ইউরোপজুড়ে তখন বিরাজ করছে প্রথম মহাযুদ্ধের তপ্ত আবহাওয়া। যুদ্ধের মাত্রা ততদিনে জার্মানি, অস্ট্রিয়া, রাশিয়া ছাপিয়ে শান্ত, সুন্দর দেশ ইতালির সীমারেখা অতিক্রম করে ফেলেছে। হঠাৎ করে ইতালিয়দের শান্তিপূর্ণ জীবনে নেমে আসলো যুদ্ধের দুর্ভোগ। দলে দলে ইতালির তরুণরা সামরিক ক্যাম্পে যোগ দিতে থাকলো। তাদের হাতে উঠে আসলো ভয়ঙ্কর মারণাস্ত্র। শত্রুকে প্রতিহত করতে সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোতে গড়ে উঠলো সামরিক প্রতিরোধ। ইতালির বুকে প্রথম শেল পতিত হওয়ার গর্জনে ছড়িয়ে পড়লো এক অশনি বার্তা। শয়ে শয়ে সৈনিক মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো। তবু প্রতিরোধ থামলো না। কোনোভাবেই অস্ট্রীয়দের নিকট হার মানা যাবে না।
যুদ্ধ এসে হানা দিয়েছে ইতালির সুন্দর শহর গরিজিয়াতেও। সারা গ্রীষ্মকাল যুদ্ধে জর্জরিত হয়ে ছিল এই শহর। কিন্তু শীতের প্রথম বরফ আসার পর সেটা অঘোষিত যুদ্ধবিরতিতে পরিণত হলো। একদম বিরতি না দিলেও যুদ্ধের মাত্রা শতগুণ হ্রাস পেলো। গরিজিয়া শহরের ইতালীয় শিবিরে তাই সাঁঝের আঁধারে আজকাল সৈনিকদের মজলিস বসে। চলে মদ্যপান, হৈ-হুল্লোড়। আবার কেউ কেউ চক্রাকারে বসে যুদ্ধের আদ্যোপান্ত নিয়ে হালকা আলাপে মত্ত হয়ে থাকে। এমন একটি আড্ডার আসরে কথা বলে উঠলো ফ্রেদেরিক হেনরি, “আমাদের যুদ্ধ শেষ করতে হবে। একপক্ষ হুট করে থেমে গেলে অবশ্য যুদ্ধ শেষ হবে না। সেটা হিতে-বিপরীত হতে পারে। পরিণতি আরো খারাপ হতে পারে।” হেনরির তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ কানেই তুললো না পাজ্জিনি নামক এক সৈনিক। সে বলে উঠলো, “ভুল। আরো খারাপ মানে কী? যুদ্ধের চেয়ে খারাপ কিছু আছে নাকি?” হেনরি ঝটপট উত্তর দিলো, “অবশ্যই। পরাজয় যুদ্ধের চেয়ে খারাপ হতে পারে।” পাজ্জিনি গম্ভীরভাবে পাল্টা জবাব দিলো, “আমি বিশ্বাস করি না। পরাজয় মানে কী বলতে পারো? পরাজয় মানে ছুটি। তুমি সোজা বাড়ি যাবে। মুক্তি পাবে।”1
আলোচনা এখানেই থেমে যায়নি। দুজনের সাথে যুক্তিতর্কে মেতে উঠে আরো অনেকেই। কিন্তু চলমান বিতর্কে যেন এক অদ্ভুত পরিণতি দিয়েছে পাজ্জিনি। তার কথা হয়তো নীতিগতভাবে সত্য নয়, কিন্তু যুদ্ধের আতঙ্কে বুঁদ হওয়া প্রতিটি সৈনিকের মনে এই কথাটি সত্যের মর্যাদায় আসীন হয়ে আছে। আর এরকম আরো কয়েকগুচ্ছ সত্য নিয়ে লিখিত হয়েছে অসাধারণ যুদ্ধ উপন্যাস ‘আ ফেয়ারওয়েল টু আর্মস’। যার স্রষ্টা কালের সেরা ঔপন্যাসিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে।
ঔপন্যাসিকের সংক্ষিপ্ত জীবনী
হেমিংওয়ের জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয়ের ওক পার্কের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। জন্মসাল ১৮৯৯ সাল। ৬ সন্তান, চিকিৎসক পিতা এবং চারণ গীতিকার মা নিয়ে চমৎকার চলছিল হেমিংওয়ে পরিবারের দিনগুলো। আর্নেস্ট ছিলেন পরিবারের দ্বিতীয় সন্তান। শৈশবে তিনি এদিক ওদিক বনে-বাঁদাড়ে ঘুরে বেড়াতে ভালোবাসতেন। এছাড়া সুযোগ পেলে হ্রদের বুকে বড়শি পেতে মাছ ধরতে পছন্দ করতেন। মাছ ধরায় তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। সেটা অবশ্য তার কালজয়ী উপন্যাস ‘দ্য ওল্ড ম্যান এণ্ড দ্য সি’ পড়লে বোঝা যায়। এতকিছুর পরও তিনি স্কুল ফাঁকি দেননি। জন্মস্থান ওক পার্কের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে পাশ করে তিনি কানসাস সিটি স্টার নামক এক পত্রিকায় রিপোর্টার হিসেবে চাকরি নেন। অবশ্য তিনি এর আগে থেকেই টুকটাক লেখালেখি করতেন। নতুন চাকরিতে তিনি দ্রুত নিজেকে মানিয়ে নিলেন। যখন মনে হচ্ছিলো এখানে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুলবেন হেমিংওয়ে, ঠিক তখন ইউরোপের বুকে শুরু হয়ে গেলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধ।
হেমিংওয়ে লেখালেখিতে ইস্তফা দিয়ে লাখ লাখ তরুণের সাথে যোগ দিলেন যুদ্ধে। কিন্তু দুর্বল দৃষ্টিশক্তির কারণে তাকে সৈনিক হিসেবে যোগদান করতে নিষেধ করা হলো। তাই তিনি রেড ক্রসে নাম লেখালেন। সেখানে অ্যাম্বুলেন্স চালক হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন তিনি। তার পোস্টিং ছিল ইতালিতে। যুদ্ধ শেষে তিনি পুনরায় রিপোর্টার হিসেবে কাজ করা শুরু করেন, তবে সেটা টরন্টো স্টার-এ। সাংবাদিক হিসেবে তিনি ইউরোপ ভ্রমণ করতেন এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সাক্ষাৎকার নিতেন। এই তালিকায় বেনিতো মুসোলিনি, লয়েড জর্জের মতো ক্ষমতাধর রাজনীতিবিদরাও আছেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি ছোটগল্প লেখতেন তিনি। ১৯২৩ সালে প্রকাশিত হয় ‘থ্রি স্টোরিস এণ্ড টেন পয়েমস’ নামক গল্প ও কাব্যগ্রন্থ। এরপর তিনি উপন্যাস রচনায় হাত দেন। ১৯২৬ সালে প্রকাশিত হয় ‘দ্য টরেন্টস অফ স্প্রিং’। কিন্তু হেমিংওয়েকে জনপ্রিয় করেছে তার পরবর্তী তিন উপন্যাস- দ্য সান অলসো রাইজেস, ম্যান উইদাউট ওম্যান এবং দ্য ফেয়ারওয়েল টু আর্মস।2
পুনরায় যখন ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে উঠলো, তখন তিনি নিজের মাছ ধরার নৌকাতে আধুনিক অস্ত্র এবং যন্ত্রপাতি বোঝাই করে সেটিকে ডুবোজাহাজ প্রহরায় কাজে লাগিয়েছিলেন। তিনি যুদ্ধের বেশিরভাগ সময় সেই নৌকা নিয়ে আটলান্টিকের বুকে শত্রুর ডুবোজাহাজের খোঁজ করতেন। যুদ্ধের শেষদিকে তিনি প্রতিবেদক হিসেবে ইউরোপ গমন করেছিলেন। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ১৯৫২ সালে তিনি রচনা করেন তার শ্রেষ্ঠ উপন্যাস দ্য ওল্ড ম্যান এণ্ড দ্য সি। এর দু’বছর পর তার অসামান্য সাহিত্যকর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ সর্বোচ্চ সম্মাননা নোবেল সাহিত্য পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়। ১৯৬১ সালের ২রা জুলাই হেমিংওয়ে নিজের বন্দুকের গুলিতে জখম হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।3
পেছনের কথা
ইতালিতে পৌঁছে গেছেন অ্যাম্বুলেন্স চালক হেমিংওয়ে। যুদ্ধের ময়দানের ভয়াবহতা তাকে সরাসরি স্পর্শ না করলেও এর তীব্রতা তিনি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছিলেন। যুদ্ধে যোগদানের দশদিনের মাথায় তিনি যুদ্ধক্ষেত্রের কাছেই এক তাঁবুতে অন্যান্য চালকদের সাথে গল্প করছিলেন। অদূরে যুদ্ধের ময়দানে তখন প্রচণ্ড গোলাগুলি চলছে। কামান, মর্টারের শব্দে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। শুরুর দিকে তার ভয় করলেও, মাত্র দশদিনেই এই শব্দের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। তাই গল্পে ব্যাঘাত ঘটেনি। কিন্তু হঠাৎ করে সেই তাঁবুর খুব কাছে শত্রুপক্ষের একটি মর্টার শেল এসে বিস্ফোরিত হলো। শেল বিস্ফোরণের সাথে সাথে তাঁবুর ভেতরে থাকা চালকরা পেছনের দিকে ছিটকে গেলেন। অনেকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেও সে যাত্রায় বেঁচে যান হেমিংওয়ে। তবে তিনি গুরুতর আহত হয়েছিলেন। দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি সুস্থ হয়ে উঠেন। এসময়ে তার সাথে পরিচয় হয় অ্যাগনেস ফন কুরোস্কি নামক এক সেবিকার। তাদের মধ্যে প্রণয় হয় কিন্তু পরিণতি হয় না। হেমিংওয়ে দেশে ফেরত যাওয়ার পর তাদের সম্পর্কের যবনিকাপাত ঘটে। শেল বিস্ফোরণ ঘটনার পর তাকে সর্বোচ্চ সামরিক সম্মাননা প্রদান করা হয়। তিনি দেশে ফেরত যান একজন যুদ্ধ বীর হিসেবে।
আর্নেস্ট হেমিংওয়ে তার এই স্মৃতি খুব সহজে ভুলে যাননি। বরং এই স্মৃতিকে অমর করে রাখতে তিনি হাতে কলম তুলে নেন। সাদা কাগজের উপর সেই কলম তার স্মৃতিকে জীবন্ত করে তুললো এক কাল্পনিক মার্কিন তরুণের মাধ্যমে। গল্পটা হেমিংওয়ের মতোই। যুক্তরাষ্ট্র থেকে যুদ্ধে যোগদান করেছে তরুণ অ্যাম্বুলেন্স চালক ফ্রেদেরিক হেনরি। যুদ্ধকালীন সময়ে তার পরিচয় হয় ক্যাথেরিন বার্কলি নামক এক সুন্দরি সেবিকার সাথে। খুব দ্রুত তাদের বন্ধুত্বের সম্পর্ক প্রেমে পরিণত হয়। এসময় হেনরি যুদ্ধের ময়দানে দায়িত্বরত অবস্থায় এক শেলের আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হয়। তাকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য মিলানে পাঠানো হয়। ভাগ্যক্রমে সেখানে মিস বার্কলিও ছিলেন। যুদ্ধের তীব্রতা থেকে দূরে মিলান শহরের হাসপাতালে দুজন একে অপরকে নতুনভাবে আবিষ্কার করে। ফলে তাদের প্রেমের সম্পর্ক বহুদূর পর্যন্ত গড়ায়। কিন্তু দেখতে দেখতে হেনরির পুনরায় ময়দানে ফেরার সময় ঘনিয়ে আসে। হেনরি দুঃখ ভারাক্রান্ত অবস্থায় বিদায় জানিয়ে ফিরে যায় নিজের কর্মস্থানে। কিন্তু ততদিনে অনেক কিছু বদলে গেছে। হেনরি নিজে বদলে গেছে, বদলে গেছে যুদ্ধের অবস্থা। জার্মানরা খুব দ্রুত ইতালির প্রতিরোধ ভেঙে ঢুঁকে পড়বে সীমানার ভেতর। একদিকে যুদ্ধ, আরেকদিকে প্রেমিকা ক্যাথেরিন- হেনরির অবস্থা তখন নাজেহাল। এমতাবস্থায় কাহিনী এগিয়ে যেতে থাকে এক রোমাঞ্চকর পরিণতির দিকে। আর সাথে সাথে চিত্রায়িত হতে থাকে এক অসাধারণ রোমান্টিক যুদ্ধ উপন্যাস।
প্রকাশনা এবং পাঠক প্রতিক্রিয়া
১৯২৯ সালে আর্নেস্ট হেমিংওয়ের আ ফেয়ারওয়েল টু আর্মস প্রকাশিত হয়। এর আগে হেমিংওয়ে মাত্র দুটি উপন্যাস লিখেছিলেন। কিন্তু আ ফেয়ারওয়েল টু আর্মস পূর্বের সবকিছুকে ছাড়িয়ে এক নতুন উচ্চতার বহিঃপ্রকাশ ঘটালো। সাধারণ পাঠক থেকে শুরু করে কট্টর সমালোচকরাও হেমিংওয়ের প্রশংসায় মেতে উঠলেন। দ্য নিউ ইয়র্ক সানের সাহিত্য পাতায় সমালোচক হেনরি হেজলিট লিখলেন,
“স্মরণকালে আমেরিকান সাহিত্যে যদি সেরা কিছু হয়ে থাকে, তাহলে সেটা হবে হেমিংওয়ের আ ফেয়ারওয়েল টু আর্মস।”
শিকাগোর বিখ্যাত দ্য ডেইলি ট্রিবিউনের পাতায় ফেনি বুচার হেমিংওয়েকে দ্য মেকিং অফ আমেরিকানস-এর লেখক গার্ট্রুড স্টেইনের সাথে তুলনা করে বসলেন। তিনি লিখেছেন,
“আ ফেয়ারওয়েল টু আর্মস একেবারে নতুন ধাঁচের উপন্যাস। লেখার ধরন পুরোপুরি আত্মপ্রকাশক এবং উপন্যাসের কাঠামো এককথায় অনন্য। গল্প বলার ক্ষেত্রে হেমিংওয়ে পুরোদস্তুর উস্তাদ। কাঁচা লেখকদের ন্যায় অদরকারি বিষয়ে হাজার কথা বলার মানুষ তিনি নন।”
তবে হাতেগোনা কয়েকজন সমালোচক বললেন বিপরীত কথা। নিউ ইয়র্ক ওয়ার্ল্ডের রবার্ট হেরিক উপন্যাসটিকে সরাসরি ‘আবর্জনা’ বলেছেন। তার মতে, উপন্যাসের কিছু কিছু ঘটনায় অহেতুক অশ্লীলতার ব্যবহার দৃষ্টিকটু লেগেছে। পাঠকরা হয়তো ভাবছেন, এক-দুজন এভাবে সমালোচনা করবেনই, এ আর এমন কী! কিন্তু রবার্ট হেরিকের সমালোচনার কারণে উপন্যাসটিকে কিছুটা পরিমার্জন করতে হয়েছিলো। বেশ কিছু অশ্লীল শব্দ পরিহার করে নতুন পরিমার্জিত সংস্করণ বাজারে ছাড়া হয়। তবে খুশির সংবাদ, এর ফলে উপন্যাসের কোনো সংলাপ বাদ দিতে হয়নি। যার ফলে উপন্যাসের কাহিনীতে বিন্দুমাত্র প্রভাব পড়েনি। অসাধারণ কাহিনী, শক্তিমান চরিত্রের কারণে অচিরেই উপন্যাসটি পাঠক সমাজের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বলতে গেলে এই উপন্যাসই হেমিংওয়েকে পাঠকের ‘হেমিংওয়ে’তে আবির্ভূত করেছে। অনেকের মতে, উপন্যাসটি সর্বকালের সেরা যুদ্ধ উপন্যাস।
রূপালি পর্দায়
আ ফেয়ারওয়েল টু আর্মসকে উপন্যাসের পাতা থেকে রূপালি পর্দায় নিয়ে আসে প্যারামাউন্ট পিকচার্স। ১৯৩২ সালে বিখ্যাত অভিনেতা গ্যারি কুপারের মাধ্যমে ফুটে উঠে ফ্রেদেরিক হেনরির কাহিনী। ক্যাথেরিন বার্কলির চরিত্রে অভিনয় করেন হেলেন হায়েস। সিনেমার পরিচালক ছিলেন ফ্রাঙ্ক বোর্জাগ। হেমিংওয়ের যুদ্ধ উপন্যাসের রূপান্তর দর্শকদের দারুণভাবে স্পর্শ করে। সম্মানজনক একাডেমি পুরষ্কার (অস্কার) এর মঞ্চে সিনেমাটি সেরা চিত্রকল্প, সেরা শব্দ বিভাগে পুরষ্কৃত হয়। এছাড়া সেরা চলচ্চিত্র পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হয়েছিল ‘আ ফেয়ারওয়েল টু আর্মস’। কিন্তু সিনেমা দেখার পর অসন্তোষ প্রকাশ করেন খোদ হেমিংওয়ে। কারণ, সিনেমার কাহিনী মূল বই থেকে কিছুটা ভিন্ন ছিল। এরপর ১৯৫০ সালে ফোর্স অফ আর্মস নামে সিনেমাটির পুনঃনির্মাণ হলেও তা দর্শকদের নিকট সমাদৃত হয়নি।
১৯৯৭ সালে পরিচালক রিচার্ড এটেনবোরো কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকে উপন্যাসটির রূপান্তর সিনেমা তৈরি করলেন। কিন্তু এখানে ফ্রেদেরিক হেনরি কিংবা ক্যাথেরিন বার্কলি নয়, সরাসরি হেমিংওয়ে এবং অ্যাগনেস নামক চরিত্রের চিত্রায়ন হয়েছে। ‘ইন লাভ এণ্ড ওয়ার’ নামক এই সিনেমায় ক্রিস ও’ডোনেল তরুণ হেমিংওয়ে এবং সান্দ্রা বুলোক নার্স অ্যাগনেস চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ঐতিহাসিক ঘটনার বিশুদ্ধতা এবং ইতালির অপূর্ব চিত্রায়নের কারণে সিনেমাটি বহুল প্রশংসিত হয়।
আ ফেয়ারওয়েল টু আর্মস এক রোমাঞ্চকর যাত্রা। সেটা কাহিনীর দিকে থেকে হোক কিংবা কাঠামোগত কারণে হোক। পণ্ডিত রে বি ওয়েস্টের উপন্যাসের পাঁচটি অংশকে আদর্শ ইংরেজি নাট্যের মতো পাঁচ অংকের সাথে তুলনা করেছেন। হেমিংওয়ের এই উপন্যাসের বর্ণনা এতটাই শক্তিশালী যে পাঠকরা হুট করে চলে যাবেন ইতালির সেই যুদ্ধক্ষেত্রে। যখন হেনরি, রিনালদি, মেজর আর যাজক মিলে সুরিখানার টেবিলে আসর জমাবে, তখন আপনিও থাকবেন। তবে নিশ্চুপ বসে নয়, বরং তাদের সাথে একাত্ম হয়ে আপনিও মাঝে মাঝে বাজে বকবেন বা হা-হুতাশ করবেন। পরক্ষণেই হয়তো এক ভিন্ন মিস বার্কলির ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে উঠবেন।
যুদ্ধের ডামাডোলে শুরু হওয়া এই উপন্যাসের কাব্যিক পরিণতি পাঠকদের মনে এই দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে, যা ঔপন্যাসিকের সার্থকতা। সাহিত্যের জগতে শত শত যুদ্ধ উপন্যাস রচিত হচ্ছে এবং হবে, কিন্তু ‘আ ফেয়ারওয়েল টু আর্মস’ চিরকাল অনন্য হয়ে থাকবে।