শান্ত নীল আকাশ দেখতে দেখতে কখনো কি কারো মনে প্রশ্ন জাগে নি যে আকাশ কেন নীল? কিংবা নীরব সাগর দেখেও কি মনে হয়নি সাগর নীল হলো কেন? এটা খুব সহজেই ধারণা করা যায় যে মানুষের মনে একবার হলেও এই প্রশ্নগুলো জেগেছে কোনো না কোনো সময়।
কিন্তু আকাশ কিংবা সাগর কেন নীল এই প্রশ্নের বিজ্ঞানভিত্তিক জবাব যিনি দিয়েছেন তিনি হলেন রমণ প্রভাবের আবিষ্কর্তা আচার্য চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমণ বা সংক্ষেপে সি ভি রমণ। আর বিজ্ঞানপিপাসু ব্যক্তিবর্গ আলোর বিক্ষেপণে রমণ প্রভাবের কথা জানে না এমনটা হবার নয়। এই আবিষ্কারের হাত ধরেই আচার্য রমণ স্বীয় মাতৃভূমি ভারতবর্ষকে দিয়েছেন সর্বশ্রেষ্ঠ পুরষ্কারটি। রমণই ভারতবর্ষের প্রথম বিজ্ঞানী যিনি পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার অর্জন করে মাতৃভূমিকে করেছেন গৌরবান্বিত।
আচার্য রমণের জীবন ও পদার্থবিজ্ঞানে তাঁর কাজ সম্পর্কে চলুন জানা যাক এবার।
শৈশব ও প্রথম জীবন
রমণ ছোটবেলা থেকেই ছিলেন খুব মেধাবী। তার জীবনী থেকে জানা যায়, যে বয়সে সেই সময়ে মেট্রিকুলেশন পাশ করতো সবাই, তার আগেই রমণ মেট্রিকুলেশন পাশ করে ফেলেন। তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের মাদ্রাজ বা তামিল নাড়ু প্রদেশের (বর্তমান দক্ষিণ ভারত) ত্রিচিনোপলি শহরে ১৮৮৮ সালের ৭ নভেম্বর জন্ম নেন রমণ। বর্তমানে এই শহরটি তিরুচিরাপ্পালি নামে পরিচিত।
পরিবারে রমণ ছিলেন তাঁর পিতামাতার আট সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয়। পিতা চন্দ্রশেখরন রামনাথান ইয়ের ছিলেন গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের একজন শিক্ষক। কাজেই রমণের পদার্থবিদ্যার ভীত যে তাঁর পিতার হাতেই গড়া সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। মাতা পার্বতী আম্মাল ছিলেন নিরক্ষর, রমণের পিতাই তাঁকে লিখতে-পড়তে শিখিয়েছিলেন। যখন তাঁর জন্ম, তখন রামনাথানের সংসার চলতো স্বল্প আয়ে টেনেটুনে।
ভারতবর্ষের বর্ণপ্রথার কথা সবাই জেনে থাকবেন। বর্ণের এই প্রভেদে রমণের পরিবার ছিলো ব্রাহ্মণ, অর্থাৎ যারা কিনা উচ্চবর্ণ- পুরোহিত ও জ্ঞানী শ্রেণী। কিন্তু ব্রাহ্মণ হলেও রমণের পিতা রামনাথান ছিলেন হিন্দু রীতিনীতি ও অনুষ্ঠানের প্রতি কিছুটা উদাসীন স্বভাবের। এ প্রভাব যদিও রমণের উপর পড়েছিলো, কিন্তু তারপরও রমণ বেশ কয়েকটি হিন্দুধর্মীয় রীতিনীতিকে গ্রহণ করেছেন এবং আজীবন মেনে চলেছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় তিনি ছিলেন নিরামিষাশী।
রমণের বয়স যখন চার বছর, তখন রামনাথান কলেজ শিক্ষকতার চাকরী পান এবং সপরিবারে ওয়াল্টেয়ারে চলে যান (বর্তমান দক্ষিণ ভারতের বিশাখাপাটনাম অঞ্চল)। এখানেই সেইন্ট এলোয়সিয়াস এংলো-ইন্ডিয়ান হাই স্কুলে ভর্তি হন রমণ এবং তারঁ বয়স যখন মাত্র ১১ বছর তখন তিনি মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। এরপর বৃত্তিসহ এফএ পাশ করলেন ১৩ বছর বয়সে অর্থাৎ যা কিনা আজকের উচ্চ মাধ্যমিকের সমমান।
বয়স বাড়ার সাথে সাথে বিজ্ঞানের প্রতি রমণের আকর্ষণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। কথায় বলে ‘বাপকা বেটা’, পিতার হাত ধরেই তাঁর গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের সাথে পরিচয় ঘটতে থাকে। বৃদ্ধি পেতে থাকে ভারতবর্ষের সুপ্ত প্রতিভার গুপ্ত বিকাশ। তাঁর পিতা শৈশবে যেসব বই পড়েছিলেন সেগুলোই তিনি পড়তে শুরু করলেন একসময়। এরপর রামনাথানের কলেজ লাইব্রেরী থেকে আনতে শুরু করলেন গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানের বই। মজার ব্যাপার হলো, রামনাথান তার মাস্টার ডিগ্রীর জন্য যে বই পড়তেন তখন, রমণ সেগুলোও পড়তে শুরু করলেন।
এরপর ১৯০২ সালে চৌদ্দ বছর বয়সে রমণ পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হলেন মাদ্রাজের প্রেসিডেন্সী কলেজে। এখানেও তাঁর সাফল্যের ধারা অব্যাহত ছিলো। কিন্তু প্রথমদিকে তাঁর স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়েছিলো। কলেজের প্রথম বর্ষ শেষ করে যখন রমণ বাড়িতে গেলেন তখন তাঁর পিতামাতা তাঁর দুর্বল স্বাস্থ্য দেখে খুব অবাক হয়েছিলেন। সবই বোধ হয় হোস্টেলের গুণ। তাই তাঁর থাকার জন্য আলাদা বাড়ির ব্যবস্থা করে দিলেন পিতা রামনাথান। সেখানে রমণের দেখাশোনা করতেন রামনাথানের পিতামাতা।
১৯০৪ সালে তিনি পদার্থবিজ্ঞান ও ইংরেজীতে বিএ পাশ করলেন, প্রথম হলেন এবং পেলেন স্বর্ণপদক। তাঁর অধ্যাপকেরা তাঁকে মাস্টার ডিগ্রীর জন্য যুক্তরাজ্যে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে মাদ্রাজের সিভিল সার্জনেরা তাঁকে যেতে নিষেধ করলেন। ফলে রমণ থেকে গেলে ভারতে এবং শিক্ষাবৃত্তিসহ প্রেসিডেন্সীতেই পড়ার সুযোগ পেলেন। পরবর্তীতে ১৯০৭ সালে ১৯ বছর বয়সে রমণ সর্বোচ্চ নম্বরসহ পাশ করলেন তাঁর এমএ পরীক্ষা।
তিনি যখন প্রেসিডেন্সী কলেজে পড়তেন তখন থেকেই তাঁর অসামান্য মেধার প্রকাশ ঘটতে থাকে। এজন্য তাঁকে প্রেসিডেন্সীর ল্যাবরেটরীগুলোতে অবাধ প্রবেশাধিকার দেয়া হয়। আর এখানেই চলে তাঁর গবেষণার কাজ। ১৯০৬ সালে নভেম্বরে, মাত্র আঠারো বছর বয়সে তিনি তাঁর প্রথম একাডেমিক পেপারটি প্রকাশ করেন। ‘Unsymmetrical diffraction-bands due to a rectangular aperture’ শিরোনামে লেখা তাঁর এই পেপারটি তিনি প্রথম তাঁর একজন অধ্যাপককে দেখালেন। মূলত এই পেপারটি আলোর প্রকৃতির উপর লেখা। কিন্তু অধ্যাপকটি এটি নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামালেন না। পরে রমণ এটা সরাসরি পাঠিয়ে দেন ‘ফিলোসফিক্যাল ম্যাগাজিন’-এ এবং তারা এটা সাথেসাথেই নিয়ে নেয়।
সেই সময় ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী লর্ড র্যালে বিজ্ঞানী সমাজে বেশ গুরুত্বপূর্ণ স্থান করে নিয়েছিলেন। ফিলোসফিক্যাল ম্যাগাজিনে যখন রমণের দ্বিতীয় পেপারটি প্রকাশিত হলো তখন তিনি লর্ড র্যালের কাছ থেকে একটি চিঠি পেয়েছিলেন। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, র্যালে ভেবেছিলেন রমণ হয়তো পদার্থবিজ্ঞানের একজন অধ্যাপক। তাই তিনি চিঠিতে আঠারো বছর বয়সী রমণকে ‘প্রফেসর রমণ’ হিসেবে সম্বোধন করেছিলেন। তাঁর মতে এরকম গবেষণাপত্র প্রকাশ করার মত জ্ঞান ও সময় কেবল একজন প্রফেসরই থাকতে পারে।
কর্মজীবন
রমণ যখন জন্মেছিলেন তখন ভারতবর্ষে বিজ্ঞানী হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করা ঠিক যুতসই ছিলো না। যদিও তিনি চেয়েছিলেন বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করতে, কিন্তু তাঁর ভাই তাকে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বসার জন্য উৎসাহ দেন। সে সময় সিভিল সার্ভিসের চাকরী ছিলো খুব উচ্চ বেতনের এবং যেহেতু তাঁর পরিবার বেশ দেনাগ্রস্ত ছিলো, ফলে ভাইয়ের অনুরোধ তিনি ফেলতে পারেন নি। রমণ ফিনান্সিয়াল সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় পাশ করেন এবং ১৯০৭ সালে ইন্ডিয়ান ফিন্যান্স ডিপার্টমেন্টে সহকারী সাধারণ হিসাবরক্ষক হিসেবে যোগ দিলেন। পরবর্তীতে প্রায় ১০ বছর তিনি এখানে চাকরী করেছেন।
একাধারে তিনি যখন একজন পুরোপুরি সরকারী কর্মজীবী, সে সময়েও তিনি অবসরে তাঁর গবেষণা চালিয়ে গেছেন। যখনই তিনি সময় পেতেন তখনই তিনি তাঁর গবেষণার কাজ করতেন। সেসময়ে তিনি ‘ইন্ডিয়ান এসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্স’ (IACS)-এ স্ট্রিংযুক্ত বাদ্যযন্ত্র ও ড্রামের উপর গবেষণার কাজ করতেন এবং তাঁর হাত ধরেই ঝিমিয়ে পড়া এই প্রতিষ্ঠানটি আবার প্রাণ ফিরে পায়। অবসরে তিনি কলকাতায় পাবলিক লেকচারও দিতেন।
এই গবেষণা ও লেকচারই পরে একজন বিশিষ্ট পদার্থবিদ হিসেবে তাঁকে সবার সামনে পরিচিত করায়। তাঁর এই অনবদ্য প্রতিভা দেখে ১৯১৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে পদার্থবিদ্যা বিভাগে যোগদানের জন্য অনুরোধ করেন। এর মধ্যেই তিনি ২৮ বছর পার করে ফেলেছেন। তিনিও তখন এই সুযোগ লুফে নেন এবং ফিনান্স ডিপার্টমেন্টের চাকরীটি ছেড়ে দেন। যদিও নতুন চাকরীটি ছিলো অপেক্ষাকৃত কম বেতনের তবুও তিনি এখানেই যোগ দিলেন। এমনই ছিলো বিজ্ঞানের প্রতি তাঁর আগ্রহ ও উৎসাহ। পরবর্তীতে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় সম্পূর্ণভাবে মনোনিবেশ করেন। যদিও তিনি গবেষণা অধ্যাপক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে, কিন্তু তিনি মাঝেমাঝে লেকচারও দিতেন ক্লাসে।
১৯৩৩ সালে তিনি ব্যাঙ্গালোরের ইন্ডিয়ান ইন্সটিউট অব সায়েন্স (IISc)-এর ডিরেক্টর হওয়ার সুযোগ লাভ করেন এবং তা গ্রহণও করেন। প্রথম ভারতীয় হিসেবে তিনিই প্রথম এই পদ অর্জন করেন। বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করার উদ্দেশ্যে তিনি ১৯৪৮ সালে ব্যাঙ্গালোরে ‘রমণ রিসার্চ ইন্সটিটিউট’ প্রতিষ্ঠা করেন। জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত তিনি এখানে গবেষণা চালিয়ে গেছেন।
গবেষণা
সীমিত গবেষণার সুযোগ থাকার পরও রমণ IACS-এ নিজের গবেষণা চালিয়ে যান। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিলো মূলত ভাইব্রেশন ও একোয়াস্টিক-এর উপর। সারাদিন চাকরী করার পর রাতে চালাতেন নিজের গবেষণা। তাঁর গবেষণাপত্রগুলো প্রকাশ করতো ন্যাচার, ফিলোসফিক্যাল ম্যাগাজিন, ফিজিক্স রিভিউয়ের মতো প্রথম সারির আন্তর্জাতিক জার্নালগুলো।
১৯২০ সালের দিকে রমণ আলোর বিক্ষেপণের উপর গবেষণা শুরু করেন। স্বচ্ছ বস্তুর ভেতর দিয়ে যখন একবর্ণী আলো প্রবেশ করে এবং অপরপাশে রাখা স্পেক্ট্রোগ্রাফের উপর যে প্রভাব তৈরী করে সেটির প্রকৃতি পর্যবেক্ষণ করেন তিনি। পরবর্তীতে এই গবেষণালব্ধ ফলাফলই তাঁর নামানুসারে রমণ প্রভাব নামে পরিচিত হয়। ১৯২৮ সালে বিজ্ঞানীদের এক মিটিংয়ে এই পরীক্ষাটি প্রদর্শন করেন। এই পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি দেখান যে, স্বচ্ছ বস্তুর মধ্য দিয়ে যখন আলো প্রবেশ করে তখন কতিপয় বিচ্ছুরিত আলো এদের তরঙ্গদৈর্ঘ্য পরিবর্তন করে। বিংশ শতাব্দীর পদার্থবিদ্যার ইতিহাসে এটি ছিলো একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার।
রমণ প্রভাব
সি ভি রমণের গল্পে লর্ড র্যালের গুরত্ব অনেক। কারণ র্যালেই প্রথম রমণের মেধা ও গবেষণার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেন। বিজ্ঞানী লর্ড র্যালে সর্বপ্রথম ব্যাখ্যা করেন আকাশ কেন নীল দেখায় এবং তিনি এটাও বলেন যে সাগরের নীল রঙ আকাশের নীল রঙেরই প্রতিফলন।
১৯২১ সালে গ্রীষ্মের কোনো একদিনে রমণ অক্সফোর্ডের ইউনিভার্সিটি অব বৃটিশ এম্পায়ারের এক সভায় যোগদানের উদ্দেশ্যে জাহাজে করে ভূমধ্যসাগর পার হচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে তিনি তাঁর ডেক থেকে সাগরে পানির সুন্দর নীল রঙ দেখতে পান এবং র্যালের ব্যাখ্যার প্রতি কিছুটা সন্দেহ প্রকাশ করেন।
যা-ই হোক, অক্সফোর্ড থেকে ভারতে ফেরার পথে তিনি এবার জাহাজে তাঁর সঙ্গী করলেন একটি প্রিজম, একটি মিনিয়েচার স্পেক্ট্রোগ্রাফ ও একটি ডিফ্রাকশন গ্রেটিং। তাঁর এসব যন্ত্রপাতি দিয়ে তিনি আকাশ ও সাগরের রঙের কারণ নিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন এবং অবশেষে বললেন যে সাগরের পানিও আলোর বিক্ষেপণ করতে সক্ষম। তাঁর এই গবেষণাপত্রটি ন্যাচার পত্রিকায় পরে প্রকাশও করেন। পরে তিনি ফিরে আসেন নিজের গবেষণাগারে এবং তাঁর ছাত্রকে সাথে নিয়ে আলোর বিক্ষেপণের উপর গবেষণা শুরু করেন।
কঠিন, তরল ও গ্যাসীয়- এই তিন প্রকার মাধ্যমেই তাঁরা আলোর বিক্ষেপণ পর্যবেক্ষণ করেন। পর্যবেক্ষণের এক পর্যায়ে রমণ দেখেন সূর্যরশ্মি যখন স্বচ্ছ তরলের মধ্যে দিয়ে যায় তখন একটি বিশেষ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো বিক্ষেপিত হয়। অর্থাৎ সূর্যরশ্মির সাত রঙের মধ্যে যেকোনো একবর্ণের আলোর বিক্ষেপণ হয়। যদিও প্রথমদিকে ফ্লোরোসেন্স প্রভাবের কারণে তাঁর পরীক্ষাগুলো খুব দূর্বল ফলাফল প্রদর্শন করছিলো। পরে তিনি সমবর্তিত আলো নিয়ে পরীক্ষা চালান, ফলে ফ্লোরোসেন্সের কোনো সমস্যাই থাকলো না। ফ্লোরোসেন্সও আলোর বর্ণ পরিবর্তনের এক ধরণের বিশেষ প্রভাব।
প্রায় ৬০ রকমের তরল নিয়ে তিনি গবেষণা করেন এবং আলাদা আলাদা ফলাফল দেখেন। যেমন গ্লিসারিনের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার সময় সূর্যরশ্মি কেবল সবুজ রঙই বিক্ষেপিত হয়, যেখানে পানিতে ছিলো নীল রঙ। বিক্ষেপণের এই গবেষণাই আজ রমণ প্রভাব নামে বিজ্ঞানী সমাজের কাছে পরিচিত। আর এই গবেষণাই তাকে এনে দেয় সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন- নোবেল পুরষ্কার।
তাছাড়া রমণের এই বিশেষ গবেষণার ফলে তৈরী করা হয় রমণ স্পেক্ট্রোস্কোপি। এখনকার রাসায়নিক গবেষণাগারগুলোতে সঠিক রাসায়নিক দ্রব্যের যাচাই করতে এই যন্ত্রটি ব্যবহার করা হয় যা রমণ প্রভাবের মূলনীতি অনুসারে নির্মিত। চিকিৎসাবিজ্ঞানেও প্রাণিকোষ ও টিস্যুর পর্যবেক্ষণে এর ব্যবহার করা হয়, এমনকি ক্যান্সার কোষও এর সাহায্যে চিহ্নিত করা সম্ভব।
বিজ্ঞানে ব্রিটিশ ভারতের প্রথম নোবেল বিজয়ী এই বিজ্ঞানী জীবনের শেষদিকেও অনেক কর্মঠ ছিলেন এবং তাঁর গবেষণা চালিয়ে গেছেন অনায়াসে। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ভারতবর্ষের আরেক বিজ্ঞানী সুব্রাহ্মনিয়াম চন্দ্রশেখরের চাচা ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন লোকাসুন্দরী আম্মালাকে। ১৯৭০ সালে ৮২ বছর বয়সে এই গুণী বিজ্ঞানীর মৃত্যু হয়।