Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

ম্যাগপাই মার্ডার্স: রহস্যোপন্যাসের রহস্য!

ডিঙ্গেল ডেল নামের ছোট্ট এক জঙ্গলের পাশে স্যাক্সবি-অন-এইভন নামের ছোট্ট এক গ্রাম। সেই গ্রামের বাসিন্দা খুব যে বেশি সেটাও না, আবার খুব কমও না। গ্রামের প্রধান স্যার ম্যাগনাস পাই। পাই বংশের উত্তরাধিকার। ম্যাগনাস পাইয়ের এক জমজ বোন আছে, নাম ক্ল্যারিসা পাই। মাত্র কয়েক মিনিটের ছোট বলেই সে বঞ্চিত হয়েছে পাই হলের সিংহাসন থেকে। এ নিয়ে তার আক্ষেপ যেমন রয়েছে, তেমনি পাশবিক অত্যাচারের জন্য আপন ভাই আর পাই হল দুটোর উপরেই রয়েছে ক্ষোভ। পাহাড় সমান কষ্ট নিয়েই নিজের জীবিকা নিজেই অর্জন করে চলেছেন।

এদিকে পাই হলে অনেক কাল ধরে কাজ করে চলেছেন মেরি ব্ল্যাকিস্টেন। সেদিন পাই হলে কেউ ছিলেন না। ম্যাগনাস পাই, তার স্ত্রী আর ছেলে ছিল গ্রামের বাইরে। চারদিকে আটকানো, বদ্ধ ঘরে মারা গেলেন মেরি। অনেক বছর আগে ছোট ছেলের অকালমৃত্যুর পর তার স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যায়। একমাত্র সম্বল বড় ছেলে রবার্ট ব্ল্যাকিস্টেনকে নিয়েই পাই হলের প্রাঙ্গনে থাকতেন। 

ম্যাগপাই মার্ডারস

তাঁর এই অস্বাভাবিক মৃত্যুকে অনেকে স্বাভাবিক ভাবলেও কেউ কেউ ভাবল ছেলে রবার্টের হাতেই খুন হয়েছেন তিনি। কারণ, ছেলে জয় নামে এক মেয়েকে বিয়ে করতে চাওয়াতে বাধা দিয়েছিলেন তিনি। রেগে গিয়ে মাকে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছিলো ছেলে। 

অন্যদিকে, কেবল ছেলে না, গ্রামের অন্য প্রায় সব মানুষ বেশ বিরক্ত ছিল মিসেস মেরির উপর। কারণ তার গোয়েন্দাগিরি। কার ঘরে বোলতার বাসা, কার বাসা থেকে কী চুরি হলো, কে কোথায় গেল, কে কী খেল- কী জানত না সে! গ্রামের প্রত্যেকটি মানুষ আছে সন্দেহের তালিকাতে। বদ্ধ ঘরে মৃত্যু হলেও সেই মৃত্যু বেশ অস্বাভাবিক। তবে গ্রামের প্রত্যেক মানুষের সন্দেহের তীর রবার্ট ব্ল্যাকিস্টেনের দিকেই। 

হবু স্বামীর উপর আনা এরকম অভিযোগ মেনে নিতে পারেনি জয় স্যান্ডার্লিং। তাই সে নিজের নার্স-কাম-রিসেপশনিস্ট এর চাকরি ফাঁকি দিয়ে ছুটল এক গোয়েন্দার কাছে। গোয়েন্দার কাছে তার আবদার, গ্রামে গিয়ে শুধু বলতে হবে, যে সময়ে মেরি মারা গিয়েছিলেন, তখন জয় আর রবার্ট একসাথে ছিল। অতএব রবার্ট খুনী নয়। বিখ্যাত গোয়েন্দা অ্যাটিকাস পান্ড ও তার সহযোগী জেমস ফ্রেজার। দুঁদে গোয়েন্দা বলতে যা বোঝায়। জেমস কিছুটা বোকাসোকা স্বভাবের হলেও নিজের বসকে খুব বেশি শ্রদ্ধা করে। পান্ড নিজের কিছু কাজ শেষ করতে চাইছিলেন, গোপনে কিছু কাজও করে যাচ্ছিলেন, যেটা নিয়ে ফ্রেজারও জানত না। 

নিরাশ হয়ে গ্রামে ফিরে এলো জয়। নিজের কাজের টাইপ রাইটার ব্যবহার করে কিছু চিঠি লিখল, খুব গোপনে। এরপর সেটা পাঠিয়ে দিল ঠিক জায়গাতে।  

কিন্তু মেরির অস্বাভাবিক মৃত্যুর কিছুদিন যেতে না যেতেই, রহস্য উদ্ধারের আগেই, সেই গ্রামের মাথা, পাই হলের উত্তরাধিকারী স্যার ম্যাগনাস পাইও খুন হলেন সেই একই বাড়িতে। নির্মমভাবে কেউ ধড়-মাথা আলাদা করে দিয়েছে, নিঃসন্দেহে প্রচণ্ড প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন তিনি। এই হলের ফায়ার প্লেসে পাওয়া গেল একটা পোড়া চিঠি, কিছু খাম। অন্যদিকে, মেরি আর ম্যাগনাসের এরকম মৃত্যুর মধ্যে পাই হলে চুরি হয়েছিল। মিসেস পাইয়ের অয়েল পেইন্টিং কেউ পুড়িয়ে দিয়েছিল হিংস্রভাবে। অনেক মূল্যবান সোনা-রূপা হারিয়ে গিয়েছিল সেদিন। 

এদিকে, কিছুটা স্বৈরাচারী স্বভাবের পাই চেয়েছিলেন ডিঙ্গেল ডেল নামের এই ছোট্ট বনের জায়গাতে গড়ে তুলবেন আবাসিক এলাকা। ডিঙ্গেল ডেল ছিল এই গ্রামের প্রাণ। প্রতিটি মানুষের কিছু না কিছু মধুর কিংবা তিক্ত স্মৃতি আছে এই ডেলে। কেউ চাচ্ছিল না ডিঙ্গেল ডেল হারাতে। 

অনেক বছর আগে ঠিক এই পাই হলেই আরো দুটো খুন হয়েছিল। মেরির ছোট ছেলে টম আর তার পোষা কুকুর বেলা। পাই হল কি তবে খুনের পিপাসায় মেতে উঠল এতগুলো বছর পরে?   

যে গ্রামে আসতে চাননি, ম্যাগনাস মারা যাবার পর সেই গ্রামে এলেন অ্যাটিকাস পান্ড। রহস্য উদঘাটনের জন্য স্থানীয় পুলিশ আর সহযোগীকে নিয়ে বেশ ভালোভাবেই তদন্ত করছিলেন তিনি।

গ্রামের প্রতিটি মানুষ ছিল সেই সন্দেহের তালিকায়। তিনি রহস্য প্রায় উদঘাটন করেই ফেলেছিলেন, এমন সময় ঘটল আরো এক অদ্ভুত ঘটনা। সেই ঘটনার কথা এখানে না বলি, তাহলে আর বই কেন পড়বেন? তবে পাই হল থেকে ফিরেই পান্ড আত্মহত্যা করলেন। সত্যিই কি এই পাই হল অভিশপ্ত? রক্তের নেশায় মেতে আছে? 

রহস্যে মোড়া রহস্য উপন্যাস

অন্যদিকে অ্যালান কনওয়ে একজন রহস্যোপন্যাস লেখক। শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে হয়ে ওঠেন এক গোয়েন্দা গল্পের লেখক। তিনি বলেছিলেন, তিনি সর্বোমোট নয়টি রহস্য উপন্যাস বের করবেন। ঠিক কোন কারণে তিনি নয়টি উপন্যাসই বের করবেন, সেই রহস্য অমীমাংসিত। এর মধ্যে একে একে তার আটটি উপন্যাস বের হয়েছে। নবম এবং শেষ উপন্যাস বের হবার কিছুদিন আগেই প্রকাশনীতে পাঠানো তার পান্ডুলিপির বেশ কিছু অংশ গায়েব হয়ে গেল। বোধহয় তিনি বাকি অংশ পাঠাতে ভুলে গিয়েছেন। কিন্তু সেই বাকি অংশ খোঁজ করতে গিয়ে জানা গেল- তিনি আত্মহত্যা করেছেন! কিন্তু বই তো শেষ করতে হবে।

সেই পান্ডুলিপির খোঁজে নামলেন সুয্যান র‍্যাইল্যান্ড। ক্লোভারলিভ বুকসের সম্পাদক। সমগ্র বাড়ি, কম্পিউটার, ডেস্ক, স্টাডি রুম তন্ন তন্ন করে খুঁজলেন। কিন্তু কর্পূরের মতো উবে গেছে সেই পাণ্ডুলিপি।এদিকে, সেই হারানো অংশ খুঁজতে গিয়ে সুয্যানের মনে হলো, অ্যালান আত্মহত্যা করেননি, খুন হয়েছেন। হয়তো জনপ্রিয়তা তার মৃত্যুর কারণ হয়েছিল। হারানো পাণ্ডুলিপি খুঁজতে গিয়ে একজন সম্পাদক নিজেই গোয়েন্দা হয়ে উঠলেন। 

এই যে এতগুলো হত্যা, খুন, আত্মহত্যা, চুরি- সবগুলোই কি একসূত্রে গাঁথা? নাকি অন্য কোনো সত্য আর গোপন রহস্য আছে এর পেছনে? গোয়েন্দা পান্ড আর লেখক কনওয়ে কি আসলেই আত্মহত্যা করেছিলেন? পাই হল কি আসলেই অভিশপ্ত? নাহলে মেরির শেষকৃত্যে কেন এলো সেই ম্যাগপাই পাখিগুলো। এতগুলো খুনের রহস্যের সমাধান শেষপর্যন্ত কি হয়েছিল?

ম্যাগপাই পাখির রহস্যের সমাধান রয়েছে কি? 

মেরি, পাই, পান্ড, কনওয়ে, টম, বেলা নামের কুকুর- সবাই অস্বাভাবিকভাবে মারা গেছে। এতগুলো অস্বাভাবিক মৃত্যুর পেছনে আসলে কী আছে? আর সেই যে চুরি যাওয়া সোনা-রুপা, সেগুলোর মধ্যে কি আছে এই রহস্যের সমাধান?

এর মধ্যে আর একটি মজার তথ্য হলো, পাই হলের ম্যাগনাস পাই আর আল্যান কনওয়ে, দুজনেরই শখ ছিল শব্দ-জব্দ, অ্যানাগ্রাম ও কোড তৈরি করে খেলা। 

পুরো বইটি পড়া শেষে পাঠ-প্রতিক্রিয়ার ব্যাপারে আমি কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত। অনেকদিন পর এরকম থ্রিলিং একটি বই পড়লাম। বইয়ের প্রথমে ফ্ল্যাপের কথাগুলো পড়ে তেমন কিছুই বুঝিনি। পরে যখন শুরু করলাম, তখন প্রথমদিকের কিছু অংশ অসংলগ্ন লাগলেও কিছুদূর পড়ে আসল গল্প ঠিকই বুঝতে পারি। অনুবাদ যথেষ্ট সাবলীল। অ্যান্টনি হরোউইট্‌য্‌ এর বই এবারই প্রথম পড়লাম। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ধরে রেখেছেন তিনি পাঠককে। আসল খুনী কে সেটা হয়তো অনেকে বুঝতে পারবেন, অনেকে পারবেন না। কিন্তু রক্তে শিহরণ জাগানোর মতো উপন্যাস এটা- নির্দ্বিধায় সেটা বলাই যায়। 

ফ্ল্যাপে লেখা কথাগুলো 

লেখক ও অনুবাদক পরিচিতি

আন্টনি হরোউইট্‌য্‌ একজন সব্যসাচী লেখক। টিভি সিরিজ থেকে শুরু করে উপন্যাস, চিত্রনাট্য, নাটক  সব লিখে চলেছেন সমানভাবে। ৪০টির বেশি বই আছে তার। তাকে জনপ্রিয় করে তোলে ‘ম্যাগপাই মার্ডার্স’ নামের এই বইটি।

অনুবাদক সায়েম সোলায়মান বেশ দক্ষতার সাথেই বইটি অনুবাদ করেছেন। খুব সুন্দরভাবে মূল অর্থ ও ভাব ঠিক রেখেই অনুবাদে মুন্সিয়ানা প্রদর্শন করেছেন। 

লেখক এবং অনুবাদক 

বই হলো এমন এক বন্ধু, এমন এক মাধ্যম, যা আমাদের মনের জানালা খুলে দেয়। সব কিছু নতুন করে ভাবতে শেখায়। বই পড়ুন, নিজের জানার লিস্টে যুক্ত করুন নতুন সব তথ্য।

অনলাইনে বইটি কিনতে ক্লিক করতে পারেন এই লিঙ্কে:

১) ম্যাগপাই মার্ডার্স

This is a book review on the book 'Magpie Murders' by Anthony Horowitz.

 

Related Articles