দুর্ঘটনা বা অনাকাঙ্ক্ষিত নেতিবাচক ঘটনা কখনো বলে-কয়ে আসে না। যার সাথে এরকম খারাপ কিছু একটা ঘটে যায়, ঘটনাটি ঘটার পর তিনি নিজেই কমবেশি ঘোরের মধ্যে থাকেন। এমন পরিস্থিতিতে তার জন্য প্রয়োজন হয় আশেপাশের মানুষের কাছ থেকে একটু সহমর্মিতা বা মানসিক সমর্থন। কিন্তু এটি না করে অনেক সময় ঠিক তার উল্টোটাই করা হয়। অর্থাৎ, তার সাথে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার সাথে তারই সংশ্লিষ্টতা খুঁজে বেড়ানো হয়। এমতাবস্থায় ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিটিকে যে কি নিদারুণ মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, তা বলাই বাহুল্য।
ভিকটিম ব্লেইমিং (Victim Blaming) কী
ভিকটিম ব্লেইমিং হলো এমন একটি ব্যাপার, যেখানে কোনো দুর্ঘটনা অথবা ঘটে যাওয়া কোনো অপরাধের জন্য ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি বা ভিকটিমকেই দায়ী করা হয় কিংবা সেই ঘটনাটির পেছনে তার ভূমিকা খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হয়। এক্ষেত্রে অপরাধীর অপরাধ বিবেচনায় নেওয়া হোক বা না-ই হোক, উক্ত ঘটনার জন্য ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তির ঘাড়ে সামান্যতম দায় চাপানোর প্রবণতাও ভিকটিম-ব্লেইমিং এর মধ্যে পড়ে।
যখন ভিকটিম-ব্লেইমিং করা হয়, তখন সাধারণত কয়েকটি প্রেক্ষাপট থেকে ভিকটিমের উপর দায় চাপানোর চেষ্টা করা হয়। যেমন ভিকটিম সম্পর্কে বলা হতে পারে:
- এটা তারই দোষ। তার কোনো কার্যকলাপ বা চালচলনের ফলেই অপরাধী প্রলুব্ধ হয়েছে কিংবা দুর্ঘটনাটি ঘটার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
- আমি এ অপরাধটা মোটেও সমর্থন করি না, ‘তবে’ তার (ভিকটিম এর) অতীত রেকর্ডও খুব একটা ভালো না।
- তার আরেকটু সতর্ক থাকা উচিত ছিল; তাহলে এমনটা হতো না।
- আসলে এটা তেমন বড় কোনো ঘটনা না, কিন্তু সে এমন ভাব করছে যেন এটা অনেক বড় কিছু।
- কই, আমাদের সাথে তো এমন কিছু ঘটে না! তার সাথে কেন ঘটলো?
- তার পরিবারের দায় আছে, হয়তো তারা তাকে ঠিকমতো দেখেশুনে রাখে না। তাই হয়তো এমনটা ঘটেছে।
মোটামুটি এগুলো হচ্ছে ভিকটিম-ব্লেইমিং এর ধরন, তবে আরও অনেকভাবেই ইনিয়ে-বিনিয়ে ভিকটিমের উপর দায় চাপানোর চেষ্টা করা হতে পারে।
ভিকটিম-ব্লেইমিং এর পেছনে যত কারণ
ভিকটিম-ব্লেইমিং এর পেছনে খোলা চোখে দৃশ্যমান অনেক কারণ যেমন আছে, তেমনি মানুষের মনস্তাত্ত্বিক কিছু ব্যাপারও জড়িয়ে আছে এর সাথে। জেনে নেওয়া যাক সেগুলো।
অভিজ্ঞতার অভাব ও মূর্খতা
একটু ভালো করে খেয়াল করলেই দেখা যাবে, যারা দুর্ঘটনার পর ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিকেই দায়ী করে থাকেন, তাদের বড় একটা অংশই অতি সংকীর্ণ মন-মানসিকতা সম্পন্ন মানুষ। তারা কোনো একটা ঘটনা বা পরিস্থিতিকে নিজের সংকীর্ণ মনের ক্ষুদ্র গন্ডির বাইরে গিয়ে ও বড় পরিসরে চিন্তা করার ক্ষমতা রাখেন না। লক্ষ্য করুন, শুধু স্বল্প-শিক্ষিত ব্যক্তিই নয়, উচ্চ-শিক্ষিত ব্যক্তিরাও সংকীর্ণ মনের অধিকারী হতে পারেন।
আবার, তাদের চিন্তার জগতটা বিস্তৃত নয় বলে, নিজেকে ভিকটিমের জায়গায় কল্পনা করতে পারেন না। ফলে তাদের মধ্যে সহমর্মিতার বিষয়টাও কম থাকে। এছাড়াও, তাদের নিজেদের আপনজনদের মাঝে নিরীহ কেউ যদি সে ধরনের পরিস্থিতির শিকার না হয়ে থাকে, তাহলে অভিজ্ঞতার অভাবে তারা ঐ পরিস্থিতির গভীরতা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়।
বিদ্বেষ
বিদ্বেষজনিত কারণে ভিকটিম-ব্লেইমিং এর ঘটনা ঘটা খুব সাধারণ একটা ব্যাপার। যেমন যারা কমবেশি নারী-বিদ্বেষী, তারা কোনো নারী ধর্ষণের ঘটনায় খুব বেশী বিচলিত নাও হতে পারেন। বরং উলটো, তারা ধর্ষণের ঘটনায় নারীদের কী কী ভূমিকা বা দোষ ছিল, কিংবা পোশাক-চালচলন কেমন ছিল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠাতে পারেন। আপনারা অনেকেই হয়তো ২০১২ সালে দিল্লীর বাসে ঘটে যাওয়া গণধর্ষণ ও হত্যাকান্ডের কথা ভোলেননি। এ ঘটনার পর ভারত সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বক্তব্যে ভিকটিম-ব্লেইমিং এর বিষয়টা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে, যা ভারতবাসীকে চরমভাবে ক্ষুদ্ধ করেছিল। এটা শুধু ভারত, কিংবা আমাদের দেশ কিংবা এই উপমহাদেশেরই সমস্যা না; গোটা বিশ্বেই এধরনের প্রবণতা কম-বেশী দেখা যায়।
আবার ভিকটিম-ব্লেইমিং এর পেছনে জাতিগত বিদ্বেষও উল্লেখযোগ্য একটা কারণ, যা সম্প্রতি ক্রাইস্টচার্চে ঘটে যাওয়া নৃশংস ঘটনার ক্ষেত্রে দেখা গেছে। যদিও নিহতদের সকলেই ছিলেন নিরীহ ব্যক্তি, তবুও তাদের জাতিগত পরিচয়ের কারণে তাদের উপর দায় বর্তানোর হীন প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা গেছে। আবার এ ধরনের বিদ্বেষমূলক ভিকটিম-ব্লেইমিং আমাদের দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলার পরও দেখা যায়। গোটা বিশ্বে এমন আরও অসংখ্য নিদর্শন আছে।
ক্রোধ
সন্তান পরীক্ষায় খারাপ করলে অনেক বাবা-মা কারণ জানার চেষ্টা না করে একতরফাভাবে তাদেরকে দায়ী করেন। কোনো কারণে তাদের সন্তানদের পড়াশোনায় অবনতি হলো কিনা, হলেও সেটা কী কারণে, সেটার পেছনে পারিবারিক বা অন্য কোনো কারণ আছে কিনা- তা শনাক্ত করার বদলে তাদেরকে দোষারোপ করাটা ভিকটিম-ব্লেইমিং এর পর্যায়ে পড়ে।
আবার, কোনো ব্যক্তি ভিন্নমতাদর্শী হওয়ার কারণে কিংবা অন্য কোনো কারণে তার প্রতি সমাজের কিছু মানুষের ক্রোধ থাকতে পারে। কিন্তু সেই ব্যক্তিটি যখন কোনো ধরনের আক্রমণের শিকার হন বা বিপদের মুখে পড়েন, তখন অনেকে এটার জন্য একতরফাভাবে তাকেই দোষারোপ করতে থাকে। এটা স্পষ্টতই ক্রোধের কারণে ভিকটিম-ব্লেইমিং।
বিচারবুদ্ধির অভাব
আবারও ধর্ষণের প্রসঙ্গে ফিরে আসা যাক, কেননা, ধর্ষণের ক্ষেত্রেই ভিকটিম-ব্লেইমিং এর ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে থাকে। ধরুন, এক রাতে কোনো এক নারী ধর্ষণের শিকার হলেন। এক্ষেত্রে খুব সাধারণ একটা ভিকটিম-ব্লেইমিংসূচক বক্তব্য হয় এমন, “সেই নারী রাতের বেলায় বাইরে কী করছিলেন?” এরকম দাবি যারা তোলেন তাদের বিচার-বুদ্ধির মানদণ্ড সমাজের আর দশটা মানুষের চেয়ে ভিন্ন। এ ধরনের বক্তব্য একটু ভালো করে উপলব্ধি করতে গেলে বোঝা যাবে যে, তারা ‘রাতের বেলায় নারীদের বাইরে বের হওয়াকে শুধু অপরাধই নয়, গুরুতর অপরাধ মনে করেন এবং সেই তুলনায় ধর্ষণকে ‘ততটা তীব্র অপরাধ’ বলে মনে করেন না।
অভ্যাসের বলয়
এটা সত্য যে মানুষ তার অভ্যাসের বলয় ভেঙে সহজে বাইরে আসতে চায় না। আপনি এতদিন যা জেনেশুনে আসছেন, সেটাকেই স্বাভাবিকভাবে নেবেন, এর বাইরে কোনোকিছু ঘটতে পারে, সেটা আপনি সহজে মানতে চাইবেন না। এ প্রবণতা থেকে আমরা অনেকসময় না জেনেও ভিকটিমকে দোষারোপ করে ফেলি।
মনে করা যাক, পুলিশ একজন চোরকেই চুরির অপরাধে গ্রেফতার করেছে। এখানে সম্ভাবনা বেশি যে, আপনি শুধুমাত্র চোরটিকে গ্রেফতার করার কারণ জানতে চাইবেন। কিন্তু আপনি তার অপরাধের কোনো প্রমাণ দেখতে চাইবেন কি? খুব সম্ভবত, “না”। কেননা আপনি এটা ভেবে অভ্যস্ত যে, চোর বারবার চুরি করবে এবং বারবার ধরা খাবে; এটাই বরং স্বাভাবিক। কিন্তু এর ব্যতিক্রম কি একবারও হতে পারে না?
আবার কেউ যখন গ্রেফতার হয়, যার বিরুদ্ধে পূর্বে কোনো অভিযোগ ছিল না, তখনও আপনি ভাবতে পারেন, হয়তো সত্যিই সে কোনো অপরাধ করেছে, তা না হলে পুলিশ তাকে ধরবে কেন? এক্ষেত্রেও আপনি প্রমাণের ধার ধারেননি। আমাদের দেশে যতগুলো ‘বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ ঘটে, সেগুলোর পরও ভিকটিম-ব্লেইমিং এর প্রবণতা উল্লেখযোগ্য হারে লক্ষ্য করা যায়; যদিও ‘বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ কোনো চূড়ান্ত সমাধান নয়, এটির দ্বারা যে কেউই অন্যায়-অবিচারের শিকার হতে পারেন।
প্রেক্ষাপট
একজন মানুষ কোন প্রেক্ষাপটে দুর্ঘটনা বা অপরাধের শিকার হলো, সেটা অনেকসময় ভিকটিম-ব্লেইমিং এর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। সহজ একটি উদাহরণ দিই।
ক্লাস ফাইভে পড়ুয়া এক ছেলে তার বাবা-মাকে না জানিয়েই বন্ধুদের সাথে অনেক দূরে কোথাও ক্রিকেট খেলতে গেলো। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেখানে গিয়ে সে স্থানীয় ছেলেদের সাথে মারামারি করে দারুণভাবে আহত হয়ে ফিরে এলো। এ অবস্থায় বেশিরভাগ বাবা-মা সে ছেলেটির একটি ‘অপরাধ’কে দুটি অপরাধ বানিয়ে তাকে দোষারোপ করতে থাকবেন। প্রথম অপরাধ, সে বাসায় না জানিয়ে দূরে কোথাও খেলতে গেছে, আর দ্বিতীয় ‘অপরাধ’ হচ্ছে, সে মার খেয়ে এসেছে। এটাও ভিকটিম-ব্লেইমিং। এক্ষেত্রে প্রথমটিকে তার ‘ভুল’ কিংবা বাবা-মায়ের ভাষায় ‘অপরাধ’ বলা যেতে পারে, কিন্তু দ্বিতীয় ক্ষেত্রে সে নিজেই অপরাধের শিকার বা ভিকটিম।
কনফার্মেশন বায়াস
কনফার্মেশন বায়াস হলো আপনি যা বিশ্বাস করেন অথবা সত্য বলে মনে করেন, সেটার স্বপক্ষে যুক্তি বা প্রমাণ খোঁজা। আপনি যদি কোনো কারণে কোনো ব্যক্তির প্রতি নেতিবাচক ধারণা পোষণ করে থাকেন বা কোনো কারণে তাকে আপনার পছন্দ না হয়, তাহলে সেই ব্যক্তি কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলে আপনি উলটো তাকেই দোষারোপ করার জন্য তার নানান ত্রুটি খুঁজে বের করতে সচেষ্ট হবেন। এমনকি তার অতীতের কোনো ভুল, অপরাধ, ত্রুটি বা বিতর্কিত পেশাজীবনকে সামনে এনে হাজির করবেন, যদিও তা কোনোভাবেই তার সাথে ঘটে যাওয়া অপরাধ বা দুর্ঘটনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।
প্রাকৃতিক ন্যায়বিচারের ধারণা
ভিকটিম-ব্লেইমিং এর পেছনে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মনস্তাত্ত্বিক কারণ। মানুষ স্বাভাবিকভাবে পৃথিবীকে একটি সুন্দর ও ন্যায়সঙ্গত স্থান হিসেবে ভাবতে পছন্দ করে। অধিকাংশ মানুষের মনেই একটি ধারণা বিদ্যমান, তা হলো- এ জগতে যে যেমন কাজ করে, সে তেমন ফলই পায়। অর্থাৎ, কেউ ভালো কাজ করলে এর বিপরীতে সে ভালো ফল পাবে, আবার কেউ খারাপ কাজ করলে সে এর জন্য খারাপ ফল বা শাস্তি পাবে। আপনিও হয়তো এটা ভাবেন এবং মনে করেন এটাই ‘প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম’।
যদি আপনি তা-ই ভেবে থাকেন, তাহলে একটু খেয়াল করে দেখুন, আপনার এ ভাবনার পেছনে বাস্তবিক ও শক্তিশালী কোনো ভিত্তি নেই; এটা নিজেকে পরিতৃপ্ত রাখার একটি মানসিক অপপ্রয়াস মাত্র। আপনি হয়তো পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন, যারা দুর্নীতি করেন, তারা একসময় ধরা পড়েনই। আবার যারা সৎ থাকেন, তারা জীবনে সুখ-শান্তি পান। আপনার পর্যবেক্ষণ হয়তো একটা নির্দিষ্ট পরিসরে সত্য, কিন্তু এ কয়েকটি পর্যবেক্ষণ থেকে যদি আপনি গোটা মানবসমাজকে নিয়ে একটি তত্ত্ব দাঁড় করিয়ে ফেলেন, তাহলে সেটা ‘লজিক্যাল ফ্যালাসি’ বা ‘যৌক্তিক ভুল’ এর পর্যায়ে পড়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
একটু ভেবে দেখুন, প্রয়োজনে গোটা বিশ্বকেই বিবেচনায় নিন; সব অপরাধীই কি সাজা পায়? অনেকে আইনের ফাঁক-ফোকর গলিয়ে বের হয়ে যায় না? আবার, সব সৎ ব্যক্তিই কি জীবনে সুখ বা শান্তি পান? জীবনের সকল ক্ষেত্রে সৎ থাকার চেষ্টা করেছেন, এমন কোনো ব্যক্তিকে চিকিৎসার অভাবে মারা যেতে দেখননি আপনি? এমন আরও অসংখ্য নিদর্শন খোঁজে পাবেন, যা আপনার পার্থিব বা প্রাকৃতিক ন্যায়বিচারের ধারণাকে ক্ষত-বিক্ষত করবে।
এখন আবার ফিরে যাচ্ছি আপনার সেই ‘প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম’ এ, যে ভুল ধারণায় আপনি হয়তো বিশ্বাস করে থাকেন। যখন কেউ কোনো দুর্ঘটনা বা অপরাধের শিকার হন, তখন আপনি খুব সম্ভবত নিজের অজান্তেই সে ভিকটিমের উপর আপনার এই থিওরি খাটাতে যান। অর্থাৎ, আপনার মন ভাবতে চায়, “ভিকটিম নিশ্চয়ই কোনো পাপ বা খারাপ কাজ করেছিল, এটার ফল সে পাচ্ছে।” আপনি একটু গভীরভাবে চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন যে, আপনার চিন্তার কোনো ভিত্তি নেই, কিন্তু তবুও আপনি কেন এই চিন্তাটা করছেন?
প্রশ্নটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর উত্তর হলো, আপনি নিজের স্বার্থেই এভাবে চিন্তা করছেন। হ্যাঁ, অবাক লাগলেও এটাই সত্য!
প্রতিটি মানুষই অনাকাঙ্ক্ষিত ঝামেলা এড়িয়ে চলতে চায় নিজের নিরাপত্তার জন্য। আবার প্রত্যেকেই নিজেকে ‘ভালো এবং সঠিক’ মনে করেন। তাই যখন আপনার প্রতিবেশীর সাথে খারাপ কিছু ঘটে, তখন আপনার অবচেতন মন তার সাথে আপনার তুলনা করতে চায়। কিন্তু এটা করতে গিয়ে সে যখন দেখে, আপনার প্রতিবেশীর সাথে আজ যা ঘটলো, তা কাল আপনার সাথেও ঘটতে পারে, তখন সে অনিরাপদ ও অস্বস্তি বোধ করে। এই অনিরাপত্তাবোধ ও অস্বস্তি কাটানোর জন্য আপনার মন তখন বিকল্প ব্যাখ্যা খোঁজে এবং নিজেকেই মিথ্যা আশ্বাস দেয়। আপনার মন তখন আপনাকে বলে, “তোমার প্রতিবেশী নিশ্চয়ই কোনো খারাপ কাজ করেছিল এবং সেটার ফল পেয়েছে। কিন্তু তুমি তো খারাপ নও, তাই তোমার সাথে কখনো এমন কিছু ঘটবে না”। আর এটা করতে গিয়ে হয়তো নিজের অজান্তেই আপনি ভিকটিম-ব্লেইমিং করে থাকেন।
কিন্তু বুদ্ধিমান ব্যক্তিমাত্রই মনস্তাত্ত্বিক এই ছলনা ও সাময়িক সান্ত্বনা কাটিয়ে উঠতে পারেন। কেননা, নিশ্চিতভাবেই নিরীহ ব্যক্তিরাও অপরাধ বা দুর্ঘটনার শিকার হন এবং সেটা সবাই জানে।
হিন্ডসাইট বায়াস
ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর আপনার কি মনে হয়েছে, “ট্রাম্পই তো জেতার কথা, আমি আগেই অনুমান করেছিলাম” ? কিংবা একটা কঠিন অংক আপনার বন্ধু সমাধান করে দেওয়ার পর মনে হয়েছে যে, এটা অনেক সহজ ছিল, আপনি নিজেই তো সেটা সমাধান করতে পারতেন ?
যদি তা-ই মনে করে থাকেন, তাহলে আপনি সম্ভবত নিজের সাথেই প্রতারণা করছেন। কেননা, বিগত মার্কিন নির্বাচনের আগে হিলারি ক্লিনটনের জেতার সম্ভাবনাও যথেষ্টই ছিল, তাই আপনার নিশ্চিতভাবে মনে করার কোনো কারণ ছিল না যে, ট্রাম্পই জিতবে। আবার, আপনি অংকটি কিছুতেই সমাধান করতে না পেরে আপনার বন্ধুর কাছে গেছেন, অংকটা সহজ হলে নিশ্চয়ই হাল ছেড়ে দিয়ে বন্ধুর দ্বারস্থ হতেন না?
কোনো একটা ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর সেটা আমাদের কাছে স্বাভাবিক মনে হয়, এবং এটাও মনে হয় যে, আমরা ঘটনার পূর্বে সহজেই এটা অনুমান করে নিতে পারতাম। কিন্তু বাস্তবে কিছু কিছু ঘটনা ঘটার পূর্বে আমরা আদৌ অনুমান করতে পারি না, কি ঘটতে যাচ্ছে।
মনে করুন, আপনার এক বন্ধু দিনে-দুপুরে ছিনতাইয়ের শিকার হলো। আপনি তাকে বলতে পারেন, “আরেকটু সাবধান হয়ে চলতে পারলি না? জানিস না, নিরিবিলি রাস্তাতে বা অলিগলিতে ছিনতাইকারী ধরতে পারে!” ভেবে দেখুন, অন্যান্য পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলোকে আপনি হয়তো বিবেচনায় নিচ্ছেন না, আপনি ধরেই নিয়েছেন একটু সাবধান থাকলেই দিনের বেলায় এটি এড়ানো যেতো। কিন্তু আপনার বন্ধুটি তো তার দিক থেকে যথাসম্ভব সাবধানেই থেকেছে; সে তো কল্পনাও করেনি দিনের বেলায় এভাবে ছিনতাইয়ের শিকার হতে হবে। আপনার যদিও এখন মনে হচ্ছে, এ বিষয়টা আপনার মাথায় আসতো, কিন্তু তা সম্ভবত সত্যি না। এটা ঘটে গেছে বলেই আপনার মনে হচ্ছে তার জায়গায় আপনি হলে আগেই বুঝতে পারতেন, কিন্তু বাস্তবে বিষয়টা হয়তো মোটেও সেরকম হতো না।
এই মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপারটার নাম ‘হিন্ডসাইট বায়াস’ এবং এটিও ভিকটিম-ব্লেইমিং এর অন্যতম কারণ।
কেন ভিকটিম-ব্লেইমিং পরিহার করা উচিত
আপনার আপনজনদের মাঝে কেউ যদি কখনো ভিকটিম-ব্লেইমিং এর শিকার হয়ে থাকে, কিংবা ভিকটিম-ব্লেইমিং এর শিকার কাউকে যদি আপনি খুব কাছ থেকে দেখে থাকেন, তাহলে সম্ভবত ভিকটিম-ব্লেইমিং এর বিষয়ে ইতোমধ্যে আপনি সচেতন। কেননা, আপনি তাদের প্রচণ্ড মানসিক চাপ ও যন্ত্রণাটা অনেক কাছ থেকে কিছুটা হলেও আঁচ করতে পেরেছেন।
কিন্তু আপনি যদি কখনো বিষয়টি নিয়ে আলাদা করে ভেবে না থাকেন, তাহলে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।
ধর্ষণ বা যৌন হয়রানি
আপনি যদি ভেবে থাকেন ‘পোশাক’ কিংবা ‘চালচলন’ কিংবা ‘গভীর রাতে চলাফেরা’র জন্য এবং শুধুমাত্র নারীরাই ধর্ষণের শিকার হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি সবদিক থেকেই ভুল। কেননা, আট মাসের শিশু থেকে শুরু করে কমবয়সী ছেলেশিশু এবং পঞ্চাশোর্ধ্ব নারী পর্যন্ত ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের শিকার হয়ে থাকেন; যেখানে আপনার পূর্বোক্ত যুক্তিগুলো খাটে না। তাই আপনার মূল্যবোধকে সংশোধন করুন এবং অপরাধের জন্য অপরাধীকে দায়ী করুন।
যৌন হয়রানির শিকার একজন ব্যক্তি পুনরায় ভিকটিম-ব্লেইমিং এর শিকার হলে তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়া থেকে শুরু করে অনিয়ন্ত্রিত যৌনজীবন কিংবা আত্মহত্যার প্রবণতার দিকে ঝুঁকে পড়তে পারেন।
বাবা-মা ও সন্তান
আপনার সন্তানকে ছোটবেলা থেকেই কোনটা অপরাধ, আর কোনটা অপরাধ নয়, সেটার ধারণা স্পষ্ট করে দিতে হবে। আপনি যদি অপরাধ না থাকলেও তাকে দোষারোপ করতে থাকেন, তাহলে তার দৃষ্টিতে ভালো-খারাপের পার্থক্য স্পষ্ট হবে না; সুষ্ঠু বিচারবোধ গড়ে উঠবে না তার মধ্যে।
যেকোনো সন্তানের শেষ আশ্রয়স্থল তার বাবা-মা। কোনো অপরাধ বা দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার পর সে যদি সেখানেও আশ্রয় না পায়, বরং উলটো ভিকটিম-ব্লেইমিং এর শিকার হয়, তাহলে পুরো পৃথিবীর প্রতিই তার দৃষ্টিভঙ্গি পালটে যেতে পারে। সে ধরে নেয় গোটা পৃথিবীর সবকিছুই এমন নিষ্ঠুর। ফলস্বরূপ, সে এই নির্দয় পৃথিবী থেকে বিদায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে, কিংবা সিদ্ধান্ত নিতে পারে নিষ্ঠুর এই পৃথিবীতে আরও কয়েকগুণ হিংস্র হয়ে বেঁচে থাকার; যার ফল কখনোই শোভন হয় না।
পরিবার ও পরিজন
আপনার পরিবার বা বন্ধুদের মধ্যে কেউ নিজেই কোনো ভুল করে ক্ষতিগ্রস্থ হলে, সেটার জন্য তাকে ‘দোষারোপ’ করাটা ঠিক হবে না। কেননা, এতে আপনার বিচার-বুদ্ধির প্রতি তার আস্থা কমবে এবং সে আরও হীনমন্যতার দিকে ধাবিত হতে পারে। হয়তো বা আপনাকে ভরসা করেই সে বিষয়টা বলছে এবং আপনার কাছে মানসিক সমর্থন আশা করছে।
এ অবস্থায় ভিকটিম-ব্লেইমিং না করে, মার্জিতভাবে তার ভুলটা ধরিয়ে দিলে এবং এমন ভুল আর না করার জন্য পরামর্শ দিন; সবদিক থেকেই তা ভালো হবে।
ভিন্নমত
শুধুমাত্র আপনার মতের সাথে কোনো ব্যক্তির মত মেলে না বলে, কিংবা আপনি কোনো ব্যক্তিকে পছন্দ করেন না বলে, কিংবা তিনি নির্দিষ্ট কোনো জাতিসত্ত্বার অন্তর্ভুক্ত বলে তার সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায়কে পাশ কাটিয়ে তারই দোষ খুঁজে বেড়াবেন না। এ ধরনের ভিকটিম-ব্লেইমিং সমাজে ভেদাভেদ বাড়ায় এবং সামাজিক অসহিষ্ণুতাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যায়, যা দীর্ঘমেয়াদে সমাজকে অস্থিতিশীল করে তোলে। আর অস্থিতিশীল সমাজে কেউই নিরাপদ নয়, এমনকি আপনিও নন।
সোশ্যাল মিডিয়া
সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হওয়া কোনো ঘটনায় ভালোভাবে না জেনে হুট করে কাউকে দোষারোপ করতে যাবেন না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হওয়া কোনো একটা বিষয় নিয়ে সবাই প্রাথমিকভাবে যা ভেবে থাকে, পরবর্তীতে তা আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে ভুল প্রমাণিত হয়। কিন্তু এরইমধ্যে অনেকে না জেনে ভিকটিম-ব্লেইমিং করে বসে এবং ফলস্বরূপ ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিটির জীবন ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারে।
যদি ভিকটিম-ব্লেইমিং এর শিকার হন
বর্তমানে যেভাবে আমাদের সমাজে অসহিষ্ণুতা বাড়ছে এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে এর যেরকম প্রভাব দেখা যাচ্ছে। এতে আপনিও কোনো দুর্ঘটনা বা অপরাধের শিকার হওয়ার পর যে পুনরায় ভিকটিম-ব্লেইমিং এর শিকার হবেন না, এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। যদি এমন পরিস্থিতিতে পড়েন তাহলে আপনার করণীয় কী হতে পারে?
আমাদের মধ্যে একটি নেতিবাচক প্রবণতা রয়েছে। তা হলো, অনেকগুলো মানুষ মিলে যদি বারবার আমাদের উপর কোনো মিথ্যা অপবাদ বা দায় চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে আমাদের দুর্বল মন একসময় তা মেনে নিতে চায়, এবং আমরা নিজেই নিজেকে অপরাধী ভাবতে শুরু করি। এ প্রবণতাকে জোর করে দূরে ঠেলতে হবে। আপনি ভিকটিম-ব্লেইমিং এর শিকার হলে এটিই হবে আপনার জন্য সবচেয়ে বড় যুদ্ধ; নিজের কাছে অপরাধী না হওয়া। প্রতিদিন কয়েকবার নিজেকে স্মরণ করিয়ে দিন যে, আপনি দোষী নন।
খারাপ অনুভূতি যেমন রাগ, হতাশা, বিষাদ, প্রচন্ড মানসিক চাপ ইত্যাদিকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না; এতে দীর্ঘমেয়াদে সে অনুভূতি আপনাকে আরও জেঁকে ধরবে। যখন এমন কোনো অনুভূতি আপনার উপর ভর করবে, সেটিকে অনুভব করুন এবং নিজেকে বোঝান, এই অবস্থায় এরকম অনুভূত হওয়াটাই স্বাভাবিক। যেমন, একবার যদি আপনার উপর হতাশা ভর করে, আর আপনি সেটাকে এড়িয়ে না গিয়ে মোকাবেলা করেন, তাহলে পরেরবার হতাশা ততটা তীব্রভাবে আপনাকে গ্রাস করতে পারবে না।
খানিকটা স্বার্থপর হোন, আপনি নিজের জন্য যেটা মঙ্গলজনক মনে করেন, সেটাই করুন এবং প্রয়োজনে ‘না’ বলতে শিখুন; এতে কে কী ভাবলো, তা নিয়ে খুব একটা চিন্তা করার দরকার নেই। সর্বোপরি নিজেকে সবকিছুর উপর গুরুত্ব দিন এবং নিজের প্রতি ইতিবাচক বিশ্বাসটা যেভাবেই হোক সমুন্নত রাখুন।
নেতিবাচক বা বাজে চিন্তার লোকজনদের এড়িয়ে চলুন। যারা আপনার ভবিষ্যত নিয়ে সংশয় প্রকাশ করবে, যারা বারবার আপনাকে দুর্ঘটনাটির কথা মনে করিয়ে দেবে, যারা আপনাকে দোষারোপ করতে চাইবে, যারা আপনার কথা বিশ্বাস করবে না- তারাই এ শ্রেণীতে পড়ে। এদের ধারেকাছে থাকবেন না বা এদেরকে প্রশ্রয় দেবেন না। আবার এ সময়টাতে কেউ কেউ আপনার দুর্বল মানসিক অবস্থার সুযোগ নিতে চাইতে পারে। তাই খুব সতর্কতার সাথে আশেপাশের মানুষের উদ্দেশ্য বোঝার চেষ্টা করুন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে সতর্ক হোন। সেখানে যদি আপনাকে নিয়ে বা আপনার মত একই ধরনের পরিস্থিতির শিকার হওয়া কাউকে নিয়ে নেতিবাচক পর্যালোচনা বা বিদ্রুপাত্মক মন্তব্য দেখতে পান, তাহলে সেটা আপনার মনোবলকে আরো ভেঙে দিতে পারে। প্রয়োজনে কিছুদিনের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এড়িয়ে চলুন।
প্রতিদিন খুব সামান্য সময় একাকী কাটিয়ে বেশিরভাগ সময় আপনার ‘ভালো সঙ্গী’দের সাথে কাটান। ‘ভালো সঙ্গী’ বলতে বন্ধু হতে পারে, ভাই-বোন বা আত্মীয়স্বজনও হতে পারে, যারা আপনাকে বোঝে এবং আপনি যাদের মধ্যে থাকতে স্বস্তি বোধ করেন ও নিজেকে সুখী মনে হয়। আবার বিশ্বস্ত সঙ্গী থাকলে তাদের সাথে মন খোলে কথা বলুন, যেকোনো বিষয়ে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আপনার যখন যা ভালো লাগে, তা-ই করুন, তবে অবশ্যই ক্ষতিকর কিছু নয়। আপনি বাগান করতে পারেন, ছবি আঁকতে পারেন কিংবা পশু-পাখি পালতে পারেন। তবে আপনি ভিকটিম-ব্লেইমিং এর শিকার হলে আপনার মানসিক চাপ কাটিয়ে উঠতে সবচেয়ে বেশী কাজে দেবে দলগত কোনো কাজ। হতে পারে সেটা খেলাধুলা। অথবা আপনার একজন বা দুইজন অত্যন্ত বিশ্বস্ত বন্ধুকে সাথে নিয়ে কোনো স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে যোগ দিন। যখন দলগতভাবে মানুষের সেবা করতে যাবেন অথবা মানুষের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে কাজ করতে যাবেন, তখন নিজের খারাপ অনুভূতিগুলোকে অনেকটাই ক্ষীণ মনে হবে।
সবকিছুর পরও যদি আপনার মনে হয় আপনার মানসিক পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না, তাহলে অবশ্যই উপযুক্ত চিকিৎসকের এর দ্বারস্থ হোন। তিনি মানসিক চাপ কাটিয়ে উঠার বিষয়ে আপনাকে কার্যকরভাবে সহায়তা করতে পারবেন।
ভিকটিম-ব্লেইমিং এর ফলে আপনি যে মানসিক নির্যাতনের শিকার হন, সেটার প্রভাব কাটিয়ে উঠা সম্ভব। এর জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন কিছু সময়, শক্ত মনোবল আর ধৈর্য।
ভিকটিম-ব্লেইমিং করাটা এক প্রকার হীন মানসিকতার পরিচয়। কিন্তু এর মূল্য ঘুরে ফিরে সেই ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিটিকেই দিতে হয়। ভিকটিম-ব্লেইমিং না করার জন্য একজন ব্যক্তির মাঝে দুটি গুণ থাকাই যথেষ্ট। এক, নিজেকে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তির জায়গায় কল্পনা করার ক্ষমতা। দুই, সহমর্মিতা। আপনার মধ্যে দুটি গুণই কি আছে?