Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

নৃশংস অপরাধ থেকে জন্ম নেওয়া পাঁচটি গান

গান শুনতে কে না ভালবাসে? ‘আমরা করব জয়’ থেকে শুরু করে ‘সুইসাইড সং’ সব ধরনের গানের প্রতি মানুষের আকর্ষণ চিরন্তন। ভালো সুর আর কথা পেলে কোনো চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই নিশ্চিন্ত মনে ডুব দেয়া যায় সঙ্গীতের ভুবনে। আমাদের অনেকেরই ধারণা, গান কেবল গীতিকার, সুরকারের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা কিংবা অনুভূতি থেকে সৃষ্টি হয়। কিন্তু এমনও সময় ছিল, যখন বাস্তবতা এতটাই রুক্ষতার জন্ম দেয় যা সুরের মাধ্যমে সবার কাছে পৌঁছে দেয়াটা এক ধরনের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। অপরাধীকে সংশোধন করার জন্যই হোক আর অপরাধীর প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করার জন্যই হোক, গীতিকার-সুরকাররা গান লিখে সুর করার জন্য বেশ কয়েকবার আশ্রয় নিয়েছেন নৃশংস অপরাধের। তেমনি পাঁচটি গানের কথা জেনে নেয়া যাক আজ।

১. হ্যাভ ইউ সিন ব্রুস রিচার্ড রেনল্ডস? – আলাবামা ৩

এই গানটিকে এক কথায় কৌতূহলোদ্দীপক বলা যায়। গানটির স্রষ্টা হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন নাইজেল ডেনভার। ১৯৬৩ সালে ব্রুস রিচার্ড রেনল্ডসের ‘গ্রেট ট্রেন রবারি’ খ্যাত ডাকাতির উপর ভিত্তি করে গানটি লেখেন তিনি। তৎকালীন সময়ে এটি ছিল ইতিহাসের সবচেয়ে কুখ্যাত ডাকাতির ঘটনা। গ্লাসগো থেকে লন্ডনগামী একটি রয়েল মেইল ট্রেনে ডাকাতির উদ্দেশ্যে হামলা চালানো হয় ১৯৬৩ সালের ৮ আগস্ট। পশ্চিম উপকূলীয় মেইল লাইন এলাকায় ১৫ জন সদস্যবিশিষ্ট এই ডাকাত দলটিকে নেতৃত্ব দেয় ব্রুস রেনল্ডস। প্রায় ২.৬ মিলিয়ন ডলার ছিনিয়ে নেয়ার এই ঘটনায় আরও যুক্ত ছিল সে সময়কার ত্রাস গর্ডন গুডি, বাস্টার এডওয়ার্ড, চার্লি উইলসন সহ স্বয়ং অজ্ঞাতনামা ট্রেন চালক।

ব্রুস রিচার্ড রেনল্ডস; Source: mirror.co.uk

এই ঘটনাটিকে অমর করে রাখার উদ্দেশ্যে ‘হ্যাভ ইউ সিন ব্রুস রিচার্ড রেনল্ডস?’ শীর্ষক গানটিকে শ্রোতাদের কাছে আকর্ষণীয় ভঙ্গিতে উপস্থাপন করেন ডেনভার। রেনল্ডস মারা যাওয়ার পর ডাকাতির ঘটনার কথা প্রায় ভুলে যায় সে প্রজন্মের লোকজন। তাই কয়েক দশক পরে আলাবামা ৩ নামক জনপ্রিয় ব্রিটিশ ব্যান্ডের উদ্যোগে নতুন করে টুইস্টের মোড়কে হাজির করা হয় গানটিকে। ব্যান্ডটি দাবি করে, তাদেরই এক সদস্য রেনল্ডসের সন্তান। এই কথা প্রচারিত হওয়ার পর ব্যান্ডটিকে নিয়ে শ্রোতাদের মধ্যে বেশ হইচই পড়ে যায়। তবে অপরাধী নিজের বাবা হলেও যে তাকে ছাড় দেয়া হবে না- এই বার্তা দিয়ে সে সময় বেশ বাহ্বা কুড়ায় আলাবামা ৩।

২. পাইওনিয়ার টু দ্য ফলস- ইন্টারপোল

স্বর্গীয় সুর, নিরানন্দ ব্যারিটনীয় পুরুষালি কণ্ঠ আর কথার সাথে খাপ খাওয়ানো তালের অপর নাম ইন্টারপোল। ১৯৯৭ সালে গঠিত নিউ ইয়র্ক শহর ভিত্তিক আমেরিকান ব্যান্ড ‘ইন্টারপোল’ এখনও সক্রিয় রয়েছে। তাদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, গানের কথা দিয়ে তারা যেন শ্রোতাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে। একপাক্ষিক গান শোনা প্রক্রিয়ার চেয়ে একদম আলাদা তারা। মিথষ্ক্রিয়ায় বিশ্বাসী এই ব্যান্ড দলটি শ্রোতাদের বাধ্য করে গানের বিষয়বস্তু নিয়ে ভাবতে এবং অন্যদেরও ভাবাতে। তারই জলজ্যান্ত প্রমাণ ‘পাইওনিয়ার টু দ্য ফলস’ গানটি, যেখানে ইমেট গিলেনের মৃত্যুর ব্যাপারে শ্রোতাদের একপ্রকার ধাক্কা দিয়েছে ইন্টারপোল।

ইমেট কারমেলা সেইন্ট গিলেনের চাঞ্চল্যকর হত্যা রহস্যের কথা অনেকেরই জানা। ১৯৮১ সালে জন্ম নেয়া এই তরুণী আমেরিকায় গ্র্যাজুয়েশন করছিল, ক্রিমিনাল জাস্টিস বা ফৌজদারি ছিল জন জে কলেজে তার পড়ার বিষয়। ২০০৬ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি তাকে নির্মমভাবে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয় খোদ নিউ ইয়র্ক শহরে। এর কিছুদিনের মধ্যেই একইভাবে জেনিফার মুরকে হত্যা করা হলে হত্যাকাণ্ড দুটি জাতীয় পর্যায়ে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। বার এবং নাইটক্লাবগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনে এটি ছিল উল্লেখযোগ্য একটি প্রভাবক।

ইমেট কারমেলা সেইন্ট গিলেন; Source: nydailynews.com

গিলেনের মৃতদেহ খুঁজে পাওয়ার পরপরই লেখা হয় এই গানটি। নিউ ইয়র্কে দুটি বারেই যেত সে, ‘দ্য পাইওনিয়ার’ এবং ‘দ্য ফলস’। গানটির কথায় সম্ভাব্য খুনি সম্পর্কে একটি ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছেন ব্যান্ডের সদস্যরা। আবর্জনার আস্তাকুড় বারগুলো কীভাবে দিন দিন মৃত্যুকূপ হয়ে উঠছে তারই একটি প্রচ্ছন্ন আভাস রয়েছে এখানে। একটি মেয়ের হারিয়ে যাওয়ার করুণ কাহিনীর মধ্য দিয়ে আসলে বর্ণনা করা হয়েছে গিলেনের পরিণতি।

৩. আই ডোন্ট লাইক মানডেস– দ্য বুমটাউন র‍্যাটস

গানের কথাটি দেখলে যে কারো মনে হতে পারে উঠতি কোনো তরুণ তার সমাজ বা বাবা-মায়ের উপর ক্ষোভ ঝাড়ছে। ‘আজ রবিবার’- এই একটি বাক্য আমাদের দেশের চাকুরীজীবী থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী পর্যন্ত সবার কাছে যেমন বিভীষিকা, সোমবারের দিনটি তেমন পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে ভয়ের অপর নাম! গানটি তাই খুব সহজেই জায়গা করে নেয় পপ কালচারে। কিন্তু তথাকথিত আর দশটি পপ গানের সাথে একে মেলালে ভুল করবেন আপনি, গানটির সাথে জড়িয়ে রয়েছে অন্ধকার এক অধ্যায়, যা যে কাউকে বিস্মিত করতে বাধ্য।

ব্রেন্ডা অ্যান স্পেন্সার; Source: thedailybeast.com

ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়েগোতে অবস্থিত গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জন্য দুর্বিষহ একটি দিন ১৯৭৯ সালের জানুয়ারি মাসের ২৯ তারিখ। রোদ ঝলমলে সকালে সাড়ে আটটার দিকে রাইফেল হাতে বেরিয়ে আসে একটি মেয়ে। ব্রেন্ডা অ্যান স্পেন্সার নামের সেই মেয়েটি স্কুলের খেলার মাঠে ব্রাশফায়ার করা শুরু করে। বৃষ্টির মতো চলতে থাকা গুলির আক্রমণে নিহত হন দুজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি, যাদের মধ্যে একজন ছিলেন স্কুলের প্রিন্সিপ্যাল। আর ভয়ে জমে যাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে আহতদের সংখ্যা আলাদা করে বলাও মুশকিল। পরবর্তী পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ডাকা হলে আহত হন এক পুলিশ সদস্যও। তার সঙ্গী পাশের বাড়ির উঠান থেকে ট্রাক্টর চালিয়ে স্নাইপারের সামনে রেখে গুলিবর্ষণের পথ রোধ করার পর গ্রেপ্তার করা যায় ব্রেন্ডাকে। সাংবাদিকরা যখন ব্রেন্ডাকে জিজ্ঞেস করে এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে মূল কারণ বা উদ্দেশ্য কী ছিল, এক কথায় জবাব দেয় সে, ‘আই ডোন্ট লাইক মানডেস (আমি সোমবার পছন্দ করি না)’।

আমাদের ঘুণে ধরা গোটা সিস্টেমে যে বাচ্চাদের উপর কী ধরনের মানসিক চাপ সৃষ্টি করা হয় তারই এক নিদারুণ উদাহরণ হিসেবে ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে ব্রেন্ডা। আর এই ঘটনাকে বাঁচিয়ে রাখতে দ্য বুমটাউন র‍্যাটস নামক একটি আইরিশ রক ব্যান্ডের উদ্যোগে আমরা এখনো শুনতে পাই ‘আই ডোন্ট লাইক মানডেস’ গানটি।

৪. নেব্রাস্কা– ব্রুস স্প্রিংস্টিন

ব্রুস স্প্রিংস্টিনকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ দেয়া উচিৎ চমৎকার এই গানটিকে দারুণ একটি সুরের সাহায্যে উপস্থাপন করার জন্য। গানের সুর শুনে কে বলবে যে এর পেছনে জড়িত আছে ভয়ঙ্কর এক কালো অধ্যায়? গানটিকে তাই স্প্রিংস্টিনের অন্যতম সেরা কাজের স্বীকৃতি দেয়া হয়। ‘নেব্রাস্কা’ তার ষষ্ঠ অ্যালবামের একটি গান।

সহানুভূতি নয়, সমানুভূতিই প্রতিটি মানুষ দাবি করে, আমাদের সবার জীবনে সমানুভূতির একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এক অন্ধ ব্যক্তিকে সহানুভূতি দেখিয়ে আফসোস করে তার পাশ দিয়ে মাথা নিচু করে হেঁটে যাওয়ার চেয়ে সমানুভূতি দেখিয়ে তার হাত ধরে রাস্তা পার করে দেয়াই ঐ অন্ধ ব্যক্তির কাম্য। গানটিতে সেই সমানুভূতিই দেখিয়েছিলেন স্প্রিংস্টিন। ১৯ বছর বয়সী চার্লস স্টার্কওয়েদারের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখা হয়েছে ‘নেব্রাস্কা’ গানটি। চতুর্দশী বান্ধবী কারিল অ্যান ফুগেটকে সাথে নিয়ে হত্যার নেশায় উন্মত্ত দুই কিশোর-কিশোরীর ভয়াবহ রূপ উঠে এসেছে এখানে।

নেব্রাস্কার সিরিয়াল কিলার যুগল; Source: netdna-ssl.com

অপরিপক্ব বয়সের প্রেম মেনে নেয়নি চার্লস বা অ্যানের পরিবার। এই সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই হজম করতে পারছিল না তারা দুজন। কাজেই গোটা নেব্রাস্কাব্যাপী সিরিয়াল কিলিং শুরু করে চার্লস, তার এই মহা হত্যাযজ্ঞের সঙ্গী হয় অ্যান। ১৯৫০ এর দশকে মোটামুটি ত্রাস হিসেবে মানুষের কাছে পরিচিতি পেয়ে যায় তারা। টেলিভিশনের পর্দায় হাজির হওয়া প্রথম কোনো সিরিয়াল কিলারকে দেখে দর্শক কী প্রতিক্রিয়া দেখাবে কিংবা টেলিভিশন মালিকরা কীভাবে এই পরিস্থিতি সামাল দেবেন, কেউই কিছু বুঝে উঠতে পারছিল না। ডগলাস, উওমিং আর নেব্রাস্কা এলাকায় অন্তত এগারোজনকে খুন করার প্রমাণ পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে। পুরো দু’মাসব্যাপী সবাইকে তটস্থ করে রাখা এই সিরিয়াল কিলারদের মধ্যে চার্লসকে মৃত্যুদণ্ড এবং অ্যানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। আর এই পুরো ঘটনাটিকে বাঁচিয়ে রেখেছে ‘নেব্রাস্কা’ গানটি।

৫. আগস্ট ৭, ৪১৫– বন জোভি

আজ থেকে প্রায় ২৫ বছর আগে আমেরিকার নিউ জার্সির সায়েরে ভিলেতে পথচলা শুরু করা বন জোভি ব্যান্ডের কোনো গানে খুন বা হত্যার মতো ভয়ঙ্কর কোনো থিম উঠে আসতে পারে- এ যেন এক প্রকার কল্পনাতীত ব্যাপার। তারা কোনো ডেথ মেটাল ব্যান্ড নয়। তাই বলে নিত্যনতুন থিম আত্মস্থ করলেও যে কোনো ক্ষতি নেই। সেটাই তারা প্রমাণ করে দেখিয়েছে ‘আগস্ট ৭, ৪: ১৫’ এর মাধ্যমে।

এই তারিখ এবং সময়টি আসলে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই দিনই ব্যান্ডটির ট্যুর ম্যানেজারের বাচ্চা মেয়ে ক্যাথরিন কর্জিলিয়াসকে খুন করা হয়। গানে হয়তো পুরো ঘটনাটি বেশ গল্পের মতো করে বলা হয়েছে, কিন্তু প্রকৃত অর্থে এই গানের পেছনে লুকিয়ে থাকা সত্যগুলো বড় নির্মম। এই হত্যাকাণ্ডের কথা টেলিভিশন শো ‘আনসলভড মিস্ট্রি’তেও উল্লেখ করা হয়েছে, কারণ ক্যাথরিনের খুনিকে কখনোই শনাক্ত করা যায়নি।

ক্যাথরিন কর্জিলিয়াস; Source: nocookie.net

হত্যাকাণ্ডের দিন ছয় বছরের শিশুটি তার মা আর ভাইয়ের সাথেই ছিল। বাড়ি ফেরার পথে মেইলবক্স থেকে মেইলগুলো সংগ্রহ করতে থামে তারা। সে যে বড় হয়েছে তার প্রমাণ দিতেই মায়ের কাছে জিদ ধরে বসে ক্যাথেরিন, মেইল নিয়ে সে একাই বাড়ি ফিরবে। তার এই পাগলামি দেখে হাসতে হাসতে ঘরে চলে যায় মা আর ভাই। প্রায় ঘণ্টাখানেক পেরিয়ে গেলেও ক্যাথরিনের আর কোনো খোঁজ নেই। মেয়ে কোথায় গেল দেখতে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে মা। মেইলবক্সের চারপাশে খুঁজতে থাকে তাকে। কিন্তু ক্যাথরিনের ছায়ার হদিসও পাওয়া যায়নি। পুলিশ এসে তল্লাশি চালিয়ে এক প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে ক্যাথরিনের মৃতদেহ উদ্ধার করে। ‘আগস্ট ৭, ৪: ১৫’ গানটিতে এই হত্যাকাণ্ডের তারিখ আর সময়ের কথাই কোরাসে গাওয়া হয়। সমস্বরে যেন দাবী জানানো হয় নির্মম এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়া আবশ্যক।

ফিচার ইমেজ- bbc.co.uk

Related Articles