২৪শে সেপ্টেম্বর, ৮৬৭ সাল। বাইজ্যান্টাইন সাম্রাজ্য সাক্ষী হলো নয়া এক আখ্যানের। উত্থান ঘটলো এক নতুন রাজবংশের। প্রতিষ্ঠাতার আদি আবাসের কথা ভেবে তার নাম পরিচিত মেসিডোনিয়ান বংশ নামে। সাম্রাজ্যের ইতিহাসে অন্যতম দীর্ঘস্থায়ী এই বংশ টিকেছিল ১০৫৬ সাল অব্দি।
এই বংশের বিশেষত্ব অন্য জায়গায়। প্রথমত, রূপকথার নায়কের মতো আকস্মিক আগমন, যা সমকালীনরা ধারণাও করতে পারেনি। দ্বিতীয়ত, এর প্রতিষ্ঠাতা একজন কৃষক কী করে যুগের শ্রেষ্ঠতম ক্ষমতাধর ব্যক্তিতে পরিণত হলেন? বিস্ময়ের হলেও সেটাই সম্ভব করেছিলেন বাসিল দ্য ফার্স্ট।
কবে কখন কোথায় বাসিলের জন্ম, তা নিয়ে মতবিরোধের কমতি নেই। কেউ বলে ৮১২ খ্রিস্টাব্দ, কারো মতে ৮৩০। কেউ দাবি করে, তার জন্ম আর্মেনিয়ায় আবার কারো অভিমত থ্রেসে। কিন্তু সবশেষে একটা কথা সত্য, জীবনের উল্লেখযোগ্য সময় তিনি কাটিয়েছেন মেসিডোনিয়ায়। আর আর্মেনীয় ছিল তার প্রথম ও প্রধান ভাষা।
সপ্তম কনস্টানটাইন ক্ষমতায় থাকাকালে পিতামহ বাসিলের জীবনী সংকলন করা হয়। অনেকটা অতিরঞ্জিত হলেও সেখানে দুটি দাবি স্পষ্ট। প্রথমত বাসিলের ক্ষমতায় আরোহন ঈশ্বর কর্তৃক মনোনীত। দ্বিতীয়ত কনস্টানটাইন দ্য গ্রেট এবং আর্মেনিয়ান রাজা টাইরিডেটেস বাসিলের পূর্বপুরুষ। সেই সাথে আছে স্বর্গীয় কণ্ঠে বাসিলের ক্ষমতাপ্রাপ্তির ভবিষ্যদ্বাণী। পূর্ববর্তী আমোরিয়ান বংশের শেষ সম্রাট তৃতীয় মাইকেলের উদ্দেশ্যে তার মা থিওডোরার বাসিল বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ। সব মিলিয়ে বাসিল সম্পর্কে প্রাপ্ত তথ্য ধোঁয়াশা এবং উপকথায় মাখামাখি হয়ে আছে। কনস্টান্টিনোপলে তার আগমন নিয়ে গড়ে উঠেছে চাঞ্চল্যকর কিংবদন্তী ।
“রবিবার। পশ্চিমের আকাশে ডুবে যাচ্ছে সূর্য। একজন অপরিচিত গরীব লোক পুটলি নিয়ে হাজির হলো স্বর্ণতোরণের সামনে। ঘুমানোর জন্য শুয়ে পড়লো পার্শ্বস্থ সেন্ট ডায়োমেড চার্চের বারান্দায়। এদিকে চার্চের দায়িত্বে থাকা নিকোলাস রাতে অদৃশ্য আওয়াজ শুনতে পেলেন। ‘উঠো, বাসিলিয়াসকে মন্দিরের ভেতরে নিয়ে আসো’। নিকোলাস উঠে বাইরে গেলেন। কিন্তু একটা দরিদ্র ঘুমন্ত লোক ছাড়া আর কাউকে চোখে পড়লো না। সুতরাং ফিরে এসে শুয়ে পড়লেন আগের মতো। কিছুক্ষণ পর যথারীতি আবার শোনা গেলো কণ্ঠটি। এভাবে তৃতীয়বারের সময় কেউ যেন খোঁচা দিলো তরবারি দিয়ে। আর বললো- ‘বাইরে যাও আর শুয়ে থাকা ব্যক্তিকে ভেতরে নিয়ে আসো’। নির্দেশ পালন করলেন নিকোলাস… এবং বাসিলকে গ্রহণ করলেন নিজের ভাই হিসেবে”। (John Bagnell Bury, Page: 166)
সম্ভাবনাময় তরুণের আখ্যান
বাসিলের সিংহাসন লাভের পেছনে অলৌকিক কোনো শক্তি ছিল কি না জানা নেই। তবে চার্চের সেই পুরোহিত নিকোলাস যে বড় ভূমিকা রেখেছে- এটা সত্য। নিকোলাসই বাসিলকে পরিচয় করিয়ে দেয় থিওফিলিটজেসের সাথে। ভদ্রলোক ছিলেন অভিজাত সমাজে সমাদৃত ডাক্তার।
সম্ভাবনাময় তরুণ হিসেবে রাজধানীতে আসেন বাসিল। যোগ দেন বিশেষ অমাত্য এবং সম্রাজ্ঞী থিওডোরার আত্মীয়ের সহিস রূপে। তারপর একসাথে ভ্রমণ করেন পেলোপনেশিয়ার গ্রিক উপদ্বীপে। সেখানে সাক্ষাৎ ঘটে সম্ভ্রান্ত নারী ড্যানেলিসের সাথে। যেন ভাগ্য পরিবর্তনের সিঁড়ি হয়ে সামনে এলেন এই বিধবা ভদ্রমহিলা। ড্যানেলিসই তাকে দাস, স্বর্ণ এবং অন্যান্য উপঢৌকন প্রদান করেন। সাহায্য করেন সম্পদশালী হতে। অনেকটা বিনিময় হিসেবেই বিধবার ছেলে জনকে তিনি তার সাথে রাজধানীতে নিয়ে আসেন। পরবর্তী জীবনে ড্যানেলিসের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় থাকে। বিশেষ করে ক্ষমতায় আসার পর জনকে রাজকীয় গেরস্থালির উচু পদে অধিষ্ঠিত করা হয়। আর বিধবাকে দেয়া হয় রাজমাতার সম্মান। সে যা-ই হোক, এ কথা স্পষ্ট যে, বাসিলের ব্যক্তিত্ব তার আশেপাশের মানুষজনকে আকর্ষণ ও সম্মোহিত করতো।
রাজসভায় প্রবেশ
কনস্টান্টিনোপলে এসে বাসিল পুনরায় মিলিত হন থিওফিলিটজেসের সাথে। হাজির হন এক মল্লযুদ্ধের প্রতিযোগিতায়। যদিও তিনি তাতে প্রতিযোগী ছিলেন না। তারপরেও ঐদিনের চ্যাম্পিয়ন তাকে লড়তে আহবান করে। বাসিল শুধু আহবানে সাড়াই দিলেন না। প্রথমে আছাড় দিলেন সেই বুলগেরিয়ান পালোয়ানকে। তারপর পিষলেন খড়ের আঁটির মতো। সেই দিন থেকেই বাসিলের সুখ্যাতি ছড়াতে শুরু করল শহরময়।
খবরটি সম্রাট তৃতীয় মাইকেলের কাছে পৌঁছাতে দেরি হলো না। এদিকে সম্রাটের তেজি ঘোড়াটাকে বশে আনা যাচ্ছিল না কোনোমতেই। বাসিল সফলভাবে বশে এনে নিজের ভাগ্যকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিলেন। মাইকেল তাকে নিজের কাজে নিযুক্ত করলেন প্রধান প্রহরী হিসেবে। বিশ্বস্ততা ও আনুগত্যের কারণে দ্রুত পদোন্নতি পেতে লাগলেন বাসিল। আনুগত্যের নিদর্শন হিসেবে নিজের স্ত্রীকে তালাক দিয়ে সম্রাটের উপপত্নী ইউডোকিয়াকে বিয়ে করলেন। আসলে ইউডোকিয়া ছিল মাইকেলের প্রেমিকা। মায়ের চাপে অন্য মেয়েকে বিয়ে করার পরে ইউডোকিয়াকে বিশ্বস্ত কারো হাতে তুলে দেবার প্রয়োজন ছিল। বাসিল মূলত সেই বিশ্বস্ত ব্যক্তি। অনেকে মনে করেন, এই স্ত্রীর ঘরে ৮৬৬ সালে জন্ম নেয়া লিও মূলত মাইকেলের সন্তান।
সহসম্রাট বাসিল
বাসিলের পরবর্তী সিদ্ধান্ত কি মাইকেলের প্রতি আনুগত্যের কারণে নাকি নিজের উচ্চাকাঙ্ক্ষার কারণে, তা স্পষ্ট না। একটি গুজব শুনেছিলেন তিনি। অথবা শুরু করেছিলেন। ‘বাইজ্যান্টাইন সাম্রাজ্যের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি সিজার বারদাস মাইকেলকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র করছে’। মাইকেলকে বিষয়টি অবগত করা হলেও তিনি বিশ্বাস করলেন না। ফলে সিমবাটিয়োসের মতো কয়েকজন তরুণকে সাথে নিয়ে মাইকেলকে বারদাসের নাশকতা সম্পর্কে বোঝালেন। এবার কাজ হলো। সম্রাটের সামনেই নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয় বারদাসকে। ঘটনাটি ৮৬৬ সালের এপ্রিল মাসের।
রাজদ্রোহী থেকে উদ্ধার পাবার কৃতজ্ঞতা স্বরূপ কার্যত সন্তানহীন মাইকেল বাসিলকে নিজের পুত্র বলে গ্রহণ করলেন। সেই সাথে নিযুক্ত করলেন নিজের পরামর্শক রূপে। তারপর রহস্যজনকভাবে ২৬শে মে, ৮৬৭ সালে মাইকেল বাসিলকে রাজমুকুটে অভিষিক্ত করলেন। প্রজাদের উদ্দেশ্যে তার বাণী ছিল,
সিজার বারদাস ষড়যন্ত্র করেছিল আমাকে হত্যা করার জন্য। প্ররোচিত করেছে, যেন এই শহর ছেড়ে চলে যাই। যদি বাসিল ও সিমবাটিয়োসের দ্বারা অবগত না হতাম, তাহলে আজ জীবিত থাকতাম না। সিজার তার নিজের দোষেই মারা গেছে। আমার ইচ্ছা, যেহেতু বাসিল আমার প্রতি বিশ্বস্ত এবং রক্ষাকর্তা হিসেবে আবির্ভূত, সেহেতু তারই আমার সাম্রাজ্যের অভিভাবক হওয়া উচিৎ। ঘোষণা করা উচিৎ সহসম্রাট হিসাবে। (John Bagnell Bury, Page: 172-73)
বন্ধুত্বের পরিণাম
মাইকেলের কথায় সত্যতা ছিল। কিন্তু এই ঘোষণার পরিণতি ছিল ভয়াবহ। দিন দিন সর্বেসর্বা হয়ে উঠতে লাগলো বাসিল। সিংহাসনে মাইকেল থাকলেও কার্যক্রম অনেকটা বাসিলের হাতে চলে গেলো। মাইকেল ঠাহর করতে পারছিলেন, বাসিলকে সহজে বাগানো যাবে না। তাই অন্য কাউকে বাসিলের পদে মনোনীত করার কথা ভাবলেন। একরাতে মদ্যপ অবস্থায় তো মুখ ফসকে বলেই ফেললেন।
আমি তোমাকে বাসিলিয়াস বা সহসম্রাট বানিয়েছি, যদি চাই আমার কি অন্য কাউকে বাসিলিয়াস বানানোর ক্ষমতা নেই?
মোটামুটি এই ঘটনাই বাসিলকে নড়িয়ে দেয়। ২৪শে সেপ্টেম্বর, ৮৬৭ সালের রাতে মাইকেলকে দাওয়াত দেওয়া হলো। সম্রাট যখন মদে বুঁদ, এক ফাঁকে বাইরে গেল বাসিল। তার সাথে ষড়যন্ত্রকারী আটজনকে নিয়ে এলো। হত্যা করার আগে দুই হাত কেটে ফেলা হলো মাইকেলের। বাসিলের পথ এবার উন্মুক্ত।
সম্রাট বাসিল দ্য ফার্স্ট
ক্ষমতায় গ্রহণের প্রথম বছর বাসিল ইগনাশিয়াসকে কনস্টান্টিনোপলের প্যাট্রিয়ার্ক হিসেবে পুনর্বহাল করলেন। ফলে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সাথে শাসকের সম্পর্কের উন্নতি ঘটলো। মাইকেলের আমলে যা খারাপ যাচ্ছিলো। খুব সম্ভবত বাসিল পশ্চিমে শাসকদের পোপ যেভাবে বাহিনী দ্বারা সাহায্য করেছিল, তা থেকে প্রভাবিত হয়েছিলেন। ৮৭৭ সালে ইগনাশিয়াসের মৃত্যু হলে ফোটিয়াসকে দায়িত্ব দেয়া হয়। এ সময় গ্রিক ও রোমান জ্ঞানচর্চা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
ফ্রাঙ্কদের সহযোগিতায় বাসিল ইতালি অধিকার করেন। নৌবাহিনীর দিকে গুরুত্ব দিতে থাকেন। এদের মধ্যে নাইসেটাস ওরিফাস নামের এডমিরালের কথা না বললেই নয়। ক্রিটের জলদস্যুদের উপর অভাবনীয় সাফল্য তাকে বিখ্যাত করেছে। সাইপ্রাস, গ্রিস এবং ডালমাটিয়ায় আরবদের সাথে দ্বন্দ্বেও তার সফলতা উল্লেখযোগ্য। বাসিলের সৈন্যরা পলিনেশিয়ানদের সরিয়ে এশিয়া মাইনরে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে।
শাসন ব্যবস্থাকে বাসিল ঢেলে সাজিয়েছিলেন। বিশেষত দরিদ্রদের ভাগ্য উন্নয়নে। কনস্টান্টিনোপলকে তিনি পরিণত করেন শিল্পচর্চার কেন্দ্র হিসেবে। রাজকীয় জমিতে ৮৮০ সালে নিয়া এক্লেসিয়া বা নতুন চার্চ প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব তার। তার চেয়েও ব্যয়বহুল বাসিলের নতুন প্রাসাদ- কাইনুরগিয়ন। এছাড়া ছিল রাজধানী জুড়ে বিভিন্ন ভবন, নির্মাণাদি স্থাপন করা হয়েছিল সরকারি ও জনগনের প্রয়োজনে। দুঃখজনকভাবে তার কোনোটিই আজ টিকে নেই।
বাসিলের অন্যতম দূরদর্শিতার প্রমাণ যুগান্তকারী আইন প্রণয়নে। জাস্টিনিয়ানের (৫২৭-৬৫) সময়কালের প্রচলিত আইনগুলো অনেকটাই বিশৃঙ্খল ছিল। সেগুলোকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করার সাথে সাথে নতুন বহু আইন যোগ করা হলো। প্রকৃতপক্ষে জাস্টিনিয়ানের দ্বারাই প্রভাবিত ছিল তার ব্যবস্থা। সন্নিবেশিত আইনগুলো ছিল গ্রিক ভাষায় এবং তা পরিচিত হতো বাসিলিকা নামে। বাসিলিকাকে দুটি সংক্ষিপ্ত বইতে রূপান্তর করা হয়েছিল- প্রোক্যাইরন এবং ইপানাগগো। পৃথকভাবে সাজানো হয়েছিল বিচারক এবং আইনবিদদের জন্য।
বাসিল এবং লিও
বাসিলের দুই সন্তান। কনস্টানটাইন তার মধ্যে বড়। প্রথম স্ত্রীর গর্ভে তার জন্ম। দ্বিতীয় সন্তান লিও পরবর্তীতে বিয়ে করা ইউডোকিয়ার কোলে জন্ম নেয়। তখনকার দিনে সম্রাটদের মধ্যে প্রথা হিসেবে দাঁড়িয়েছিলো তাদের পুত্র কিংবা কাউকে উত্তরাধিকার নির্বাচিত করে সহ-সম্রাট নিযুক্ত করা। বাসিল একটু অন্য পথে হাঁটলেন। উভয় পুত্রকে সহ-সম্রাট নিযুক্ত করলেন। কনস্টানটাইনকে ৮৬৯ সালে এবং লিওকে ৮৭০ সালে। দুর্ভাগ্যক্রমে কনস্টানটাইন ৮৭৯ সালে অল্প বয়সেই অজ্ঞাত কারণে মৃত্যুবরণ করে।
এই ঘটনা সম্রাটকে দারুণভাবে আহত করে। এমনকি সামাজিক জীবন থেকেও নিজেকে গুটিয়ে নিতে থাকেন। বাসিলের দ্বিতীয় উত্তরাধিকার লিওর সাথে সম্পর্কটা বিড়ম্বনাময়। পিতার পছন্দ অনুযায়ী লিও বাধ্য হয় থিওফ্যানোকে বিয়ে করতে। আর নিজে বেছে উপপত্নী রাখেন জো-জোতসিনাকে। বাসিল উপপত্নীকে মেনে নিতে পারেননি। সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য মেয়েটিকে নির্বাসনে দিলেন আর পুত্রকে করলেন গৃহবন্দী। প্রহার, বন্দিত্ব কিংবা অন্ধত্বের হুমকি কোনোটাই কাজে দিলো না। উপরন্তু প্রচণ্ড বিরূপ মনোভাব নিয়ে বেড়ে উঠছিলেন লিও, যা তার পিতার জন্য ভালো পরিণাম বয়ে আনেনি।
মৃত্যু এবং তারপর
বাসিল মারা যান ৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে। প্রাপ্ত তথ্য মতে, মৃত্যুর কারণ শিকারে থাকাকালীন দুর্ঘটনা। তখন তার বয়স ৭৪। এক হরিণের পেছনে বহুদূর চলে যান এবং আঘাতপ্রাপ্ত হন। অবশেষে জো-জোতসিনার পিতা তাকে উদ্ধার করে। ভাগ্যের পরিহাসে ক্ষমতায় আরোহন করে লিও। মৃত মাইকেলের পক্ষে নিয়তির প্রতিশোধও বলা যেতে পারে একে। যে মাইকেলকে হত্যা করে ক্ষমতায় আসা বাসিলের। আর তার উত্তরাধিকার হলো লিও। মাইকেলের সন্তান বলেই যার বেশি পরিচিতি। ক্ষমতায় বসে ১৯ বছর বয়সের সম্রাট লিওর প্রথম কাজ ছিলো মাইকেলের লাশকে পুনরায় উঠিয়ে রাজকীয় মর্যাদায় সমাহিত করা।
সে যা-ই হোক, বাসিলের উত্তরাধিকারীরা মেসিডোনিয়ান বলে খ্যাত হয়। তারাও চেষ্টা করে রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতার অরুচিকর প্রচার অপসারণে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া। বাসিলের নাতি সম্রাট সপ্তম কনস্টানটাইন (৯১৩-৯৫৯ খ্রি.) বিশেষভাবে মনোযোগী ছিলেন। তার সফল প্রমাণ Vita Basilii নামে বাসিলের জীবন ও কর্ম নিয়ে রচনা। ঐতিহাসিক উৎস হিসেবে রচনাটি গৃহীত। বর্তমান পর্যন্ত ইতিহাসে উৎসাহী পাঠকদের অভিভূত করে গ্রন্থটি। মুখোমুখি করায় এমন এক ব্যক্তির সাথে, যিনি ছিলেন ইতিহাসের অন্যতম প্রভাবশালী শাসকদের একজন। কৃষক হিসেবে জন্ম নিয়ে যিনি মৃত্যুবরণ করেছেন তৎকালীন জানা পৃথিবীর সবচেয়ে ক্ষমতাধর একচ্ছত্র নায়ক হিসেবে।