পোকেমন দুনিয়ায় স্বাগতম। এই পৃথিবীতে পোকেমন নামে প্রাণীদের বসবাস রয়েছে। কিছু পোকেমন মানুষের সাথে বাস করে, কিছু থাকে ঘাসজমিতে, কিছু আকাশে, আর কিছু পানিতে। বন্য পোকেমনরা সব জায়গায় থাকে।
পোকেমনের নাম শোনামাত্র অনেকেই স্মৃতিকাতর হয়ে পড়তে পারেন। বিশেষ করে ‘৯০ দশকের প্রজন্মের কাছে এটি শৈশব-কৈশোরের অন্যতম প্রিয় স্মৃতি। টেলিভিশনের কিংবা গেমিং জগতে এই নামের বিশেষ স্থান রয়েছে। বিশেষ করে ‘পিকাচু’ নামটি অনেকের কাছেই পরিচিত। যারা এর গেম, এনিমে বা নাম কোনোটির সাথেই পরিচিত নন, অন্তত ‘পিকাচু’ নামটি অবশ্যই কোনো না কোনোভাবে মনে রেখে থাকবেন।
পোকেমন হলো পকেট মনস্টারের (Pocket Monster- Pokémon) সংক্ষিপ্ত রূপ। এটি মূলত একটি জাপানি মিডিয়া ফ্র্যাঞ্চাইজি, যা পোকেমন কোম্পানি দ্বারা পরিচালিত। সাতোশি তাজিরি ১৯৯৬ সালে এই ফ্র্যাঞ্চাইজি তৈরি করেন। পোকেমন নামক কাল্পনিক প্রাণীকে কেন্দ্র করেই এই এনিমের কাহিনী তৈরি। পোকেমনকে কার্টুন হিসেবে চিনলেও এটি আসলে এনিমে। এনিমে আর কার্টুনের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য আছে। এনিমে শব্দটি এনিমেশন থেকে নেয়া, যেখানে বাস্তব জীবনের সাথে সম্পর্কযুক্ত বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। এনিমের বিষয়বস্তু কার্টুনের চেয়ে জটিল হয়। আর কার্টুন সাধারণত খুব সহজ-সরল হয়। এতে বিষয়বস্তু হাস্যরসাত্মকভাবে তুলে ধরা হয়। কার্টুন বিশেষ করে ছোট বাচ্চাদের জন্য তৈরি করা হয়।
পোকেমন দুনিয়ায় যারা পোকেমনকে ধরে এবং প্রশিক্ষণ দেয় সেসব মানুষকে বলা হয় প্রশিক্ষক বা Trainer। মূলত খেলাধুলা এবং অন্য পোকেমনের সাথে লড়াই করার জন্যই তারা এসব পোকেমনকে ধরে। পোকেমন ধরার জন্য বিশেষ একটি বল ব্যবহার করা হয়, যা পোকেবল (Pokéball) নামে পরিচিত। এই পোকেবল দিয়ে পোকেমনকে ধরার পর সেটি ট্রেইনারের অধিকারে চলে আসে।
পোকেমনের ইংরেজি স্লোগান হলো— “Gotta Catch ‘Em All!” [I have got to catch them (Pokémon) all], যার অর্থ “আমাকে সবগুলো (পোকেমন) ধরতে হবে”। এই পোকেমন জগতে বর্তমানে ৯০৫টি পোকেমন প্রজাতি রয়েছে। ফেব্রুয়ারি ২০২২ সাল পর্যন্ত পোকেমন এনিমের সর্বমোট ২৪টি সিজনের ১,১৮৬টি এপিসোড, এবং ১২২টি গেম এসেছে। হয়েছে ২৩টি অ্যানিমেটেড ফিল্ম ও ১টি লাইভ অ্যাকশন ফিল্ম। এছাড়া রয়েছে ট্রেডিং কার্ড গেম, খেলনা, বই, কমিক বুক, গান, এবং থিম পার্ক।
১৯৯৬ সালে গেম বয় শিরোনামে ‘পকেট মনস্টারস: রেড’ (Pocket Monsters: Red) এবং ‘পকেট মনস্টারস: গ্রিন’ (Pocket Monsters: Green) প্রথম জাপানে মুক্তি পায়। গেমের ধারণা ছিল সহজ: খেলোয়াড়রা একটি কাল্পনিক জগতে প্রবেশ করবে, যেখানে তারা সেখানের বসবাসকারী প্রাণীদেরকে ধরবে, প্রশিক্ষণ দেবে। আর অন্য খেলোয়াড়দের পোকেমনদের সাথে লড়াই করবে। ১৯৯৯ সালে গেমটি একাধিক পশ্চিমা দেশেও ছাড়া হয়। এরপর ক্রমেই সেটি সর্বকালের সবচেয়ে সফল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর একটি হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে একটি এনিমে সিরিজ তৈরি করে, যা ৩০টিরও বেশি ভাষায় অনুবাদ করা হয়। এটি লক্ষ লক্ষ মানুষের স্মৃতিতে ১৫১টি সম্পূর্ণ কাল্পনিক চরিত্রের পরিচয়েরও ছাপ ফেলেছে।
পোকেমনের স্রষ্টা সাতোশি তাজিরির শৈশবের একটি পছন্দের কাজ ছিল বাগ বা পোকা সংগ্রহ করা। এই কাজই পরবর্তীতে এই গেমের ভিত্তি তৈরি করতে তাকে অনুপ্রাণিত করেছিল।
বেশিরভাগ পোকেমনের নকশা ছিল চিত্রকর কেন সুগিমোরির (Ken Sugimori) কাজ। চরিত্রগুলোকে আলাদা ব্যক্তিত্ব দেওয়া সবসময়ই কঠিন ছিল। সুগিমোরির নকশাগুলো বৈচিত্র্যময়, এবং সেসবের বৈজ্ঞানিক ভিত্তি ছিল। শুধু জীববিদ্যা এবং প্রাণীবিদ্যা নয়, ভূতত্ত্ব— যেমন: জিওডুড (Geodude), যা মূলত একটি শিলা), রসায়ন [বিষাক্ত গ্যাসের কফিং (Koffing) এবং উইজিং (Weezing)], জীবাশ্মবিদ্যা [ফসিলের মতো ওমানিট (Omanyte) ও ওমাস্টার (Omastar)] এবং পদার্থবিদ্যা [ম্যাগনেটন (Magneton), যা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিজমের নীতিতে কাজ করে]। এসব প্রাণীদের পরিচিতির জন্য রয়েছে ক্যাটালগ, যা পোকেডেক্স (Pokédex) নামে পরিচিত। এটি ছিল মূলত গেম নার্ডদের জন্য একটি পর্যায় সারণি, এবং অনেকের জন্য এটি মনে রাখা বা মুখস্থ করা অনেক সহজ ছিল।
পোকেমন দুনিয়া এমন এক কাল্পনিক দুনিয়া যেখানে বাস্তব পৃথিবীর মতোই রয়েছে বিভিন্ন প্রাণী। মূলত পোকেমনদের সত্যিকার পৃথিবীর কিছু প্রাণী, কিছু উদ্ভিদ আর কিছু জড় পদার্থের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। তবে বাস্তব পৃথিবী থেকে এদের পার্থক্য হলো- এরা বিশেষ কিছু শক্তি বা ক্ষমতার অধিকারী। শত্রুর মুখোমুখি হলে বা আত্মরক্ষার সময় তারা এসব ক্ষমতা প্রয়োগ করে।
পোকেমনদের তাদের শারীরিক ক্ষমতা এবং শক্তি প্রয়োগের দিক থেকে ১৮ ভাগে ভাগ করা হয়েছে:
- Normal (সাধারণ)
- Fire (আগুন)
- Water (পানি)
- Grass (ঘাস)
- Bug (পোকা)
- Electric (বিদ্যুৎ)
- Ice (বরফ)
- Fighting (যুদ্ধ/লড়াই)
- Poison (বিষ)
- Ground (মাটি)
- Flying (উড়ন্ত)
- Psychic (আধিদৈবিক/মানসিক)
- Rock (পাথর/শিলা)
- Ghost (ভূত)
- Dark (অন্ধকার)
- Dragon (ড্রাগন)
- Steel (লোহা)
- Fairy (পরী)
এসব পোকেমন তাদের প্রকার অনুযায়ী একটি আরেকটির উপর শক্তিশালী বা দুর্বল হতে পারে। বাস্তব দুনিয়ার মতোই এসব শক্তি কাজ করে। যেমন: পানি আগুনকে নেভাতে পারে। তাই আগুনের পোকেমন পানির পোকেমনের কাছে দুর্বল। আবার বিদ্যুৎ যেহেতু মাটিতে কাজ করে না, তাই গ্রাউন্ড টাইপ পোকেমনগুলো ইলেকট্রিক টাইপ পোকেমনের কাছে শক্তিশালী।
পোকেমন গেম
পোকেমন গেমগুলোতে একজন খেলোয়াড় সাধারণত মূল চরিত্রে খেলে। গেমে তার একটি মিশন থাকে। তাকে কিছু পোকেমন ধরতে হয়, তাদের প্রশিক্ষণ দিতে হয়, তাদের বড় করতে হয়, অন্য খেলোয়াড়দের সাথে তাদের যুদ্ধ করাতে হয়। গেমে আটটি জিম (Gym) থাকে, যেখানে আটজন জিম লিডারদের সাথে জিম ব্যাটল খেলতে হয়। যদি খেলায় জয়ী হওয়া যায়, তবে খেলোয়াড় একটি জিম ব্যাজ পায়। এরকম আটটি ব্যাজ সংগ্রহ করতে পারলেই সে পোকেমন লিগে অংশগ্রহণ করতে পারে। তবে সেখানেও তাকে এলিট ফোর্স নামে চারজন বিখ্যাত কিন্তু শক্তিশালী পোকেমন লিডারের সাথে আবারো খেলতে হয়। তবেই সে খেলতে পারে ঐ অঞ্চলের চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড়ের সাথে, যে আগে ঐ অঞ্চলের চ্যাম্পিয়নকে হারিয়েছিল। যদি সে একবারেই কোনো বিরতি না নিয়ে এই পাঁচজনকে হারাতে পারে, তবেই সে বিজয়ী হতে পারবে। এই বিজয়ী হওয়াটা মোটেই সহজ নয়। কারণ খেলোয়াড়কে খুব বাঘা বাঘা পোকেমন লিডার আর শক্তিশালী ও দক্ষ পোকেমনদের মুখোমুখি হতে হয়।
পোকেমন কার্ড গেম বা ট্রেডিং কার্ড গেম
পোকেমনের আরো একটি জনপ্রিয় খেলা হলো পোকেমন কার্ড গেম বা ট্রেডিং কার্ড গেম (Trading Card Game)। এই খেলায় দুজন খেলোয়াড় তাদের ৬০টি কার্ড নিয়ে খেলা শুরু করে। প্রতিটি কার্ডের বক্সে বিভিন্ন পোকেমন কার্ড, পোকেমন পাওয়ার কার্ড, ট্রেইনার কার্ড ইত্যাদি থাকে। পোকেমনের ছবিযুক্ত কার্ডগুলো তাদের শক্তি (HP-Horse Power); তারা কোন পাওয়ার ব্যবহার করতে পারবে, কোন টাইপের পোকেমনের সাথে সুবিধা পারবে বা কোন প্রকার পোকেমনের বিপক্ষে দুর্বল হবে এসব থাকে। খেলোয়াড় দৈবভাবে কার্ড তুলে নিয়ে খেলা শুরু করে।
একজন খেলোয়াড় জানতে পারে না অন্যজন কী তুলেছে, বা যুদ্ধের জন্য কোন পোকেমনকে দেবে। এখানে সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়ম এবং শর্ত মেনে খেলতে হয়, যা একজন খেলোয়াড়কে আগে থেকেই শিখতে হয়। এটা অনেকটা তাস খেলার মতোই। কার্ডে প্রতিটি পোকেমনের সর্বমোট শক্তি দেয়া থাকে। এছাড়া দেয়া থাকে সে কী কী ‘পাওয়ার’ ব্যবহার করতে পারবে, সেসব পাওয়ার বিপক্ষ দলের পোকেমনকে কতটুকু শক্তিক্ষয় করতে পারবে তা। যে পোকেমন তার পাওয়ার ব্যবহার করে আগেই অন্য পোকেমনের শক্তি শেষ করতে পারবে, এবং এভাবে তার বিপক্ষ দলের সব পোকেমনকে হারাতে পারবে, সেই খেলোয়াড়ই জয়ী হবে। বিশ্বে এটি নিয়ে রীতিমতো প্রতিযোগিতামূলক খেলাও হয়ে থাকে।
পোকেমন গো
২০১৬ সালের জুলাই মাসে পোকেমন গো নামে মুক্তি পাওয়া তুমুল জনপ্রিয় গেমটি সালে বেশ আলোচিত-সমালোচিত গেম হয়ে ওঠে। এই গেমের জনপ্রিয়তা এতটাই তুঙ্গে উঠে যে মাত্র মাসের ব্যবধানে এটি শীর্ষে উঠে আসে।
এই গেমটি মূলত অগমেন্টেড রিয়েলিটির (Augmented Reality) উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। যিনি গেমটি খেলবেন তিনি তার চারপাশ থেকে পোকেমনগুলো খুঁজে বের করবেন। তারপর ‘পোকেবল’ দিয়ে সে পোকেমনগুলো ধরার চেষ্টা করবেন। এছাড়া এখানে পোকেস্টপ আর জিম রয়েছে। ইন্টারনেট আর জিপিএস প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই গেমটি খেলা যায়। পোকেমন গো গেমটি এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল যে এর প্রতি অনেকেই আসক্ত হয়ে পড়ে। এই আসক্তি একসময় অনেককেই বিপদের মুখে ফেলে দেয়। বিভিন্ন দেশের মানুষ বিড়ম্বনার শিকার হতে থাকে।
পোকেমন এনিমে
পোকেমনের সবচেয়ে জনপ্রিয় অংশটি হলো পোকেমন এনিমে। অ্যাশ হলো পোকেমন এনিমেতে অভিনয় করা মূল চরিত্রের নাম। তার বয়স মাত্র ১০ বছর আর তার বাড়ি প্যালেট শহরে। তার ইচ্ছা পুরো পৃথিবীর পোকেমনগুলোকে চেনা ও তাদের ধরা। আর তার লক্ষ্য পোকেমন মাস্টার হওয়া। সে তার ভ্রমণের পথে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বন্ধু পেয়েছে। তার বন্ধুদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য মিস্টি, ব্রক, ট্রেসি, মে, ডোউন, আইরিস, সাইলেনসহ আরো অনেকে।
এছাড়া এই সিরিজে খলনায়কের ভূমিকায় আছে টিম রকেট নামে একটি দল, যাদের কাজই হলো অন্যের পোকেমন চুরি করা। এদের মধ্যে একটি গ্রুপ আবার সারা সিরিজ জুড়ে শুধু অ্যাশের পিকাচুকে ধরার কাজই করে যাচ্ছে। এই গ্রুপে জেসি, জেমস এবং মিয়াও নামের একমাত্র কথা বলা পোকেমন আছে। তবে তারা সফলভাবে এই কাজটি এখনও করতে পারছে না। এছাড়া আরো আছে টিম প্লাজমা, টিম গ্যালাক্টিক, টিম ম্যাগমা, টিম স্কাল নামের কিছু দল, যাদের কাজ অনেকটা টিম রকেটের মতোই।
পোকেমন এনিমেতে যাত্রা কয়েকটি অঞ্চলে (Region) ভাগ করে দেখানো হয়েছে। অঞ্চলগুলো হলো:
- কেন্টো (Kanto)
- জোহটো (Johto)
- হোয়েন (Hoenn)
- সিনোহ্ (Sinnoh)
- ইউনোভা (Unova)
- কালোস (Kalos)
- আলোলা (Alola)
- গালার (Galar)
মূলত এসব অঞ্চলের উপর ভিত্তি করেই গেম আর এনিমেগুলোতে নতুন নতুন সিরিজ আনা হয়। এই অঞ্চলগুলো বাস্তব পৃথিবীর উপর ভিত্তি করেই তৈরি করা হয়েছে। যেমন- প্রথম চারটি অঞ্চল (কেন্টো, জোহটো, হোয়েন, সিনোহ্) জাপানের বিভিন্ন দ্বীপের নাম নামকরণ করা হয়েছে। ইউনোভা ও আলোলা আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের দুটি অঞ্চলের নামে, কালোস ফ্রান্সের উপর ও গালার যুক্তরাজ্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি। এসব অঞ্চলের মানচিত্রও বাস্তব পৃথিবীর মানচিত্রের অনুকরণে তৈরি। এমনকি শহরের বিভিন্ন ভবন, রাস্তাঘাট আর গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলো বেশ সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এসব আলাদা আলাদা অঞ্চলে আলাদা আলাদা পোকেমন লিগ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। যদি একজন ট্রেইনার আটটি ব্যাজ সংগ্রহ করতে পারে তবেই সে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারবে।
পোকেমনরা তাদের আত্মরক্ষার কাজে বা খেলায় বিভিন্ন রকম আক্রমণ বা প্রতিরক্ষা ব্যবহার করে। পোকেমনদের সাধারণ কিছু আক্রমণের নাম হলো:
- রেজর লিফ (Razor leaf)
- ওয়াটার গান (Water gun)
- ফ্লেইম থ্রোয়ার (Flamethrower)
- থান্ডার বোল্ট (Thunder bolt)
- বাইট (Bite)
- এয়ার কাটার (Air cutter)
- ডাবল কিক (Double kick)
এছাড়া প্রতিরক্ষার জন্য ব্যবহার করা হয়:
- প্রোটেক্ট (Protect)
- ডাজ (Dodge)
- হার্ডেন (Harden)
- রিকোভার (Recover)
- ব্যারিয়ার (Barrier)
- এজিলিটি (Agility)
পোকেমনে সবার পরিচিত নাম হলো পিকাচু (Pikachu)। হলুদ রঙের এই পোকেমন দেখতে খুব সুন্দর আর আদুরে। পিকাচু মূলত ইলেকট্রিক বা বিদ্যুতের পোকেমন। এটি তার শরীরে বিদ্যুৎ তৈরি করতে পারে আর তা আক্রমণে ব্যবহার করে। এই চরিত্রটি ইঁদুরের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। এটি পোকেমনের সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় আর পছন্দের প্রাণী। তাই মূল চরিত্র অ্যাশের সাথে একে রাখা হয়েছে।
পোকেমনের অনেক চরিত্র জাপানি লোককাহিনীর উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে। জাপানের শ্রোতাদের মতে, ভালপিক্স (Vulpix)-এর মতো পোকেমনে ফক্স স্পিরিট কিটসুনের প্রভাব বা পিকাচুর ডিজাইনে পৌরাণিক থান্ডার বিস্ট রাজিউ-এর প্রভাব আছে। কিন্তু কিছু পোকেমনের নাম ব্যক্তির নামের সাথে মিল রেখে করা হয়েছিল। যেমন, সাওয়ামুরা এবং এবিওয়ারাকে, যাদের যথাক্রমে একজন জাপানি কিকবক্সার এবং বক্সারের নামে নামকরণ করা হয়েছিল। কিন্তু ইংরেজিতে তাদের হিটমনলি (Hitmonlee) এবং হিটমনচান (Hitmonchan) বলা হয়েছিল, এগুলো মার্শাল আর্টিস্ট ব্রুস লি এবং জ্যাকি চ্যান-এর নামে করা হয়। এছাড়া লেজেন্ডারি বার্ডস, যেমন- আর্টিকুনো, জ্যাপডোস এবং মোলট্রেস, এদের নাম স্প্যানিশ শব্দ -উনো, -ডস এবং -ট্রেস থেকে এসেছে।
সময়ের সাথে সাথে এসব পোকেমন নতুন নতুন দক্ষতা আর শক্তি অর্জন করতে শেখে। তবে একইসাথে চারটির বেশি শক্তি তারা ব্যবহার করতে পারে না। পোকেমন জগতের প্রাণীদের আরো একটি বিশেষত্ব হলো— তারা সময়ের সাথে সাথে বড় হয়ে নতুন রূপ পেতে পারে। একে পোকেমন জগতের ভাষায় বলা হয় Evolution বা বিবর্তন। একটি পোকেমন সর্বোচ্চ ২টি বিবর্তন ধাপ অতিক্রম করে। উদাহরণস্বরূপ, পিচু থেকে পিকাচু হয়, এবং পিকাচু থেকে রাইচু হয়। এখানে পিচু ২টি ধাপ পেরিয়ে এর সর্বশেষ ধাপে পৌঁছায়। এই বিবর্তনের ফলে এদের শারীরিক পরিবর্তন হয় এবং এরা নতুন নামে পরিচিত হয়। এদের দেহের আকার, শক্তি ও দক্ষতাও বেড়ে যায়।
তবে সব পোকেমন এই বিবর্তন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায় না। কিছু পোকেমন শুধু ১টি ধাপই বিবর্তিত হয়। আবার কিছু কিছু পোকেমনকে পরবর্তী ধাপে নিতে চাইলে বিশেষ কিছু পাথরের দরকার পড়ে। এগুলো বিবর্তন পাথর বা Evolution Stones নামে পরিচিত। একেক প্রকার পোকেমন একেক প্রকার পাথরে বিবর্তিত হয়। যেমন: পিকাচুকে যদি রাইচু করতে হয়, তাহলে থান্ডার স্টোনের (Thunder Stone) দরকার পড়বে। পাথরটি পোকেমনের শরীরের সাথে ছোঁয়ালে তা পরবর্তী ধাপে বিবর্তিত হবে। এরকম আরো কিছু পাথরের নাম হলো:
- ফায়ার স্টোন (fire stone)
- ওয়াটার স্টোন (water stone)
- লিফ স্টোন (leaf stone)
- মুনস্টোন (moon stone)
- সানস্টোন (sun stone)
- শাইনি স্টোন (shiny stone)
- ডাস্কস্টোন (dusk stone)
- ডোনস্টোন (dawn stone)
- আইস স্টোন (ice stone)
একটি নির্দিষ্ট প্রকার পোকেমনের বিবর্তনের জন্য নির্দিষ্ট পাথর লাগে। কিন্তু ইভি (Eevee) নামের একটি পোকেমন আটটি বিভিন্ন পাথর দিয়ে পরের ধাপে বিবর্তিত হতে পারে। তবে তখন তার রূপ ও ধরন আলাদা আলাদা রকম হয়।
পোকেমন এবং তার ট্রেইনারের মধ্যে বন্ধুত্ব অনেক জরুরি। বাস্তব জগতে আমরা যেমন দেখে থাকি- একটি পোষা প্রাণীর সাথে তার মনিবের যেমন ভালো সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব গড়ে উঠলে প্রাণীটির সাথে তার বন্ধন আরো বেশি গাঢ় হয়, ঠিক তেমনি পোকেমন দুনিয়াতেও সেরকমটা ঘটে। তাদের বন্ধন মজবুত হওয়ার সাথে সাথে দক্ষতা ও শক্তিও অনেকগুণ বেড়ে যায়।
দীর্ঘ ২৬ বছর ধরে যাত্রা করে চলা এই ফ্র্যাঞ্চাইজির জনপ্রিয়তায় কেন এখনও ভাটা পড়েনি তা এর গেম আর এনিমে সিরিজের চলমান প্রক্রিয়া দেখলেই বুঝা যায়। মূলত বিশ্বের কোটি কোটি পোকেমন ভক্তের মাঝে এখনও স্বপ্নের জগৎ হয়ে আছে, এবং ভবিষ্যতেও থাকবে এই পোকেমন দুনিয়া।