Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

দ্য সেভেন হ্যাবিটস অব হাইলি ইফেক্টিভ পিপল: যে অভ্যাসগুলো বদলে দেবে জীবন (পর্ব | ১)

“কোনো ব্যক্তি চিরকাল স্থায়ী হয় না, তবে বই এবং ধারণা ঠিকই টিকে যায়।”
– জিম কলিন্স

চিরকাল স্থায়িত্ব ছাড়াও কখনও কখনও একটি বই মানুষের জীবন পরিবর্তন করতে পারে। মানুষের দৃষ্টিভঙ্গী পরিবর্তন করার এমন একটি বই নিয়ে এই আয়োজন। পৃথিবীব্যাপী ব্যাপকভাবে সমাদৃত স্টিভেন আর. কোভের ‘সেভেন হ্যাবিটস অব হাইলি ইফেক্টিভ পিপল’ বইটিতে খুব সুন্দর করে বোঝানো হয়েছে আসলেই জীবনকে অর্থবহ করে তোলার জন্য কীভাবে আমরা তৈরি করব নিজেদের। বইয়ে বর্ণনা করা প্রতিটি নীতি নিয়ে লেখক নিজেই বলেছেন,

“হ্যাঁ, আমি বইটি লিখেছিলাম, তবে নীতিগুলো আমাদের অনেক আগে থেকেই জানা ছিল। নীতিগুলো প্রাকৃতিক নিয়মের মতো ছিল। আমি যা করেছি তা মানুষের জন্য সংশ্লেষিত করে সেগুলোকে একত্রিত করা।”

বইয়ে সবগুলো অভ্যাসের সাথে সফল ব্যক্তিদের জীবনদর্শনের মিল দেখানো হয়েছে নানা ধরনের গল্পের মাধ্যমে। যখন গেটস প্রথম ওয়ারেন বাফেটের সাথে একটি ডিনারে দেখা করেছিলেন, তখন হোস্ট টেবিলে থাকা সকলকে জিজ্ঞাসা করেন যে- তারা জীবনকে সফলভাবে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একক কারণ হিসেবে কী দেখেছেন। অ্যালিস শ্রোডার তার বই ‘দ্য স্নো বোলে’ উল্লেখ করেছেন, গেটস এবং বাফেট উভয়েই একই এক-শব্দের উত্তর দিয়েছেন: “ফোকাস” (অভ্যাস ৩: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে প্রথমে রাখা)।

ইনসাইড-আউট

বইটিতে বলা হয়েছে আমরা যদি পরিস্থিতি বদলাতে চাই, তবে আমাদের প্রথমে নিজেদের বদলাতে হবে। এবং নিজেদের কার্যকরভাবে পরিবর্তন করতে আমাদের প্রথমে আমাদের নীতিগুলো পরিবর্তন করতে হবে। অ্যালবার্ট আইনস্টাইন একবার বলেছিলেন,

“আমরা সাধারণত যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখি হই, সেগুলো তৈরির সময় আমরা যে চিন্তা-ভাবনার স্তরে ছিলাম, সেই স্তরে থেকে সমাধান করা যায় না।”

‘ইনসাইড-আউট’ মানে প্রথমে নিজের সাথে শুরু করা, এমনকি আরও মৌলিকভাবে, নিজের সবচেয়ে ভেতরের অংশ দিয়ে শুরু করা- আপনার দৃষ্টান্ত, আপনার চরিত্র এবং আপনার উদ্দেশ্যগুলো দিয়ে। আর এজন্য প্রয়োজন হলো অভ্যাস, যা জ্ঞান, দক্ষতা ও ইচ্ছাশক্তির সমন্বয়।   

অভ্যাসের ভিত্তি; Image Source: www.adeask.ca

বইটিতে অভ্যাসগুলো যেভাবে আছে

প্রথম তিনটি অভ্যাস হলো ব্যক্তিগত বিজয়ের অভ্যাস। এর মাধ্যমে আপনার মধ্যে যে ‘পরিবর্তনের দ্বার’ উন্মুক্ত হবে তা উল্লেখযোগ্যভাবে আপনার আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করবে। আপনি নিজেকে আরও গভীর, আরও অর্থপূর্ণ উপায়ে জানতে পারবেন- আপনার প্রকৃতি, আপনার গভীরতম মূল্যবোধ এবং আপনার অনন্য অবদানের ক্ষমতা। আপনি যখন আপনার মূল্যবোধে বেঁচে থাকবেন, আপনার পরিচয়, অখণ্ডতা ও নিয়ন্ত্রণ আপনাকে উচ্ছ্বাস এবং শান্তি উভয়ের দিকে উদ্বুদ্ধ করবে। লোকেদের মতামত বা অন্যদের সাথে তুলনা না করে আপনি নিজেকে ভেতর থেকে সংজ্ঞায়িত করবেন।

যখন আপনি নিজেকে পরবর্তী তিনটি অভ্যাসের জন্য উন্মুক্ত করবেন, যাকে বলা যায় জনবিজয়ের অভ্যাস- যেখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কগুলো পুনর্গঠনের জন্য আপনার মধ্যে আগ্রহ জাগবে, যা খারাপ হয়ে গেছে বা এমনকি ভেঙে গেছে। আর ভালো সম্পর্কগুলো উন্নত হয়ে আরও গভীর, দৃঢ়, সৃজনশীল এবং সুন্দর হয়ে উঠবে।

অভ্যাস ১: সক্রিয় হওয়া

আমাদের আচরণ আমাদের সিদ্ধান্তের একটি ফলাফল, আমাদের পরিবেশ এর জন্য দায়ী নয়। আমরা অনুভূতিকে মূল্যবোধে পরিণত করতে পারি। কোনো কিছু করার জন্য আমাদের উদ্যোগ এবং দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। সক্রিয় ব্যক্তিরা সেই দায়িত্ব স্বীকার করে। তারা তাদের আচরণের জন্য পরিস্থিতি, শর্ত বা পরিবেশকে দায়ী করে না। আমাদের সাথে সেটা ঘটে তা নয়, বরং ঘটনাগুলো আমরা কীভাবে নিচ্ছি তা-ই শেষপর্যন্ত ফলাফল নির্ধারণ করে।

উদ্যোগ নেয়া

বইটিতে উদ্যোগ নেওয়া বলতে এটা বোঝায়নি যে আপত্তিকর বা আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠা। এর অর্থ হলো কোনো কিছু ঘটানোর জন্য আমাদের দায়িত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া। ভাষার ভিন্নতা থেকেই কিন্তু আপনি প্রতিক্রিয়াশীল নাকি সক্রিয় একজন মানুষ সেটা বোঝা যায়।

  • প্রতিক্রিয়াশীল ভাষা: এখানে আমার কিছুই করার নেই।
  • সক্রিয় ভাষা: আসুন আমাদের বিকল্পগুলো দেখি।
  • প্রতিক্রিয়াশীল ভাষা: আমি ঠিক এমনই।
  • সক্রিয় ভাষা: আমি একটি ভিন্ন পদ্ধতি বেছে নিতে পারি।
  • প্রতিক্রিয়াশীল ভাষা: সে আমাকে খুব দুঃখ দেয়।
  • সক্রিয় ভাষা: আমি আমার নিজের অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করি।

সার্কেল অব কনসার্ন/ সার্কেল অব ইনফ্লুয়েন্স

সার্কেল অব কনসার্ন বলতে বইটিতে বোঝানো হয়েছে- আপনার জীবনের সেসব জিনিস যেগুলোর উপর আপনার প্রভাব নেই শুধু আপনি, সেগুলো সম্পর্কে সর্বোচ্চ ধারণা রাখতে পারেন। এসকল বিষয় নিয়ে বেশি মাথা না ঘামানোকেই প্রাধান্য দিয়েছেন কোভে। তার মতে, আমাদের সবসময় সেসব বিষয়কেই গুরুত্ব দেয়া উচিত, যাদের উপর আমাদের প্রভাব আছে, কিংবা বলা যায়- যেসব বিষয় নিয়ে কাজ করলে আমাদের কোনো লাভ হবে। আর এই জায়গাই আমাদের জীবনের সার্কেল অব ইনফ্লুয়েন্সের মধ্যে পড়ে। আর এটা খুবই সত্য- আপনি যদি সার্কেল অব কনসার্নের উপর গুরুত্ব দেন, তবে আপনার সার্কেল অব ইনফ্লুয়েন্স ছোট হতে থাকবে, এবং আপনি মানুষ হিসেবে কম গুরুত্ব পাবেন।   

Image Source: emergingrnleader.com

অভ্যাস ১ এর ইতি টানা হয়েছে বইটিতে এভাবে- কখনও কখনও আমরা যা করতে পারি তা হলো সুখী হওয়া, কেবল সত্যিকারের হাসিমাখা মুখ ধারণ করা। আমরা খুশি হতে পারি এবং সেই জিনিসগুলোকে মেনে নিতে পারি যেগুলো বর্তমানে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না, যখন আমাদের উচিৎ আমরা যেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি তার উপর ফোকাস করা।

অভ্যাস ২: শেষটা মাথায় রেখে শুরু করা

ব্যক্তিগত নেতৃত্বের নীতি

“আমাদের পেছনে কী রয়েছে এবং আমাদের সামনে কী রয়েছে তা আমাদের মধ্যে যা রয়েছে তার তুলনায় ক্ষুদ্র বিষয়।”
– অলিভার ওয়েন্ডেল হোমস

গভীরভাবে চিন্তা করে দেখুন- মৃত্যর পর আপনি কীভাবে নিজেকে দেখতে চান। আপনার শেষকৃত্যে আগত মানুষেরা হতে পারে আপনার ছেলে-মেয়ে, কিংবা স্ত্রী বা বন্ধুবান্ধব আর আত্মীয়স্বজন। তারা আপনার সম্বন্ধে কেমন কথা বললে আপনি খুশি হবেন? আপনার অফিসের সহকারী, কিংবা কোনো মানুষ যিনি আপনাকে চেনেন- সবার কাছেই আপনার ভাবমূর্তি কেমন হবে যখন আপনি চলে যাবেন সেটা এখনই ভেবে রাখতে বলেছেন স্টিফেন আর কোভে। যাতে আপনি আজ থেকেই নিজেকে সেভাবেই প্রস্তুত করতে পারেন আর এগিয়ে যেতে পারেন জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে। আর এখান থেকে আপনি আপনার জীবনের সফলতার মানেও পেয়ে যাবেন।

জীবনে সবকিছুই দুবার তৈরি হয়

মানুষ জীবনে যেটাই করে, সে কিন্তু মাথায় পুরো কাজটা আগেই ভেবে নেয়। সেটা যদি একটা বাড়ি তৈরির মতো ব্যাপারও হয়, বাড়ির মালিকের চিন্তায় কিন্তু শুরুতেই বাড়ির একটি মডেল তৈরি হয়ে যায়। তারপর আসে বাস্তবে বাড়ি প্রস্তুত করা। এজন্য আগে থেকেই শেষ ফলাফল চিন্তা করেই কাজ শুরু করতে হবে। আর নিজের জীবনের জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে শিখতে হবে, আপনি কী চান সেটি আগেই ভেবে রাখতে হবে।

নেতৃত্ব ও ব্যবস্থাপনা- দুটি ভিন্ন বিষয়

পিটার ড্রাকার এবং ওয়ারেন বেনিস উভয়ের ভাষায়, “ব্যবস্থাপনা মানে সঠিকভাবে কাজ করা; আর নেতৃত্ব মানে সঠিক কাজ করা।” ব্যবস্থাপনা হলো সাফল্যের সিঁড়ি আরোহণে দক্ষতা; আর নেতৃত্ব নির্ধারণ করে যে মইটি সঠিক প্রাচীরেই আছে কিনা। আর কোভের মতে,

“নেতৃত্ব হলো অন্যদের মূল্য এবং সম্ভাবনাকে এত স্পষ্টভাবে তাদের সামনে তুলে ধরা যে তারা নিজের মধ্যে এর প্রতিফলন দেখতে অনুপ্রাণিত হয়।”

Image Source: yourtrainingedge.com

একটি ব্যক্তিগত মিশন স্টেটমেন্ট

ভুলকে ভয় করা উচিৎ নয়, বরং শুধুমাত্র সেই ভুলগুলোর জন্য সৃজনশীল, গঠনমূলক এবং সংশোধনমূলক প্রতিক্রিয়ার অনুপস্থিতিকে ভয় করা উচিৎ। মানুষ পরিবর্তনের সাথে বাঁচতে পারে না যদি তাদের মধ্যে একটি পরিবর্তনহীন কোর না থাকে। পরিবর্তন করার ক্ষমতার চাবিকাঠি হলো আপনি কে, আপনার জীবনের উদ্দেশ্য কী এবং আপনি কাছে কী মূল্যবান সেই সম্পর্কে একটি পরিবর্তনহীন অনুভূতি থাকা। আমাদের জীবনের কেন্দ্রে যা আছে তা হবে আমাদের নিরাপত্তা, নির্দেশনা, প্রজ্ঞা এবং শক্তির উৎস।

অভ্যাস ৩: সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে প্রথমে রাখা

“সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে কখনোই কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সাথে তুলনা করা উচিত নয়।”

– গ্যেটে

কার্যকরী ব্যবস্থাপনা হলো প্রথম জিনিসগুলোকে প্রথমে রাখা। যদিও নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেয় “প্রথম জিনিসগুলো” কী; এটি ব্যবস্থাপনা, যা তাদের প্রথম রাখে, প্রতিটি দিনে, প্রতিটি মুহুর্তে।

সময় ব্যবস্থাপনা ম্যাট্রিক্স

সময় ব্যবস্থাপনা ম্যাট্রিক্স; Image Source: weekplan.net

সময় ব্যবস্থাপনা ম্যাট্রিক্স বুঝে যদি আমরা চলতে পারি তবে আমরা আমাদের সময়ের সঠিক ব্যবহার করতে পারব। আমরা অবশ্যই যে কাজগুলো গুরুত্বপূর্ণ সেগুলোই সবচেয়ে আগে করব। কোভে তার বইয়ে বাকি কাজগুলোও কেমন হতে পারে তার খুব সুন্দর ব্যাখ্যা করেছেন এবং আমাদের কীভাবে সব কাজের ব্যবস্থাপনা করা উচিৎ তা-ও বলে দিয়েছেন। 

প্রতিনিধিদের কাজের বন্টন 

কার্যকর ব্যবস্থাপনার চাবিকাঠি হলো আপনার কাজগুলোকে ভাগ করে দেয়া। যারা কাজগুলো করার যোগ্য তাদেরকে ঠিকভাবে ব্যবহার করা।

  • গোফার প্রতিনিধি

মূলত দুই ধরনের প্রতিনিধি রয়েছে: গোফার প্রতিনিধি এবং স্টুয়ার্ডশিপ প্রতিনিধি। গোফার প্রতিনিধি মানে “এর জন্য যান, এর জন্য যান; এটা করুন, এটা করুন, এবং যখন এটা হয়ে যাবে আমাকে বলুন।” অর্থাৎ যাকে দায়িত্ব দিয়ে দিচ্ছেন, প্রতিটি বিষয়েই তাকে বলে দেওয়া, বার বার তার কাজে উপদেশ দেয়া। এটি খুব বেশি বুদ্ধিদীপ্ত পদ্ধতি নয়।

  • স্টুয়ার্ডশিপ প্রতিনিধি

স্টুয়ার্ডশিপ প্রতিনিধিতে পদ্ধতির পরিবর্তে ফলাফলের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়। এটি দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে তার স্বাধীনতামতো কাজ করতে দেয় এবং ফলাফলের জন্য তাদের দায়ী করে। এই পদ্ধতিতে কাজটা ঠিকমতো শেষ হলো কিনা সেটাই একজন লিডারকে দেখতে হয়।

[চলবে]

This article is in Bangla. It is a review of a book named 'The 7 Habits of Highly Effective People' by Stephen R. Covey about powerful lessons in personal change.

Necessary references have been hyperlinked inside the article.

Featured Image: Julia Peglow

Related Articles