স্টিফেন উইলিয়াম হকিং- এক চিরস্মরণীয় প্রতিভার নাম। গ্যালিলিও গ্যালিলির মৃত্যুর ঠিক ৩০০ বছর পরে ১৯৪২ সালের ৮ জানুয়ারি বাবা ড. ফ্রাঙ্ক হকিং ও মা ইসোবেল হকিং-এর ঘরে জন্ম এই প্রতিভার। তিনি যখন পৃথিবীতে আসেন, তখন পৃথিবী দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের দামামায় ‘মৃতপ্রায়’। মহাযুদ্ধের ধ্বংসলীলার মাঝেই ধীরে ধীরে বড় হতে থাকেন তিনি। পাশাপাশি বড় হতে থাকে তার স্বপ্নগুলো। কিন্তু মাত্র ২১ বছর বয়সে আক্রান্ত হন বিরল মোটর নিউরন রোগে। চিকিৎসকেরা তার সময় বেঁধে দেন মাত্র বছর দুয়েক। কিন্তু বিধির লিখন যে ছিল ভিন্নতর। আর তাই সকল পূর্বানুমান ভুল প্রমাণ করে তিনি বেঁচে থাকেন পাঁচ দশকেরও বেশি সময়। দুনিয়াকে দিয়ে যান অসামান্য কিছু আবিষ্কার। হকিং বিকিরণ, কৃষ্ণগহ্বর, বিশ্বসৃষ্টিতত্ত্ব, বিগ ব্যাং থিওরিসহ আরো অনেক কাজের জন্য তিনি বিখ্যাত হয়ে আছেন।
বেঁচে থাকার প্রবল ইচ্ছাশক্তি, অসামান্য প্রতিভা আর ব্যক্তিগত জীবনের নানা ঘটনায় তিনি বিস্মিত করে গেছেন পুরো বিশ্বকে। কিন্তু মরণের কাছে একদিন তো নিজেকে সঁপে দিতেই হবে। তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যার এই মেধা ২০১৮ সালের ১৪ মার্চ ৭৬ বছর বয়সে মারা যান। চলুন ঘুরে আসি স্টিফেন হকিং এর স্মৃতির অ্যালবাম থেকে। দেখে আসি তার সংগ্রামমুখর ব্যস্ত জীবনের নানা দিক।
বাবা ড. ফ্রাঙ্ক হকিংয়ের কোলে ভবিষ্যৎ পৃথিবীর বিখ্যাত পদার্থবিদ স্টিফেন হকিং; ছবিসূত্রঃ SWNS
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ সমাপ্তি দিবসে খালা মুরিয়েলের সাথে ছোট্ট হকিং; ছবিসূত্রঃ SWNS
দুই বোন ম্যারি ও ফিলিপার সাথে ছোট্ট হকিং; ছবিসূত্রঃ SWNS
সেন্ট আলবানস স্কুল ছিল গোল চশমা পরা হকিংয়ের শৈশবের স্কুল; ছবিসূত্রঃ Michael Church
ঘোড়সওয়ার কিশোর হকিং; ছবিসূত্রঃ vintag.es
স্টিফেন হকিং ছিলেন নৌকাবাইচের কান্ডারী যাদের কাজ হল মূলত দাঁড় ধরে রাখা। ছবিটি ষাটের দশকের শুরুর দিকের। মূলত এ সময় থেকেই তার সমস্যাটি ধীরে ধীরে বাড়তে হতে থাকে; ছবিসূত্রঃ thevintagenews.com
স্টিফেন হকিংয়ের অক্সফোর্ড গ্রাজুয়েশনের সময়ের একটি ছবি; ছবিসূত্রঃ Rex Features
জীবনের এই হাসিমাখা সময়েই তার শরীরে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে এক বিরল রোগ; ছবিসূত্রঃ vintag.es
স্টিফেন হকিং ও তার প্রথম ভালোবাসা জেন ওয়াইল্ড। ছবিটি সেই সময়ের যখন থেকে হকিংয়ের বিরল শারীরিক সমস্যা মোটর নিউরন রোগ দানা বাঁধতে শুরু করে; ছবিসূত্রঃ metro.co.uk
ধরা পড়েছে বিরল প্রকৃতির এক স্নায়ুতান্ত্রিক রোগ। চিকিৎসকেরা বলে দিয়েছেন, মোটামুটি আর বছর দুয়েক থাকবে এই জীবন প্রদীপ। কিন্তু প্রেমের অমোঘ টান কি তা মানে! আর তাই ১৯৬৫ সালের জুলাই মাসে হকিং ও জেন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন; ছবিসূত্রঃ AFP
স্টিফেন হকিং ও জেনের তিন সন্তান- লাল জামা পরা লুসি, পিছনে দাঁড়ানো রবার্ট ও কোলে বসা ছোট্ট টিমোথি হকিং; ছবিসূত্রঃ youtube.com
দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হলেও স্টিফেনের ক্যামব্রিজের সংসার জীবন বেশ আনন্দময় ছিল। ছবিটি ১৯৭৭ সালের; ছবিসুত্রঃ Ian Berry/Magnum Photos
১৯৭৯ সালের অক্টোবরে নিউ জার্সির প্রিন্সটনে স্টিফেন হকিং; ছবিসূত্রঃ Santi Visalli/Getty Images
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রাজুয়েট অ্যাসিস্ট্যান্ট কলিন উইলিয়ামের সাথে আলাপরত হকিং; ছবিসূত্রঃ Boston Globe
বিগত শতাব্দীর আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে স্টিফেন হকিং; ছবিসূত্রঃ Gemma Levine/Getty Images
১৯৮৮ সালে Masters of the Universe টিভি শো-তে স্টিফেন হকিং; ছবিসূত্রঃ ITV/Rex/Shutterstock
১৯৮৯ সালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মাননা গ্রহণের জন্য স্ত্রী জেন ও ছোট ছেলে টিমোথিকে নিয়ে স্টিফেন হকিং; ছবিসুত্র; Frank Martin/the Guardian
১৯৯১ সালে পরিচালক এরল মরিস স্টিফেন হকিংয়ের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি তৈরি করেন- A Brief History of Time; ছবিসূত্রঃ theguardian.com
স্টিফেন হকিং অভিনয়ও করেছিলেন। ১৯৯৩ সালে Star Trek: The Next Generation-এর একটি এপিসোডে তিনি অতিথি শিল্পী হিসেবে এসেছিলেন। এখানে আলবার্ট আইনস্টাইন ও আইজ্যাক নিউটনের চরিত্রও ছিল; ছবিসূত্রঃ Julie Markes/AP
১৯৯৫ সালে প্রথম স্ত্রী জেনের সাথে সুদীর্ঘ ৩০ বছরের সংসার জীবনের ইতি টেনে স্টিফেন বিয়ে করেন তারই সেবিকা হিসেবে কাজ করা এলেইন মেসনকে; ছবিসূত্রঃ Tim Ockenden/PA
১৯৯৭ সালে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় হকিং ও বিল গেটস; ছবিসূত্রঃ Findlay Kember/AFP
১৯৯৮ সালে হোয়াইট হাউসে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সাথে; ছবিসূত্রঃ Tim Sloan/AFP
প্রিন্স ফিলিপের কাছ থেকে ব্রিটেনের রয়্যাল সোসাইটি অব আর্টস কর্তৃক প্রদত্ত আলবার্ট মেডেল গ্রহণ করছেন হকিং। তিনি পুরষ্কারটি ১৯৯৯ সালে পেয়েছিলেন; ছবিসূত্রঃ Sean Dempsey/PA Images
স্ট্রিং কনফারেন্সে যোগদানের জন্য ২০০১ সালে হকিং ভারতে গিয়েছিলেন; ছবিসূত্রঃ Wikimedia Commons
২০০১ সালে বার্লিনের ফ্রি বিশ্ববিদ্যালয়ে; ছবিসূত্রঃ Lambert/Ullstein Bild
যে সেন্ট আলবানস স্কুলে হকিং তার শৈশব কাটিয়েছেন সেখানে তিনি আবার হাজির হয়েছিলেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের উৎপত্তির ইতিহাস নিয়ে; ছবিসূত্রঃ Matthew Power/Rex
২০০৪ সালে বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচ অভিনয় করেন হকিং চরিত্রে। ফিলিপ মার্টিন পরিচালিত Hawking ছিল বিবিসির একটি টেলিভিশন ফিল্ম। এখানে হকিংয়ের জীবনের নানা দিক তুলে ধরা হয়েছিল; ছবিসূত্রঃ BBC
২০০৬ সালে চীনের টেম্পল অব হ্যাভেনে হকিং; ছবিসূত্রঃ China Photos/Getty Images
২০০৬ সালের শেষ দিকে বিবিসির এক সাক্ষাৎকারে স্টিফেন এক অপূর্ণ ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করেছিলেন- মহাকাশ ভ্রমণ। তার এই ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপ দিতে এগিয়ে আসে জিরো গ্র্যাভিটি কর্পোরেশন। ২০০৭ সালের ২৬ এপ্রিল স্টিফেন প্রথমবারের মতো মহাশূন্যের পরিবেশের অভিজ্ঞতা অর্জন করেন; ছবিসূত্রঃ AP
Why we should go into space-এ বক্তা জগদ্বিখ্যাত পদার্থবিদ স্টিফেন হকিং। নাসার পঞ্চাশতম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ২০০৮ সালের ২১ এপ্রিল তিনি হাজির হয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ে; ছবিসূত্রঃ NASA/Paul Alers
সমগ্র আফ্রিকায় বিজ্ঞান ও গণিতের প্রতিভাবানদের খুঁজে বের করে তাদের প্রতিভাকে বিকশিত করার এক প্রয়াসে ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়েছিলেন স্টিফেন হকিং। সেখানেই দেখা হয় দক্ষিণ আফ্রিকার মাদিবা নেলসন ম্যান্ডেলার সাথে; ছবিসূত্রঃ Alet van Huyssteen
২০০৮ সালে ভ্যাটিকানে তৎকালীন পোপ ষোড়শ বেনেডিক্টের সাথে স্টিফেন হকিং; ছবিসূত্রঃ Olycom SPA/Rex
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও স্টিফেন হকিং। পেছনে দাঁড়িয়ে ড. ইউনুস; ছবিসূত্রঃ Pete Souza/White House Photostream
১২ আগস্ট ২০০৯, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা স্টিফেন হকিংকে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরষ্কার প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম পরিয়ে দেওয়ার মুহূর্তে; ছবিসূত্রঃ Rex/Shutterstock
২০১২ লন্ডন প্যারা অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন স্টিফেন হকিং; ছবিসূত্রঃ Lefteris Pitarakis/AP
২০১৪ সালে হকিং একটি ফর্মুলা বের করেছিলেন যার সাহায্যে ইংল্যান্ড জাতীয় ফুটবল দলের ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাব্যতার ব্যাপারে ধারণা করা যায়। তিনি সফল পেনাল্টি শুটআউটেরও ফর্মুলা বের করেছিলেন! ছবিসূত্রঃ David Parry/PA Wire/AP
২৯ মে ২০১৪, ব্রিটেনের রানী সেন্ট জেমস প্রাসাদে দেখা করেন এই কিংবদন্তী পদার্থবিদের সাথে; ছবিসূত্রঃ Jonathan Brady/PA Wire/AP
পরিচালক জেমস মার্শের থিওরি অব এভরিথিং একটি আত্মজীবনীমূলক ‘প্রেমকাব্য’। ২০১৪ সালে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটি পদার্থবিদ স্টিফেন হকিংয়ের জীবনের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছিল। এই চলচ্চিত্রে হকিংয়ের চরিত্রে অভিনয় করা এডি রেডমাইনকে দেখা যাচ্ছে হকিংয়ের সাথে; ছবিসূত্রঃ Joanne Davidson/Silverhub/Rex
২০১৫ সালে ৮ ফেব্রুয়ারি লন্ডনের রয়্যাল অপেরা হাউসে ব্রিটিশ একাডেমি অব ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন আর্টস (বাফটা) পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে স্টিফেন হকিং। সঙ্গে তার সাবেক স্ত্রী জেন ও মেয়ে লুসি; ছবিসূত্রঃ Jonathan Short/AP
২০১৫ সালের ১৯ জুন নাসার তৎকালীন পরিচালক চার্লস বোল্ডেন ক্যামব্রিজে আসেন প্রফেসর হকিংয়ের সাথে দেখা করার জন্য; ছবিসূত্রঃ Michael Cockerham
২০১৭ সালে তাকে লন্ডন শহরের সর্বোচ্চ সম্মাননা Honorary Freedom of the City of London প্রদান করা হয়; ছবিসূত্রঃ Dominic Lipinski
নভেম্বর ২০১৭, পর্তুগালের লিসবনে ওয়েব সামিট ২০১৭-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তায় হকিং; ছবিসূত্রঃ Getty Images
ফিচার ইমেজ- Brian Randle