এ যেন মৃত্যুর প্রহর গুণতে থাকা। প্রতি সেকেন্ডে, মিনিটে, ঘণ্টায়- মিছিলে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, মৃতের সংখ্যা। তবুও ভালো, সুস্থ হয়ে ফেরার মিছিলও বড় হচ্ছে ক্রমশ। কোভিড-১৯, করোনাভাইরাস আমাদের জীবনকে নতুনভাবে চিনতে শিখিয়েছে, সবাইকে নিয়ে ভাবতে শিখিয়েছে। কিন্তু করোনাকালে পুরো বিশ্ব যখন ঘরবন্দী, অর্থনীতির যখন ভগ্ন দশা, তখনও কিন্তু একটা জিনিস আমাদের প্রয়োজন হচ্ছেই, ‘খাবার’।
অথচ, বিশ্বব্যাপী টানা লকডাউনে যবকিছু যখন বন্ধ, তখন কৃষিখাতেও শকুনের নজর পড়বেই। এরই মধ্যে পড়তেও শুরু করেছে, যথারীতি চোখ রাঙাচ্ছে আসন্ন খাদ্য সঙ্কট। দেশ ও বিদেশের নানান উন্নয়ন সংস্থাগুলো প্রতিনিয়ত নানান গবেষণার মাধ্যমে নীতিনির্ধারকদের চোখে বারবার আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, পৃথিবী পড়তে যাচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায়, বাড়ছে দারিদ্র্য। তাই এখনই সময় প্রস্তুত হবার।
বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে যে সংস্থাগুলো কাজ করে, তাদের মূল নেটওয়ার্ক, ফার্স্ট ইনফরমেশন অ্যান্ড অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (ফিয়ান ইন্টারন্যাশনাল)। চলমান কোভিড-১৯ সঙ্কটে তারা জানাচ্ছে, আগে থেকেই বিশ্বব্যাপী ৮২০ মিলিয়ন মানুষ দীর্ঘস্থায়ী ক্ষুধা তথা খাদ্য সঙ্কট অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে সময় পার করছে। স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য যতটা খাদ্য প্রয়োজন, তা বিশাল সংখ্যার এই জনগোষ্ঠীর আয়ত্ত্বের বাইরে। এর মধ্যে ১১৩ মিলিয়ন মানুষের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। তারা মারাত্মক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।
ঠিক এমন সময়ে বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসের হানা। যে কারণে এই মুহূর্তে অন্তত ৪৪টি দেশের বৈদেশিক খাদ্য সহায়তার প্রয়োজন। করোনাকালে ৫৩টি দেশের ১১৩ মিলিয়ন মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, রয়েছে সামাজিক সুরক্ষার অভাব; সর্বোপরি মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর অভাব।
সঙ্কট মোকাবেলায় বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারি-বেসরকারি এবং ব্যক্তি উদ্যোগে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিটি দেশ। উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোতে জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থাগুলো বিভিন্ন দিকনির্দেশনা প্রদান করছে। অন্যদিকে, অনুন্নত ও দরিদ্র দেশগুলোতে এই সংস্থাগুলো সরাসরি কাজ করছে।
পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশই দারিদ্র্যমুক্তির জন্য বিশেষ সুপারিশ অনুযায়ী কাজ করে থাকে। কিন্তু করোনাভাইরাস যেন নতুন করে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধিতে নিয়ামক হিসেবে কাজ করে চলেছে। আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অক্সফামের গবেষণা বলছে, বিশ্বের প্রায় ৫৫ কোটি মানুষ নতুন করে দারিদ্রসীমার নিচে নেমে যাবে। যা বিশ্বব্যাপী মোট জনসংখ্যার ৮ শতাংশ। এই ৫৫ কোটির মধ্যে ২৪ কোটিই এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের। অর্থাৎ, তালিকায় বাংলাদেশও কোনো না কোনোভাবে চলে আসছে।
বলা হচ্ছে, সর্বোচ্চ ২০ শতাংশ পর্যন্ত আয় কমলে দিনে ১.৯০ ডলার আয় করে, এমন দরিদ্র মানুষের মধ্যে নতুন করে যুক্ত হবে ৪৩ কোটি ৪৪ লাখ। এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়াতেই ২২ কোটি ৯৮ লাখ। আবার ৩.২০ ডলার আয় ধরলে নতুন করে দরিদ্র হবে ৬১ কোটি ১৮ লাখ মানুষ। তাদের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় হবে ২৭ কোটি ৯৬ লাখ। আর সাড়ে ৫ ডলার ধরলে সেই সংখ্যা ৫৪ লাখ ৭৬ হাজার। পরিস্থিতি এ রকম হলে ১৯৯০ সালের পর এই প্রথম দারিদ্র্য পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে।
এখন পাঠকের মনে প্রশ্ন উঠতেই পারে, দরিদ্র বা উন্নয়নশীল দেশগুলো এই পরিস্থিতিতে আরও তলানিতে নেমে যাবেই। কিন্তু উন্নত দেশগুলোও কি তার বাইরে? করোনায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বিভাগ জানাচ্ছে, মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে গত ২৮ মার্চ পর্যন্ত দেশটিতে ৬৬ লাখ কর্মী বেকার হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংক অভ আমেরিকা জানিয়েছে, অবস্থার আরও অবনতি হবে। বেকারত্বের হার ছাড়িয়ে যেতে পারে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত। তাতে করে ভবিষ্যতে বড় ধরনের মন্দার মুখোমুখি হতে পারে দেশটি।
ছোট ছোট এই পরিসংখ্যানগুলোই যথেষ্ট বিশ্বব্যাপী করোনা পরিস্থিতির ভয়াবহতা আঁচ করার জন্য।
আবারও ফেরা যাক খাদ্য সঙ্কট বিষয়ে। জরুরি সাড়া হিসেবে চলমান সঙ্কটের দিনগুলোতে খাদ্য পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নানান উদ্যোগ গ্রহণ করছে দেশগুলো। তবে ঘুরেফিরে এই সঙ্কট মোকাবেলায় একমাত্র পথ হিসেবে বলা হচ্ছে কৃষিখাতকে আরও দৃঢ়করণ। কারণ, একমাত্র কৃষিই পারে ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করতে। অন্তত, দরিদ্র ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য এই জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য কৃষি ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আবার অন্যভাবেও চিন্তা করছে কিছু দেশ। ভুটানের কথাই ধরা যাক- দেশটির খাদ্যপণ্য আমদানির বিষয়টি বিশেষভাবে ভারতমুখী। কিন্তু করোনা সঙ্কটে, ভুটান সমস্যাটি কাটিয়ে উঠতে চাইছে নিজেদের দেশের কৃষিতে উন্নয়নের মাধ্যমে।
যদিও, শুরু থেকে ভুটানেও ‘প্যানিক বায়িং’ বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। অবস্থা টের পেতেই ভুটান সরকারের পক্ষ থেকে জনসাধারণকে আশ্বস্ত করা হয় যে, দেশে আগামি ছ’মাসের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে। কিন্তু করোনায় সীমান্ত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভারত থেকে মরিচ আসা বন্ধ হয়ে যায়। অথচ, ভুটানের প্রধান খাবার হচ্ছে ‘এমা দাস্তে’, যা কিনা পনির এবং মরিচের সাহায্যে তৈরি হয়। এ কারণে হুট করে দেশটির মরিচের বিশাল সঙ্কট পড়ে যায়।
তখনই দেশটি নিজেদের কৃষির গুরুত্ব টের পায়। দেশটির কৃষিমন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেন,
“লকডাউনের কারণে ভারত সীমান্ত বন্ধ হওয়ার কারণে আমাদের দেশের কৃষকরা দেশেই সবজি এবং মাংস উৎপাদনের দারুণ একটা সুযোগ পেতে যাচ্ছে। অথচ এগুলো সবই ভারত থেকে আমদানি করতে হতো। আমরা কোভিড-১৯ মহামারিকে ভুটানের টিকে থাকার পরীক্ষায় আশীর্বাদ হিসেবে গ্রহণ করতে পারি।”
কৃষিতে জোর দেওয়ার পরামর্শ দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রীও। তিনি বলেন,
“আমরা আমাদের কৃষিখাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সাথে নিতে পারি, তাহলে আমরা খেয়াল করব, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যাটিই চলে গেছে। আমরা একদিন এটা দেখতে জেগে উঠব যে, বেকারত্ব আর আমাদের জাতীয় ইস্যু নেই এবং আমাদের নিজেদের জন্য যথেষ্ট খাবার রয়েছে।”
সরকারি এই উদ্যোগের মাধ্যমে পুরো দেশের কৃষিখাত নতুনভাবে জেগে ওঠে। কৃষকদের সহায়তায় দেশটি বিনাসুদে ঋণ সুবিধা দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, এই সঙ্কটের মধ্যেও কৃষকের স্বার্থরক্ষায় বীজ, সার, বিদ্যুৎ ইত্যাদি বিষয় নিশ্চিত করে আসছে। যার ফলাফল, এরই মধ্যে দেশটি পেতে শুরু করেছে। শুধু তা-ই নয়, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আগামী দিনের লড়াইয়েও দেশটি নতুনভাবে বেঁচে থাকার পথ খুঁজে পেয়েছে।
ভারতে খাদ্য সঙ্কট মোকাবেলায় সবচেয়ে এগিয়ে পশ্চিমবঙ্গ। সেখানে কৃষিতে প্রণোদনা দেওয়ার পাশাপাশি রাজ্যের ৭ কোটি মানুষকে ছয়মাস বিনামূল্যে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। একই কাজ করেছে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া। তারাও খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে। কৃষিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ৮ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। ওই বিশেষ প্যাকেজের মধ্যে ১০০ কোটি ডলার খাদ্য কর্মসূচিও থাকছে।
প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ
করোনায় বাংলাদেশ কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, সে ব্যাপারে আগাম পর্যালোচনা করেছে এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। তাদের মতে, করোনা সঙ্কটে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ১.১ শতাংশ হ্রাস পেতে পারে।
বর্তমানে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার ২০.৫ শতাংশ। সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, করোনাকালে বাংলাদেশের দারিদ্র্যের হার ১৫ বছর আগের অবস্থানে ফিরে যেতে পারে। সেই ধারাবাহিকতায়, ২০০৫ সালে বাংলাদেশের এই হার ছিল ৪০ শতাংশ।
গবেষণায় উঠে এসেছে, চলমান লকডাউন তিনমাস স্থায়ী হলে দেশের মানুষের আয় ২৫ শতাংশ কমে যেতে পারে। শুধু তা-ই নয়, দেশের ৪০টি জেলার দারিদ্র্য হার জাতীয় হারকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে রাঙামাটি ও ময়মনসিংহ। এই দুই জেলায় নতুন করে ৩০.৯ শতাংশ ও ৩০.০২ শতাংশ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হবে। এছাড়া সুনামগঞ্জে ২৮.৭ শতাংশ, কক্সবাজারে ২৭.৫ শতাংশ, নীলফামারিতে ২৭.২ শতাংশ, নড়াইলে ২৭.২ শতাংশ, চট্টগ্রামে ২৬.৯ শতাংশ, নেত্রকোনায় ২৫.৯ শতাংশ, চুয়াডাঙ্গায় ২৫.৮ শতাংশ, শেরপুরে ২৫.৬ শতাংশ, বরগুনায় ২৫.৫ শতাংশ এবং শরীয়তপুরে ২৫.৩ শতাংশ মানুষ এই দুর্যোগে নতুনভাবে দরিদ্র হতে পারে।
এরই মধ্যে এই সঙ্কটে দেশের দারিদ্র্য মোকাবেলায় সরকারিভাবে বিভিন্ন পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষের জন্য নানান প্যাকেজ এবং প্রণোদনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা প্রশংসনীয়। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়ন হবে কিনা তা নিয়েই সংশয়।
কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে করোনাকালে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের সামনে দারুণ সুযোগ রয়েছে। কিন্তু তারপরও প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে খাদ্য সঙ্কট, ত্রাণের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছে হতদরিদ্র মানুষ। এর মূল কারণ, সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো মানুষের হাতে পৌঁছুতে না পারা। টানা লকডাউনের কারণে মাঠেই নষ্ট হচ্ছে সবজি, ফসল। বাজার ফাঁকা থাকায় কৃষক পাচ্ছে না সঠিক দাম, যা আগামী আবাদের উপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া পোল্ট্রি খাতে হাজার কোটি টাকার লোকসান, মৎস্য ও দুগ্ধ খামারিদের দুরবস্থা বুঝিয়ে দিচ্ছে, আমরাও সঙ্কটের দ্বারপ্রান্তে।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বড় শহরগুলোর দরিদ্র লোকেরা স্বভাবতই বিপাকে পড়েছেন। শহরের গরিবদের আয়, বসতি, খাদ্য ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা শহরের অর্থনীতির সফলতার ওপর নির্ভরশীল। শহরের অর্থনীতি কোনো কারণে অচল হয়ে গেলে, সেখানকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীই সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ে। বাড়িভাড়া থেকে শুরু করে খাবার কেনা, সবকিছু তাদের নগদ উপার্জনের অর্থ দিয়ে কিনতে হয়। রিকশাচালক, পরিবহনশ্রমিক, হকার, তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিক, অন্যান্য শিল্পকারখানার শ্রমিক ও নিম্নস্তরের কর্মচারীরা এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অভ লেবার রাইটসের (বিলস) জরিপ অনুযায়ী, ঢাকা শহরে রিকশাচালক আছে ১১ লাখ। তাদের ওপরে নির্ভরশীল পরিবারের সংখ্যা কমপক্ষে ৫০ লাখ। এই রিকশাচালকদের ৯৪ শতাংশ বছরের বেশিরভাগ সময় নানা রোগবালাইয়ে ভোগেন। বিশেষ করে জ্বর-কাশি, ঠাণ্ডা লাগা, গায়ে ব্যথা, দুর্বলতা ইত্যাদি লেগেই থাকে। একজন রিকশাচালকের পরিবারের মাসে গড় আয় ১৩ হাজার ৩৮২ টাকা। এর মধ্যে ৬৮ শতাংশই আসে রিকশা চালনা থেকে।
আবার ৯০ শতাংশ পরিবারের আয়ের উৎস রিকশা চালনা। এক-তৃতীয়াংশ চালকের কোনো ভূমি নেই। পরিবহন খাতের সঙ্গে সারা দেশে প্রায় ৭০ লাখ শ্রমিক জড়িত। আর তৈরি পোশাক খাত ও বস্ত্রকলগুলোয় মোট শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৪৫ লাখ। কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এসব শ্রমিকের খাদ্যের জোগানে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
এসব সমস্যা সমাধানে কমিউনিটি পর্যায়ে আলাদা আলাদা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পক্ষে গবেষক ও উন্নয়ন সংস্থাগুলো। দেশের পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করা খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক ‘খানি-বাংলাদেশ’ এরই মধ্যে দেশের কৃষকদের জন্য প্রণোদনায় সুদের হার ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করার দাবি জানিয়েছে সরকারের কাছে। এর পাশাপাশি প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় তারা ৭ দফা দাবি পেশ করেছে, যার মধ্যে কৃষকদের জন্য রাষ্ট্রীয় ক্ষতিপূরণ, মূলধন সহায়তা, হাওরাঞ্চলে ধান কাটার জন্য শ্রমিক ও করোনা নিরাপত্তা, মাঠ থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহ, ক্ষুদ্র কৃষকদের জন্য ডিজেলে নগদ সহায়তা, দুগ্ধ ও পোল্ট্রি খামারী ও মৎস্যজীবীদের জীবিকায়ন ও কর্মপুঁজি প্রদান উল্লেখযোগ্য।
মহামারি করোনা একদিন থেমে যাবেই। ক্রমশ স্বাভাবিক হয়ে উঠবে জনজীবন। কিন্তু খাদ্য সঙ্কট, পুষ্টিহীনতা, দারিদ্র্য দূরীকরণের যে লড়াইয়ে পুরো বিশ্ব একজোট হয়ে কাজ করে যাচ্ছিল, তা যেন আবারও সেই শুরু থেকে শুরু হবে। সামনের দিনগুলোতে যে করোনা পরবর্তী সঙ্কটগুলো আমাদের সামনে নতুনভাবে ধরা দেবে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই এখনই সময় নিজেদের জায়গা থেকে প্রতিরোধের উদ্যোগ নেবার।