মাত্র ১৫ বছর বয়সেই বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিলেন। আর ২১ বছর বয়সে পা দেওয়ার আগেই হয়েছিলেন মিলিয়নিয়ার। এই অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি কখনো সেজেছেন কলেজের প্রফেসর, কখনো ডাক্তার, কখনো পাইলট, কখনো আইনজীবি, এবং অন্তত একবার স্বয়ং এফবিআই-এর গোয়েন্দা কর্মকর্তা!
তাকে নিয়ে নির্মিত হয়েছে হলিউড চলচ্চিত্রও। Catch Me If You Can (2002) নামের ঐ চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন স্টিভেন স্পিলবার্গ। এতে তার চরিত্রটি রূপায়ন করেছেন লিওনার্দো ডিক্যাপ্রিও। কিন্তু তার বাস্তব জীবনও চলচ্চিত্রের চেয়ে কোনো অংশে কম রোমাঞ্চকর ছিল না। তিনি হচ্ছেন ফ্র্যঙ্ক অ্যাবাগনেল, বিশ্বের অন্যতম সেরা প্রতারক থেকে এফবিআইর নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে যিনি প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজেকে।
ফ্র্যাঙ্ক উইলিয়াম অ্যাবাগনেল জুনিয়রের জন্ম ১৯৪৮ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। তার বয়স যখন ১২ বছর, তখন তার বাবা-মা পৃথকভাবে থাকতে শুরু করেন। যদিও তাদের পরিবার মোটামুটি স্বচ্ছল ছিল, তবুও সে সময় থেকেই ফ্র্যাঙ্ক দোকান থেকে টুকিটাকি জিনিস চুরি করতে শুরু করেন। কিন্তু প্রথম বড় আকারের প্রতারণার ঘটনাটি তিনি ঘটান তার বাবার সাথেই, মাত্র ১৫ বছর বয়সে।
ফ্র্যাঙ্কের বাবার একটি ক্রেডিট কার্ড ছিল, যেটি তিনি মাঝে মাঝে ফ্র্যাঙ্ককে ব্যবহার করতে দিতেন। ফ্র্যাঙ্ক নিজের ডেটিংয়ের খরচ জোগাড় করার জন্য সেই কার্ড ব্যবহার করে দোকান থেকে গাড়ির টায়ার, ব্যাটারিসহ বিভিন্ন পার্টস কিনে সেগুলো আবার ক্যাশ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দিতে শুরু করেন। ফ্র্যাঙ্কের এই প্রতারণা যখন ধরা খায়, ততদিনে তিনি বাবার কার্ড থেকে ৩,৪০০ ডলার খরচ করে ফেলেছেন, বর্তমান হিসেবে যার মূল্যমান প্রায় ২৮,০০০ ডলার!
এ ঘটনার পরপরই ফ্র্যাঙ্কের মা তাকে দুষ্টু ছেলেরদের জন্য নির্ধারিত স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। কিন্তু ফ্র্যাঙ্কের ১৬ বছর বয়সের সময় তার বাবা-মায়ের ডিভোর্স হয়ে গেলে তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে যান এবং ঘণ্টায় ১.৫ ডলারের বিনিময়ে কাজ করতে শুরু করেন। ফ্র্যাঙ্কের বিশ্বাস ছিল, তার বয়স কম বলেই তাকে কম মজুরি দেওয়া হচ্ছিল। ফলে ড্রাইভিং লাইসেন্স জালিয়াতি করে নিজের জন্মতারিখ ১০ বছর পিছিয়ে দিয়ে তিনি নিজেকে ২৬ বছর বয়সী পরিচয় দিয়ে বেশি মজুরি অর্জন করতে শুরু করেন।
মানুষের সরলতাকে ব্যবহার করে যেকোনো পরিস্থিকে প্রতারণার অনুকূলে নিয়ে আসার এক অদ্ভুত দক্ষতা ছিল তার। একবার তিনি লক্ষ্য করেন, বড় বড় গাড়ি ব্যবসায়ীরা এবং এয়ারলাইন্সের কর্মকর্তারা দিনশেষে তাদের অর্জিত ক্যাশ টাকা ব্যাগে ভরে এয়ারপোর্ট চত্বরে অবস্থিত একটি ড্রপ বক্সের ভেতর ফেলে দিয়ে যায়। সেটা দেখে তিনি এক অভিনব বুদ্ধি বের করেন।
দোকান থেকে সিকিউরিটি গার্ডের পোশাক কিনে এনে তিনি ড্রপ বক্সটির পাশে একটি সাইনবোর্ড স্থাপন করেন। সেখানে লেখা ছিল, “বক্সটি কাজ করছে না। আপনাদের টাকা পাশে দাঁড়ানো সিকিউরিটি গার্ডের কাছে জমা দিন।” ফ্র্যাঙ্ক অবাক হয়ে লক্ষ্য করেন, মানুষ সত্যিই সত্যিই তাদের টাকার ব্যাগ তার কাছে জমা দিয়ে যাচ্ছে। কেউ ভেবেও দেখছে না, ড্রপ বক্স আবার অচল থাকে কীভাবে!
শীঘ্রই ফ্র্যাঙ্ক জালিয়াতির নতুন নতুন পন্থা উদ্ভাবন করতে শুরু করেন। প্রথমে তিনি একাধিক ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলে সেগুলো থেকে চেক দিয়ে অতিরিক্ত টাকা উত্তোলন করতে শুরু করেন। এরপর তিনি অন্যান্য কাস্টমারদেরদের অসাবধানতাকে পুঁজি করে তাদের চেকে নিজের অ্যাকাউন্ট নম্বর বসিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেন। এরপর ধীরে ধীরে তিনি নিজেই জাল চেক তৈরি করা আয়ত্ত করতে থাকেন। তার নিজের হিসেবেই চেক জালিয়াতির মাধ্যমে তিনি মোট ২.৫ মিলিয়ন ডলার উপার্জন করেছিলেন।
জাল চেকের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ টাকা উত্তোলনের সময় যেন কেউ সন্দেহ না করে, সে জন্য ফ্র্যাঙ্ক সিদ্ধান্ত নেন তিনি পাইলটের বেশ ধারণ করবেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি প্যান অ্যাম এয়ারলাইন্সের এক পাইলটের আইডি এবং লাইসেন্স জাল করেন। এরপর তিনি প্রতিষ্ঠানটিতে ফোন করে দাবি করেন, তিনি তাদের একজন পাইলট, কিন্তু হোটেলে থাকার সময় তার ইউনিফর্মটি হারিয়ে গেছে। এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ সহজেই তার কথা বিশ্বাস করে এবং তাকে এক সেট ইউনিফর্ম প্রদান করে।
সে সময় পাইলটরা যেকোনো প্লেনে যাত্রী হিসেবে বিনা খরচে উড়তে পারত এবং যেকোনো হোটেলে বিনা খরচে থাকতে পারত। এই নিয়মের সুযোগ নিয়ে ফ্র্যাঙ্ক দুই বছরের মধ্যে ২৫০টি ফ্লাইটে করে সর্বমোট ১৬ লক্ষ কিলোমিটার আকাশপথ ভ্রমণ করেন। এ সময় তিনি নিজের উপর থেকে সন্দেহ দূর করানোর জন্য কিছু কলেজ ছাত্রীকে ভাড়া করেছিলেন। তাদের কাজ ছিল এয়ারলাইন্সের স্টুয়ার্ড সেজে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্মাদের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে রাখা, যেন ফ্র্যাঙ্ক প্রায় বিনা বাধায় প্লেনে চড়ে বসতে পারে।
যদিও ফ্র্যাঙ্ক যাত্রী হিসেবেই ভ্রমণ করতেন, তবুও প্লেনের পাইলটরা প্রায়ই ফ্র্যাঙ্ককে ককপিটে ডেকে নিত এবং তাকে প্লেন চালানোর প্রস্তাব দিত। একবার এক পাইলট ফ্র্যাঙ্কের হাতে প্লেন চালানোর ভার দিয়ে দিলে তিনি তাড়াতাড়ি প্লেনটিকে অটোপাইলট মোডে সেট করে দিয়েছিলেন। কারণ তার ভাষায়, প্লেন তো দূরের কথা, বাস্তবে তিনি ঘুড়িও চালাতে পারতেন না।
ফ্র্যাঙ্ক তার পাইলট জীবনের দুই বছরে সর্বমোট ২৬টি দেশে ভ্রমণ করেছিলেন। এসব দেশে স্বল্পকালীন অবস্থানের সময়ও তিনি চেক জালিয়াতিসহ বিভিন্ন প্রতারণামূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িয়ে পড়েছিলেন। ফলে পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে অনেক দেশ স্থানীয়ভাবে এবং ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল।
পাইলট হিসেবে সারা দেশে ভ্রমণ করার সময় আমেরিকার ৫০টি অঙ্গরাজ্যের প্রতিটিতে ফ্র্যাঙ্ক চেক জালিয়াতির কাজ অব্যাহত রাখেন। ফলে এসময় তিনি এফবিআইর নজরে পড়ে যান। বিপদ আসন্ন বুঝতে পেরে ফ্র্যাঙ্ক নিজের পাইলট পরিচয় ঝেড়ে ফেলে কিছুদিনের জন্য জর্জিয়াতে বসবাস করার সিদ্ধান্ত নেন। এসময় বাড়ি ভাড়া নেওয়ার ফর্ম পূরণ করতে গিয়ে তিনি পাইলট পরিচয়ের পরবির্তে নিজেকে ডাক্তার হিসেবে পরিচয় দিতে শুরু করেন।
শেষপর্যন্ত তিনি যে ভবনে ভাড়াটিয়া হিসেবে উঠেন, সেখানে একজন আসল ডাক্তারও বাস করতেন। তার অনুরোধে ফ্র্যাঙ্ক স্থানীয় একটি হাসপাতালে ইন্টার্ন ডাক্তারদের সুপারভাইজার হিসেবে নাইট শিফটে চাকরি নেন। ইন্টার্ন ডাক্তাররা অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য এবং নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণের জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সব কাজ নিজেরাই সম্পন্ন করত। ফলে চিকিৎসাবিজ্ঞান সম্পর্কে বিন্দুমাত্র ধারণা না থাকা সত্ত্বেও ১১ মাস পর্যন্ত ফ্র্যাঙ্ক হসপিটালের চাকরিটি ধরে রাখতে পেরেছিলেন।
প্রায় সময়ই তিনি ইন্টার্ন ডাক্তারদেরকে তাদের জ্ঞান যাচাই করার ছলে রোগীদের সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্ন করতেন এবং এরপর তাদের উত্তরের সাথে একমত পোষণ করে তাদের হাতে রোগীর ভার দিয়ে চলে যেতেন। কিন্তু শেষদিকে তার অজ্ঞতা এবং সিদ্ধান্তহীনতার কারণে যখন অক্সিজেনের অভাবে শ্বাসকষ্টে ভোগা এক শিশু প্রায় মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে যায়, তখন তিনি ডাক্তারির চাকরি থেকে ইস্তফা দেন।
এফবিআইর তদন্ত থেকে আত্মগোপন এবং পালিয়ে বেড়ানোর সময় ফ্র্যাঙ্ক সিদ্ধান্ত নেন, তিনি আইনের জগতে প্রবেশ করবেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন পাশের সার্টিফিকেট জাল করেন এবং সত্যি সত্যিই বার এক্সাম পাশ করে লুইজিয়ানার অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে চাকরি নেন। অবশ্য এই পরীক্ষায় পাশ করার জন্য তাকে ৭ মাস পড়াশোনা করতে হয়েছিল।
সে সময় লুইজিয়ানাতে একাধিকবার বার এক্সাম দেওয়া যেত। ফলে পরপর দুইবার পরীক্ষা দিয়ে ফেল করার পর ফ্র্যাঙ্ক মোটামুটি ধারণা পেয়েছিলেন পরীক্ষায় কী ধরনের প্রশ্ন আসে, এবং ঐ দুইবার তার কী কী ভুল হয়েছিল। সেই জ্ঞান কাজে লাগিয়ে তৃতীয়বার তিনি পাশ করেন। তবে চাকরি জীবনে সত্যি সত্যিই তার সাথে এক হার্ভার্ড গ্র্যাজুয়েটের পরিচয় হলে ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে ৭ মাস পরেই তিনি সেখান থেকেও পদত্যাগ করেন।
ফ্র্যাঙ্ক অ্যাবাগনেল তার প্রতারক জীবনের ৫ বছর সময়ের মধ্যে মোট আটটি ভিন্ন ভিন্ন নাম ব্যবহার করেছেন। এরমধ্যে তিনি ফ্র্যাঙ্ক অ্যাডামস ছদ্মনামের অধীনে বার্মিংহাম ইয়ং ইউনিভার্সিটিতে সমাজবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে এক সেমিস্টার শিক্ষকতাও করেছেন। চাকরিটি পাওয়ার জন্য তিনি কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার সার্টিফিকেট জাল করেছিলেন। তা সত্ত্বেও তার সুন্দর ব্যবহার এবং দক্ষতা দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের কাছে তিনি বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন।
বাড়ি থেকে পালানোর মাত্র ৬ বছরের মাথায়, ১৯৬৯ সালে মাত্র ২১ বছর বয়সে যাবতীয় অ্যাডভেঞ্চার শেষে এফবিআইর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার ঝুঁকি থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে ফ্র্যাঙ্ক অ্যাবাগনেল আমেরিকা ছেড়ে ফ্রান্সে পাড়ি জমান। কিন্তু ততদিনে আমেরিকা ছাড়াও বিশ্বের ২৬টি দেশে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল। তার এক প্রাক্তন প্রেমিকা যখন তাকে তাকে চিনে ফেলে, তখন ওয়ান্টেড পোস্টারের সাথে তার মিল খুঁজে পেয়ে পুলিশে খবর দিয়ে তাকে ধরিয়ে দেয়।
প্রথমে ফ্রান্সে এবং এরপর সুইডেনে ছয় মাস করে জেল খাটার পর সুইডিশ সরকার ফ্র্যাঙ্ককে আমেরিকার কাছে হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু আমেরিকায় জন এফ কেনেডি এয়ারপোর্টে নামার সময় রাতের অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে সাথের পুলিশদের চোখে ধুলো দিয়ে তিনি পালিয়ে যান। আমেরিকার নাগালের বাইরে ব্রাজিলে পালিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে প্রথমে তিনি ট্রেনে চড়ে কানাডা যান। কিন্তু কানাডার পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে আবার আমেরিকার কাছে হস্তান্তর করে।
১৯৭১ সালে ফ্র্যাঙ্ক যখন আটলান্টার ফেডারেল ডিটেনশন সেন্টারে বিচারের অপেক্ষায় বন্দী জীবন যাপন করছিলেন, তখন তিনি তার জীবনের শেষ প্রতারণার ঘটনাটি ঘটান। ভাগ্যক্রমে তাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া ইউএস মার্শাল অফিসারটি যথাযথভাবে তার বন্দীত্বের ফর্ম পূরণ করতে ভুলে গিয়েছিল। এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ফ্র্যাঙ্ক নিজেকেই বন্দীর ছদ্মবেশে থাকা এফবিআই কর্মকর্তা হিসেবে দাবি করেন।
সে সময় ছদ্মবেশী গোয়েন্দাদের রিপোর্টে জেলখানার কিছু কর্মকর্তার চাকরি চলে যাওয়ার কারণে সবাই ব্যাপারটি নিয়ে আতঙ্কিত ছিল। ফলে তারা ফ্র্যাঙ্ককে উন্নত মানের খাবার-দাবারসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিতে থাকে। ফ্র্যাঙ্ক প্রথম সুযোগেই তার এক পুরানো বান্ধবীর সাথে ফোনে যোগাযোগ করে জাল পরিচয়পত্র এবং অন্যান্য কাগজপত্র জোগাড় করে নিজের দাবির পক্ষে আরও জোরালো প্রমাণ হাজির করেন।
ফ্র্যাঙ্ক তার বান্ধবীর মাধ্যমে এক এফবিআই কর্মকর্তার বিজনেস কার্ডও জোগাড় করেন। সেটি দেখিয়ে তিনি প্রিজন গার্ডদেরকে বলেন, জরুরী কাজে তাকে কিছুক্ষণের জন্য জেল থেকে বেরিয়ে ঐ এফবিআই কর্মকর্তার সাথে সাক্ষাৎ করতে হবে। গার্ডরা সরল বিশ্বাসে তাকে বেরিয়ে যেতে দিলে তিনি আবারও ব্রাজিলে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কয়েক সপ্তাহ পর আবারও ধরা পড়ে যান। আটলান্টার একটি আদালতে বিচার শেষে তার ১২ বছরের কারাদণ্ড হয়।
১২ বছরের কারাদন্ড হলেও ফ্র্যাঙ্ক অ্যাবাগনেলকে জেল খাটতে হয়েছিল মাত্র ৪ বছর। তিনি ছিলেন তার সময়ের বিশ্বের অন্যতম সেরা চেক জালিয়াত এবং প্রতারক। ফলে এফবিআই তার এই মেধাকে অন্যান্য অপরাধীদেরকে ধরার কাজে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৭৪ সালে তাকে মুক্তি দেওয়া হয় এই শর্তে যে, তিনি প্রতি সপ্তাহে একবার করে হাজিরা দেবেন এবং এফবিআইকে তার অভিজ্ঞতার আলোকে জাল চেক শনাক্তকরণে এবং প্রতারক ও জালিয়াতদেরকে গ্রেপ্তার করার ব্যাপারে পরামর্শ দেবেন।
ফ্র্যাঙ্ক অ্যাবাগনেল বিভিন্ন ব্যাংকের নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে বেশ কিছুদিন চাকরি করেন। পরবর্তী জীবনে তিনি নিজেই Abagnale & Associates নামে একটি একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন। প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন কোম্পানিকে নিরাপত্তা বিষয়ে পরামর্শ প্রদান করেন। অন্তত ১৪,০০০ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান তার পরামর্শ অনুযায়ী নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
এফবিআইয়ের সাথে ফ্র্যাঙ্ক অ্যাবাগনেলের এখনো সুসম্পর্ক বজায় আছে। তিনি এখনো তাদের হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন এবং তাদের একাডেমিতে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। তিনি তার জীবনের অভিজ্ঞতা এবং নিরাপত্তা বিষয়ে একাধিক বইও লিখেছেন। নিরাপত্তা বিষয়ক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবেও তিনি বক্তব্য রাখেন। তার বর্তমান সম্পত্তি ১০ মিলিয়ন ডলার বলে ধারণা করা হয়। এই অর্থের পুরোটাই প্রতারণার জীবন থেকে দূরে সরে আসার পর বৈধভাবে অর্জিত অর্থ, যদিও এটি তিনি উপার্জন করেছেন অপরাধ জীবনের সময় অর্জিত অভিজ্ঞতাকে ভালো কাজে ব্যবহার করেই।