Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

অনিন্দ্যসুন্দর ঐতিহাসিক সাত প্যাগোডা

ধর্ম মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দেয়। অসারতা ও অজ্ঞানতা কাটিয়ে সঠিক পথে চলতে মানুষ সেই প্রাচীনকাল থেকেই ধর্মের আশ্রয় নিয়েছে। মানব সভ্যতা যখন একটু একটু করে উন্নত থেকে উন্নততর হতে শুরু করলো, আস্তে আস্তে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ প্রয়োজন অনুভব করলো ধর্ম, ধর্মীয় রীতিনীতি এবং আচার-অনুষ্ঠান পালন কেন্দ্রের অর্থাৎ ধর্মীয় উপাসনালয়ের।

এইসব ধর্মীয় উপাসনালয়ের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা এবং আকর্ষণ চিরন্তন। পৃথিবীর নানা স্থানে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের প্রার্থনা এবং উপাসনার জন্য সেই প্রাচীনকাল থেকে আজ অবধি নির্মিত হয়ে আসছে নানা মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা ও গির্জা। এমন প্রাচীন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের অনেকগুলোই আজ শুধুমাত্র ‘ধর্মীয় পরিচয়’ ছাড়িয়ে অনেক বড় বড় পর্যটন আকর্ষণের কেন্দ্র হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে কালের পরিক্রমায়। এসব পবিত্র স্থানে প্রতিবছর হাজার হাজার দর্শনার্থী আসেন ঘুরতে, পরিচিত হতে আসেন বিভিন্ন প্রাচীন ধর্মীয় ঐতিহ্যের সাথে। আজকের আয়োজনে উঠে এসেছে এমনই সাতটি ঐতিহাসিক এবং অনিন্দ্যসুন্দর বৌদ্ধ মন্দির বা প্যাগোডা যেগুলো শুধুমাত্র ধর্মীয় পরিচয়ের বাইরে আজ অত্যন্ত বড় সাতটি ভ্রমণ কেন্দ্র।

বিগ ওয়াইল্ড গুজ প্যাগোডা

চায়নার শিয়ান সাম্রাজ্যের ঐতিহ্যের ধারক এবং বাহক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে বিগ ওয়াইল্ড গুজ প্যাগোডাটি। শিয়ান শহরের কেন্দ্রস্থল থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে Da Ci’en মন্দির কমপ্লেক্সে প্যাগোডাটি অবস্থিত। বৌদ্ধ ধর্মের অন্যতম পবিত্র তীর্থভূমি হিসেবে প্রতি বছর হাজার হাজার দর্শনার্থী প্যাগোডাটি পরিদর্শনে আসেন। দেখতে সাধারণ কিন্তু অত্যন্ত আকর্ষণীয় এই প্যাগোডাটি বর্তমানে ‘জাতীয় সংস্কৃতি রক্ষণাবেক্ষণ সংস্থা’র নিয়ন্ত্রণাধীন। চারটি A চিহ্নিত এই পর্যটন কেন্দ্রটি ২০১৪ সালের ২২ জুন মাসে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে নিবন্ধিত হয়। পুরো প্যাগোডাটি ইটের তৈরি, এই প্যাগোডা তৈরিতে কোন সিমেন্ট ব্যবহৃত হয়নি। বিভিন্ন সময় ভূমিকম্পসহ নানাভাবে প্যাগোডাটির অনেক ক্ষয়ক্ষতি হলেও পরবর্তীতে এটি মেরামত করা হয়েছে। প্যাগোডাটির পাশেই পুরো স্থাপনার অংশ হিসেবে আরো আছে Da Ci’en মন্দির, বাগান এবং অন্যান্য কিছু সুযোগ সুবিধা। ৬৫২ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত এই প্যাগোডাটি জায়ান্ট ওয়াইল্ড গুজ প্যাগোডা নামেও পরিচিত।

বিগ ওয়াইল্ড গুজ প্যাগোডা; Source: Wanderlust

ইয়োলো ক্রেন প্যাগোডা

তাং সাম্রাজ্যে কালীন অন্যতম পর্যটক আকর্ষণের কেন্দ্রভূমি ছিল ইয়োলো ক্রেন প্যাগোডা। চায়নার হুয়ান প্রদেশের চুয়াং অঞ্চলের ‘স্নেক হিল’ পাহাড়ের চূড়াতে এই প্যাগোডাটি অবস্থিত ছিল। Literati সম্প্রদায়ের অনেকেই এই প্যাগোডাকে কেন্দ্র করে লিখেছেন কবিতা যা পরবর্তীতে প্যাগোডাটিকে করে তুলেছে আরও বিখ্যাত। বিশ্বাস করা হতো যে, এই প্যাগোডার চূড়ায় উঠলে প্রকৃতির একেবারে কাছাকাছি যাওয়া যাবে। ১৯৮৫ সালে প্যাগোডাটির অংশগুলো খুলে চাংজিয়াং নদীর সেতু নিকটবর্তী স্থানে স্থাপন করা হয়। প্যাগোডাটির ইতিহাসে এভাবে বারো বার এটি স্থানান্তর করা হয়েছে। আজও এর চূড়ায় পর্যটকেরা উঠেন। যদিও এটি এখন আর আগের সেই পাহাড়ের উপরে প্রকৃতির সান্নিধ্যে নেই তারপরও প্যাগোডাটির চূড়া থেকে ‘হুয়াং এবং ইয়াংতেজে’ নদীর চমৎকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়।

ট্রান কোয়ক প্যাগোডা; Source: Wanderlust

ট্রান কোয়ক প্যাগোডা

১৫০০ বছরের ঐতিহ্যের বাহক ট্রান কোয়ক প্যাগোডাটি Tran Quoc এর পশ্চিম লেকের একটি ছোট উপদ্বীপে অবস্থিত। হনুই এর সবথেকে পুরনো এবং ঐতিহ্যবাহী প্যাগোডা হিসেবে এর রয়েছে একটি বিশেষ অবস্থান। পশ্চিম লেকের মনোরম এবং মোহময়ী পবিত্র পরিবেশে জাঁকজমকপূর্ণ এই প্যাগোডাটি আসলেই দেখার মতো একটি স্থান। তাই তো প্রতি বছর ভিয়েতনামের বাইরে থেকে প্রচুর পর্যটক দলে দলে প্যাগোডাসহ লেকটি দেখতে আসেন। দেশের জনগণের কাছেও এর গুরুত্ব এবং পবিত্রতা কোনো অংশে কম নয়। চমৎকার পরিবেশ, মোহময়ী পবিত্রতা এবং ধর্মীয় কারণে প্যাগোডাটি ভিয়েতনামের এক খুবই ‘গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা’ হিসেবে পরিচিতি পেয়ে আসছে। বছরের বিশেষ দিনে এই প্যাগোডায় বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

ট্রান কোয়ক প্যাগোডা; Source: Wanderlust

টজি প্যাগোডা

জাপানের সবথেকে উঁচু ধর্মীয় স্থাপনা হিসেবে পরিচিত টজি প্যাগোডাটি Kyoto’এর এক ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন। প্যাগোডাটির উচ্চতা ৫৭ মিটার। এই সুন্দর ও শোভনীয় স্থাপনাটি শহরের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে জুগের পর যুগ ধরে। প্যাগোডাটি দেখতে শরৎকালে সবথেকে সুন্দর লাগে। এসময় চেরি এবং অন্যান্য পত্র-পল্লবে সুশোভিত হয় প্যাগোডাটি। ৮২৬ খ্রিষ্টাব্দে ‘কবো ডাইস’ প্যাগোডাটি নির্মাণ করেন। এর প্রধান মেঝেতে মহান বুদ্ধের চারটি মূর্তি রয়েছে। শুধুমাত্র কালেভদ্রে দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেয়া হয় মেঝেটি।প্যাগোডাসহ পুরো স্থাপনাটি আজ বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। প্রতিবছর, বিশেষ করে শরৎকালে, এই প্যাগোডা দেখতে দর্শনার্থীদের ধুম পড়ে যায়। এসময় আশেপাশের প্রকৃতি পত্র- পল্লবে যেভাবে সুশোভিত হয় তা সত্যিই দেখার মতো। প্যাগোডাটির পুরো নাম Kyo-o-gokokuji মন্দির।

টজি প্যাগোডা; Source: Wanderlust

টাওইস্ত প্যাগোডা

ফিলিপাইনের বেভারলি হিলস জেলার চাইনিজ জনগোষ্ঠী ১৯৭২ সালে ‘টাওইস্ত টেম্পল’ প্যাগোডাটি প্রতিষ্ঠা করে । এই প্যাগোডার স্থাপনাশৈলীতে চাইনিজ নকশার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। প্যাগোডাটির বাইরে অত্যন্ত জ্বলজ্বলে কংক্রিটের তৈরি একটি ড্রাগন রয়েছে। ভক্তদের জন্য উন্মুক্ত এই প্যাগোডাটিতে যে কেউ চাইলেই প্রার্থনা করতে পারেন। তবে, এক অদ্ভুত নিয়ম আছে এখানে। ছোট দুটি কাঠি উপরে ছুঁড়ে মারা হয়। শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট প্যাটার্নে যদি তা মাটিতে পড়ে তবেই কেউ পুরোহিতদের তাদের জন্য প্রার্থনা করার অনুরোধ করতে পারবেন। প্যাগোডাটিতে প্রবেশ করতে চাইলে কঠোর পোশাক কোড মেনে চলতে হয়। এছাড়া, পুরো স্থাপনার কিছু কিছু অংশে ছবি তোলা পুরোপুরি নিষিদ্ধ। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল বেলা পর্যন্ত দর্শনার্থী ও ভক্তদের জন্য প্যাগোডাটি খোলা থাকে।

টাওইস্ত প্যাগোডা; Source: Wanderlust

কিউ গার্ডেনস প্যাগোডা

স্যার উইলিয়াম চ্যাম্বারের নকশা করা কিউ গার্ডেনস প্যাগোডাটি নির্মাণ করা হয় ১৭৬২ সালে। রাজকন্যা অগাস্টার নামে উৎসর্গ করা এই প্যাগোডাটি ১০টি তলা বিশিষ্ট একটি অক্টাগন টাওয়ারের নকশায় তৈরি। নির্মাণশৈলীর কারণে ঐ সময়ের অনেকে মনে করেছিলেন যে এটি হয়তো ভেঙ্গেই পড়বে। কিন্তু ২৫৫ বছর পরেও এটি আজও দাঁড়িয়ে আছে নিজস্ব মহিমায়। পুরনো দিনের ‘জর্জিয়ান’ লন্ডনের ঐতিহ্যের ধারক এনবং বাহক এই প্যাগোডা। প্যাগোডাটির চারপাশে নির্মাণের সময় চারটি ড্রাগন থাকলেও আজ আর তা নেই। বর্তমানে প্যাগোডাটি মেরামতজনিত কারণে বন্ধ আছে।। আঠারো শতকের ‘ব্রিটিশ আভিজাত্য’ এবং মূল নকশায় চারপাশে যে চারটি ড্রাগন ছিল তা আবার মেরামতের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার চিন্তা ভাবনা চলছে। মেরামত শেষ হলে প্যাগোডাটি আবার দর্শনার্থী এবং ভক্তদের জন্য খুলে দেওয়া হবে।

কিউ গার্ডেনস প্যাগোডা; Source: Wanderlust

থ্রি প্যাগোডা’স

চীনের ঐতিহ্যবাহী পুরনো নগরী ঢালির দেড় কিলোমিটার উত্তরে এই প্যাগোডা তিনটি অবস্থিত। ইটের তৈরি এই প্যাগোডা তিনটির উপরে সাদা মাটির প্রলেপ দেওয়া আছে। নামেই বোঝা যায়, পুরো স্থাপনাটি তিনটি প্যাগোডা দিয়ে তৈরি যা  ত্রিভূজাকারে অবস্থিত। মার্জিত এবং ভারসাম্যপূর্ণ এই স্থাপনা প্রাচীন চায়নার ঐতিহ্যকে প্রকাশ করে। ৮৪০ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট কোয়ান ফেংয়্যু প্রথমে মধ্যবর্তী প্যাগোডাটি নির্মাণ করেন। এর প্রায় একশ বছর পরে বাকি দুটি প্যাগোডা নির্মাণ করা হয় এবং এই দুটি মধ্যবর্তী প্যাগোডাটির থেকে লম্বায় ২৫ মিটার ছোট। ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকায় অবস্থিত হবার কারণে নানা সময়েই ভূমিকম্পে জর্জরিত হয়েছে এই তিনটি প্যাগোডা। কিন্তু আজও আকাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে তারা। ঢালি শহরের অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ কেন্দ্র হচ্ছে এই স্থাপনাটি। প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী এখানে বেড়াতে আসেন।

থ্রি প্যাগোডা’স; Source: Wanderlust

ফিচার ইমেজ- eskipaper.com

Related Articles