প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভ্যাটেরান অফিসার জ্যাক, যুদ্ধের কিছুকাল পরেই আর্মির চাকরিতে অব্যাহতি দিয়ে, বান্ধবী ভার্জিনিয়াকে বিয়ে করে পারিবারিক জীবন কাটাতে শুরু করেন লুইসভিলের কেন্টাকিতে। কিন্তু যুদ্ধের স্মৃতি তার পিছু ছাড়ে না কিছুতেই। দিনে দিনে উগ্র হতে লাগলেন জ্যাক, পান করতে লাগলেন অতিরিক্ত অ্যালকোহল। স্ত্রীর সাথে ঝগড়া নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়ায়। প্রায়ই ঝগড়া করতে করতে নিজের লাইসেন্স করা অস্ত্রটা উঁচিয়ে ধরতেন স্ত্রীর দিকে। স্ত্রীর গায়ে গুলি না করলেও, ঘরের আসবাবপত্র তার রিভলবারের নিশানা হতো মাঝে মাঝেই। এমন অশান্তিপূর্ণ পারিবারিক পরিবেশে, ১৯৩৭ সালের ১৮ জুলাই জন্ম নিল নতুন ‘অশান্তি’! এই কলহপ্রিয় দম্পতির প্রথম সন্তান হান্টার স্টকটন থম্পসন, তাকেই বলা হচ্ছে অশান্তি!
এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার যে, শিশু যে পরিবেশে বড় হয় সেখান থেকেই নিজের ধার্তব্য ঠিক করে, সে অনুযায়ীই আচরণ করে। থম্পসন সেক্ষেত্রে ছিলেন এককাঠি এগিয়ে। তার জন্মের পর জ্যাক এবং ভার্জিনিয়া যথেষ্ট সংযত হবার চেষ্টা করলেও থম্পসনকে ঘিরেই তাদের ঝগড়া শুরু হয়ে যেত। শৈশব থেকেই এ শিশুটি প্রতিনিয়ত প্রমাণ করে চলে যে সে ‘অসংশোধনীয়’! প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখায় তার আকর্ষণের ছিটেফোঁটাও ছিল না। তাই ফলাফলও হতো যাচ্ছেতা-ই। স্কুলে যাবার কথা শুনলেই চিৎকার জুড়ে দিত সে। অধিকাংশ দিনই ভার্জিনিয়া হাল ছেড়ে দিতেন আর থম্পসন মনমতো খেলে বেড়াতেন সারাদিন। সন্ধ্যায় জ্যাক এলে তার সামনে হাজির হতো থম্পসনের কীর্তিকলাপ। আর নিত্যদিনের মতো বেদম প্রহার করতেন জ্যাক। কিন্তু থম্পসন? প্রথমে কিছুদিন মারকে ভয় পেলেও দ্রুতই সেটি গা সওয়া হয়ে যায় তার।
থম্পসনের মাধ্যমিকে পা রাখার সাথে সাথেই জ্যাকের মৃত্যু হয়। পিতার মৃত্যুতে থম্পসনের শোকের চেয়ে বেশি যেন আনন্দই হয়! ভাতার যে অল্প টাকা আসে প্রতি মাসে, তা দিয়ে সংসার চালানো অসম্ভব ছিল। তাই তার মাকে নিত্যদিন কাজের যোগাড় করতে হতো। তাছাড়া থম্পসনের ছোট দুই ভাইকে দেখাশোনা করতেও বেগ পেতে হতো অসহায় ভার্জিনিয়ার। ফলে থম্পসনকে নিয়ে ভাবার অবকাশই পেতেন না তিনি। আর এতেই একাদশে বৃহস্পতি শুরু হলো থম্পসনের। উত্তরার ‘ডিস্কো বয়েজ’ গ্যাংয়ের মতোই থম্পসনও তার পাড়ার বন্ধুদের নিয়ে গড়ে তোলেন প্রভাশালী এক গ্যাং! পার্কিং প্ল্যাসে থেমে থাকা গাড়ির টায়ার ফুটো করে দেয়া, হেডলাইট ভাঙা, রাস্তায় রোডলাইটের খুঁটি উপড়ে ফেলা, বাড়ির জানালায় ঢিল ছুঁড়ে পালিয়ে যাওয়া সহ এহেন কাজ নেই, যা এই গ্যাং করতো না! আর অনেক রাতে আকণ্ঠ মদ্যপান করে বাড়ি ফিরতো গ্যাংয়ের সদস্যরা। কিন্তু এই অগোছালো জীবনেও দুটি কাজ ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। একটি হলো অনিচ্ছাকৃত পড়ালেখা, যা চাকরি করতে হলে প্রয়োজন, আরেকটি লেখালেখি।
থম্পসনের লেখার হাত এত চমৎকার ছিল যে তার মা সন্দেহ করতেন, সে অন্য কারো লেখা চুরি করছে না তো! আর সন্দেহ করবেন নাইবা কেন? এমন উচ্ছন্নে যাওয়া ছেলে, যার পড়ালেখাতে বিন্দুমাত্র মন নেই, তার কলম থেকে কিনা চমৎকার সব লেখা বেরোয়! মাধ্যমিকে থাকতেই তার বেশ কিছু লেখা ছাপা হয় স্থানীয় পত্রপত্রিকায়, যেগুলো নিয়ে এলাকায় সরব চর্চা হতো। ‘এথেনিয়াম লিটারেরি অর্গানাইজেশন’ নামক একটি সংস্থা ছিল, সেখানে কেবল উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা সাহিত্য চর্চা করতো। থম্পসনের লেখায় মুগ্ধ হয়ে সংস্থার কর্তৃপক্ষ তাকে বিনে পয়সায় সে সংস্থার সদস্যপদ প্রদান করে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার লেখার ধার বাড়তে থাকে, সমানতালে বাড়তে থাকে তার উগ্রতাও।
প্রাপ্তবয়স্ক হতে হতে থম্পসনের লেখায় ‘কোমলতা’ ব্যাপারটি উধাও হয়ে যায়। তিনি কলম ধরলেই তা থেকে বেরিয়ে আসতো তীব্র ব্যঙ্গ আর ক্রোধ। আর সেইসাথে কৈশোরের ছোট অপরাধগুলো বড় আকার ধারণ করে। এলাকায় সন্ত্রাসী হিসেবে কুখ্যাতি লাভ করেন তিনি। রাতের বেলা দোকানের সামনে গিয়ে ট্রাকভর্তি ময়লা ফেলে আসা, পার্কিং লট থেকে গাড়ি নিয়ে যাওয়া, চুরি করা, এমনকি অস্ত্র উঁচিয়ে ডাকাতিতে সিদ্ধহস্ত হয়ে যান! তাকে বাদ দেয়া হয় সাহিত্য সংগঠন থেকে। এই উচ্ছৃঙ্খল সময়টাতেই আগ্নেয়াস্ত্রের প্রেমে পড়েন তিনি, যা টিকে ছিল আমৃত্যু। এসব করতে গিয়ে তিনি একাধিকবার গ্রেফতার হন এবং জেলও খাটেন। একবার এক বড় ডাকাতির মামলায় আদালতে বিচারক তাকে ১০ বছর কারাদণ্ডের আদেশ দেন। তবে আগ্নেয়াস্ত্র চালনায় তার দক্ষতা এবং শারীরিক সক্ষমতা বিবেচনায় বিচারক তাকে একটি বিকল্পও দেন, সেটি হচ্ছে বিমানবাহিনী!
পুনরায় আর উচ্ছৃঙ্খল জীবনে ফিরে যাবেন না, এমন লিখিত দিয়ে জেল থেকে ছাড়া পান। আর যোগ দেন বিমানবাহিনীতে। প্রাথমিক প্রশিক্ষণ শেষে তাকে ফ্লোরিডার বিমানঘাঁটিতে পাঠিয়ে দেয়া হয় অধিকতর কঠোর প্রশিক্ষণের জন্য। কিন্তু, মাত্র দু বছরের মাথায় আচরণে সমস্যার জন্য তাকে ছাঁটাই করা হয়। তবে এই দু বছরে তার আচরণের যথেষ্ট সংশোধন হয়েছিল। আর কোনো কাজ না পেয়ে শেষে নিজের লেখালেখির মেধার উপর ভর করে সাংবাদিকতা শুরু করলেন। প্রথমেই একটি স্থানীয় পত্রিকায় কাজ শুরু করেন। ভালো বেতনের আশায় মাঝে কয়েক মাস থেকেছেন পোর্ত রিকোতে, কাজ করেছেন একটি খেলাধুলা বিষয়ক পত্রিকায়। তবে আশানুরূপ আয় না করতে পেরে নিজ শহর কেন্টাকিতে ফিরে আসেন। আর ছোট বেতনের চাকরির উপর ভরসা করে বসে না থেকে বাড়িতে লেখালেখি চালিয়ে যেতে লাগলেন। একটু একটু করে লিখতে লিখতে সম্পন্ন করেছিলেন নিজের কৈশোর জীবনী, ‘দ রাম ডায়েরি’, যা কিনা অন্তত ১০ জন সম্পাদকের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল!
৬০’র দশক থেকেই পুরোপুরি সাংবাদিকতায় নিয়োজিত হন থম্পসন। তবে নিজের অতীত ‘উচ্ছৃঙ্খলা’র ভূত মাঝে মাঝেই মাথায় চেপে বসতো তার, যে কারণে কিছুদিন পর পরই চাকরি হারাতে হয়েছে তাকে। কিন্তু ফেলে আসা উদ্দাম সে জীবনের সুফল তিনি এসময় পেতে শুরু করলেন। তিনি হয়ে ওঠেন একজন ভয়ডরহীন সাংবাদিক, যার কলম থেকে স্ফুলিঙ্গ বের হতো। বিভিন্ন পত্রিকায় কাজ করতে করতে একবার যোগ দিলেন ‘দ্য নেশন’ পত্রিকায়। এই পত্রিকার সম্পাদক তার ভবঘুরে জীবনের কথা জানতে পেরে তাকে একটি বিশেষ অ্যাসাইনমেন্ট দেন। সেটি তার জীবন পাল্টে দিয়েছিল, তাকে দিয়েছিল সাংবাদিক হিসেবে সুখ্যাতি। তার অ্যাসাইনমেন্ট ছিল ‘হেলস এঞ্জেলস মোটরসাইকেল ক্লাব’ এর উপর অনুসন্ধানমূলক রিপোর্ট তৈরি করা।
আমেরিকায় সে সময় ‘কাউন্টার কালচার’ বা বিপরীত সংস্কৃতির জৌলুস চলছে। কাউন্টার কালচার বলতে সে সময়কার মার্কিন সমাজে প্রচলিত রীতিনীতি থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারার সংস্কৃতিকে বোঝানো হয়, যা মার্কিন ঐতিহ্য ও প্রথাগত ভাবধারার সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। এরূপ কাউন্টার কালচারের একটি ছিল গ্যাং প্রথা, যা নিয়ে মার্কিনরা যারপরনাই বিরক্ত ছিল। পাড়া মহল্লায় একটি মোটরসাইকেল গ্যাং থাকা মানে মহল্লাবাসীর ঘুম হারাম। দুই গ্যাংয়ের মোটরসাইকেল নিয়ে শোডাউন আর মারামারি ছিল প্রাত্যহিক ব্যাপার। কেউ মোটরসাইকেলের মালিক হলেই চাইতো একটি গ্যাংয়ের সদস্য হয়ে যেতে, যা হলেই তার যানটি নিরাপদ থাকবে! এরকমই একটি উদ্ভট সময়ে, উদ্ভট সমাজের একটি উদ্ভট এবং প্রভাবশালী গ্যাং হেলস এঞ্জেলস ক্লাব নিয়ে অ্যাসাইনমেন্ট পেয়ে খুশিতে আটখানা হয়ে গেলেন থম্পসন!
হলিউডের দুর্ধর্ষ সব গোয়েন্দা ছবির মতো পুরোপুরি নিজের ইতিহাস আর বর্তমান পাল্টে ফেলে হেলস এঞ্জেলস গ্যাংয়ে যোগ দেন থম্পসন। খুব কম সময়েই নিজের উদ্দাম বেপরোয়া চরিত্রের জন্য ক্লাবের সবচেয়ে জনপ্রিয় সদস্যে পরিণত হন এবং বের করে আনেন সব খুঁটিনাটি তথ্য। প্রায় এক বছর হেলস এঞ্জেলস গ্যাংয়ের সাথে মিশে পুরোদস্তর গ্যাং সদস্য বনে যাওয়া থম্পসন অবশেষে প্রকাশ করলেন তার কয়েক পর্বের দীর্ঘ এক রিপোর্ট, যে রিপোর্ট হৈচৈ ফেলে দেয় পুরো আমেরিকায়। প্রশাসনের টনক নড়ে, সরকারের চৈতন্য হয় যে গ্যাং সংস্কৃতি কত ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। রিপোর্ট প্রকাশের পর অন্তত তিনবার থম্পসনকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। রিপোর্টটি এত চমৎকার ছিল যে তিনি এর উপর একটি বই লেখার প্রস্তাব পান। থম্পসন এ প্রস্তাবে সানন্দে রাজি হয়ে যান। বিগত এক বছরের তরতাজা স্মৃতি থেকে লিখে ফেলেন ‘হেলস এঞ্জেলস: দ্য স্ট্রেঞ্জ অ্যান্ড টেরিবল সাগা অব দ্য আউটল মোটরসাইকেল গ্যাংস’। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে উত্তম পুরুষে লেখা বইটির এক বছরেই চারটি সংস্করণ বিক্রি হয়! বইটি তাকে দেশব্যাপী লেখক এবং শক্তিমান সাংবাদিক হিসেবে প্রতিষ্ঠা এনে দেয়।
১৯৬৩ সালে বান্ধবী স্যান্ডি কনক্লিনকে বিয়ে করেন থম্পসন। তাদের ঘরে এক ছেলের জন্ম হয়। হেলস এঞ্জেলস নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশের পরই পরিবারের নিরাপত্তা রক্ষায় তিনি কলোরাডো চলে যান। সেখানে একটি বাড়ি কেনেন, যার নাম দেন ‘আউলস ক্রিক’। তবে তার সাংবাদিকতা জীবনের অধিকাংশ সময়ই কেটেছে যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী ভ্রমণের মধ্য দিয়ে। পত্রিকা থেকে শুরু করে সাপ্তাহিক, পাক্ষিক বা মাসিক ম্যাগাজিনের জন্য দুঃসাহসিক অ্যাসাইনমেন্ট হাতে নিয়েছেন হাসিমুখে এবং পালন করেছেন সফলভাবে। হিপি আন্দোলন, ভিয়েতনাম যুদ্ধ আর ১৯৬৮ এর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মতো বিষয়গুলো তিনি যেভাবে তার রিপোর্টে তুলে আনতেন, তা ছিল সমসাময়িক সাংবাদিকতায় একেবারে ভিন্ন এবং অভূতপূর্ব।
থম্পসন তার লেখনীর মধ্য দিয়ে সাংবাদিকতার নতুন ধারা উন্মোচন করেন, যার নাম দেয়া হয় ‘গঞ্জো জার্নালিজম’। মূলত গঞ্জো সাংবাদিকতা বলতে বোঝায় সাংবাদিকতার সে নীতি, যা নিজেকে বস্তুনিষ্ঠ বলে দাবি করে না, বরং সাংবাদিক উত্তম পুরুষে নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনার মাধ্যমে রিপোর্ট করেন। ১৯৭০ সালে স্কানলেন’স মান্থলিতে প্রকাশিত ‘কেন্টাকি ডার্বি’ নিয়ে তার লেখাটিকে বলা হয় গঞ্জো সাংবাদিকতার সূচনা। কিন্তু সাংবাদিকতায় এত সাফল্যেও তিনি যেন ঠিক সন্তুষ্ট হতে পারছিলেন না। কলোরাডোর আসপেন নগরীর শেরিফ নির্বাচনে। প্রতিদ্বন্দ্বীর সাথে সামান্য ব্যবধানে হেরে গেলেও তার নির্বাচনী প্রচারণা হয়ে ওঠে আরেকটি জনপ্রিয় গল্প। রোলিং স্টোন পত্রিকায় তার নির্বাচনী প্রচারণার আদ্যোপান্ত প্রকাশিত হয় ‘ব্যাটেল অব আসপেন’ শিরোনামে।
১৯৭২ সালে লাস ভেগাসে ৪০০ মোটরসাইকেলের এক বিশাল প্রতিযোগিতা নিয়ে রিপোর্ট করতে গিয়ে তার অভিজ্ঞতা নিয়ে লিখে ফেলেন তার ক্যারিয়ারের অন্যতম বিখ্যাত বই, ‘ফিয়ার অ্যান্ড লোদিং ইন লাস ভেগাস: আ স্যাভেজ জার্নি টু দ্য হার্ট অব দ্য আমেরিকান ড্রিম’। বইটি সাহিত্যগুণে এবং ব্যবসায়িক, উভয় দিক থেকেই সাফল্য লাভ করে। এই বইয়ের গল্প নিয়ে হলিউড পরিচালক টেরি গিলিয়াম তৈরি করেন বিখ্যাত সিনেমা ‘ফিয়ার অ্যান্ড লোদিং’, যার মূল ভূমিকায় অভিনয় করেন থম্পসনের একনিষ্ঠ ভক্ত হলিউড অভিনেতা জনি ডেপ। এই সিনেমার পরই জনি ডেপের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে থম্পসনের। ২০১১ সালে থম্পসনের লেখা আরো একটি বইয়ের গল্পে অভিনয় করেন জনি ডেপ। বইটির নাম কি জনেন? একাধিকবার সম্পাদকদের কাছে প্রত্যাখ্যাত হওয়া ‘দ্য রাম ডায়েরি’!
মার্কিং প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিচার্ড নিক্সন আর জর্জ ম্যাকগোভারের নির্বাচনী দ্বৈরথ নিয়ে সংবাদ তৈরি করাই ছিল থম্পসনের সাংবাদিকতা জীবনের শেষ সফল অধ্যায়। এরপর থেকেই তিনি আবারো হারিয়ে যেতে লাগলেন। মাদকদ্রব্যের প্রতি ঘুমন্ত প্রেমটা পুনরায় জেগে ওঠে। ক্রমেই উচ্ছৃঙ্খল জীবনের দিকে পা বাড়ান তিনি। বড় বড় পত্রিকাগুলোও তার উপর আস্থা হারিয়ে ফেলতে শুরু করে। ১৯৮০ সালে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে তাকে ডিভোর্স দেন তার স্ত্রী। থম্পসন আনিতাকে বিয়ে করেন। তবে এসময় নিজস্ব লেখালেখি ঠিকই চালিয়ে নেন থম্পসন। সিরিজ আকারে প্রকাশিত হয় ‘দ্য গঞ্জো পেপারস’ এবং ‘কিংডম অব ফিয়ার’।
নতুন শতাব্দীতে পা রেখেই শারীরিক এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে শুরু করেন থম্পসন। অনিয়ন্ত্রিত জীবনধারার ফল ভুগতে শুরু করে তার শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো। নানারকম রোগব্যাধি বাসা বাঁধে শরীরে। তিনি হয়ে পড়েন মানসিক বিকারগ্রস্ত। ক্রমাগত বাড়তে থাকে অবসাদ আর জীবন নিয়ে অর্থহীন তিক্ততায় ক্লান্ত হয়ে নিজ হাতে জীবনের ইতি টানেন হান্টার এস থম্পসন। ২০০৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি নিজ বাড়ি আউল’স ক্রিকে নিজের রিভলবার দিয়ে মাথায় গুলি করেন এই খ্যাতিমান সাংবাদিক এবং লেখক।
ফিচার ছবি: fanpop.com