২০২০ সাল যেন শুধুই কেড়ে নেয়ার সাল। মহামারি ভাইরাস করোনা অনেককিছুই কেড়ে নিয়েছে। কারো প্রাণ নিয়েছে, তো কারো প্রিয়জন; কারো জীবিকা ছিনিয়েছে, তো কারো ঘর। তা-ও কি থেমে ছিল মানুষের জীবনযাপন? যাপিত জীবন যেভাবে চলার, সেভাবে হয়তো চলেনি। কিন্তু চলেছে তো, হোক তা ধুঁকে ধুঁকে। তবে এই লকডাউন বইপড়ুয়াদের কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না? অন্যদিকে আবার করোনার লকডাউনের কারণে কমে এসেছে বছরে বের হওয়া বইয়ের পরিমাণ।
তা সত্ত্বেও, বই বের হয়েছে এ বছর। পাঠক পড়েছেনও সেসব। জানিয়েছেন নিজেদের মতামত। আর প্রতিবারের মতো এবারও তাই দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস বছরের সেরা ১০টি বইয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। পাঁচটি ভিন্ন ধারার ফিকশন এবং পাঁচটি ভিন্ন ধারার নন ফিকশন বই মিলিয়ে বছরের সেরা দশটি বইয়ের তালিকা প্রতিবারই প্রকাশ করে থাকে তারা। নভেম্বরের প্রথম দিন থেকেই শুরু হয় জরিপ। টানা ২২ দিন জরিপ শেষে ২৩তম দিনে প্রকাশ পায় মূল তালিকা। বছরের শেষে তাই বইপ্রেমীরা অপেক্ষায় থাকেন এ তালিকার। আজকের লেখার আয়োজনটা এই তালিকা নিয়েই।
প্রথমেই দেখে নেয়া যাক ফিকশনগুলো।
অ্যা চিল্ড্রেন’স বাইবেল – লিডিয়া মিলেট
আঁকাবাঁকা লেকের পাড়ঘেঁষা এক প্রাসাদে একদল ধনী ব্যক্তি আসে সন্তানদের নিয়ে গ্রীষ্মকালীন অবকাশে। তবে বাবা-মা আর সন্তান দু’জন যেন দুই মেরুর বাসিন্দা। একজনের হয়তো সময় নেই অন্যের দিকে তাকানোর; আর অন্যজনের ইচ্ছে, সে নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে। সন্তানদের হাতে বিভিন্ন ডিভাইস আর গ্যাজেট ধরিয়ে দিয়ে বাবা-মা পানাহারেই নিজেদের ন্যস্ত করে।
এমতাবস্থায়, একদিন প্রলয়ংকারী এক ঝড় আঘাত হানে সেই প্রাসাদে। বাচ্চারা সব ইতোমধ্যেই বুঝে যায়, বাবা-মা’র পক্ষে তাদেরকে দেখাশোনা করা আর সম্ভব নয়। তারা পার্শ্ববর্তী আরেক জমিনে চলে যায় সাময়িক শান্তির খোঁজে; কিন্তু তা-ও স্থায়ী হয় না। বাচ্চাদের মধ্যে বড়, ইভি; যে কিনা কাহিনী বর্ণনা করছে পাঠকদের কাছে, নিজের ভাইকে সবধরনের ক্ষতি থেকে বাঁচাতে নিজের জীবন বাজি রাখতেও প্রস্তুত।
ইভির ছোট ভাইয়ের হাতে একটি বাইবেল থাকে। আর মূলত উপন্যাসটিতে বাইবেলে বর্ণিত একটি ঘটনারই পুনরুত্থান ঘটিয়েছেন লেখিকা লিডিয়া মিলেট। জলবায়ু পরিবর্তন, ভিত্তিগত পৌরাণিক গল্প, প্রজন্মের বিভাজন এবং হৃদয় বিদারক এক গল্প সাজিয়েছেন তিনি। ইতোমধ্যেই ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ড ফর ফিকশন, ২০২০ এবং পুলিৎজার পুরস্কারের জন্য মনোনয়নের পাশাপাশি ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে লিডিয়া মিলেটের অ্যা চিল্ড্রেন’স বাইবেল নামক উপন্যাসটি।
ডিকন কিং কং: জেমস ম্যাকব্রাইড
১৯৬৯ সালের সেপ্টেম্বর মাস। দক্ষিণ ব্রুকলিনের কজওয়ে হাউজিং প্রকল্পের একজন প্রবীণ বাসিন্দা, ধর্মপ্রাণ এক যাজক, বিপত্নীক নিঃসঙ্গ এক ব্যক্তি, একজন গির্জাবিদ- সকলের সামনে পয়েন্ট ব্ল্যাংক রেঞ্জ থেকে নিজের .৩৮ ক্যালিবারের পিস্তল দিয়ে উক্ত প্রকল্পেরই এক মাদক ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করে।
যাজক ক্যাফি ল্যাম্বকিন, যাকে সবাই ‘স্পোর্টসকোট’ নামেই চেনে, যাকে খুন করেছে, সে আদতে একজন ওয়ান্টেড বা ফেরারি আসামী ছিল। কিন্তু তা বলে তো আইন নিজের হাতে তুলে নেয়া যাবে না। আবার একইসঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীর একমাত্র শত্রুতে পরিণত হয় এই যাজক। কিন্তু তার এমনটা করার পেছনের কারণটা কী ছিল?
গল্পটা ক্রমশই জড়িয়ে যায় প্রতিদ্বন্দ্বী ড্রাগ ডিলার, ইতালিয়ান চোরাচালানকারী, সমাহিত গুপ্তধন, গির্জার সিস্টার এবং স্পোর্টসকোর্টের মৃত স্ত্রী’র সাথে। গল্প যত গভীরে যায়, ততই যেন ক্রমশ পরিষ্কার হয়ে ওঠে ষাটের দশকের অশান্ত নিউ ইয়র্কের সমাপতিত অংশগুলো, গল্পের আবহ আর চরিত্রগুলোর মধ্য দিয়ে। সত্যটা যখন আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে, তখন ম্যাকব্রাইড আমাদের দেখান যে, অনেক সত্য আছে, যেগুলো লুকিয়ে রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই। বরং দ্বিধা আর ভয়ের পাহাড়-পর্বত পেরিয়ে সে সত্যকে মোকাবেলা করলে একটা সুন্দর জীবনের বীজ বপন করা যায় অনায়াসেই।
রহস্য, ক্রাইম, শহুরে প্রহসন আর ষাটের দশকের অশান্ত পরিস্থিতির খণ্ডিত চিত্রের সম্মিলনে রচিত হয়েছে জেমস ম্যাকব্রাইডের ডিকন কিং কং উপন্যাস। ‘দ্য গুড লর্ড বার্ড’ গ্রন্থটির জন্য ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ফর ফিকশন এবং ‘দ্য কালার অভ ওয়াটার’ গ্রন্থটির জন্য আনিসফিল্ড-উল্ফ বুক অ্যাওয়ার্ড ফর নন ফিকশন বিজেতা লেখক জেমস ম্যাকব্রাইড।
হ্যামনেট – ম্যাগি ও’ফ্যারেল
১৫৮০ সাল, ওয়ারউইকশায়ার। অ্যাগনেস তার স্বামীর সঙ্গে স্ট্র্যাটফোর্ডের হেনরি স্ট্রিটে সম্প্রতি নিজেদের নতুন আবাসস্থলে স্থায়ী হয়েছেন। তাদের তিন সন্তান। এক মেয়ে সুজানা এবং দুই যমজ ছেলে- হ্যামনেট আর জুডিথ। ১৫৯৬ সালে মাত্র ১১ বছর বয়সে হ্যামনেট পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে। অ্যাগনেস আর তার স্বামী পুরোপুরি ভেঙে পড়ে। কিন্তু জীবন বয়ে চলে তার নিজস্ব নিয়মে। ঠিক চার বছর পর, তার স্বামী দুঃখভারাক্রান্ত মন নিয়ে একটা নাটক রচনা করে। নাটকটির নাম দেয় নিজের মৃত সন্তানের নামের সঙ্গে মিলিয়ে। হ্যামনেট।
প্রায় একই নামের ‘হ্যামলেট’ যে উইলিয়াম শেকসপিয়ারের অমর কীর্তি, তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। ধারণা করা হয়, নিজের সন্তান হারানোর বেদনাই তাকে এই শিল্প রচনায় উদ্বুব্ধ করেছিল। আর এই ঐতিহাসিক রহস্যমাখা করুণ জীবনীকেই নিজস্ব রূপ রঙে বর্নীল করে তুলেছেন আইরিশ-বংশোদ্ভূত লেখিকা ম্যাগি ও’ফ্যারেল। শেকসপিয়ারের জীবনীটাকেই যেন ও’ফ্যারেল নিজস্ব লেখার ঢঙে উপন্যাসে ফুটিয়ে তুলেছেন। উপন্যাসটি দুর্দান্ত সৌন্দর্যে ঠিক যতটা পরিপূর্ণ, ততটাই অবর্ণনীয় শোকে। ছেলে হারানোর শোকই নয় বরং অ্যাগনেস নামক এই নারীর ইতিহাস থেকে অস্বাভাবিকভাবে মুছে যাওয়ার ইঙ্গিতও যেন দেয় এই উপন্যাস।
‘আফটার ইউ’ড গন’-এর জন্য ব্রেটি ট্যাস্ক অ্যাওয়ার্ড, ‘দ্য ডিসট্যান্স বিটুইন আস’-এর জন্য সমারসেট মম অ্যাওয়ার্ড, ‘দ্য হ্যান্ড দ্যাট ফার্স্ট হেল্ড মাইন’, ‘ইন্সট্রাকশন ফর অ্যা হিটওয়েভ’ এবং ‘দিস মাস্ট বি প্লেসড’- বইগুলোর জন্য কোস্টা বুক অ্যাওয়ার্ড; এবং হ্যামনেট বইটির জন্য উইমেন’স প্রাইজ ফর ফিকশন জিতে নিয়েছেন ম্যাগি ও’ফ্যারেল ইতোমধ্যেই।
হোমল্যান্ড এলেজিজ – আয়াদ আখতার
গল্পের শুরুটা ওয়াল্ট হোয়াইটম্যানকে নিয়ে। সে আমেরিকা বলতে পাগল এবং আমেরিকান জাতিসত্ত্বায় মত্ত। বর্ণনাকারী তার মনোবল ধাপে ধাপে ভেঙে নতুন করে গড়ার চেষ্টা করে ধারাবাহিক অধ্যায়গুলোর সমন্বয়ে। রাজধানীর আকর্ষণ এবং ধ্বংস, নাইন ইলেভেনের ক্ষত এবং সাংস্কৃতিক প্রত্যাখানের তিক্ততা- সব মিলিয়ে আয়াদ আখতার সমালোচনা করেছেন তীব্রভাবে নিজের সৃষ্ট চরিত্রগুলোর মাধ্যমে। কিছুটা পারিবারিক ড্রামা, কিছুটা সামাজিক নিবন্ধ এবং কিছু অবাস্তব ঘটনা; এসব নিয়েই একজন পিতা ও পুত্রের গল্প এটা। সেইসাথে একটা দেশেরও গল্প, যে দেশটাকে তারা নিজের দেশ বলে গণ্য করে।
আখতার নতুন একটি কণ্ঠস্বরকে জাগ্রত করেছেন। যে কণ্ঠস্বরের মাধ্যমে তিনি সেই দেশের কথা বলেন, যে দেশের রাষ্ট্রীয় কর্জের কারণে অগণিত জীবন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে; আদর্শগুলো সব মুখ থুবড়ে পড়ছে অর্থ দেবতার পদতলে; একজন টিভি ব্যক্তিত্ব রাষ্ট্রপতির পদে আসীন হয়; অভিবাসী, এমনকি নাগরিকরা ভয় আর আতঙ্কে দিনযাপন করে।
‘ডিসগ্রেস’ এর জন্য পুলিৎজার প্রাইজ ফর ড্রামা, ‘ইনভিজিবল হ্যান্ডস’ এবং ‘ডিসগ্রেস’ এর জন্য অবিই অ্যাওয়ার্ড ফর প্লে রাইটিং জিতেছেন আমেরিকান এই লেখক। এছাড়াও, সমালোচক ও পাঠকপ্রিয় উপন্যাস ‘আমেরিকান দারবিশ’-এর রচয়িতা তিনি। হোমল্যান্ড এলেজিজ তার দ্বিতীয় উপন্যাস।
দ্য ভ্যানিশিং হাফ – ব্রিট বেনেট
ভিনরা যমজ বোন। হুবহু যমজ, যাকে আইডেন্টিকাল টুইন বলা হয়। দক্ষিণের এক কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ে একসঙ্গে বেড়ে ওঠার পর ষোল বছর বয়সে পালিয়ে যায় তারা। এখান থেকে তাদের নিত্যদিনের জীবন এমনকি পরিবার, সম্প্রদায় এবং বর্ণগত পরিচয়েও দারুণ পরিবর্তন আসে। বহু বছর পরে, এক বোন তার কালো মেয়েকে নিয়ে ফিরে আসে সেই শহরে, যেখান থেকে একবার সে পালিয়ে গিয়েছিল। আর অন্য বোন পালিয়ে এক শ্বেতাঙ্গকে সঙ্গী করেছে। অথচ তার স্বামী তার অতীত সম্পর্কে অবগত নয়। শত শত মাইল দূরে থেকেও, শত শত মিথ্যের জঞ্জালে পূর্ণ হলেও, তাদের কপালের লিখন যেন একই সুতোয় গাঁথা।
কয়েকটা প্রজন্মের গল্প একত্রে বুনে, সাউথ থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার দিকে এবং পঞ্চাশ থেকে নব্বই দশকের সমন্বয়ে ব্রিট বেনেট এমন একটি উপন্যাস রচনা করেছেন, যা আমেরিকান ইতিহাসের উত্তেজনাপূর্ণ এবং সংবেদনশীল এক পরিবারের গল্প বলে। বেনেট খুব যত্ন নিয়ে এটি নির্মাণ করেছেন; চরিত্রগুলো সাজিয়েছেন নিপুণভাবে। একজন অভিনেত্রী এবং একজন ট্রান্সজেন্ডারের ব্যক্তিকে দাঁড় করিয়েছেন; যারা আমাদের জানায়, ব্যক্তিত্ব কীভাবে অর্জন করা হয় কিংবা আরোপিত হয়। আমাদের ধারণার চাইতেও বেশ সাধারণ একটা গল্পই বর্ণনা করেছেন বেনেট, অসাধারণভাবে।
ব্রিট বেনেটের প্রথম উপন্যাস ‘দ্য মাদার’ নিউ ইয়র্ক টাইমস বেস্ট সেলারের পাশাপাশি রবার্ট ডব্লিউ. বানহাম প্রাইজ এবং গুডরিডস চয়েস অ্যাওয়ার্ড জিতে নিয়েছিল। এরই মধ্যে গুডরিডস চয়েস অ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট হিস্টোরিক্যাল ফিকশন ক্যাটাগরিতে দ্য ভ্যানিশিং হাফ ফাইনাল রাউন্ডে টিকে গেছে।
কল্পকাহিনীর কথা শেষ হলো, এবার ফেরা যাক বাস্তব জগতে; দেখে নেয়া যাক তালিকার নন ফিকশন বইগুলো।
হিডেন ভ্যালি রোড – রবার্ট কোলকার
ডন এবং মিমি গ্যালভিন ভবিষ্যতে সফল হওয়ার প্রচেষ্টায় মত্ত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পর, ডন বিমান বাহিনীর সঙ্গে কাজ করা শুরু করে। কাজের সূত্রপাতেই তারা কলোরাডোতে চলে আসে। ১৯৪৫ সালে তাদের প্রথম সন্তান জন্ম নেয়। পরবর্তী ২০ বছরে আরো ১০টি ফুটফুটে সন্তান ঘর আলো করে ডন আর মিমির। সবচেয়ে ছোট সন্তানের জন্ম হয় ১৯৬৫ সালে। এই বছরগুলোতে গ্যালভিনের মতো একটি পরিবারের জন্য একদম গৎবাঁধা একটা নিয়ম ছিল: আকাঙ্ক্ষা, কঠোর পরিশ্রম, ঘরোয়া সম্প্রীতি ইত্যাদি। কিন্তু গল্পের পেছনে থাকে আরি গল্প।
১৯৭০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে এসে, দশজনের মধ্যে ছয়জনই স্কিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত হয়। একই পরিবারের ছয়-ছয়জন কী করে একই রোগে আক্রান্ত হতে পারে? তাদের এই গল্প বিজ্ঞানের অন্ধকার যুগের গল্প শোনায় যেন। চিকিৎসার অভাবে রোগের বিস্তার বৃদ্ধির গল্প। আবার একইসঙ্গে সমস্ত প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে টিকে থাকার মূলমন্ত্রও শোনায়। এমনকি গ্যালভিন পরিবারের সেই ডিএনএ এখন অবধি সংরক্ষণ করা আছে। গবেষণাও হচ্ছে বিস্তর। কে জানে, ভবিষ্যতের রোগ নির্মূলে সেগুলো হয়তো বেশ ভালোই কাজে দেবে।
পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিক রবার্ট কোলকার স্পষ্টভাবে একটি পরিবারের প্রেম, আশা এবং দুর্ভোগ নিয়ে দারুণ আর অবিস্মরণীয় একটি বই রচনা করেছেন। ইতোমধ্যেই গুডরিডস চয়েস অ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট ননফিকশন ক্যাটাগরিতে হিডেন ভ্যালি রোড বইটি মনোনয়ন পেয়েছে।
অ্যা প্রমিসড ল্যান্ড – বারাক ওবামা
বারাক ওমাবা এই গ্রন্থে যুবক বয়স থেকে রাষ্ট্রপতি হবার আগ অবধি দুঃসাহসিক অভিযান, রাজনৈতিক শিক্ষা এবং যুগান্তকারী সব মুহূর্তগুলোকে মলাটবন্দি করেছেন। হুট করে রাষ্ট্রপতি হয়ে যাবার পর তার সেই অশান্ত আর টালমাটাল সময়ের কথা লিপিবদ্ধ করেছেন অত্যন্ত যত্নসহকারে। পাঠকদের এক ঘোড়ায় চড়িয়ে বারাক ওবামা ছুটে চলেন নিজের বাধাবিপত্তি দিয়ে গড়া জীবনের অলি-গলিতে। ৪৪তম আমেরিকার রাষ্ট্রপতি নির্বাচন এবং প্রথম আফ্রিকান হিসেবে আমেরিকার সর্বোচ্চ পদে আসীনের গল্প শোনান তিনি পাঠকদের।
ওবামার সঙ্গে করে পাঠক যেন ঘুরে আসে ওভাল অফিস থেকে, হোয়াইট হাউজের সিচুয়েশন রুম, মস্কো, কায়রো, বেইজিংসহ আরো অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। পাঠক যেন গুপ্তভাবে ওবামার চিন্তার অংশীদার হয়ে মন্ত্রীসভা বৈঠকে অংশগ্রহণ করে; বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকটে উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে; ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করে; আফগানিস্তানে মার্কিন কৌশল নিয়ে সামরিক বাহিনীর জেনারেলদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে; এমনকি ওসামা বিন লাদেনের পেছনে পেছনে ছুটেও চলে।
অ্যা প্রমিসড ল্যান্ড গুডরিডস চয়েস আওয়ার্ড ফর বেস্ট মেমোয়ার অ্যান্ড অটোবায়োগ্রাফি ক্যাটাগরিতে ফাইনাল রাউন্ডে স্থান পেয়েছে।
শেকসপিয়র ইন অ্যা ডিভাইডেড আমেরিকা – জেমস শাপিরো
শেকসপিয়র আর আমেরিকা যেন ওতপ্রোতভাবে জড়িত। স্কুলের প্রায় প্রতিটা বাচ্চাকেই পড়তে হয়, প্রেক্ষাগৃহগুলোতে বেশিরভাগ সময়ই মঞ্চস্থ হয়, রক্ষণশীল আর উদারপন্থী উভয়ের কাছেই সমানভাবে মূল্যায়িত। দুই শতকেরও বেশি সময় ধরে সকল আমেরিকান- রাষ্ট্রপতি থেকে শুরু করে কর্মী, লেখক থেকে শুরু করে সৈনিক; জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই কোনো না কোনোভাবে শেকসপিয়র দ্বারা অনুপ্রাণিত।
এই গ্রন্থটিও শেকসপিয়রকে নিয়েই রচিত। তবে বিভাজিত এই আমেরিকাতে শেকসপিয়র কীভাবে প্রতিটা ক্ষেত্রে নিজের প্রভাব বিস্তার করে রেখেছেন, তারই বর্ণনা ফুটে উঠেছে লেখকের লেখায়। প্রতিটি অধ্যায় ভিন্ন এক বছরের আলাদা থিমকে কেন্দ্র করে রচিত। এত গভীরভাবে অনুসন্ধান আর গবেষণা করে আমেরিকা আর শেকসপিয়রকে বোধহয় কেউ আগে রচনা করেনি।
আনক্যানি ভ্যালি – অ্যানা উইনার
অ্যানা উইনারের এই আত্মজীবনী অনাকাঙ্ক্ষিত উচ্চাকাঙ্ক্ষা, ভাগ্যের বিপর্যয় এবং রাজনৈতিক ক্ষমতাকে ত্বরান্বিত করার সময়ে বেপরোয়া স্টার্টআপ সংস্কৃতির এক ঝলক মাত্র। নিউইয়র্কের একটি সাহিত্য সংস্থায় কম বেতনের চাকরি করা অ্যানা খুব কম বয়সে সান ফ্রান্সিসকো চলে যায়। প্রবল আশা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা আর পুঁজি নিয়ে নেমে পড়ে স্টার্টআপ ব্যবসায়।
অ্যানা উইনারের আনক্যানি ভ্যালি একজন সফল উদ্যোক্তার গল্প। বাধা-বিপত্তির পাহাড়-পর্বত পেরিয়ে আসার গল্প। স্টার্টআপ কালচারের গল্প। একটি সতর্কতামূলক গল্প, যেখান থেকে উদ্যোক্তারা অনুপ্রাণিত হতে পারে।
ওয়ার – মার্গারেট ম্যাকমিলান
যুদ্ধ সর্বদা আমাদের সঙ্গী, এমনকি শান্তিতেও। মনুষ্যত্ব, ভিত্তি, রাষ্ট্র, মান এবং চিন্তাধারাই বদলে দিয়েছে এটি। আমাদের ভাষা, আমাদের ব্যক্তিগত স্মৃতি, আমাদের সাংস্কৃতিক ভাণ্ডার একইসঙ্গে যুদ্ধের গৌরব আর দুর্দশার প্রতিফলিত রূপ বলা চলে। যুদ্ধ কেবলই একটি অস্বস্তিকর এবং চ্যালেঞ্জিং বিষয় নয়; বরং মানবতার সবচেয়ে দুর্বল এবং মহৎ দিকগুলোও উন্মোচন করে থাকে। এ গ্রন্থে মার্গারেট ম্যাকমিলান যুদ্ধ কীভাবে মানব ইতিহাসকে রূপ দিয়েছে; এবং কীভাবে রাজনৈতিক সংগঠন, প্রযুক্তি এবং মতাদর্শকে প্রভাবিত করেছে বা করছে, তারই সূক্ষ্ম এক বিশ্লেষণ দেখিয়েছেন। তাই এ ব্যাপারটিও মুখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, কেন এবং কীভাবে আমরা যুদ্ধে লিপ্ত হই?
মার্গারেট ম্যাকমিলানের বইটি পৃষ্ঠার আকারে খুবই ছোট, কিন্তু এর মধ্যে থাকা বিষয়ের গভীরতা অশেষ। ক্লাসিক ইতিহাস থেকে শুরু করে আধুনিক যুগের যুদ্ধ-বিগ্রহের ইতিহাস বিশ্লেষণের মাধ্যমে মার্গারেট ম্যাকমিলান যুদ্ধের বহু রূপ প্রকাশ করেছেন বইতে; কীভাবে যুদ্ধ অতীত বদলে দিয়েছিল, কীভাবে বদলে দিচ্ছে নিকট ভবিষ্যত। যুদ্ধ সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং যুদ্ধ নিয়ে মানবিক চিন্তাধারাও আছে এতে।