প্যারিস
সেডান থেকে ১৫,০০০ প্রুশিয়ান এগিয়ে আসছিল প্যারিসের দিকে। ট্রশো শহর প্রতিরক্ষায় পেলেন ন্যাশনাল গার্ডসহ প্রায় সাড়ে চার লাখের মতো মিলিশিয়া। এরা ছড়িয়ে ছিল প্যারিস ঘিরে ষোলটি দুর্গে। ব্যাটল অফ সেডানের আগে ম্যাকমোহনের সাহায্যার্থে পাঠানো হয়েছিল ৬০,০০০ সেনা। তাদের যত দ্রুত সম্ভব প্যারিসে ফিরে আসার আদেশ জারি হয়। অবরোধের কথা ভেবে রসদপত্রের জোগাড় চলতে লাগল। খারাপ পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে সরকারের একাংশ সরিয়ে নেয়া হলো নিকটবর্তী ট্যুরস শহরে।
১৭ সেপ্টেম্বর থেকে প্রুশিয়ানরা প্যারিসের উপকণ্ঠে আসতে শুরু করে। আর্মি অফ ময়েজ উত্তর আর থার্ড আর্মি দক্ষিণ থেকে উপস্থিত হলো। ১৯ তারিখ ন্যাশনাল গার্ডের ২৮,০০০ সদস্য হঠকারীভাবে প্রুশিয়ান এক দলের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে তারা জান হাতে নিয়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়। ২০ তারিখের ভেতরেই প্রুশিয়ানরা প্যারিস ঘিরে ফেলে। এই বেষ্টনীর নাম তারা দিয়েছিল দ্য আয়রন রিং। শহরের পশ্চিমে বিখ্যাত ভার্সাই প্রাসাদও তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে, এখানেই প্রুশিয়ার রাজকীয় হেডকোয়ার্টার স্থাপিত হয়।
ন্যাশনাল গভর্নমেন্ট দিকে দিকে বেলুনের মাধ্যমে জনগণের মধ্য থেকে মিলিশিয়া গঠন করে প্যারিস মুক্ত করার আবেদন পাঠায়। এই কথা জার্মানদের কানে গেল তারা শহরে কামান দাগার জন্য সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে। কিন্তু অবরোধ পরিচালনাকারী জেনারেল ব্লুমেন্থাল, বিসমার্ক আর ক্রাউন প্রিন্স ফ্রেডেরিক এর বিপক্ষে থাকায় গোলাবর্ষণের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পিছিয়ে যায়। ততদিনে অবরুদ্ধ ফরাসিরা বেলুনে করে মানুষ পাঠানোর চেষ্টা করছিল। অক্টোবরের ৮ তারিখ বেলুনে করে গ্যাম্বেটা ট্যুরসে গিয়ে যুদ্ধের সার্বিক ব্যবস্থাপনার ভার নেন।
মেটজের পতন
১৮,০০০ সৈনিকের সাথে ৭০,০০০ বেসামরিক নাগরিক মেটজে অবরুদ্ধ হয়ে আছে। খাবারদাবারের অভাব দেখা দিলে ৪ সেপ্টেম্বর থেকে ফরাসিরা অশ্বারোহী দলের ঘোড়াগুলি মেরে খেতে শুরু করল। বাজাইন কয়েকবার চেষ্টা করলেন অবরোধ ভাঙার, প্রত্যেকবারই ব্যর্থ হলেন। অনেক ফরাসি এককভাবে প্রুশিয়ানদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে গেলেও প্রুশিয়ানরা সবাইকে ফিরিয়ে দেয়। দুর্ভিক্ষের পাশাপাশি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নানারকম রোগ বালাই ছড়িয়ে পড়তে থাকে। অবশেষে ২৭ অক্টোবর, ১৮৭০ সালে বাজাইন আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করেন।
প্যারিসের বিশৃঙ্খলা
বাজাইনের আত্মসমর্পণের দিনে প্যারিসের উত্তরপূর্বে বুর্গে গ্রামে থাকা ছোট একটি প্রুশিয়ান ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে ফরাসিরা শত্রুদের পিছু হটিয়ে দিতে সক্ষম হয়। এই খবরে শহরে যখন আনন্দ উল্লাস চলছে তখন পাল্টা প্রুশিয়ান আক্রমণে ১,২০০ সাথি ফেলে ফরাসিরা গ্রাম থেকে পালিয়ে আসে। মেটজের পতনের খবর এসে পৌঁছলে প্যারিসের জনগণের মনোবলও হ্রাস পায়। ফলে ৩১ অক্টোবর ন্যাশনাল গার্ডের উগ্রপন্থি একটি উপদল বিদ্রোহ করে। তারা ফরাসি বিপ্লবের অনুরূপ একটি সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানায়। এই দিন পরিচিত ব্ল্যাক মানডে নামে। তবে বিশ্বস্ত সেনাদের সহায়তায় একদিন পরেই ট্রশো বিদ্রোহীদের দমন করতে সক্ষম হন।
লইর
প্যারিসের দক্ষিণে লইর নদীর অববাহিকায় অর্লিয়েন্স শহর। অক্টোবরের ১০ তারিখ জেনারেল ট্যান-র্যাথসামহাউজেন অল্প কিছু বাভারিয়ান সেনা নিয়ে অর্লিয়েন্স দখল করেন। এদিকে ন্যাশনাল গভর্নমেন্টের আবেদনের পর লইরের অঞ্চলে প্রায় ৭০,০০০ ফরাসি সেনা জমা হয়। নিজের মাত্র ২০,০০০ এর মতো সেনা নিয়ে জেনারেল ট্যান-র্যাথসামহাউজেন অর্লিয়েন্স ছেড়ে কলামিয়ার্স গ্রামের সামনে গিয়ে শত্রুদের মোকাবেলা করেন। কিন্তু তিনগুণের অধিক ফরাসি বাহিনীর কাছে বাভারিয়ানরা পরাস্ত হয়। জাব্রুকেনের পর এই ছিল ফরাসিদের প্রথম বিজয়। এর ফলে অর্লিয়েন্স হাতবদল হয়ে আবার ফরাসিদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেল।
এদিকে মেটজের পতনের পর সেকেন্ড আর্মির প্রচুর সেনা সেদিক থেকে লইরে চলে এলে এখানে সম্মিলিত প্রুশিয়ান ও বাভারিয়ান বাহিনী এক লাখ ছাড়িয়ে যায়। এর নামকরণ হয় আর্মি অফ লইর। ২৮ নভেম্বর অর্লিয়েন্সের উত্তরে ব্যাটল অফ বিউনে ফরাসি আক্রমণ ঠেকিয়ে দেয় জার্মানরা। বৃষ্টি আর তুষারের মাঝেই প্যারিসের দিকে যাবার মানসে আবার ১-২ ডিসেম্বর ফরাসিরা হামলে পড়ল প্রুশিয়ানদের উপর (The Great Sortie)। এই লড়াই পরিচিত ব্যাটল অফ লইনি অথবা সেকেন্ড ব্যাটল অফ অর্লিয়েন্স নামে। প্রুশিয়ানরা ফরাসিদের পরাজিত করে পুনরায় অর্লিয়েন্সের দখল বুঝে নেয় ৩রা ডিসেম্বর। ৮-১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলমান বিউজেন্সি শহরের যুদ্ধেও তারা ফরাসিদের হারিয়ে দেয়। শহরের পতন হতে পারে ভেবে ১১ ডিসেম্বর ট্যুরস থেকে ন্যাশনাল গভর্নমেন্ট সরে যায় ফ্রান্সের দক্ষিণপ্রান্তের বোর্দো শহরে।
শীতের প্রকোপ উপেক্ষা করে প্রুশিয়ানরা চাপ অব্যহত রাখলে ফরাসিদের লইর বাহিনী দুই ভাগে ভেঙে পড়ে।একদল দক্ষিণে বুর্গেস আর আরেকদল পশ্চিমে ম্যান্স শহরের দিকে পালাতে থাকে। ১৯ ডিসেম্বর কিছু সেনা ম্যান্স এসে পৌঁছে। শীত আর রোগবালাইতে সব বাহিনীই তখন কাবু। ফলে জার্মানরাও কিছুদিন বিশ্রাম নিল। তবে ১৮৭১ সালের ৪ঠা জানুয়ারি তারা ম্যান্সের কাছে এসে পড়ে। ৭ তারিখ থেকে আরম্ভ হয়ে ছয়দিন চলা ব্যাটল অফ ম্যান্সে’ লইরের ফরাসি বাহিনী কার্যত ধ্বংস হয়ে যায়। ফলে দক্ষিণ দিক থেকে প্যারিসে কোনো সাহায্য যাওয়ার উপায় রইল না।
উত্তরের লড়াই
প্যারিসের উত্তরে ১৭,০০০ ফরাসি সেনা জমায়েতের খবরে জেনারেল ম্যান্টফেল রওনা হলেন। ১৮৭০ সালের ২৭ নভেম্বর সংঘটিত অ্যামিয়েন্স শহরের যুদ্ধের ফলাফল অনুমিতভাবেই প্রুশিয়ানদের পক্ষে যায়। ফরাসিরা পিছিয়ে যেতে চাইলে ম্যান্টফেল ধাওয়া করেন।
ছোটখাট কিছু শহর অধিকার করার পর ২৩ ডিসেম্বর অ্যামিয়েন্সের পূর্বে আরেক সংঘর্ষেও ম্যান্টফেল বিজয়ী হন (ব্যাটল অফ পন্ট-নোয়েলেজ)। ফরাসিদের সাথে তখন ৩০,০০০ সেনা। এই নিয়ে ১৮৭১ সালের ৩রা জানুয়ারি তারা বাপাউমের কাছে একটি বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষে জয়ী হলেও প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে পিছিয়ে যেতে বাধ্য হয়। ১৯ জানুয়ারি আবার অ্যামিয়েন্সের পূর্বে ব্যাটল অফ সেন্ট কুয়েন্টিনের পর উত্তরের ফরাসি সেনাবাহিনীও কার্যত শেষ হয়ে যায়।
পূর্বদিকের সংঘাত
স্ট্র্যাসবুর্গ পতনের পর সেদিকের প্রুশিয়ানরা ৩১ অক্টোবর দিজোন দখল করে। তারা বেলফোর্ট শহরও অবরোধ করল। অবরোধ ভাঙতে লইরের ফরাসি সেনাদের যে অংশ বুর্গেস এসে পৌঁছে তাদের দিজোনের দিকে পাঠিয়ে দেয়া হলো। সব মিলিয়ে ১৫,০০০ ফরাসি দিজোন আর বেলফোর্টের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে জমায়েত হয়। তাদের কমান্ডার জেনারেল বুর্বাকি মেটজের গ্র্যাভেলত-সেন্ট প্রিভেট যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।
এই অঞ্চল ছিল সুইজারল্যান্ড সীমান্তের কাছে। শীতের তীব্রতায় দুই পক্ষই এখানে পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে। ফলে ফরাসিরা আক্রমণ চালাতে এগিয়ে আসলে প্রুশিয়ানরা ডিসেম্বরে দিজোন ছেড়ে দেয়। জানুয়ারির ৯ তারিখে প্রুশিয়ানরা এক সংঘর্ষে বিজয়ী হয়। এদিকে ম্যান্টফেলের কাছে অতিরিক্ত সেনা এসে পৌঁছে। তার কমান্ডে থাকা ১,২০,০০০ সৈনিকের এই বাহিনীর নাম দেয়া হলো দক্ষিণের আর্মি। ১৫-১৭ জানুয়ারি ব্যাটল অফ হেরিকোর্টে (Battle of the Lisaine/ Battle of Héricourt) বুর্বাকি প্রুশিয়ান ব্যুহ ভাঙতে ব্যর্থ হলেন। পলায়নরত ফরাসিদের এরপর প্রুশিয়ান বাহিনী ঘিরে ফেললে কেবল সুইস সীমান্ত তাদের জন্য খোলা ছিল। ২৬ জানুয়ারি বুর্বাকি তার সেনাদের সীমান্ত অতিক্রম করে যাবার নির্দেশ দেন। পরদিন তিনি নিজের মাথায় গুলি চালিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। আশ্চর্য হলেও সত্যি যে তিনি বেঁচে গিয়েছিলেন। ওদিকে প্রায় ৮৫,০০০ ফরাসি সেনা সীমান্ত অতিক্রম করলে সুইসরা তাদের নিরস্ত্র করে আটক করে। পূর্বাঞ্চল থেকে প্যারিসে কোনো সাহায্যের সম্ভাবনাও নিঃশেষ হয়ে গেল।
প্যারিসের দুর্দশা
১৮৭০ সালের নভেম্বরের শেষদিকে ফরাসিরা প্যারিস থেকে উত্তর-পশ্চিম অভিমুখে প্রুশিয়ান ব্যুহের উপর আঘাত হানার পরিকল্পনা করেছিল। কলামিয়ার্সের বিজয়ের পর অতি উৎসাহী হয়ে তারা পরিকল্পনা বদলে দক্ষিণ-পূর্বে অগ্রসর হবার কথা ভাবল। তাদের ধারণা হয়েছিল লইরের আর্মি প্যারিসের দিকে যাত্রা করবে এবং তাদের সাথে তখন মিলিত হওয়া যাবে।এই উদ্দেশ্যে জেনারেল ডুক্রোর হাতে ৮০,০০০ সেনা তুলে দেয়া হয়। ২৮ নভেম্বর থেকে ডুক্রো প্যারিসের উত্তর-পূর্বে মার্নে নদী অতিক্রম করে অবরোধকারীদের আক্রমণের চেষ্টা করেন। তুমুল সংঘর্ষের পর ৩রা ডিসেম্বর ১২০০০ হতাহত ফেলে তাকে পিছিয়ে আসতে হয়। ওদিকে লইরের সেনাদের পরাজয়ের পর এটা নিশ্চিত হয়ে যায় যে ডুক্রো সফল হলেও তাতে ফরাসিদের কোনো লাভ হতো না।
অবরোধের তীব্রতা এবার দৃশ্যমান হতে শুরু করল। ঘোড়ার মাংস প্রকাশ্যে তো প্রকাশ্যে বিক্রি হচ্ছিলই, এর সাথে কুকুর, বিড়াল, ইঁদুর সবই প্যারিসবাসী খেতে আরম্ভ করে। চিড়িয়াখানা থেকেও পশুপাখি খাবার জন্য সংগ্রহ করা হয়। হাতি, বাঘ, আর জিরাফের মাংস পয়সাওয়ালা লোকদের ক্ষুধা মেটাতে ব্যবহার হচ্ছিল। ক্রিসমাস ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে অবস্থা আরো খারাপ হয়। রোগবালাই বাড়তে থাকে, মানসিকভাবেও বাসিন্দারা ভেঙে পড়ার উপক্রম হলো। ট্রশো হিসেব করে সরকারকে জানালেন, পরের বছরের ২০ জানুয়ারির ভেতরে খাবার হিসেবে ব্যবহার করা যায় এমন সব কিছু ফুরিয়ে যাবে। বিপন্ন ফরাসিরা ২১-২২ ডিসেম্বর আরেকবার চেষ্টা করে অবরোধ ভেদ করতে। কিন্তু ততদিনে তারা এমনই দুর্বল হয়ে পড়েছে যে লড়াইয়ের জন্য ছিটেফোঁটা শক্তিও অবশিষ্ট নেই। ফলে আবারও ঠেলা খেয়ে তারা প্যারিসেই ফেরত আসে।
এদিকে ভার্সাই প্রাসাদে প্রুশিয়ান হেডকোয়ার্টারে চলছিল অভ্যন্তরীণ রেষারেষির খেলা। মল্টকে আর বিসমার্ক দুজনের মধ্যে মতানৈক্য চরম আকার ধারণ করে, ফলে দুই পক্ষই পদত্যাগের হুমকি দিচ্ছিল। মল্টকে আপাদমস্তক একজন সামরিক কর্মকর্তা, তার কাছে ঝান্ডা উড়িয়ে প্যারিসে প্রবেশ করা মানেই বিজয়। এজন্য দরকার হলে তিনি গোলা মেরে ফরাসি রাজধানী মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে রাজি। বিসমার্ক দূরদর্শী একজন রাজনীতিবিদ। তিনি জানেন সামরিক সাফল্য দরকার হলেও সত্যিকার টেকসই সমাধান আলোচনার মাধ্যমেই হয়। জার্মানির বাইরে সাম্রাজ্য সম্প্রসারণ কোনোদিনই বিসমার্কের উদ্দেশ্য ছিল না।
এদিকে ফরাসিদের দুরবস্থার সুযোগে রাশিয়া গলার কাঁটা ১৮৫৬ সালের ক্রিমিয়ান চুক্তির অংশবিশেষ একপক্ষীয়ভাবে রদ করে। এতে ইংল্যান্ড থেকে রাশিয়ার প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারিত হয়। ফলে ফ্রান্স-প্রুশিয়ার লড়াইয়ে অন্যান্য পরাশক্তির যোগদানের সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছিল, যা বিসমার্কের কাম্য ছিল না। ওদিকে লম্বা অবরোধে প্রুশিয়ানদের মাঝেও নানা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, সাথে সাথে সেনাদলের শৃঙ্খলাজনিত সমস্যা বাড়তে থাকে।
প্যারিসবাসীর করুণ অবস্থা ইউরোপে অজানা ছিল না। ফলে জনমত ক্রমেই জার্মানদের বিপক্ষে ঘুরে যাচ্ছিল। এমন অবস্থায় দ্রুত এই অবরোধ শেষ করতে প্যারিসে কামান দাগার সিদ্ধান্ত হয়, তবে প্রুশিয়ান হাই কমান্ডের মাঝে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বিভেদ ছিল। ক্রাউন প্রিন্স নিজে এর বিপক্ষে ছিলেন।
৫ জানুয়ারি ১৮৭১ সাল। প্রুশিয়ান কামান গর্জে উঠল। প্যারিসের ইজি, ভানভেস আর মন্ট্রোজ দুর্গের প্রতিরোধ গুঁড়িয়ে দিয়ে কামান নিয়ে আসা হলো প্যারিসের কেন্দ্রে আঘাত করার মতো দূরত্বে। প্রুশিয়ানদের গোলায় হতাহত হলো বহু সাধারণ নারী-পুরুষ-শিশু। স্যাল্পেট্রিয়ের হাসপাতালের উপর শোভা পাচ্ছিল রেড ক্রসের চিহ্ন, কাজেই আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এখানে আক্রমণ নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু গোলা আঘাত করে এই হাসপাতালেও। তিন সপ্তাহ ধরে টানা ১২,০০০ গোলা প্যারিসের উপর বর্ষিত হয়। ১,৪০০ দালানকোঠা ধূলিসাৎ হয়ে যায়। হতাহতের সংখ্যা ছিল ৩৭৫ জন।