বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি বাড়ছে সারা দুনিয়ার সাথে তাল মিলিয়েই। ক্রমাগত নতুন নতুন ব্যবসায় উদ্যোগ ও বিনিয়োগ আসছে বাজারে, অভিজ্ঞ উদ্যোক্তারাও বাড়াচ্ছেন তাদের কাজ। সব মিলিয়ে এই মুহূর্তের বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক উন্নতির ইতিহাসে অতিক্রম করছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়। বড় আকারের নতুন নতুন উদ্যোগ ও বিনিয়োগের মূল ঘাঁটি হিসেবে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব অফিসের প্রয়োজনীয়তার কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। তবে সময় আর অর্থায়ন মিলিয়ে সবার জন্যই নিজস্ব ভবন নির্মাণ কিংবা নতুন অফিস স্থানান্তর অথবা পুরাতন অফিস পুনর্নিমাণ বেশ কঠিন সিদ্ধান্তের বিষয়ই বটে। একেকটি ভবন নির্মাণ যদি একইসাথে সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল হয়, তাহলে বড় বড় ব্যবসায়িক কোম্পানি বা গ্রুপগুলোকে পোহাতে হয় হাজারো ঝক্কি-ঝামেলা। আজকের যুগে একটি শিল্প বা বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ বা পুনঃনির্মাণের ক্ষেত্রে মালিকপক্ষের যে বিবিধ রকম বাধার সম্মুখীন হতে হয়, তারই সবচেয়ে আধুনিক সমাধান হলো ফাস্ট কনস্ট্রাকশন। সেটি নিয়ে আলাপের আগে এক পলকে দেখে আসা যাক আমাদের দেশের নির্মাণ কাজের ক্ষেত্রে বহুল প্রচলিত সমস্যাগুলো কী কী।
বাজেট
কনস্ট্রাকশনের কাজ চলার সময় আকস্মিক অর্থাভাব খুবই স্বাভাবিক একটি ঘটনা। বেশিরভাগ সময়েই নতুন নির্মাণ বা সংস্কারের খরচ পূর্বনির্ধারিত বাজেট ছাড়িয়ে যায়। আবার কখনও কখনও মালিকপক্ষ শেষ হওয়া কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন না, তাদের মনে হয়, যা খরচ হয়েছে, সেই অনুপাতে কাজ বুঝি ভালো হলো না! ঠিকাদারের দেওয়া আনুমানিক ব্যয়ের হিসেব, উপকরণের বাজারমূল্য, যাবতীয় খরচের হিসেব থাকার পরও, যখন দেখা যায় সময়ের সাথে সাথে প্রাথমিক হিসেবের চেয়ে ব্যয় কিছু বেশি হচ্ছে বা মাঝপথে টাকার সংকুলান করা যাচ্ছে না- তখন মালিক-ঠিকাদার দুই পক্ষই পড়ে ঝামেলায়। আর এই ঝামেলা এড়ানোর সহজ উপায় হলো গুণগত মান রক্ষা করেই দ্রুত কনস্ট্রাকশনের কাজ শেষ করা।
ঠিকাদার
এমনও পরিস্থিতি হয়, বাজেট কোনো সমস্যাই না, মনের মতো করে কনস্ট্রাকশন করার মতো সব খরচই বহন করতে সক্ষম মালিকপক্ষ, কিন্তু ভূত সর্ষেতেই, অর্থাৎ ঠিকাদার। হতে পারে তারা সময়ানুবর্তী নয়, হতে পারে তাদের আচরণ খুবই অপেশাদারসুলভ। কারণ যা-ই হোক, শেষতক ভুলের মাশুল গুণতে হয় সেই মালিকপক্ষকেই। বিশেষত হাতে যদি সময় থাকে অল্প, তখন মাঝপথে বিগড়ে যাওয়ার বিপত্তি কাঁধে নেওয়ার চেয়ে ভালো বরং আগেই যে প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হচ্ছে তাদের ব্যাপারে ভালোমতো খোঁজখবর নেওয়া।
সময়
সময়ের অভাব কনস্ট্রাকশনের ক্ষেত্রে চিরকালীনই বড় একটি সমস্যা। সাধারণত যে দীর্ঘ সময় ধরে নির্মাণকাজ চলে, সেই সময়ে অফিসকে পুনর্বাসন করতে হয় অস্থায়ী কোনো জায়গায়, ফলে থেমে থাকে প্রয়োজনীয় বহু কাজ। লোকবলের অভাব, ঠিকাদারের অদক্ষতা, প্রতিকূল আবহাওয়া কিংবা কাজের সময় কোনো দুর্ঘটনা ইত্যাদি নানা কারণে নির্মাণ কাজে লেগে যেতে পারে নির্ধারিত সময়কালের চেয়েও অনেক বেশি সময়। সেজন্য দক্ষ ঠিকাদার যদি খুব অল্প সময়েই পুরো কাজ শেষ করার নিশ্চয়তা দিতে পারে, তাদের দায়িত্ব দেওয়াটাই বরং ভালো সিদ্ধান্ত হয় না?
উপকরণের মান
নির্মাণকাজে ব্যবহৃত উপকরণের মান নিয়ে কোনো সমস্যা যদি হয়েই থাকে, তবে সেটি মালিকপক্ষ টের পায় কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কয়েক মাস এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে কয়েক বছর পরে। নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে প্রকল্পটির কাজ করা হয়েছে, এটি টের পাওয়ার পর আসলে মাথা চাপড়ানো ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না। তাই কাজ শুরু করার আগেই উপকরণের মানের ব্যপারে সব ধরনের খোঁজখবর নেয়া উচিত। আর যদি নির্মাণের দায়িত্বটা যাদেরকে দেওয়া হয়েছে, তারাই এ নিয়ে পূর্ণ সচেতন থাকে, তাহলে সেটি হতে পারে সবচেয়ে ভালো সমাধান।
ভিন্ন ভিন্ন খাতে খরচ
নতুন করে কন্সট্রাকশন কাজের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই এমন একটি অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়, যেখানে যে ডেভেলপার কনস্ট্রাকশনের কাজ করেছেন, তারা কন্সালটেন্সি বা ইন্টেরিয়র ডিজাইনের সুবিধা দেন না, যার ফলে মালিকপক্ষকে নতুন কোনো ফার্মের শরণাপন্ন হতে হয়। পুরো ব্যপারটা সময়সাপেক্ষ, ঝামেলাদায়ক এবং ক্ষেত্রবিশেষে ব্যয়বহুলও বটে। এই ঝামেলা এড়াতে ডেভেলপার হিসেবে এমন এজেন্সিই নির্বাচন করা উচিৎ যারা কনস্ট্রাকশন, কন্সালটেন্সি কিংবা ইন্টেরিয়র ডিজাইন সব ধরনের সুবিধা দেয়।
ফাস্ট কনস্ট্রাকশন কি প্রচলিত সমস্যাগুলো থেকে উত্তরণের উপায় বাতলে দেয়? আজকাল নতুন ভবন নির্মাণের সময় প্রথমেই যা মাথায় রাখতে হয় তা হলো, বিনিয়োগকারীদের এবং ডেভেলপারদের প্রয়োজনীয়তা পূরণের জন্য ডিজাইন টিমগুলিকে এমনভাবে ভবনের নকশা করতে হবে যা প্রকল্পটিকে লাভজনক করার লক্ষ্যে দ্রুত এবং কার্যকরী নির্মাণ কৌশল উদ্ভাবনে ঠিকাদারকে সহায়তা করবে। এই চাহিদাগুলোই পূরণ করা সম্ভব ফাস্ট কনস্ট্রাকশনের মাধ্যমে। সময়ের সাথে সাথে আমাদের দেশেও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ফাস্ট কনস্ট্রাকশন। যদিও এই পদ্ধতিতে কাজ করা খুবই চ্যালেঞ্জিং এবং পুরোপুরি ঝুঁকিহীন নয়, তবুও এই নির্মাণপদ্ধতির রয়েছে বেশ কিছু সুবিধা।
সাশ্রয়ী
কাজ শুরুর আগেই বাজেট নির্ধারণ হয়ে যায় বলে এই পদ্ধতিতে অতিরিক্ত খরচের অবকাশ থাকে না। বরং কাজ চলাকালীন বাজেটের দিকে নজর রেখে অন্যান্য খাতেও মালিকপক্ষের বিনিয়োগ করা সম্ভব হয়। যেমন- স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত স্থাপনার ক্ষেত্রে এভাবে কনস্ট্রাকশনের বাজেট কমিয়ে বরং আধুনিকতর চিকিৎসা সংক্রান্ত উপকরণের পিছনে ব্যয় করতে পারে মালিকপক্ষ। অল্প সময়ের পরিকল্পনা করার কারণে মালিক ও ঠিকাদার উভয় পক্ষের হিসেবের মধ্যেই থাকে কেমন কী খরচ হবে, তাই প্রস্তুত থাকা যায় আগে থেকেই। মাঝপথে টাকার সংকুলান না হওয়া কিংবা বাজেটের অতিরিক্ত ব্যয়- দুটো পরিস্থিতি থেকেই মুক্ত থাকা যায় ফাস্ট কনস্ট্রাকশনে। গুণগত মান রক্ষা করে দ্রুত কনস্ট্রাকশনের কাজ শেষ করার দায়িত্ব নিতে পারে এমন প্রতিষ্ঠানের উপর ভরসা করাই এক্ষেত্রে সবচেয়ে সাশ্রয়ী। সাধারণত কনস্ট্রাকশনের কাজের মাঝপথে নকশা বা অন্যান্য খুঁটিনাটি বিষয়ে পরিবর্তন আনার যে চল আছে, ফাস্ট কনস্ট্রাকশনের সময় সেটা হয় না। বরং এক্ষেত্রে সব ডিজাইন ও পরিকল্পনার কাজ একদম শুরুতেই ঠিক করে ফেলা হয়, যাতে কাজের মাঝপথে আর নতুন করে কোনো পরিবর্তন আনার প্রয়োজন না হয়।
লাভজনক
ফাস্ট কনস্ট্রাকশন নির্মাণব্যবস্থার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ করে দ্রুতই ব্যবসায়ীক কাজ শুরু করা যায়। যত দ্রুত বাজার অথবা গ্রাহক সমাজের কাছে পৌঁছে যাওয়ার সক্ষমতা অর্জন করা যাবে, তত দ্রুতই প্রতিষ্ঠান ব্যবসায়ীকভাবে লাভের মুখ দেখবে এটাই স্বাভাবিক। যেমন- টেলিকমিউনিকেশন বা তথ্যপ্রযুক্তি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে এমন হতেই পারে যে প্রতিদ্বন্দ্বীরা প্রস্তুত হওয়ার আগেই গ্রাহকদের কাছে সেবা নিয়ে পৌঁছে যাওয়া। আবার স্বাস্থ্যক্ষেত্রে হতে পারে আধুনিকতম উপকরণের ব্যবস্থা করা বা দ্রুত রোগীর সেবা দিতে পারার সামর্থ্য অর্জন করা। সবকিছুর আগে দরকার তাদের ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করা। সেকারণেই দ্রুততম সময়ে যদি কনস্ট্রাকশনের কাজ শেষ করা যায়, তাহলে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সম্ভব হয় দ্রুত বাজারে চলে আসা।
খরচ বাঁচানো
ফাস্ট কনস্ট্রাকশনের কারণে ভবন নির্মাণের কাজ দ্রুত সম্পন্ন হওয়ার ফলে স্বাভাবিকভাবেই আনুষঙ্গিক খরচ কমে আসে। সামান্য ঝুঁকিপূর্ণ হলেও, ফাস্ট ট্র্যাক করা কনস্ট্রাকশনের সময়কাল কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর উপায়। ক্রমান্বয়ে সম্পন্ন করতে হয় এমন কাজগুলো একই সাথে শুরু করা এবং এদের মাঝে সামঞ্জস্য বজায় রাখার মাধ্যমে এই পদ্ধতিতে কাজটি সম্পন্ন করা হয়। নকশা কাজের অগগতির সাথে তাল মিলিয়ে খরচের অংকটাও ঠিক রাখা এখানে কনস্ট্রাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব। ভাল যোগাযোগের দক্ষতা সম্পন্ন অভিজ্ঞ দলই মূলত বাজেটটাকে রাখে সাধ্যের মধ্যে। ফাস্ট কনস্ট্রাকশনে অভিজ্ঞ প্রতিষ্টানগুলো সুবিধা দেয় একই ছাদের নিচে সব সমস্যার সমাধানের। অর্থ্যাৎ ভবন নির্মাণের সাথে সাথে কনসালটেন্সি এবং ইন্টেরিয়র ডিজাইন করে দেওয়ার দায়িত্ব নেওয়ার মতো দক্ষ লোকবল থাকার কারণে তারা সহজেই যাবতীয় বিষয়ের দেখভালের কাজ করতে পারে। আর একসাথে কাজ হওয়ার কারণে খরচটা কমে আসে কিছুটা। এসব কারণেই এখন পরিমিত বাজেটের ভিতরে দ্রুত সময়ে সবচেয়ে ভাল কনস্ট্রাকশন সমাধান পেতে ফাস্ট কনস্ট্রাকশন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মাঝে।
আনন্দের বিষয় হলো, এখন আমাদের দেশেই কিন্তু ভবন নির্মাণে পেতে পারেন ফাস্ট কনস্ট্রাকশন সুবিধা। আর এক্ষেত্রে ‘পিটুপি ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড কনস্ট্রাকশন’ এর নাম চলে আসবে সবার আগে। আপনি তাদের ওয়েবসাইট থেকে, বা ফোন করে কিংবা অফিসে গিয়েও জেনে আসতে পারেন ফাস্ট কনস্ট্রাকশনের ক্ষেত্রে তাদের অভিজ্ঞতার ব্যাপারে। ভবন নির্মাণ কিংবা সংস্কার যেকোনো কাজের পরিকল্পনা, নকশা, নির্মাণকাজ থেকে শুরু করে ইন্টেরিয়র পর্যন্ত সমস্ত প্রয়োজন এক জায়গা থেকেই মিটিয়ে ফেলা সম্ভব পিটুপি’র সাহায্যে। অসাধারণ একদল প্রকৌশলী, স্থপতি ও ডিজাইনারদের নিয়ে গড়ে তোলা এই প্রতিষ্ঠানটি এই মুহূর্তে কাজ করছে গুণগত মানের দিক থেকে আমাদের দেশে ফাস্ট কনস্ট্রাকশনের কাজকে একটি দারুণ উচ্চতায় নিয়ে যেতে। সময়ের আধুনিকতম প্রকৌশলবিদ্যার উপহার হিসেবে এই ফাস্ট কনস্ট্রাকশন পদ্ধতি দ্রুতই হয়ে উঠতে যাচ্ছে নতুন ভবন নির্মাণকল্পে নির্ভরতার অনন্য মাধ্যম।