প্রথম পর্ব: মনে আছে এরশাদ শিকদারের কথা?
কুখ্যাত খুনী এরশাদ শিকদারের নির্মম পৈশাচিকতার কিছু কাহিনী তুলে ধরা হয়েছিল গত পর্বে। এই পর্বে থাকছে সেই নরপিশাচের শেষ পরিণতির কথা।
সারা দেশে আন্ডারওয়ার্ল্ডের গডফাদার হিসেবে এরশাদ শিকদারের নাম ছড়িয়ে পড়েছিল তার উত্থানের পর পরই। সেই প্রতিপত্তির নমুনা হিসেবে তার আস্তানা তৈরি হয় বিশাল এক বাড়িতে, নাম ‘স্বর্ণকমল’। খুলনার সে সময়ের সবচেয়ে বিলাসবহুল বাড়ি ছিল স্বর্ণকমল। ভারত থেকে নকশা করে আনা হয়েছিল এই বাড়ির। দেশ বিদেশের দামী দামী সব আসবাবপত্র দিয়ে সাজানো এই বাড়ির ভেতরেই লুকিয়ে থাকার জন্য ছিল বাংকার। এরশাদের ব্যক্তিগত সংগ্রহে ৭০টি অস্ত্র থাকার তথ্য পাওয়া গেলেও পরবর্তীতে পুলিশ সেই বাংকার থেকে উদ্ধার করেছিল কেবল একটা বিদেশী বন্দুক ও আর একটা পিস্তল।
যার জীবনের সমস্ত সম্পদ রক্ত দিয়ে তৈরি, যার উত্থানের প্রতিটি ধাপ মানুষের রক্ত দিয়ে গড়া, তার আবাসস্থল বাড়িটার ইতিহাসে রক্ত মেশা থাকবে না, তা তো হয় না। বাড়িটা নির্মাণের সময়ে দায়িত্বে থাকা লোকটি নির্ধারিত জমির চেয়ে মাত্র এক ইঞ্চি এদিক ওদিক করে ফেলেছিল, এই ছিল তার অপরাধ। সেই অপরাধের শাস্তি হিসেবে তাকে নারকীয় কায়দায় খুন করে এরশাদ শিকদার।
এরশাদ শিকদারের অপরাধ জীবনের সবচেয়ে আলোচিত খুনের ঘটনা ছিল যুবলীগ নেতা খালিদ হত্যা। এই হত্যার ঘটনায় করা মামলাতেই গ্রেফতার করা হয়েছিল এই নরপিশাচকে।
১৯৯৯ সালের ১৬ মে, রাত সাড়ে ৮ টা। এরশাদের টেলিফোন এসেছে- কথা আছে, যেতেই হবে। এরশাদ শিকদারের ডাক কি অমান্য করা যায়! তার মানুষ খুনের আস্তানা সেই বরফকলের দিকে রওনা হল খুলনা জেলা ছাত্রলীগ নেতা অসিত বরণ বিশ্বাস, আবু হানিফ, আলী আকবর। সাথে ব্যবসায়ী সৈয়দ মনির মীর ও তার ছোট ভাই চয়ন মীর আর যুবলীগ নেতা খালিদ হোসেন। খুলনার জলিল শপিং কমপ্লেক্সের মালিক সৈয়দ মনিরের নতুন কেনা গাড়ি আর দুটো মোটর সাইকেলে চড়ে বরফকলে পৌঁছাল তারা।
তখনও কেউ টেরও পায়নি কী ঘটতে যাচ্ছে একটু পর। এরশাদ শিকদার তাদের আপ্যায়ন করল ঠাণ্ডা স্লাইস দিয়ে। চারিদিকে শীতল পরিবেশ। হঠাৎ সবার বুক কেঁপে উঠল এরশাদের কণ্ঠস্বর শুনে। সৈয়দ মনিরকে ডেকে সে বলে উঠল, “খুলনার এক সময়ের বিগ ফ্যাক্টর কাশেম সাহেবকে গুলি করে মারার সময় কেউ তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি, মনির তোকে গুলি করলেও কেউ আসবে না।” এই বলে সে হাসতে হাসতে ডাক দিল সহযোগী মুন্সী আইয়ুবকে, “মুন্সী আইয়ুব! রাইফেল লে আউ!”
এরশাদের সে হাসিতে কারো কারো প্রাণ চলে এল গলার কাছাকাছি। চকচকে রাইফেল নিয়ে মুন্সী আইয়ুব এল, সাথে এল লিয়াকত, জামাই ফারুক আর এরশাদের বডিগার্ড নুরে আলম। তখন এরশাদ শিকদারের মাথায় খুনের নেশা। আর এ নেশার ঘোরেও নাটকীয়তা। রাইফেল হাতে নিয়ে মনিরের কানের ঠিক পাশ দিয়ে তিনটি গুলি করল প্রথমে। ভয়ে মনির জড়িয়ে ধরল আবু হানিফকে। চিৎকার করে উঠল সে, “কী হচ্ছে?”। উত্তরে তাকে বন্দুকের বাঁট দিয়ে পেটানো শুরু করল এরশাদ।
রক্তের নেশাগ্রস্ত নরপিশাচের মরণকামড় থেকে প্রাণ বাঁচাতে চয়ন, অসিত, হানিফ আর খালিদ দৌড়ে গিয়ে ঢুকল গাড়িতে, পেছনে পেছনে দৌড়ে গেল এরশাদ। বন্দুকের বাঁট দিয়ে গাড়ির কাচ ভেঙে ফেলল সে। টেনে বের করে আনল খালিদকে। মাটিতে ফেলে পেটানো শুরু করল তাকে। এদিকে হানিফ, চয়ন আর আকবর আলী দৌড়ে পালালো সেখান থেকে। বরফকলের অদূরে দাঁড়ানো ছিল তিন কোস্ট গার্ড সদস্য। খালিদ তাদেরকে ডাকল চিৎকার করে, কিন্তু এগিয়ে এলো না কেউ। মনিরকে বন্দুকের বাঁট দিয়ে ইচ্ছেমত পেটালো এরশাদ। এরপর বরফকলের বরফ ভাঙার ২০ কেজি ওজনের মুগুর নিয়ে আসা হলো। সেটা দিয়ে থেঁতলে দেয়া হলো তার পা। এরপর এরশাদ লাফিয়ে উঠল তার বুকের ওপর, জ্ঞান হারালো মনির। কিন্তু রাখে আল্লাহ মারে কে! এত কিছুর পরেও ভাগ্যের জোরে সৈয়দ মনির সেদিন মরেনি। কিন্তু পৈশাচিক নির্যাতনে মারা গেল যুবলীগ নেতা খালিদ। মুগুরের পিটুনি, বুকের ওপর উঠে এরশাদের অগণিত লাফ আর শ্বাসরোধ এ তিন কায়দার নির্যাতনে মারা হল খালিদকে। ভৈরব নদীতে সিমেন্টের বস্তায় ভরে ফেলে দেয়া হল খালিদের লাশ, গাড়ি আর মোটর সাইকেল দুটোও। আর এটাই ছিল এরশাদ শিকদারের হাতে খুন হওয়া মানুষগুলোর মধ্যে একমাত্র লাশ যেটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল পরবর্তীতে।
১৯৯৯ সালের ১১ আগস্ট। মিসরে ফেরাউনের ক্ষমতার মতই খুলনায় দোর্দণ্ড প্রতাপ এরশাদ শিকদারের। তিন মাস আগে করা খালিদ খুনের কারণে তার নামে মামলা হয়েছে। খালিদের লাশও পাওয়া গেছে। এই সময় এরশাদ শিকদার হয়ত ভেবেছিল, তার ক্ষমতার জোরটা দেখিয়ে একটা নাটক করে নেয়া যাক। এতদিন পর্যন্ত পুলিশের হাতে ধরা না পড়ার জন্য অভিনব এক কাজ করত এরশাদ। এলাকার কবরস্থানে দুটি নকল কবর বানিয়ে রেখেছিল সে। পুলিশ এলেই সেখানে গিয়ে লুকিয়ে থাকত। এবারে নাটকের শখ হওয়ায় সে সিদ্ধান্ত নিল নিজেই পুলিশের কাছে ধরা দেবে। প্ল্যান হল। প্ল্যান মত একদিন সকালে রেলওয়ের রেস্ট হাউজে সে দলের ক্যাডার আর ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করল। সকাল দশটার দিকে রেল স্টেশনে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিল, দোয়াও চাইল। পুলিশ এল সে সময়। পুলিশের আগমনে একটা সাজানো হইচই তৈরি করা হল। হইচইয়ের মাঝখানে এরশাদ নিজেই উঠে পড়ল পুলিশ ভ্যানে।
কিন্তু তার জানা ছিল না, ইতিহাসে ন্যায় অন্যায়ের লড়াইয়ে কখনোই অন্যায় শেষ জেতা জিততে পারেনি। যতই পরিকল্পনা থাকুক না কেন, এরশাদ শিকদারের সেই ব্লু ম্যাপ মাঠে মারা পড়ল। তৎকালীন খুলনা মহানগর পুলিশ কমিশনার আনোয়ারুল ইকবাল অনড় ভূমিকা নিলেন। এরশাদের নামে মামলা হল যাবতীয় কর্মকাণ্ডের দায়ে।
সেবার ধরা পড়ার পর আর তার ফিরে যাওয়া হল না মানুষ খুনের কারখানা ওই বরফকলে। ২০০০ সালের ৩০ এপ্রিল খুলনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারক এম হাসান ইমাম এরশাদ শিকদারের মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করলেন। এছাড়া ১৭টি খুনের মামলার ৬ টিতে ফাঁসি ও ৫টিতে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় হল।
শোনা যায়, বাংলা সিনেমা জগতের খ্যাতিমান এক ভিলেনকে এরশাদ শিকদার আড়াই কোটি টাকা দিয়েছিল, শর্ত ছিল ঐ ছবিতে ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করবে সে। তার আর চলচ্চিত্রের ভিলেন হওয়া হয়ে উঠল না। টাকা দেয়ার চার-পাঁচ মাস পরেই সেই যে একবার ঢুকল এরশাদ চৌদ্দ শিকের ভেতরে, ওখানেই মৃত্যু পরোয়ানা জারি হয়ে গেল বাস্তব দুনিয়ার ভয়ঙ্কর এই ভিলেনের।
এরশাদের বডিগার্ড নুরে আলমই তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয় রাজসাক্ষী হয়ে। এই নুরে আলমের জীবনেও ছিল এরশাদের নির্মমতার অভিজ্ঞতা। একবার গাড়িতে করে বাসায় ফেরার সময় রাস্তায় এক মেয়ের ওপর নজর পড়ে এরশাদের। নুরে আলমকে দিয়ে মেয়েটাকে সে নিয়ে আসে আস্তানায়। বিকৃত এক পরিকল্পনা করে এরশাদ। নুরে আলমকে সে আদেশ দেয়, মেয়েটাকে তক্ষুণি বিয়ে করতে হবে। বিয়ে করতে রাজি হয় সে, এরশাদ তাকে পাঠায় বিয়ের কাপড় আনতে। সে যাওয়ার পরেই এরশাদ চড়াও হয় মেয়েটার ওপর। নুরে আলম কিছুই জানতে পারেনি, এরপর মেয়েটার সাথে বিয়েও হয় তার। কিন্তু বিয়ের পরও এরশাদ থামল না। নুরে আলমের অনুপস্থিতিতে তার স্ত্রীর উপর নির্যাতন চলতে লাগল। একদিন সে দেখে ফেলল এই ঘটনা। তখন এরশাদ তাকে বলল, “জীবন তো ভোগের জন্যই, সব কিছু ঠাণ্ডা মাথায় নাও।” নুরে আলম হয়ত তখন ঠাণ্ডা মাথায় হজম করেছিল বসের এই অপমান। কিন্তু সুযোগের অপেক্ষায় ছিল সে, শেষ পর্যন্ত সেই সুযোগ আসে। রাজসাক্ষী হয়েই সে এর প্রতিশোধ নেয়। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত এরশাদের ২৪টি খুনের প্রত্যক্ষদর্শী ও সহযোগী ছিল নুরে আলম। সবগুলো খুনের ঘটনায় এরশাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয় সে।
ফাঁসির আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে এরশাদ। আপিল বিভাগের রায়ে তার ফাঁসির আদেশ বহাল রাখা হয়। মহা ক্ষমতাধর এরশাদ শিকদার ক্ষমা চাইতে বাধ্য হয় প্রাণ বাঁচাতে। কিন্তু রাষ্ট্রপতির ক্ষমা জোটেনি তার কপালে। এ খবর শুনে ব্রাশের খাপ পেটে ঢুকিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে এরশাদ। কিন্তু ইতিহাসের নিষ্ঠুর এ খুনীর মৃত্যু এত সহজে হোক সেটা হয়ত চায়নি প্রকৃতি। আত্মহত্যার চেষ্টা ব্যর্থ হয়।
কারাগারে এরশাদ দিন কাটাত ভাবলেশহীনভাবে। ভয়াবহ অপরাধ জীবনের জন্য বিন্দুমাত্র অনুশোচনা ছিল না তার। ‘আমি তো মরে যাব চলে যাব রেখে যাব সবই’ কিংবা ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’ গান গেয়ে সময় কাটাত সে। ছিঁচকে চোর থেকে রক্তখেকো খুনী হয়ে বিশাল সম্পত্তি বানিয়েছিল এরশাদ শিকদার। তার বিশ্বাস ছিল এই অঢেল সম্পদের জোরে সে বেঁচে যাবে হয়ত। কিন্তু প্রকৃতির বিচার বলেও একটা কথা আছে। চরম দৈন্যদশায় জীবনের শেষ মুহূর্তগুলো কাটাতে হয় এই গডফাদারকে কারাগারের কনডেম সেলে বন্দী হয়ে।
১৯৯২ সালের ২৬ আগস্ট রাতে আবুল ওরফে সিদ্দিককে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিল খুলনা জেলা কারাগারে। এর ১ যুগ পর সেই ফাঁসির মঞ্চ আবার প্রস্তুত করা হয় বাংলাদেশের ইতিহাসের বর্বরতম এই খুনীর জন্য। আর ফাঁসি দিতে প্রস্তুত হয় তিন জল্লাদ- শাহজাহান ভুঁইয়া, হাফিজ উদ্দিন ও হারেস মিয়া।
মৃত্যুর মাত্র বারো ঘণ্টা আগেও এরশাদ মধ্যে কোনো ভাবান্তর দেখা যায়নি। বেলা ১২টার দিকে খাসি আর মুরগীর মাংস দিয়ে ভাত খায় সে। এরপর ঘুম। ঘুমানোর পর আত্মীয়দের সাথে দেখা হয় তার। এরপর আবারো ঘুম। মরণঘুমের আগের বারো ঘণ্টার প্রায় ছয় ঘণ্টা ঘুমিয়েই কাটায় এরশাদ। সন্ধ্যায় ওঠার পর ইলিশ আর রুই মাছ দিয়ে ভাত খায় সে। এই ছিল শেষ খাওয়া। রক্ত যার জীবন নেশা, মৃত্যুর আগে এই মাছভাত খাওয়ায় সে তৃপ্তি পেয়েছিল কিনা কে জানে।
রাত দশটায় তাকে জানানো হয় ফাঁসি হবার কথা। জীবনের শেষ মুহূর্ত চলে এল, কিছুক্ষণ পরের নিঃশ্বাসটাই হবে তার শেষ নিঃশ্বাস। এই মুহূর্তে এসে পরাক্রমশালী খুনী এরশাদের বুকেও হয়ত ভর করেছিল মৃত্যুর ভয়। হাসতে হাসতে কত নিরপরাধ মানুষের বুকের উপর নাচতে নাচতে তাদের পাঁজর ভেঙেছে, কত নিরপরাধ মানুষের লাশ মাগুর মাছকে খাইয়েছে সে কথা হয়ত মনে পড়ছিল তার। নিজের জীবনলীলা সাঙ্গ হবার আগে সেই সব ভয়ঙ্কর স্মৃতি মনে পড়াতেই হয়ত মরণ ওপারের শাস্তি থেকে বাঁচার আশা নিয়ে তখন কলেমাও পড়েছিল এরশাদ। দুই জল্লাদ শাহজাহান ও হারেস তার দুই হাত দুই দিক থেকে ধরে ফাঁসির মঞ্চের কাছে নিয়ে আসল। একটা কালো লম্বা টুপি পরিয়ে ফাঁসির মঞ্চে ওঠানো হল তাকে। এরপর তার গলায় পরানো হল ম্যানিলা রোপ নামের ফাঁসির দড়ি। ২০০৪ সালের ১০ মে রাত ১২টা ১ মিনিটে রুমাল ফেলা হল, জারি হয়ে গেল খুনী এরশাদের মৃত্যু পরোয়ানা। রুমাল মাটিতে পড়ার সাথে সাথে পায়ের নিচের পাটাতন সরিয়ে দেয়া হল তার। ফাঁসি হল এরশাদের। আধা ঘণ্টা ঝুলিয়ে রাখার পর লাশ নামিয়ে এনে পরীক্ষা করে তাকে মৃত ঘোষণা করল ডাক্তার। মৃত্যু আরো নিশ্চিত করতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কেটে দেয়া হল তার হাত ও পায়ের রগ। অবসান হল পৃথিবীর বুকে মানুষের রক্ত নিয়ে উন্মাদ খেলায় মেতে থাকা এক দানবের জীবন।
এরশাদ শিকদারের মৃত্যুর পর, তার নির্যাতনের শিকার এক নারীর কাছ থেকে সাংবাদিকরা জানতে পারে এই নরপিশাচের ঘৃণ্য এক লালসার কথা। সেই নারীটি ঘাট এলাকায় এসেছিল তার স্বামীর সাথে। সেখানে স্বামীটি এরশাদের অপরাধ জগতের কাজে জড়িয়ে পড়ে। এর মধ্যে এরশাদের নজর পড়ে ঐ নারীর উপর। কুপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করতে পরিকল্পনা মাফিক তার স্বামীর বিরুদ্ধে তিন লাখ টাকা চুরির অভিযোগ দেয়া হয়। বলা হয়, তিন দিনের মধ্যে ফেরত না দিলে তাকে মেরে ফেলা হবে। জীবন বাঁচাতে কাকুতি মিনতি করলে এরশাদ বলল তার কথা মত চললেই কেবল বাঁচা যাবে। এরশাদের কথা মত নিয়মিত তার ভোগের শিকার হতে হয় নারীটিকে। এর মধ্যে দুটো মেয়ের জন্ম দে সে নারী। সেই মেয়ে দুটোর ভরনপোষণের টাকাও দিত এরশাদ। এরপর ওরা যখন বড় হল, পৃথিবীর বুকে ঘটল অত্যন্ত নির্মম আর ঘৃণ্য এক ঘটনা। এরশাদ শিকদারের লালসার শিকার হল এই মেয়ে দুটিও!
এই রক্তলোভী দানব হয়ত ভেবেছিল, তার ক্ষমতা আকাশচুম্বী। কিন্তু এই পৃথিবীটা তো মানুষেরই, দানবের নয়। যে ষাট জন মানুষের এরশাদ শিকদারের হাতে খুন হওয়ার কথা জানা যায়, তাদের রক্তসুধা পানের সময়, শ্বাসরোধ করে তাদের হাত পায়ের ছটফটানি দেখে আনন্দ নেবার সময়, তাদের বুকের উপর বুট জুতো পরে লাফিয়ে পাঁজর ভেঙে দেয়ার সময়; এরশাদ শিকদার কি একবারও ভেবেছিল, একদিন হাত-পা-চোখ বাঁধা অবস্থায় শুধু পায়ের নিচ থেকে একটা পাটাতন সরে গিয়ে তারও মৃত্যু হবে?