Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

মাতৃত্ব ও পিতৃত্বকালীন ছুটি এবং প্যারেন্টাল লিভ: জেনে নিন বিস্তারিত

মাতৃত্বকালীন ছুটি, পিতৃত্বকালীন ছুটি এবং প্যারেন্টাল লিভ- সন্তানের সাথে জড়িত এই ছুটিগুলোকে নিয়ে বেশ কিছু দ্বিধা কাজ করে মানুষের মধ্যে। খুব শিক্ষিত কোনো মানুষেরও হুট করে বুঝতে সমস্যা হয় যে, প্যারেন্টাল এবং প্যাটারনাল লিভ দুটো ভিন্ন ব্যাপার। একটি হলো সন্তান জন্মানোর পর পিতার ছুটি নেওয়া। আর অন্যটি সন্তানকে সময় দেওয়া এবং তাকে মানুষের মতো মানুষ করে তোলার জন্য নেওয়া ছুটি। আপনার মনে কি কখনো দ্বিধা কাজ করেনি এই ছুটিগুলো নিয়ে? মাতৃত্বকালীন ছুটির সাথে আমরা পরিচিত অনেক আগে থেকেই। কিন্তু পিতৃত্বকালীন ছুটির সাথে আমাদের পরিচয় বেশিদিনের নয়। আর অভিভাবক হিসেবে নেওয়া প্যারেন্টাল লিভ এখনো আমাদের দেশে ঠিক করে চালুই হয়নি। চলুন, আজ এই ব্যাপারগুলোকে আরো একটু পরিষ্কারভাবে জেনে নেওয়া যাক।

মাতৃত্বকালীন ছুটি বনাম পিতৃত্বকালীন ছুটি

মাতৃত্বকালীন ছুটি; Source: TNW

মাতৃত্বকালীন ছুটি বলতে সন্তান জন্ম দেওয়ার কিছুদিন আগে থেকে শুরু করে সন্তান জন্মানোর কিছুদিন পর পর্যন্ত নারীরা কর্মস্থল থেকে যে ছুটি পেয়ে থাকেন, সেটাই হলো মাতৃত্বকালীন ছুটি। এই ছুটির ব্যাপারটি প্রথম চালু হয় যুক্তরাজ্যে। ১৯১১ সালে ডেভিড লয়েড জর্জ প্রথম নারীদের জন্য মাতৃত্বকালীন অনুদানের কথা বলেন। নারীদের মা হওয়ার সময়টুকুকে সবার সামনে আনার চেষ্টা করা হয় তিনিই। ১৯৪১ সালের দিকে নারীদের কর্মস্থলে প্রবেশ করার ব্যাপারটিকে নিয়েই প্রশ্ন তোলা হয়। কিছু প্রতিষ্ঠানে বাচ্চাদের জন্য নার্সারির ব্যবস্থা করা হয়। তবে সেটা ছিল খুব অল্প সময়ের জন্য। মাতৃত্বকালীন সুবিধার ব্যাপারটি তখনো অনেকটা কাগজে কলমেই থেকে যায়।

১৯৭৪ সালে সুইডেন মাতৃত্বকালীন ছুটির ব্যাপারে আইন পাশ করে, তাই ব্যাপারটা অনেকটা এগিয়ে যায়। ইরাকও এই সময়ে মায়েদের জন্য বেশ ভালো সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করে। সেখানে নারীরা মাতৃত্বকালীন সময়ে ছুটি এবং বেতন দুটোই পাওয়ার সুযোগ থাকে। সেইসাথে সন্তান জন্মের পর তাকে কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার পাশাপাশি নার্সারিতে সন্তান লালন পালনের ব্যাপার তো ছিলোই। ১৯৮০ সালের দিকে মাতৃত্বকালীন ছুটি কোনো প্রতিষ্ঠানে দেওয়া হতো, কোনোটিতে দেওয়া হতো না। এটা নির্ভর করতো প্রতিষ্ঠানের উপর। এমনকি, ১৯৮৫ সালে ব্যাপারটিকে কেন্দ্র করে কর দেওয়া নেওয়ার ব্যাপারটিও প্রচলিত হয়।

১৯৮৮ সালের দিকে ব্রিটেন বুঝতে পারে যে, অন্য দেশগুলো যখন এই ছুটির দিক দিয়ে এগিয়ে গিয়েছে, তখন তারা পিছিয়ে পড়েছে একটি দেশ হিসেবে। ব্যস, শুরু হয়ে যার মাতৃত্বকালীন ছুটি যুক্তরাজ্যেও। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই এই ছুটি কার্যকরী আছে। বিভিন্ন দেশে সরকারিভাবেই মাতৃত্বকালীন ছুটির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। কোথাও সেটা ১২ সপ্তাহব্যাপী, কোথাও ১৬ সপ্তাহ। বাংলাদেশে সরকারিভাবে মাতৃত্বকালীন সমিয়ে নারীদেরকে ১৬ সপ্তাহ বেতনসহ ছুটি প্রদান করা হয়।

পিতৃত্বকালীন ছুটিও বেশ দরকারি; Source: Your Pregnancy Doctor

অন্যদিকে, পিতৃত্বকালীন ছুটি অন্য অনেক দেশে প্রচলিত হলেও বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত এই ছুটি পুরোপুরিভাবে কার্যকর করা হয়নি। ২০০১ সালে গর্ডন ব্রাউন প্রথম পিতৃত্বকালীন ছুটির কথা ঘোষণা করেন। সন্তান জন্ম নেওয়ার পর তাকে দেখাশোনা করা, তার যত্ন নেওয়া, তার দায়িত্বগুলো নেওয়া সবসময় নারীদের জন্যেই তুলে রাখা হয়েছিল। কিন্তু নারীরা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করলে ধীরে ধীরে সন্তানের দায়িত্ব পড়তে শুরু করে বাবার কাঁধেও। মা একা নয়, সাথে বাবাকেও শিশুর প্রথম দিনগুলোতে দরকার। সদ্য মা হওয়া নারীর সাহায্য দরকার, সমর্থন দরকার তার ভালোবাসার মানুষটির। আর এসব ভেবেই সবার মাথায় আসে পিতৃত্বকালীন ছুটির কথা।

২০০৩ সালে পুরুষেরা প্রথম বাবা হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময়ের ছুটি পান। ২০১০ সালে বাবাদেরকে সদ্য মা হওয়া নারী এবং তার সন্তানের দেখভাল করার জন্য ছয় মাসের ছুটি প্রদান করা হয়। বাংলাদেশে এই ছুটির সময়কাল মাত্র ১৫ দিন নির্ধারিত করা হয়েছে। মাতৃত্বকালীন ছুটির মতো পিতৃত্বকালীন ছুটির ক্ষেত্রেও পুরুষেরা বেতন পেয়ে থাকেন। বাংলাদেশে ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি এই ঘোষণা প্রদান করা হয়। বিভিন্ন দেশে এই সময়কাল বাড়ে এবং কমে। শুধু সরকার নয়, দেশের আরো অনেক প্রতিষ্ঠান কমবেশি হিসেবে নারী এবং পুরুষকে তাদের সন্তান জন্মদানের সময়কে কেন্দ্র করে ছুটি দিয়ে থাকে। তবে, এই ছুটিগুলো কিন্তু প্যারেন্টাল লিভের চাইতে একটুখানি আলাদা।

প্যারেন্টাল লিভ

প্যারেন্টাল লিভ; Source: Thought Catalog

সাধারণত, মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং পিতৃত্বকালীন ছুটি- দুটো ব্যাপারকেই প্যারেন্টাল লিভের অন্তর্ভুক্ত করা যায়। কিন্তু সব মিলিয়ে প্যারেন্টাল লিভ কিন্তু আরো বড় একটি ব্যাপার। আপনি আপনার সন্তান জন্মানোর পরই ছুটি শেষে দায়িত্ব থেকে মুক্ত হতে পারবেন না। শিশুর টিকা প্রদান, অসুস্থতা, বিদ্যালয়ে আনা নেওয়া, পরিবারের যেকোনো সমস্যায় আপনার ছুটির দরকার হতে পারে। আর সেই ক্ষেত্রে যে ব্যাপারটি আপনার সবচাইতে বেশি দরকার পড়বে সেটি হলো প্যারেন্টাল লিভ।

মাতৃত্বকালীন এবং পিতৃত্বকালীন ছুটি এবং বেতন দুটোই আপনি পাবেন। তবে প্যারেন্টাল লিভের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি একটু ভিন্ন। এতে আপনি ছুটি পাবেন, তবে কোনো বেতন পাবেন না। ১৯৮৮ সালে দ্য প্যারেন্টাল লিভ অ্যাক্ট অনুসারে, যেকোনো ব্যক্তি তার পরিবার ও সন্তানের জন্য নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ছুটি পাবেন। এই ব্যাপারে তাকে কথা বলে নিতে হবে নিজের প্রতিষ্ঠানের সাথে। কোনো ব্যক্তি একসাথে অনেক দিনের ছুটি পাবেন কিনা, কিংবা অল্প অল্প করে ছুটি নেওয়ার ব্যাপার- দুটোই এখানে ঘটতে পারে। আপনি যদি এমন কোনো সমস্যায় পড়েন তাহলে সন্তানের অভিভাবক হিসেবে প্যারেন্টাল লিভ নিতে পারেন। তবে এর জন্য কোনোরকম বেতন আপনি পাবেন না।

ভাবছেন, তাহলে এই ছুটি থেকে লাভ কী? লাভ হলো, আপনি একসাথে অনেকদিন অফিসে উপস্থিত না থাকলে আপনার কর্মস্থলে সমস্যা হতে পারে, হয়তো আপনাকে আপনার চাকরি নিয়েও চিন্তায় পড়তে হতে পারে। কিন্তু প্যারেন্টাল লিভের মাধ্যমে অনেকদিনের ছুটি একসাথে নিয়ে ফেললেও এ ব্যাপারে আপনার কোনো সমস্যা হবে না।

প্রাপ্য ছুটিকে কাজে লাগান আপনার সন্তানের জন্য; Source: The Conversation

বাংলাদেশে এই ধারণাটি এখনো অনেক নতুন। সরকার কিংবা কোনো প্রতিষ্ঠান- কোথাও এটি নিয়ে কোনো কাজ করা হয়নি। তবে আশা করা যায়, খুব দ্রুতই অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য প্যারেন্টাল লিভ দেওয়ার নিয়ম করা হবে। প্যারেন্টাল লিভের মধ্যে অবশ্য আরো অনেক ব্যাপার পড়ে যায়। অনেকসময় নারী সন্তান জন্মের অনেকগুলো দিন পর ছুটির মেয়াদ শেষ হয়ে এলেও শারীরিকভাবে সুস্থ বোধ করেন না। সেক্ষেত্রে তার ছুটি শেষ হওয়ার সময় স্থগিত করা সম্ভব।

অনেকসময় সন্তান যেদিন জন্ম নেবে বলে ধারণা করা হয়, তার বেশ কিছুদিন পর জন্ম নেওয়ায় ছুটির হিসেবে গোলমাল হয়ে যায়। এই সমস্যাগুলোর হাত থেকে বাঁচার জন্যেই প্যারেন্টাল লিভের ব্যাপারটি রাখা হয়েছে। এখন, প্রশ্ন হলো- এই ছুটিগুলো আপনি কীভাবে পাবেন? কী ধরনের কাগজ দেখাতে হবে আপনাকে কর্মস্থলে? খুব সহজ এই ব্যাপারটি সমাধা করতে অফিসে এ সংক্রান্ত ব্যাপারগুলো নিয়ে দায়িত্ব পালন করেন যিনি তার কাছে চলে যান। নির্দিষ্ট কিছু তথ্য এবং কাগজ চাইবেন তিনি। আপনার ছুটি নেওয়ার সত্যতা যাচাই করার জন্যে এই কাগজগুলো দিয়ে দিন আর উপভোগ করুন আপনার প্রাপ্য ছুটি।

ফিচার ইমেজ: The Conversation

Related Articles