২০১৮ সালে ‘Race 3’ নামে বলিউড অভিনেতা সালমান খানের একটি সিনেমা মুক্তি পেয়েছিল। সমালোচক এবং দর্শকমহল- উভয় জায়গাতেই নেতিবাচক মন্তব্যে তুলোধুনা করা হয় মুভিটিকে। আইএমডিবি (১.৯/১০) এবং রোটেন টম্যাটোজ (৭% ফ্রেশ) সহ সকল জায়গাতেই ব্যর্থ হওয়া সিনেমাটিকে অনেকেই ঐবছরের অন্যতম বাজে ফিল্ম বলে আখ্যা দিয়ে থাকেন। কিন্তু এত শত ব্যর্থতা কুড়ানোর পরেও, রেস থ্রি বক্স অফিসে মোটামুটি সফল এক প্রজেক্ট ছিল! ১৮০ কোটি রুপি বাজেটে নির্মিত এই ফিল্ম, বক্স অফিস থেকে আয় করেছিল প্রায় ৩০০ কোটিরও উপরে।
এ তো গেলো ব্যতিক্রমী উদাহরণের মুদ্রার এক পিঠের উপাখ্যান। অপরপিঠে রয়েছে ১৯৭০ সালে মুক্তি পাওয়া রাজ কাপুরের ড্রিম প্রজেক্ট ‘Mera Naam Joker‘ ফিল্ম। তৎকালীন বলিউডে ৫০’ থেকে ৭০’ এর দশক পর্যন্ত বলিউডে রাজত্ব করে বেড়িয়েছেন অভিনেতা রাজ কাপুর। উপহার দিয়েছেন বহু হিট ফিল্ম! মেরা নাম জোকার সিনেমার অভিনেতা, পরিচালক, প্রযোজক, সবই ছিলেন রাজ কাপুর নিজে। কিন্তু কাল্ট ক্লাসিক সিনেমাটি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ায় আর্থিক সংকটের মুখোমুখি হন রাজ কাপুর। ওদিকে এই মুভি থিয়েটারে চালিয়ে আঙুল ফুলে কলা গাছ হয় তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের এক প্রযোজনা সংস্থার। তাই, বলিউড সিনেমার লাভ-লোকসানের বিষয়গুলো একটু জটিল। সেটা ভালোভাবে বুঝতে হলে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে বলিউডের বিজনেস মডেল সম্পর্কে।
বলিউডের একটা ফিল্ম কীভাবে পয়সা কামায়, সেটা আলোচনা করার আগে, ফিল্ম নির্মাণ প্রক্রিয়ায় একটু চোখ বুলিয়ে আসা যাক।
চলচ্চিত্র নির্মাণের দীর্ঘ প্রক্রিয়াকে মোট পাঁচটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়।
- ডেভেলপমেন্ট: ডেভেলপমেন্ট স্টেজ হলো চলচ্চিত্র নির্মাণের সর্বপ্রথম ধাপ। এই ধাপে সিনেমার জন্য একটি গল্প দাঁড় করানো হয়। এই গল্পের উপর ভিত্তি করেই তৈরি হয় খসড়া। পরিচালক, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার, স্ক্রিপ্ট রাইটিং, সিনেমার বাজেট, কোন ধরণের লোকবল এখানে দরকার তার সবকিছু এই স্টেজেই ডেভেলপ করা হয়। তখন শুধু থাকে সবুজ সংকেতের অপেক্ষা।
- প্রি-প্রোডাকশন: গ্রিন লাইট পেয়ে গেলে শুরু হয় প্রি-প্রোডাকশন স্টেজের কাজ। শুটিং স্ক্রিপ্টের কাজ সমাপ্ত করা, শুটিং লোকেশন খুঁজে বের করে অনুমতি নেওয়া, প্রোডাকশন বাজেট এগুলো প্রি-প্রোডাকশনের অন্তর্ভুক্ত। পরিচালক নির্দিষ্ট চরিত্রের জন্য অভিনেতা অভিনেত্রীদের অডিশন নেওয়া শুরু করেন। ফিল্মের ক্রু মেম্বার যেমন, ডিরেক্টর অভ ফটোগ্রাফি, সহকারী পরিচালক, ইউনিট প্রোডাকশন ম্যানেজার, কস্টিউম ডিজাইনার এই স্টেজেই নির্বাচন করা হয়।
- প্রোডাকশন: প্রোডাকশন স্টেজে (প্রিন্সিপাল অভ ফটোগ্রাফি) শুরু হয় সিনেমার শুটিং। পরিচালকের নির্দেশ মতে অভিনেতারা অভিনয় করেন, তা ক্যামেরা বন্দি করেন চিত্রনাট্যকার। ক্যামেরা ক্রু’রা লাইটিং, ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল, ভিজুয়াল স্টাইলের দিকটা দেখে থাকেন।
- পোস্ট প্রোডাকশন: প্রিন্সিপাল শুটিং শেষ হবার পর অডিয়ো এবং ভিজুয়াল ম্যাটারিয়ালকে একসাথে জোড়া দিয়ে বানানো হয় ফিল্ম। একজন সম্পাদক শট-বাই-শট ফুটেজ জোড়া লাগিয়ে, মিউজিক, সাউন্ড, ভিজুয়াল ইফেক্ট যুক্ত করে শেষ করেন সম্পাদনার কাজ।
- ডিস্ট্রিবিউশন: সম্পাদনার সকল কাজের পর চলচ্চিত্রটি যখন দর্শকদের দেখার উপযুক্ত হয় তখন এটি ডিস্ট্রিবিউশন স্টেজে চলে আসে। এই স্টেজে সিনেমাকে সিনেমা হল কিংবা ডিজিটাল প্লাটফর্মে পৌঁছে দেওয়া হয়।
প্রত্যেকটা ধাপেই প্রচুর অর্থ খরচ হয়। ভালোমানের একটা বলিউড সিনেমা বানাতে বর্তমানে যে পয়সা লাগে, তা একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে বহন করা মোটামুটি অসম্ভব। এভারেজ মেইনস্ট্রিম বলিউড ফিল্মের বাজেট বর্তমানে ৫০ কোটির আশেপাশে হয়ে থাকে। এই চলচ্চিত্রগুলো নির্মাণে পয়সা খরচের কাজটা বড় বড় প্রযোজনা সংস্থা করে থাকে। আবার বিগ বাজেটের ফিল্মের জন্য অনেকগুলো প্রযোজনা সংস্থা একসাথে অর্থ লগ্নি করে। যেমন, ৩০০ কোটি রুপি বাজেটের ব্রহ্মাস্ত্র সিনেমার প্রযোজনা সংস্থা হিসেবে যুক্ত ছিল ধর্ম প্রোডাকশন, প্রাইম ফোকাস, এবং স্টার স্টুডিয়ো। যদি প্রযোজনা সংস্থার বদলে শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি সিনেমা প্রযোজনা করলে কাজটা অনেক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। প্রযোজক তার জমানো অর্থ বিনিয়োগ করে মুভির পিছনে। মুভি হিট হলে পকেটে লাভের অংশ ঢুকে, আর ফ্লপ হলে আম, ছালা দুটোই শেষ। ফিল্ম হিট হওয়ার সম্ভাবনাও কদাচিৎ। বেশিরভাগ সিনেমাই ফ্লপ হয়। সিনেমার শুটিং, প্রোডাকশন, পোস্ট প্রোডাকশন- এসব সামলানো পরিচালকের দায়িত্ব। তিনি সাধারণত প্রতি মুভিতে নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের বিপরীতে চুক্তিতে আবদ্ধ হন। সকল সম্পাদনার পর ফিল্ম পুরো তৈরি হয়ে গেলে সেটা হয়ে যায় প্রযোজকের সম্পত্তি। তারপর প্রযোজক বা প্রযোজনা সংস্থা সেটা নিয়ে যান ডিস্ট্রিবিউটারের কাছে।
ডিস্ট্রিবিউটরের কাজ হলো সিনেমাটিকে থিয়েটার এবং ওটিটি প্লাটফর্ম পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া। ফিল্মের বিজ্ঞাপন ও প্রচার-প্রচারণার এক অংশের দায়িত্বও পালন করে থাকেন ডিস্ট্রিবিউটর। প্রেক্ষাগৃহ ছাড়াও ডিস্ট্রিবিউটর ফিল্মের অর্থ আয় করে থাকে স্যাটেলাইট রাইটস, ডিজিটাল স্ট্রিমিং রাইটস বিক্রির মাধ্যমে। বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের কাছেও তারা এই সিনেমা বিক্রি করে থাকে, যেটাকে ওই নির্দিষ্ট টিভি চ্যানেল ‘World TV Premier’ ট্যাগ দিয়ে মহাসমারোহে সম্প্রচার করে থাকে। এছাড়াও প্রযুক্তির এই সয়লাবের যুগে ডিস্ট্রিবিউটর ওটিটির কাছে রেকর্ড দরে মুভি বিক্রি করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ‘ভুল ভুলাইয়া ২’ সিনেমার কথা।
এর প্রযোজনা সংস্থা হলো ‘T-Series’ আর ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি হলো ‘AA Films’. সিনেমা হলে মুক্তির আগেই AA Films নেটফ্লিক্সের কাছে ৩০ কোটি রুপিতে বিক্রির পর একটি আর্থিক চুক্তি করে। চুক্তির মূল উদ্দেশ্য, ঠিক কোন তারিখে নেটফ্লিক্স এই ফিল্ম তাদের প্লাটফর্মে মুক্তি দিতে পারবে। সাধারণত, ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি/ডিস্ট্রিবিউটর মুভি মুক্তির জন্য ওটিটি কোম্পানিকে ওই সময়কে নির্ধারণ করে দেয়, যখন মুভিটি সিনেমা হলে পুরোদমে চলার আর সম্ভাবনা নেই। কারণ, শুরুতেই সিনেমা অনলাইনে ছেড়ে দিলে লোকজন আর সিনেমা হলে মুভি দেখতে আসবে না। কিন্তু ভুল ভুলাইয়া ২ সিনেমাটি টানা অনেকদিন যাবৎ বক্স অফিসে ব্যবসা করেছিল। তাই সিনেমা হলে চলার পাশাপাশি নেটফ্লিক্সেও নির্দিষ্ট তারিখে মুক্তি পেয়ে যায় ফিল্মটি। কারণ, তাদের মধ্যে আগে থেকেই রিলিজের চুক্তি ছিল!
বিগ বাজেটের ফিল্মের জন্য অনেকসময় প্রযোজনা সংস্থা আর ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির দায়িত্ব পালন করে একই কোম্পানি। বলিউডের বড় বড় কিছু প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান হলো যশ রাজ ফিল্মস, রিলায়েন্স এন্টারটেইনমেন্ট, ধর্ম প্রোডাকশন, এরোস ইন্টারন্যাশনাল, ইত্যাদি। যেখান থেকে সিনেমা দেখার টিকেট কেনা হয়, সেটাকে বলে বক্স অফিস। আর একটা সিনেমা সিনেমা হল থেকে যে অর্থ আয় করে, তা হলো বক্স অফিস কালেকশন। এই অর্থ সংগ্রহ করেন থিয়েটার মালিকরা। এজন্য আবার সরকারকে GST (Goods and Services Tax) দিতে হয় থিয়েটার মালিকদের। টিকিটের দাম ১০০ রুপির বেশি হলে ১৮% GST, আর ১০০ রুপির কম হলে ট্যাক্স দিতে হয় ১২%। সরকারের ভাণ্ডারে এই কর জমা দেওয়ার পর হল মালিকদের কাছে যা অবশিষ্ট থাকে তা হলো নেট কালেকশন।
যদি ফিল্মের নেট কালেকশন ফিল্মের বাজেটের তুলনায় বেশি হয়, তাহলে ওই ফিল্মকে লাভজনক/প্রফিটেবল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। GST এর পূর্বে রাজ্যের সরকারকে দিতে হতো এন্টারটেইনমেন্ট ট্যাক্স। এর পরিমাণ রাজ্য থেকে রাজ্যে হেরফের হতো। একটা সিনেমাকে কোনো রাজ্যে ট্যাক্স ফ্রি ঘোষণা দেওয়া মানে, এর কোনো এন্টারটেইনমেন্ট ট্যাক্স নেই। এর ফলে কমে যায় সিনেমার টিকেট মূল্য। GST এর শেয়ার করা কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার উভয়েই পেয়ে থাকে। রাজ্য সরকার যদি স্টেট ট্যাক্স ফ্রি করে দেয়, তবুও কেন্দ্রীয় সরকারকে ট্যাক্স দিতে হয় ৬%- ৯%, যা ফিল্মের বাজেটের উপর নির্ভর করে।
প্রযোজক আর ডিস্ট্রিবিউটরদের ভেতর তিন ধরণের প্রফিট শেয়ারিং পদ্ধতি দেখা যায়।
১. শুরুতেই মিনিমাম গ্যারান্টি রয়্যালটির কথা বলা যাক। এই পদ্ধতিতে ডিস্ট্রিবিউটর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রযোজককে প্রদান করে। ফিল্ম হিট হলে, কিছু পরিমাণ অর্থ রয়্যালটি অভ পেমেন্ট হিসেবে প্রযোজককে দেওয়া হয়। এখানে লোকসানের ঝুঁকিটা দুইজনের মাঝেই ভাগ হয়ে যায়।
২. প্রযোজক ডিস্ট্রিবিউটরের কাছে পুরোপুরিভাবে বিক্রি করে দেয় ফিল্ম। এখন এই ফিল্ম ডিস্ট্রিবিউটর নদীতে ফেলে দিবেন নাকি থিয়েটারে চালাবেন, তা সম্পূর্ণ ডিস্ট্রিবিউটরের ইচ্ছা। ফিল্ম কাড়ি কাড়ি অর্থ আয় করলেও তা ডিস্ট্রিবিউটরের, আবার ফ্লপ হলেও পুরো লোকসানের দায়ভার ডিস্ট্রিবিউটরেরই। এখানে প্রযোজকের কোনো ঝুঁকি নেই। এই কাহিনিই ঘটেছিল মেরা নাম জোকার ফিল্মে। ভারতে এই ফিল্মের প্রযোজনা আর ডিস্ট্রিবিউশন করা হয়েছিল রাজ কাপুরের প্রযোজনা সংস্থা RK Films দ্বারা। এই সিনেমা বানাতে গিয়ে রাজ কাপুর তার সকল পয়সা বিনিয়োগ করে দিয়েছিলেন। এত কষ্টের পরেও সফলতার মুখ দেখেনি সিনেমাটি।
তৎকালীন ১ কোটি বাজেটে নির্মিত এই ফিল্ম আয় করেছিল ৮০ লাখ রুপি। ভরাডুবি থেকে পরিত্রাণ পেতে এর ওভারসিস রাইট সোভিয়েত ইউনিয়নের এক কোম্পানির কাছে কোনো চুক্তি ছাড়াই ১৫ লাখ রুপিতে বেঁচে দেওয়া হয়েছিল। ১৯৭২ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে মুক্তির পর ব্লকবাস্টার খেতাব পায় সিনেমাটি। সোভিয়েত ইউনিয়নের ডিস্ট্রিবিউটর অনেক অর্থ আয় করলেও, রাজ কাপুর এখান থেকে কানা-কড়িও পাননি।
৩. প্রযোজক এখানে ডিস্ট্রিবিউটরের পারিশ্রমিক দেন লভ্যাংশের উপর ভিত্তি করে। এটা হলো সর্বাধিক প্রচলিত পদ্ধতি। এখানে সকল ঝুঁকি থাকে প্রযোজকের উপরে, ডিস্ট্রিবিউটরের ঝুঁকি থাকে কম। প্রচার-প্রচারণা আর ডিস্ট্রিবিউশনের দায়িত্ব নেয় প্রযোজক/প্রযোজনা কোম্পানি নিজেই।
ডিস্ট্রিবিউটররা ভারতের বিভিন্ন জায়গায় সাব ডিস্ট্রিবিউটরদের সাথে যোগাযোগ রাখে। সাব-ডিস্ট্রিবিউটদের আলাদা আলাদা ডিস্ট্রিবিউশনে ভাগ করা হয়েছে, যাকে ডিস্ট্রিবিউশন সার্কিট বলা হয়। বলিউড ফিল্মের জন্য ভারতে এমন মোট ১১টি সার্কিট আছে। সাব ডিস্ট্রিবিউটরদের কাজ হলো সিনেমা প্রেক্ষাগৃহ পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়া। তারা মূলত এক্সিবিউটরদের সাথে চুক্তি করে থাকে। এক্সিবিউটর বলতে সিনেমা হলওয়ালা কোম্পানি বা সিনেমা হলকে বোঝায়। সাব-ডিস্ট্রিবিউটর আর সিনেমা হলগুলোর মাঝে চুক্তি হয়, তারা কত শতাংশ রেভিনিউ শেয়ার করবে। এটা নির্ভর করে একটা ফিল্মকে কতগুলো স্ক্রিন দেওয়া হয়েছে তার উপর।
দুই রকমের থিয়েটার আছে ভারতে।
- সিঙ্গেল স্ক্রিন থিয়েটার: এটাতে চুক্তি এমন হয় যে, টিকিট বিক্রি করে যত আয় হবে, সে পরিমাণের ভিত্তিতে সাব ডিস্ট্রিবিউটর নিবে ৭৫ শতাংশ আর এক্সিবিউটর পাবে ২৫ শতাংশ। সাব-ডিস্ট্রিবিউটরের আয় আবার যায় ডিস্ট্রিবিউটর এবং প্রযোজকের কাছে।
- মাল্টিপ্লেক্স: মাল্টিপ্লেক্সে সাধারণত প্রথম সপ্তাহে সাব-ডিস্ট্রিবিউটর এবং এক্সিবিউটরের শেয়ারের অনুপাত ৫০%-৫০% হয়ে থাকে। সপ্তাহ গড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথে সাব ডিস্ট্রিবিউটরের শেয়ার কমতে থাকে। দ্বিতীয় সপ্তাহে সাধারণত তা ৪০%-৬০% এবং তৃতীয় সপ্তাহে তা ৩০%-৭০% এ এসে উপনীত হয়। বেশিরভাগ ফিল্মই বক্স অফিসে সর্বোচ্চ তাণ্ডব চালায় মুক্তির প্রথম সপ্তাহেই। এরপর বক্স অফিসের কালেকশন হার ক্রমশ ফিকে হতে থাকে।
বিগ বাজেটের বড় বড় ফিল্মের ক্ষেত্রে ফিল্মের ভার্ডিক্ট অনেকসময় অভিনেতার জনপ্রিয়তার উপর নির্ভর করে। এদিকে সুবিধা পান সালমান খান। তার অনেক বাজে গল্পের সিনেমাও বক্স অফিসে ভরাডুবির হাত থেকে বেঁচে যায়, শুধুমাত্র তুমুল স্টারডম থাকার কারণে।
অনেক সময় অভিনেতাদের প্রফিট শেয়ারিংয়ের চুক্তি করতে দেখা যায় ডিস্ট্রিবিউটদের সাথে। যেমন, আমির খান। তিনি মূলত জিরো স্যালারিতে প্রফিট শেয়ারিং এগ্রিমেন্টে কাজ করে থাকেন। এই ক্ষেত্রে ফিল্ম ব্যবসাসফল হলে লভ্যাংশের ৫০%-৮০% পাবেন অভিনেতা। আর ফ্লপ হলে কোনো পারিশ্রমিক তো পাবেনই না, উল্টো ভর্তুকি দিতে হবে।
অনেক অভিনেতা আবার হাফ সেলারি মডেল-হাফ প্রফিট শেয়ারিংয়ে কাজ করে থাকেন। যেমন, সালমান খানের সুলতান মুভি। বক্স অফিসে সুলতানের টোটাল কালেকশন ছিল ৫০০ কোটি রুপির আশেপাশে। এর এন্টারটেইনমেন্ট ট্যাক্স ছিল ১০৬ কোটি রুপি। তাই, ফিল্মের নেট কালেকশন হলো ৩৯৪ কোটি রুপি। সুলতানের প্রযোজনা সংস্থা এবং ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি উভয়ই ছিল যশ রাজ ফিল্মস। ৭৯ কোটি রুপি ডিস্ট্রিবিউটর শেয়ার নিয়েছিল যশ। এর থেকে মার্কেটিং কস্ট ২০ কোটি বাদ দিলে ডিস্ট্রিবিউটর শেয়ার থাকে ৫৯ কোটি রুপি। এটাই ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে যশ রাজ ফিল্মসের প্রফিট। এর বাইরে যশ রাজ ফিল্মস প্রযোজনা সংস্থা হিসেবে যা আয় করেছে তার হিসেব আলাদা। নেট কালেকশন ৩৯৪ কোটি থেকে ডিস্ট্রিবিউটর শেয়ার ৭৯ কোটি বাদ দিলে বাকি থাকে ৩১৫ কোটি রুপি। এই অর্থ থেকে ১৫৭ কোটি রুপি গেছে এক্সিবিউটরের কাছে। তাহলে বাকি থাকে আর ১৫৮ কোটি।
প্রোডাকশন কস্ট ৭০ কোটি রুপি ধরলে নেট প্রফিট বেঁচে যায় ৮৮ কোটি। ডিজিটাল আর স্যাটেলাইট রাইটস বিক্রি করে সিনেমা আয় করে আরও ২০ কোটি রুপি। মানে সিনেমার প্রোডাকশন শেয়ার হলো ১০৮ কোটি। এর সাথে ডিস্ট্রিবিউশনের ৫৯ কোটি রুপি যোগ করলে সর্বসাকুল্যে আয় দাঁড়ায় ১৬৭ কোটি রুপি। রিপোর্ট অনুযায়ী, সালমান খান ৫০% প্রফিট শেয়ারিং ডিল করেন এই মুভির জন্য। তার মানে যশ রাজ ফিল্মস তাকে ৮৩.৫ কোটি রুপি দিয়েছিল এই সিনেমার পারিশ্রমিক হিসেবে। এমনিতে সালমান তার প্রতি সিনেমায় ৭০ কোটি রুপির আশেপাশে চার্জ করে থাকেন। কিন্তু প্রফিট শেয়ারিং পদ্ধতির কারণের তিনি আরও ১৫ কোটি রুপির মতো বেশি আয় করতে পেরেছেন।