Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

গ্রীক মিথোলজির অমর যত প্রেমকাহিনী!

গ্রীকদের কাছে প্রেম-ভালোবাসা ছিল জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই গ্রীক ভাষায় যখন একটা-দুটো নয়, বরং গোটা আটেক শব্দ দেখা যায় শুধুমাত্র বাংলা ভাষার ‘ভালোবাসা’ শব্দটি প্রকাশ করতে, তখন আসলে খুব বেশি অবাক হওয়ার কিছু নেই। আর সেই সাথে তো এতেও অবাক হওয়ার কিছু থাকে না যখন দেখা যায়, গ্রীক মিথোলজির বেশিরভাগ জুড়েই আছে কেবল অমর সব ভালবাসার উপাখ্যান। তবে অন্য সব ভালবাসার চেয়ে গ্রীক মিথোলজির ভালোবাসার কেচ্ছায় যে ব্যাপারটা বিশেষভাবে চোখে পড়ে সেটা হলো, এখানে ভালবাসা আর মোহকে মিশিয়ে চিরায়ত মানবপ্রজন্মের এমন এক ছবি আঁকা হয়েছে, যেটা আসলে অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। আর এই লেখায় গ্রীক মিথোলজির এমনই সব ভালবাসার গল্প তুলে ধরা হবে।

হেরো ও লিন্ডার

হেরো ছিলেন আফ্রোদিতির ধর্মযাজিকা। তিনি ছিলেন কুমারী। পুরুষের সাথে যেকোনো প্রকার অনুভূতির আদানপ্রদানে তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া ছিল। গ্রীসের হেলেস্পন্ট স্ট্রেইটের এক উঁচু চূড়ায় ছিল এই নারীর বসবাস। এরই আরেক পাশে, অ্যাবাইডসে ছিল লিন্ডারের আবাসভূমি। গ্রীক মিথোলজি অনুসারে লিন্ডার ছিলেন তরুণ এক যুবক।

এই তরুণ যুবক লিন্ডার একদিন হেরোর দেখা পেলেন। বলাই বাহুল্য, তিনি হেরোর প্রেমে পড়ে গেলেন। তবে এই প্রেম কিন্তু শেষ অব্দি আর একপাক্ষিক ভালবাসা হয়েই থাকেনি। লিন্ডারের কোমল স্বর আর হেরোর প্রতি প্রবল আবেগ হেরোকেও বাধ্য করে লিন্ডারের প্রতি প্রেমে পড়তে। সমস্যা অন্যখানে- হেরোর ওপর যে এসব কাজে রয়েছে প্রবল নিষেধাজ্ঞা!

কিন্তু নিষেধাজ্ঞা আর প্রেমে শেষ অব্দি হেরোর প্রেমই জয়ী হয়। সেটাও তাকে চালাতে হয় এই নিষেধাজ্ঞার বলয়ে থেকেই। কীভাবে? প্রতি রাতে চূড়ায় নিজের ঘরে বসে নির্দিষ্ট সময়ে হেরো একটা বাতি জ্বালাত। এই বাতি ছিল মূলত লিন্ডারের জন্য একটা সংকেত। হেরোর এই সংকেত দেখামাত্র লিন্ডার সাঁতার কেটে হেরোর কাছে চলে যেত। এমন করে হেরো আর লিন্ডারের প্রেম বেশ ভালভাবেই চলছিল, কিন্তু বিপত্তি বাধল এক রাতে।

সেই রাতে ছিল ভীষণ ঝড়, বাতাসেও ছিল প্রচন্ড বেগ। আর বাতাসের সেই বেগের জন্যই হেরোর জ্বালানো বাতির আলো হঠাৎ করেই নিভে যায়। কিন্তু হেরোর বাতি যখন নিভে গেছে, লিন্ডার তখন সবেমাত্র অর্ধেক পথ পাড়ি দিতে পেরেছে। লিন্ডার তখন বাতির আলো খুঁজতে থাকে, তাকে যে ঐ আলো বরাবরই সাঁতার কাটতে হবে। কিন্তু বাতাসের তোড়ে হেরোর বাতি আর সেই রাতে জ্বলেনি। লিন্ডার শেষ অব্দি ঝড়ের কবলে পথ হারিয়ে পানিতে ডুবে যায়। হেরোও প্রবল দুঃখে ঐ চূড়া থেকেই ঝাঁপ দেয় পানিতে। পরে অবশ্য হেরো আর লিন্ডারের ঠান্ডা দেহ সৈকতে পাওয়া যায়। দেখা গেল- দুজন দুজনকে শক্ত করে আলিঙ্গন করে আছে।

হেরো এবং লিন্ডার; Image Credit: Athens and Beyond

অরফিয়াস ও ইউরিডাইস

দেবতা অ্যাপোলো ও ক্যালিওপের সন্তান ছিলেন অরফিয়াস। বাবার কাছ থেকে অরফিয়াস সবচেয়ে আগ্রহ ভরে শিখেছিলেন ‘লাইয়ার’ বাজানো। লাইয়ার মূলত প্রাচীন গ্রিসে ব্যবহৃত এক বাদ্যযন্ত্র। এটি অরফিয়াস এত দুর্দান্তভাবে বাজাতে জানতেন যে তিনি যখন বাজাতেন তখন কেউই তাকে থামাতে পারত না। সবাই মুগ্ধ হয়ে অরফিয়াসের এই বাদ্য বাজানো শুনত। এই অনিন্দ্যসুন্দর বাদকই একবার প্রেমে পড়ে গেলেন। যার প্রেমে পড়লেন, তিনি ছিলেন ইউরিডাইস! ইউরিডাইস ছিলেন রূপের দিক থেকে যে কারো জন্যেই ঈর্ষার কারণ, মানে গ্রীক মিথোলজির যুবতীরা যেমন হয় আর কী!

Image Courtesy: Blend Swap

যা-ই হোক, অরফিয়াস তার প্রেম একদিন ইউরিডাইসের কাছে নিবেদন করেন। ইউরিডাইসও অরফিয়াসকে নিরাশ করেননি। ফলশ্রুতিতে অরফিয়াস ও ইউরিডাইসের প্রেম হয়, আর এই প্রেম একসময় গড়ায় বিয়ে অব্দি। বিয়ের পর তারা বেশ সুখে-শান্তিতেই বসবাস করছিলেন। গল্প এখানে শেষ হয়ে গেলেই বেশ হতো, কিন্তু এতটা সুখ বোধহয় ইউরিডাইস কিংবা অরফিয়াসের কপালে ছিল না।

ইউরিডাইস আর অরফিয়াস যেখানে থাকত, সেখানেই মেষ চরাতে আসত অ্যারিস্টাস। দ্রুতই ইউরিডাইসের মাতাল করা সৌন্দর্য অ্যারিস্টাসের নজর কাড়ে। সে চেষ্টা করে ইউরিডাইসের প্রণয় লাভ করবার। কিন্তু ইউরিডাইস তার সমস্ত প্রেম শুধুমাত্র অরফিয়াসের জন্যেই রেখেছিল। তাই বার বার অ্যারিস্টাসকে শূন্য হাতেই ফিরতে হতো। কিন্তু এভাবে চলার কিছুদিন পর একদিন অ্যারিস্টাস ইউরিডাইসের ওপর চড়াও হলেন। ইউরিডাইসও অ্যারিস্টাসের হাত থেকে ছাড়া পেতে ইট-পাথরের ওপর দিয়ে দ্রুত দৌড়াতে শুরু করলেন, আর এই দৌড়ের সময়ই দুঃখজনকভাবে ইউরিডাইস সাপের কামড়ে মারা যান।   

ইউরিডাইসের মৃত্যু প্রবলভাবে স্পর্শ করে অরফিয়াসকে। তিনি ইউরিডাইসের দুঃখে পাগলের মতো ঘুরতে থাকেন আর নিজের অনবদ্য সুরে গান গাইতে থাকেন। অরফিয়াসের এই দুঃখ আর গান এতটাই গাঢ় ছিল যে তা দেবতা হ্যাডেসকেও স্পর্শ করে। তিনি স্বর্গ থেকে মর্ত্যে নেমে অরফিয়াসকে বলেন, তিনি ইউরিডাইসের সাথে অরফিয়াসের দেখা করিয়ে দেবেন।

দেবতা হ্যাডেস তার কথা রেখেছিলেন, ইউরিডাইসের সাথে তিনি অরফিয়াসের দেখা করিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সেখানেও অরফিয়াসের প্রেম এতই গাঢ় ছিল যে দেবতা হ্যাডেস ইউরিডাইসকে পুনরায় মর্ত্যে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে দেন। কিন্তু এই অনুমতির পরিবর্তে তিনি অরফিয়াসকে এক শর্তের খড়গে ঝুলিয়ে দেন। সেটা হলো- অরফিয়াস ইউরিডাইসকে নিয়ে যেতে পারবেন একটাই শর্তে- মর্ত্যে হাঁটার সময় অরফিয়াস কখনও ইউরিডাইসের দিকে তাকাতে পারবে না!

কিন্তু এই শর্তে অরফিয়াসের মন আবারও ভেঙে যায়। তিনি ইউরিডাইসকে দেখার অনুমতির জন্যে প্রার্থনা করতে থাকেন। কিন্তু দেবতা অরফিয়াসের এই প্রার্থনা মঞ্জুর করেনি। আর শেষ অব্দি অরফিয়াসও দেবতার এই শর্ত মেনে চলতে পারেনি। তিনি ঠিকই একসময় ইউরিডাইসের দিকে তাকিয়ে ফেলেন, আর তৎক্ষণাৎ দেবতা ইউরিডাইসকে মর্ত্য থেকে উঠিয়ে নেন। অরফিয়াস তখন আবারও গান গেয়ে নিজের দুঃখ প্রকাশ করতে থাকেন, আর দেবতার কাছে বলতে থাকেন, অরফিয়াসকেও যেন মৃত্যুর অভিশাপ দেওয়া হয়। তাহলে অন্তত সে ইউরিডাইসের কাছে থাকতে পারবে!

Image Courtesy: Greek Mythology

পিগম্যালিয়ন ও গ্যালাটিয়া

পিগম্যালিয়ন ছিলেন সাইপ্রাসের এক বিখ্যাত ভাস্কর। অবশ্য কোথাও কোথাও তিনি খোদ সাইপ্রাসের রাজা ছিলেন বলেও বর্ণনা করা হয়। তিনি নিজেকে বলতেন ‘গর্বিত ব্যাচেলর’, এবং সবাইকে এটাও বলে বেড়াতেন যে তিনি কখনও প্রেমে পড়বেন না। এমনই এক সময়ে পিগম্যালিয়ন একদিন এক অনন্যসুন্দরী রমণীর ভাস্কর্য তৈরি করছিলেন, আর সেই ভাস্কর্য তৈরি করতে করতেই তিনি নিজের তৈরি করা ভাস্কর্যের প্রেমে পড়ে যান। কিন্তু প্রেমে পড়লে কী হবে, ওটা তো আর রক্তমাংসের নারী ছিল না। পিগম্যালিয়নের প্রণয়ও তাই আলোর মুখ দেখছিল না। তবে এরই মাঝে দেবী আফ্রোদিতির এক অর্চনা উৎসবে তিনি দেবীর কাছে প্রার্থনা করে বসেন- নিজের ভাস্কর্যের মতো সুন্দরী রমণী যেন তিনি পান!

Image Courtesy: Clint Falls/Pinterest

 

পিগম্যালিয়নের এই প্রার্থনা দেবীর মন গলিয়েছিল। প্রার্থনা শেষে তিনি সেদিন বাসায় ফিরলেন, রুটিনমাফিক নিজের ঐ ভাস্কর্যকেই চুমু খেলেন, এবং খেয়াল করলেন ওটাকে আর পাথুরে ভাষ্কর্য লাগছে না! ভাস্কর্যটি আস্তে আস্তে পিগম্যালিয়নের সামনেই উষ্ণ হতে লাগল, রূপান্তরিত হতে লাগল রক্তমাংসে গড়া এক মানবীতে। পিগম্যালিয়ন সেই মানবীর নাম রেখেছিলেন ‘গ্যালাটিয়া’। এরপর তিনি গ্যালাটিয়াকে বিয়ে করেন আর সুখে-শান্তিতেই বাস করতে লাগেন!

ইরোস ও সাইকি

সাইকি ছিল গ্রীসের এক রাজার সবচেয়ে ছোট মেয়ে। রাজার তিন মেয়ের মধ্যে সাইকিই ছিল সবচেয়ে সুন্দরী। তার সৌন্দর্য এতটাই বেশি ছিল যে সেসময়ের লোকেরা ভাবত- সাইকি হয়তো কোনো দেবী। কিছু কিছু লোক তো আফ্রোদিতির জায়গায় সৌন্দর্যের দেবী হিসেবে সাইকিরও পূজা করত। আর এসবই দেবী আফ্রোদিতিকে রুষ্ট করে তোলে। তিনি সাইকির ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার কথা ভাবতে থাকেন। প্রতিশোধের অংশ হিসেবে তিনি সাইকির কাছে পাঠান নিজের পুত্র, প্রেমের দেবতা ইরোসকে। ইরোসের উপর নির্দেশনা ছিল তিনি যেন সাইকিকে অভিশপ্ত তীর মেরে এমন করে দেন যেন সাইকি কুৎসিত ও কদাকার কোনো কিছুর প্রেমে পড়েন।

মায়ের আদেশ পালনে ইরোস সেই রাতে উড়ে যান সাইকির প্রাসাদে। সাইকির শয়নকক্ষে গিয়ে তিনি ধনুকে তীর লাগান, কিন্তু শেষ অব্দি ইরোসের আর তীর ছোঁড়া হয় না। ঘুমন্ত সাইকিকে দেখেই ইরোস প্রেমে পড়ে যান, আর তীর বিদ্ধ করা ব্যতিরেকেই তিনি মায়ের কাছে ফিরে যান। এদিকে সাইকির বাবা তখন ভবিষ্যদ্বাণীর মাধ্যমে জানতে পারেন, সাইকির কারণে তার রাজত্বে সমস্যা হতে পারে।

সাইকির বাবা তৎক্ষণাৎ সাইকিকে পাহাড়ে পাঠিয়ে দেন, আর সেখানেই সাইকির সাথে এক কুৎসিত বস্তুর বিয়ে ঠিক হয়। তবে ঘটনা এরপরই মোড় নেয় অন্যদিকে। সাইকিকে হুট করেই দেবতা জিফাইর ইরোসের প্রাসাদে পাঠিয়ে দেন। সেখানে সাইকির দিন ভালই কাটছিল। তার ওপর শর্তারোপ করা ছিল- তিনি কখনোই কার সাথে তার বিয়ে হয়েছে সেটা দেখতে পাবেন না। আসলে সাইকির বিয়ে ইরোসের সাথেই হয়েছিল, কিন্তু তিনি যদি ইরোসের মুখ দেখে ফেলেন তাহলে বিচ্ছেদ অনিবার্য।

কিন্তু একদিন এই ঘটনাও ঘটে গেল। নিজের বোনদের প্ররোচনায় সাইকি একদিন নিজের স্বামীর মুখ দেখে ফেলেন, আর দেখেন, তাকে যে কুৎসিত বস্তুর সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্যে পাহাড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, এটা আসলে মোটেও সেই কুৎসিত বস্তু নয়। সে দেবতা ইরোস! এদিকে সাইকি ইরোসকে দেখে ফেলায় ইরোস ভীষণ রেগে যান, তৎক্ষণাৎ তিনি শয়নকক্ষ ত্যাগ করেন!

দেবী আফ্রোদিতি সাইকির এই শর্তভঙ্গে ভীষণ রেগে যান। তিনি প্রতিশোধ নিতে সাইকি আর ইরোসকে দীর্ঘদিন আলাদা রাখেন। সাইকিকে পুনর্বার তার স্বামীকে দেখার জন্যে এরপর অনেকবার পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। যদিও সাইকির এসব পরীক্ষা ইরোসের একদমই ভাল লাগছিল না। তিনি নিজেই একসময় আফ্রোদিতির প্রতিশোধ উপেক্ষা করে সাইকিকে খুঁজে বের করেন, আর সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে থাকেন!

Image Courtesy: The Eros and Psyche project

ইফিস ও ইয়ান্থে

গ্রীসের এক দ্বীপ ‘ক্রিট’। এই দ্বীপেই বাস করতেন লিডগাস ও টেলিথুসা, সম্পর্কে তারা ছিলেন স্বামী-স্ত্রী। নিজেদের দরিদ্রদশার জন্য এই দম্পতি সন্তান নিতে ভয় পেত। তারা ভাবত- তাদের যদি একটি মেয়ে হয়, তাহলে বিয়ে দেওয়ার সময় চড়া মূল্যের পণ দিতে হবে। এই পণের অর্থ তারা কোথায় পাবে? তবুও একটি সন্তানের আকাঙ্ক্ষা তাদের দিন দিন বেড়েই চলছিল। তাই তারা ভাবল- সন্তান গ্রহণ করবে। কিন্তু লিডগাস স্ত্রীকে সাফ বলে দিলেন, যদি মেয়ে হয়, তাহলে তিনি সেই সন্তানকে খুন করে ফেলবেন।

লিডগাসের এই কথা শুনে টেলিথুসা ভীষণ ভয় পেয়ে যান। এমনই এক রাতে মিশরীয় দেবী আইসিস টেলিথুসাকে দেখা দেন। তিনি তাকে বলেন, তিনি টেলিথুসাকে সাহায্য করবেন।

গর্ভধারণ শেষে টেলিথুসা একসময় ফুটফুটে এক মেয়ের জন্ম দেন। কিন্তু নিজের সন্তানকে বাঁচাতে টেলিথুসা স্বামীর কাছে বলেন, তিনি এক ছেলের জন্ম দিয়েছেন। লিডগাসও টেলিথুসার কথায় কোনো সন্দেহ করেননি। তিনি শিশুর নাম রাখেন আইফিস। আইফিস নাম রাখায় অবশ্য টেলিথুসা স্বস্তি বোধ করেন, কেননা নামটি ছিল ইউনিসেক্স। এরপর আইফিস ছেলের মতোই বড় হতে লাগল, বাবার কাছে সে একজন ছেলেই ছিল।

পোশাকের দিকসহ সব কিছুতেই আইফিসের বড় হওয়া ছিল ছেলের মতোই। এরপর একদিন এক অসম্ভব সুন্দরী কুমারী ইয়ান্থে আইফিসের প্রেমে পড়ে যায়। ইয়ান্থের ভালোবাসার জোয়ারেই কিনা, আইফিসও একসময় ইয়ান্থেকে ভালবেসে ফেলে। দুজনে এরপর বিয়ে করবে বলেও ঠিক করে। আইফিসের এই সিদ্ধান্ত বাবা লিডগাসকে বললে তিনিও মেনে নেন। কিন্তু, ইয়ান্থে মোটেও সমকামী ছিলেন না, আর আইফিসিসের বেড়ে ওঠা ছেলেদের মতো হলেও সে তো আদতে ছিলেন একজন নারী!

আইফিস এরপর সমস্যায় পড়ে গেলেন। তিনি কী করবেন বুঝতে পারছিলেন না। আইফিসকে এই সমস্যা থেকে উদ্ধার করেন দেবী আইসিস, যিনি আইফিসের জন্মের আগেই মা টেলিথুসাকে সাহায্য করার কথা দিয়েছিলেন। দেবী আইসিস আইফিসকে নিজ ক্ষমতাবলে পুরুষে রূপান্তর করে দেন। আইফিস এরপর ইয়ান্থেকে বিয়েও করেন। এরপরের গল্পটা ঐ আইকনিক লাইনের মতোই- অতঃপর তারা সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে লাগল!

আটালান্টা ও হিপোমিনিস

আটালান্টা ছিলেন কুমারী এক শিকারী। শুধু শিকারী বললে অবশ্য আটালান্টার দক্ষতাকে খাটো করা হবে, বরং বলা ভাল- তিনি ছিলেন দক্ষ শিকারী। গ্রীসের কোনো শিকারীই তাকে হারাতে পারত না। দৌড়বিদ হিসেবেও আটালান্টার বেশ সুনাম ছিল। তবে আটালান্টা ছিলেন প্রেমবিরোধী। তিনি পণ করেছিলেন- তিনি কোনোদিনই বিয়ে করবেন না। তবে এই বিয়ের ব্যাপারে তিনি সবাইকে এক চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিতেন- আটালান্টাকে বিয়ে করার আগে যেকোনো পুরুষকে আটালান্টার সাথে এক রেসে অংশ নিতে হবে। সেই রেসে যদি আটালান্টাকে তিনি হারাতে পারেন, তবেই তিনি আটালান্টার মন পাবেন। আর যদি না পারেন? পরিণতি হিসেবে আছে সাক্ষাৎ মৃত্যু!

স্বাভাবিকভাবেই তাই যে পুরুষই এসে দাঁড়াত আটালান্টার দ্বারে, তাকেই শোচনীয় পরিণতি বরণ করতে হতো। অন্যদিকে হিপোমিনিস ছিলেন এক দক্ষ দৌড়বিদ, কলোডোনিয়ান শিকারীদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ শিকারী! এই হিপোমিনিস আটালান্টাকে দেখামাত্র প্রেমে পড়ে যান। তবে প্রেমে পড়ে গেলেই তো হবে না, আটালান্টার মন পাওয়া তো আর চাট্টিখানি কথা নয়।

উইলেম ভ্যান হার্পের আঁকা ‘হার্প আটালান্টা ও হিপোমিনিস’; Image Credit: Athens and Beyond

আর সেই কারণেই হিপোমিনিস সিদ্ধান্ত নেন, তিনি আটালান্টার সাথে রেসে অংশ নেবেন! যে-ই ভাবা সেই কাজ, একদিন সত্যি সত্যিই আটালান্টা আর হিপোমিনিস রেসে অংশ নিয়ে ফেলেন। রেসের শুরু থেকেই দেখা যায়, দক্ষ আটালান্টা হিপোমিনিসকে ছাড়িয়ে আগে চলে যাচ্ছে। তবে কি এবার হিপোমিনিসকে মেনে নিতে হবে নির্ঘাত মৃত্যু?

না, হিপোমিনিস এক বুদ্ধি আঁটেন। তিনি আটালান্টার সামনে একটা করে স্বর্ণের আপেল ছুড়ে দেন। আটালান্টা হিপোমিনিসের ফাঁদে পা দেন, সেই আপেল তার মনোযোগ নাড়িয়ে দেয়। আপেল এড়াতে গিয়ে তিনি হিপোমিনিসের পেছনে পড়ে যান। তবে এরপরও যে তিনি হিপোমিনিসের আগে যেতে পারেননি এমনটাও নয়। তিনি পেরেছিলেন, তবে যতবারই তিনি আগে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন, ততবারই হিপোমিনিস একইভাবে আটালান্টার পথে বাধা তৈরি করেছে। শেষ অব্দি এর চেয়েও বড় বাঁধায় পড়তে হয়েছে আটালান্টাকে।

 রেসে হেরে তাকে বাঁধা পড়তে হয়েছে হিপোমিনিসের বাহুডোরে!

This feature is in Bangla Language written on some famous love story from Greek mythology. Image Credits are attached inside captions. Necessary references:

1/ 'Mythology: Timeless Tales of Gods and Heroes' by Edith Hamilton

2/ Greek Mythology Stories About Love 

Featured Image: Greek Gods Paradise

Related Articles