Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দেশে দেশে নববর্ষ পালনের মজার কিছু রীতি

দরজায় কড়া নাড়ছে ২০২৩। শীঘ্রই আমরা প্রবেশ করবো নতুন একটি বছরে, ফেলে আসা আক্ষেপ মুছে নতুন স্বপ্নে হয়তো বুক বাধবো অনেকেই। পুরাতন বছরকে বিদায় আর নতুনের অভ্যর্থনা তাই বহু বহু বছর থেকেই নানা সংস্কৃতির অংশ। বর্তমানে আতশবাজি, গানবাজনা ইত্যাদির মাধ্যমে নতুন বছর উদযাপন জনপ্রিয় বটে, তবে এর বাইরেও নানারকম রীতি রয়েছে।

আজকের লেখা সাজানো হয়েছে বিভিন্ন দেশের তেমনই চমকপ্রদ কিছু রীতি দিয়ে। বলে রাখা ভালো, এর সবগুলোই যে ইংরেজি নববর্ষে পালিত হয় তা নয়, কোনো কোনোটির উপলক্ষ সেই দেশের নিজস্ব নববর্ষ। আবার সেখানকার সবাই যে এসব রীতি পালন করেন তেমনটিও নয়। তাই বলে কিন্তু একেবারে হারিয়ে যায়নি সেগুলো।

জাপান

সুবা নুডলস নামে জাপানে একধরনের খাবার তৈরি হয়। নিউ ইয়ার্স ইভ বা নববর্ষের অব্যবহিত পূর্বের সন্ধ্যায় তারা এই নুডলস খেয়ে থাকে। বলা হয়, এই নুডলস অতীত আর ভবিষ্যতের যোগসূত্র স্থাপনের প্রতীক। জাপানীরা মনে করে, চলে যাওয়া বছরের অপ্রাপ্তিগুলো ফেলে নতুনের আশা দেখায় এই নুডলস।  

মধ্যরাতে সুবা নুডলস খেয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানান অনেক জাপানী নাগরিক; Image Source: seriouseats.com

দ্বিতীয় আরেকটি প্রচলিত রীতি মূলত পালিত হয় বৌদ্ধ মন্দিরগুলোতে। পুরনো বছরের শেষে ১০৮ বার বাজানো হয় মন্দিরের ঘন্টা। এই আচারের নাম জোয়া না কেন (Joya no kane)। বৌদ্ধমতে মানুষের পার্থিব ইচ্ছে অথবা পাপ নাকি ১০৮টি, এর প্রতিফলন ঘটে ঘন্টা বাজানোতে। তাদের বিশ্বাস- এর মাধ্যমে দূরীভূত হয় ফেলে আসা হয় চলে যাওয়া বছরের পঙ্কিলতা।

স্পেন

আইবেরিয়ান পেনিনসুলার এই দেশে বেশ মজার একটি ঐতিহ্য চালু আছে। ৩১ ডিসেম্বর রাতে ১২টা বাজার আগে স্প্যানিশরা ১২টি সবুজ আঙ্গুর নিয়ে প্রস্তুত হয়। প্রতিবার ঘন্টা পড়ার সাথে সাথে একটা করে আঙ্গুর খেতে চেষ্টা করে তারা। বলা হয়, যদি বারোটা ঘন্টার পর কেউ সবগুলো খেয়ে নিতে পারে তার জন্য নতুন বছর বয়ে নিয়ে আসবে সুখ আর সমৃদ্ধি। ধারণা করা হয়, বিংশ শতকের শুরুতে দক্ষিণ স্পেনে আরম্ভ হয়েছিলো এই রীতি।

মাদ্রিদের পুয়ের্তা ডেল সলেই জাঁকজমকের সাথে বরণ করা হয় নববর্ষ; Image Source: madridurbanvibes.com

কলম্বিয়া

দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশে নববর্ষ বরণে বেশ কিছু মজার কান্ড করা হয়। নববর্ষের পার্টিতে তারা খালি স্যুটকেস নিয়ে যায়, যার মাধ্যমে বোঝানো হয় আসছে বছরে প্রচুর ঘোরাঘুরি আছে তাদের ভাগ্যে। কেউ কেউ টাকাপয়সাও হাতে রাখে, যাতে নতুন বছরে ব্যাংক ব্যালেন্স ভালো হয়।  

খালি স্যুটকেস নিয়ে নববর্ষের পার্টিতে যায় কলম্বিয়ানরা; Image Source: awol.com.au

দ্বিতীয় আরেকটি রীতির কথা না বললেই নয়। বছরের শেষ রাতে অনেকেই নাকি তিনটে আলু রাখে বালিশের নিচে: একটা খোসা ছাড়ানো, একটা না ছাড়ানো, আর আরেকটা আধাআধি ছাড়ানো। মধ্যরাতে বালিশের নিচে হাত ঢুকিয়ে প্রথম যেটার স্পর্শ পায় সেটাই বের করে তারা। যদি এটা হয় খোসা ছাড়ানো তাহলে শীঘ্রই ফকির হতে যাচ্ছে তারা। খোসা থাকলে কেল্লা ফতে, বহু অর্থবিত্ত আছে কপালে। আর আধাআধি হলে দুইয়ের মাঝামাঝি কিছু একটা হবে আর কী!

চেক প্রজাতন্ত্র

স্পেনের আঙ্গুর আর কলম্বিয়ার আলু ছেড়ে আসা যাক চেক প্রজাতন্ত্রের আপেলে! এখানকার লোকেরা নববর্ষের সময় আপেল দুই ভাগে ভাগ করে দেখে মাঝখানে কী আকৃতি দেখা যাচ্ছে। যদি তারার মতো হয়, তাহলে ভাগ্যে আছে সুখ আর সুস্বাস্থ্য। তবে ক্রসের মতো দেখা গেলে স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তিত থাকতে হবে।

ফিলিপাইন

এশিয়ার দেশ ফিলিপাইনও নববর্ষে ফলমূল বেশ পছন্দ করে। তবে এখানে কোনো বাছবিচার নেই, কেবল গোল ফল হতে হবে। গোল ফল মুদ্রার প্রতিনিধিত্ব করে, মধ্যরাতে ১২টি গোল ফল খেলে তাই নতুন বছরে আসবে টাকা আর টাকা। এর পাশাপাশি রাত বারোটা বাজার আগে তারা দরজা, জানালা, আলমারি সব খুলে ফেলে। উদ্দেশ্য- নতুন দিনের বয়ে আনা সৌভাগ্য যেন প্রবেশ করে বাড়ির আনাচেকানাচে।  

গ্রীস

পেঁয়াজ দিয়ে নববর্ষ পালনের রীতি আছে গ্রীসে। তবে পেঁয়াজের মতো দেখতে হলেও সত্যিকার পেঁয়াজ নয় এটা। ক্রিটে জন্মানো এই বিষাক্ত উদ্ভিদের নাম স্কুইল বা সি অনিয়ন। সমূলে উৎপাটন করলেও স্কুলের নতুন পাতা আর ফুল গজায়। এমন কঠিন প্রাণ যার তাকে দরজার বাইরে ঝুলিয়ে রেখে আসলে গ্রীকরা নতুন করে বাঁচার কথা বোঝায়। অনেক বাবা-মা পরদিন নাকে ছেলে-মেয়ের মাথায় স্কুইল দিয়ে বাড়ি মেরে ঘুম থেকে ওঠায়!

দরজার সামনে স্কুইল ঝুলিয়ে রাখে গ্রীকরা; Image Source: worldmark.world

কানাডা

ডিসেম্বর মাসে শীতে কানাডার অনেক এলাকায় লেকের উপরিভাগ বরফ হয়ে যায়। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষেরা বছরের শেষ রাতে বরফে আবৃত লেকে বন্ধুবান্ধব নিয়ে মাছ শিকার করেন, সাথে চলে খানপিনা আর আড্ডা।

চিলি

নতুন বছরে চিলির লোকেরা স্মরণ করে চলে যাওয়া আত্মীয়স্বজনদের। গোরস্থান ভরে ওঠে লোকের কোলাহলে, সেখানে রাত কাটিয়ে ভালোবাসার সেসব মানুষের স্মৃতি রোমন্থন করেন তারা, যারা আর আমাদের মধ্যে নেই। সারারাত চলে খাওয়াদাওয়া, মোমবাতি প্রজ্জলন আর প্রিয়জনের কবর সাজানোর কাজ।

চিলির লোকেরা নববর্ষের রাতটা কাটায় গোরস্থানে; Image Source: luxtimes.lu

ডেনমার্ক

কারো ওপর প্রচণ্ড রাগ উঠছে? মনে হচ্ছে থালাবাসন ভেঙে ফেলি? তাহলে চলে যান ডেনমার্ক! ড্যানিশরা সারা বছর জমিয়ে রাখে পুরনো হয়ে যাওয়া কাচের বাসন-কোসন। এরপর নববর্ষের রাতে আত্মীয় আর বন্ধুদের বাসার সদর দরজায় ছুড়ে মেরে ভাঙে সেসব। সকালে উঠে যত বেশি ভাঙা টুকরো দেখা যাবে দরজায় ততই নাকি ভালো।

দরজার সামনে যত বেশি ভাঙা টুকরো পড়ে থাকবে ততই ভালো; Image Source: worldmark.world

আয়ারল্যান্ড

ছোঁড়াছুড়ির দিক থেকে আইরিশরাও পিছিয়ে নেই। পুরনো বছরের শেষ দিনে ঘরবাড়ি পরিষ্কার করে বন্ধুবান্ধব আর আত্মীয়স্বজন একত্রিত হয়, এরপর সবাই মিলে রুটি ছুড়ে মারে দেয়ালে! বলা হয়- এর ফলে নতুন বছরে খাবারের অভাব হবে না।

স্কটল্যান্ড

সাবধান! মধ্যরাতে কেউ দরজার বেল বাজালে আগে দেখুন কোনো উপহার নিয়ে এসেছে কিনা! একে বলা হয় ফার্স্ট ফুটিং (first footing), যখন মধ্যরাত্রের অতিথির উপহার নিয়ে আসার মাধ্যমে সূচনা হয় সৌভাগ্যের। যদি খালি হাতে এসে থাকে তবে ঢুকতে দেবেন না কিন্তু, তাতে নাকি মওকা পেয়ে যায় দুর্ভাগ্য!

ইকুয়েডর

নামকরা কারো কুশপুত্তলিকা দাহ করে ফেঁসে গেছেন? পুলিশ খুঁজছে আপনাকে? চলে যান ইকুয়েডর। তারা নববর্ষ পালন করে রাজনৈতিক নেতা, সঙ্গীতশিল্পী, চিত্রতারকা বা বিখ্যাত কোনো চরিত্রের কুশপুত্তলিকা জ্বালিয়ে! এর মাধ্যমে বিগত বারো মাসের দুর্ভাগ্য নাকি মুছে যায়, সূচনা হয় সৌভাগ্যের! ধারণা করা হয়, ১৮৯৫ সালে পীতজ্বরের মহামারী থেকে এই রীতির উৎপত্তি। তখন সংক্রমণ ঠেকাতে মৃতদেহ কফিনে ভরে পুড়িয়ে ফেলা হতো।  

ইকুয়েডরে নববর্ষ উদযাপন; Image Source: mannaproject.org

দক্ষিণ আফ্রিকা

নববর্ষের রাতে সাবধানে চলাচল করবেন দক্ষিণ আফ্রিকার রাস্তায়, লোকজন নাকি জানালা দিয়ে ফেলে দেয় তাদের পুরাতন আসবাবপত্র! তাহলেই নাকি নতুন বছর বয়ে আনবে সমৃদ্ধি! তবে এই কাজের ফলে মাঝে মাঝেই আহত হয় মানুষ, তাই কর্তৃপক্ষ এই রীতি পালনে সাবধানতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে।

সুইজারল্যান্ড

সুইসরা অবশ্য আসবাব ফেলে না, ফেলে ক্রিম (whipped cream)। তা-ও যেখানে সেখানে না, একেবারে ঘরের মেঝেতে। এর মাধ্যমে নাকি নতুন বছরে ডেকে আনা যায় অর্থকড়ি।

নতুন বছরকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত আমরা সবাই। এই ছুতোয় উদযাপনের মজার কোনো রীতি যদি চালু হয়েই যায়, ক্ষতি কী! তবে সবসময় মনে রাখতে হবে, আমরা যা-ই করি না কেন, নিজের এবং অন্যের যাতে ক্ষতি না হয়, আনন্দ করতে গিয়ে যেন সীমা অতিক্রম না করে ফেলি কেউ।

This is a Bengali language article about new year traditions in different countries. Necessary references are hyperlinked and also mentioned below.
References
• Marinelli, L. (2022). 12 Fascinating New Year’s Eve Traditions from Around The World. Taste of Home.
• 13 New Year’s Traditions from Cultures Around the World. Invaluable.
• Arneson, K. (2016). How New Year's Eve is celebrated in 7 different countries. Business Insider.
• Weird New Year's traditions that you didn't know about. Pin & Travel.
• 25 New Years Traditions Around the World & How Countries Celebrate. Bilingual Kidspot.

Feature Image: nationaltoday.com

Related Articles