ঘুম থেকে উঠে, একটু ক্লান্ত লাগলে বা কোনো কারণ ছাড়াই চোখ চুলকাই আমরা। চোখ চুলকালে তো চুলকাবেনই। চিকিৎসকেরা বলেন, চোখ ঘষলে চোখে পানি উৎপন্ন হয়, যেটা কিনা চোখের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। একইসাথে এই একটি কাজ মানসিক চাপও কমাতে সাহায্য করে, প্রভাব রাখে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখতেও।
তবে অতিরিক্ত কিছুই ভালো না। চোখ ঘষার ক্ষেত্রেও সেটা প্রযোজ্য। চোখ অতিরিক্ত চুলকানোর ফলে হতে পারে নানারকম বড় ধরনের ক্ষতি। কী সেগুলো? চলুন, জেনে নেওয়া যাক!
চোখের ডার্ক সার্কেল
চোখ জুড়ে যে কালো ছোপ নিয়ে আমরা অনেক বেশি সমস্যায় ভুগি, সেই ডার্ক সার্কেলের পেছনে শুধু কম ঘুম নয়, আছে চোখ ডলার অভ্যাস। বারবার চোখ ঘষলে চোখের চারপাশে রক্ত জমাট হতে শুরু করে। চোখের নিচে থাকা সরু রক্তনালীগুলো ভেঙে যাওয়ার কারণে এমনটা হয়। শুধু তা-ই না, চোখের সাদা অংশে হুট করে যে লাল রক্তনালীগুলো ভেসে ওঠে, সেটার পেছনেও রয়েছে একই কারণ।
কর্নিয়ার ক্ষতি
চোখে হাত দিয়ে অনেক বেশি ডললে সেটা বাইরের সাধারণ কিছু ক্ষতি করে বটে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি তৈরি করে চোখের দৃষ্টিশক্তির। অতিরিক্ত চোখ ঘষা কর্নিয়ার আকার বদলে দিয়ে কেরাটোকোনাস নামক দৃষ্টিজনিত সমস্যার জন্ম দেয়। সাধারণত এমনটা সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে যখন চোখের ভেতরে পাপড়ি বা কোনো ধুলোবালি পড়ে। সেটা থেকে তৈরি হওয়া চুলকানি বা জ্বালাপোড়া থেকে দ্রুত মুক্তি পেতে অভ্যাসবশতই চোখ ঘষি আমরা। আর সেটা সরাসরি আঘাত করে কর্ণিয়াকে। খুব স্বল্প আঘাত থেকে শুরু করে পিঙ্ক আই ও আলো সহ্য না করতে পারার মতো সমস্যাগুলোর দিকেও ঠেলে দেয় এই কর্ণিয়ার আঘাত।
সংক্রমণ
চোখ স্পর্শ করার সময় প্রতিবার কি হাত ধুয়ে নেন আপনি? নিশ্চয়ই না! আর তাই যতবার চোখ ঘষা হবে ঠিক ততবারই সংক্রমণের সম্ভাবনা বাড়বে কেবল। দরজা খুলতে গিয়ে, হাত মেলাতে গিয়ে- আরো অনেকভাবেই হাতে জীবাণু চলে আসতে পারে। এভাবে মানুষ যে শুধু ঠান্ডার দ্বারা সংক্রমিত হয় তা না, চোখের সংক্রমণও এক্ষেত্রে ঘটতেই পারে।
অ্যালার্জি বৃদ্ধি
অ্যালার্জি দেখা দেওয়া মানেই চোখ চুলকাবে। এ সময় চোখ চুলকে নিলে চুলকানি কিছুটা প্রশমিতও হয়। তবে সাময়িক এই প্রশমনের পরবর্তী প্রভাব কিন্তু বেশ বাজেভাবে দেখা দিতে পারে আপনার চোখে। এক্ষেত্রে চোখের স্বাভাবিক অবস্থার বাইরে যাওয়ায় আপনার অ্যালার্জির সংক্রমণ বৃদ্ধি পেতে পারে।
চোখের অসুস্থতা বৃদ্ধি
চোখ ঘষলে যে সেটাতে শুধু নতুন সমস্যা তৈরি হয় তা না। একইসাথে আপনার যদি চোখে পূর্ববর্তী কোনোরকম অসুস্থতা, যেমন- গ্লুকোমা থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে সেটাকে বাড়িয়ে তোলে এই ছোট্ট অভ্যাসটি। চোখের পেছনের দিকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এই অভ্যাস। আর সেখান থেকে জন্ম নেয় চোখের স্নায়ুর ক্ষতি হওয়া থেকে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলার মতো সমস্যাগুলো।
সাধারণত চিকিৎসকেরা চোখের কোনো সার্জারির পর চোখে হাত দিতে মানা করেন। এর কারণ শুধু সার্জারি নয়। কারণটা হলো, চিকিৎসকদের মতে চোখের উপরিভাগে হাত দিয়ে বারবার ঘষলে নিরাপত্তামূলক আবরণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আর সেখান থেকে হয়ে যেতে পারে বড় রকমের ক্ষতিও।
চোখ চুলকালে তাহলে কী করবেন?
চোখ ডলা বা ঘষার নানারকম সমস্যা আছে। তাই এমন অভ্যাস থেকে চিকিৎসকেরা বিরত থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। প্রশ্ন হলো, এমন অবস্থায় চোখ না চুলকালে ঠিক কী করা উচিৎ? এর সমাধানটাও খুব সহজ। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এক্ষেত্রে আই ড্রপ রাখতে পারেন আপনার কাছে। চোখ চুলকালে এই ড্রপের দুই থেকে তিন ফোঁটা ব্যবহার করুন। অথবা একটু পানির ঝাপটা দেওয়ার চেষ্টা করুন চোখে।
সাধারণত অ্যালার্জি, সংক্রমণ, চোখের শুষ্কতা, অতিরিক্ত সময় একভাবে তাকিয়ে থাকা, কন্ট্যাক্ট লেন্স থেকে শুরু করে নানারকম কারণে চোখ ঘষে ফেলে। এই প্রবৃত্তিকে বেশ স্বাভাবিকই বলা চলে। তাই চেষ্টা করুন একটু সচেতন থাকার। চোখের নিচের কালো দাগ, ভাঁজ ইত্যাদি থেকে দূরে থাকতে হাত বারবার ধোয়ার অভ্যাস করুন। আপনার চোখ চুলকানোর পেছনে অসুস্থতাজনিত কোনো কারণ থাকলে সেটার সমাধান খুঁজুন। একসাথে অনেকক্ষণ ডিজিটাল মাধ্যমের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টিশক্তির উপরে চাপ বৃদ্ধি করা থেকে বিরত থাকুন। ডাক্তারের কথানুযায়ী নিজের চোখের নিয়মিত যত্ন নিন। ব্যস, তাহলেই আর পরেরবার থেকে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে না আপনাকে!