গরিব চাষার মতো কান পাতো। বাতাসে বিধ্বস্ত জনপদের দীর্ঘশ্বাস। শহরের উঁচু উঁচু দালানগুলোর নিচে চাপা পড়া নদীর কান্না। দশটা-পাঁচটার নিয়ম করে টিকটিক করা ঘড়িটা সেদিন কোথায় ছিল? বিএমডব্লিউ আর পোরশের চকচকে শরীরে নয়; মানুষ যখন আকাশে ছড়ানো মেঘের মাঝে নিজেকে খুঁজত। প্রেমিকার খোঁপায় কাঞ্চন ফুল গুঁজে দেওয়া মানুষগুলো আজ কোথায়? পাখির গানে গুনগুন করা মানুষ! পূর্ণিমা রাতে চাঁদ হয়ে যেতে চাওয়া মানুষ!
ক্যামেরার একেকটি ফ্রেমে সেই প্রাচীন জনপদ থেকে ভেসে আসা দীর্ঘশ্বাসকে ধরতে চান এমির কুস্তুরিকা। গিটারের শব্দে শোনাতে চান ইট-পাথরে চাপা পড়া নদীর কান্না। ঘুম, খাওয়া, অফিস; খাওয়া, অফিস, ঘুম- এমন যান্ত্রিকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন তিনি। টাকায় মোহমত্ত আত্মভোলাদের মুক্তি দিয়ে ছুটে যেতে চান পাখির সুরে গুনগুন করা মানুষের মাঝে। Do You Remember Dolly Bell (১৯৮১) থেকে On the Milky Road (২০১৬) প্রত্যেকটি সিনেমায় কুস্তুরিকা যেন বলতে চান-
Life is beyond peace and war
Justice and crime
Do you remember that time?
When life was a miracle.
পৃথিবীবিখ্যাত কান চলচ্চিত্র উৎসবে দুবার পাম ডি’অর জিতেছে কুস্তুরিকার সিনেমা When Father Was Away on Business (১৯৮৫) এবং Underground (১৯৯৫), যে কৃতিত্ব আছে আর মাত্র আটজন পরিচালকের। Time of the Gypsies (১৯৮৮) সিনেমার জন্য উৎসবটির সেরা পরিচালকের পুরস্কারও উঠেছে তার হাতে।
বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনায় জন্ম নেওয়া এই সার্বিয়ান পরিচালকের খ্যাতি আছে অভিনেতা এবং সঙ্গীতশিল্পী হিসেবেও। ২০১২ সালে স্পেনের ৫০তম শিখন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে আমন্ত্রিত হয়ে সাংবাদিক আনা ওতাসেভিচের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে শিল্প সংক্রান্ত ভাবনার পাশাপাশি বলকান অঞ্চলের আদি জীবনাচরণের প্রতি ভালোবাসা ও বিদ্যমান সমাজ–রাজনীতির নিয়ে নিজের আশা–হতাশার গল্প শুনিয়েছেন কুস্তুরিকা। সে সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো এখানে।
আনা: এমির, গতকাল মঞ্চে চলচ্চিত্র পরিচালকের পরিবর্তে একজন সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে আপনাকে দেখলাম। যেন মঞ্চে পরিচালনা করছিলেন।
কুস্তুরিকা: আমাদের পার্ফরমেন্স ছিল আসলে কতগুলো ছোট আকারের চলচ্চিত্রের সমষ্টি। আনন্দের বিষয়, চলচ্চিত্র আর সঙ্গীতের কাঠামোয় সূক্ষ্ম মিল রয়েছে। নানা সুরের সংযোজনে স্বর্গীয় আবহ তৈরির মাধ্যমে মানুষের অনুভূতিকে ছুঁয়ে যাই আমরা। সেই প্রাচীনকাল থেকে এভাবেই দর্শক-শ্রোতাদের সঙ্গে হৃদয়ের যোগাযোগ হয়ে আসছে।
আনা: তেয়াত্রো জুভেলানোসের (যে থিয়েটারে কুস্তুরিকা পারফর্ম করেন) মতো কি সব সময় দর্শক-শ্রোতাদের হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া এমন আনন্দদায়ক হয়ে ওঠে?
কুস্তুরিকা: আমরা যেখানেই বাজাই, এমন আনন্দ পাই। অনুভূতিগুলো ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। মানুষকে শান্তির পরশ বুলিয়ে দিতে, তার প্রতিদিনকার জীবনে চিরযৌবনা নদীর প্রবাহ সৃষ্টি করতেই সঙ্গীতের জন্ম। সঙ্গীতের সুরে সজীব হয়ে উঠি আমরা। হাসি আর আনন্দে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে আমাদের জীবন। ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ বানানোর পরই আমি এটা টের পেয়েছিলাম যে, চলচ্চিত্রটা একটু নিরস আর গভীর। কাজটা শেষ করার পর নিজেকে জিজ্ঞেস করলাম, আজকের দিনে শিল্পের লক্ষ্য কী? আসলে শিল্প সমষ্টিগত থেরাপির মতো হওয়া উচিত। হ্যাঁ, এটাই বিশ্বাস করি আমি। আর সেক্ষেত্রে চলচ্চিত্রের তুলনায় সঙ্গীতকেই এগিয়ে রাখব।
আনা: আপনার চলচ্চিত্র কিংবা সঙ্গীতে বৈচিত্র্যময় প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। যেগুলো আপনি সারা জীবন ধরে সঞ্চয় করেছেন। যেন পূর্ব এবং পশ্চিম ইউরোপের এক ধরনের মিশ্র ঐতিহ্য।
কুস্তুরিকা: বলকানের এই মিশ্রণটাই অনন্য। বসনিয়া কিংবা সার্বিয়ার মানুষের জীবনধারায় পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপের সংস্কৃতির প্রভাব অনেক। পৃথিবীতে আপনি এমন দেশ খুব বেশি খুঁজে পাবেন না। আমাদের নির্ভেজাল একটি সংস্কৃতি আছে, যা বহু শতাব্দী ধরে গড়ে উঠেছে। আমাদের সংস্কৃতিকে তাই সংজ্ঞায়িত করা কঠিন। এই মিশ্রণেই আমার ফিল্মগুলো লালিত। ফলে সেগুলো আরো জীবন্ত হয়ে উঠেছে। আমাদের অনুসন্ধানের ক্ষেত্র বিশাল। তাই সম্ভাবনার দ্বারও অবারিত। এটাই আমাদের শিল্পকে গতিশীল করে তোলে। কী বলব? বলতে পারেন, মার্ক্স ভাইয়েরা শেক্সপিয়র লিখছেন!
আনা: জীবনের চেয়েও গভীর চরিত্র সৃষ্টি, ছন্নছাড়া অথচ অদ্ভুত বন্ধনে আবদ্ধ ছন্দময় জিপসি জীবন, এখানকার সঙ্গীত, বৈচিত্র্যময় অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠান নিয়ে আপনার সৃষ্টি যেন বলকানদের স্বতন্ত্র পুরাণ।
কুস্তুরিকা: এগুলো নিয়েই আমাদের জীবন। বিদ্যমান বাস্তবতার নির্যাস নিয়ে প্রতিটি কাজ শুরু করি আমি। সৃষ্টিগুলো জীবন থেকে উঠে আসে। এই তো কিছু দিন আগে The Bridge Over the Drina River পড়ছিলাম। খুব সম্ভবত ইভো আন্দ্রিচের লেখা। আপনি যখন বইটি বিশ্লেষণ করবেন, দেখবেন বাস্তব জীবনের উপাদানই তাকে তাড়িত করেছে। যে হোটেলের কথা তিনি বলেছেন, বাস্তবেও এমন একটা হোটেল রয়েছে। প্রায় প্রতিটি চরিত্রই বাস্তব জীবনের অনুকরণ। আমি বিশ্বাস করি, যেকোনো সৃষ্টির মূলে রয়েছে কিছু ইমেজ কিংবা চিত্রপট। আর জীবন সিনেমা, সাহিত্য কিংবা শিল্পের সর্বশ্রেষ্ঠ চিত্রপট।
আনা: আপনার অনুপ্রেরণার বড় উৎস যুগোস্লাভিয়ার যুদ্ধ। আপনার জীবন আর পরিবারের মাঝে এর গভীর ছাপ লেগে আছে।
কুস্তুরিকা: আমাদের অঞ্চলে প্রায়ই যুদ্ধের পুতি-গন্ধময় বাতাস বয়। বলতে পারেন আমরা একটা ট্রাজিক জাতি। আন্দ্রিচ কী বলেন জানেন? যুদ্ধ কেবল সমস্যাই টিকিয়ে রাখে। সমস্যার কারণগুলো তার কাছে চিরকাল অচেনা রয়ে যায়। কিন্তু যুদ্ধের কারণে জন্ম নেয় নতুন অধ্যায়, উদিত হয় অনেক জটিল প্রশ্ন; যার উত্তরগুলো খুঁজতে হয় আমাদের। বলকান পূর্ব-পশ্চিম শত্রুতার উপকেন্দ্র। বারবার করুণ ইতিহাসের সাক্ষী হই আমরা।
আনা: আন্ডারগ্রাউন্ডে হয়তো এমন কোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। অনেক প্রশংসিত হয়েছে চলচ্চিত্রটি। কী মনে হয় আপনার, লোকজন গল্পটাকে এত ভালোবাসলো কেন?
কুস্তুরিকা: সিনেমাটিতে দেখা যায়, কিছু লোক আন্ডারগ্রাউন্ডে বাস করে। বাহিরের পৃথিবীর সঙ্গে যাদের কোনো যোগাযোগ নেই। কেউ তাদের অবহিত করে না যে, যুদ্ধের আপাত সমাপ্তি ঘটেছে। বারবার তারা ভয়ঙ্কর প্রোপাগান্ডার শিকার হয়। আজকের দিনেও আপনি এমনটি খুঁজে পাবেন। বিশ্বকে গ্রাস করে নিয়েছে যুদ্ধ-অর্থনীতি নামক ভয়ঙ্কর এক দানব। আর তা কেবল যুদ্ধই সৃষ্টি করে চলেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো কেবল মানবতার বুলি আওড়ায়। অথচ যারা যুদ্ধ সৃষ্টি করে তাদের কাছ থেকেই অর্থ পায় তারা। প্রহসনটা দেখুন, যুদ্ধবাজ আর ‘মানবতা রক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্তরা’ একই গোষ্ঠী! যারা আমাদেরকে মানবিক হতে বলেন, তারাই যুদ্ধের দামামা বাজান। বিশ্বের প্রধান প্রধান অর্থনীতিগুলোর জ্বালানি কোটি কোটি মানুষের ক্ষতবিক্ষত লাশ।
আনা: যুদ্ধ আপনার সারায়েভোর বাড়ি মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছে। পরিবার এবং নিজের জন্য দারভেনগ্রাদে আরেকটি বাড়ি বানিয়েছেন। সবকিছু কি ফিল্মের সেট থেকেই শুরু হয়েছিল?
কুস্তুরিকা: আসলে ফিল্মের সেট আর আপনি যেখানে বাস করেন, সেটা এক হতে পারে না। মাঝে মাঝে ফিল্মের সেটকে অধিক প্রাণবন্ত মনে হয়। আমি যখন Life Is a Miracle বানিয়েছিলাম, তখনই কাঠ দিয়ে বাড়ি বানানোর বুদ্ধিটা মাথায় আসে। গ্রাম পুনর্নিমাণ করার জন্য কাঠগুলো সেখানেই ছিল।
আনা: আন্দ্রিচগ্রাদ নামের ছোট শহরটিও আপনার কল্পনার প্রতিমূর্তি। নির্মাণের এই আগ্রহটা কোথা থেকে পেলেন?
কুস্তুরিকা: দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমাদের দেশের সবকিছু বিলীন হয়ে গেছে। সজ্ঞানে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে সবকিছু। আপনি যদি ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলের কোনো শহরে যান, তবে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে গড়ে ওঠা শহরগুলোও খুঁজে পাবেন। সার্বিয়ায় আছে কেবল ধ্বংসযজ্ঞ, আর কিছুই না। একদম কিচ্ছু না। অথচ মধ্যযুগে সমৃদ্ধ এক সভ্যতার অধিকারী ছিলাম আমরা। আন্দ্রিচগ্রাদের ভিতর দিয়ে আমি সেই প্রাচীন সময়ের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছি। এমনভাবে শহরটি পুননির্মাণ করতে চেয়েছি, যাতে মনে হয় শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এর অস্তিত্ব রয়েছে।
আনা: প্রায়ই ফেলেনিকে আপনার সিনেমার পিতা বলতে শোনা যায়।
কুস্তুরিকা: তিনিই প্রধান। তবে তারকোভস্কির চিত্রকল্পও আমাকে খুব টানে। সত্যি কথা বলতে কি, ডভজেনকো, আইজেনস্টাইনদের শুরুর দিককার সোভিয়েত সিনেমাগুলো আমার ভিতর গভীর অনুরণন তোলে। তাদের কাছ থেকে আমি শিখেছি কীভাবে প্রকাশ করতে হয়, কীভাবে চলচ্চিত্রের ভাষা তৈরি হয়। কীভাবে দর্শক-শ্রোতাদের হৃদয়ে নাড়া দিতে একজন পরিচালকের নিজস্ব মৌলিক ভাষার সন্ধান পেতে হয়। একজন তরুণ ফিল্মমেকার হিসেবে আমি ফেলিনির চিন্তা আর রুশদের ক্যামেরার ব্যবহার থেকে অনেক কিছু শিখেছি।
আনা: তারপরও Amarcord দেখতে গিয়ে তিনবার ঘুমিয়ে গিয়েছিলেন!
কুস্তুরিকা: জীবনে আমি অনেকবার ঘুমিয়েছি, অনেকবার। দেখুন আমার ফিল্মমেকার হওয়ার কথা ছিল না। আজকে আমি যা কিছু করছি, তার কোনো কিছুর ঐতিহ্য আমার পরিবারে নেই। আমার পথ আমিই খুঁজে নিয়েছি। ছাত্রজীবনে প্রেগের বিখ্যাত অ্যাকাডেমি অব পারফর্মিং আর্টসে পড়েছি। মনে করবেন না যেন ভালো ছাত্র হবার কারণে সেখানে গিয়েছি। আসলে আমার পরিবার জানত না আমাকে নিয়ে তারা কী করবে। শেষপর্যন্ত সেখানে গিয়ে হাজির হলাম। প্রচুর সিনেমা দেখে সময় কাটানো কিংবা পরিচালক হওয়ার মনোবৃত্তি নিয়ে চলচ্চিত্র ঘাঁটার মতো মানুষ আমি ছিলাম না। শুধু জীবনকে উপভোগ করেছি আর জীবনের অর্থ খোঁজার চেষ্টা করেছি। অক্টোবরে প্রকাশিত হতে যাওয়া আমার দ্বিতীয় বইয়ে প্রাথমিক জীবনের কিছুটা প্রকাশ করার চেষ্টা করেছি। সেখানে দেখবেন রাস্তার জীবনের সঙ্গে কতটা সখ্যতা ছিল আমার। আজকের আমি হয়ে ওঠার পিছনে এর খুব প্রভাব রয়েছে। ঐ সময়ে এমনকি পরিচালক হওয়ার স্বপ্নও দেখতাম না।
আনা: আপনি যখন সিনেমা বানাতে শুরু করেছিলেন, তখন থেকে এখনকার সময়টা কী ভিন্ন, তাই না? এখন কি বুনুয়েল, ফেলেনি, বারতোলুচ্চির মতো কিংবদন্তিরা নেই?
কুস্তুরিকা: নিরপেক্ষভাবেই বলছি, আজকালকার দিনে সিনেমা ধ্বংস হয়ে গেছে। হ্যাঁ, স্রেফ ধ্বংস হয়ে গেছে। কান ফিল্ম ফেস্টিভাল আছে বলে তা-ও সিনেমার কিছুটা অস্তিত্ব আছে। ব্যপারটা হয়ে গেছে এমন, একটা মূল কেন্দ্র কিছু প্রবণতা তৈরি করে দেয়, আর অন্যেরা সেগুলো অনুকরণ করে। নিজস্বতা বলে কিছু নেই।
কান এখনো অর্থবহ চলচ্চিত্রের বড় মিলনমেলা। কিন্তু ফিল্মের বাজারই মূলত সবকিছুর নিয়ন্ত্রণকর্তা। গুণের তুলনায় পরিমাণ বড় হয়ে উঠছে। চলচ্চিত্র তৈরির ক্ষেত্রেও পদ্ধতিগত বিবর্তন ঘটেছে। আপনি আর পুরনো ধারায় চলচ্চিত্র বানাতে পারছেন না। আপনার সামনে কেবল ফ্যাশন কিংবা প্রবণতার প্রশ্ন নয়, চ্যালেঞ্জটা গতিরও। আজ আপনি অনেক সহজ পন্থায় চলচ্চিত্র বানাতে পারছেন সত্য, কিন্তু মূলধারার চলচ্চিত্রগুলো সব মানবিক দিকগুলো মুছে দিচ্ছে। মাঝে মাঝে কিছু ভালো চলচ্চিত্র হয়, তবে সিনেমা হলে সেগুলোর জায়গা হয় না। কেবল ফেস্টিভালেই দেখনো হয়। সিনেমা শিল্পের কথা ভাবুন। ৯০ শতাংশ ব্যবসা সফল ছবিই স্টুপিড। এই অথর্ব ব্লকবাস্টারের যুগে কিংবদন্তীরা টিকে থাকতে পারে না। সিনেমা কোনো ব্যবসায়িক পণ্য নয়। এটা শিল্প। এখানে থাকবে মানবিক, অস্তিত্ববাদী, রাজনৈতিক এবং ঐতিহাসিক প্রশ্নের রহস্যময়তা। কিন্তু যুগটা এমন হয়ে গেছে যে, আপনি যদি হ্যামবার্গার না খান, ভিডিও গেম পছন্দ না করেন, কিংবা আপনার যদি হলিউডের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ না থাকে, তবে আপনার সমালোচনার শেষ থাকবে না। এর চেয়ে বিপজ্জনক আর কী হতে পারে!
এমনকি আপনি যখন গভীর প্রশ্ন তুলবেন, তখনও তারা আপনাকে ঘৃণা করবে। সাম্প্রতিক সময়ে কানাডিয়ান সাংবাদিক ও লেখক নাওমি ক্লেইনের No Logo বইটির ক্ষেত্রে কী হয়েছে নিশ্চয়ই দেখেছেন। এর কারণ, সব কিছুই করা হয় একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যকে সামনে রেখে। আর সেটি হচ্ছে শোষণ। প্রতিনিয়ত সবাইকে, সবকিছুকে শেষ বিন্দু পর্যন্ত শোষণ করে নিচ্ছে তারা। এ কারণেই বর্তমান বৈশ্বিক ব্যবস্থাটা দিন দিন ধর্ষকামী হয়ে উঠছে।
আনা: কুজতেনদর্ফ (কুস্তুরিকার উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ফিল্ম এবং সঙ্গীত উৎসব) কি হলিউড শিল্পের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ?
কুস্তুরিকা: কারো বিরুদ্ধে আমি প্রতিবাদ করছি না। আমি চলচ্চিত্রে বিশ্বাস করি। যেগুলো হচ্ছে সেগুলো চলচ্চিত্র না। আমি চাই তরুণরা স্বর্গীয় আবহে বেড়ে উঠুক। তারা নিজেরা যেটা করছে, সেটা দেখতে শিখুক। চিন্তাভাবনায় বড় হয়ে উঠুক আগামী দিনের সিনেমার জন্য। তরুণ পরিচালকরা যখন কানে আসেন, তখন তারা একাকী বোধ করে। কারো যেন কথা বলার, একসঙ্গে বসার, চিন্তাভাবনা বিনিময় করার সময় নেই। আমি চাই তাদের মিলনমেলা হয়ে উঠুক কুজতেনদর্ফ।
আনা: আপনার নিজস্ব ফেস্টিভালে নিশ্চয়ই পরিবারের একটি বড় ভূমিকা আছে?
কুস্তুরিকা: পরিবার পৌরাণিক কোনো জায়গার মতো। সবকিছু বদলাচ্ছে। পুঁজিবাদ, উত্তর-পুঁজিবাদ সবকিছু বদলে দিচ্ছে। কিন্তু আমি এখনো পরিবারে বিশ্বাস করি।
ফিচার ইমেজ:DONi NEWS