গ্র্যামিকে বলা হয় সঙ্গীত জগতের অস্কার। সঙ্গীত ক্যারিয়ারে গ্র্যামি জেতাকে ধরা হয় সাফল্যের চূড়ান্ত ধাপ হিসেবে। বর্তমানে যারা গান গেয়ে যাচ্ছেন তাদের মধ্যে অনেকেই এই পুরস্কারটি ঘরে তুলেছেন অনেকবার। বিয়ন্সে, কেনি ওয়েস্ট, জে জি, টেইলর সুইফট, এমিনেম প্রমুখ এদের মাঝে উল্লেখযোগ্য। তবে বেশ নামকরা কিছু সঙ্গীত তারকা ব্যর্থ হয়েছেন গ্র্যামি জিততে। অনেকবার মনোনয়ন পেয়েও খালি হাতে ফেরা এরকম কয়েকজন শিল্পী সম্পর্কেই আজ আমরা জানবো।
কেটি পেরি – ১৩ বার মনোনয়ন
‘রোর’ কিংবা ‘ডার্ক হর্স’ গানগুলো দিয়ে দর্শক মাতালেও গ্র্যামি জেতা হয়নি এই আমেরিকান পপ সঙ্গীত শিল্পীর। ২০০৮ সালে ‘আই কিসড অ্যা গার্ল’ গান দিয়ে নিজের আগমনী বার্তা জানান দেন। সেই গানটি বেস্ট ফিমেল পারফরম্যান্সের জন্য গ্র্যামি মনোনয়ন পেলেও সেবার খালি হাতে ফেরেন কেটি পেরি। প্রথমবারের মতো অবশ্য প্রতিবারই গ্র্যামি অনুষ্ঠান থেকে খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে ‘ফায়ারওয়ার্ক’ খ্যাত এই শিল্পীকে। ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত কেটি পেরি গ্র্যামি মনোনয়ন পেয়েছেন ১৩ বার। জেতা হয়নি একবারও।
টুপ্যাক শাকুর – ৬ বার মনোনয়ন
সর্বকালের অন্যতম সেরা র্যাপার হিসেবে পরিচিত টুপ্যাক শাকুরও রয়েছেন এই তালিকায়। এমিনেম থেকে শুরু করে জে জি কিংবা কেনি ওয়েস্টসহ বর্তমানের সব বিখ্যাত র্যাপারেরই অনুপ্রেরণা ছিলেন টুপ্যাক শাকুর। কিন্তু নিজের ক্যারিয়ারে গ্র্যামি জেতা হয়নি তার।
মাত্র ২০ বছর বয়সেই নিজের প্রথম অ্যালবাম দিয়ে বাজিমাত করেন টুপ্যাক। সমাজের অনিয়ম ও বৈষম্যগুলোই র্যাপের মাধ্যমে তুলে ধরতেন টুপ্যাক। কিন্তু মাত্র ২৫ বছর বয়সেই একজন আততায়ীর গুলিতে প্রাণ হারাতে হয় তাকে। মাত্র ৫ বছরের সঙ্গীত ক্যারিয়ারে গ্র্যামির মনোনয়ন পেয়েছেন ৬ বার। বেঁচে থাকলে হয়তো টুপ্যাকের হাতে গ্র্যামি দেখার সৌভাগ্য হতো সঙ্গীতপ্রেমীদের।
বিয়র্ক – ১৪ বার মনোনয়ন
মাত্র ১১ বছর বয়স থেকেই গান শুরু করেন আইসল্যান্ডে জন্মানো এই সঙ্গীতশিল্পী। ১৯৮৭ সালে ‘বার্থডে’ একক গান দিয়ে সবার নজরে আসেন বিয়র্ক। ‘ডেব্যু’, ‘পোস্ট’ ও ‘হোমোজেনিক’ অ্যালবামগুলো বের হবার পর রাতারাতি দুনিয়া জোড়া খ্যাতি পেয়ে যান তিনি। বিলবোর্ডের সেরা ২০০ চার্টে সবগুলো অ্যালবামই জায়গা করে নেয়। কিন্তু ১৯৭৫ সাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত কোনো গ্র্যামি জিততে পারেননি এই জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী। ৪৩ বছরের সঙ্গীত ক্যারিয়ারে বিয়র্ক গ্র্যামির মনোনয়ন পেয়েছেন ১৪ বার। কিন্তু প্রতিবারই তাকে খালি হাতে ফিরিয়েছে পুরস্কারটি।
জেনিফার লোপেজ – ২ বার মনোনয়ন
নিউ ইয়র্কে জন্মানো এই জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পীর অর্জনেও নেই কোনো গ্র্যামি। ১৭ বছর বয়সে ১৯৮৬ সালে সঙ্গীত জগতে জেনিফার লোপেজের প্রবেশ। সেই থেকে এখনক পর্যন্ত গান গেয়ে যাচ্ছেন ‘অন দ্য ফ্লোর’ খ্যাত এই শিল্পী।
‘লেটস গেট আউট’ এবং ‘ওয়েটিং ফর টুনাইট’ গান দুটির জন্য গ্র্যামির মনোনয়ন পেলেও পুরস্কার জিততে সক্ষম হননি তিনি। ভবিষ্যতে লোপেজের গ্র্যামি পাওয়ার সম্ভাবনাও কম। কারণ সঙ্গীতের পাশাপাশি বর্তমানে লোপেজ অভিনয় ও নাচেও জড়িয়ে পড়েছেন। শেষ গ্র্যামি মনোনয়নও পেয়েছেন সেই ২০০১ সালে।
কুইন – ৪ বার মনোনয়ন
সর্বকালের সেরা ব্যান্ড দলগুলোর মধ্যে অন্যতম ব্যান্ড কুইনের ঝুলিতেও নেই কোনো গ্র্যামি। তাই কিংবদন্তী শিল্পী ফ্রেডি মার্কারিরও গ্র্যামি জেতার সৌভাগ্য হয়নি।
‘বোহেমিয়ান র্যাপসডি’ গানের জন্য দুনিয়াজোড়া খ্যাতি ও ভালবাসা পাওয়া কুইন ব্যান্ড গ্র্যামি মনোনয়ন পায় চারবার। যদিও পরবর্তীতে ‘বোহেমিয়ান র্যাপসডি’ এবং ‘উই উইল রক ইউ’ গানের জন্য দুটি সম্মানসূচক গ্র্যামি পেলেও নিজেদের ক্যারিয়ারে কোনো গ্র্যামি নেই তাদের। সর্বশেষ ২০১৮ সালে কুইনকে দেওয়া হয় লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট গ্র্যামি পুরস্কার।
সিয়া – ৯ বার মনোনয়ন
‘চিপ থ্রিলস’ গান দিয়ে সাড়া জাগানো সঙ্গীতশিল্পী সিয়াও এখন পর্যন্ত কোনো গ্র্যামি জিততে পারেননি, যদিও তিনি এখন পর্যন্ত মনোনয়ন পেয়েছেন ৯ বার।
২০০০ সালে সঙ্গীতাঙ্গনে প্রবেশ করেন অস্ট্রেলিয়ায় জন্মানো এই শিল্পী। গত ১৮ বছর ধরে বেশ কিছু হিট অ্যালবাম ও গান উপহার দিয়েছেন তিনি। এক ‘চ্যান্ডেলিয়ার’ গানের জন্যই সেই বছর চারটি ভিন্ন ক্যাটাগরিতে মনোনয়ন পান সিয়া। কিন্তু গ্র্যামি হারান সব ক’টিতেই, যদিও ৪২ বছর বয়সী সিয়ার সামনে সুযোগ রয়েছে এই পুরস্কারটি বগলদাবা করার।
গানস এন রোজেস – ৩ বার মনোনয়ন
‘নভেম্বর রেইন’ কিংবা ‘সুইট চাইল্ড ও মাইন’ গানগুলো যেকোনো সঙ্গীতপ্রেমীর পছন্দের গানের তালিকায় থাকতে বাধ্য। কিন্তু এসব গান উপহার দেওয়া ব্যান্ড গানস এন রোজেস এখনও পর্যন্ত জেতেনি কোনো গ্র্যামি পুরষ্কার।
১৯৮৫ সালে লস অ্যাঞ্জেলসে গঠিত হওয়া এই ব্যান্ডের প্রথম অ্যালবাম বাজারে আসে ১৯৮৭ সালে। সেই থেকেই সঙ্গীতপ্রেমীদের মনে জায়গা করে নেয় ব্যান্ডটি। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকেই ১৯৯০, ১৯৯২ এবং ১৯৯৩ সালে তিনবার গ্র্যামি মনোনয়ন পেয়েছিলেন গানস এন রোজেস।
বব মার্লে – ২ বার মনোনয়ন
বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, এই তালিকায় আছেন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী বব মার্লেও। জ্যামাইকায় জন্ম নেওয়া এই শিল্পী দুনিয়াজোড়া খ্যাতি পেলেও জিততে পারেননি কোনো গ্র্যামি। ক্যারিয়ারে মনোনয়নও পেয়েছিলেন মাত্র ২ বার।
১৯৬২ সাল থেকে মৃত্যুর আগপর্যন্ত গানের সাথে যুক্ত ছিলেন মার্লে। ১৯৮১ সালে স্কিন ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তার বিখ্যাত ‘ইজ দিস লাভ’ এবং ‘স্যাটিসফাই মাই সোল’ গান দুটির জন্য গ্র্যামি মনোনয়ন পেলেও জেতা হয়নি সঙ্গীতের এই শীর্ষ পুরস্কার।
নিকি মিনাজ – ১০ বার মনোনয়ন
নারী র্যাপার হিসেবে বেশ নামডাক পাওয়া নিকি মিনাজও এখন পর্যন্ত জেতেননি কোনো গ্র্যামি। যদিও মাত্র ১০ বছরের গানের ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত ১০ বার মনোনয়ন পেয়েছেন তিনি। ২০১০ সালে প্রথম অ্যালবাম ‘পিংক’ মুক্তি পাওয়ার পরই নিকি মিনাজ খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে যান।
তৃতীয় অ্যালবাম ‘দ্য পিংকপ্রিন্ট’ বের হওয়ার পর এই অ্যালবামের জন্য সেরা র্যাপ অ্যালবামসহ বেশ কয়েকটি মনোনয়ন পান মিনাজ। কিন্তু দুঃখজনকভাবে প্রতিটি মনোনয়নেই তিনি হেরে যান। অবশ্য ৩৬ বছর বয়সী নিকি মিনাজের ভবিষ্যতে এই পুরস্কারটি জেতার বেশ ভালো সুযোগই রয়েছে।
স্নুপ ডগ – ১৭ বার মনোনয়ন
সবচেয়ে বেশি মনোনয়ন পেয়েও গ্র্যামি না জেতার তালিকায় এক নাম্বারে আছেন র্যাপ জগতের অন্যতম পুরোধা স্নুপ ডগ।
নিজের সঙ্গীত ক্যারিয়ারে সর্বমোট ১৭ বার গ্র্যামির জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন স্নুপ ডগ। কিন্তু প্রতিবারই তিনি ফিরেছেন খালি হাতে।
ডক্টর ড্রের হাত ধরে ১৯৯৩ সালে র্যাপ জগতে প্রবেশ স্নুপ ডগের। প্রথম অ্যালবাম বের হবার আগেই ‘হোয়াটস মাই নেইম’, ‘জিন এন্ড জুস’ একক গান দিয়ে বাজিমাত করেন এই র্যাপার। কিন্তু ডক্টর ড্রে ও কেনি ওয়েস্টের কাছে গ্র্যামি হারান দুবারই। পরবর্তীতে সর্বমোট ১৭ বার মনোনয়ন পেয়েও গ্র্যামি জোটেনি স্নুপ ডগের কপালে।