চতুর্দশ শতকের গোড়ার দিকে এশিয়া মাইনরে অটোম্যানদের উত্থান মধ্যযুগের বিশ্ব ইতিহাসে একটি তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায়। ভূমধ্যসাগরকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হঠাৎ তাদের আগমন প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সম্পর্ককে প্রভাবিত করে দারুণভাবে। ১৪৫৩ সালে কনস্টান্টিনোপল বিজয় এবং ১৫১৭ সালে মিশরের মামলুকদের পতন ঘটিয়ে আধিপত্যের জানান দেয় অটোম্যানরা, যার আঁচড় পড়েছে সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও। অটোম্যান আমলের চিত্রকলা চর্চার গতিবিধি আলোচনার পূর্বশর্ত তাদের মনস্তত্ত্ব অধ্যয়ন। উইঘুর তুর্কিরা হেলেনেস্টিক, বৌদ্ধ ও ম্যানিকিয়ান বিশ্বাস দ্বারা তাড়িত। পরবর্তীতে ইসলাম, আরব ও পারসিক সংস্কৃতির ভাবধারা গ্রহণ করলেও সেই দাগ কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
মুহম্মদ ফাতিহের কনস্টান্টিনোপল বিজয় তুর্কিদের সাথে বাইজান্টাইনীয় সংস্কৃতির পরিচয় ঘটিয়ে দেয়। সুদূর ইতালি থেকে আনা হয় জেন্টিল বেলিনি ও কস্টানজো ডি ফেরেরার মতো শিল্পমোদীদের। অন্যদিকে ১৫৪৫ সালের কাছাকাছি সাফাভি শাসক শাহ তামাস্প চিত্রকলায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। ফলে সিয়াভুসের মতো চিত্রকরেরা তাব্রিজ ছেড়ে অটোম্যান দরবারে আশ্রয় নেন। পার্শ্ববর্তী অন্যান্য সংস্কৃতিরও চমকপ্রদ প্রতিফলন ঘটেছে তাদের দরবারি চিত্রকর্মে। সেই সাথে তৈরি হয়েছে নিজস্ব স্টাইল ও বৈশিষ্ট্য।
সাধারণ বৈশিষ্ট্য
আরব বা পারসিক চিত্রকলা থেকে অনেক সময় প্রভাবিত হলেও প্রায়ই অটোম্যানদের নিজস্ব কিছু বিশেষত্ব ফুটে উঠেছে, যার প্রথমটিই চিত্রের ব্যাপকতা ও অধিকতা। চিত্রকলায় আরবরা যেখানে অনুবাদ এবং পারসিকরা শাহনামার মতো কাল্পনিকতাকে প্রশ্রয় দিয়েছে, অটোম্যানরা সেখানে এনেছে মানুষের প্রতিদিনকার জীবনকে। রাজা সুলতানদের অভিজাত জীবনের সাথে মিলিত হয়েছে মধ্যবিত্তের টানাপোড়েন।
চিত্রে চরিত্রের মাঝে স্থবিরতা অটোম্যানদের বিশেষ বৈশিষ্ট্যের ভেতরেই পড়ে। আনন্দ-বেদনা ও ভাবাবেগ প্রায় অনুপস্থিত। বিস্ময়ের ব্যাপার ইউরোপের সাথে অনেক আগে থেকে যোগাযোগ থাকলেও অটোম্যানরা অষ্টাদশ শতকের আগপর্যন্ত খুব একটা পরিবর্তিত হয়নি নিজেদের অবস্থান থেকে। চরিত্রের পরিধেয় পোশাক দেখেও অটোম্যান চিত্র সনাক্ত করা যেতে পারে। বৃহৎ পাগড়ি ও আজানুলম্বিত ঢিলে রাজকীয় পোশাক। পোশাকে লাল রঙের প্রাধান্য নিয়ে বিভিন্ন রঙ থাকলেও পাগড়ি সাদা। যদিও মধ্যবর্তী কুলা ছিলো লাল এবং গম্বুজ আকৃতির। তাছাড়া চিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য প্রধান চরিত্রকে বড় করে অঙ্কন। বিভিন্ন অভিযান ও যুদ্ধের চিত্র অটোম্যান দরবারের চিত্রকরদের বাস্তববাদী হিসেবে উপস্থাপন করেছে। তাদের কর্মে উঠে এসেছে সমাজের প্রতিচ্ছবি। শিল্পকর্মে ব্যক্তির পরিচয় প্রায়শ অনুপস্থিত। যদিও অটোম্যান দরবারে সম্মিলিত কর্ম হিসাবেই চিত্র উপস্থাপিত হতো।
রঙের ব্যবহার
অটোম্যান শিল্পীরা গাঢ় রঙের ব্যবহারের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছেন। লাল, নীল, সোনালি, সবুজ ও কমলা রঙের মাধ্যমে ছবিকে উজ্জ্বল করে প্রকাশের প্রচেষ্টা স্পষ্ট। বলিষ্ঠ রেখা ও বিপরীত রং হিসাবে কালো এবং সাদার ছিলো প্রাধান্য, যেখানে পেছনের ভূমি অঙ্কনের জন্য ব্যবহৃত হতো সোনালি রং।
ভেষজ রঙ ব্যবহারের কারণে চিত্রে সূক্ষ্মতা কম। মাঝে মাঝে আবার অপরিপক্কতার আভাস নবিশদের কথা মনে করিয়ে দেয়। বর্ডারহীন চিত্রগুলো হয় অসম্পূর্ণ, নাহলে নতুনত্ব আনার প্রচেষ্টা। অবশ্য এই বৈশিষ্ট্যই তাদেরকে বাগদাদ, হেরাত ও তাব্রিজের ধারা থেকে পৃথক করেছে।
কালবিভাজন
বিচ্ছিন্ন কিছু উদাহরণ বাদ দিলে মূলত মুহম্মদ ফাতিহর হাত ধরেই অটোম্যান চিত্রকলার অভিষেক ঘটে। তার আগে রাজ্যবিস্তার ও প্রশাসনিক স্থিতিশীলতা স্থাপনের ব্যস্ততায় চিত্রকলার প্রতি সেভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হয়নি। সে যা-ই হোক, অটোম্যান আমলের পুরো চিত্রকলার ইতিহাসকে তিনটা ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমভাগে মুহম্মদ ফাতিহ (১৪৫১-৮১) এর যুগ থেকে তদীয় পুত্র দ্বিতীয় বায়েজিদ (১৪৮১-১৫১২) এর শাসনকাল পর্যন্ত। এই সময়টা ছিলো মূলত চিত্রকলার উদ্ভব ও উন্মেষের।
দ্বিতীয় ভাগ ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দী নিয়ে বিস্তৃত। এই যুগের পৃষ্ঠপোষকদের মধ্যে ছিলেন ষোড়শ শতাব্দীতে প্রথম সেলিম (১৫১২-২০), সোলায়মান (১৫২০-৬৬) এবং তৃতীয় মুরাদ (১৫৭৪-৯৫)। আর সপ্তদশ শতাব্দীতে প্রথম আহমদ (১৬০৩-১৭), দ্বিতীয় উসমান (১৬১৮-২২), চতুর্থ মুরাদ (১৬২৩-৪০), প্রথম ইব্রাহিম (১৬৪০-৪৮), চতুর্থ মুহম্মদ (১৬৪৮-৮৭) এবং দ্বিতীয় আহমদ (১৬৯১-৯৫)। তৃতীয় যুগ ছিলো পতন ও অবক্ষয়ের যুগ। হিসাবে অষ্টাদশ শতাব্দী ধরা হলেও পতনের সূচনা ঘটে মূলত সপ্তদশ শতকের শেষের দিকেই। তবে তার আগে তৃতীয় আহমদ (১৭০৩-৩০) এর আমলে জাগরণের ঘ্রাণ পাওয়া যায়।
প্রাথমিক যুগ
সাম্রাজ্যের প্রথম দিনগুলোতে শিল্পকলার দিকে নজর দেবার সুযোগ খুব কমই পেয়েছিলেন শাসকেরা। ১৪৫১ সালে ক্ষমতায় এসেই মুহম্মদ ফাতিহ জ্ঞানচর্চায় পৃষ্ঠপোষকতা দান করতে থাকেন। এই সময়ে প্রাপ্ত চিত্রগুলোতে উইঘুর তুর্কিদের স্থানীয় সংস্কৃতির প্রভাব বেশ স্পষ্ট। দুটি উদাহরণ সিনান বেকের আঁকা মুহম্মদ ফাতিহের প্রতিকৃতি এবং ‘কিতাবুল জাররাহিয়া-ই- ইলখানি’ নামক চিকিৎসাবিজ্ঞান গ্রন্থের পাণ্ডুলিপিতে চিত্র। চরিত্রের পোষাক পরিচ্ছদ তুর্কী। ‘ইসকান্দারনামে’ এবং ‘দিলসুজনামে’ এর পাণ্ডুলিপিতে অঙ্কিত চিত্রগুলোতেও কাছাকাছি বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। তোপকাপি সরাই মিউজিয়ামে রক্ষিত মুহম্মদ ফাতিহের যে এলবাম রয়েছে, তাতেও রয়েছে উইঘুর চিত্রকলার ছাপ।
ইতালির কয়েকজন চিত্রকর অটোম্যান দরবারে আশ্রয় নিয়েছিলেন। প্রতিকৃতি অর্জনে তাদের দক্ষতা ছিলো অগ্রগণ্য। কস্টানজো ডি ফেরেরার আঁকা সুলতানের প্রতিকৃতি বিশেষভাবে স্মরণ করা যায়। রাজকুমার জেমের প্রতিকৃতি দিয়ে নজর কেড়েছেন জেন্টিল বেলিনি। অপর দুটি ছবি বায়েজিদের আমলে আঁকা কবি শায়খির ‘খসরু-শিরিন’ এবং ফেরদৌসির ‘সুলায়মাননামে‘ এর পাণ্ডুলিপি। অটোম্যান চিত্রকলার উন্মেষের যুগের আরো দুজন প্রভাবশালী চিত্রকর শিবিলজাদেহ ও বাবা মুস্তফা। ১৫১৪ সালে প্রথম সেলিম তাব্রিজ দখল করে ১৬ জন শিল্পীকে ইস্তাম্বুলে আনেন। তাজউদ্দীন ও হোসাইন বালি তাদের মধ্যে খ্যাতি অর্জন করে। দেয়াল অলঙ্করণ ও ফ্রেসকোর জন্য হাসান চেলেবির নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
স্বর্ণসময়: সুলতান সোলায়মান
অটোম্যান চিত্রকলা তার বিকাশের চরমে উন্নীত হয় সুলতান সোলায়মানের আমলে। প্রথম উদাহরণ আলি শীরের ‘দীওয়ান’। বিষয়বস্তুতে পারসিক হলেও এই কবিতাগ্রন্থ চিত্রায়ণে অটোম্যান। বনভোজন, শিকার ও পলো খেলার চিত্রে রঙের ব্যবহারে ইরাক ও পারসিক প্রভাব বিদ্যমান।
এদিক থেকে বিবেচনা করলে মাত্রাকির ‘বেয়ান-ই-মানযিল-ই-সেফার-ই-ইরাকাইন’ সম্পূর্ণ আলাদা। মূলত এই চিত্র থেকেই বিশেষ বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিকাশ লাভ শুরু হয় অটোম্যান ধারার। ৩২ চিত্রবিশিষ্ট ‘সোলায়মাননামে’তে অঙ্কিত হয়েছে যুদ্ধ, অভিযান, বারবারোসার সমুদ্রযাত্রা এবং বিভিন্ন নগরী। সুলতান সোলায়মানের দরবারে ২৯জন দক্ষ এবং ১২জন শিক্ষানবীশ চিত্রকর ছিলো। যাদের মধ্যে ১৪ জন তুর্কী এবং বাকিরা পারসিক, আলবেনীয় প্রভৃতি।
শাহ কুলু, আলী নাক্কাশ, ইবরাহীম চেলেবী, আবদেল ফাত্তাহ এবং হাসান কাফেলীর মতো বেশ কয়েকজন প্রভূত খ্যাতি অর্জন করেন। সোলায়মানের মৃত্যুর পর দ্বিতীয় সেলিম (১৫৬৬-৭৪) মসনদে আসীন হন। তার সময়ে চিত্রকলা কিছুটা ঝিমিয়ে পড়ে।
শিখর: তৃতীয় মুরাদ
পরবর্তীতে তৃতীয় মুরাদের আমলে (১৫৭৪-৯৫) আবার জেগে ওঠে চিত্রকলার চর্চা। এবার পরিণতভাবে নিজস্বতা নিয়ে। ১৫৭৯ সালে প্রখ্যাত লিপিকার লোকমানের করা ‘সোলাইমাননামে’র ২৫টি চিত্র সম্বলিত একটি পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায়। সৈন্যসজ্জা এবং জেনেসারিদের অভিযান অঙ্কিত হয়েছে মনোরমভাবে। লোকমানেরই অনুরূপ আরেকটা পাণ্ডুলিপি পাওয়া যায় ‘শাহনামে-ই সেলিম খান’ নামে, যাতে আঁকা হয়েছে ৪৩টি চিত্র।
১৫৮২ সালে রচিত ইনতেযামীর ‘সুরনামে-ই হুমায়ুন’ এর পাণ্ডুলিপি সময়ের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। পুস্তকের ৪৩৭টি চিত্র আঁকা হয়েছে উসমান এবং চিত্রশালার অন্যান্য শিল্পীর দ্বারা।
‘হুনেরনামে’ এবং ‘শাহানশাহনামে’ দুটি পাণ্ডুলিপির নাম মুরাদের সময়কালকেই নির্দেশ করে। অটোম্যান চিত্রকলার বিবর্তনের দলিল হিসেবে চিত্রগুলোর গুরুত্ব ব্যাপক।
এদের প্রথমটি উসমান গাজী থেকে প্রথম সেলিম পর্যন্ত কীর্তিগাঁথা এবং দ্বিতীয়টি মুরাদের জীবনসংক্রান্ত। ১৫৮৩ সালে লোকমান রচিত ‘যুবদাত-উত তাওয়ারিখ’ এবং মুস্তফা আলির রচিত ‘নুসরাতনামে’ মুরাদের সময়কার অনন্য দুটি কীর্তি।
প্রথমটিতে আদম (আ)-হাওয়ার ছবি, প্লাবনে নুহের (আ) নৌকার ছবি, প্রথম মুহম্মদের প্রতিকৃতি বেশ আকর্ষণীয়। ৪১টি চিত্র সম্বলিত মুস্তফার নুসরতনামেতে বেশ চিত্তাকর্ষকভাবে অঙ্কিত হয়েছে আজারবাইজান ও জর্জিয়া অভিযান। আসাফী পাশার ‘শাযাতনামে’ (১৫৮৬) পাণ্ডুলিপিতে ৭৭টি চিত্র আছে। গেঞ্জিনা-ই ফাত-ই গেঞ্জ (১৫৮৯) এর ২০টি চিত্র অঙ্কিত হয়েছে ফরহাদ পাশার অভিযানের উপর নির্ভর করে। অনুরূপ সিনান পাশার আরব ও তিউনিশিয়া অভিযানকে কেন্দ্র করে রচিত হয়েছে ‘তারিখ-ই ফাত-ই ইয়ামান’ (১৫৯৪) গ্রন্থে অঙ্কিত হয়েছে ১০৪টি চিত্র। ১৫৭৫ সালে লেখা ‘আজাইব আল মাখলুকাত’ নামক গ্রন্থটিও মুরাদের সময়কালে চিত্রিত। তখনকার যুগের বিস্ময়কর বিষয়বস্তু পাণ্ডুলিপিতে স্থান পেয়েছে।
উস্তাদ উসমান ও লুৎফি আব্দুল্লাহ ছাড়াও এই সময় আলি চেলেবি, বুরসার মুহম্মদ, মুহম্মদ বে, হাসান, মুনি এবং ওয়ালি জান বেশ খ্যাতি অর্জন করেন এই আমলে। সোলাইমান এবং মুরাদের সময়কালকেই মূলত অটোম্যান চিত্রকলার ক্লাসিক্যাল যুগ ধরা যায়।
অবক্ষয়ের ঘণ্টাধ্বনি
দ্বিতীয় উসমান (১৬১৮-২২), চতুর্থ মুরাদ (১৬২৩-৪০), চতুর্থ মুহম্মদ (১৬৪৮-৮৭) এর পৃষ্ঠপোষকতা সত্ত্বেও অটোম্যান চিত্রচর্চা তার আগের অবস্থান ধরে রাখতে পারেনি। হাসান পাশা নামক জনৈক চিত্রকর তৃতীয় মুহম্মদের অভিযান নিয়ে অঙ্কন করেন ‘এগরি ফতেহনামে’। মাহমুদ পেদের ‘মেনাকিব-ই হযরত মৌলানা’ এবং সোহরাওয়ার্দীর ‘জামিউস সিয়ার’ অন্যতম বলেই গণ্য হয়। রচিত হয়েছে বিখ্যাত সুফি দার্শনিক জালাল উদ্দীন রুমির কর্মকাণ্ডের উপর ভিত্তি করে। চতুর্থ মুরাদের সময়ে উল্লেখযোগ্য নিদর্শন নাদিরির ‘দিওয়ান’ (১৬২৬) এবং ইবরাহীম এফেন্দির ‘পাশানামে’।
এই সময় থেকেই মূলত রঙের ব্যবহার ও অঙ্কনের মান কমে আসতে শুরু করে। অবশ্যই এর প্রধান কারণ অর্থনৈতিক। যদিও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের রীতি তখনো বহাল ছিলো। উল্লেখযোগ্য উদাহরণ ‘হুবাননামে’ এবং ‘যেনানানামে’। এদের চিত্র সংখ্যা যথাক্রমে ৩৯ এবং ৪৪টি। প্রথমটি সৌন্দর্যের উপর এবং দ্বিতীয়টি নারীদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের উপর ভিত্তি করে চিত্রিত।
৩১ চিত্র বিশিষ্ট ‘সেফারেত নামে-ই ইরান’ পাণ্ডুলিপিতে ইস্তাম্বুল থেকে তেহরান পর্যন্ত পথের বর্ণনা ও চিত্র উপস্থাপন করা হয়েছে। মানুষ অনুপস্থিত। এই সময়টাতে পাণ্ডুলিপি চিত্রের সাথে একক চিত্র বা মোরাক্কা বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। মোরাক্কায় বর্ডার থাকতো এবং আলাদা করে সংরক্ষণ করা হতো। বিষয়বস্তু ছিলো হেরেমের মহিলা, প্রতিকৃতি, যুগলবন্দী, পশু-পাখি এবং ফুল। ছবিগুলোতে পারসিক, চৈনিক এবং ইউরোপীয় প্রভাব লক্ষনীয়। অষ্টাদশ শতকের দিকে ইউরোপের সাথে সম্পর্কের বিস্তার লাভ করলে তার প্রভাব পড়ে চিত্রকলার উপরেও। ফলে পারসিক কিংবা মোঘল চিত্রকলার মতো অটোম্যান চিত্রকলাও তাদের নিজস্বতা হারিয়ে ইউরোপীয় ভাবধারায় বিলীন হয়ে যায়।
পরিশেষে
অষ্টাদশ শতকের লেভনির দুটি চিত্র অটোম্যান চিত্রকলার পতন নির্দেশ করে। দুটিই প্রতিকৃতি চিত্র। প্রথমটি বিছানায় মদমত্ত যুবকের এবং দ্বিতীয়টি নৃত্যরত রমণীর।
সম্পূর্ণরূপেই ইউরোপীয় চিত্রদুটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য এর বাস্তবতা ও গভীরতা। মুখের অভিব্যক্তি গতিশীল, রঙের বিন্যাস হালকা, পোশাক রুচিশীল ও অঙ্কনের ধাঁচ আধুনিক। ছবি দুটি যেন সাড়ে তিনশো বছরের দীর্ঘ অটোম্যান ঐতিহ্যের মৃত্যু ঘোষণা করছে। সেই সাথে ইঙ্গিত দিচ্ছে শিল্পকলায় নতুন বিশ্বরূপ পরিগ্রহণের।