রামেসিস: ফারাও দ্বিতীয় রামেসিস ও প্রাচীন মিশরের অনবদ্য আখ্যান

মিশর এক রহস্যের নগরী, আজও এত যুগ পরেও যে তার রহস্য ধরে রেখেছে সযত্নে। এই রহস্যের টানে যুগে যুগে কৌতুহলী পর্যটক, প্রত্নতাত্ত্বিক, বিজ্ঞানী, সাহিত্যিকসহ সব ধরনের, সব পেশার মানুষ বারবার ছুটে গেছে মিশরে। 

কিন্তু বিশাল পৃথিবীর সবার সেই সুযোগ হয় না। মিশরকে জানার এই তৃষ্ণা মেটাতে মানুষ তাই আশ্রয় নিয়েছে শব্দের। মিশরের ইতিহাস নিয়ে, ফারাওদের নিয়ে লেখা হয়েছে শত শত ফিকশন ও নন-ফিকশন বই। এরকমই একটি উপন্যাস সিরিজের নাম রামেসিস। লেখক, ক্রিশ্চিয়ান জাঁক।

রামেসিস মানে, ফারাও দ্বিতীয় রামেসিস। ফারাও প্রথম সেটির দ্বিতীয় পুত্র। প্রাচীন মিশরের ইতিহাসে যিনি ‘মহান রামেসিস’ ও ‘মহান পূর্বসূরী’ নামে খ্যাত। পাঁচ পর্বের এই সিরিজে রামেসিসের ছোট বেলা থেকে শুরু করে একদম মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও তৎকালীন মিশর উঠে এসেছে বিস্তৃত পরিসরে। এসেছে সে সময়ের গুরুত্বপূর্ণ ও বিচিত্র সব চরিত্র। মিশরীয়দের জীবন-যাপন, আচার-বিশ্বাস ইত্যাদির কথা। রামেসিস তাই শুধু দ্বিতীয় রামেসিসের গল্প নয়, বরং প্রাচীন মিশরের এক অনবদ্য আখ্যান।

ফিকশন ও বাস্তবতা

বইগুলো পড়ার আগে একটা জিনিস বুঝতে হবে। সিরিজটা যেহেতু ফিকশন, তাই একে ইতিহাস হিসাবে ধরে নেয়া যাবে না। প্রত্নতত্ত্ব বা ধর্মীয় ইতিহাস থেকে আমরা যে মিশরের কথা পাই, সেই মিশরের সঙ্গে  ক্রিশ্চিয়ান জাঁকের মিশরের কিছুটা পার্থক্য আছে।

ঐতিহাসিকভাবে জানা ঘটনাগুলোকে বিভিন্ন জায়গায় কিছুটা ভিন্নভাবে দেখিয়েছেন লেখক। মোজেস বা মূসা (আঃ) এর চরিত্রকে খানিকটা ভিন্নভাবে চিত্রায়িত করেছেন। ইহুদী ও ইসলামী ইতিহাস থেকে মূসা (আঃ) ও ইহুদীদের এক্সোডাস, মানে মিশর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনা যেরকম বলে জানা যায়, এখানে ঘটনাগুলো সেভাবে আসেনি। এছাড়াও, লেখক বাস্তব ও যৌক্তিক ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন রামেসিস-এর ১০০ পুত্রের। (হ্যাঁ, দ্বিতীয় রামেসিসের ১০০টি পুত্র ছিল!) দেখিয়েছেন, হোমার ও হেলেন মিশরে এসেছে।

বলে রাখা ভাল, অনেকে মনে করেন, মূসা (আঃ) এর সময় যে ফারাও পানিতে ডুবে মারা গেছেন, তিনিই দ্বিতীয় রামেসিস। প্রত্নতাত্তিক ইতিহাস আমাদের অন্যরকম ইঙ্গিত দেয়। ধর্মীয় ইতিহাসেও সরাসরি রামেসিসের কথা বলা নেই। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে পড়ুন ইহুদী জাতির ইতিহাস (পর্ব এগারো): মরিস বুকাইলি আর ফিরাউনের সেই মমি

উপভোগ করার জন্য তাই প্রথমেই মাথায় রাখতে হবে, সিরিজটা উপন্যাস। লেখক এখানে তার মতো করে প্রয়োজনীয় কল্পনার আশ্রয় নেবেন, সেটাই স্বাভাবিক।এটুকু বাদ দিলে, বইটিতে মিশরীয়দের জীবন ও আচার ব্যবস্থা ইত্যাদির যে বিস্তৃত বর্ণনা উঠে এসেছে, রামেসিসের কিংবদন্তীর সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন ঘটনার সঙ্গে জড়িত চরিত্ররা যেভাবে এসেছেন, তা এক কথায় দুর্দান্ত। সিরিজটির বিশেষত্বও এখানেই।

রামেসিস: দ্য সান অব লাইট; Image Source: Goodreads

প্রথম বই – রামেসিস: দ্য সান অব লাইট

পিতা সেটি চৌদ্দ বছরের কিশোর রামেসিসকে একটা বিশাল ষাঁড়ের সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। যে সে ষাঁড় না। এই ষাঁড় হচ্ছে দেবতা তাহ-এর অবতার। নাম এপিস। মিশরবাসীদের বিশ্বাস অনুসারে, তাহ হচ্ছেন কারিগরি বিদ্যার দেবতা। পাশাপাশি, ষাঁড় শক্তি, সাহস ও প্রজনন ক্ষমতার জন্য বিখ্যাত। দুইয়ে মিলে, একমাত্র ফারাও ছাড়া আর কেউ এই ষাঁড়কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারার কথা না। ফারাও পারেন, কারণ তিনি পৃথিবীতে দেবতাদের অবতার হয়ে এসেছেন। ফারাও সেটির তাই দৈব ক্ষমতা আছে। চৌদ্দ বছরের বালক রামেসিসের সেই ক্ষমতা নেই। তার ফারাও হওয়ারও কথা না। কারণ, সেটি ইতোমধ্যেই তার বড় ছেলে শানারকে ভবিষ্যত ফারাও হিসাবে নির্বাচন করে ফেলেছেন। রামেসিস ভাবছে, বাবা তাহলে তার পরীক্ষা নিচ্ছে কেন?

এভাবেই শুরু হয়েছে রামেসিস: দ্য সান অব লাইট। রামেসিসের বেড়ে ওঠা, প্রজ্ঞাবান হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলা, সেটির শিক্ষা, ইসেট ও নেফারতারির ভূমিকা, রামেসিসের যুবরাজ ও ভবিষ্যৎ ফারাও হিসাবে ক্ষমতা গ্রহণ, বিভিন্ন রাজনৈতিক চাল ও ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা ইত্যাদি এই বইতে বিস্তারিতভাবে উঠে এসেছে।

পড়তে পড়তে পাঠকের রামেসিসকে ভাল লেগে যাবে নেফারতারিকে নিয়ে তার মনোভাব ও এর প্রকাশ দেখে। মিশরের আবু সিম্বেলের মন্দির আজও সেই ভালবাসা ও শ্রদ্ধার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই মন্দির নির্মাণের পেছনের প্রেক্ষাপট ছোট্ট করে বলে দেয়া আছে এই বইতে। ইসেট, যার পূর্ণাঙ্গ নাম ইসেত-নফ্রেত (অর্থ, পরম সুন্দরী আইসিস) তার দ্বিতীয় স্ত্রী। তাকেও রামেসিস যে মর্যাদা দিয়েছেন, প্রাচীন মিশরে এরকম উদাহরণ বিরল।

অবশ্যই, রামেসিসকে এখানে অতিরক্ত মহান বলে দেখানো হয়েছে, ঠিক কিংবদন্তীর মতোই। তবে গল্পের ধরন বেশ বিশ্বাসযোগ্য। খুঁটিনাটিগুলো চমৎকারভাবে উঠে এসেছে, তাই পড়তে ভাল লাগে।

রামেসিস: দ্য ইটার্নাল টেম্পল; Image Source: Goodreads

দ্বিতীয় বই – রামেসিস: দ্য ইটার্নাল টেম্পল

প্রথম বইটার তুলনায় এটা ঘটনাবহুল না। তবে এখানে রামেসিসের রাজধানী পাই-রামেসিস গড়ে ওঠা, ব্যাটেল অব কাদেশের প্রেক্ষাপট, শানারের ষড়যন্ত্র, আবু সিম্বেলের মন্দির বানানোর প্রেরণা, মোজেসের মোজেস হয়ে ওঠা- ইত্যাদি এসেছে। তবে, আগেই যেমন বলেছি, মোজেস এখানে ইসলাম ধর্মের সেই মূসা (আঃ) নন, যিনি আল্লাহর খোঁজে বেরিয়ে পড়েছিলেন। ওল্ড টেস্টামেন্টের মোজেসও নন তিনি। এই মোজেস আখেনাতেনের সূত্র ধরে একেশ্বরবাদের দিকে যাচ্ছেন, যদিও আখেনাতেন ছিলেন আতেন-এর পূজারী। আর, আতেন ওল্ড বা নিউ টেস্টামেন্টে বর্ণিত স্রষ্টা নন। তবে মোজেসের মিশর ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার ইতিহাসটা (ইসলাম ধর্মের বর্ণনাতেও এসেছে) এর মধ্যে দারুণভাবে গেঁথে দেয়া হয়েছে।

ন্যারেটিভ অনুযায়ী, রামেসিস-এর কিংবদন্তী হয়ে ওঠার পথটা দেখাচ্ছেন লেখক। গড়ে উঠছে তার মধ্যকার দৈবশক্তি। পরবর্তী বইতে কাদেশের যুদ্ধ হবে। ঐতিহাসিক সেই যুদ্ধের জন্য এই বইটার পুরোটা জুড়ে প্রস্তুত হয়েছেন রামেসিস, লেখকের কলমে। তবে ঘটনার ঘনঘটা যেহেতু কম, একটু দমবন্ধ লাগতে পারে অনেক পাঠকের। এর সবটা অবশ্য পুষিয়ে দেবে সিরিজের তৃতীয় বই- দ্য ব্যাটেল অব কাদেশ।

রামেসিস: দ্য ব্যাটল অব কাদেশ; Image Source: Goodreads

তৃতীয় বই – রামেসিস: দ্য ব্যাটেল অব কাদেশ

প্রাচীন মিশরের ইতিহাসের সবচেয়ে বিখ্যাত যুদ্ধগুলোর একটি এই কাদেশের যুদ্ধ। কিংবদন্তী অনুযায়ী, রামেসিস মিশরীয় বাহিনী নিয়ে কাদেশ পোঁছে দেখেন, প্রতিপক্ষ হিট্টিরা পালিয়ে গেছে। হিট্টিরা ছিল মিশরীয়দের জাত শত্রু। রামেসিস তাই খুশি হয়ে গেলেন। যুদ্ধ না করতেই জয়! সেনাবাহিনীকে বিশ্রাম নিতে বললেন তিনি। আসলে, হিট্টিরা ফাঁদ পেতেছিল মিশরীয় বাহিনীর জন্য। হিট্টিদের চতুর সেনাপ্রধান মুওয়াত্তালি আশেপাশের বন-জঙ্গলের সুযোগ নিয়ে সেনাদের লুকিয়ে থাকতে বলেছিলেন। মিশরীয় বাহিনী যে মুহূর্তে যুদ্ধের কথা ভুলে বিশ্রাম নিতে বসল, হিট্টিরা সর্বশক্তিতে ঝাঁপিয়ে পড়ল মিশরীয়দের ওপর। অর্ধেক মিশরীয় সেনা মারা পড়ল ওদের হাতে। বাকি অর্ধেক ফারাওকে রেখে পালিয়ে গেল।

কাদেশের যুদ্ধ্বে প্রবল বিক্রমে লড়াই করছেন রামেসিস; Image Source: camrea.org

কিংবদন্তী বলে, রামেসিস সেদিন দেবতা আমন রা-এর সঙ্গে সরাসরি কথা বলেছিলেন। আমন রা আশীর্বাদ করেন ফারাওকে। দেবতার মতো শক্তিশালী হয়ে ওঠেন ফারাও। একাই ঝাঁপিয়ে পড়েন শত্রুদের ওপর। তার একার বিক্রমে হিট্টিরা সেই যুদ্ধে হেরে গিয়েছিল। এই যুদ্ধই রামেসিসের নামের সঙ্গে ‘মহান’ কথাটা জুড়ে দেয়। তার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে সবখানে।

এই বইতে কাদেশের যুদ্ধের কিংবদন্তীকে লেখক অন্য মাত্রা দিয়েছেন। বিশ্লেষণ করেছেন যুদ্ধের আগের প্রতিটা মুহূর্তকে, প্রতিটি রাজনৈতিক চালকে। গড়ে তুলেছেন রামেসিসের দুর্দান্ত এক দৈবব্যক্তিত্ব। পাশাপাশি, শানারের ষড়যন্ত্র, নেফারতারির অসুস্থতা থেকে সেরে ওঠা, সেই সূত্র ধরে ফিরে আসা আবু সিম্বেলের মন্দির ইত্যাদি এখানে আবারো এসেছে। সেই সঙ্গে উঁকি দিয়ে গেছে ইসেট, ইতিহাসে যার ভূমিকা আছে- যিনি প্রস্তুত হচ্ছেন ঠিক সেই উদ্দেশ্যেই।

রামেসিস: দ্য লেডি অব আবু সিম্বেল; Image Source: Goodreads

চতুর্থ বই – রামেসিস: দ্য লেডি অব আবু সিম্বেল

হিট্টিদের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করেছেন রামেসিস। নির্মাণ করেছেন আবু সিম্বেলের মন্দির। নেফারতারি ইসেটকে রাজমহিষীর (প্রধান রানী) সহকারী হতে বলেছেন। কিছুটা শান্তি এসেছে মিশরে। হিট্টি সমস্যার পাশাপাশি শানারের সমস্যাও সমাধান হয়েছে। দ্বিতীয় বই থেকে চলে আসা বেশ কিছু চরিত্র পরিণতি পেয়েছে এই বইতে।

আবু সিম্বেলের মন্দির; Image Source: theworldtravelguy.com

এই বইয়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রদের একজন নেফারতারি। যার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই রামেসিস নির্মাণ করেছেন আবু সিম্বেলের মন্দির। ইতিহাস হোক বা গল্প, নেফারতারির চরিত্র মুগ্ধ করার মতো। আর, তার প্রতি রামেসিসের ভালবাসা আজো কিংবদন্তী হয়ে আছে। এখানে সেটা চমৎকারভাবে ফুটেছে।

তবে রামেসিসের দিক থেকে দেখলে, ইসেট এখানে অনেকটাই বঞ্চিত। যুগে যুগে প্রায় সব ছেলেরাই প্রেম করতে চেয়েছে ইসেটের সঙ্গে, বিয়ে করতে চেয়েছে নেফারতারিকে। সমস্যা হলো, ইতিহাস ইসেটদের সেভাবে মনে রাখে না। দুঃখজনক, কিন্তু অনস্বীকার্য বাস্তব।

রামেসিস: আন্ডার দ্য ওয়েস্টার্ন অ্যাকাশিয়া; Image Source: Goodreads

পঞ্চম বই – রামেসিস: আন্ডার দ্য ওয়েস্টার্ন অ্যাকাশিয়া

সিরিজের সমাপ্তি। যেমনটা হওয়ার কথা ছিল, সেরকমই হয়েছে। ইসেট দাগ কেটে গিয়েছেন। কিছু কিছু মানুষ অনেক দেয়ার পরেও কিছু না পেয়েই চলে যায়। ইসেটও সেরকম একজন। সেই হাহাকারটা রয়ে যাবে পাঠকের মনে।

রামেসিসের কিংবদন্তীকে চমৎকারভাবে পূর্ণতা দিয়েছেন লেখক। মারা গেছেন রামেসিস। শায়িত হয়েছেন অ্যাকাশিয়া বৃক্ষের ছায়ায়।

লেখক বইয়ের শেষে মোজেস-এর কিংবদন্তীকেও মোটামুটি গুছিয়ে এনেছেন। তবে, শেষ করেননি। ইতিহাসের সঙ্গে যা অনেকটাই মিলে যায়। এ নিয়ে আরও বিস্তারিত জানতে হলে অবশ্য সিরিজটা পড়ে ফেলতে হবে। এছাড়াও, প্রাচীন মিশর ও ইহুদীদের ইতিহাস বিস্তারিত জানতে চাইলে পড়া যেতে পারে ইহুদী জাতির ইতিহাস। (বইটির ১৭টি অধ্যায় উন্মুক্ত করে দেয়া আছে। পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, বইটির বিস্তারিত রিভিউ পড়া যাবে এখানে।)

ক্রিশ্চিয়ান জাঁক; Image Source: Christian Jacq

লেখক পরিচিতি

ক্রিশ্চিয়ান জাঁক একজন ফরাসী মিশরবিদ। তের বছর বয়সে হিস্ট্রি অব এনশিয়েন্ট ইজিপশিয়ান সিভিলাইজেশন পড়ার পর মিশর নিয়ে প্রচণ্ড আগ্রহী হয়ে ওঠেন। পিএইচডিও করেছেন এই বিষয়ের ওপর। ৫০টিরও বেশি বই লিখেছেন তিনি মিশর নিয়ে। এরমধ্যে ফিকশনের পাশাপাশি নন-ফিকশনও আছে বেশ কিছু। রামেসিস সিরিজটি তাকে সত্যিকার অর্থে বিখ্যাত করে তুলেছে। বলে রাখা ভাল, বইগুলো তিনি লিখেছেন তার মাতৃভাষা, ফ্রেঞ্চ-এ।

স্ত্রীর সঙ্গে মিলে রামেসিস ইন্সটিটিউট নামে প্রতিষ্ঠা করেছেন জাঁক। প্রতিষ্ঠানটি মিশরের ধ্বংসপ্রায় বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনার বিস্তারিত ছবি তুলে সংরক্ষণ করে। যাতে স্থাপনাগুলো হারিয়ে গেলেও ইতিহাসটুকু রয়ে যায় কালের খাতায়।

অনুবাদ

ফিকশন বনাম বাস্তবতা অংশেই বইটির ভাল-মন্দ দিকগুলো নিয়ে মোটামুটি লিখেছি। তাই আলাদাভাবে মূল সিরিজটির সমালোচনা আর করার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।

বাঙালি পাঠকদের জন্য চমৎকার ব্যাপার হচ্ছে, এই সিরিজটির পাঁচটি বই-ই বাংলায় অনুদিত হয়েছে। প্রকাশক, আদী প্রকাশনী। তবে সবগুলো বই একই অনুবাদক অনুবাদ করেননি।

প্রথম ও শেষ বইটি করেছেন মোঃ ফুয়াদ আল ফিদাহ। অনুবাদক হিসাবে তিনি বেশ ভাল। অনুবাদে প্রাচীন মিশরের আমেজ তাই ভালই ফুটেছে। সিরিজের পঞ্চম বইটির অনুবাদ পড়তে পড়তে পাঠক অবশ্য একটা জিনিস টের পাবেন। প্রথম বই থেকে শেষ বইয়ের অনুবাদ ভাল হয়েছে, আগের চেয়ে অনেক পরিণত হয়েছে। প্রথম বইতে বেশ কিছু বাক্য আছে, যেগুলো পড়তে গিয়ে খানিকটা থমকে যেতে হয়। শেষ বইতে এ সমস্যা চোখে পড়বে না।

স্রিরিজের শেষ বই রামেসিস: আন্ডার দ্য ওয়েস্টার্ন অ্যাকাশিয়া-এর বাংলা অনুবাদ; Image Source: Goodreads

দ্বিতীয় বইটি অনুবাদ করেছেন মারুফ হোসেন। তৃতীয়টি, ওয়াসি আহমেদ রাফি। দুজনেই বেশ ভাল কাজ করেছেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, এই দুটি বই পড়তে গিয়ে প্রথম বইয়ের সাথে তুলনা করলে একবারও মনে হবে না, ভিন্ন কেউ অনুবাদ করেছেন। হ্যাঁ, বাক্য গঠন বা কথোপকথনে ভিন্নতা আছে। তবে বইয়ের মূল সুর ও মিশরের আমেজ ছিল অটুট।

চতুর্থ বইটি অনুবাদ করেছেন ইমতিয়াজ আজাদ। অনুবাদ সামান্য অপরিণত। বাক্যের গঠন, শব্দচয়ন, বাহুল্যের পাশাপাশি ভুল করে যখন/যদি-এর মতো শব্দ একই বাক্যে, একই জিনিসের দিকে ইঙ্গিত করে একাধিকবার ব্যবহার মাঝে মাঝে থমকে দেয় পড়ার গতি। অবশ্য, এটি তার প্রথম অনুবাদ। সে হিসাবে বলতে হবে, মন্দ না। পরের কাজগুলোতে ভালো করবেন। 

সবমিলিয়ে, রামেসিস সিরিজ প্রাচীন মিশরে আগ্রহীদের জন্য অদ্ভুত এক জানালা খুলে দেবে। যে জানালা দিয়ে ফিরে যাওয়া যাবে ফারাও দ্বিতীয় রামেসিসের প্রাচীন মিশরে। যেখানে ভালবাসা আছে, ষড়যন্ত্র আছে, কালো জাদু আছে, আছে যুদ্ধ ও সংশ্লিষ্ট কিংবদন্তী। যে কিংবদন্তী ইতিহাসের সাথে মিলে-মিশে এক হয়ে গেছে।

রামেসিস-এর সবগুলো কালেকশন একসাথে পেতে ভিজিট করুন।

This is a review of the Rameses Series by Christian Jacq in Bengali. The series is a work of fiction. It illustrates the life of Rameses II and Ancient Egypt during his lifetime and under his ruling.

Feature Image: hipwallpaper.com

Related Articles

Exit mobile version