Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

শহর ছেড়ে অরণ্যের ডাকে সাড়া দেওয়া দুজন মানুষ

আত্মিক ও মানসিক দিক থেকে সমাজ আজ পতিত। তার জন্য মাশুল দিতে হচ্ছে সুন্দর এই পৃথিবীকে। মানুষের কলুষিত মন দূষিত করছে পরিবেশকে। যে পরিবেশের মধ্যে আমরা হেসে খেলে বড় হই সেই পরিবেশকেই আমরা ধ্বংস করছি। সবাই যখন নিজেদের চোখ বন্ধ করে ধ্বংস কাজে নিযুক্ত সেখানে স্রোতের বিপরীতের দুজন মানুষ কাজ করছেন ক্ষতিগ্রস্থ পরিবেশকে কীভাবে আবার আগের অবস্থায় নিয়ে আসা যায় তা নিয়ে। সে দুজন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো আজ।

হারাতে বসা রেডউড বনকে ফিরিয়ে আনছেন যিনি

পৃথিবীর সকল প্রাণীর জন্য প্রয়োজন অক্সিজেন। এটি ছাড়া জীবনের কথা চিন্তাই করা যায় না। আর অক্সিজেনের অন্যতম উৎস হলো গাছ। এরাই আমাদেরকে বাঁচিয়ে রাখছে। কিন্তু যে জিনিসটি আমাদের বাঁচিয়ে রাখছে কেন জানি তাকেই শেষ করে ফেলার জন্য উঠে পড়ে লেগেছি আমরা। বিশ্বব্যাপী বনাঞ্চলের পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কমছে। এতে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৃথিবীর উষ্ণায়নের জন্য এই গ্যাস দায়ী। উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে জলবায়ুগত নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অন্যদিকে গাছ কাটার ফলে অনেক প্রাণী তাদের বেঁচে থাকার স্বাভাবিক পরিবেশ হারিয়ে ফেলছে। কিন্তু তবুও মানুষের টনক নড়ছে না।

সবাই যখন প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে গাছ কাটায় ব্যস্ত তখন একজন মানুষ লেগে গেলেন গাছ লাগানোর পেছনে, নাম তার ডেভিড মিলার্ক। তিনি সবসময় এমন ছিলেন না। আগের জীবনে ছিলেন উচ্ছৃঙ্খল ও মদ্যপ। একদিন প্রায় মরতেই বসেছিলেন। কিডনি এবং লিভার কাজ করছিল না। সেখান থেকে ফিরে এসে তিনি যেন এক দৈববাণী শুনলেন, তাকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও পুরনো জীবিত কিছু বের করতে হবে। তিনি ও তার দল পৃথিবীব্যাপী সে জিনিস খুঁজতে থাকলেন। দেখলেন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও পুরনো জিনিস হলো রেডউড গাছ। তিনি আবিষ্কার করলেন আমেরিকার ৯৮ শতাংশ রেডউড গাছের বন কেটে ফেলা হয়েছে। গাছ কাটার সময় সবচেয়ে বড় এবং রোগহীন ভালো গাছটি কাটা হয়। একটি বনকে যদি চার পাঁচবার এভাবে কেটে ফেলা হয় তাহলে দেখা যাবে বনের সবচেয়ে শক্তিশালী ও ভালো গাছগুলোর সবই কাটা হয়ে গেছে। বাকি গাছ যা রয়েছে তার সবই দুর্বল।

রেডউড বনে ডেভিড মিলার্ক; Source: youtube.com

রেডউড বনে হেঁটে বেড়াচ্ছেন ডেভিড; Source: youtube.com

গাছগুলো হারিয়ে যাচ্ছে কিন্তু কেউ কোনো উদ্যোগ নেয়নি এ ব্যাপারে। এভাবে চলতে থাকলে একসময় মানুষ হয়তো ভুলেই যাবে যে এত বড় দৈত্যাকার কোনো গাছ একসময় ছিল। রেডউড গাছের একটি বৈশিষ্ট্য হলো এরা হাজার হাজার বছর বাঁচতে পারে। ফলে জিনগত দিক থেকে চিন্তা করলে এ গাছগুলো খুবই শক্তিশালী। হাজার বছর ধরে প্রকৃতির নানা বিরূপ অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নিয়ে টিকে আছে এ রেডউড।

তিনি ভাবলেন, এ গাছগুলোকে সংরক্ষণ জরুরী। যে প্রাকৃতিক বিপর্যয় আমরা ডেকে এনেছি তাকে মোকাবেলা করার মতো শক্তিশালী জিনগত বৈশিষ্ট্য একমাত্র রেডউডেরই আছে। যখন তিনি এ গাছের ক্লোন করার চিন্তা করলেন সব বিশেষজ্ঞরা বলছিল এটা সম্ভব নয়। এর আগে এটা কখনো করা হয়নি। কিন্তু তিনি ছিলেন নাছোড়বান্দা। প্রথমে বনের সবচেয়ে পুরনো গাছ খুঁজে বের করলেন। এদের মধ্যে কোনো গাছ এক হাজার বছর পুরনো আবার কোনোটি তিন হাজার বছর পুরনো। এসব গাছ থেকে টিস্যু সংগ্রহ করেন। তারপর টিস্যুগুলো কালচার করা হয়। একসময় তিনি ও তার দল এ গাছের ক্লোন করতে সক্ষম হন। এদের কিছু রাখা হবে ভবিষ্যৎ গবেষণার জন্য, আর কিছু লাগিয়ে ফেলা হবে যেন আগের সেই রেডউড বন ফিরে পাওয়া সম্ভব হয়।

টিস্যু কালচারের মাধ্যমে রেডউডের চারা তৈরি করা হচ্ছে; Souce: youtube.com

এদের একটি বৈশিষ্ট্য হলো এরা খুব দ্রুত বাড়ে। বছরে প্রায় ১০০ ফুট উঁচু হয় এবং প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করতে পারে। ডেভিডের সংগঠনের মূল্যবান একটি বক্তব্য আছে- “আমরা আমাদের নাতি-নাতনিদের জন্য কাজ করছি”

শিশুরা রেডউড গাছ রোপণ করছে; Source: youtube.com

পতিত জমি থেকে স্বর্গ ভূমির কারিগর

ডেভিড বেমবার্গার তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পড়ালেখার পাশাপাশি ভ্যাকুয়াম ক্লিনার বিক্রির চাকরি করছিলেন। যখন তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ হলো সবাই মনে করেছিল এবার বড় কোনো অফিসে চাকরি নেবেন। কিন্তু তা না করে স্ত্রী ও সন্তানসহ টেক্সাস এসে ভ্যাকুয়াম ক্লিনার বিক্রি করতে থাকলেন তিনি। এরপর তার মতো আরেকজন ভ্যাকুয়াম ক্লিনার বিক্রেতা বেন চার্চের সাথে মিলে চিকেন ফ্রাইয়ের ব্যবসা দিলেন। দেখতে দেখতে ১,৬০০ শাখা হয়ে গেল। এ ব্যবসাই তাকে অঢেল সম্পদের মালিক বানিয়ে দিলো।

ভ্যাকুয়াম ক্লিনার বিক্রি করছেন ডেভিড বেমবার্গার; Source: youtube.com

এ টাকা ব্যবহার করে তিনি ৫,৫০০ একরের একটি পতিত জমি কিনলেন। যখন জমি কিনতে চাইছিলেন তখন অনেকে তাকে বড় বাড়িসহ ভালো মানের জমি দেখাচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি এমন জমি চাইছিলেন যে জমি কেউ কিনতে চাইবে না। যে জমি পতিত হিসেবে রাখা হয়েছে। এ জমি কেনার পর দেখলেন এখানে কোনো পানি নেই। কারো আগ্রহের জায়গা ছিল না এটি। এখানে প্রকৃতির স্বাভাবিক অবস্থা তৈরি করতে চাইলেন তিনি। সেখানে কুয়া খনন করার চেষ্টা করলেন। ৫০০ ফুটের গভীরতার ৭টি কুয়া খনন করা হলো। কিন্তু কোনটিতেই পানি পাওয়া গেলো না।

পানির জন্য গভীর কুয়া খনন করেছিলেন; Source: youtube.com

এখানকার মাটি ছিল পাথরের। ফলে বৃষ্টির পানি ভেতর প্রবেশ না করে উপর দিয়ে গড়িয়ে যেতো। এরপর তিনি যা করলেন তা সাড়ে পাঁচ হাজার একর জমিকে পুরোপুরি বদলে দিল। এখানের সব জায়গায় ঘাস লাগালেন। ঘাসের পাশাপাশি লাগালেন অনেক গাছ। ঘাসের শেকড় দিয়ে পানি মাটির ভেতর প্রবেশ করে নিচে জমা হতে থাকলো। এ কাজ শুরু করার আড়াই বছরের মাথায় প্রথম ঝর্ণা সৃষ্টি হলো। সময়ের সাথে সাথে আরো কিছু ঝর্না সৃষ্টি হতে থাকলো।

প্রশ্ন আসে, ঝর্নাগুলো সৃষ্টি হলো কোথা থেকে। পানি মাটির নিচে জমা হতে হতে এক সময় তা ঝর্ণা আকারে বের হয়ে আসে। এই পানি নদীতে এসে যোগ হয়। পানি আসার ফলে এই পতিত জমিতে আবার প্রাণ সঞ্চার হলো। নানা জাতের পশু-পাখি ও গাছপালায় ভরে উঠলো।

ঝর্নার মাধ্যমে পানি বের হয়ে আসছে; Source: youtube.com

ডেভিড বেমবার্গারের প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা ছোটবেলা থেকেই ছিল। তার মা তাকে পুলিৎজার পুরষ্কার বিজয়ী লেখক লুইস ব্রমফিল্ডের প্লিজেন্ট ভ্যালী বইটি দিয়েছিলেন। বইটি ছিল খামার জীবন নিয়ে। এ বইটিই তাকে খামার জীবন নিয়ে স্বপ্ন দেখায় আর প্রকৃতির প্রতি মমতা জাগিয়ে দেয়। তরুণ জীবনের গড়ে উঠা সে স্বপ্ন তিনি তার পরিণত জীবনে পূর্ণ করেন। এ থেকে বোঝা যায় বই মানুষকে কীভাবে ভেতর থেকে জাগিয়ে তুলতে পারে।

তরুণ বেমবার্গার; Source: youtube.com

Pleasant Valley বইয়ের প্রচ্ছদ; Source: youtube.com

বেমবার্গার তার এই সাড়ে পাঁচ হাজার একর খামারের নাম দিয়েছেন ‘সেলাহ’। এর মানে থামা, চারপাশের সবকিছু খেয়াল করা এবং সে অনুযায়ী কাজ করা। এখানে শিশুদেরও শিক্ষা দেয়া হয়। শিশুরা তাদের বইয়ে পড়া তাত্ত্বিক বিষয়গুলো এখানে হাতে কলমে দেখতে পারে।

তরুণ ছাত্র-ছাত্রীর সামনে কথা বলছেন বেমবার্গার; Source: youtube.com

ডেভিড বেমবার্গার মনে করেন, এই খামারের মালিক হিসেবে তার দায়িত্ব হলো খামারের যত্ন নেয়া এবং তা অন্যের সাথে ভাগ করে নেয়া। বেমবার্গারের ভাষায়- “তোমার যা আছে তা যদি অন্যের সাথে ভাগাভাগি না করো, তাহলে তুমি একটা একাকী জীবন কাটাবে।”

Related Articles