Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দ্য কিলিং: স্ট্যানলি কুব্রিকের প্রথম মাস্টারপিস চলচ্চিত্র

ভকভক করে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে আর মদ গ্লাসে ঢালতে ঢালতে তাদের ‘বিশাল এবং বিপদজনক’ পরিকল্পনার খসড়া তৈরি করছিলেন চারজনে। বলা দরকার অবশ্য, একজনে। কারণ, বাকিরা পরিকল্পনার মূল হোতার সাবধানী কথাগুলো তলিয়ে না দেখে আত্মস্থ করতেই শশব্যস্ত। তাদেরই একজনের অ্যাপার্টমেন্টে, টেবিলে গোল হয়ে বসে লুটের এই পরিকল্পনা। অবচেতনেই দৃশ্যটি দেখে কুয়েন্টিন টারান্টিনোর ‘রেজারভোয়া(র) ডগস (১৯৯২)’ সিনেমার হোটেলে বসে পরিকল্পনা করার প্রারম্ভিক সেই দৃশ্যটির কথা টুং করে বেজে উঠে মাথায়। যৌক্তিক কারণও অবশ্য আছে। দ্য গ্রেট স্ট্যানলি কুব্রিকের এই সিনেমাই যে টারান্টিনোর রেজারভোয়া(র) ডগস-এর অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।

গোলটেবিলের দৃশ্যটি; Image Source: Harris Kubrick Pictures Corporation

‘দ্য কিলিং’-এ অবশ্য উক্ত বর্ণনা প্রারম্ভিক দৃশ্যের নয়। সিনেমা শুরু হয় রেস ট্র‍্যাকে। ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার নির্দিষ্ট সেই দিনটাতেই। অনেকেরই তেমন কোনো আগ্রহ নেই এই প্রতিযোগিতা নিয়ে, ঘোড়ার উপর বাজি লাগানো লোকজন ছাড়া। এই প্রতিযোগিতায় প্রতিটা মুহূর্তই তাদের কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ। সেকেন্ডের ব্যবধানেই গোটা দান ঘুরে যেতে পারে। আবার কারো কারো প্রতিযোগিতাকে ঘিরে আছে ভিন্ন মতলব। সময়ের সাথেই সে মতলবের আদ্যোপান্ত বর্ণিত হতে থাকে সিনেমায়। 

দ্য কিলিং-এর গল্প একটি ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় বাজি লাগানো সকল টাকা লুট করা নিয়ে। লুটের পরিকল্পনা করেছে দাগী অপরাধী জনি ক্লে। এ পথ ছেড়ে দেওয়ার আগে শেষ একটা বড় দান মারার পরিকল্পনা করেছে সে। তারপর টাকা সাথে করে প্রণয়ীকে নিয়ে পালিয়ে যাবে। লুটের নিখুঁত এক নীল-নকশা বানিয়েছে জনি। সফল করার জন্য ভিন্ন ক্ষেত্রের ভিন্ন তিন লোককে এই পরিকল্পনার অংশ বানিয়েছে। দুই মিলিয়ন ডলার লুট করবে এবং সেটা চারজনের মাঝে ভাগ হবে। তবে এই চার ছাড়া, গৌণ ভূমিকা পালন করতে যোগ হয়েছে আরো দু’জন। একজন হলো অব্যর্থ নিশানার শ্যুটার, নিকি আর্কেইন। তার কাজ হলো, প্রতিযোগিতার দিন সাত নাম্বার ঘোড়াটাকে গুলি করা, যা প্রতিযোগিতার মাঠে বিভ্রান্তি তৈরি করবে। আরেকজন হলো অবসরপ্রাপ্ত রেসলার, মরিস। তার কাজ হলো, স্টেডিয়ামের ভেতরে একটা গোলযোগ বাঁধিয়ে বিশৃঙ্খলাপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করা; যাতে করে ওই সুযোগে জনি ঢুকে যেতে পারে বাজির টাকা সংরক্ষিত রাখা সেই কক্ষটিতে।

গোলযোগ বাঁধানোর সময়ে মরিস; Image Source: Harris Kubrick Pictures Corporation

মূল পরিকল্পনায় একজন আছে বার্টেন্ডার, যার কাজ বিশৃঙ্খলায় মদদ দেওয়া। একজন আছে উইন্ডো টেলার, যে জনিকে পেছনের রুমে প্রবেশে সাহায্য করবে ভেতর থেকে। একজন দুর্নীতিবাজ পুলিশকেও হাত করেছে জনি, যাতে করে গোটা কাজটা নাকের ডগা দিয়েই হয়ে যায়। জনির এই নিখুঁত পরিকল্পনায় প্রথম ফাঁকটা তৈরি করে, উইন্ডো টেলার জর্জ পিটি। বোকাসোকা, দুর্বল, বউকে ভয় পাওয়া পুরুষ সে। বউয়ের উচ্চাকাঙ্ক্ষা বারবারই পরাজিত করে তাকে। বউকে পরিকল্পনা সম্বন্ধে জানিয়ে দেয় জর্জ। বউ সেটা পাচার করে তার পরকীয়া প্রেমিক ভ্যালকে। এতে করে জনির অজান্তেই তার এ পরিকল্পনায় বেশকিছু হুমকি এবং অনাকাঙ্ক্ষিত চরিত্র যোগ হয়, যাদের অনুপ্রবেশে কুণ্ডলী পাকায় লুটের পরিকল্পনা এবং সিনেমার গল্প। এক গোলকধাঁধার সৃষ্টি হয়; যেটিতে দ্বন্দ্ব, শোধ, প্রতারণা এবং খুন জড়িয়ে যায়। 

কাগজে-কলমে দ্য কিলিং-এর গল্প সম্পর্কে ধারণা প্রদান করা যতটা সহজ, সিনেমায় তা অনুসরণ করা ততটাই কঠিন। কারণ সিনেমার ঘটনাবলী বর্ণনা করা হয়েছে বিক্ষিপ্ত উপায়ে। কোনো নির্দিষ্ট ক্রমিক ধারা মেনে এগোয়নি এ সিনেমা। সহজ ভাষায়, ‘নন-লিনিয়ার’ ন্যারেটিভ স্টাইল যাকে বলে। আজকের কুয়েন্টিন টারান্টিনো, ক্রিস্টোফার নোলানরা যে নন-লিনিয়ার ন্যারেটিভ স্টাইলের জন্য সুপরিচিত, সে স্টাইলের পথপ্রদর্শক কুব্রিকের এই সিনেমা। পর্দায় কী চলছে, তা সম্বন্ধে জানতে দর্শক ওই সর্বদর্শী বা অমনিসিয়েন্ট ন্যারেটরের উপর নির্ভরশীলসিনেমা শুরু হয় রেস ট্র‍্যাকে এবং প্রায় গোটা সিনেমাই সেখানে থাকে। এই রেস ট্র‍্যাকে একেকটা চরিত্রের উপস্থিতির সূত্রে একদম নির্দিষ্ট সময়টা ধরে আগের গল্প বা ঘটনা ব্যাখ্যা করা হয় দর্শককে, তাও একদম ঘড়ির কাঁটা ধরে ধরে। সময়টা এ সিনেমায় এতই গুরুত্ববহ যে, রূপক ভঙ্গিতে সিনেমার গল্পটাকে টাইম ট্রাভেলের ইন্টেলেকচুয়াল একটি রূপ হিসেবেও দেখা যেতে পারে।

গল্প বয়ান করার ভঙ্গিতে বলা যায়, ফ্ল্যাশব্যাকেই দেখানো হচ্ছে গোটা সিনেমা। কিন্তু আসলে কোনো ফ্ল্যাশব্যাক নেই। ঘটনা যুগপৎভাবে এগিয়ে আছে এবং একটার সাথে আরেকটা কখনো কখনো জোড়া লেগেছে কিংবা সংঘর্ষ বাঁধিয়েছে। যেমন- বিকাল ৪.১০ মিনিটে রেসট্র‍্যাকে মরিস এসেছে। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় সকালের নির্দিষ্ট একটা সময়ে, যখন মরিসের সাথে জনির আলাপ হয়েছিল। আবার জনির সূত্র ধরেই সকাল ১০.১৫ মিনিটে জনি কী করেছিল, তা জানানো হয়। এবং আগের দিনের পরিকল্পনা সম্বন্ধে দর্শককে বয়ান করা হয়। তারপর ফের ন্যারেটর ফিরে আসে বিকাল ৪.১০ মিনিটের ঘটনায়। এরপর বিকাল ৪.২৩ মিনিটে নিকি মারা যাওয়ার ঘটনা ধরে আবার আগের দিনে জনির সাথে তার কী কী কথা হয়েছিল সময়, স্থান সহ সেসব ব্যাখ্যা করা হয়। বলা যায়, পুরোটাই একটা বিশাল সুতা, যার এক প্রান্তে চরিত্রদের একে অপরের সাথে সংঘর্ষ হলে, সেখান থেকে অন্য প্রান্তে তাদের অবস্থান, সম্পর্ক কেমন ছিল- সেটা ব্যাখ্যা করে আবার এই প্রান্তেই আনা হয়।

দ্য কিলিং আদ্যোপান্ত একটা জিগস্ পাজল। এবং এ পাজলের একেকটা অংশ মেলাতে কুব্রিক পুনরাবৃত্তির ব্যবহার করেছেন, যে স্টাইল তার পরের অনেক সিনেমায়ও দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সময় এ সিনেমার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান তো বটেই, সময়ের জটিল ধারণাটাও এখানে খুব সচেতনভাবে ধরতে পারা যায়। 

দ্য কিলিং-এর প্রযোজকেরা সিনেমার এই ন্যারেটিভ স্টাইল নিয়ে সেকালে নাখোশ ছিলেন খুব। দর্শকরা ঠিকঠাক ধরতে পারবে না, সেকারণে। কিন্তু নিখুঁত ফলাফল পাওয়ার ক্ষেত্রে সবসময় অনড় থাকা কুব্রিক, যার জন্য কিছুটা কুখ্যাতিও তার আছে, যে উপন্যাস থেকে এই সিনেমার চিত্রনাট্য তৈরী, সে উপন্যাসের ধারাটাই রাখবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন এবং তেমনটিই করেন। তা না হলে হয়তো চলচ্চিত্রে আজ নন-লিনিয়ার ধারাটা এতটা জনপ্রিয় হতো না। কুব্রিকের ফিল্মোগ্রাফির দিকে চোখ বোলালে দেখা যাবে, ভয়েসওভারের ব্যবহার তিনি সচরাচরই করতেন।

সেকথা এ কারণেই আসছে, ভয়েসওভার ব্যবহারের ক্ষেত্রে তার নিজস্ব একটা মতবাদ আছে; ব্যাখ্যার দিকটা সংলাপ দিয়ে করে নিতে চাইলে সংলাপ অতিশয় ভারি এবং খুব ক্লান্তিকর হয়ে ওঠে। ভয়েসওভার সেক্ষেত্রে খুবই যৌক্তিক একটি পন্থা। কোনোরকম অতি নাটকীয়তার পাড় না ঘেঁষেই খুব সাবলীলভাবে ভয়েসওভার ন্যারেশান দিয়ে গল্প ও চরিত্রের নানান তথ্য এবং ব্যাখ্যা দেওয়া যায়। সেকথা মাথায় রেখে ‘দ্য কিলিং’ দেখতে গেলেই বোঝা যায়, এই সিনেমার এমন সর্পিলাকার গল্পে সময় এবং স্থান সম্বন্ধে ধারণা দেওয়ার পাশাপাশি রহস্য আর উত্তেজনা সৃষ্টিতে ভয়েসওভার কতটা গুরুদায়িত্ব পালন করেছে। 

লিওনেল হোয়াইটের উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে নির্মিত এই সিনেমার চিত্রনাট্যকার স্ট্যানলি কুব্রিক। ওদিকে সংলাপ লেখার কাজটি করেছেন জিম থম্পসন। কুব্রিকের চিত্রনাট্য গল্পের প্রতিটি ক্ষুদ্র বিবরণকে ধরতে ভোলেনি। বিবরণের জায়গাটায় একেবারে পুঙ্খানুপুঙ্খ। আর এই বিবরণের সাথে যোগ হয়েছে থম্পসনের তীক্ষ্ণ, চতুর সব সংলাপ। দ্য কিলিং-এর চরিত্রগুলো ফিল্ম নোয়াহ্ জঁনরার চরিত্রের সংজ্ঞা মেনেই বিচ্ছিন্ন, দুর্নীতিগ্রস্ত এবং নৈতিক দ্বন্দ্বে ভোগা কিছু চরিত্র। তাদের ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতা আছে, টানাপোড়ন আছে। এসবে হতাশাও জড়িয়ে আছে। মারভিন চায়, জনির সাথে বাবা-ছেলের একটা সম্পর্ক গড়ে তুলতে। মাইক চায় তার অসুস্থ স্ত্রীকে সুস্থ করে তুলতে। ওদিকে দুর্নীতিবাজ র‍্যান্ডিও এ পথে এসেছে গলা সমান দেনা থেকে বেঁচে উঠতে। ভীতু জর্জকেও দেখা যায় অন্যের সামনে বড়াই করা পৌরুষবোধকে নিজের ছলনাময়ী স্ত্রীর সামনে সরল বিশ্বাসে জলাঞ্জলি দিতে।

তারা কেউই ত্রুটিহীন নয়। এমনকি মূল হোতা জনিও নিজেকে যতটা বুদ্ধিদীপ্ত হিসেবে তুলে ধরে, ভেতরে ততটা নয়। এত নিখুঁত উপায়ে প্রতিটা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জিনিসের পরিকল্পনা করা জনি, জর্জের বোকামোটা ধরতে পারল না (!)- ফোঁড়ন কেটে সন্দেহের সুরে এই কথাটি ছুঁড়ে তো দেওয়া যায়, কিন্তু জনির চরিত্রটা বিশ্লেষণ করলেই তার সীমাবদ্ধতা, ভয় সবকিছুই স্পষ্ট হয়ে প্রতিভাসিত হবে দর্শকের চোখে। সেও ভঙ্গুর প্রকৃতির। একথা যখন বুঝতে পারা যায়, সন্দেহ নিয়ে ধেয়ে আসা তীরটা তখন বেঁকে যেতে বাধ্য। শুধু এ সিনেমাতেই নয়, কুব্রিকের প্রতিটি সিনেমাতেই; নিজের ভেতরকার সত্ত্বার সাথে ক্রমাগত লড়ে তার চরিত্ররা। ‘২০০১: আ স্পেস ওডিসি’ সিনেমাটির মতোই স্বীয় ধ্বংসমুখী প্রকৃতিটা যে মানুষের একেবারে শেকড়ে, সেটি উঠে আসে এ সিনেমাতেও। 

চরিত্রগুলোকে পর্দায় দক্ষতার সাথে রূপায়ণে কাস্টিংটাও সেভাবেই নির্বাচন করেছেন কুব্রিক। জনি চরিত্রে ফিল্ম-নোয়াহ্ জঁনরার পরিচিত মুখ স্টার্লিং হেয়ডেনের চমৎকার অভিনয় তো আছেই। সেইসাথে নিকি আর্কেইন চরিত্রে টিমোথি ক্যারির অদ্ভুত বাচনভঙ্গি তাকে আলাদা করে তুলেছে পর্দায়। পরের বছরই মুক্তি পাওয়া কুব্রিকের আরেকটি ‘গ্রেট’ সিনেমা ‘পাথস অব গ্লোরি’-তেও ছিলেন তিনি। রেসলার মরিস চরিত্রটি রূপায়ণ করা কোলা কোয়ারিয়ানি বাস্তবেই একজন রাশিয়ান রেসলার এবং তুখোড় দাবাড়ু। তার শরীরী উপস্থিতি এবং সংলাপ প্রদানের ভঙ্গি আলাদা মাত্রা যোগ করেছে সিনেমায়।  

শ্যুট করার সময়ে নিকি; Image Souce: হ্যারিস কুব্রিক পিকচারস কর্পোরেশন

দ্য কিলিং-এর চিত্রনাট্যের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণের জায়গাটি চোখে ধরা পড়ত না, যদি কুব্রিক অমোঘ এই ভিজ্যুয়াল রূপ প্রতিষ্ঠা না করতেন। চলচ্চিত্রের ভিজ্যুয়াল ভাষা নিয়ে নিত্যনতুন নিরীক্ষা করাই ছিল কুব্রিকের কাজ, যা তার পরবর্তীকালের ‘২০০১: আ স্পেস ওডিসি’, ‘দ্য শাইনিং’, ‘আ ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ’, ‘ব্যারি লিন্ডন’ সিনেমাগুলো দেখলেই নিশ্চিত হওয়া যায়। আর ভিজ্যুয়াল মাস্টারিতে যে তিনি অনন্য হয়ে উঠতে চলেছেন, সে ইঙ্গিত সুস্পষ্ট এ সিনেমায়। কুব্রিক, ক্যামেরায় যতটা সম্ভব, ততটা ব্যাকগ্রাউন্ড তুলে ধরতে চাইতেন সবসময়। আর এ প্রবণতা তার ইমেজারিকে গভীরতা প্রদানের পাশাপাশি, স্বকীয় করেছে। সেট ডিজাইনে তাই বরাবরই তিনি নিখুঁত। এই সিনেমা যেহেতু ফিল্ম-নোয়াহ্, তাই লাইটিংয়ে ‘লো-কি লাইটিং’ স্বভাবতই ব্যবহার করেছেন।

তবে আলোছায়ার যে ব্যঞ্জনা তিনি তৈরি করেছেন, তা অপরূপ। লো-কি লাইটিংয়ের দৃশ্যগুলো মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করলে দেখা যায়, ওই দৃশ্যগুলোতে তীর্যক আলোটাকে সবসময় তিনি মধ্যিখানেই ফেলেছেন। কখনো সে কাজ ল্যাম্পের আলো দিয়েই সম্পন্ন করেছেন। চরিত্রগুলোর একজন থাকে অন্ধকারে, আরেকজন আবছায়ায়। আলোছায়ার বণ্টনটা এখানে অনবদ্য। সিনেমাটোগ্রাফার লুসিয়েন ব্যালার্ডের সাদাকালো আলোকচিত্রে, আলোছায়ার এ ব্যঞ্জনাকে ব্যবহার করে কুব্রিক টেক্সচারে বিন্যাস, ভারসাম্য যেমন এনেছেন; তেমনি শটের কম্পোজিশনকে দিয়েছেন গভীরতা। চরিত্রগুলোকে আবছায়া আর অন্ধকারে রেখে তাদের নিদারুণ পরিস্থিতিটাকে পর্দায় মুখ্য করে তুলেছেন।

আবার, দিনের আলোতে প্র‍্যাক্টিক্যাল লাইটের ব্যবহার করেছেন কুব্রিক। কুব্রিক তার সিনেমার শটগুলোকে এমনভাবে বিন্যস্ত করতেন, যেন একজনের চোখ দিয়ে দেখা হচ্ছে গোটা সিনেমা (ওয়ান পার্সপেক্টিভ)। তাই তার শটগুলো হয় সিমেট্রিক্যাল; যা ‘স্পেস ওডিসি’, ‘ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ’, ‘দ্য শাইনিং’-এর উদাহরণ টেনে সবসময় চর্চিত হলেও শুরুটা হয়েছে এই সিনেমায়। বেশি না; গোলটেবিলে বসে পরিকল্পনা করার সেই শটটাই দেখা যাক, কিংবা জর্জের স্ত্রী তার প্রেমিকের বাসায় যাওয়ার পর একটা ল্যাম্পকে মাঝে রেখে দু’জনের দু’পাশে দাঁড়ানোর শটটাই দেখা যাক।

বর্ণিত দ্বিতীয় শটটি; Image Source: হ্যারিস কুব্রিক পিকচারস কর্পোরেশন 

কুব্রিক, ক্যামেরার ফ্লুইড মুভমেন্টের জন্য বরাবরই বিখ্যাত। উপরে নাম উল্লেখ করা তার ক্যারিয়ারের পরবর্তী সময়ের বিখ্যাত সিনেমাগুলো দিয়েই এই ফ্লুইড মুভমেন্ট স্টাইলের আলোচনা হয়। তবে প্রথমদিকের কাজগুলোর মাঝে এই তিন নাম্বার সিনেমাটি দিয়েই এই স্টাইলে হাত পাকান কুব্রিক। এ সিনেমায় ঘরের ভেতরকার স্পেসে স্ট্যাডিক্যামে নেওয়া তার ট্র‍্যাকিং শটগুলো আলাদা হয়ে উল্লেখ্য হওয়ার দাবি রাখে। কেন্দ্রীয় চরিত্র জনিকে প্রথম যখন ন্যারেটর দর্শকের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন, এরপর বিয়ারের বোতল খুলে হাতে নিয়ে জনি যখন সোজা হেঁটে রান্নাঘর থেকে একাধিক রুম পার করে ঘরের আরেকপ্রান্তে যায়, তখন লো-অ্যাঙ্গেল থেকে ক্যামেরার তাকে অনুসরণের শটটিই দেখা যাক।

ক্যামেরা শুধু জনিকেই অনুসরণ করেনি, বরং একেকটি রুম পার করার সময়ে আশেপাশে থাকা সকল আসবাবকেও ধরেছে ফ্রেমে। এতে করে গোটা শটটি প্রচণ্ড বাস্তবিক এবং স্পর্শনীয় একটা অনুভূতি জাগায়। ভায়োলেন্সের দিক থেকে, দ্য কিলিং-এর ভায়োলেন্স ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জের মতোই অনিশ্চিত উপায়ে অপ্রস্তুত সময়ে এসে আঘাত করেছে দর্শককে। শেষে এসে, আয়রনিটাই প্রধান হয়ে উঠেছে দ্য কিলিং-এ। আয়রনির প্রকৃতিটাকে ‘ডক্টর স্ট্রেঞ্জলাভ’ এবং পরের আরো কয়টি সিনেমায় প্রগাঢ়ভাবে উপস্থাপন করেছেন কুব্রিক। নিয়তির কাছে হার মানাটাই সবচেয়ে বড় আয়রনি। 

শেষের আয়রনিক্যাল দৃশ্যটি; Image Source: হ্যারিস কুব্রিক পিকচারস কর্পোরেশন

স্ট্যানলি কুব্রিক এমন একজন পরিচালক, নির্দিষ্ট কোনো জঁনরায়, প্রচলিত ধারায় যাকে ধরা যায় না। নিজস্ব ভিশন নিয়ে প্রতিটি সিনেমাতেই তিনি ফিল্মমেকিংয়ের কোনো না কোনো নিয়ম ভেঙেছেন। নতুন করে প্রতিষ্ঠা করেছেন। ভিন্ন সব ন্যারেটিভ এনেছেন। তার মাস্টারিকে একের পর এক যে অনন্য অবস্থানে তিনি নিয়ে গেছেন, সে মাস্টারি প্রথমবারের মতো পুরোদমে দেখা গেছে দ্য কিলিং-এ। কুব্রিক নিজেই এই সিনেমাকে তার প্রথম ‘পরিণত কাজ’ বলে উল্লেখ করেন। ‘দ্য কিলিং’ ফিল্ম-নোয়াহ্ জঁনরায় এবং হাইস্ট সাব-জঁনরায় আজ একটি মাস্টারপিস তো সন্দেহাতীতভাবেই, এমনকি একজন মাস্টার যে এসে পড়েছেন ইতিমধ্যেই, ১৯৫৬ সালে সেকথাও জানান দিয়েছিল এই সিনেমা।

This bengali article is a review of the film The Killing (1956). It is directed by one of the most influential and one of the greatest director of all time 'Stanley Kubrick.' It's his 3rd feature. The director himself considered this as his first 'mature film.' It's a MASTERPIECE of the film-noir genre and caper sub-genre.

Featured Image: Youtube

Related Articles