ছোটবেলা থেকে প্রায় সকলেই স্বপ্ন দেখে বড় হয়ে অনেক কিছু হবে। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার শখ তো আছেই, কেউ বা আবার হতে চায় সুপারম্যান, কেউ সিন্ডারেলা, কেউ পাইলট, কেউ ফুটবলার, কেউ বা গায়িকা। শিশুদের সাধারণত অর্থ, খ্যাতি, যশ ইত্যাদি বিষয়গুলো নিয়ে তেমন পরিষ্কার জ্ঞান না থাকলেও, সবাই চায় এমন কিছু হতে যা তাকে বাকিদের দৃষ্টিতে করে তুলবে অনন্য। কিন্তু, “তুমি বড় হয়ে কী হতে চাও?” এই প্রশ্নের জবাবে, “ভ্যাম্পায়ার হতে চাই” এমন উত্তর সচরাচর শোনা যাবে না।
আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে এমন উত্তর দেয়া শিশুকে আর যা-ই হোক সাধারণদের কাতারে ফেলা যায় না। অবশ্য তিনি আট-দশজন শিশুর মতো কখনো ছিলেনও না। আর সেজন্যই তার অতুলনীয় সৌন্দর্য ও মেধাশক্তির বদৌলতে আজ প্রায় ৩ যুগ পরে হলিউডের কিংবদন্তি অভিনেত্রীদের তালিকায় গৌরব এবং দাপটের সাথে লিখিয়ে নিয়েছেন নিজের নামটি।
আজ এই মানবীর হাতের মুঠোয় অর্থ, যশ, খ্যাতি, সাফল্য, ভালোবাসা ও সম্মান সবই এসে ধরা দিয়েছে। ইহজগতে একজন মানুষ যা কিছু পেয়ে থাকেন তার কোনোকিছুই হয়তো তার ধরাছোঁয়ার বাইরে নেই। তার এই আকাশচুম্বী প্রাপ্তির স্বর্ণশিখরে পৌঁছানোর পেছনের গল্পটা কেমন ছিল? এত দূর পর্যন্ত হেঁটে আসার পথ কেমন ছিল? ফুল নাকি কাঁটা বিছানো পথের উপর দিয়ে তিনি হেঁটে এসেছেন? সে এক লম্বা গল্প।
সময়টা ১৯৭৫ সাল। যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস শহরে তৎকালীন হলিউড তারকা জোনাথন ভিনসেন্ট ভট ও টিভি অভিনেত্রী মার্শেলিন বার্ট্রান্ড দম্পতির কোল জুড়ে আসে এক কন্যা সন্তান। দেবদূতদের শহরে জন্ম নেওয়া এই দেবশিশুর নাম মা-বাবা বহু শখ করে রাখলেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। গ্রিক ভাষায় ‘অ্যাঞ্জেলিনা’ শব্দের অর্থ হচ্ছে, ‘দেবদূত’। আর ফরাসি ভাষায় ‘জোলি’ শব্দের অর্থ ‘অপরূপা’।
অনেকেই মনে করেন, আজকের জোলির অভিনয়শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশের পেছনে কাজ করেছে তার অভিনেতা বাবা জন ভন্টের অনুপ্রেরণা। তবে জোলির শিশুমনে অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসা ও আগ্রহ তৈরি হওয়ার মূল কারণ ছিল মায়ের সাথে বসে টিভিতে সিনেমা দেখা। যদিও বা তার শো-বিজ জগতে প্রবেশ বাবার হাত ধরেই। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে ভন্টের চিত্রনাট্য দ্বারা নির্মিত ও ভন্ট কর্তৃক অভিনীত ‘লুকিং টু গেট আউট’ সিনেমায় শিশুশিল্পী হিসেবে রূপালী পর্দায় প্রথমবারের মতো উপস্থিত হয়েছিলেন তিনি।
যদিও এরপর প্রায় এক যুগ তিনি সিনেমাজগত থেকে দূরে ছিলেন। সে সময় জোলিকে ব্যক্তিগত জীবনে অনেক উথান-পতন ও জটিলতাপূর্ণ সময় পার করতে হয়েছিল। তবে সরাসরি সিনেমাজগতের সাথে সংশ্লিষ্ট না থাকলেও, তিনি শো-বিজে আসার স্বপ্নকে কখনোই মরে যেতে দেননি। বহু চড়াই-উতরাই পার করে তিনি হলিউডে নিজের পাকাপোক্ত অবস্থান গড়েছিলেন। সবার বেলায় এতটুকু সহনশীল ও প্রত্যয়ী হয়ে উঠা প্রায়ই সম্ভব হয় না।
অভিনেত্রী বেশে জোলির পদচারণ
জোলির অভিনয় জীবনের সূচনা মূলত নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে। ১৯৯৩ সালে মুক্তি প্রাপ্ত সাইবর্গ টু মুভিটিতে অর্ধ রোবট ও অর্ধ মানবীর চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়েই জোলি প্রথমবারের মতো মূল নায়িকা চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান। মুভিটি খুব ফ্লপ হওয়ায় পরবর্তী এক বছর হতাশা ও অনুশোচনায় জোলি সিনেমা জগত থেকে আড়ালে ছিলেন। তারপর ১৯৯৫ সালে উইদাউট এভিডেন্স সিনেমায় পার্শ্ব অভিনেত্রী হিসেবে হলিউডে আবার ফিরে আসেন। একই বছর হ্যাকার মুভিতে অসামান্য অভিনয় প্রতিভা দেখান। ফলে মুভিটি তেমন ব্যবসাসফল না হলেও, জোলি হয়ে উঠেছিলেন নিউইয়র্ক টাইমসের মতো খ্যাতনামা পত্রিকার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।
সেই যে চলার পথ সুগম হয়েছিল, তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বলা যায় তাকানোর সুযোগই হয়নি। পরের কয়েকটি বছর নিজেকে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে যান। ১৯৯৬ সালে রোমিও- জুলির মর্ডান অ্যাডাপ্টশন ‘লাভ ইজ অল দ্যায়ার ইজ’-এ অভিনয়ের পাশাপাশি ‘মোহাভি মুন’ নামক রোড মুভিতে অভিনয় করে চমক লাগিয়ে দেন। একই বছর ‘ফক্সফায়ার’ নামক প্রতিশোধ ঘরানার গল্পের ওপর নির্মিত মুভিতে অনবদ্য অভিনয়ের জন্যও তিনি বেশ সুনাম কুড়িয়েছিলেন। লস এঞ্জেলেস টাইমস পত্রিকার সাংবাদিক জ্যাক ম্যাথিউস জোলি সম্পর্কে লিখেছিলেন,
“এ ধাঁচের চরিত্রকে ফুটিয়ে তুলতে অনেক গাঁজাখুরি প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, কিন্তু জন ভন্টের ত্যাজ্য কন্যা জোলি, সেই বাঁধাধরা নিয়মের বাইরে এসে নতুন কিছু করে দেখিয়েছেন।”
১৯৯৭ সালে ‘প্লেয়িং গড’ নামের লস এঞ্জেলেসের আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ে গড়ে উঠা থ্রিলার সিনেমায় জোলি একজন মাস্তানের প্রেমিকার চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ পান, যা তাকে শিকাগো সান-টাইমসের বিখ্যাত চলচ্চিত্র সমালোচক রজার এবার্টের সমালোচনার তোপের মুখে ফেলেছিল। রজারের মতে, একজন মাস্তানের প্রেমিকা হিসেবে যতটা কঠিন ও হিংস্রভাব প্রদর্শন করা উচিত ছিল জোলি তার কানাকড়িও পারেননি। তবে জোলির জন্য এর চেয়েও কড়া সমালোচনা সামনে অপেক্ষা করছিল। তার পরবর্তী কাজ ‘ট্রু উইমেন’ নামের মিনি সিরিজে জোলির অভিনয় দেখে ‘দ্য ফিলাডেলফিয়া ইনকুইরার’ নামক দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিক মন্তব্য করেছিলেন, “কুৎসিত, চতুর্থ সারির স্কারলেটও বলা যেতে পারে, যে কিনা কিড়মিড়ে দাঁত ও অতিরিক্ত ফোলা ঠোঁটের ওপর ভরসা করেই টিকে আছে।”
প্রতিবন্ধকতা উতরে অপ্রতিরোধ্য জোলি
তবে এই সমালোচনাগুলো জোলির চলার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি তো বহু দূরের কথা, বরং তাকে আরো সাফল্যের দিকে অগ্রসর হতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল। আর তাই তো, সে বছর বর্ণবাদী আলাবামা সরকার ও রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী জর্জ ওয়ালেসের জীবনী নিয়ে নির্মিত টিভি সিনেমায় তার দ্বিতীয় স্ত্রীর চরিত্র চমৎকারভাবে পর্দায় চিত্রায়িত করার জন্য সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী হিসেবে গোল্ডেন গ্লোব পুরস্কার জিতে নিয়েছিলেন। পরের বছর বিখ্যাত আমেরিকান সুপার মডেল জিয়া কারাঞ্জির সংক্ষিপ্ত ও ট্র্যাজিক জীবনের গল্প নিয়ে তৈরি এইচবিও’র ‘জিয়া’ নামের টিভি ফিল্মে জিয়ার চরিত্রে অতুলনীয় অভিনয় করে তিনি গোল্ডেন গ্লোবের সেরা অভিনেত্রী শাখায় পুরস্কারের পাশাপাশি নিজের নামের পাশে ‘তারকা’ শব্দটিও অর্জন করে নিয়েছিলেন।
এরপর একে একে গ্যাংস্টার ফিল্ম ‘হেল’স কিচেন’, রোমান্টিক-কমেডি ড্রামা ফিল্ম ‘প্লেয়িং বাই হার্ট’, কমেডি ড্রামা ফিল্ম ‘পুশিং থিন’ ইত্যাদিতে অভিনয় করে নিজেকে ধীরে ধীরে আরো প্রস্ফুটিত করে তুলছিলেন। ‘প্লেয়িং বাই হার্ট’ মুভিতে অভূতপূর্ব অভিনয়ের জন্য তিনি ন্যাশনাল বোর্ড অব রিভিউ থেকে ‘ব্রেক-থ্রু পারফর্মেন্স এওয়ার্ড’ লাভ করেছিলেন। ১৯৯৯ সালে ‘দ্য বোন কালেক্টর’ মুভিতে তাকে প্রথমবারের মতো ডিটেকটিভের চরিত্রে দেখা যায়। সিরিয়াল কিলারের কাহিনীর ওপর নির্মিত এই মুভিতে জোলির বিপরীতে ছিলেন ড্যানজেল ওয়াশিংটন। তার পরবর্তী সিনেমা ‘গার্ল, ইন্টারাপ্টেড’-এ মানসিক রোগীর ভূমিকায় পার্শ্ব অভিনেত্রী হিসেবে মুগ্ধকরভাবে পর্দায় উপস্থিত হয়ে বাগিয়ে নেন অভিনয়শিল্পী হিসেবে প্রথম ও এখন অবধি একমাত্র অস্কার।
২০০০ সালে নিকোলাস কেজের বিপরীতে অভিনীত মুভি ‘গন ইন সিক্সটি সেকেন্ড’ মুভিতে জোলি গাড়ি চোরের প্রেমিকা হিসেবে খুব ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। মুভিটি সে সময়ে তার অভিনীত সবচেয়ে ব্যবসাসফল মুভি হলেও, সে চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তাকে অনেক কটু মন্তব্যের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। যদিও তিনি এটাকে ‘গার্ল, ইন্টারাপ্টেড’ এর চরিত্র থেকে মানসিকভাবে বেরিয়ে আসতে ছোট একটা প্রচেষ্টা বলে দাবি করেছিলেন।
জোলির খ্যাতির ডালপালা বিশ্বজুড়ে আরো বেশি ছড়িয়ে পড়ে তার ‘লারা ক্রফট: টম্ব রেইডার’ মুভির মাধ্যমে। ২০০১ সালে টম্ব রাইডার ভিডিও গেমের ফিকশন্যাল চরিত্র লারা ক্রফটের চরিত্রে অসাধারণ এক মানবীর বেশে পর্দায় আবির্ভূত হয়ে তিনি চারিদিকে তুমুল জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। মুভিটি তেমন সাড়া না জাগাতে পারলেও, নিজের শারীরিক কসরত ও মার্শাল আর্টের দারুণ প্রয়োগের ফলে জোলি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণের পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী মারকুটে অভিনেত্রীর খেতাবে ভূষিত হোন। একই বছর ‘অরিজিনাল সিন’ নামের রোমান্টিক থ্রিলারে অভিনেতা অ্যান্টোনিও বান্দারাসের সাথে বেশ খোলামেলা ও অন্তরঙ্গ দৃশ্য নিয়ে পর্দার সামনে উপস্থিত হলেও, মুভিটি দর্শক ও সমালোচক, দু’পক্ষেরই মন জিততে ব্যর্থ হয়।
২০০২ সালের দিকে প্রতিটি মুভির জন্য ১০ থেকে ১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পারিশ্রমিক নিতে শুরু করার মধ্য দিয়ে জোলি নিজের নাম হলিউডের সর্বোচ্চ পারিশ্রামিক প্রাপ্ত অভিনেত্রীদের খাতায় লিখিয়ে নিয়েছিলেন। ২০০৩ সালে লারা ক্রফটের সিকুয়েল ‘দ্য ক্রাডেল অব লাইফ’ নিয়ে হাজির হয়ে আরও এক দফা দর্শক হৃদয়ে আলোড়ন তোলেন তিনি। তার পরবর্তী মুভি ‘বিয়ন্ড বর্ডার’-এ অভিনয়ের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো নিজেকে সমাজসেবকের ভূমিকায় জনসম্মুখে মেলে ধরেছিলেন তিনি। ‘টেকিং লাইভস’ নামক ক্রাইম থ্রিলারে দ্বিতীয়বারের মতো সিরিয়াল কিলিং নিয়ে নির্মিত মুভিতে গোয়েন্দার ভূমিকায় দেখা যায় তাকে। মুভিটি ভালোমন্দের মিশেলে রিভিউ পেলেও, জোলির প্রশংসা করতে গিয়ে হলিউডের সাংবাদিক ও সিনেমা সমালোচক হানিকাট বলেন,
“জোলির অভিনয় দেখলে মনে হয়, সে আগেও এ ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছে, কিন্তু সন্দেহাতীতভাবে প্রতিবারই সে নতুন করে উত্তেজনা ও মোহিনী শক্তি সংযোজন করে থাকে।”
২০০৪ সালে ‘টেকিং লাইভস’ ছাড়াও ‘স্কাই ক্যাপ্টেন অ্যান্ড দ্য ওয়ার্ল্ড অব টুমরো’ মুভিতে স্বল্প ব্যাপ্তিকালের পাইলটের চরিত্রে, ড্রিম ওয়ার্কসের অ্যানিমেটেড মুভি ‘শার্ক টেইল’- এ কণ্ঠশিল্পী হিসেবে ও ‘আলেকজান্ডার’ নামক মুভিতে আলেকজান্ডারের মা রাজমাতা অলিম্পিয়াসের চরিত্রে কাজ করেছিলেন।
সাফল্যের মুকুট আরোহিণী জোলি
‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস স্মিথ’ অ্যাকশন-কমেডি মুভিতে সাবেক স্বামী ব্র্যাড পিটের সাথে জুটি বেঁধে এমন এক দম্পতির চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। সেখানে স্বামী- স্ত্রী দু’জন দুই বিপরীত পক্ষের সিক্রেট এজেন্ট হিসেবে কর্মরত। মুভিটি সুনাম না কুড়ালেও, জোলি-পিটের রসায়ন দর্শক থেকে শুরু করে সমালোচকদেরও দৃষ্টি কাড়তে সফল হয়েছিল। এটি পরবর্তী এক যুগ ধরে জোলির সর্বাধিক আয়কৃত মুভি হিসেবে অবস্থান ধরে রেখেছিল। ২০০৬ সালে রবার্ট ডি নিরোর পরিচালিত ‘দ্য গুড শেফার্ড’ মুভিতে ম্যাট ড্যামনের বিপরীতে একজন সিআইএ অফিসারের অবহেলিত স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেন।
পরের বছর ‘আ মাইটি হার্ট’ নামের ডকুমেন্টারি ঘরানার ড্রামা ফিল্মে নিজের অভিনয় দক্ষতার শতভাগ ঢেলে দেওয়ার ফলে তিনি শুধু সমালোচকদের প্রশংসাই পাননি, এর সাথে তৃতীয়বারের মতো গোল্ডেন গ্লোবের জন্য মনোনয়ন লাভ করেছিলেন। ২০০৮ সালে তিনি জেমস ম্যাকভয় ও মরগান ফ্রিম্যানের সহশিল্পী হিসেবে অ্যাকশন ফিল্ম ‘ওয়ান্টেড’-এ অভিনয় করেন যা আন্তর্জাতিক সাফল্য লাভ করতে সক্ষম হয়েছিল। নিউইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক ম্যানোহলা ডার্গিস ‘ওয়ান্টেড’ মুভিতে জোলির অভিনয়ের কথা উল্লেখ করে লিখেছিলেন,
“সে এমন কঠোর ভাবমূর্তি ধারণ করে যা যেকোনো বয়সী পুরুষকে তার সামনে হাঁটু গেড়ে বসতে অথবা কমপক্ষে সিনেমা হলের আসনে শক্ত হয়ে বসে থাকতে বাধ্য করবে।”
এছাড়া একই বছর ক্লিন্ট ইস্টউড পরিচালিত ‘চেঞ্জলিং’ নামের ১৯২৮ সালের পটভূমিতে গড়ে ওঠা গল্পের সিনেমায় হারানো ছেলেকে ফিরে পাওয়া একজন মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এই সিনেমায় সুনিপুণ অভিনয়শৈলী প্রদর্শনের ফলাফলস্বরূপ তিনি সেই বছর একাডেমি অ্যাওয়ার্ড, গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড ও স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড অ্যাওয়ার্ডের জন্য সেরা অভিনেত্রী হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন।
২০০৭ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত মায়ের অকাল মৃত্যুর ফলে জোলি বছর দুয়েকের মতো শোবিজ জগত থেকে দূরে ছিলেন। এরপর ‘সল্ট’-এর মাধ্যমে ২০১০ সালে আবার পর্দায় সামনে উপস্থিত হন। সল্টে তাকে একজন সিআইএ এজেন্ট রূপে দেখা গিয়েছিল। বরাবরের মতো অ্যাকশন ঘরানার এই মুভিতে নিজের চরিত্রকে অপ্রতিরোধ্যভাবে বহিঃপ্রকাশের কারণে মুভির আন্তর্জাতিক সফলতার সাথে জোলিও দারুণ প্রশংসিত হয়েছিলেন। সে বছর জনি ডেপের সাথে তাকে ‘দ্য টুরিস্ট’ নামক থ্রিলার ঘরানার মুভিতেও দেখা যায় যা ব্যবসায়িকভাবে আলোর মুখ দেখতে পারেনি। তবে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো, এ মুভি সম্পর্কে সমালোচনা করতে গিয়ে রজার এবার্টের মতো খুঁতখুঁতে সিনেমা সমালোচকও জোলির অভিনয়ের পক্ষপাতিত্ব করে সাফাই গেয়েছিলেন। এমনকি এই মুভি তাকে চতুর্থবারের মতো গোল্ডেন গ্লোবে মনোনয়ন লাভের সুযোগ এনে দিয়েছিল।
তারপর প্রায় ৪ বছর চলচ্চিত্র পরিচালনা ও জনহিতকর কাজে ব্যস্ত থাকায় অভিনয় থেকে দূরে ছিলেন জোলি। ২০১৪ সালে, বছরের অন্যতম ব্লকবাস্টার মুভি ডিজনির ‘ম্যালিফিসেন্ট’ এ একটি চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তিনি পুনরায় পর্দায় ফিরে এসেছিলেন। জোলিকে সর্বশেষ অভিনেত্রী রূপে দেখা গিয়েছে ‘বাই দ্য সি’ নামের ১৯৭০ সালের প্রেক্ষাপটে নির্মিত চলচ্চিত্রে। একটি বিবাহিত জুটির সম্পর্কের টানাপোড়নের এই গল্পে জোলির সহশিল্পী হিসেবে ছিলেন তার প্রাক্তন স্বামী ব্র্যাড পিট। জোলির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে ড্রিম ওয়ার্কসের ‘কুংফু পান্ডা’ এনিমেটেড সিরিজের টাইগ্রিসের চরিত্রে কণ্ঠ দেওয়া যা সেই চরিত্রটিকে জোলির জাদুকরী কণ্ঠের স্পর্শে আলোচিত করে তুলেছে।
পর্দার পেছনে কারিগর জোলি
২০০৭ সালে প্রথমবারের মতো ‘আ প্লেস ইন টাইম’ নামক ডকুমেন্টারি নির্মাণের মধ্য দিয়ে পরিচালকের সারিতে নিজের নাম লিখিয়েছিলেন তিনি। এর প্রায় বছর চারেক পর ‘ইন দ্য ল্যান্ড অব ব্লাড অ্যান্ড হানি’ নামক বসনিয়ার যুদ্ধভিত্তিক প্লটের ওপর গড়ে উঠা প্রেমকাহিনী নির্ভর সিনেমা দিয়ে পরিচালক বেশে অভিষেক ঘটান। সিনেমাটি সে বছর গোল্ডেন গ্লোবে ‘বেস্ট ফরেন ল্যাংগুয়েজ ফিল্ম’ ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন পেয়েছিল। এরপর ২০১৪ সালে ‘আনব্রোকেন’ তার পরিচালিত দ্বিতীয় সিনেমা হিসেবে মুক্তি পায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানীদের হাতে বন্দী এক বীরযোদ্ধার গল্প নিয়ে নির্মিত এই সিনেমাটি ন্যাশনাল বোর্ড অব রিভিউ ও আমেরিকান ফিল্ম ইন্সটিটিউট কর্তৃক সেই বছরের অন্যতম সেরা সিনেমা হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিল।
সিনেমা নির্দেশক জোলির তৃতীয় কাজ ছিল ২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা, ‘বাই দ্য সি’; যেখানে তিনি অভিনয়শিল্পী হিসেবেও অংশগ্রহণ করেছিলেন। ২০১৭ সালে তার পরিচালিত সর্বশেষ সিনেমা ‘ফার্স্ট দে কিল্ড মাই ফাদার’ মুক্তি পায়। বায়োগ্রাফিক্যাল হিস্টোরিক্যাল থ্রিলার ঘরানার এই মুভিটি ৭৫তম গোল্ডেন গ্লোবে সেরা বিদেশি চলচ্চিত্র শাখায় মনোনীত হবার পাশাপাশি ৯০তম অস্কারে প্রাথমিক বাছাই পর্বে ক্যাম্বোডিয়া থেকে নির্বাচিত হয়েছিল।
মানবহিতৈষী হিসেবে জোলির পথচলা
অভিনয়শিল্পী, পরিচালক ও প্রযোজক এই পরিচয়গুলো ছাপিয়ে, জোলিকে অন্যান্যদের থেকে আলাদা করে রাখে তার মানব হিতকর কর্মকাণ্ড। ২০০১ সালে কম্বোডিয়ায় লারা ক্রফটের শুটিং চলাকালীন তিনি প্রথমবারের মতো একজন মানবহিতৈষীর অবদান নিজ চোখে পর্যবেক্ষণের সুযোগ পান। তখন থেকেই তার মনের ভেতর অসহায় ও নিপীড়িত মানব সমাজকে সাহায্য করার ইচ্ছা জাগে। দেশে ফিরেই, তিনি ইউনাইটেড ন্যাশন হাই কমিশনার ফর রিফিউজিস-এর সাথে যোগাযোগ করে নিজের আগ্রহের ব্যাপারে জানান। তারপর নিজ চোখে রিফিউজিদের অবস্থা দেখতে তিনি মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন শুরু করেন।
২০০১ সালের ২৭ অগাস্ট তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইউএনএইচসিআর এর শুভেচ্ছা দূত হিসেবে সম্মানিত করা হয়। পরবর্তী এক যুগ তিনি প্রায় ৪০টি রিফিউজি ক্যাম্প পরিদর্শনের মাধ্যমে দুস্থদের সেবার নিজেকে নিয়োজিত করেন। ২০১২ সালে ইউএনএইচসিআর তাকে ‘স্পেশাল এনভয়’ হিসেবে পদোন্নতি দেওয়ার পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুতর রিফিউজি সমস্যাগুলো সমাধানের গুরুদায়িত্ব তার কাঁধে অপর্ণ করে।
জোলির জনহিতকর কার্যক্রমের কথা লিখতে গেলে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লেখা যাবে। নিপীড়িত অনেক জাতির দিকেই নিজের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। কম্বোডিয়া থেকে শুরু করে নামিবিয়া, কেনিয়া, জর্ডান, ইরাক, লেবানন, আফগানিস্তান, ইথিওপিয়া সহ সমগ্র দুনিয়া জুড়ে নানা দেশে ঘুরে জোলি একজন মানবহিতৈষী হিসেবে নিজের পরিচয়কে জানান দিয়ে চলেছেন অবিরত।
মানব কল্যাণকর কাজে অতুলনীয় অবদানের সম্মানার্থে তিনি নানা সময়ে বেশ কিছু মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার ও খেতাবের অধিকারী হয়েছেন। তার মধ্যে ২০০২ সালে ‘চার্চ ওয়ার্ল্ড সার্ভিসেস’ এর পক্ষ থেকে উদ্বোধনী মানবহিতৈষী পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। ২০০৩ সালে ‘ইউনাইটেড ন্যাশনাল করেসপন্ডেটস এসোসিয়েশন’ কর্তৃক প্রথম গ্রহীতা হিসেবে ‘সিটিজেন অব দ্য ওয়ার্ল্ড অ্যাওয়ার্ড’ প্রাপ্তির সম্মান লাভ করেন। ২০০৫ সালে ইউএনএ-ইউএসএ এর যৌথ উদ্যোগে তিনি গ্লোবাল হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাওয়ার্ড হাতে তুলে নিয়েছিলেন। এরপর একে একে ২০০৭ সালে ‘ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি’ থেকে ‘ফ্রিডম এওয়ার্ড’, ২০১৩ সালে ‘জিন হার্শোল্ট হিউম্যানিটারিয়ান এওয়ার্ড’, ‘একাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সস’ এর তরফ থেকে একটি সম্মানসূচক একাডেমি অ্যাওয়ার্ড, ২০১৪ সালে ইংল্যান্ডের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ একটি অনুষ্ঠানে জোলির সাথে স্বশরীরে দেখা করে তাকে বিশেষ সম্মানজনক পদমর্যাদা প্রদান করেছিলেন এবং তাকে তার কাজ চালিয়ে যাবার জন্য প্রাণঢালা শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন।
ফ্যান্টাসটিক উইমেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি
শৈশবকাল থেকেই জোলি পারিবারিকভাবে সম্পর্কের নানা ঘাত-প্রতিঘাত দেখে বেড়ে উঠেছেন। যখন মাত্র এক বছর বয়স, তখন তার মা-বাবা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে আলাদাভাবে বসবাস করতে শুরু করেন। জোলির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে অস্থিরতা ও বেয়াড়া স্বভাবটা ছোটবেলা থেকেই লক্ষণীয় ছিল।
জোলির প্রথম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বেভারলি হিলস হাই স্কুল, যেখানে তিনি বাকি শিক্ষার্থীদের ভিড়ে নিজেকে ভিন্ন বলে মনে করতেন। বেশ হ্যাংলা ছিলেন এবং চশমা পরতেন বলে সহপাঠীরা তাকে নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করতো। ১২ বছর বয়সে অভিনয়কে পেশা হিসেবে নেওয়ার লক্ষ্যে লস এঞ্জেলেসে ‘লি স্ট্রাসবার্গ থিয়েটার ইন্সটিটিউট’-এ অভিনয়ের ওপর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাগ্রহণের জন্য ভর্তি হয়েছিলেন। মায়ের ইচ্ছায় সে সময় মডেলিংয়ে নামার বহু প্রচেষ্টা করলেও সফল হতে পারেননি।
মাত্র ১৪ বছর বয়সে গভীর প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে মায়ের বাসা ছেড়ে প্রেমিকের সাথে বসবাস করতে শুরু করেন জোলি। বাউণ্ডুলে স্বভাবের জোলি তখন ‘মরেনো হাই স্কুল’-এ যাওয়া শুরু করলেন। সেখানে তিনি ‘বিগড়ে যাওয়া বহিরাগত’ হিসেবে কুখ্যাত ছিলেন। টানা ২ বছর নিজের সমস্ত উজাড় করে দেওয়ার পরও যখন তার প্রেমিক তাকে ছেড়ে চলে যায় তখন তিনি মানসিকভাবে এতটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন যে, সবকিছু ভুলে সম্পূর্ণ ধ্যানজ্ঞান অভিনয়ের দিকে ঢেলে দেন। অভিনয়ের দিকে পুরোপুরিভাবে মনোযোগ দিলেও সে সময় ব্যক্তিগত জীবনে জোলি এতটাই অসুখী ছিলেন যে হেরোইন থেকে শুরু করে সব ধরনের মাদকদ্রব্য সেবন করা শুরু করেছিলেন। যার বিরূপ প্রভাব হিসেবে তিনি ইনসোমিয়া ও ক্ষুধামন্দায় বেশ কিছুদিন ভুগেছিলেন।
১৯৯৬ সালে জোলি প্রথমবারের মতো বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ‘হ্যাকারস’ সিনেমার সহ অভিনেতা জনি লি মিলারের সাথে শুটিং স্পটে রোমান্সে জড়িয়ে যাবার এক বছর পর তাকেই প্রথম স্বামী হিসেবে বরণ করে নেন জোলি। যদিও সে বিয়ে মাত্র তিন বছর টিকেছিল। ২০০০ সালে ‘পুশিং থিন’ এর সহশিল্পী বিলি বব থর্নটনকে বিয়ে করার পূর্বে একটি সমকামী সম্পর্ক সহ আরো দুটি প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন।
থর্নটনের সাথে ৩ বছরের সংসার জীবন কাটানোর সময় কম্বোডিয়া থেকে একটি শিশু দত্তক নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছিলেন জোলি। ৭ মাস বয়সী ম্যাডক্স শিভানকে দত্তক নেওয়ার মাস তিনেকের মাঝে তাদের সম্পর্কে ফাটল ধরলে তা বিচ্ছেদ পর্যন্ত গড়ায়। তবে এবার জোলি মানসিকভাবে যতই আঘাত পান না কেন, নিজের জন্য ক্ষতিকর এমন কোনো কর্মকাণ্ডেই লিপ্ত হননি। জোলির ভাষ্যমতে,
“যেদিন থেকে আমি ম্যাডক্সের প্রতি দায়বদ্ধ হয়ে পড়ি, সেদিন থেকে ক্ষতিকারক কোনো কিছুর আসক্তিতে জড়াইনি।”
হলিউড কাঁপানো ‘ব্র্যাঞ্জেলিনা’ জুটি
২০০৪ সালে ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস স্মিথ’ সিনেমার শুটিং করতে গিয়ে জোলি ও পিট পরস্পরের কাছাকাছি আসতে শুরু করেন। সে সময় জোলি একমাত্র সন্তান ম্যাডক্সকে নিয়ে একাকী জীবনযাপন করছিলেন। অন্যদিকে, পিটের অনামিকায় তখনো জেনিফার অ্যানিস্টোনের সাথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধতার প্রতীক। কিন্তু সবকিছুর উর্ধ্বে সে সময় পিটের জন্য একমাত্র অগ্রাধিকার হয়ে উঠেছিলেন জোলি। যদিও সম্পর্কের শুরুর দিকে এক সাক্ষাৎকারে জোলি বলেছিলেন,
“নিজের মাকে বাবার কাছ থেকে প্রতারিত হতে দেখার পরও, একজন বিবাহিত পুরুষের সাথে সম্পর্কে জড়ালে, প্রতিদিন সকালে আমি নিজেই আয়নার সামনে দাঁড়াতে পারবো না। আর আমি এমন কোনো পুরুষকে ভালোবাসতে পারি না যে কিনা নিজের স্ত্রীকে ধোঁকা দিতে পারে।”
পরে অবশ্য ২০০৬ সালের দিকে সন্তানসম্ভবা জোলির স্বীকার করেন যে, তিনি পিটের সন্তানকেই গর্ভে ধারণ করেছেন। এর আগে ২০০৫ সালের দিকে জোলি ইথিওপিয়া থেকে ৬ মাস বয়সী কন্যাশিশু জাহারা মার্লেকে দত্তক নিয়েছিলেন। জোলি-পিট জুটির প্রথম সন্তান শিলোহ নোভেল ২০০৬ সালের ২৭ মে তে নামিবিয়ায় জন্মগ্রহণ করে। ২০০৬ এর দিকে পিটও ম্যাডক্স ও জাহারাকে দত্তক নেওয়ার মধ্য দিয়ে জোলি-পিটের সম্পর্ক বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া ছাড়াই অনেক বেশি মজবুত হয়ে ওঠে।
২০০৭ সালে জোলি-পিট জুটি তিন বছর বয়সী প্যাক্স থিয়েনকে ভিয়েতনাম থেকে দত্তক নেন। জোলি ২০০৮ সালে পিটের জমজ সন্তান নক্স লিওন ও ভিভিয়েন মার্শেলিনের মা হবার মধ্য দিয়ে এই জুটির ছয় সন্তানের গর্বিত মাতা-পিতা হবার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন। তাদের অটুট সম্পর্কের ভালবাসার নিদর্শন রূপে নিজেদের প্রত্যেক সন্তানের নামের শেষে তারা ‘জোলি-পিট’ টাইটেল সংযুক্ত করেছিলেন। প্রায় ৬ বছর হলিউডের সেরা আকর্ষণীয় জুটি হিসেবে পরিচিতি পেয়ে আসা ‘ব্র্যাঞ্জেলিনা’ নিজেদের বাগদান পর্ব ২০১২ সালের এপ্রিলে সেরে ফেলেন। এর ২ বছর পর হলিউডের ইতিহাসের বহুল প্রতীক্ষিত সেই বিশেষ দিনটির আগমন ঘটে।
সারা বিশ্বের লাখ লাখ ভক্তের শুভকামনা ও ভালোবাসাকে সাধুবাদ জানিয়ে জোলি ও পিট অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে একে অপরের সাথে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে পড়েন। সে সময় অনেকেই ধরে নিয়েছিল, এ জুটির বৈবাহিক সম্পর্ক আজীবন টিকে থাকবে। কিন্তু বিধি বাম। অগণিত শুভাকাঙ্ক্ষীর মনকে চূর্ণবিচূর্ণ করে বিয়ের ২ বছর পর সম্পর্কের অবনতি ঘটার কারণে জোলি আদালতে পিটকে তালাক দেওয়ার জন্য আবেদন করেন।
জোলি এর কারণ হিসেবে পিটের অতিরিক্ত মদ্যাসক্তি ও সন্তানদের সাথে দুর্ব্যবহারকে দায়ী করেছিলেন। অনেক জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে দীর্ঘ এক যুগ অন্যান্য জুটিকে ঈর্ষান্বিত করে তোলার মতো সুন্দর সম্পর্কে বাঁধা থাকার পর জোলি ও পিট পরস্পর থেকে আলাদা হয়ে পড়েন। বর্তমানে ছয় সন্তানকে লালন পালন করেই কাটছে জোলির ব্যক্তিগত জীবন। তবে এখনো সন্তানদের মঙ্গলের কথা ভেবে ও তাদের সার্বিক চাহিদা মেটানোর তাগিদে জোলি ও পিট জীবনসাথী হিসেবে না হলেও, পিতামাতা হিসেবে একত্রে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
‘অ্যাঞ্জেনিলা জোলি’র জীবনবৃত্তান্ত ঘাঁটলে একটি কথা পরিষ্কারভাবে বোঝা যায় যে, একজন মানুষ চাইলেই নিজেকে প্রতিনিয়ত একটু একটু করে গুছিয়ে নিয়ে, ধীরে ধীরে একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে।
তথ্যসূত্র
- Angelina Jolie | Short Biography
- Angelina Jolie | Biography ০nline
- Angelina Jolie | Biography.com
- Angelina Jolie | The Famous People
- Angelina Jolie | Biography, Movies, & Facts | Britannica.com
Featured image: ANI