Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ব্যর্থ কিছু মেগা প্রজেক্ট

হাশিমা দ্বীপ (জাপান)

জেমস বন্ডের ছবি স্কাইফলের প্রধান খলনায়ক রাউল সিলভার চরিত্রে জেভিয়ার বার্ডেমের অভিনয় বেশ স্মরণীয়। তাকে সিনেমাটিতে ভাঙা অট্টালিকা ভরা এক মহাসাগরীয় দ্বীপের অধিকারী হিসেবে দেখানো হয়। পরিত্যক্ত ভবন, চারদিকে ছড়ানো ধ্বংসাবশেষ আর নিস্তব্ধ ভৌতিক পরিবেশের দ্বীপটি কিন্তু বাস্তবে সত্যিই আছে। এটি হাশিমা দ্বীপ বা গুনকাজিমা (অর্থ যুদ্ধজাহাজ) দ্বীপ নামে পরিচিত। জাপানী উপকূল থেকে নয় মাইল দূরে পূর্ব চীন সাগরে এর অবস্থান।

সম্পূর্ণ পরিত্যক্ত এই হাশিমা দ্বীপ। Image Credit: kntrty/Flickr Image

একসময় এ দ্বীপের তলদেশে কয়লার সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। প্রথমদিকে কয়লা উত্তোলনের দায়িত্বপ্রাপ্ত মিৎসুবিশি কোম্পানি নাগাসাকি থেকে মাইনার নিয়ে যেত। পরে কোম্পানি দেখল কাজের সুবিধের জন্য দ্বীপে শ্রমিক ও তাদের পরিবারের বাসস্থান তৈরি করা হলে তা বেশি লাভজনক। ফলে দ্বীপের ভেতর  বহুতল অ্যাপার্টমেন্ট ভবন গড়ে উঠতে শুরু করে। মাত্র একটি ফুটবল মাঠের মতো জায়গায় স্কুল, মন্দির, রেস্তোরাঁ, বাজার, এমনকি কবরস্থানও গড়ে তোলা হয়। ধীরে ধীরে এ আবাসস্থলের জনসংখ্যা ৫,০০০ হয়ে গেলে তখন এটি পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ স্থানে পরিণত হয়। ১৯৭৪ সালে কয়লার মজুদ ফুরিয়ে গেলে কোম্পানি শ্রমিকদের মূল ভূখন্ডে আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে বিকল্প কাজের প্রস্তাব করে। এর ফলে শ্রমিকরা সেই মূহুর্তেই তাড়াহুড়ো করে দ্বীপ ত্যাগ করে। এমনকি টেবিলে আধা খাওয়া কফির কাপ এবং সাইকেল স্ট্যান্ডে সাইকেল পরিত্যক্ত অবস্থায় রেখেই অধিবাসীরা দ্বীপ ত্যাগ করে। জেমস বন্ডের স্কাইফল ছবিতে কেবল দ্বীপটির বহিরাংশের ছবি নেয়া হয়েছে। দ্বীপের ভেতরের দৃশ্যগুলো অবশ্য স্টুডিওতে ধারণ করা হয়।

এই পরিত্যক্ত দ্বীপটিকে কখনও কখনও পর্যটক আর স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়;
Image Source: Offbeat Japan

দক্ষিণ আমেরিকার অষ্টম উচ্চতম ভবন

ভেনিজুয়েলার রাজধানী কারাকাসের অর্থনৈতিক অঞ্চলে অবস্থিত ৪৫ তলা ভবনটি দক্ষিণ আমেরিকার অষ্টম উচ্চতম ভবন। সূর্যের আলোতে উজ্জ্বল কাঁচের ঝলকানি দিয়ে যে ভবনটি আভিজাত্যের পরিচয় দিচ্ছে তার ভেতরের বাস্তবতা মোটেই অভিজাত নয়।  প্রধান বিনিয়োগকারী ডেভিড ব্রিলেনবার্গের নামে পরিচিত ‘তোররে ডেভিড’ নামের ভবনটির ভেতরে ঢুকলে চোখে পড়বে এক বস্তি এলাকার, যেখানে এখন ৭০০ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। নির্মাণের সময় ভবনটিকে দেশীয় ও বৈদেশিক বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা ছিল। ১৯৯০ সালে ভবনটির নির্মাণ কাজ শুরু হলেও ১৯৯৩ সালে ব্রিলেমবার্গের অকালমৃত্যু ও ভেনিজুয়েলার ব্যাংক সংকটের কারণে পরবর্তীতে নির্মাণকাজ থেমে যায়। অসম্পূর্ণ এ ভবনটি ভেনিজুয়েলার পেট্রোলিয়াম অর্থনীতির এক ব্যর্থ নিদর্শন। ২০০৭ সাল থেকে আজ অবধি এই অসম্পূর্ণ ভৌতিক অবয়বের ভবনটি অজস্র ভাগ্যাহত পরিবারকে আশ্রয় দিয়ে চলছে ।

শহরের কেন্দ্রবিন্দুতে এমন একটি সুউচ্চ পরিতেক্ত ভবন, ভাবা যায়? Image Source: YouTube
আশ্রয় নেয়া পরিবারগুলোর বাচ্চারা খেলাধুলায় মগ্ন; Image Source: Reuters/Jorge Silva
এ যেন এক সুবিশাল ভগ্নস্তূপ; Image Source: Reuters/Jorge Silva

মজার ব্যাপার হলো, এই স্কাইস্ক্র্যাপারের সংস্কার কিংবা উন্নয়নের খবর না থাকলেও ২০১৩ সালে এই পরিত্যক্ত ভবন আর তাদের আশ্রিত মানুষদের নিয়ে স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমা তৈরি হয়েছিল, যা বেশ জনপ্রিয়তা পায়।

সাই-ফাই স্ট্রাকচার (যুগোস্লাভিয়া)

১৯৬০ ও ‘৭০ এর দশকে যুগোস্লাভিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জোসেফ টিটো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধক্ষেত্র ও কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্পের স্মৃতি ধরে রাখতে যে জায়গায় যুদ্ধ হয়েছে কিংবা ক্যাম্প ছিল সে জায়গাগুলোতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে এ অবকাঠামোগুলো নির্মাণ শুরু করেন। ডুস্যান জ্যামোঞ্জা, ভ্যোজিন ব্যাকি, মিওড্র্যাক জিভকোভি ও ইস্ক্রা গ্র্যাবুল প্রমুখ ভাস্কর ও স্থপতি সমাজতান্ত্রিক আত্মবিশ্বাস ও রাষ্ট্রশক্তির প্রতীক রূপে এর নকশা প্রণয়ন করেন। ১৯৮০’র দশকে এই স্থাপনাগুলো সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী তরুণ ছাত্রসহ অগণিত পর্যটককে আকর্ষণ করতো। সমাজতান্ত্রিক সরকারের পতনের পর স্থানগুলো পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে এবং এর প্রতীকী তাৎপর্য ধীরে ধীরে মানুষের মন থেকে মুছে যেতে শুরু করে। ভবনগুলোর বর্তমান ভগ্নদশা ও এর প্রতি বিদ্যমান সরকারসমূহের অবজ্ঞা সমাজের এক ঐতিহাসিক ভাঙনের ইঙ্গিত প্রদান করে। তবে কোনোরকম প্রতীকী তাৎপর্য বাদ দিলে স্থাপনাগুলোর নান্দনিকতাকে আজও অস্বীকার করা যায় না। 

এমন অসংখ্য স্থাপনা সমাজতন্ত্রে বিশ্বাসী তরুণ ছাত্রসহ অগণিত পর্যটককে আকর্ষণ করতো; Image Source: Trip101

সানঝি পড ভিলেজ (তাইওয়ান)

সান ঝি পড ভিলেজটি উত্তর তাইওয়ানের উপকূলবর্তী এক বিলাসী অর্ধ সমাপ্ত অবকাশ কেন্দ্র। পর্যটক ও এলাকার মানুষের কাছে এই জনশূন্য বিলাসী অবকাশ গ্রামটি বেশ রহস্যময় জায়গা। এ অবকাশযাপন গ্রামটি কীভাবে পরিত্যক্ত হলো তা নিয়ে অনেক গল্প প্রচলিত আছে। অদ্ভুত মনোরম এই জায়গার অবস্থান উত্তর তাইওয়ানের তাইপে অঞ্চলের কিছুটা বাইরের দিকে। মূলত সাপ্তাহিক ছুটিতে শহুরে ধনীদের ব্যস্ততা থেকে দূরে সরিয়ে অবকাশ যাপনের জন্য এটি তৈরি করা হয়েছিল। বেশ ক’টি ভয়ঙ্কর অদ্ভূত দুর্ঘটনায় অনেক মানুষের প্রাণহানি হবার পর অর্ধ সমাপ্ত অবস্থায় প্রকল্পটি পরিত্যক্ত হয়। স্থানীয় মানুষের মতে, জায়গাটি ভূতুড়ে। ২০০৮ সালের শেষের দিকে নির্মাণ স্থাপনাগুলো ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত হলেও একটি অনলাইন পিটিশনের ফলে একটি ভবন মিউজিয়াম হিসেবে রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২০০৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর পর্যটক আকর্ষণের জন্য হোটেল ও সৈকতের আমোদ ব্যবস্থাসহ নতুন করে উদ্যোগ নেয়া হয় এবং পুরনো ভবনগুলো উচ্ছেদ করা হয়। ২০১০ সালের মধ্যে ইউএফও’র মতো দেখতে স্থাপনাগুলো পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হয়।

সান ঝি পড ভিলেজ, এক বিলাসী অর্ধসমাপ্ত অবকাশ কেন্দ্র; Image Source: Picssr

পৃথিবীর সর্ববৃহৎ পরিত্যক্ত পার্ক (চীন)

চীনের বেইজিং থেকে ২০ মাইল উত্তর পশ্চিমে ছেনজুয়াং গ্রামে আছে ‘ওয়ান্ডারল্যান্ড‘ নামের এক পরিত্যক্ত বিনোদন পার্ক। এশিয়ার বৃহত্তম বিনোদন পার্ক হিসেবে নির্মিত হবার কথা থাকলেও সরকার এবং কৃষকদের মধ্যে জমির মূল্য নিয়ে মতের অমিলের ফলে ১৯৯৮ সালে পার্কের নির্মাণকাজ স্থগিত হয়ে যায়। ২০০৮ সালে সংক্ষিপ্ত আকারে আবারও একই উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা সফলতার মুখ দেখেনি। পরিত্যক্ত স্থানটিতে বর্তমানে স্থানীয় ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করে সময় কাটায়।

এশিয়ার বৃহত্তম বিনোদন পার্ক, যদিও অসমাপ্ত ও পরিত্যক্ত; Image Source: The Atlantic

বেটারসিয়া পাওয়ার স্টেশন (ইংল্যান্ড)

দক্ষিণ-পশ্চিম লন্ডনের বেটারসিয়ায় অবস্থিত এ পাওয়ার স্টেশনটি ইংল্যান্ডের একটি পরিত্যক্ত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। এখানে দুটো আলাদা ইউনিট রয়েছে। “বেটারসিয়া এ” স্টেশন ১৯৩০ এর দশকে এবং দ্বিতীয় ইউনিট “বেটারসিয়া বি” ১৯৫০ এর দশকে নির্মিত হয়। চার চিমনির দুটি স্টেশনই ডিজাইনের দিক থেকে বেশ কাছাকাছি। ১৯৮৩ সালে এখান থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। যদিও এই স্থাপনাটি লন্ডনের জন্য একটি ল্যান্ডমার্ক হিসেবে বিবেচিত হয়। ১৯৬৫ সালে গানের দল বিটলস কে নিয়ে নির্মিত ছবি ‘হেল্প’ এবং ১৯৭৭ সালে পিংক ফ্লয়েডের অ্যালবাম এনিমেলস এ “বেটারসিয়া এ” স্টেশনের ছবি ব্যবহার করা হয়।

পরিত্যক্ত হলেও এখনও দেখতে চমৎকার; Image Source: Wikimedia Commons

বন্ধ হয়ে যাবার পর এ স্থাপনাকে ব্যবহার করার জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা বারবারই ব্যর্থ হয়। ২০১২ সালের জুলাইতে মালয়েশিয়ার একটি কোম্পানির কাছে ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ডে স্টেশনটি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। আশা করা যায়, হয়তো আর বেশিদিন পরিত্যক্ত অবস্থায় পরে থাকতে হবে না। স্টেশনের ভবনটি ছিল ইউরোপের সবচেয়ে বড় ইট নির্মিত ভবন, যার ইন্টেরিয়র ডিজাইন ও সাজসজ্জা বেশ আকর্ষণীয়।

This article is in Bangla language. It describes some amazing abandoned megastructures around the globe. Necessary references have been hyperlinked.

Feature Image: The Bohemian Blog 

Related Articles