পবিত্র জেরুজালেমের গ্র্যান্ড মুফতি আলহাজ মোহাম্মদ আমিন আল-হুসেইনি (الحاج محمد أمين الحسيني) ছিলেন আধুনিক ফিলিস্তিনের প্রথম জাতীয়তাবাদী নেতাদের মধ্যে অন্যতম। জায়নবাদী ইহুদীরা যখন ফিলিস্তিনের বিভিন্ন অংশে বসতি স্থাপন করে নিজেদের প্রভাব বিস্তার শুরু করেছিল এবং ঔপনিবেশিক ব্রিটিশরা যখন ফিলিস্তিনের ভূমিতে ইহুদীদের জন্য রাষ্ট্র গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছিল, তরুণ হুসেইনি তখনই তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য দখলদার ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে গিয়ে তিনি মিত্রতা স্থাপন করেছিলেন হিটলারের সাথেও। হিটলারের সাথে তার সাক্ষাতের অযুহাতে তার বিরুদ্ধে ইহুদী গণহত্যায় সম্পৃক্ততার অভিযোগ তোলা হলেও ফিলিস্তিনিদের কাছে তিনি দেশপ্রেমিক এবং জাতীয়তাবাদী নেতা হিসেবেই পরিচিত।
মোহাম্মদ আমিন আল-হুসেইনির জন্ম ১৮৯৫ সালে (মতান্তরে ১৮৯৩ বা ১৮৯৭ সালে) ফিলিস্তিনের আল-কুদসের (জেরুজালেম) ঐতিহ্যবাহী হুসেইনি পরিবারে। দাবি করা হয়, হুসেইনি পরিবারের সদস্যরা হযরত মুহাম্মদ (সা) এর দৌহিত্র ইমাম হোসেন (রা) এর বংশধর। দ্বাদশ শতকে সুলতান সালাহউদ্দীন আইয়্যুবি জেরুজালেম জয় করার পর হুসেইনিদের আদি পুরুষেরা সেখানে গিয়ে বসতি স্থাপন করে। অটোমান শাসনামল থেকেই হুসেইনি পরিবারের সদস্যরা ফিলিস্তিনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিল। ১৮৬৪ থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত হুসেইনি পরিবারের ১৩ জন সদস্য জেরুজালেমের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আমিন আল-হুসেইনির বাবা মুস্তাফা তাহের আল-হুসেইনি ১৮৬০ সাল থেকে ১৯০৮ সাল পর্যন্ত জেরুজালেমের মুফতি ছিলেন। তার মৃত্যুর পর আমিনের সৎ ভাই কামিল আল-হুসেইনি জেরুজালেমের মুফতি হন এবং ১৯২১ সালে তার মৃত্যু পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।
আমিন আল-হুসেইনি ছোটবেলায় জেরুজালেমের ইসলামিক মাদ্রাসায় আরবি ও তুর্কি ভাষা অধ্যয়ন করেন এবং ইসলাম সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি জেরুজালেমের ফরাসি ক্যাথলিক কলেজ ‘ফ্রেঁরে’তে ভর্তি হয়ে ফরাসি ভাষাও অধ্যয়ন করেন। ১৯১২ সালে তিনি মিসরে যান কায়রোর আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক আইন বিষয়ে পড়াশোনা করার জন্য। কায়রোতে তিনি সংস্কারপন্থী ইসলামী চিন্তাবিদ রাশিদ রেদার দার আল-দাওয়াহ ওয়াল ইরশাদে ভর্তি হন। সে সময়ই তার মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা এবং আরব জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটে। কায়রোতে থাকা অবস্থায় তিনি ২০ জন মুসলিম ও খ্রিস্টান সহপাঠীকে নিয়ে একটি সংঘ প্রতিষ্ঠা করেন, যার উদ্দেশ্য ছিলো জায়নবাদী ইহুদীদের বিরুদ্ধে আরবদেরকে সচেতন করা।
কায়রো থেকে ফিরে এসে আমিন আল-হুসেইনি ইস্তাম্বুলের মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে যোগদান করেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে ১৯১৪ সালে তিনি অটোমান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ করেন। তিনি আজমীর শহরে অটোমান সেনাবাহিনীর ৪৭তম ব্রিগেডের অধীনে গোলন্দাজ অফিসার হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। কিন্তু অটোমান তুর্কিদের তাদের অধীনস্থ আরবদের উপর তুর্কি ভাষা ও সংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়ার প্রবণতা তার মধ্যে তুর্কিদের প্রতি বিরূপ মনোভাবের সৃষ্টি করে। ১৯১৬ সালে যুদ্ধে সামান্য আহত হওয়ার পর তিনি জেরুজালেমে ফিরে আসেন।
সে সময় আরব জুড়ে মক্কার শেরিফ হুসেইন বিন আলির নেতৃত্বে অটোমানদের বিরুদ্ধে আরব বিদ্রোহ দানা বেঁধে উঠছিল। ব্রিটিশরা আরব বিদ্রোহীদেরকে প্ররোচিত করছিল এই বলে যে, অটোমানদের পরাজয় ঘটলে আরব রাষ্ট্রগুলোকে স্বাধীনতা প্রদান করা হবে। আরব জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ আমিন আল-হুসেইনিও ব্রিটিশদের এই প্ররোচনার ফাঁদে পা দেন। ১৯১৭ সালে হুসেইন বিন আলির পুত্র ফয়সালের নেতৃত্বাধীন আরব বিদ্রোহীরা ব্রিটিশদের সহযোগিতায় সিরিয়া এবং ফিলিস্তিন জয় করলে আমিন তাদেরকে সহযোগিতা করেন। তিনি অটোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য ২,০০০ আরব যোদ্ধা নিয়োগ করার ব্যাপারে এক ব্রিটিশ অফিসারকে সহায়তা করেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধ এবং তার পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশরা আমিন আল-হুসেইনিকে মধ্যপন্থী আরব জাতীয়তাবাদী হিসেবেই বিবেচনা করত। যুদ্ধের পর তিনি সিরিয়াতে যান এবং কিছুদিন ফয়সাল বিন হুসেইনের পক্ষে কাজ করে আবার জেরুজালেমে ফিরে আসেন। যুদ্ধের সময় ব্রিটিশরা আরব রাষ্ট্রগুলোকে স্বাধীনতার আশ্বাস দিলেও পরবর্তীতে তারা তাদের প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসে। বরং ১৯১৭ সালের বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে তারা ফিলিস্তিনের বুকে একটি ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করে। তাদের এ অঙ্গীকারে উৎসাহিত হয়ে এ সময় ফিলিস্তিনে জায়নবাদী ইহুদীদের সংখ্যা এবং প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে। স্বাভাবিকভাবেই স্থানীয় আরবরা এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু করে। আর এ প্রতিবাদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন আমিন আল-হুসেইনিও।
১৯২০ সালের এপ্রিল মাসে ‘নবী মুসা’ নামক ধর্মীয় উৎসবের সময় জেরুজালেমে হাজার হাজার মুসলমান একত্রিত হয়। সে সময় আমিন আল-হুসেইনিসহ জেরুজালেমের অন্যান্য নেতারা বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ব্রিটিশদের ইহুদী রাষ্ট্র সৃষ্টির পরিকল্পনা সম্পর্কে উপস্থিত জনগণকে অবহিত করেন এবং জায়নবাদীদের বিস্তার প্রতিহত করার আহ্বান জানান। জনগণের প্রতিবাদ একপর্যায়ে বিক্ষোভে রূপ নেয় এবং জায়নবাদী ইহুদীদের সাথে মুসলমানদের দাঙ্গার সৃষ্টি হয়। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা এবং জায়নবাদীদের উচ্ছেদের দাবিতে শুরু হওয়া ঐ দাঙ্গায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে ব্রিটিশ প্রশাসন আমিন আল-হুসেইনির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। কিন্তু সিরিয়াতে পালিয়ে যাওয়ায় তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পান। পরবর্তীতে তার অনুপস্থিতিতে ব্রিটিশ সামরিক আদালত তাকে ১০ বছরের কারাদন্ড প্রদান করে।
১৯২০ সালে ফিলিস্তিনের প্রথম হাই কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত হন স্যার হারবার্ট স্যামুয়েল নামে এক ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ। স্যামুয়েল ছিলেন একজন জায়নবাদী ইহুদী, যিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ব্রিটিশ মন্ত্রীসভায় ফিলিস্তিনে ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। জায়নবাদী হলেও স্যামুয়েল বুঝতে পেরেছিলেন, আরবদের সাথে সংঘর্ষে গিয়ে ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সহজ হবে না। তাই হাই কমিশনার হিসেবে নিযুক্ত হয়ে তিনি প্রথমেই আরবদের প্রতি তার সহনশীলতার উদহারণ হিসেবে সামরিক আদালত কর্তৃক দন্ডিত সকল আরবকে ক্ষমা করে দেন। তার এই ক্ষমার আওতায় পড়েন আমিন আল-হুসেইনিও।
সেসময় জেরুজালেমের মুফতি ছিলেন আমিন আল-হুসেইনির সৎ ভাই কামিল আল-হুসেইনি। ১৯২১ সালের মে মাসে কামিল মৃত্যুবরণ করলে নতুন মুফতি নির্বাচনের আয়োজন করা হয়। সেসময় আমিনের বয়স ছিল মাত্র ২৬ বছর। মুফতি হওয়ার মতো যথেষ্ট প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতাও তার ছিল না। স্বাভাবিক নিয়মে আয়োজিত নির্বাচনে প্রথম তিনজনের মধ্যে স্থান না পাওয়ায় তার মুফতি হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় বাতিলই হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু জেরুজালেমের বিভিন্ন পরিবারের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখার স্বার্থে এ সময় নির্বাচন প্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ করেন হারবার্ট স্যামুয়েল।
স্যামুয়েল তৃতীয় স্থান অধিকারী প্রার্থীকে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করিয়ে আমিনকে তৃতীয় স্থানে উন্নীত করেন এবং প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জন করতে পারার যুক্তি দেখিয়ে তাকে জেরুজালেমের মুফতি হিসেবে নিয়োগ দেন। শুধু তা-ই না, পরবর্তী বছর মুসলমানদের ধর্মীয় ব্যাপার দেখাশোনার জন্য ‘সুপ্রিম মুসলিম কাউন্সিল’ গঠিত হলে স্যামুয়েল মুফতি আমিনকে তার প্রধান হিসেবে সমগ্র ফিলিস্তিনের গ্র্যান্ড মুফতি পদে ভূষিত করেন। এই পদের বলে মুফতি আমিন আল-হুসেইনি সমগ্র ফিলিস্তিনের মসজিদ, মাদ্রাসা, ইসলামিক আদালত দেখাশোনার দায়িত্ব লাভ করেন।
ব্রিটিশদের দ্বারা নিযুক্ত হলেও সমসাময়িক অন্যান্য আরব নেতার মতো মুফতি আমিন আল-হুসেইনি ব্রিটিশদের স্বার্থে নিজের দেশকে বিকিয়ে দেননি। নিজে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকায় তিনি একদিকে সাধারণ ইহুদীদের উপর আক্রমণকে এবং ব্রিটিশ বিরোধী সহিংসতাকে নিরুৎসাহিত করেছেন, কিন্তু অন্যদিকে ব্রিটিশদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে ব্রিটিশদের জায়নবাদ ঘেঁষা নীতি পরিবর্তন করার চেষ্টা করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, যে স্যামুয়েল তাকে নিয়োগ করেছিলেন, তারই প্রস্তাবকৃত ‘লেজিস্লেটিভ কাউন্সিল’ গঠন করার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন মুফতি আমিন। কারণ ঐ প্রস্তাবে ইহুদীদের জন্য ৪৩ শতাংশ সদস্যপদ বরাদ্দ ছিল, যা ছিল ফিলিস্তিনের ইহুদী জনসংখ্যার অনুপাতের তুলনায় অনেক অনেক বেশি। স্যামুয়েলের দ্বিতীয় প্রস্তাব ‘অ্যাডভাইজরি কাউন্সিল’ গঠনের প্রস্তাবও মুফতি একইভাবে প্রত্যাখ্যান করেন।
তবে মুফতি হিসেবে দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রাথমিক বছরগুলোতে আমিন আল-হুসেইনি রাজনীতির চেয়ে ধর্মীয় কাজেই বেশি মনোযোগী ছিলেন। এ সময় তিনি জেরুজালেমের হারাম শরিফ, বিশেষ করে মসজিদ আল-আকসা এবং কোব্বাতুস সাখরা (ডোম অফ রক) সংস্করণের জন্য বিশাল প্রকল্প হাতে নেন। বর্তমানে আমরা আল-আকসা মসজিদ এবং কোব্বাতুস সাখরার যে রূপ দেখি, তার অনেকটাই মুফতি আমিনের অবদান। এ সময়েই তিনি প্রথমবারের মতো ভারত এবং আরব রাষ্ট্রগুলো থেকে অনুদান সংগ্রহ করে কোব্বাতুস সাখরার গম্বুজের উপর স্বর্ণের প্রলেপ দেন।
মুফতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের প্রথম দশকে আমিন আল-হুসেইনি সশস্ত্র আন্দোলনের পরিবর্তে রাজনৈতিকভাবে ব্রিটিশদের কাছ থেকে দাবি আদায়ের ব্যাপারেই বেশি আগ্রহী ছিলেন। শান্তিপূর্ণভাবে দাবি আদায়ের জন্য তিনি একাধিকবার জায়নবাদীদের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের গেরিলাদের সহিংস পরিকল্পনার প্রস্তাব বাতিল করে দিয়েছিলেন। আরব ও ইহুদীদের মধ্যকার একাধিক দাঙ্গা থামানোর ব্যাপারেও তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। এমনকি তিনি ইহুদীদের সাথে আনুপাতিক সংখ্যায় একটি কাউন্সিল গঠনের ব্যাপারেও ব্রিটিশদের সাথে সমঝোতায় পৌঁছেছিলেন। কিন্তু শান্তি প্রতিষ্ঠায় তার প্রচেষ্টা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছিল। দুই-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া ব্রিটিশরা জায়নবাদী ইহুদীদের চাপের কাছেই নতি স্বীকার করেছিল।
সে সময় ইউরোপ থেকে জাহাজ বোঝাই করে ইহুদীরা এসে ফিলিস্তিনে বসতি স্থাপন করছিল। এই ইহুদীদের মধ্যে একটা বড় অংশ ছিলো জায়নবাদী, যাদের প্রধান লক্ষ্যই ছিলো যেকোনো উপায়ে ফিলিস্তিনের ভূমি দখল করে একটি ইহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। স্বাভাবিকভাবেই ইহুদীদের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে স্থানীয় আরবদের সাথে তাদের সংঘর্ষের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯২৯ এবং ১৯৩৩ সালে সংঘটিতে এরকম দুটি দাঙ্গার পেছনে মুফতি আমিনের উস্কানী ছিলো বলে অনেকে সন্দেহ করেন, যদিও ব্রিটিশ প্রশাসন এগুলোর পেছনে তার কোনো সম্পৃক্ততা পায়নি। ফলে তিনি মুফতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যেতে থাকেন।
ত্রিশের দশকের মাঝামাঝি পর্যন্তও ব্রিটিশরা মুফতি আমিনকে ফিলিস্তিনের অন্যান্য আন্দোলনকারী নেতার তুলনায় মধ্যপন্থী হিসেবে বিবেচনা করতো। কিন্তু জায়নবাদী ইহুদীদের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসী নীতির মুখে তার পক্ষে আর বেশি দিন মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করা সম্ভব ছিল না। সেসময় ফিলিস্তিন জুড়ে একাধিক জাতীয়তাবাদী এবং ধর্মীয় রাজনৈতিক সংগঠন গড়ে উঠছিল। তাছাড়া মুফতি নিজেও বুঝতে পারছিলেন, ইহুদী অভিবাসী এবং বসতির সংখ্যা যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, এবং জায়নবাদী সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো যেভাবে শক্তিশালী হয়ে উঠছে, তাতে দ্রুত কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া হলে অচিরেই ফিলিস্তিনকে ইহুদীদের হাত থেকে রক্ষা করার সর্বশেষ সুযোগও হাতছাড়া হয়ে যাবে।
ফলে মুফতি আমিন আল-হুসেইনি ধীরে ধীরে তার মধ্যপন্থী নীতি থেকে সরে এসে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার জন্য ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনের দিকে ঝুঁকে পড়তে থাকেন। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে যায় যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যখন শুরু হলে মুফতি আমিন হিটলারের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং নাৎসি জার্মানদের সাথে মিত্রতা স্থাপন করেন। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে নাৎসিদের এবং আরবদের যৌথ কিছু অপারেশনের উদ্যোগেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এমনকি নাৎসিদের অধীনে যুদ্ধ করার জন্য বসনিয়ার মুসলিমদেরকেও তিনি প্ররোচিত করেন।
কিন্তু যে মুফতি আমিন আল-হুসেইনি দীর্ঘদিন মধ্যপন্থী রাজনীতি করেছেন, তিনি কেন হিটলারের সাথে মিত্রতা স্থাপন করেছিলেন? তার ঐ পদক্ষেপের ফলাফল কী ছিল? তার চেয়েও বড় কথা, পশ্চিমা এবং ইহুদী কিছু ইতিহাসবিদ যেরকম অভিযোগ করেন, হিটলারের ইহুদী গণহত্যায়ও মুফতি আমিনের সম্পৃক্ততা ছিল, তার কি আসলেই কোনো ভিত্তি আছে? মুফতি আমিনের রাজনৈতিক জীবনের পরবর্তী অধ্যায় এবং হিটলারের সাথে তার সম্পর্ক নিয়ে আমরা আলোচনা করবো পরবর্তী পর্বে।
ফিচার ইমেজ: raymondpronk.files.wordpress.com