সাহসী নারীদের অনেকের নামই আমরা জানি। গল্প, কবিতা, চলচ্চিত্র- নারী চরিত্রকে বাস্তবে এবং কল্পনাতেই অদম্য আর বাঁধ ভাঙার প্রতীক হিসেবে খুঁজে পাই আমরা। তাহলে অ্যানিমেশন মুভিতে নয় কেন? অ্যানিমেশন মুভি কেবল ভালোলাগা কিংবা উপভোগের জন্য নয়, এই চলচ্চিত্রগুলোতেও রয়েছে এমন অনেক নারী চরিত্র, যারা আমাদের প্রেরণা জোগায়। তারা শেখায়, নারীরাও শক্তির অধিকারী। নারীশক্তি যেকোনো বাধা ভেঙে সামনে এগিয়ে যেতে পারে, যেকোনো অবস্থান থেকে। অ্যানিমেশন মুভিতে সাহসী ভূমিকায় কাজ করা এমন কিছু প্রধান নারী চরিত্রকে নিয়েই আজকের এই আয়োজন।
এলসা (ফ্রোজেন)
ওয়াল্ট ডিজনি মুভিজ এখন পর্যন্ত অ্যানিমেশন মুভি এবং তাতে সাহসী নারী চরিত্র নির্মাণে যথেষ্ট অবদান রেখেছে। আর এই চরিত্রগুলোর মধ্যে সবচাইতে অন্যরকম আর মানুষের মনে দাগকাটা একটি চরিত্র ‘ফ্রোজেন’ মুভির এলসা। কেবল এলসা নয়, তার বোন অ্যানাও যথেষ্ট সাহসী ভূমিকা রাখে ছবিটিতে। ছবির মূল কাহিনী আবর্তিত হয় এলসা আর অ্যানাকে ঘিরেই। ছোটবেলায় খেলার ছলে ঘটা একটি ভুলের কারণে সারা জীবনের জন্য অস্বাভাবিক একজন মানুষে পরিণত হয় অ্যারেন্ডেল রাজ্যের রাজকন্যা এলসা। নিজেকে ঘরে আটকে রাখে সে অনেকগুলো বছর। তবে একটা সময় নিজের ভয়কে জয় করতে শেখে এলসা। কী করে সবকিছুকে, সমস্ত ভয়কে জয় করে সামনে এগিয়ে যেতে হয় তা শেখে। পাশাপাশি রাজকন্যা অ্যানার চরিত্রটিকেও যথেষ্ট সাহসী করে গড়ে তোলা হয়েছে মুভিটিতে। বনের জন্য শত সমস্যা আর প্রতিকূলতাকে সামনে রেখে এগিয়ে যায় অ্যানা। একটা সময় ফিরিয়ে আনে বোনকে রাজ্যে, রানী হিসেবে।
মেরিডা (ব্রেভ)
একটু অগোছালো, নতুন কিছুকে ভালোবেসে জয় করার ইচ্ছা যাদের, ‘ব্রেভ’ অ্যানিমেশন মুভির মেরিডা তাদের অত্যন্ত পছন্দের চরিত্র। কোঁকড়া লালচে চুলের মেয়েটি, যার ছোটবেলাটাই শুরু হয় বাবার সাথে তীরের খেলা খেলে। একটা সময় বড় হয় যায় মেয়েটি। সবকিছু প্রথা অনুযায়ী নয়, বরং করতে চায় একদম নিজের মতো করে। আর সেটা করতে গিয়েই রাগিয়ে দেয় সে হাইল্যান্ড লর্ডদের। সাহায্য নেয় সে ডাইনির। সাহসের আসল মানে খুঁজতে বের হয়। মেরিডা কি শেষ পর্যন্ত নিজের গন্তব্যে পৌঁছতে পারে? সাহসের আসল মানেটা কি জানতে পারে সে? পিক্সচার মুভির এই অ্যানিমেশন মুভিটি শুরু থেকেই মেরিডার সাহসী মনোভাবের উপরে কেন্দ্র করে তৈরি হয়। আর গল্পটাও গড়ে ওঠে সাহসকে ঘিরে। নিয়ম, সেটা যত পুরনোই হোক, তা ভাঙতে আর সঠিক পথ বেছে নিতে দেরি করা উচিত নয়, কখনোই ভয় পাওয়া উচিত না। মেরিডা সেটি জানিয়েছে সবাইকে।
রাপাঞ্জেল (ট্যাঙ্গেলড)
রাপাঞ্জেল রাজার মেয়ে। অদ্ভুত এক শক্তি আছে তার মাথার চুলে। দীঘল সেই কেশ কাটা বারণ। সেই চুলের আছে যেকোনো রোগ, যেকোনো সমস্যা দূর করার জাদু। গান গাইলেই জ্বলে ওঠে সেই চুল। ডাইনি লোভে পড়ে তাই রাজা-রানীর কোল থেকে চুরি করে নিয়ে যায় রাপাঞ্জেলকে। মেয়েকে হারিয়ে রাজা-রানী প্রতি বছর ফানুসের উৎসব করেন রাজ্যে। তাদের আশা, কখনো যদি এই ফানুস দেখে ফিরে আসে তাদের মেয়ে।
ঐদিকে প্রতি বছর অপেক্ষায় থাকে রাপাঞ্জেল। তার ইচ্ছে কখনো বাড়ির বাইরে বের হবে। ডাইনি মা তাকে কখনোই বাড়ির বাইরে বের হতে দেয় না। এমনকি কেউ যাতে রাপাঞ্জেলের কাছে না আসতে পারে তাই উঁচু এক মহলে রাখে তাকে। খানিকটা বয়স বেড়ে গেলেই রাপাঞ্জেলের চুল ধরে গান করে ডাইনি আর হয়ে যায় কমবয়সী। কিন্তু একটা সময় বাইরে বেরিয়ে আসে রাপাঞ্জেল। তার ইচ্ছে পূরণ করতে সাহসী হয়ে বাইরে আসে আর খুঁজে পায় নিজের আসল বাবা-মাকে।
অনেকের প্রশ্ন থাকবে এখানে যে, রাপাঞ্জেল, যে কিনা কখনোই বাড়ির বাইরে যাওয়ার সাহস পায়নি, আরেকজনের সাহায্যে সেটা করেছে, সে কী করে নারীদের জন্য আদর্শ আর সাহসী অ্যানিমেশন মুভির নারী চরিত্র হতে পারে? পারে! নারী কিংবা মানুষ হিসেবে আমরা প্রত্যেকেই জীবনে কোনো না কোনো সময়ে সমস্যায় ভুগি। কখনো না কখনো আমরা চারপাশের সমস্যাগুলোকে মেনে নিই। কিন্তু কয়জন রাপাঞ্জেলের মতো নিজের মনের কথা শুনে, নিজের জন্য যা সঠিক, সেটি ঠিক ভেবে বাইরে বেরিয়ে আসে নতুন কিছুকে খুঁজে নিতে?
মোয়ানা (মোয়ানা)
দ্বীপের এক ছোট্ট মেয়ে মোয়ানা। সমুদ্র তার বন্ধু। সমুদ্রের পানিতে খেলতে ভালোবাসে সে। সমুদ্র তাকে ভালোবাসে। সবসময় রক্ষা করে, উপহার দেয়, তার সাথে খেলা করে। কিন্তু একটা সময় মোয়ানার জীবন এবং তার দ্বীপের মানুষগুলোর হুমকির মুখে পড়ে যায়। নিজের মানুষগুলোকে বাঁচাতে সমুদ্রে একটা ডিঙ্গি নিয়ে রওনা হয় মোয়ানা। খোঁজ পায় দেবীর। দেবীর হিংস্রতাকে দূর করে দিয়ে তাকে আবার সবুজ শ্যামল করে তোলে। সেইসাথে খুঁজে পায় নিজের সত্যিকে। কে সে, কী তার কাজ- মোয়ানা অবশেষে নিজেকে খুঁজে পায়। সমস্ত ঝড়ঝাপটা, সমস্যা পাশে রেখে নিজের গন্তব্যে অটল থেকেছিল মোয়ানা চরিত্রটি। আমাদের সবারই কি সেটাই হওয়া উচিত না?
ইভা (ওয়াল-ই)
ওয়াল-ই মুভিটির কথা মনে আছে তো? সেই যে সাদা রংয়ের রোবট, যাকে পৃথিবীতে আনা হয়েছিল গ্রহের আবর্জনাকে সরিয়ে ফেলতে। একা নিজের কাজ করে যাচ্ছিল ওয়াল-ই বছরের পর বছর। তাকে যা বলা হয়েছিল, তাই করছিল সে। তবু কেন যেন খুব একা বোধ করতো ওয়াল-ই। সঙ্গীর অভাব বোধ করতো সে। আর তার সেই অভাব দূর করেই আসে ইভা। ওয়াল-ই ভালোবেসে ফেলে ইভাকে। প্রথমে ইভা পাত্তা দেয়নি ওয়াল-ই কে। তবে ওয়াল-ই সমস্যায় পড়লে নিজের জীবন বাজি রেখে তাকে রক্ষা করে ইভা। রোবট- তবু অ্যানিমেশন মুভির সাহসী নারী চরিত্রের ক্ষেত্রে এগিয়ে আছে ইভাও।
মুলান (মুলান)
মুলান অ্যানিমেশন মুভির প্রধান চরিত্রটির নামই মুলান। নিজের বাবাকে বাঁচাতে নারী হয়েও মুলান চলে যায় যুদ্ধে। কিছুই জানতো না মুলান। সাথে ছিল নিজের ড্রাগন মুশু। তবে ভয় পায়নি মুলান। নিজেকে তুচ্ছ করে বাবার জন্য চেষ্টা করে গিয়েছে শেষপর্যন্ত। কিন্তু একটা সময় ধরা পড়ে যায় মুলান সবার হাতে। সে যে নারী, পুরুষ নয় সেটা জানতে পেরে যায় সবাই। কী হয় এরপর? মুলান কি পার পেয়ে যায়, নাকি তার উপরে নেমে আসে ভয়ংকর কোনো ঝড়? অসীম সাহসী এক নারী চরিত্রকে নিয়ে গড়ে উঠেছে মুলান মুভিটি!
জুডি (জোটোপিয়া)
জুডির কথা মনে আছে তো? সেই যে বাচ্চা খরগোশ। জুটোপিয়া মুভিটিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করা জুডির ছোটবেলার স্বপ্ন, সে পুলিশ অফিসার হবে। নানা রকম সমস্যা পার করে অবশেষে খরগোশদের মধ্যে প্রথম পুলিশ হয় সে। কিন্তু তার শারীরিক ক্ষমতা বিচার করে তাকে ট্র্যাফিক কন্ট্রোল করতে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে জুডি অপেক্ষা করতে থাকে কোনো নতুন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের। কিন্তু হতাশ হয় জুডি। এমন কিছু নেই চারপাশে। অবশ্য শেষ পর্যন্ত নিজের সামনেই মস্ত এক অপরাধ ঘটে যেতে দেখে জুডি। প্রাণের বাজি নিয়ে সেই অপরাধ রুখে দেয় সে। অবশ্যই, ওয়াল্ট ডিজনি অ্যানিমেশন মুভির জুডির সাহস নিয়ে প্রশ্ন করার কোনো মানেই হয় না!
ফিচার ইমেজ: Oh My Disney