Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

চমচমের রাজ্যে একদিন

ঘনিয়ে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা। প্রস্তুতিও চলছে। এদিকে হঠাৎ বন্ধু আহবাব রাতে ফোন দিয়ে জানালো আগামীকাল সকালে টাঙ্গাইল যাবে, ভ্রমণে। তার সাথে আমারও যেতে হবে। চার-পাঁচ না ভেবে রাতে পরিবারকে রাজি করে ব্যাগ গুছিয়ে নিলাম। অতঃপর আমাদের ভ্রমণের সূচনা।

বীর মুক্তিযোদ্ধা বাতেন বাহিনী মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর; ছবি: লেখক

২৩ এপ্রিল ২০২৩; রোজ রবিবার, ঈদুল ফিতরের দ্বিতীয় দিন। আমরা ছিলাম দুজন। খুব সকালে গাড়িতে ওঠার কথা থাকলেও বাসা থেকে বের হতে আমাদের কিছুটা বিলম্ব হয়। সকাল ৭টা ছুঁই ছুঁই, আপন ঠিকানা থেকে বের হয়ে চলে যাই রাজধানীর উত্তরা হাউজ বিল্ডিংয়ে। সেখান গাড়ি না পেয়ে দুই-চার মিনিটের পথ হেঁটে চলে যাই আব্দুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ডে। নন-এসি জনপ্রতি ২০০ টাকায় বনিবনা করে উঠে পড়লাম গাড়িতে।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক; ছবি: লেখক

ঘড়ির কাটা তখন ৭টা বেজে ৩০ মিনিটের কিছু বেশি। আমাদের গাড়ি ঢাকা ছেড়ে যাত্রা শুরু করলো মিষ্টির রাজা চমচমের রাজ্য টাঙ্গাইলের উদ্দেশ্যে। সাধারণ গতিতে ঘন্টাখানিক যাওয়ার পর আশুলিয়া, সাভার, বাইপাইল, চন্দ্রা, কালিয়াকৈর হয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ধরে গাড়ি টাঙ্গাইল জেলায় প্রবেশ করলো। ঈদ মৌসুম এবং ঈদের দ্বিতীয় দিন থাকায় সড়কে জ্যামের জঞ্জাল থেকে মুক্তি পেলাম। মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ হয়ে টাঙ্গাইলের শান্ত-শীতল প্রকৃতি দেখতে দেখতে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জানতে পারলাম আমরা গন্তব্যের খুব নিকটে চলে আসছি। গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম পাকুল্লা নামক জায়গায়। গ্রাম্য টঙে চায়ে চুমুক দিয়ে চার-পাঁচ মিনিটের পথ পায়ে হেঁটে পৌঁছে গেলাম আমাদের ভ্রমণের প্রথম দর্শনীয় স্থান পাকুল্লা জমিদার বাড়িতে।

পাকুল্লা জমিদার বাড়ি; ছবি: লেখক

জমিদার বাড়ির মূল ফটক তালাবদ্ধ থাকায় আঙিনার চারপাশ দেখে পাকুল্লা বাজার হয়ে দুই মিনিট হেঁটে চলে গেলাম দ্বিতীয় দর্শনীয় স্থান তিন গম্বুজ বিশিষ্ট শাহী মসজিদে।

তিন গম্বুজ মসজিদ; ছবি: লেখক

মসজিদ দর্শন করে জমিদার বাড়ির পাশের সড়ক থেকে সিএনজিতে জনপ্রতি ২৫ টাকায় (সাধারণত ভাড়া ২০ টাকা) চলে গেলাম দেলদুয়ার সিএনজি স্ট্যান্ডে।

সেখান থেকে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি জাদুঘর, দেলদুয়ার ডাকবাংলো, থানা, উপজেলা পরিষদ দেখে পৌঁছে গেলাম তৃতীয় দর্শনীয় স্থান দেলদুয়ার পুরনো মসজিদে।

দেলদুয়ার পুরনো মসজিদে লেখক; ছবি: মো. আতিক হাসান শুভ

সেখানে কিছুক্ষণ থেকে মসজিদের পেছন দিয়ে দুই মিনিট পায়ে হেঁটে চলে গেলাম দেলদুয়ার জমিদার বাড়ি।

দেলদুয়ার জমিদার বাড়ি; ছবি: লেখক

গভীর অরণ্যে ঘেরা ভৌতিক পরিবেশে থাকা জমিদার বাড়ি দেখে আসার পথ ধরে বাতেন বাহিনী স্মৃতি জাদুঘরের সামনে থেকে সিএনজিতে জনপ্রতি ২৫ টাকার (সাধারণত ভাড়া ২০ টাকা) বিনিময়ে চলে গেলাম বটতলা। বটতলা থেকে হাতের বামে সেলিমপুর বাজারে যাওয়ার সড়ক থেকে অটোতে জনপ্রতি ১০ টাকায় পৌঁছে গেলাম চতুর্থ দর্শনীয় স্থান, পুরনো দশ টাকার নোটে শোভা পাওয়া ঐতিহাসিক আতিয়া জামে মসজিদে।

আতিয়া জামে মসজিদ; ছবি: লেখক

নাম তালিকাভুক্ত করে মসজিদের চারপাশ ঘুরে সেখান থেকে অটোতে জনপ্রতি ৪০ টাকায় করটিয়া বাইপাস হয়ে চলে গেলাম করটিয়া বাজার। বলে রাখা ভালো, আতিয়া মসজিদের সামনে থেকে করটিয়া বাজার পর্যন্ত যাওয়ার জন্য কোনো বাহন না পেলে তাহলে প্রথমে মসজিদের সামনে থেকে জনপ্রতি ১০ টাকায় যেতে হবে বটতলা, এবং বটতলা থেকে জনপ্রতি ২০ টাকার বিনিময়ে করটিয়া বাজার। যাই-হোক, আমরা করটিয়া বাজার থেকে পায়ে হেঁটে পৌঁছে গেলাম পঞ্চম দর্শনীয় স্থান করটিয়া জমিদার বাড়ি।

করটিয়া জমিদার বাড়ি; ছবি: লেখক

জমিদার বাড়িতে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা থাকায় দূর থেকে অবলোকন এবং পুরনো মসজিদ দেখে পুনরায় বাজারে চলে আসলাম।

করটিয়া পুরনো মসজিদ; ছবি: লেখক

বাজারে দুপুরের খাবার সেরে সেখান থেকে সিএনজিতে জনপ্রতি ৩০ টাকার বিনিময়ে নটিয়াপাড়া হয়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক ধরে চলে গেলাম ডুবাইল বাসস্ট্যান্ডে। বাসস্ট্যান্ড থেকে সিএনজিতে জনপ্রতি ২৫ টাকায় (সাধারণত ভাড়া ২০ টাকা) চলে যাই টাঙ্গাইল জেলার জনপ্রিয় এবং ষষ্ঠ দর্শনীয় স্থান মহেরা জমিদার বাড়ি।

মহেরা জমিদার বাড়ি; ছবি: লেখক

প্রবেশ ফটক থেকে জনপ্রতি ১০০ টাকায় প্রবেশ টিকেট সংগ্রহ করে ঢুকে পড়লাম। জমিদার বাড়ির বেশ কয়েকটি ভবন ও জাদুঘর দর্শন করে ফিরতি পথে ৫০ টাকায় রিকশায় চলে আসলাম ডুবাইল বাসস্ট্যান্ডে।

সেখান থেকে সড়ক পারাপার হয়ে বাসে জনপ্রতি ২০ টাকায় (সাধারণত ভাড়া ৩০ টাকা) জেলা শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, কলেজ মোড়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, জর্জ কোর্ট হয়ে চলে যাই টাঙ্গাইল শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ডে। সেখান থেকে বাস পরিবর্তন করে অন্য বাসে জনপ্রতি ৭৫ টাকায় এলেঙ্গা, কালিহাতী এবং ঘাটাইল হয়ে চলে গেলাম গোপালপুর। বাসস্ট্যান্ড থেকে জনপ্রতি ১০ টাকায় ব্যাটারি চালিত অটোতে গোপালপুর থানা এবং থানা থেকে জনপ্রতি ৩০ টাকায় অটোতে পৌঁছে গেলাম জেলার অন্যতম জনপ্রিয় এবং আমাদের সর্বশেষ দর্শনীয় স্থান ২০১ গম্বুজ মসজিদে।

২০১ গম্বুজ মসজিদ; ছবি: লেখক

মসজিদের চারপাশে ঘোরাঘুরি করে ফিরে গেলাম সেই গোপালপুর বাসস্ট্যান্ডে। বাসস্ট্যান্ড থেকে জনপ্রতি ৩০০ টাকায় গোপালপুর টু ঢাকার টিকেট সংগ্রহ করে চলে আসলাম আপন ঠিকানায়।

নির্দেশনা

১. ভ্রমণে যাওয়ার পূর্বে স্থান সম্পর্কে ভালোভাবে গবেষণা এবং প্রয়োজনে ভ্রমণ প্ল্যান নোট করে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে স্বল্প সময়-খরচে দারুণ একটি ভ্রমণ উপভোগ করতে পারবেন।

This article is in Bangla language. It's about a one-day travel story in Tangail.
Featured Image: Author

Related Articles