বুয়েটে সাহিত্যের মহোৎসব

কবিতা লিখে যে কিছুই পাওয়া যায় না, তা তো সবাই জানি। অর্থ,খ্যাতি, কীর্তি- কোনো কিছুই পাবার সম্ভাবনা নেই, তবু রাত জেগে কেন এই আয়ুক্ষয় তার কোনও ব্যাখ্যা দেওয়া যায় না। এ এক সাঙ্ঘাতিক গুপ্ত নেশা, সেইজন্যই অনেকে কৈশোরে-যৌবনে দু’চার বছর কবিতা লেখার হাত মকসো করে, তারপর লেখালেখি ফেলে বহুদূর সরে যায়।

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় হয়তো বেকারজীবনে খানিক অভিমান করেই এই কথাগুলো লিখেছিলেন। এক দেশে ছিল এক প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। আর তাতে ছিল ভয়ানক পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা। এরই মাঝে খানিকটা দলছুট কয়েকটা ছেলেমেয়ে গাণিতিক সূত্রের সাথে যুঝে, ল্যাবের যন্ত্রের সাথে সংঘাত করেও হয়তো ক্লাসের শেষে, পড়ন্ত বিকেলে হাফওয়ালে বসে প্লাস্টিকের চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে সুখ-দুঃখের আলাপ হাওয়ায় মিলিয়ে দিত। আর সারাদিনের ক্লান্তি, না পাওয়ার আক্ষেপ, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির দ্বন্দ্ব মনটাতে জমিয়ে তুলত ঘন কালো মেঘ! কিন্তু সেই মেঘ থেকে বৃষ্টি বা ঝড়ের বদলে হলো এক সুনীল শব্দবৃষ্টি! যার নাম দিল ‘কবিতা’।

পরদিন সকালে দেখতে পেল চোখের বৃষ্টি কবিতা হয়ে ঝরে যাওয়ায় মনে এক অনাবিল শান্তি, আগের দিনের গ্লানি মুছে গিয়েছে। সমমনা আরো কিছু মানুষ, যাদের জীবনে শব্দ বৃষ্টি হয়েছে, তারা একত্র হলো, মিলিত সিদ্ধান্তে গড়ে তুললো এক নিজস্ব “বুয়েট সাহিত্য সংসদ”।

কৃতজ্ঞতা: বুয়েট সাহিত্য সংসদ

সেই থেকে দিনগুলো ভালোই কাটছিল। প্রায় নিয়মিতই সভা হত, সংসদের অধিবেশন হত। কিন্তু সুখের দিন দ্রুত যায়, দুই হাজার বিশ সালের বিষ যেন মারণঘাতী। সকলে হয়ে রইল গৃহবন্দী। প্রমাণ গুনতে গুনতে দিন বয়ে চললো। সেই ভয়াল সময়ের ভয়াতুর চোখে তবুও আশা, খানিক ভালোবাসা আর আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন। মনেও নাড়া দিয়ে উঠল কবিতার দল, পেন্সিল-কাগজে বয়ে চললো ঝর্ণা!

তারপর সেই দলছুট পড়ুয়ারা ভাবল- কেমন হতো যদি ভার্চুয়ালি সংসদের কার্যক্রম চালানো যেত! সেই সূত্রেই “করোনার দিনগুলোতে সাহিত্য” চালু করা হয়। এ পর্যন্ত ছয়টি পর্বে মোহাম্মদ আজম, সুহান রিজওয়ান, নুহাশ হুমায়ুন, সঞ্জয় দে, জাভেদ হুসেন এবং শাহাদুজ্জামান তাদের অমূল্য সময় দিয়ে আমাদের আত্মার খোরাক যুগিয়েছেন।

কৃতজ্ঞতা: বুয়েট সাহিত্য সংসদ

নভেম্বর মাস আসতেই মন উচাটন করে শুধু, পূর্বপরিকল্পিত ‘লিট ফেস্ট’ বুঝি বানচাল হতে বসল। এখন যে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ! তবে কি হবে না এই বহুকাঙ্ক্ষিত মহোৎসব? সব অনিশ্চয়তাকে পিছনে ফেলে দলছুট পড়ুয়ারা পরিকল্পনা করে- কেমন হয় যদি ‘নিউ নরমাল’ এর সাথে তাল মিলিয়ে অনলাইনেই অনুষ্ঠিত হয় ‘বুয়েট লিট ফেস্ট’! যেমন ভাবা তেমন কাজ…

ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে চারদিন ব্যাপী বুয়েটে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে এই সাহিত্যের মহোৎসব।

কৃতজ্ঞতা: বুয়েট সাহিত্য সংসদ

তাতে থাকছে বিভিন্ন রকম প্রতিযোগিতা। “হরবোলা” নামাঙ্কিত এই প্রতিযোগিতাটি সৃজনশীল লেখনী ও ডিজাইন (আর্ট ও ভিডিও তৈরি) এই দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে৷ আর প্রতিযোগিতার জন্য বরাদ্দ রয়েছে ত্রিশ হাজার টাকা সমমূল্যের পুরষ্কার। প্রতিযোগিতায় যেকোনো কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী অংশ নিতে পারবেন। প্রতিযোগিতা ২৪ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে চলবে ০৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। সকল তথ্য পাওয়া যাবে “বুয়েট সাহিত্য সংসদ” এর ফেসবুক পেজে। মূল উৎসবে অতিথি হিসেবে থাকবেন অত্যন্ত স্বনামধন্য লেখকবৃন্দ। চমক হিসেবে থাকছে এক বর্ণিল সঙ্গীতসন্ধ্যার আয়োজন।

বাধাবিপত্তিকে তুচ্ছ করে এই অনিশ্চিত জীবনের মাঝেও বিকল্প পথে এই মহোৎসব পরিচালনা করার প্রেরণা যুগিয়েছেন স্বয়ং কবিগুরু,

নাই নাই ভয়, হবে হবে জয়, খুলে যাবে এই দ্বার—
জানি জানি তোর বন্ধনডোর ছিঁড়ে যাবে বারে বার॥
খনে খনে তুই হারায়ে আপনা  সুপ্তিনিশীথ করিস যাপনা—
বারে বারে তোরে ফিরে পেতে হবে বিশ্বের অধিকার॥

লেখক

বিভা পোদ্দার,
বুয়েট সাহিত্য সংসদ
নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা, দ্বিতীয় বর্ষ,
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়

This is a Bengali article detailing the BUET Lit Fest to be held this month online due to Covid-19. Roar Bangla is a proud media partner of this event.

Related Articles

Exit mobile version