প্রাচীনকাল থেকেই স্থাপত্যশৈলী মানুষের আগ্রহের বিষয়। তিন হাজার বছর আগেকার মিশরীয় সভ্যতার স্থাপত্য নিদর্শন এখনও পৃথিবীর মানুষের কাছে এক অবাক বিস্ময়। অথবা এই প্রসঙ্গে উঠে আসতে পারে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ইমারত বুর্জ খলিফার নাম। বাণিজ্যিক চাহিদা মেটানোর স্বার্থেই হোক, কিংবা দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্য নির্মাণের মাধ্যমে মানুষজনদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকার প্রত্যয়েই- স্থাপত্যশৈলী সবসময়ই শিল্পকে ত্বরান্বিত করার কাজটা করে থাকে খুবই সূক্ষ্ম আর সুচারুরূপে।
২০২০ সালে করোনাভাইরাসের ধাক্কা সামলে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়, পরিবেশবান্ধব আর দৃষ্টিনন্দন সব স্থাপত্যের আয়োজন নিয়ে লেখাটা নিশ্চয়ই স্থাপত্যপ্রেমীদের নজর কেড়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় এবারও ২০২১ সালের নান্দনিক এবং সেরা ১০টি স্থাপত্যশৈলী নিয়েই আজকের আয়োজন।
ইনারসিটি ক্যাম্পাস ও পাবলিক পার্ক | ঢাকা, বাংলাদেশ
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। সিমেন্টের এই জঙ্গলে সিঙ্গাপুরভিত্তিক আর্কিটেক্ট ফার্ম উহা (WOHA) টেকসই ইনারসিটি ক্যাম্পাস ও পাবলিক পার্ক বানাতে যাচ্ছে। উহা ফার্ম এমনভাবে এই ভবনের ডিজাইন করেছে যা পরিবেশবান্ধব, এবং এমনকি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণের কোনO প্রয়োজন পড়বে না। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবেই শীতল থাকবে আভ্যন্তরীণ এই ক্যাম্পাস ও পাবলিক পার্ক। ৫.৩ একর জায়গা জুড়ে থাকা এই নান্দনিক ও টেকসই স্থাপত্য মূলত বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাকের নিজস্ব বিশ্ববিদ্যালয় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি মূল ক্যাম্পাস হিসেবে স্থাপিত হতে যাচ্ছে। সুন্দরবনের ইকোসিস্টেম থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এই মাস্টারপ্ল্যানটি গ্রহণ করা হয়েছে, যেখানে জোয়ার এবং ভাটার মাঝে বিদ্যমান বাস্তুতন্ত্রকে মুখ্য হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।
৯,৫০,০০০ বর্গফুটের নকশাটি মূলত দুটি স্বতন্ত্র ভাগে বিভক্ত: ‘অ্যাকাডেমিয়া’ হিসেবে রাখা হয়েছে আচ্ছাদিত ভবন, যেখানে ক্লাসরুম; আর দ্বিতীয় ভাগে গ্রাউন্ড লেভেলে আছে ‘পাবলিক পার্ক’, যেখানে একটি বায়ো-রিটেনশন পুকুর বানানো হয়েছে যা লেক হিসেবেও কাজ করবে। ১০,০০০০ শিক্ষার্থী ধারণক্ষম এই ক্যাম্পাসের নিম্ন স্তরটি অডিটোরিয়াম, হল এবং পাবলিক গ্যালারি হিসেবে ব্যবহৃত হবে। আর তীব্র রোদের তেজ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে ‘অ্যাকাডেমিয়া’ সবুজ ছাদ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। পাশাপাশি পুরো পরিবেশ শীতল রাখতেও দারুণ কাজ করবে। একটি পরিত্যক্ত জলাভূমিকে কী করে একটি টেকসই ক্যাম্পাস ও পাবলিক পার্কে রূপান্তর করা যায়, তা-ই মূলত ঢাকাবাসীকে দেখাবে ব্র্যাক এবং উহা আর্কিটেক্ট ফার্ম।
দ্য রাজকুমারী রত্নাবতী গার্লস স্কুল | রাজস্থান, ভারত
রাজকুমারী রত্নাবতী গার্লস স্কুল আসলে শুধুই একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, বরং এটি একটি স্থাপত্যবিস্ময়। অলাভজনক সংস্থা সিআইআইটিএ-র অর্থায়নে এই দৃষ্টিনন্দন স্কুলের ডিজাইন করেছে ডায়ানা কেলগ। এটি রাজস্থানের জয়সালমিরের দুর্বোধ্য থার মরুভূমিতে অবস্থিত, যেখানে দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী কিন্ডারগার্টেন থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের শিক্ষা দেবে বিনামূল্যে। জয়সালমিরে নারীশিক্ষার হার ৩২% ছুঁয়েছে মাত্র। এটা মূলত জ্ঞান সেন্টারের একটি অংশ। পুরো কমপ্লেক্সের নাম রাখা হয়েছে জ্ঞান সেন্টার, যেখানে তিনটি ভবন আছে। এর একটি দ্য রাজকুমারী রত্নাবতী গার্লস স্কুল। এর পাশেই আছে মেধা, যা মূলত একটি আর্ট এক্সিবিশন হল, একটি লাইব্রেরি এবং একটি যাদুঘর। পাশেই আছে একটি উইমেন কো-অপারেটিভ সংস্থা, যেখানে স্থানীয় কারিগররা এই অঞ্চলের মা ও অন্যান্যদের বুনন ও সেলাইয়ের নানা কৌশল শেখায়।
জ্ঞান সেন্টার শুধুই একটি স্থাপত্য বা সেন্টার নয়, বরং এটা এমন এক সেন্টার যা এই অঞ্চলের নারীদের শিক্ষিত করবে, তাদের ক্ষমতায়নে কাজ করবে; তাদের নিজেদের, তাদের পরিবারের এবং তাদের সম্প্রদায়ের সকলের জন্য অর্থনৈতিক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করবে। জ্ঞান সেন্টারের স্থপতিও ছিলেন একজন নারী। তাই পুরো স্থাপত্যশৈলী জুড়েই বিভিন্ন সংস্কৃতির নারীসুলভ প্রতীক চোখে পড়বে। এমনকি, স্কুলটি জয়সালমিরের বেলেপাথর দিয়ে তৈরি, যা খোঁদাই করেছেন স্বয়ং স্থানীয় কারিগররা। অবকাঠামো নির্মাণে স্থানীয় উপাদান ব্যবহারের মাধ্যমে খরচের পাশাপাশি কার্বন নির্গমনও কমাতে পেয়েছে ডায়ানা কেলগ। ১২০ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকা সত্ত্বেও শীতল পরিবেশ বজায় রাখতে একটি সোলার ছাউনি বানানো হয়েছে কেন্দ্রজুড়ে। পাশাপাশি, এর ডিম্বাকৃতি বাতাস চলাচলে বিশেষ সুবিধা সৃষ্টি করেছে। ইতোমধ্যেই বিশ্বব্যাপী নজরে এসেছে দৃষ্টিনন্দন এই স্থাপত্যশৈলী।
কিং আবদুল্লাহ্ ফাইন্যান্সিয়াল ডিস্ট্রিক্ট মেট্রো স্টেশন | রিয়াদ, সৌদি আরব
সেরা ১০টি স্থাপত্যশৈলীতে যে কয়টা আর্কিটেক্ট ফার্মের নাম থাকার কথা, তার মধ্যে অন্যতম জাহা হাদিদ আর্কিটেক্ট ফার্ম। কিং আবদুল্লাহ্ ফাইন্যান্সিয়াল ডিস্ট্রিক্ট মেট্রো স্টেশন নির্মাণের ক্ষেত্রে প্যারামেট্রিক ডিজাইন নীতি এবং বিল্ডিং ইনফরমেশন মডেলিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে নির্ভুল ও সূক্ষ্ম মাত্রা ও পরিমাপের জন্য। আররিয়াদ ডেভেলপমেন্ট অথোরিটির অর্থায়নে এই প্রকল্পটি চালু হয়। ৪৫,০০০ বর্গ ফুটের এই মেট্রো স্টেশনটি রিয়াদের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কথা মাথায় রেখেই ডিজাইন করা হয়েছে।
জাহা হাদিদের ডিজাইনে করা এই মেট্রো স্টেশনটি রিয়াদ শহরে এক নতুন পাবলিক ট্রানজিট সিস্টেম চালু করবে। এখানে মূলত ৬টি প্রধান লাইন থাকবে যা ১৭৬ কি. মি. জুড়ে এবং ৮৫টি নতুন বাস স্টেশনের সাথে সংযোগ স্থাপন করবে। ফলে কর্মব্যস্ত রিয়াদের যোগাযোগ ব্যবস্থা হবে আরো উন্নত। স্টেইনলেস স্টিলের কাঠামোর উপর দাঁড়িয়ে থাকবে পুরো নকশা। মেট্রো স্টেশনটি স্থানিক গুণমান বা ডিজাইনের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত না করে প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জগুলোকে সহজ করার জন্য পুনরাবৃত্তি, প্রতিসাম্য এবং স্কেলের মাধ্যমে অত্যন্ত পারস্পরিক সম্পর্কযুক্তভাবে গড়ে উঠেছে।
চ্যাপেল অব সাউন্ড | বেইজিং, চীন
একনজর দেখে হয়তো আপনার মনে হতে পারে উঁচুনিচু পর্বতের ভূদৃশ্যের একটি খণ্ডিত পাথর মাত্র। কিন্তু আসলে চ্যাপেল অব সাউন্ড হচ্ছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও নান্দনিক সৌন্দর্যে নির্মিত একটি স্থাপত্যশৈলী, যা চীনের মিং রাজবংশের আমলে নির্মিত দ্য গ্রেট ওয়ালের ধ্বংসপ্রাপ্ত এলাকায় অবস্থিত। বেইজিংয়ে নান্দনিক এই স্থাপত্য নির্মাণ করেছে ওপেন আর্কিটেক্ট ফার্ম। এটি মূলত একটি কনসার্ট হল, যা খনিজসমৃদ্ধ শিলা কেটে কংক্রিটের মিশ্রণে নির্মাণ করা হয়েছে।
এই স্থাপত্যশৈলীর সামগ্রিক নকশার আইডিয়া এসেছে খোলসের গহ্বর, কাঠের বাদ্যযন্ত্র, এবং মানুষের কানের গঠন থেকে। পাশাপাশি, অত্যাধুনিক সফটওয়্যার ব্যবহার করে কনসার্ট হলকে লাইভ মিউজিকের জন্য দুর্দান্তভাবে গড়ে তোলা হয়েছে, যেখানে স্থপতিদের সাথে কাজ করেছেন অ্যাকুস্টিক ইঞ্জিনিয়াররাও। ৭৯০ বর্গ মিটারের এই কনসার্ট হলে রয়েছে একটি আধা-অ্যাম্ফিথিয়েটার, একটি বহিরাঙ্গন মঞ্চ, এবং একাধিক ঘুর্ণায়মান সিঁড়ি, যা ভিউ পয়েন্টে নিয়ে যায়, যেখান থেকে দ্য গ্রেট ওয়াল অফ চায়না দেখা যায়। আর ঐতিহ্যবাহী ভাব দিতে দরজা এবং অন্যান্য আসবাবপত্রে ব্যবহার করা হয়েছে ব্রোঞ্জ।
লিটল আইল্যান্ড | ম্যানহ্যাটন, নিউ ইয়র্ক
নিউ ইয়র্কের বিখ্যাত হাডসন নদীর উপর হিদারউইক স্টুডিওর পিয়ের ৫৫ পার্কল্যান্ড উদ্বোধনের সময় নতুন নামকরণ করা হয়েছে লিটল আইল্যান্ড নামে। সবুজ তথা প্রকৃতিকে প্রাধান্য দিয়ে স্থাপত্য নির্মাণে স্টুডিও হিদারউইকের সুনাম বিশ্বজোড়া। এবার তারা হাডসন নদীর উপর মাশরুমের আকৃতিতে কনক্রিটের এমন ঢেউখেলানো এক পাবলিক পার্ক নির্মাণ করেছেন, যা দূর দেখে বিচ্ছিন্ন এক দ্বীপের মতোই লাগে। তাই নামকরণও করা হয়েছে ছোট দ্বীপ নামে।
ঢালাই করা ১৩২টি মাশরুম আকৃতির প্ল্যান্টার ক্রেনের সাহায্যে কনক্রিটের ফ্রেমের উপর জ্যামিতিক ছন্দে মেলানো হয়েছে। এমনকি, ডিজাইনে ঢেউখেলানো একটা ভাব ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, যেন দেখে মনে হয় পানির মধ্য থেকে জেগে উঠেছে একঝাক টিউলিপ ফুল। প্রাকৃতিক ভারসাম্যতা এবং দৃষ্টিনন্দন করতে এগুলোকে সমান উচ্চতায় না বসিয়ে, বসানো হয়েছে বিভিন্ন উচ্চতায়। মূলত শহরের শিল্পকলা, সাহিত্য ও কমিউনিটি সংক্রান্ত ইভেন্টগুলোর জন্যই এই পাবলিক পার্কটি বানানো হয়েছে।
দ্য ওয়ার্মহোল লাইব্রেরি | হাইকু, চীন
চীনা আর্কিটেকচার ফার্ম ম্যাড আর্কিটেক্ট সম্প্রতি তাদের নতুন প্রজেক্ট সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করেছে চীনের হাইকু প্রদেশের সেঞ্চুরি পার্কে। ৪,৩৯৭ বর্গ মিটার জায়গা জুড়ে গড়া এই নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীতে রয়েছে একটি বুকশপ, লাইব্রেরি এবং নাগরিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত একটি ভবন। প্যাভিলিয়নের দক্ষিণ দিকেই রয়েছে ১০ হাজারেরও অধিক বইয়ের সমাহার নিয়ে গড়া লাইব্রেরি এবং বই পড়ার স্থান। আর উত্তরে রয়েছে একটি ক্যাফে, পাবলিক বিশ্রামাগার, ঝরনা, নার্সারি রুম, এবং একটি ছাদবাগান।
পাঠকদের কাছে নতুন কোনো বই পড়া মানেই যেন বাস্তবতা থেকে চলে গিয়ে পরাবাস্তব এক দুনিয়ায় পদার্পণ। ঠিক একইভাবে ওয়ার্মহোল লাইব্রেরি এমন স্থাপত্যশৈলীতে গড়া যেন সেই পরাবাস্তবতাকে খুব কাছ থেকে অনুভব করতে পারে পাঠক। ওয়ার্মহোল দিয়ে যেমন সময় আর স্থানকে অতিক্রম করা যায় মুহূর্তেই, ঠিক তেমনি ওয়ার্মহোল লাইব্রেরিতে এসে যেন পাঠক হারিয়ে নাগরিক জঞ্জাল থেকে দূরে। এই স্থাপত্যের ফাঁকা অংশগুলো মনে করিয়ে দেয় যে প্রকৃতি আর স্থাপত্য যেন অস্পষ্টভাবে এক রূপরেখায় মিলেছে এই ওয়ার্মহোল লাইব্রেরিতে এসে।
অডুপগার্ড মিউজিয়াম | কোপেনহেগেন, ডেনমার্ক
কোপেনহেগেনের উত্তরে ফরেস্ট পার্ক জেগার্সবোর্গ ডাইরেহেভের কাছে ২০০৫ সালে জাহা হাদিদের করা জমিদারী ভবনের সাথে স্নোহেট্টা আর্কিটেক্ট ফার্ম নতুন এক স্থাপত্যশৈলী তৈরি করেছে, যা ল্যান্ডস্কেপকে নতুন এক ভাষ্কর্যের রূপ দিয়েছে। অডুপগার্ড মিউজিয়াম মূলত একটি ভূগর্ভস্থ যাদুঘর, যেখানে ১৯ এবং ২০ শতকের ফরাসি এবং ড্যানিশ শিল্পকর্মকে উৎসর্গ করা হয়েছে। এটি মূলত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়কার নিউক্ল্যাসিকাল ঘরানায় তৈরি এক স্থাপত্যশৈলী, যেখানে নতুন সংযোজন দিয়েছে স্নোহেট্টা আর্কিটেক্ট ফার্ম। স্নোহেট্টার নতুন সংযোজনে দুটি ভবনে পাঁচটি নতুন ভূগর্ভস্থ যাদুঘর রয়েছে।
একটি গ্যালারিতে ফরাসি ইম্প্রেশনিস্টিক যুগের চিত্রকর্ম শোভা পাচ্ছে। ঠিক এমনই এক ইম্প্রেশনিস্টিক আর্টই ব্যবহার করেছে স্নোহেট্টা এই স্থাপত্যশৈলীতে। স্টিলের এই কাঠামোটি বিভিন্ন দিকে পালিশ করা এবং একাধিক দিকে কাটা, যে কারণে লাইটের আলোয় অদ্ভুত এক ইম্প্রেশন তৈরি হয়। পাশেই রয়েছে প্রাকৃতিক শিলাখণ্ড থেকে তৈরি ব্রিজ, যা মূলত দর্শনার্থীদের কমপ্লেক্সের ভেতরে প্রবেশ করার কাজে ব্যবহৃত হয়। আর গ্যালারির ভেতরে পুরোটা জুড়ে নজরে পড়বে ওক কাঠের রাজত্ব। ইম্প্রেশনিস্টিক শিল্পধারা ফুটিয়ে তুলতে স্নোহেট্টা নতুন এক ইম্প্রেশন তৈরি করেছে।
স্টেডিয়াম ৯৭৪ | দোহা, কাতার
ফেনউইক ইরিবাইন আর্কিটেক্ট ফার্ম তাদের নতুন প্রজেক্ট উন্মুক্ত করেছে কাতারের দোহারে। মডুলার স্টিলের কাঠামো এবং রঙিন সব কন্টেইনার দিয়ে স্টেডিয়াম ৯৭৪ তৈরি করা হয়েছে, যা মূলত ফিফা ২০২২ বিশ্বকাপের জন্য বরাদ্দ। দোহার বন্দরের কাছে অবস্থিত রাস আবু আবাউদ নামে পরিচিত স্টেডিয়ামটি মূলত ৪০ হাজার আসনবিশিষ্ট, এবং সম্পূর্ণরূপে নবায়নযোগ্য প্রথম কোনো স্থাপত্যশৈলী। এই মডুলারটিতে পুনর্নির্মিত শিপিং কন্টেইনার এবং স্টিলের একটি কাঠামো ব্যবহার করা হয়েছে, যা রিসাইকেলযোগ্য।
মূলত ২০২২ সালে ফুটবল বিশ্বকাপ শেষ হবার পর স্টেডিয়ামটি ভেঙে ফেলা হবে, এবং অন্য এক জায়গায় নিয়ে একত্রিত করে কাঠামো দাঁড় করানো হবে। এমন মডুলার ডিজাইন নির্মাণের খরচ, সময় এবং বস্তুগত অপচয় কমিয়ে দিয়েছে। এমনকি নির্মাতাদের এটাও দাবি যে, এই স্টেডিয়াম প্রচলিত স্টেডিয়ামের চেয়ে ৪০ শতাংশ পানির ব্যবহার কমিয়ে দেবে। স্টেডিয়ামের কাজে ব্যবহৃত ৯৭৪টি শিপিং কন্টেইনার থেকে এই স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি দেশটির আন্তর্জাতিক ডায়াল নাম্বার ৯৭৪ বটে।
ক্যামব্রিজ সেন্ট্রাল মসজিদ | ক্যামব্রিজ, যুক্তরাজ্য
মার্কস বারফিল্ড আর্কিটেক্ট ফার্ম ক্যামব্রিজে একটি টেকসই মসজিদ নির্মাণ করেছে যা বিশ্বব্যাপী দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছে। এই মসজিদে ঐতিহাসিক ইসলামিক নকশা এবং অসীমের প্রতীক জ্যামিতিক নিদর্শনগুলো অন্তর্ভূক্ত হয়েছে বেশ সূক্ষ্ম আর দৃষ্টিনন্দন উপায়ে। পুরনো ভবনটি মুসল্লিদের জন্য ছোট হয়ে যাওয়ায় নতুন করে প্রতিস্থাপন করা হয় সেন্ট্রাল মসজিদের। এই মসজিদের নকশা ও স্থাপত্য এমনভাবে গড়া হয়েছে যেন মরুর বুকে একটুকরো উদ্যানে মানুষ যেমন ধ্যানে বসে, যেজন্য কাঠগুলো এমনভাবে বাঁকানো ও নির্মাণ করা হয়েছে যা পিলারগুলোকে গাছের মতো দেখাতে সাহায্য করে। আর অষ্টভুজাকার ছাদ ঐতিহাসিক ইসলামিক নকশাকে মনে করিয়ে দেয়।
গম্বুজবিশিষ্ট ছাদের চারপাশে স্বর্গ ও পৃথিবীর মিলনের প্রতীক হিসেবে দুর্গসদৃশ প্রাচীর ডিজাইন করা হয়েছে। মসজিদের দেয়ালে বর্গাকৃতির কুফিক ক্যালিগ্রাফি শুধুই সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য নয়, বরং বিশেষ বার্তাও রয়েছে এতে। কুফিক ক্যালিগ্রাফি হচ্ছে আরবি লেখার একটি প্রাচীন শৈলী, যা ঐতিহ্যগতভাবে কুরআন প্রতিলিপি এবং স্থাপত্যসজ্জার জন্য ব্যবহৃত হয়। দৃষ্টিনন্দন এই স্থাপত্যশৈলী ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের অদ্ভুত এক প্রশান্তি দেবে।
মার্সক টাওয়ার | ওয়েডেনসি ন্যাশনাল পার্ক, ডেনমার্ক
ডেনমার্কের সবচেয়ে জনপ্রিয় ন্যাশনাল পার্কে ২৫ মিটার উঁচু দৃষ্টিনন্দন এক স্থাপত্য নিদর্শন নির্মাণ করেছে বিজার্ক ইঙ্গেলস গ্রুপ – বিগ আর্কিটেক্ট ফার্ম। মার্সক টাওয়ার হলেও স্থানীয় ভাষায় মার্শ টাওয়ার বলা হয়ে থাকে। মূলত টুরিস্ট ল্যান্ডমার্ক হিসেবে এটি নির্মাণ করা হয়েছে, যা একইসাথে ওয়াচ টাওয়ার এবং পর্যটকদের বিস্তীর্ণ ভূমির সৌন্দর্য দেখার পাশাপাশি নান্দনিক স্থাপত্যশৈলীর এক ত্রিমুখী স্বাদ দেয়।