“আমার জীবনের নিয়ন্ত্রক আমি, হলিউডের কেউ নয়। মজা পাই বলেই আছি। যেদিন মজাটা আর থাকবে না, সেদিনই চলে যাবো”
২০০০ সালের ভ্যানিটি ফেয়ারের এক সাক্ষাৎকারে এমনই মন্তব্য করেছিলেন কালজয়ী অভিনেতা হিথ লেজার। এর ঠিক আট বছর পর আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে যান না ফেরার দেশে।
তুলনামূলকভাবে কম সময়ের মধ্যেই হলিউডের উদীয়মান তারকা হিসেবে পরিচিতি পাওয়া হিথ লেজারকে স্মরণ করা হয় তাঁর প্রজন্মের সবচেয়ে প্রশংসিত অভিনেতা হিসেবে। শুরুর দিকে তাঁর অভিনয়শৈলীর গভীরতা নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও, কিছু অসাধারণ পারফরম্যান্সের মাধ্যমে অল্প সময়েই দর্শকদের মাঝে তাঁর প্রতিভার কথা জানিয়ে দেন। আজকে আপনাদের সামনে তুলে ধরা হবে সেই গুণী মানুষটির জীবনবৃত্তান্ত।
অস্কারজয়ী এই অভিনেতা জন্মগ্রহণ করেন ১৯৭৯ সালের এপ্রিল মাসের ৪ তারিখ, অস্ট্রেলিয়ার পার্থে। তাঁর মা স্যালী লেজার বেল ছিলেন একজন শিক্ষিকা আর বাবা কিম লেজার একজন খনি প্রকৌশলী। হিথ ছিলেন বাবা-মার দ্বিতীয় সন্তান, তাঁর বড় বোনের নাম হচ্ছে ক্যাথেরিন লেজার। ভাইবোন দুজনেরই নাম রাখা হয়েছে মায়ের পছন্দের উপন্যাস ‘উথারিং হাইটস’-এর প্রধান দুই চরিত্রের নামানুসারে।
লেজারের শৈশব কেটেছে পার্থের এক উপশহর সাবিয়াকোতে। তিনি পড়াশুনা করতেন সেখানকার গিল্ডফোর্ড গ্রামার স্কুলে। খেলাধুলার প্রতি তার বেশ আগ্রহ ছিল, প্রায়ই স্কুলের বিভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় তিনি অংশগ্রহণ করতেন। ক্রিকেট ছাড়াও হকি, সার্ফিং, স্কেটবর্ডিং এবং গো-কার্ট খেলায় তিনি ভালোই পারদর্শী ছিলেন। তবে তাঁর আসক্তি ছিল অন্য কিছুতে, দাবা খেলতে যেন একটু বেশিই পছন্দ করতেন। মাত্র দশ বছর বয়সেই তাই জিতে নিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিমা অঞ্চলের জুনিয়র দাবা চ্যাম্পিয়নশিপ।
সেই সময় মা-বাবার সম্পর্কে ফাটল ধরা শুরু করে। তাঁদের যখন ছাড়াছাড়ি হয়, তখন তার বয়স মাত্র এগারো। তাঁরা পুনরায় বিয়ে করলে তিনি আরও দুজন সৎবোন পান; তাঁদের একজনের নাম এশ্লেই বেল আর অন্যজন অলিভিয়া লেজার।
তাঁর মাথার অভিনয়ের পোকা ঢুকে এর ঠিক বছর খানেক পর। ১৯৯১ সালে বড়দিন নিয়ে তৈরি ছোট নাটিকায় তিনি ‘গাধার’ চরিত্রে অভিনয় করেন। এই ছোটখাটো চরিত্রে তাঁর অভিনয় গুণ দেখে, বড় বোন ক্যাথেরিন তাঁকে একটি অপেশাদার থিয়েটার গ্রুপের সাথে ভিড়িয়ে দেন। সেবছরই স্কুল আয়োজিত পিটার প্যান নিয়ে তৈরি মঞ্চনাটকে তিনি প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন। এরপরেই তাঁর ইচ্ছা জাগে নিয়মিত মঞ্চে অভিনয় করার।
এদিকে অভিনয় নিয়ে তাঁর পাগলামি দেখে বিচলিত হকি কোচ শেষমেশ তাঁকে ডেকে নিয়ে হকি আর অভিনয়ের যেকোনো একটা বেছে নিতে বলেন। অভিনয়ের মাঝেই নিজেকে নতুন করে খুঁজে পাওয়া লেজার সেটাকেই বেছে নিয়ে স্কুল এবং বাইরের বিভিন্ন মঞ্চ নাটকে চরিত্র খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আগে যে সময়টায় হকি প্র্যাকটিস করতেন সেই সময়টুকুতে তিনি বিভিন্ন অপেশাদারি দলের সাথে শেক্সপিয়ারের নাটকে অভিনয় করতে লাগলেন। পাশাপাশি বিভিন্ন নাচের ক্লাস আর অভিনয় কর্মশালায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে তিনি দক্ষতা বাড়িয়ে চললেন।
অভিনয়ে পুরোপুরি মনযোগ দেওয়ার জন্যে ক্লাস টেনে উঠার পর তিনি স্কুল ছেড়ে দেন। ‘ক্লাউনিং এরাউন্ড’ আর ‘শিপ টু শোর’ টেলিভিশন সিনেমাতে অতিরিক্ত হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরে অস্ট্রেলিয়ান টেলিভিশন ড্রামা ‘সোয়েট’-এ স্নো বাোলস নামের একজন সমকামী সাইক্লিস্টের চরিত্রে অভিনয় করেন।
এই চরিত্রে অভিনয় করে সবার প্রশংসা পেলেও, তিনি নিজেই তাঁর অভিনয়জীবন নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগতে শুরু করেন। তিনি বুঝতে পারেন যে, অভিনয় সম্পর্কে অনেককিছুই তাঁর এখনও জানার বাকি রয়ে গেছে। ডেইলি টেলিগ্রাফের এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন,
“সোয়েট ছিল ক্যামেরার সামনে আমার প্রথম অভিনয় এবং আমি কি করছিলাম এ ব্যাপারে আমার কোন ধারণাই ছিলো না। নিজের অভিনয়ের মধ্যেই একধরনের তাড়াহুড়া দেখে ভাবছিলাম ‘হায় ঈশ্বর আমি কী করছি!’ আমি বুঝতাম না ক্যামেরার ওপাশে আমাকে কেমন দেখাচ্ছিল। ক্যামেরার সামনে অভিনয়ের অনেক কৌশল ছিল আমার অজানা।”
অভিনয় তো বাদ দেন-ই নি বরং অভিনয় দক্ষতা বাড়াতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়ে আরও কঠোর পরিশ্রম করার সিদ্ধান্ত নেন।
পেশাদার অভিনয় জীবনের লক্ষ্যে ষোল বছর বয়সে তিনি তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ট্রেভরের সাথে সিডনি শহরে পাড়ি জমান। বিভিন্ন নাটকে ছোটখাট চরিত্রে অভিনয় করার পর ১৯৯৭ সালে মুক্তি পাওয়া ব্ল্যাক রকের মধ্য দিয়ে সিনেমায় অভিষেক হয়। সেই সুবাদে ওই বছরই তিনি ‘রোয়র’ টিভি সিরিজে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পান। পরে উনিশ বছর বয়সে তিনি একজন আমেরিকান এজেন্টের শরণাপন্ন হন এবং প্রেমিকা লিসা জেনের সাথে তিনি লস এঞ্জেলেসে পাড়ি জমান।
লেজার আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিতি পান ১৯৯৯ সালে জুলিয়া স্টাইলসের সাথে অভিনীত চলচ্চিত্র ‘টেন থিংগস অ্যাই হেট অ্যাবাউট ইউ’-এর মাধ্যমে। বিশেষ করে কমবয়সী দর্শকদের কাছে তিনি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। একে-তো বয়স কম তার উপর তখনও তিনি এতোটা অভিজ্ঞ নন, তা সত্ত্বেও সেই সময়ই তিনি মেল গিবসনের সাথে ‘দ্য প্যাট্রিয়ট’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পেয়ে যান। এমনকি মেল গিবসন নিজেই পরিচালকে ডেকে বলেন সিনেমাতে লেজারকে তাঁর ছেলের চরিত্র দেয়ার জন্যে।
এরপর থেকে অনেক ভাল কিছু সিনেমায় প্রধান চরিত্রে চমৎকার অভিনয়ের মাধ্যমে খুব অল্প সময়েই তিনি আলোচনায় আসেন। পরিচিতি পান হলিউড প্লে-বয় হিসেবে এবং ২০০১ সালে পিপল ম্যাগাজিন তাঁকে সবচেয়ে সুন্দর ৫০ জন মানুষের একজন হিসেবে আখ্যায়িত করে।
২০০৪ সাল পর্যন্ত তিনি নিজের সাবলীল অভিনয় চালিয়ে গেলেও, বড় কোনো সাফল্য আসেনি। পরে ২০০৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ইন্ডি সিনেমা ‘ ব্রোকব্যাক মাউন্টেন’-এ এক সমকামী কাউবয়ের চরিত্রের অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি আবার স্পট-লাইটে আসেন। বিতর্কিত এই চলচ্চিত্রে অসাধারণ অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্র জগতে নবম ব্যক্তি হিসেবে মাত্র ২৬ বছর বয়সে অস্কার মনোনয়ন পাওয়ার স্বীকৃতি লাভ করেন। এর পাশাপাশি গোল্ডেন গ্লোবে তাকে মনোনীত করা হয় এবং সে বছরের সেরা অভিনেতা হিসেবে নিউইয়র্কের সমালোচকদের পুরষ্কার এবং সান ফ্রান্সিসকো সমালোচকদের পুরষ্কার জিতে নেন।
এই সিনেমায় কাজ করার সময় সহ-অভিনেত্রী মিশেল উইলিয়ামসের সাথে পরিচয় হয় এবং পরে তাঁরা সম্পর্কে জড়ান। মাতিলদা লেজার নামে তাঁদের ১১ বছর (বর্তমানে) বয়সী এক মেয়েও আছে। ২০০৭ সালে এই দম্পতির ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।
এদিকে ২০০৩ সালে, ডার্ক নাইট ট্রিলজির প্রথম সিনেমা ‘ব্যাটম্যান বিগিনস্’ ব্রুস ওয়েইন চরিত্রের জন্যে কমবয়সী অভিনেতার খুঁজতে থাকা পরিচালক ক্রিস্টোফার নোলান গিয়েছিলেন লেজারের কাছেও। সুপারহিরো সিনেমায় অভিনয় করতে অনুৎসাহী লেজার সেদিন ফিরিয়ে দিয়েছিলেন নোলানকে। কিন্তু পরবর্তীতে ব্যাটম্যান বিগিনস্ দেখে তিনি এতোটাই মুগ্ধ হন যে, নিজের মত পরিবর্তন করেন। পরের সিনেমাতে জোকারের আসার ইঙ্গিত দেখে তিনি নিজেই নোলানের কাছে অনুরোধ করেন ভিলেন জোকারের চরিত্রে তাঁকে নেয়ার জন্য।
চরিত্রটি সার্থকভাবে ফুটিয়ে তোলার জন্য তিনি প্রায় উঠে-পড়ে লাগেন। এমনকি সিনেমার চিত্রনাট্য লেখার আগেই জোকার চরিত্রের বিভিন্ন প্রস্তুতি শুরু করে দেন। একপর্যায়ে এক মাসের জন্য একটি হোটেল রুম ভাড়া করে সেখানে বসবাস শুরু করেন। যাতে তিনি চরিত্রটির বৈশিষ্ট্য, অঙ্গবিন্যাস এবং কণ্ঠ ভিন্নভাবে পরিবেশন করতে পারেন, সেজন্যে দিনরাত অমানুষিক পরিশ্রম করে যান। তাঁর সৃষ্ট ব্যতিক্রমী এই জোকারের চিন্তাধারা আর অনুভূতি তিনি একটি ডায়রিতে লিখে রাখতেন।
অভিনয়ের পাশাপাশি চলচ্চিত্র পরিচালনার প্রতি লেজারের আগ্রহ দেখে নোলান নিজেই তাঁকে ডার্ক নাইটের কিছু দৃশ্য পরিচালনার অনুমতি দেন এবং সেগুলো মানিয়ে নেয়ার ভার পুরোপুরি তাঁর উপর ছেড়ে দেন। এমনকি তাঁর উপর নোলানের এতোটাই বিশ্বাস ছিল যে, লেজার যখন রিপোর্টার মাইক এঙ্গেলের অপহরণের চিত্র পরিচালনা করছিলেন নোলান সেই সময় সেটে উপস্থিত ছিলেন না।
শুটিংয়ের সময় বেশ কিছু দৃশ্যে হিথ স্ক্রিপ্টের বাইরে নতুন কিছু যুক্ত করেন। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, জোকারকে গ্রেফতার করার পর গরডন যখন ডিটেকটিভ থেকে কমিশনারে পদোন্নতি দেওয়া হয় তখন সবার সাথে লেজারও তালি বাজাতে শুরু করেন যা ছিল স্ক্রিপ্টের বাইরে। আরেকটি হচ্ছে, হাসপাতাল ধ্বংস হওয়ার দৃশ্য ধারণ করার সময় বোমা বিস্ফোরক যন্ত্রটি কাজ করছিল না, হিথ তখন চমৎকার ‘জোকারীয়’ ছলে ব্যাপারটি সামাল দেন।
আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে, হার্ভে ডেন্টের সম্মানে ব্রুস ওয়েইনের দেওয়া পার্টিতে হামলা করার সময় যখন জোকার লিফট থেকে নামে তখন অভিনেতা মাইকেল কেইনের তাঁর উদ্দেশে সংলাপ বলার কথা ছিল। শুটিং চলাকালীন এই দৃশ্যের আগে আগে প্রবীণ এই অভিনেতা লেজারকে জোকারের মেকআপে দেখেননি। সেই দৃশ্যে তাঁকে পুরোপুরি জোকারের রূপে দেখে তিনি এতোটাই ভয় পেয়েছিলেন যে সংলাপ দিতে ভুলে যান।
নব্বইয়ের দশকে সিনেমা এবং কমিকস দুই ক্ষেত্রেই দেখানো হয়েছিল জোকারে শারীরিক অবস্থার পেছনে দায়ী হচ্ছে রাসায়নিক দুর্ঘটনা। কিন্তু এই জোকারকে নির্বিকল্প হিসেবে দেখানোর লক্ষ্যে নোলান ভাতৃদ্বয় আর ডেভিড এস গয়ার ঠিক করেন তাঁরা জোকারের উৎপত্তি সম্পর্কে কোনোকিছুই ছবিতে দেখাবেন না।
এছাড়া লেজার অভিনীত এই জোকার চরিত্রটি ছিল অন্যান্য জোকার থেকে অনেকখানি ব্যতিক্রম। রঙ করা শুকনো সবুজ চুল এবং ক্লাউনের মেকআপ করা এই জোকারের মুখে খেলা করতো গ্লাসগো হাসি। চলচ্চিত্রে নিজের মুখের দাগ সম্পর্কে তাঁকে বিভিন্ন গল্প বলতে দেখা যায়। যার একটি শিশু নির্যাতন এবং অন্যটিতে সে বলে তাঁর মুখের এই দশা সে নিজেই করেছে। সিনেমাতে তাঁর কিছু শিকারের মুখেও একই ধরণের গ্লাসগো হাসি-মার্কা ক্ষত সৃষ্টি করতে দেখা যায় তাকে।
নিজের অসাধারণ অভিনয় ক্ষমতা দিয়ে তিনি কমিকস বিশ্বের জোকারকে ভিন্নরূপে বাস্তবে রূপান্তর করেন। লেজার রিপোর্টারদের জানান যে, চরিত্র বাস্তবসম্মত করার জন্যে তিনি প্রচণ্ড পরিশ্রম করতেন। সারাক্ষণ সেই চিন্তায় বুঁদ হয়ে থাকতেন বলে দৈনিক মাত্র দুই ঘণ্টার বেশি ঘুমাতেও পারতেন না। এমনকি ডাক্তারের দেয়া ঘুমের ওষুধও কাজে আসেনি। নির্মম হলেও সত্য যে চলচ্চিত্রটির শুটিং শেষ হওয়ার কিছুদিন পরই এই নবীন অভিনেতা মৃত্যুবরণ করেন। ধারণা করা হয় যে বিভিন্ন ডাক্তারের পরামর্শে নেয়া ঔষধ তিনি একসাথে নিতেন যার বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় তাঁর অকালমৃত্যু হয়।
২০০৮ সালের জানুয়ারি মাসের ২২ তারিখ হাউস-কিপার তেরেসা সলোমন এবং ম্যাসুজ ডায়ানা অলোজিন লেজারের ম্যানহাটনের বাসায় তাঁকে অচেতন অবস্থায় দেখে সাথে সাথে ৯১১ ইমার্জেন্সিতে কল দেন। জরুরী চিকিৎসকরা বিকাল ৩:৩৩ মিনিটে পৌছে তাঁর স্নায়ু চেক করে ৩:৩৬ মিনিটে তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পরে পুলিশ জানায় ড্রাগ ওভারডোজের কারণে ২৯ বছর বয়সী প্রতিভাবান এই অভিনেতা মারা গেছেন।
ডার্ক নাইট সিনেমায় লেজারের নিজস্ব চিন্তাভাবনায় সৃষ্ট এই জোকারের অভিনয় ছিল একটি অপূর্ণ স্বপ্ন সফল হওয়ার মত। তবে এখন অনেকেই মনে করেন আসলে সেটা ছিল একটা দুঃস্বপ্ন যা লেজারকে বিয়োগান্তক মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে।
অন্যদিকে জোকার চরিত্রের ব্যাপারে তাঁর সাথে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি বলে নব্বুই দশকের জোকার জ্যাক নিকোলসন কিছুটা বিচলিত ছিলেন এবং লেজারের মৃত্যুর পর তিনি রহস্যময় এক মন্তব্য করে বলেন,
“আমি তাকে সাবধান করেছিলাম”।
লেজারের মৃত্যুর পর জনসাধারণের জন্য এবং পারিবারিকভাবে বেশ কয়েকটি স্মারক পরিষেবার আয়োজন করা হয়। এরপর তাঁর মৃত দেহ পার্থে নিয়ে যেয়ে সেখানকার ফিমেন্টার সেমেটারিতে শবদাহ করে কারাকাক্টা সেমেটারিতে তাঁর দাদা-দাদির পাশেই তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়।
লেজারের অভিনয়জীবনের সাফল্যের দিকে তাকালে মনে হবে যে, শুধুমাত্র প্রতিভাধর অভিনয়ের জোরেই তিনি এতদূর এসেছেন। কিন্তু তিনি নিজেই এই কথাটি মানতে রাজি ছিলেন না। তাঁকে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলতেন তাঁর এতদূর আসার পেছনে মূল কারণ তাঁর পরিবার; তাঁরা সবসময় তাঁকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন। বিশেষ করে তাঁর বোন ক্যাথেরিনের কাছেই পেয়েছেন অভিনয়ের অনুপ্রেরণা। পরিবারের সবার মধ্যে ক্যাথেরিনের সাথেই তাঁর সম্পর্ক বেশি ভালো ছিল। তাঁর মৃত্যুর পর ২০০৮ সালের একাডেমী এবং গোল্ডেন গ্লোব অনুষ্ঠানে বাবা-মা আর বোন, তিন জনেই তাঁর পক্ষে পুরষ্কার গ্রহণ করেন। সিনেমার ইতিহাসে তিনি একমাত্র অভিনেতা হিসেবে কোন কমিকবুক চরিত্রে অভিনয় করে অস্কার জেতার দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন।
এই বছর হিথ লেজারকে নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি বের হয়েছে “I am Heath Ledger” নামে, তাঁর সম্পর্কে আরও জানতে হলে ডকুমেন্টারি দেখে ফেলতে পারেন।
নব্বুই এর দশকে ‘শিপ টু শোর’ টিভি সিরিজ দিয়ে অভিনয় জগতে আসা প্রতিভাবান এই অভিনেতা আমাদের অসাধারণ কিছু চলচ্চিত্র উপহার দিয়ে গেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য সিনেমাগুলো হচ্ছে: টেন থিংগস অ্যাই হেট অ্যাবাউট ইউ, দ্য প্যাট্রিয়ট, এ নাইট’স টেইল, দ্য ব্রাদার্স গ্রিম, লর্ডস অফ ডগটাউন, ব্রোকব্যাক মাউন্টেন, ক্যাসানোভা, ক্যান্ডি, আই অ্যাম নট দ্যেয়ার, দ্য ডার্ক নাইট এবং দ্য ইমাজিনারিয়াম অফ ডক্টর পারন্যাসাস।
উল্লেখ্য: ‘দ্য ইমাজিনারিয়াম অফ ডক্টর পারন্যাসাস’ সিনেমা শুটিং চলাকালীন লেজার মারা গেলে তাঁর চরিত্রে অভিনয়ের জন্যে জুড লো আর জনি ডেপকে নিয়ে আসা হয় এবং কাজ শেষে তাঁরা দুজনেই নিজেদের পারিশ্রমিক লেজারের মেয়ে মাতিলদার হাতে তুলে দেন।