বলুন তো, একটি হরর গল্প বলতে কী কী জিনিস প্রয়োজন হয়? সবার প্রথমে প্রয়োজন, ভয়। আর এই ভয়ের উদ্রেক ঘটাতে প্রয়োজন একটি লোমহর্ষক গল্পের। গল্পে ভয়ের আবেশ তৈরি করতে ভৌতিক কোনো অস্তিত্ব বা স্বত্বা অথবা বিশেষ ক্ষেত্রে কোনো চরিত্রের আবির্ভাব ঘটবে। আর এসব বস্তুকে সমন্বিত করে কল্পনার মিশ্রণে এক চমৎকার গল্প ফেঁদে বসবেন লেখক। এইতো! এর চেয়ে বেশি কিছুর প্রয়োজন নেই। ‘দ্য নিউ ইয়র্কার’ সাময়িকীর প্রখ্যাত সাংবাদিক ও লেখক রিচার্ড প্রেস্টনও ঠিক করলেন, একটি হরর গল্প লিখবেন। তার হাতে বেশ চমৎকার একটি গল্প আছে। তবে সেই গল্পে কোনো ভৌতিক কাল্পনিক স্বত্বার ছিটেফোঁটা পাবেন না। বরং এক বাস্তবিক ভূত সেখানে ভর করে আছে। আর সেই ভূত ছিল এক প্রাণঘাতী ভাইরাস! এক ভাইরাসকে পুঁজি করে তিনি লিখে ফেললেন সময়ের অন্যতম হরর থ্রিলার ‘দ্য হট জোন’, যার ভয়াল বর্ণনায় বিহ্বল হয়ে পড়েছিল হররপ্রেমীরা।
প্রেস্টন ও তার লেখালেখির দুনিয়া
“দশ বছর বয়সে আমি জ্যোতির্বিদ এডউইন হাবলের আবিষ্কার সম্পর্কে জানতে পারি। আমাদের মহাবিশ্বের গ্যালাক্সিগুলো একে অপর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে এবং মহাবিশ্ব দিন দিন স্ফীত হচ্ছে, এই অসাধারণ ধারণাগুলো আমাকে যারপরনাই অভিভূত করেছিল।”
এভাবেই নিজের বিজ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা এবং লেখালেখির অনুপ্রেরণার কথা জানান সাংবাদিক ও লেখক রিচার্ড প্রেস্টন। তার জন্ম ১৯৫৪ সালের ৫ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঞ্চলে। জন্মস্থানে তার বেড়ে ওঠা। ১৯৭২ সালে তিনি স্কুলের গণ্ডি পেড়িয়ে বিভিন্ন কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন করা শুরু করেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, প্রাথমিক বাছাইয়ে তিনি তার পছন্দের কলেজে ভর্তি হতে পারেননি। পরবর্তীতে পোমোনা কলেজে ভর্তি হন এবং কৃতিত্বের সাথে শিক্ষাজীবন সমাপ্ত করেন। এরপর প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজিতে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। এরপর লেখালেখির জগতে তার হাতেখড়ি হয়।
১৯৯২ সালে একটি নিবন্ধের সূত্রে তিনি ভয়াবহ ইবোলা ভাইরাসের সাথে পরিচিত হন। এরপরই লেখা শুরু করেন তার শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ ‘দ্য হট জোন’। এর বাইরে তিনি ভাইরাস নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রবন্ধমূলক গ্রন্থ রচনা করেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- ‘দ্য কোবরা ইভেন্ট’, ‘দ্য ডিমন ইন দ্য ফ্রিজার’, ‘প্যানিক ইন লেভেল ৪’ইত্যাদি। তার লেখার খ্যাতি তাকে বহু পদক ও সম্মাননা অর্জনের সুযোগ করে দেয়। পরবর্তীতে বিখ্যাত লেখক মাইকেল ক্রিচটনের অসমাপ্ত উপন্যাস ‘মাইক্রো’ সমাপ্ত করার জন্য তাকে মনোনীত করা হয়। ২০১১ সালে তার লেখা সম্পূর্ণ ‘মাইক্রো’ উপন্যাস প্রকাশিত হয়েছিল।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে পাঠক সমাজের কাছে ‘দ্য হট জোন’ তার শ্রেষ্ঠ রচনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আসছে। প্রবন্ধমূলক এই হরর থ্রিলার জনরার বইটিতে তিনি কেনিয়ার কিতুম গুহা থেকে ইবোলায় আক্রান্ত হওয়া এক ফরাসি ব্যক্তির গল্প দিয়ে শুরু করে ধীরে ধীরে আফ্রিকায় মহামারী ধারণ করা ইবোলার ঘটনা এবং কারণের সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ করেন। তবে তার বইয়ের প্রধান চমক আফ্রিকা ঘিরে নয়। বরং ৯০-এর দশকের দিকে এই প্রাণঘাতী ইবোলা ভাইরাস মার্কিন মুলুকেও হানা দিয়েছিল। আর সেই ভয়াবহ ঘটনার সাবলীল বিশ্লেষণই এই বইয়ের মুখ্য আকর্ষণ।
কিতুম গুহার ত্রাস
গল্পের শুরুটা আফ্রিকা মহাদেশের কেনিয়ায়। ১৯৮০’র শেষদিকে কেনিয়ার এঞ্জয়া চিনি কলের বাংলোতে এক ফরাসি ভদ্রলোক বাস করতেন। তার পেশা কী তা নিয়ে কারো ধারণা স্পষ্ট ছিল না। কিন্তু তার নেশা ছিল প্রকৃতির মাঝে মিশে যাওয়া। নিজেকে একজন শৌখিন প্রকৃতিবিদ হিসেবে জাহির করতেন তিনি। ৫৬ বছর বয়সী মাঝারি গড়নের ভদ্রলোককে দেখতে একদম সিনেমার নায়কদের মতো লাগতো। এর উপর তিনি পয়সা খরচ করতে ভালোবাসতেন। তাই মেয়েরা তার সাথে আঠার মতো লেগে থাকতো। গোপনীয়তার খাতিরে ভদ্রলোকের আসল নাম জানা না গেলেও তাকে ‘চার্লস মনেট’ ছদ্মনামে আখ্যায়িত করা হয়। এই চার্লস মনেট সেবার বড়দিনের আগে সিদ্ধান্ত নিলেন পদব্রজে কেনিয়ার রেইন ফরেস্ট আচ্ছাদিত এলগন পার্বত্য অঞ্চল ঘুরে দেখবেন। প্রস্তুত হয়ে বেরিয়ে পড়লেন এলগন অভিমুখে। স্বাভাবিকভাবে তার সফরসঙ্গী হিসেবে জুটে গেল এক স্থানীয় নারী।
এলগন অঞ্চলে ঘুরতে গেলে সচরাচর অভিযাত্রিকরা যেসব স্থান পরিদর্শন করে থাকেন, এর মাঝে কিতুম গুহার নাম না বললেই নয়। মনেট আর তার বান্ধবীও সেই গুহার ভেতর প্রবেশ করেছিলেন। প্রতিদিন রাতে স্থানীয় বুনো হাতির দল এই গুহায় সাময়িক আস্তানা গড়ে তুলে বলে জানা যায়। এই গুহার ভেতর ইচ্ছে করলে একসাথে মাঝারি আকারের প্রায় ৭০টি হাতি আশ্রয় নিতে পারবে। মূলত গুহার পাথরে গচ্ছিত খনিজ লবণের খোঁজে হাতিরা এখানে আশ্রয় নেয়।
মনেট আর তার বান্ধবী সেদিন এই গুহার ভেতর পরিদর্শনের পর ফিরে আসেন লোকালয়ে। এর এক সপ্তাহ পর মনেট গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তার চোখের সাদা অংশ টকটকে লাল এবং গায়ের চামড়া হলুদাভ বর্ণ ধারণ করলো। পিঠ এবং পেটের বিভিন্ন অংশে লাল ছোপ দেখা দিতে থাকলো। মনেটকে দেখে মনে হচ্ছিল সাক্ষাৎ জিন্দালাশ! সহকর্মীরা মনেটকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করালো। কিন্তু কিছু হলো না।
রক্তবমি শুরু হয়ে গেলে দ্রুত বিমানে করে নাইরোবি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। সেখানে পৌঁছে হাসপাতালের মেঝেতে মনেট ‘টাইম বোমা’র মতো ফেটে পড়লেন যেন। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে মনেটের ছড়িয়ে পড়া কালচে রক্তের দিকে তাকিয়ে সেদিন মানুষ যে ত্রাসের সাক্ষী হয়েছিল, সেটা কোনো ভূত-রাক্ষসের শাপ ছিল না। বরং সেটি ছিল এক প্রাণঘাতী ভাইরাস, নাম যার ইবোলা।1
জায়ার থেকে রেস্টন
মাউন্ট এলগনের সেই ভীতি অবশ্য চার্লস মনেটের মাধ্যমে শুরু হয়নি। এর কয়েক বছর পূর্বে সেই কিতুম গুহা থেকে কয়েক মাইল দূরে বর্তমান দক্ষিণ সুদানের এক গ্রামে ইউ জি নামক এক শিকারি অকস্মাৎ রক্তক্ষরণে মৃত্যুবরণ করে। ইউ জি’র মৃত্যুর কারণ ছিল এই ইবোলা ভাইরাস, যা পরবর্তীতে মহামারী আকারে সেই অঞ্চলে আঘাত হানে। এর দুই মাস পর ইবোলা ভাইরাস আঘাত হানে তৎকালীন জায়ার (বর্তমান গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো) এর বুম্বা গ্রামে।
১৯৭৬ সালের বুম্বা ইবোলা ছিল ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ ইবোলা মহামারী। বুম্বা গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে একটি নদী, যার নাম ইবোলা। মূলত এই নদী থেকেই ভাইরাসের নামকরণ করা হয় ইবোলা। সেবার ইবোলা এতটাই মারাত্মক ছিল যে, স্বাস্থকর্মীদের ভয় ছিল এই মহামারী হয়তো পুরো অঞ্চল জনশূন্য করে দেবে। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে মাত্র ৩১৮ জনে এসে থেমে যায় ইবোলার আগ্রাসন। সঠিক কারণ না জানা গেলেও ধারণা করা হয়, ইবোলা এত দ্রুত আক্রান্তের দেহ অকেজো করে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয় যে, ভাইরাসটি অন্য কাউকে আক্রমণ করার জন্য যথেষ্ট সময় লাভ করতে ব্যর্থ হয়।2
যদি সেবারের মহামারীকে ২০১৪ সালের মহামারীর সাথে তুলনা করা যায়, তাহলে দেখা যাবে ২০১৪ সালে ইবোলার কারণে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল প্রায় ২৯ হাজার! তবে ৭৬-এর মহামারীর ভয়াবহতা বিশ্বের অন্যান্য সচেতন নাগরিকদের বুকে ভয় ধরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিল।
জায়ার মহামারীর এক যুগ পর সেই ইবোলার দেখা মিললো একদম আধুনিক বিশ্বের প্রতাপশালী যুক্তরাষ্ট্রের রেস্টন অঞ্চলে। রেস্টন ছিল রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির অন্তর্ভুক্ত একটি শহরতলী। একেবারে মার্কিন মুলুকের প্রাণকেন্দ্রে ইবোলার আগমন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ঘুম হারাম করে দিয়েছিল। একদিকে ভাইরাস নির্মূলের গুরুদায়িত্ব, আরেকদিকে গণমাধ্যমের প্রশ্নবাণ- কোনটা ছেড়ে কোনটা সামলাবেন এই ভাবনায় জর্জরিত তারা।
শেষপর্যন্ত কী পরিণতি হয়েছিল রেস্টনের ইবোলা আগ্রাসনে? আর জায়ারের ইবোলা কীভাবে আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে পৌঁছেছিল মার্কিন মুলুকে? এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে আপনাকে অবশ্যই ডুবে যেতে হবে দ্য হট জোন-এর দুনিয়ায়।
সাবলীল বর্ণনায় প্রাণবন্ত এক থ্রিলার
কাহিনী, সংলাপ, সহজ ভাষায় বিশদ আলোচনার বাইরে দ্য হট জোন পাঠকদের নিকট সমাদৃত হয় মহামারী এবং তা প্রতিরোধে বিজ্ঞানীদের জটিল বহুস্তর বিশিষ্ট গবেষণাগার এবং বিভিন্ন কলাকৌশল সম্পর্কিত বিষয়গুলো একদম সহজ ভাষায় তুলে ধরার জন্য। এই বিষয়গুলো পাঠকগণ একদম বইয়ের শুরু থেকেই অনুধাবন করতে পারবেন। লেখক প্রথম অধ্যায় শুরুর পূর্বে নাটকীয় ভঙ্গিমায় চতুর্থ স্তরের গবেষণাগারে প্রবেশের জন্য যে ধরনের নিরাপত্তা বেষ্টনী অতিক্রম করতে হয়, তার এক রেপ্লিকা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। এই নিরাপত্তা বেষ্টনী শেষ হয়ে যখন গল্প শুরু হয়, তখন থেকে পাঠকদের গা ছমছম করতে থাকবে ‘কখন কী ঘটে যায়’!
বইয়ের শুরু থেকে শেষপর্যন্ত একবারও মনে হবে না যে, এটি একটি প্রবন্ধগ্রন্থ। উল্টো ঘটনার নান্দনিকতা এবং মহামারীর ভয়ঙ্কর রূপ পাঠকদের থ্রিলার গল্পের আবেশ উপহার দিতে সক্ষম হবে। বিশদ আলোচনার ভিড়ে পাঠককে এক মুহূর্তের জন্যেও নিজেকে দলছুট মনে হবে না। বিজ্ঞান নিয়ে সাধারণ জ্ঞানসম্পন্ন যে কারো জন্য বইটি পড়া সহজ হবে। ‘হরর কিং’ হিসেবে খ্যাত স্টিফেন কিং এই বইটিকে তার অন্যতম প্রিয় বই হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি তার অনুভূতি জানিয়ে বলেন,
“আমার জীবনে পড়া সবচেয়ে লোমহর্ষক লেখাগুলোর মধ্যে অন্যতম। পুরো বইটি এককথায় অসাধারণ।”
মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ
ফিচার লেখার অজুহাতে ইবোলার সাথে এক ব্যতিক্রমী সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন রিচার্ড প্রেস্টন। সেই সম্পর্কের চূড়ান্তরূপ ছিল ‘দ্য হট জোন’। ১৯৯৪ সালে প্রকাশিত এই বইটি সেবছর নিউ ইয়র্ক বেস্ট সেলার তালিকায় প্রথম স্থান দখল করে নেয়। প্রকাশিত হওয়ার পর বইটির সর্বমোট ৩৫ লক্ষাধিক কপি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিক্রি হয়েছে। প্রকাশনার পর বড় বড় পত্রিকার পর্যালোকগণ বইটির প্রশংসা করেন। ইউএসএ টুডে’র মতে, এই বইটি যেকোনো থ্রিলার গল্পের চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর। বিখ্যাত টাইম-এর ফিচারে ছাপা হয়-
“রিচার্ড প্রেস্টনের বইয়ে বাস্তব জীবনের ভয়কে অসাধারণভাবে রূপায়িত করা হয়েছে যা কোনো সিনেমা আমাদের দেখাতে পারবে না।”
সান অ্যান্টনিও এক্সপ্রেস নিউজ লিখেছিল-
“প্রেস্টনের সবচেয়ে বড় চাল ছিল কিছু বৈজ্ঞানিক তথ্য এবং সাক্ষাৎকারকে মানবিক গল্পে রূপান্তর করা। তিনি এখানে শতভাগ সফল হয়েছেন।”
শত প্রশংসার ভিড়ে দ্য হট জোন বেশ সমালোচিতও হয়েছিল। স্বাস্থ্যকর্মী এবং গবেষকদের অভিযোগ ছিল, বইয়ে ইবোলার লক্ষণগুলোকে অতিরঞ্জিত করে লেখা হয়েছে। বিশেষ করে ইবোলা রোগীদের রক্তক্ষরণের ব্যাপারটি যতটা গুরুতর দেখানো হয়েছে সেটা বাস্তবে সেরকম নয়। এছাড়া বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা বাস্তব অভিজ্ঞতার সাথে সাংঘর্ষিক বলে অভিযোগ উঠে। রিচার্ড প্রেস্টন এসব অভিযোগ অস্বীকার করেননি। তিনি গল্পের খাতিরে কিছুটা রাঙিয়ে ফেলেছেন বলে একমত হন। তবে অনেকের অভিযোগ ছিল ইবোলাকে যতটা ভয়ঙ্কর গণ্য করা হয়েছে তা বাস্তবে সেরকম নয়। অভিযোগকারীদের ধারণা তাৎক্ষণিকভাবে উড়িয়ে দিতে পারেনি অনেকে। কিন্তু ২০১৪-১৬ ইবোলা মহামারীর পর তারা সেই অভিযোগের দাঁতভাঙা জবাব পেয়েছিল।
টেলিভিশনের পর্দায়
গত বছরের মাঝামাঝি সময় এইচবিওতে প্রচারিত হয় মিনিসিরিজ ‘চেরনোবিল’। মানব সভ্যতার ইতিহাসের অন্যতম দূর্ঘটনা চেরনোবিল বিপর্যয়কে পুঁজি করে নির্মিত সেই মিনিসিরিজটি দর্শকদের মাঝে ঝড় তুলে দিয়েছিল। চেরনোবিলের পরপরই ইবোলা মহামারী নিয়ে নির্মিত মিনিসিরিজ ‘দ্য হট জোন’ প্রচারিত হয় ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলের প্রযোজনায়।
নিক মার্ফির পরিচালনা এবং লিয়াম কানিংহাম ও জুলিয়ানা মার্গুলিসের অসাধারণ অভিনয়ে সিরিজটি সমালোচকদের নিকট প্রশংসিত হয়। কিন্তু চেরনোবিলের মতো তা দর্শকদের মনে জায়গা করে নিতে ব্যর্থ হয়। বইপ্রেমীদের মতে, মিনিসিরিজটি বইয়ের থ্রিলারধর্মী আবহকে যথার্থভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেনি। যার ফলে তা জনপ্রিয়তা অর্জনে ব্যর্থ হয়। অনেকের মতে এর পেছনে চেরনোবিলের জনপ্রিয়তা এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতাও অনেকাংশে দায়ী। তবে এই বইয়ের রূপালি পর্দায় যুতসই রূপান্তর করা সহজ কাজ নয়। যার প্রমাণস্বরূপ ১৯৯৪ এর পরে রিডলি স্কটের মতো প্রখ্যাত পরিচালক বইটির সিনেমা সংস্করণ বের করতে ব্যর্থ হন। তারপরেও বইপ্রেমীরা আশায় বুক বেঁধে অপেক্ষা করছে এর যথার্থ লোমহর্ষক রূপান্তরের জন্য।
লেখক রিচার্ড প্রেস্টন বইয়ের এক অনুচ্ছেদে লিখেছেন-
“এইডসের যেটা ১০০ দিন, ইবোলার জন্য সেটা মাত্র ১০ দিন।”
ইবোলার সর্বনাশা রূপ আমরা মাত্র ৬ বছর আগেই অবলোকন করেছি যা কেড়ে নিয়েছে হাজার হাজার প্রাণ। একবিংশ শতাব্দীতে ইতোমধ্যে আমরা বার্ড ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু, জিকা ভাইরাস, ইবোলা, নোভেল করোনা ভাইরাসের মতো বেশ কয়েকটি মহামারীর মুখোমুখি হয়েছি। দ্য হট জোন-এর মতো সাহিত্যকর্মগুলো শুধু থ্রিলার বা আনন্দের উৎস নয়, বরং আসন্ন দিনগুলোর পূর্বাভাস। অতিসত্বর বিশ্বব্যাপী সচেতনতা সৃষ্টি এবং দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিয়ে পরবর্তী ইবোলাকে প্রতিরোধ না করা গেলে এই সাহিত্যকর্মগুলোর মুখ্য উদ্দেশ্য ব্যর্থ বলে গণ্য হবে।