Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

লিটল থিংস: ছোট ছোট আশা আর ভালোবাসার গল্প

সিনেমা হলে গিয়ে মোমো (ধ্রুভ) আর বিরিয়ানি মনস্টারের (কাভ্যা) পরিচয়। একজন মার্কেটিংয়ে প্রতিষ্ঠিত, অন্যজব চাকরি পেতে, থিসিসের কাজ পেতে হিমশিম খাচ্ছে। প্রতিদিন একজন অন্যজনের সাথে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হচ্ছে, আবার পরক্ষণেই আছে একসাথে। কাভ্যা আর ধ্রুভের ছোট ছোট আশা আর ভালোবাসার গল্প নিয়েই জনপ্রিয় সিরিজ ‘লিটল থিংস’। 

তারা একসাথে আড্ডা দেয়, রান্না করে, গল্প করে, অফিস শেষে দূরে কোথাও খেতে যায়, সারা রাত মুভি দেখে- এভাবেই চলতে থাকে তাদের জীবন। একসময় তাদের মধ্যে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়। মনের অমিল, মতের অমিল, কিছু উত্থান এবং পতন আসে জীবনে। একসময় দুজন দু’প্রান্তে চলে যায়। এই দূরে চলে যাওয়া কি সত্যিকার দূরে চলে যাওয়া ছিল? নাকি অন্য কিছু? ‘লং ডিস্ট্যান্স’ এই সম্পর্কে কি তাদের দুজনের সম্পর্কে দূরত্ব এনেই দিল শেষমেশ?  

চঞ্চলমতি কাভ্যা; Image Courtesy: Little Things

লেট টুয়েন্টিজে একটি যুগলের সম্পর্কে, মানুষের জীবনে যে যে নিয়ামক আসে, তার সবগুলো প্রায় নিখুঁতভাবে দেখিয়েছে এই জনপ্রিয় সিরিজ। ২০১৬ সালে ইন্ডিয়ান জনপ্রিয় ইউটিউব চ্যানেল ডাইস মিডিয়াতে এই সিরিজের প্রথম সিজন প্রকাশ পায়। প্রকাশের সাথে সাথে বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। মিথিলা পারকার (কাভ্যা কুলকারনী) এর দুর্দান্ত অভিনয় প্রাণ এনে দেয় এই শো-তে। চঞ্চল, বুদ্ধিমান, চটপটে, হাসিখুশি এই মেয়েটি ‘লিটল থিংস’ সিরিজ দিয়ে সবার মনে জায়গা করে নেয়। 

অন্যদিকে, ধ্রুভ এই শো-র মেল লিড। মজার ব্যাপার হলো, তিনি নিজেই সিরিজটির রচয়িতা। রাগ, একটু আগ্রাসী, ব্যর্থ একজন মানুষের চরিত্র নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। তার আসল নামও কিন্তু ধ্রুভ। শো-তে তার নাম ধ্রুভ ভাটস, বাস্তবে ধ্রুভ শেগাল। 

পুরো সিরিজ জুড়েই এই দুজন থাকলেও বেশ কিছু পার্শ্বচরিত্রও ছিল। কম-বেশি সবাই বেশ ভালো অভিনয় করেছে। এর মাঝে কাভ্যার কলিগদের অভিনয় মাঝেমধ্যে একটু কম-বেশি লেগেছে। কখনও ভালো, কখনও খারাপ।

কাভ্যা আর ধ্রুভ; Image Courtesy: Little Things

২০১৬ সালে এই সিরিজের প্রথম সিজন প্রকাশের কিছুদিনের মধ্যেই প্রায় ১৫ মিলিয়ন ভিউ অতিক্রম করে, যেটা এমন ছোট্ট সিরিজের জন্য ছিল অভাবনীয় ব্যাপার। এই রিভিউ লেখার সময় সেই সংখ্যা ২১ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে। এরপর নেটফ্লিক্সের জনপ্রিয়তা বাড়ার সাথে সাথে লিটল থিংস জায়গা করে নেয় নেটফ্লিক্সের প্ল্যাটফর্মে। পেইড প্লাটফর্মে যাবার পরও সিরিজটির জনপ্রিয়তা এতটুকু কমেনি। মাত্র কিছুদিন আগে শেষ হয়ে গেল জনপ্রিয় সিরিজটি। একটু বোল্ড হবার কারণে হয়তো সিরিজটি সবার কাছে ভালো লাগেনি। তবে প্রাপ্তবয়স্ক, বিশেষ করে ২০-৩০ বছর বয়সীদের কাছে নিজেদের জীবনের প্রতিফলন ছিল। 

প্রথম সিজনের অধিকাংশ মুম্বাইতে, এরপরের সিজনগুলো কখনও মুম্বাই, দিল্লি, কেরালা, নাগপুর, বেঙ্গালুরুতে ধারণ করা হয়েছে। পুরো সিরিজের ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক অদ্ভুত সুন্দর, যে কেউ মুগ্ধ হয়ে যাবে। এছাড়া ভিজুয়াল, ক্যামেরা এঙ্গেল, ব্যাকগ্রাউন্ড এলিমেন্ট, ড্রেস আপ, কালার কারেকশন, পোশাকসহ সব ধরনের কাজ ছিল মনোমুগ্ধকর। 

ধ্রুভ; Image Courtesy: Little Things

প্রতি সিজনে আলাদা আলাদা ডিরেক্টর ছিলেন, তবে সেটা কাজে বোঝা যায়নি। ডিরেক্টর হিসেবে ছিলেন অজয় ভুয়ান, রুচির অরুন আর সুমিত অরোরা। সিনেমাটগ্রাফিতে ছিলেন অনিরুদ্ধ পাটনাকর আর এডিটিং প্যানেল নিজের জাদু দেখিয়েছেন সৌম শর্মা। 

মোট ২৯ পর্বের এই সিরিজের প্রথম আর শেষ সিজন সবচেয়ে বেশি ভালো লাগার মতো। মাঝের দুটো সিজন প্রায় একই ধরনের, বিশেষ করে সিজন ৩, তুলনামূলক কম জনপ্রিয়তা পেয়েছে একঘেয়েমির জন্য। যদিও অভিনয় অনবদ্য ছিল, কিন্তু সিজন ২ আর ৩ প্রায় একই রকম হওয়ায় কিছুটা কমতি লাগবে। মনে হতে পারে, সিজন ৩ আরেকটু সুন্দর হলেও হতে পারত। 

সিজন ৪-এ কেরালার কিছু অংশ দেখিয়েছে লিটল থিংস টিম। ড্রোন শট থেকে শুরু করে সবুজ বন, দর্শনীয় স্থান, নদী, হ্রদ, বাসভ্রমণ ইত্যাদি। অন্যতম সুন্দর লেগেছে ‘হিউম্যান লাইব্রেরি’। ধ্রুভ যখন সেমিনারে, তখন মিথিলা তার ৩০ তম জন্মদিন একা একা পালন করছে কেরালায়। সাইকেলে শহরের একটা অংশ ঘুরে সে খোঁজ পায় হিউম্যান লাইব্রেরির। একজন মানুষের নিজের জীবনের গল্প শোনায় সবাইকে। আর এটাই কি কেবল লাইব্রেরির ভিন্ন বৈশিষ্ট্য? নাকি অন্য কিছু? জানার জন্য সিরিজটি মিস করা যাবে না। 

ছোট ছোট আশা আর ভালোবাসার গল্প; Image Courtesy: Little Things

অন্যদিকে ত্রিশ বছরে এসে একটি মেয়ের জীবনের চাওয়া-পাওয়া, পূর্ণতা, না পাওয়া, বিষণ্নতার ছবি- সবকিছু যেন সিজন ৪ এর ৮টি পর্বে উঠে এসেছে। এত বাস্তব, এত জীবন্ত সেই চিত্র! শৈশব-কৈশোরের স্মৃতি, হোক সে পুরুষ বা নারী- সবার জীবনের একটা বোধোদয় বোধহয় ত্রিশ বছরে এসে হয়। সেটাই আমরা দেখেছি এই সিরিজে। 

পাঁচ বছর ধরে চলা এই সিরিজের সাথে সাথে মিথিলা আর ধ্রুভ নিজেরাও বেড়ে উঠেছে, বড় হয়েছে কাভ্যা আর পর্দার ধ্রুভও। সাথে সাথে কত কিছু বদলে গেছে। টেকনোলজিতে এসেছে কত উন্নতি। সেই সময়ে ওটিটি প্লাটফর্মের নাম কী ছিল? এখন তো ওটিটি ছাড়া চলেই না। 

২০১৬ সালে যারা চাকরিজীবনে প্রবেশ করেছিল, তারা হয়তো এখন চাকরিতে ভাল অবস্থানে আছে। যারা সেসময় চাকরি পেতে সংগ্রাম করছিল, তারাও হয়তো ভালো অবস্থানে আছে। অনেক না পাওয়া-পাওয়া, হারানো-খুঁজে পাওয়াসহ সব কিছু মিলে বয়স ত্রিশে আসতে আসতে কত কিছু ঘটে যায়- তার এক প্রতিফলন এই সিরিজ। ৮.৪ রেটিং নিয়ে IMDB-তে জায়গা করে নিয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশে এই সিরিজটি তুমুল জনপ্রিয়।

This is a review of a popular Netflix Series "Little Things" in Bangla. 

Related Articles