![](https://assets.roar.media/assets/C4ErTFdl1Jou5ox8_the-road back.jpg?w=1200)
যুদ্ধফেরত সৈনিকদের নিয়ে অদ্যাবধি রচিত সবচেয়ে শক্তিশালী উপন্যাস। … একসঙ্গে পঁচিশটি ভাষায় প্রকাশিত এ বইটি পৃথিবীর প্রত্যেক সচেতন পাঠকের অবশ্যপাঠ্য।
-দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস বুক রিভিউ
এরিক মারিয়া রেমার্ক
এরিক মারিয়া রেমার্কের ‘দ্য রোড ব্যাক’ ১৯৩০ এর ডিসেম্বর এবং ১৯৩১ এর জানুয়ারিতে একটি জার্মান পত্রিকায় ধারাবাহিক আকারে প্রকাশিত হয়। বই আকারে এটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৩১ সালের এপ্রিলে।
![](https://assets.roar.media/assets/099fs9pUAGFrrWsL_MV5BZDAzNWMyNjYtNTM0Yi00N2I1LTk3NjctODQ2YTM0Nzc4OGFkL2ltYWdlL2ltYWdlXkEyXkFqcGdeQXVyMTc4MzI2NQ%40%40._V1_.jpg)
এরিক মারিয়া রেমার্ক ১৮৯৮ সালের ২২ জুন জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করেন। তাকে প্রধানত স্মরণ করা হয় প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ওপর তার লেখা অবিস্মরণীয় উপন্যাস ‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’ এর জন্য। সম্ভবত প্রথম বিশ্বযুদ্ধকে দুনিয়ার চোখে পরিবেশন করা সবচেয়ে সেরা উপন্যাস এটি।
এরিক মারিয়া রেমার্ককে মাত্র ১৮ বছর বয়সে সেনাবাহিনীতে টেনে নেয়া হয়। তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বেশ কয়েকবার আহত হন। যুদ্ধ শেষে তিনি ‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট লেখার’ পাশাপাশি নানা কাজ করেন। বইটি প্রকাশিত হবার প্রায় সাথে সাথেই আন্তর্জাতিকভাবে সাফল্য লাভ করে। একে ঘিরে একটি আমেরিকান সিনেমাও নির্মিত হয়। এই বইটির একটি সিক্যুয়েলও (দ্য রোড ব্যাক) বেশ সফলভাবেই প্রকাশিত হয়। এরপর রেমার্ক আরো বেশ কয়েকটি উপন্যাস লিখেছিলেন। তাদের বেশিরভাগই প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভুক্তভোগীদের নিয়ে। কিন্তু তাদের কোনোটিই প্রথমটির মতো প্রশংসা ও সমালোচনা অর্জন করতে পারেনি।
![](https://assets.roar.media/assets/6FautWgx10K1qaTN_mw255424.jpg)
এরিক মারিয়া রেমার্ক জার্মানি ত্যাগ করে ১৯৩২ সালে সুইজারল্যান্ডে বসবাস করা শুরু করেন। নাৎসিরা তার বইকে ১৯৩৩ সালে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সেখান থেকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান। তাকে সেখানে ১৯৪৭ সালে নাগরিক অধিকার দেয়া হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তিনি পুনরায় সুইজারল্যান্ডে ফিরে যান। সেখানে তিনি তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে আমৃত্যু বসবাস করেন। রেমার্ক ১৯৭০ সালের ২৫ শে সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।
দ্য রোড ব্যাক
এরিক মারিয়া রেমার্কের সেরা শিল্পকর্ম ‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’ এর সিক্যুয়েল হিসেবে এই বই প্রকাশিত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের শেষ দিক থেকে শুরু হয় ‘দ্য রোড ব্যাক’ এর কাহিনী, যেখানে সৈন্যরা যুদ্ধ শেষে ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। যদিও এতে কেবলমাত্র ‘জাদেন’ বাদে ‘অল কোয়ায়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’ এর আর কোনো চরিত্র সরাসরি নেই, তবে অনেকেরই উল্লেখ রয়েছে।
![](https://assets.roar.media/assets/R7ROXspxIMhh5odG_ww1_soldiers_trench.jpg)
টানা চার বছর যুদ্ধে থাকার পর আর্নস্ট ও তার যুদ্ধকালীন সঙ্গীসাথীরা বাড়িতে ফিরছে। এ চার বছরের সময়ে অর্থাৎ ফ্রন্টে থাকাকালীন তারা তাদের সহকর্মীদের সাথে অন্যরকম এক অন্তরঙ্গতা স্থাপন করেছে। এমন একধরনের বন্ধুত্ব, যা তাদের যুদ্ধের মিসাইল, শেল, গোলাবারুদ এর বর্বর অনুভূতি থেকে বের হয়ে আসতে সাহায্য করেছে। যুদ্ধের ময়দানে থেকেও যেন তারা বাড়িতে বাবা, মা, স্ত্রী, সন্তানের কাছে ফেরার স্বপ্ন দেখতো। এখন সে স্বপ্ন সত্যি হবার পর আর্নস্টের মনের ভেতর এক অন্যরকম অনুভূতি আসে। সে তার মৃত সহযোদ্ধাদের কথা মনে করে। এবং অবাক হয়ে লক্ষ্য করে তার খারাপ লাগছে না।
![](https://assets.roar.media/assets/ntgTIdAXN4Wzsk4h_image.jpg)
বাড়িতে ফেরার পর তারা সবাই খেয়াল করে তাদের আগের জগতের সাথে বর্তমান জগত মিলছে না। তারুণ্যে ভরা তাদের সেই পুরনো দিনগুলো এখন আর নেই। তারা ভেবেছিলো, এত বছর পর যুদ্ধ শেষে ফিরে আসছে, সবাই তাদের জন্য প্রতীক্ষায় থাকবে। কিন্তু তারা অবাক হয়ে দেখে যে সবাই তাদের নিজেদের কাজ নিয়ে ব্যস্ত। তারা ছিলো না বলে অন্যদের জীবনের উপর তার ন্যূনতম প্রভাবও পরেনি। বাড়িতে ফেরার পথেই তাই হতাশা তাদের মনে প্রবেশ করে।
বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে তাদের ধীরে ধীরে মনে হতে থাকে যে আসলে বর্তমান জগত তাদের জন্য মানানসই নয়। ফ্রন্টে তাদের সবার মধ্যে অন্যরকম একটা হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো। তারা একজন আরেকজনের মনের ভাব সে যুদ্ধক্ষেত্রে সহজেই বুঝতে পারতো। কিন্তু এখন তা তাদের আশেপাশের কেউ বুঝতে পারছে না। তাদের মনে হচ্ছিলো, তারাও তাদের আশেপাশের কাউকে সহজে বুঝতে পারছে না। এ অনুভূতিটা অনেকটা এরকম যে, তারা বর্তমান দুনিয়ার চেয়ে অনেক পিছিয়ে গেছে। তারা যেন এখানে অবাঞ্ছিত। এ ব্যাপারটা তাদের মনের উপর এক গভীর ছায়া ফেলে।
ফিরে আসার পর আর্নস্ট একদিন তার এক কাকার বাসায় বেড়াতে যায়। সেখানে গিয়ে সে দেখে সবাই যুদ্ধ ও যুদ্ধপরবর্তী সময়ের নানা বিষয়ের ওপর খুব বিচক্ষণ একটা ভাব নিয়ে কথা বলছে। সে যখন খেতে বসে, তখন খেয়াল করে শুধুমাত্র সে বাদে আর বাদবাকি সবাই কেতাদুরস্ত কায়দায় খাচ্ছে। এবং তার হাত দিয়ে খাবার খাওয়ার রকম দেখে তার দিকে সবাই বিদ্রূপমিশ্রিত এক অবাক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে। তখন সে লজ্জা অনুভব করে। একইসাথে সে অনুভব করে ক্রোধ। তার কথনে,
“এখন আমার লজ্জার সাথে মিশে আছে ক্রোধ। ক্রোধ কার্ল কাকার ওপরে, যিনি এখন দেশের যুদ্ধকালীন ঋণ নিয়ে বড় বড় কথা বলছেন। ক্রোধ এখানে উপস্থিত দাম্ভিক সব লোকের ওপরে, যারা নিজেদের সম্পর্কে বড়াই করে বেড়ায় অকারণে; ক্রোধ গোটা পৃথিবীর ওপরে, যেখানে এসব লোকজন অতিনিশ্চিত মনোভাব নিয়ে বাস করছে এখন, যেন যুদ্ধের সেই বিভীষিকাময় দিনগুলো পেরিয়ে আসতে হয়নি তাদের, যখন উদ্বিগ্নতা ছিল শুধু একটা ব্যাপার নিয়ে-জীবন অথবা মৃত্যু, তার বেশি কিছু নিয়ে নয়”।
তাদের এ সময় মনে হয় তারা বিশ্বাসঘাতকতার সম্মুখীন হয়েছে। তারুণ্যের সময় তারা যুদ্ধের উদ্দেশ্যে ঘরবাড়ি ত্যাগ করেছিলো, তারা মনে করেছিলো তারা তাদের পিতৃভূমির জন্য যুদ্ধ করতে যাচ্ছে। কিন্তু তারা অনুধাবন করে, তারা অন্য কারো গর্ব, অন্য কারো স্বার্থ হাসিলের জন্য এতদিন প্রাণ বিসর্জন দিচ্ছিলো। তাদের শহর এ সময় তাদের কাছে তাদের নিজেদের শহর মনে হচ্ছিলো না। বাবা-মায়ের সাথেও তাদের অনেক বেশি দূরত্ব তৈরি হয়ে গিয়েছিলো। নারীরা আর সে নারী ছিলো না, যাদের সাথে তারা কোনো একদিন প্রেমে পড়েছিল।
তাদের মাঝে অনেকেই পুনরায় ফ্রন্টে ফিরে যেতে চাইতে শুরু করে। সেখানে তাদের জায়গা, তাদের কল্পনা, তাদের একাত্মতার কথা চিন্তা করে। বাস্তবজগতের সাথে সেখানকার তুলনা করতে গিয়ে ক্রমেই তারা হতাশ হয়ে যায়। সেখানে যারা যুদ্ধে মারা গেছে, তাদের বীর হিসেবে সম্মান করা হচ্ছে না। যুদ্ধাহত ও যুদ্ধফেরতদের প্রতি সমাজের যে দায়িত্ব পালন করার কথা, সমাজ তাদের প্রতি সে দায়িত্ব পালন করছে না। তারা হতাশ হয়ে দেখে সমাজ তাদের ত্যাগ-তিতিক্ষা, যুদ্ধের সময় তারা কী অবর্ণনীয় যন্ত্রণা সহ্য করেছে, তা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ।
‘দ্য রোড ব্যাক’ কয়েকজন যুবকের কথা বর্ণনা করে, যারা ভুল সময়ে ভুল জন্ম নিয়েছিল। যার ফলাফল হিসেবে তারা যুদ্ধের অবর্ণনীয় যন্ত্রণা সহ্য করেছে। কিন্তু মানবসভ্যতা তাদের সে যন্ত্রণা, সে যুবকদের প্রতি করা তাদের ভুল থেকে কোনো শিক্ষাই গ্রহণ করেনি। খুব শীঘ্রই তারা যুদ্ধের ভয়াবহ নৃশংসতা ভুলে আবার নতুন উদ্যমে কিছু বালককে এমন এক আদর্শে প্রশিক্ষিত করার কাজ শুরু করে, যে আদর্শের আদতে উপস্থিতিই নেই।
আর্নস্ট শেষপর্যন্ত উপলব্ধি করে, তাকে সেসব যন্ত্রণা নিয়েই বাঁচতে হবে। আর নিজেকে সময় দিতে হবে সবকিছুর সাথে নিজেকে সইয়ে নেবার জন্য। হয়তোবা সে আর কখনো সুখী হবে না, যুদ্ধ তার সুখী হবার সম্ভাবনাকে চিরতরে নষ্ট করে দিয়েছে। কিন্তু আর কখনো অসুখীও হবে না। কারণ সে নিজেকে ধীরে ধীরে প্রস্তুত করে তুলবে। কর্মতৎপর করে তুলবে তার চিন্তা-ভাবনাকে। হয়তোবা তাহলে আর তাকে তার অতীত তাড়া করবে না; বরং সহযোগিতা করবে, দেবে সাহচর্য।
ফিচার ইমেজ: paperbackswap.com