিচয় নিয়ে নিশ্চিত নন। অর্থাৎ তারা নিজেদেরকে পুরোপুরি সমকামী বা পুরোপুরি বিষমকামী কোনো দলেই ফেলতে পারেন না। তারা ব্যক্তির বাধ্যতামূলক লৈঙ্গিক পরিচয়ের বিরুদ্ধে বলেই ল্যাটিনোস বা ল্যাটিনাস না বলে ল্যাটিনেক্স বলতে ইচ্ছুক।

চিকানো

চিকানোর স্ত্রী লিঙ্গ চিকানা। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত মেক্সিকান অধিবাসীদেরকে চিকানো নামে অভিহিত করা হয়। ১৯৬০ সালে সংঘটিত চিকানো আন্দোলনের মাধ্যমেই চিকানো শব্দটি জনপ্রিয়তা অর্জন করে। 

চিকানো শব্দটির উৎপত্তি নিয়ে সুস্পষ্ট কোনো ধারণা পাওয়া যায় না। সবচেয়ে সাধারণ মত অনুযায়ী, মেশিকানো (mexicano, উচ্চারণ মেশিকানো) শব্দটি থেকে চিকানো শব্দটির উদ্ভব। Mexico শব্দটি থেকে যেমন করে mexicano এর উদ্ভব তেমনি করে চিকো (chico, অর্থ- অল্প বয়স্ক ছেলে) শব্দটির সাথে আনো (ano) যুক্ত হয়ে চিকানো শব্দটির জন্ম।

চিকানো শব্দটি চিকাজো শব্দের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কিত। চিকাজো বলতে পড়াশোনা না জানা অল্প বয়স্ক কোনো ছেলেকে বোঝানো হয়ে থাকে। চিকাজো বলতেই এমন কাউকে নির্দেশ করা হয় আর অর্থনৈতিক অবস্থা খুবই খারাপ, কোনো পড়াশোনা নেই, যার কোনো স্বপ্ন বা লক্ষ নেই জীবনে, ভ্যাগাবন্ডের মতো রাস্তায় রাস্তায় উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেরানোই যার একমাত্র কাজ। প্রাথমিকভাবে চিকানো বলতে সকল মেক্সিকানকে নির্দেশ করা হলেও বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিক থেকে শুধু যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম নেওয়া মেক্সিকানদেরকেই চিকানো নামে অভিহিত করা হয়।

This is an article about the history of the terms Hispanic, Latino, Lanix, and Chicano. This article is written in Bangla. All the necessary references are hyperlinked within the article. 

Feature Image: unsplash.com

Related Articles