Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

হ্যালোউইনের রাত নিয়ে বানানো ৫টি অপরিচিত হরর সিনেমা

প্রতিবছর ৩১ অক্টোবর দিনটা ‘হ্যালোউইন’। বিভিন্ন পশ্চিমা দেশের খ্রিষ্টিয় সংস্কৃতিতে বেশ গুরুত্ব আর আনন্দের সাথেই এই দিনটি উদযাপন করা হয়। মৃত, শহীদ, সাধুদের আত্মার নিবেদনে বিশাল ভোজ আর উৎসবের মাধ্যমে পালন করা হয় এই দিন। এই দিনে মৃতদের আত্মারা নেমে আসে বলে মজাদার লোককথা প্রচলিত আছে।

যাকগে, সেটা এই আলোচনার উদ্দেশ্য নয়। কিছুটা ভূমিকা টানতেই বলা। নানান অদ্ভুত পোশাক পড়ে, প্র্যাংক করে, ভয় দেখিয়ে, ভয়ের গল্প বলে, পার্টি করে; হ্যালোউইন উদযাপন করা হয়। হরর সিনেমা দেখাটাও এসবের সাথে যুক্ত হয়েছে। সিনেমা নিয়েই এই আলোচনা। জন কারপেন্টারের কাল্ট ক্লাসিক ‘হ্যালোউইন’ (১৯৭৮) দিয়েই, হ্যালোউইন-নির্ভর ‘হরর’ একটা সাবজনরা হয়ে গেছে। এরপর এখনো সেই ফ্র্যাঞ্চাইজি তো চলছেই, সাথে অনেক অনেক হরর তো হয়েছেই। এই লেখাটিতে হ্যালোউইনের আশেপাশে কিংবা ওই আবহের নয়, বরং একদম হ্যালোউইনের প্রেক্ষাপটে নির্মিত হররগুলো থেকে ৫টি হরর সিনেমা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। একদম স্বল্প পরিচিত কিংবা অপরিচিত হ্যালোউইন হররগুলোকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

থার্টি ওয়ান (২০১৬) 

গোটা মুখে সাদা রঙ মেখে এসেছে সে। উপস্থিতিটাই এমন যে, দেখলেই ভয় করে। সাইকোপ্যাথ না হয়ে যায়ই না। ঝাড়া কয়েক মিনিট সে কথা বলে, কীভাবে কীভাবে মারবে। প্রথমে মনে হয়, বলছে দর্শককে। ক্যামেরা প্যান করলে দেখা যায় চেয়ারে হাত-পা বাঁধা এক শিকার বসে আছে। এই সাইকোপ্যাথের নাম ডুমহেড। সিনেমার তৃতীয় অংকে ঘটবে যার প্রবেশ।

এই সিনেমার গল্প হ্যালোউইনের আগেরদিনের। কার্নিভালে কাজ করা পাঁচ লোক তাদের ট্রেলার গাড়ি নিয়ে যাওয়ার পথেই একটা দলের হাতে ধরা পড়ে। তাদেরকে অপহরণ করে একটা বিশাল কম্পাউন্ডে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। বিকৃতমনা কিছু ধনবান ব্যক্তি তাদের নামায় এক মরণখেলায়। খেলার নাম – ৩১। বারো ঘণ্টা সময়। এর মাঝেই একের পর এক বদ্ধ উন্মাদদের নামানো হয় খেলায়। খুনে উন্মাদদের কাজ অপহৃত পাঁচজনকে মারা। আর পাঁচজনের একটাই লড়াই, বেঁচে থাকার। ওই বিকৃতমনা বড়লোকদের কাছে এটাই হ্যালোউইন গেইম। 

রব জম্বির সিনেমা ‘৩১’। তার সিনেমা যেমন হয়, খুব বেশি উপাদান থাকে না। সেটা নিয়ে তার কাজও নয়। তার সিনেমাগুলোর প্রকৃতি এককথায়, বেপরোয়া। ভায়োলেন্স দিয়েই মানুষের স্যাডিস্টিক আচরণটাকেই দেখানোর চেষ্টা করেন। মাঝেমাঝে সেটাকে ‘বৈধতা’ দেওয়ার অবস্থান থাকে না। ‘৩১’-এর শুরুতে কাফকার একটা উক্তি দেওয়া হয়। “জীবনকে বুঝতে শুরু করার প্রথম সাইন হলো – মরার খায়েশ জাগা।” এই উক্তি দিয়েই ‘৩১’-এর এই বিনাশী খেলাকে খণ্ডন করা যায়। আপাতদর্শনের একটা জায়গা তখন যোগ হয়। একদম নিগূঢ় আর বাঁকা হাস্যরস দিয়েই সেটা প্রকাশ করে রব জম্বি। এছাড়া আর কিছুই হয়ে উঠার চেষ্টা করেনি সিনেমাটা। রব জম্বির প্রথম সিনেমা ‘হাউজ অভ ১০০০ কর্পস’-এর কাস্টের পাশাপাশি আবহে-ভাবে জগৎটাতে ওটারই সাদৃশ্যতা পাওয়া যায় এই সিনেমায়। মেটাল মিউজিশিয়ান হওয়ায় ওই মিউজিকের যেই উন্মত্ততা, সেটাই পাওয়া যায় এই সিনেমায়। পাড় জনরা ভক্ত আর রব জম্বির ভক্ত, উভয়ের কাছে আবেদন রাখবে ‘৩১’।

Image Source: Palmstar Entertainment

হন্ট (২০১৯)

হ্যালোউইনের রাত। হয় দলবেঁধে ভয় লাগাবে, না হয় দলবেঁধে কোনো পরিত্যক্ত জায়গা কিংবা ভীতিকর কোনো জায়গায় যাওয়া হবে ভয় পেতে। এছাড়া তো এই রাতের পূর্ণতা আসে না। আর ভয়ের প্রতি দুর্বলতা তো মানুষের প্রকৃতিতেই মিশে আছে, মানুষ মজ্জাগতভাবেই ভয় পাবার বিষয়টা উপভোগ করে। তাই সেই আদিম উত্তেজনা মেটাতেই হ্যালোউইনের রাতে একদল বন্ধু মিলে যায় একটা হন্টেড হাউজে। একদম চরম ভয়ের সব গেইমে সাজানো হন্টেড হাউজ। কিন্তু যতক্ষণে তারা আবিষ্কার করে যে গেইমগুলো নকল নয়, আসল ভয় আর মৃত্যু দিয়ে সাজানো, ততক্ষণে স্বভাবতই বেশ দেরি করে ফেলেছে তারা। 

‘হন্ট’ (২০১৯) সিনেমার চিত্রনাট্যকার এবং পরিচালকদ্বয় হলেন স্কট বেক আর ব্রায়ান উডস। ‘আ কোয়াইট প্লেস’ (২০১৮) সিনেমার গল্পকার এবং সহকারী দুই চিত্রনাট্যকার তারাই। এই পরিচয়ে একটু বেশি মানুষই তাদের চিনবেন। তাদের এই সিনেমা পুরোটাই আসলে ‘স্ল্যাশার’ জনরার ভিন্টেজ/কাল্ট সিনেমার অনুপ্রেরণায় তৈরি একটা শ্রদ্ধাঞ্জলিনির্ভর সিনেমা। প্রিমাইজের অনুপ্রেরণার পেছনে আছে ‘দ্য ফানহাউজ’ (১৯৮১) সিনেমাটি। আর ঘটনা সাজানোতে ভায়োলেন্সের মাত্রায় আছে ‘স’ (২০০৪) সিনেমার অনুপ্রেরণা। গর্বিতভাবেই ওগুলোর প্রতি ভক্তি প্রকাশ করার পাশাপাশি নিজের আলাদা পরিচয়ও রেখেছে।

হন্টেড হাউজ নির্ভর স্ল্যাশার সিনেমায় তো ধারণা আর ঘটনার অভিনবত্বে ভয়াবহরকম অপুষ্টি লক্ষ্য করা যায়। এই সিনেমা তেমন নয়। স্কট বেক আর ব্রায়ান উডস দক্ষতার সাথেই গল্পটাকে বিভিন্ন ছোট ছোট বাঁক যুক্ত করে স্মার্টভাবেই তৈরি করেছেন। আর এই সিনেমাগুলো তো সাধারণত ‘সিচ্যুয়েশন স্টোরি’ ধারার সিনেমা। তাই চিত্রনাট্যে ঘটনাবলি তৈরি করেছেন সেটা মাথায় রেখেই। চেনা উপাদানকেও পাল্টে ব্যবহার করেছেন ‘অপ্রত্যাশিত’ করে তুলতে। এটা যেহেতু গেইমনির্ভর সিনেমা, তাই সেটপিসের ভূমিকা এখানে অনেক বেশি। এবং সবটুকু ধূর্ততা পরিচালকদ্বয় সেট পিস তৈরিতে দিয়েছেন। সেট পিস সাজানোতে, সুচিন্তিত সিন ব্লকিংয়ে, আলোছায়ার যথাযথ বণ্টনে পুরোটা সময়ই টেনশন আর উত্তেজনার পারদ উঁচুই ছিল। এই সিনেমার প্রিমাইজ পড়ে জনরা ভক্তরা যা যা কিছু প্রত্যাশা করতে পারে, ধারণাগত দিক থেকে একদম সজীব না হয়েও ধূর্ত আর বুদ্ধিদীপ্ত ফিল্মমেকিংয়ে সেগুলো পূরণ করেছে ‘হন্ট’।

Image Source: Momentum

দ্য মিড নাইট আওয়ার (১৯৮৫)

হ্যালোউইন থিমের এই হরর সিনেমা মূলত টিভির জন্য বানানো। তবে আশির দশকের টেলিভিশন হরর হিসেবে এর প্রোডাকশন ডিজাইন যতটা নজরকাড়া, তাতে এটা অনেকটা থিয়েটারের সিনেমাই হয়ে উঠেছে। গল্প হলো, হ্যালোউইনের রাতে একদল তরুণ-তরুণী একটা শতাব্দী পুরনো সমাধিতে গিয়ে পুরনো তন্ত্রমন্ত্রের বই খুলে কিছু লাইন পড়ে মজাচ্ছলে। কিন্তু তাদের এই মজাতেই জাগ্রত হয়ে যায় সমাধি স্তবকের নীচে থাকা জম্বি-ডাইনি-ভ্যাম্পায়ারসহ যত ধরনের প্রেতাত্মা আছে, সবাই। নরক থেকে উঠে আসে ইংল্যান্ডের এই মফস্বল শহরকে নরক বানাবে বলে। 

‘দ্য মিডনাইট আওয়ার’ হরর-কমেডি সিনেমা। আরো ভালো করে বললে, হরর স্যাটায়ার। তবে বিদ্রূপ করার পাশাপাশি শ্রদ্ধাঞ্জলিও জানিয়েছে জম্বি-ভ্যাম্পায়ারের মতো হররের সাবজনরাগুলোকে। বিল ব্লেইশের লেখা গোটা চিত্রনাট্যটাই এই সাবজনরাগুলোর গড়পড়তা চেনা অলংকারগুলোকে বিদ্রুপের উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছে। তরুণদের পার্টিতে ডাইনি-জম্বি-ভ্যাম্পায়াররাও ঢুকে যাচ্ছে, এবং সবাই মনে করছে এরা আসলে হ্যালোউইনের সাজ সেজেছে – এই গোটা ব্যাপারটাই এই সিনেমার শ্লেষপূর্ণ হাস্যরসটাকে উপস্থাপন করে। সংলাপে শ্লেষের ছড়াছড়ি। অনেক সমালোচকের আপত্তি ছিল, এই সিনেমা তরুণদের পার্টিতে বেশি সময় ব্যয় করেছে। কোনো সত্যিকারের ক্লাইম্যাক্সের দিকে এগোয়নি। আসলে সেটা এই সিনেমার উদ্দেশ্যও ছিল না। তিন অংকের রীতিতে এগোয়নি এই সিনেমা। জনরাগুলোকে বিদ্রূপ আর শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি আশির দশকের টিন-ড্রামা হতে চেয়েছে ‘দ্য মিডনাইট আওয়ার’।

এবং যথেষ্ট দক্ষতার সাথেই সিনেমাটি নির্মাণ করেছেন জ্যাক বেন্ডার, যিনি দ্য সোপ্রানোস; লস্ট; গেইম অভ থ্রোনস-এর মতো বহুল জনপ্রিয় সব টিভি সিরিজের অনেকগুলো এপিসোড পরিচালনা করেছেন। তিনি সিনেম্যাটিক সব অলংকার তার নির্মাণশৈলীতে রেখেছেন। এক ভ্যাম্পায়ার তরুণীর রক্ত চুষে নিচ্ছে। রক্তের গ্রাফিক সিন না রেখে রূপকভাবে চারপাশে রেড ওয়াইনের বোতল থেকে রেড ওয়াইন স্লো মোশনে ছিটকে পড়া আর ব্যাকগ্রাউন্ডে ‘দ্য স্মিথস’ ব্যান্ডের ‘হাও সুন ইজ নাও’ গানের ইন্ট্রো বাজছে- এই একটা সিনেই তিনি তার দুর্দান্ত শৈলীর নিদর্শন দেখিয়েছেন। সঙ্গীত এই সিনেমায় খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় আছে। জনপ্রিয় সব গায়ক আর ব্যান্ডের এক একটা গানের সাথে সিনগুলো যেভাবে কম্পোজ করেছেন, সেটা একদম ‘গীতিময়ী ইমেজারি’ রূপে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। হ্যালোউইনের একটি মজার হরর কমেডি অবশ্যই ‘দ্য মিডনাইট আওয়ার’।

Image Source: BBC Films

টেরিফায়ার (২০১৬)

স্যাডিস্টিক খুনির হাত থেকে একমাত্র এক তরুণীই বেঁচেছে। টিভিতে তার সাক্ষাৎকার চলছে। গোটা মুখ ক্ষতবিক্ষত, চামড়া ঝরে গেছে অনেক। এক চোখের অস্তিত্ব তো নেই-ই, শুধু চামড়ার আস্তরণ; আরেক চোখ যেন কঙ্কালের চোখ, শুধু চোখের মণিটাই কোনোরকম আছে। সে বিশ্বাস করে, তার সেই খুনি মরেছে। আসলেই? একটা ঘরের মেঝেতে রাখা পুরনো টিভিতে চলছিল এই ইন্টারভিউ। ফ্রেমে অনেকটা যেই খালি যেই জায়গা ছিল, তাতে ঠেসে দাঁড়ায় একটা শরীর। হাতে পড়ে নেয় গ্লাভস। মাথায় দেয় একটা হাস্যকর ছোট্ট টুপি। মুখটা আরেকটু দেখা যায়। সার্কাসের ভাঁড়ের মতো সাজ নিয়েছে সে। কে?

এই প্রস্তাবনা দৃশ্যের পরই সেই ভাঁড়বেশী সাইকোর দেখা মিলে। হ্যালোউইনের রাত। এরকম উদ্ভট আর অদ্ভুত সাজেরই তো রাত। তাই এই মেকআপের ভেতর কে কী, কার কী উদ্দেশ্য; তা কে-ই বা বুঝতে পারে! এই সুযোগটা তো সাইকো’রা নেবেই! হ্যালোউইন-নির্ভর হরর/স্ল্যাশার সিনেমায় এটা যে অমোঘ সাধারণ নিয়ম। তবে এই সাইকো কিলার ‘আর্ট- দ্য ক্লাউন’ এর কিছু ভিন্নতা আছে। একটা হলো তার নারকীয় পদ্ধতির হত্যাতে, আরেকটা তার উপস্থিতিতে। সে যে ক্লাউন, তার উপস্থিতি আর ভয়ংকর কাজকর্মের মাঝে দ্বান্দ্বিক সম্পর্কতেই একটা নিগূঢ় হাস্যরস লুকিয়ে আছে। নামটাতেও যেন ছুঁড়ে দেওয়া আছে একটা তির্যক শ্লেষ। হ্যালোউইনের রাতে তিনজন তরুণীর পেছনে লাগে এই স্যাডিস্টিক, হন্তারক ভাঁড়। প্রত্যাশিতভাবেই শিকার আর শিকারির ইঁদুর-বিড়াল খেলা নিয়ে ৮৪ মিনিটের এই সিনেমা। 

স্ল্যাশার সিনেমায় গল্পের কিছু করার নেই, মানে ‘স্ট্রেইটফরোয়ার্ড’ স্ল্যাশার হলে। সোজা কথায়, শিকার আর শিকারির দৌড়। নতুনত্বটা দিতে হয় সিচ্যুয়েশন তৈরি করে, শক থিওরিতে, ওই ইঁদুর-বিড়াল খেলায়। ‘টেরিফায়ার’ তার লো-বাজেটকে খুব ভালোভাবেই ব্যবহার করেছে। একটা জীর্ণশীর্ণ বাড়িতেই থেকেছে, প্রত্যেক রুমকে ব্যবহার করেছে রক্তে রঞ্জিত করতে, ভয় ছড়িয়ে দিতে। প্রথম দৃশ্য থেকেই ভয় আর উত্তেজনার আবহ ডেমিয়েন লিওন তার দক্ষ ফিল্মমেকিং দিয়ে তৈরি করেছেন। ব্যাকগ্রাউন্ড-ফোরগ্রাউন্ডের সুচিন্তিত ব্যবহারে সিন ব্লকিংগুলো সাজিয়েছেন এত চতুরভাবে যে হঠাৎ করেই ফ্রেমে আর্ট দ্য ক্লাউনের তড়িৎ প্রবেশটা শুধু শিকারকে নয়, দর্শককেও আঁতকে উঠতে বাধ্য করে — সুপারন্যাচারাল হররের জাম্প স্কেয়ারের মতোন। তবে সেগুলোতে কোনো ভিএফএক্সের কারসাজি নেই, গড়পড়তা চালাকি নেই, আছে শুধু বুদ্ধিদীপ্ত ফিল্মমেকিং। বাজেট এতই কম যে হয়তো লাইট কমই ছিল। সেটা বরঞ্চ এই সিনেমায় ভালো কাজ করেছে। ব্যাকগ্রাউন্ডকে আঁধারে রেখে এদিক-সেদিক কিছু বাল্ব দিয়েই যেন লাইটিং করা হয়েছে। ফলে ন্যাচারাল লাইটের বিষয়টা যেমন ভালো লাগিয়েছে, তেমনি হাই কন্ট্রাস্ট যোগ করায় ইমেজারিগুলোতে একটা ‘এক্সপ্রেশনিস্টিক’ ভাব যুক্ত হয়েছে।

আর্ট দ্য ক্লাউনের বাচিক অভিনয়ে, শারীরিক অভিব্যক্তিতে মঞ্চ অভিনয়ের ভাবটা সেই এক্সপ্রেশনিজমকে আরো ভারি করেছে। প্রচণ্ড ভায়োলেন্ট সিনেমা তো স্ল্যাশার সাব-জনরায় অনেক হয়, তবে এই সিনেমায় আলাদা একটা সাহস আছে। সেটা বীভৎস হত্যাগুলোকে যেভাবে সাজানো হয়েছে, তাতে। আর্ট দ্য ক্লাউনের হত্যাগুলো তার ওই উদ্ভট নামটাকেই আরো একবার শ্লেষ দিয়ে পরিপূর্ণ করেছে। ডেমিয়েন লিওন সিনেমার শেষদৃশ্যে এসেও চতুরতাটা ধরে রেখেছেন। তখন গিয়েই স্পষ্ট হয়, ওই প্রারম্ভিক দৃশ্য পুরোটাই ছিল একটা ‘ফ্ল্যাশ ফরোয়ার্ড’ দৃশ্য। ‘টেরিফায়ার’ সিনেমার এই ‘আর্ট দ্য ক্লাউন’ যে ভবিষ্যতে মাইকেল মেয়ারস, ফ্রেডি ক্রুয়েগারের মতো স্ল্যাশার সিনেমার কুখ্যাত সাইকো কিলারদের পাশে জায়গা করে নেবে, এটা হলফ করে বলাই যায়। তার ওই শয়তানি হাসিটাই তো তাকে স্বকীয়তা দিয়ে দেয়! 

Image Source: Epic Pictures

ট্রিক অর ট্রিট (২০০৭)

হ্যালোউইনের ভূতেরা, যৌবনপিয়াসী ডাইনিরা, অপদেবতারা সত্যি সত্যি নেমে এসেছে হ্যালোউইনের রাতেই, শহরতলিতে। সিনেমার শুরুতেই দেখা যায়, এক দম্পতির মাঝে স্ত্রী এসে জ্যাক-ও ল্যান্টার্ণ (খোদাই করা কুমড়োর ভেতরের আলোকসজ্জা) নিভিয়ে দেয়। স্বামী নিষেধ করে; বলে, তারা কেউ রুষ্ট হবেন। কিন্তু স্ত্রী তা শুনলে তো! এর ফলও তো পেতে হয়েছিল কাকতাড়ুয়ার জালে জড়িয়ে। ঘটনাটা দেখছিল রাস্তার ওপাশে দাঁড়িয়ে কেউ; ওই জ্যাক-ও ল্যান্টার্নই তো, খোদাই করা কুমড়োর মতো অমন একটা ক্যান্ডি হাতে নিয়ে! সিনেমার প্রত্যেকটা গল্পেই ঘুরে বেড়ায় সে, যোগসূত্র যেন আছে একটা। হ্যালোউইনের সকল লোককথাগুলো সত্যি হতে শুরু করে এই শহরতলীতে। ওই বুড়োর গল্পে, কিশোরদের ট্রিক অর ট্রিটে কিংবা যুবতীদের অদ্ভুত শিকারে।

‘ট্রিক অর ট্রিট’ অ্যান্থলজি হরর সিনেমা। ৫টা গল্প আছে। গল্পগুলো হ্যালোউইনের পুরকথা আর ভূতদের নিয়েই। ভিন্ন ভিন্ন হলেও একটা আন্তঃযোগ এই সিনেমায় আছে। সেটা গল্পে নয়, চরিত্রে। একই শহরেরই ৫টা গল্প; তাই দেখা যায়, এক গল্পের চরিত্র আরেক গল্পের চরিত্রের প্রতিবেশী। কেউ বা শহরতলীর উৎসবে গা ঘেঁষে ছিল, কিন্তু জানত না। গোটা ন্যারেটিভটাই সুন্দর করে সাজানো। ছোট ছোট বুদ্ধিদীপ্ততায় ভরা। এই ছোটছোট বাঁকগুলোই সিনেমাটার বুদ্ধিদীপ্ততা গাঢ় করেছে। নন-লিনিয়ার ন্যারেটিভ নয়, তবে কিছু নন-লিনিয়ার উপাদান রাখা হয়েছে। যেমন দেখা যায়, দ্বিতীয় গল্পে পাশের বাসার যেই বুড়ো কণ্ঠস্বরটা চেঁচিয়ে শাসাচ্ছিল গল্পের প্রধান চরিত্রকে, সেই বুড়োই আবার শেষ গল্পের প্রধান। আবার একই সময়ে তখন রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলছিল তৃতীয় গল্পের শেষে প্রতিশোধ নিয়ে ফেরা সেই মেয়েটি। এবং শেষে গিয়ে খুব দক্ষতার সাথেই আলাদা আলাদা চিত্রগুলোকে একসাথে আনা হয়। একই সময়ে বা একটু আগেপিছেই তো ঘটছিল! 

এই ব্যাপারগুলোর কারণেই বলা যায়, মাইকেল ডোহার্টির ‘ট্রিক অর ট্রিট’-এ হ্যালোউইনের সব ট্রিক তো আছেই, সাথে গল্পগুলোও এক একটা ট্রিটই। বলতে হয়, যথেষ্ট গভীরতাসম্পন্ন গল্প। নাহ, এমন নয় যে গল্পগুলোতে খুব ভারী বক্তব্য আছে, রূপক আছে। নেই। যা আছে, তা হলো একটা সাধারণ গল্পকে দক্ষতার সাথে লেখা এবং উপস্থাপন। আগ্রহ ধরে বলে যাওয়া যায় এসব গল্প। গল্পের বাঁক-বিভঙ্গ আছে, জনরার সৌন্দর্যটাও আছে। তাই তো অদ্ভুত কমনীয় ভাবের হয়ে উঠেছে এই সিনেমা।

Image Source: BadHat Harry

হ্যালোউইন-নির্ভর সিনেমা বলতে এখন শুধু ‘স্ট্রেইটফরোয়ার্ড স্ল্যাশার’। সে তুলনায় এতে বলার জায়গা কিংবা গল্প দুই-ই আছে। মজাদার সব গল্পের সাথে চটকদার প্রোডাকশন ডিজাইন হ্যালোউইনের আমেজটা বেশ তৈরি করে। শ্রদ্ধাঞ্জলি দেওয়া তো আছেই, সাথে নস্টালজিয়া উপহার দেয় বয়ানভঙ্গি আর প্রোডাকশন ডিজাইনে। খুব দক্ষতার সাথেই রহস্য আর সাসপেন্সের আবহটা তৈরি করা হয়েছে। কাহিনীর উদ্ভাসন বা এক্সপোজিশন যথাযথ মাত্রায় থাকায় গোটা ব্যাপারটাই দারুণ কাজ করেছে। হ্যালোউইনের আসল মজা তো এই ট্রিক অর ট্রিটেই। নামটাও তাই হয়ে উঠেছে একদমই যথার্থ। 

This article is a compilation review of 5 horror films. These films are about Halloween. Halloween night, specifically. These are some of the little known gem/good films about the Halloween day. Obscure, underrated & Must-watch.

Feature Image- Various

Related Articles