Welcome to Roar Media's archive of content published from 2014 to 2023. As of 2024, Roar Media has ceased editorial operations and will no longer publish new content on this website.
The company has transitioned to a content production studio, offering creative solutions for brands and agencies.
To learn more about this transition, read our latest announcement here. To visit the new Roar Media website, click here.

নেভারল্যান্ড ভ্যালি র‍্যাঞ্চ: মাইকেল জ্যাকসনের স্বপ্নপুরী

“Neverland is me… you know? It’s – it represents the totality of who I am.”

                                                                                                  –Michael Jackson

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের স্যান্টা বারবারা কাউন্টিতে অবস্থিত নেভারল্যান্ড র‍্যাঞ্চ প্রায় ২,৭০০ একর ভূমি জুড়ে অবস্থিত। পৃথিবী বিখ্যাত যতগুলো খামারবাড়ি আছে তার মধ্যে নেভারল্যান্ড র‍্যাঞ্চ অন্যতম। র‍্যাঞ্চটিতে ছিল একটি বড়সড় চিড়িয়াখানা, বিনোদন পার্ক, পঞ্চাশ সিটের একটি সিনেমা হল, বাস্কেট গ্রাউন্ড, সুইমিং পুল, টেনিস কোর্টসহ আরাম আয়েশের যাবতীয় আয়োজন। যদিও এসব সুবিধা পৃথিবীর আরও অনেক খামারবাড়িতেই পাওয়া যাবে, কিন্ত জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে কোনোটিই নেভারল্যান্ডের ধারেকাছে নেই। কারণ নেভারল্যান্ডের সাথে জড়িয়ে আছে একটি নাম, একটি আবেগ– মাইকেল জ্যাকসন, দ্য কিং অব পপ।

মাইকেল জ্যাকসনের জীবনের বিশটি বছর কেটেছিল এই নেভারল্যান্ডে। র‍্যাঞ্চটির ভাগ্যও যেন জড়িয়ে গিয়েছিল তার মালিকের ভাগ্যের সাথে। যখন পপ সম্রাটের ক্যারিয়ার আকাশ ছাড়িয়ে মহাকাশ ছুঁয়েছিল তখন নেভারল্যান্ডও পৃথিবীব্যাপী পরিণত হয়েছিল বিলাসিতার মূর্ত প্রতীকে। একের পর এক বিলাসিতার উপকরণ যুক্ত হচ্ছিল এতে। কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন স্ক্যান্ডালে যখন মাইকেলের ক্যারিয়ার পর্যুদস্ত তখন নেভারল্যান্ডের সুদিনও যেন ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকে। একসময় তো মাইকেল অর্থনৈতিক দুর্দশায় পড়ে নেভারল্যান্ডের মালিকানাও হারাতে বসেন।

মাইকেল জ্যাকসনের ব্যক্তিগত জীবন, পরিবার, ক্যারিয়ার, যৌন-কেলেঙ্কারী ইত্যাদি নিয়ে আজ পর্যন্ত কলমের কালি কম খরচ হয়নি। কিন্তু সেই তুলনায় তার অসাধারণ বাসভবনটি কেন যেন সেভাবে আলোচনায় আসেনি। ইন্টারনেটে নেভারল্যান্ড সম্পর্কে পরিপূর্ণ একটি ডকুমেন্টের বড়ই অভাব। বাংলা ভাষায় তো নেই-ই। এই অপূর্ণতা দূরীকরণে এবং মাইকেলের একজন একনিষ্ঠ ভক্ত হিসেবে আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরছি তার স্বপ্নপুরী নেভারল্যান্ডকে।

নেভারল্যান্ডে মাইকেল জ্যাকসন; Image Source: EURweb.com

সেই সময় খামারবাড়িটির মালিক ছিলেন উইলিয়াম বোনে। আবাসন ব্যবসার মধ্যমে বিশাল ধনসম্পত্তি লাভ করেছিলেন তিনি। এই খামারবাড়ির ওপর বিশাল পরিমাণে বিনিয়োগ ছিল তার। সেখানকার ১২,০০০ বর্গ মিটারের মূল বাসভবনটি তিনি নির্মাণ করেছিলেন অত্যন্ত যত্ন নিয়ে। অবশ্য উইলিয়াম বোনের সময় খামারবাড়িটির নাম ছিল সিকামোর ভ্যালি র‍্যাঞ্চ এবং সেটি ছিল ২৭০০ একর ভূমি জুড়ে বিস্তৃত।

ছোটবেলা থেকেই ডিজনিল্যান্ডের প্রতি মাইকেলের বিশাল রকমের মুগ্ধতা ছিল। কিন্তু বিনোদন জগতের সাথে যুক্ত থাকায় তিনি যেখানেই যেতেন মানুষজন ছেঁকে ধরত তাকে। তাই ছদ্মবেশ ছাড়া ডিজনিল্যান্ডে যাওয়া হয়ে উঠত না তার। গেলেও থাকতে হত নিরাপত্তারক্ষীদের কড়া প্রহরায়। ফলে ভ্রমণ উপভোগ করার সুযোগ থাকত না তার।

ডিজনিল্যান্ড ৫১০ একর জমির ওপর অবস্থিত। তাই মাইকেল যখন ২৭০০ একরের সিকামোর ভ্যালি দেখলেন, মনের মধ্যে ডিজনিল্যান্ডের মতো করে ব্যক্তিগত একটি থিম পার্ক তৈরি করার ইচ্ছা জেগে উঠল তার। তিনি এই সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইলেন না। সিকামোর ভ্যালি কিনে নেয়ার জন্য মনস্থির করলেন তিনি।

নেভারল্যান্ডে নিজের মতো করে সময় কাটাতে পারতেন পপ সম্রাট; Image Source: theimmagine.eu

কিন্তু চাইলেই তো আর কিনে নেয়া যায় না। এত বিশাল সম্পত্তি কেনার জন্য তো অনেক কিছুই ব্যাটে-বলে মিলে যেতে হয়। সিকামোর র‍্যাঞ্চ প্রথমবারের মতো দেখার পরবর্তী পাঁচ বছর ধরে বোনে এবং মাইকেলের মধ্যে সম্পত্তিটির বিভিন্ন দিক নিয়ে দেন-দরবার চলতে থাকে। খামারবাড়িটির জন্য বোনে দাম হাঁকান ৩৫ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু মাইকেল জ্যাকসন দাম বলেন তার অর্ধেক; ১৭ মিলিয়নের কাছাকাছি। এভাবে চলতে চলতে শেষ পর্যন্ত ২০ মিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি দামে বোনে তার মালিকানাধীন সিকামোর র‍্যাঞ্চকে মাইকেল জ্যাকসনের কাছে বিক্রি করতে সম্মত হন। অবশেষে ১৯৮৮ সালের মে মাসে মাইকেল ও তার পরিবার তার নতুন কেনা খামারবাড়িতে ওঠেন। ওঠার পর পরই বাড়িটিকে নিজের স্বপ্নের মতো করে সাজিয়ে তুলতে ব্যস্ত হয়ে যান মাইকেল জ্যাকসন।

সিকামোর ভ্যালি র‍্যাঞ্চের মালিকানা পাওয়ার পর প্রথম যে কাজটি মাইকেল করেন তা হলো এর নাম পরিবর্তন করা। খামারবাড়িটির নতুন নাম রাখা হলো নেভারল্যান্ড ভ্যালি র‍্যাঞ্চ। নেভারল্যান্ড নামটি নেয়া হয়েছিল পিটার প্যানের কাল্পনিক দ্বীপ নেভারল্যান্ড থেকে, যেটিকে বিবেচনা করা হয় শিশুসুলভ উচ্ছ্বলতা এবং অমরত্বের প্রতীক হিসেবে।

নেভারল্যান্ড স্টেশনের সামনে একটি নিঃসঙ্গ পিটার প্যানের ভাস্কর্য; Image Source: Theme Park Tourist

নতুন নামে যাত্রা শুরু করা খামারবাড়িটিতে আগে থেকেই থাকা বিভিন্ন স্থাপনা এবং কৃত্রিম হ্রদের সাথে যুক্ত হয় ডিজনিল্যান্ডের আদলে তৈরি করা অসাধারণ সব রাইড সম্বলিত একটি থিম পার্ক। আকারে বিশাল এই খামারবাড়িটির এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পায়ে হেঁটে চলাচল করা দুষ্কর। তাই যাতায়াতে অসুবিধা দূরীকরণের জন্য নেভারল্যান্ড জুড়ে রেললাইন স্থাপন করা হয়, যা দিয়ে ছোটখাট দুটি ট্রেন চলাচল করত। ট্রেন চলাচলে সমন্বয়ের জন্য তৈরি করা হয় একটি রেলস্টেশন। স্টেশন বিল্ডিংয়ের সামনে তৈরি করা হয় একটি ফুলঘড়ি, যা পরবর্তীতে নেভারল্যান্ডের প্রতীক হিসেবে বিশ্বজুড়ে পরিচিতি পেয়েছিল।

নেভারল্যান্ড স্টেশন এবং তার সামনে বিখ্যাত সেই ফুলঘড়ি; Image Source: Esquire

নেভারল্যান্ডের বিশাল প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢুকে দীর্ঘ আঁকাবাঁকা পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছাতে হয় খামাড়বাড়িটির মূল বাসভবনে। এই বাসভবনটি তৈরি করা হয়েছিল উইলিয়াম বোনের সময়। বেশ কয়েকটি পৃথক পৃথক ভবনের সমন্বয়ে তৈরি ছিল এটি। এর সামনে ছিল বিশাল একটি ড্রাইভওয়ে। হলিউডের ফিল্মগুলোতে যেসব বাড়ি দেখানো হত সেসবের অনুপ্রেরণায় তৈরি করা হয়েছিল নেভারল্যান্ডের মূল বাসভবনটি।

নেভারল্যান্ডের মূল বাসভবন; Image Source: Realtor.com

বাসভবনটির ভেতরের সাজসজ্জা ছিল চোখধাঁধানো এবং বিভিন্ন ছবি, মূল্যবান চিত্রকর্ম, স্মারক ও ভাস্কর্যে ঠাসা। এসবের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ছবি ছিল মাইকেলের নিজের। এছাড়াও ছিল এলিজাবেথ টেলর, মেরিলিন মনরো, চার্লি চ্যাপলিন প্রমুখ বিখ্যাত ব্যক্তির বিশালাকৃতির সব ছবি। 

অসাধারণ সব ছবিতে ঠাঁসা ছিল মাইকেলের বাসভবন; Image Source: Theme Park Tourist

নেভারল্যান্ড খামারবাড়ির মূল বাসভবনের মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান কক্ষটি ছিল মাইকেলের ড্রইং রুম। সেখানে একটি ঘূর্ণায়মান গোল-টেবিলের ওপর রাখা ছিল ১৯৩৯ সালের অস্কার অনুষ্ঠানে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের সম্মান জেতা মুভি “Gone with the wind” এর অস্কার পুরষ্কারটি। এই স্মারকটি পাবার জন্য মাইকেলকে খরচ করতে হয়েছিল ১.৫ মিলিয়ন ডলার।

নিজের শোবার কক্ষে থাকা রাজকীয় একটি চেয়ারে মাইকেল; Image Source: architechturaldigest.com

বই পড়তে ভালোবাসতেন মাইকেল জ্যাকসন। মার্ক টোয়েন, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, ওয়াল্ট হুইটম্যান প্রমুখ লেখক ছিলেন তার পছন্দের তালিকায়। তাই নেভারল্যান্ডের লাইব্রেরিতে ছিল বিপুল সংখ্যক বইয়ের সমাহার। এসব বইয়ের মধ্যে বড় একটি অংশ ছিল চামড়ায় বাঁধানো। 

পশুপ্রেমী হিসেবেও সুখ্যাতি ছিল মাইকেল জ্যাকসনের। তাই নেভারল্যান্ডেও মানুষের পাশাপাশি জায়গা করে নিয়েছিল বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য পশুপাখি। এসবের মধ্যে ছিল ‘থ্রিলার’ এবং ‘সাবু’ নামের দুটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার, ‘জিপসি’ নামক একটি এশিয়ান হাতি, যা মাইকেলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এলিজাবেথ টেলর তাকে উপহার দিয়েছিলেন। সরিসৃপের মধ্যে ছিল ‘ম্যাডোনা’ নামের একটি অজগর এবং ‘মাসল’ নামের একটি বোয়া কন্সট্রিক্টর। নেভারল্যান্ডে আরও ছিল চারটি জিরাফ, তিনটি শিম্পাঞ্জি, ম্যাকাও, অ্যালিগেটর, চিলিয়ান ফ্ল্যামেঙ্গোসহ আরও অসংখ্য পশুপাখি।

নেভারল্যান্ডে পশু-পাখির সাথে মাইকেল জ্যাকসন; Image Source: innermichael.com

অবশ্য এসব বন্যপ্রাণীকে নিজের কাছে রাখার জন্য মাইকেলের বিরুদ্ধে প্রাণী অধিকার সংস্থাগুলো সর্বদাই সোচ্চার ছিল। তবে মাইকেল যতদিন নেভারল্যান্ডে ছিলেন ততদিন শত সমালোচনাও তাকে এসব প্রাণীকে নিজের কাছে রাখা থেকে বিরত রাখতে পারেনি।

নেভারল্যান্ডে মাইকেল জ্যাকসন একটি নিজস্ব মুভি থিয়েটার তৈরি করেছিলেন। পঞ্চাশ সিটের সেই থিয়েটারটির এককোনায় বিভিন্ন ধরনের চকলেট, আইসক্রিম, পপকর্ন এবং কোমল পানীয় রাখা থাকত। থিয়েটারের প্রজেকশন রুমের দুই পাশে ছিল দুটি বিশেষভাবে তৈরি কক্ষ। সেসব কক্ষে যাবতীয় চিকিৎসা সুবিধা পাওয়া যেত। থিয়েটারের পেছনের দিকে তৈরি করা হয়েছিল একটি নৃত্য কক্ষ।

নেভারল্যান্ডের মুভি থিয়েটার; Image Source: The Irish Times

মাইকেল জ্যাকসনের স্বপ্নের খামারবাড়িটিতে ছিল একটি টেনিস ও বাস্কেটবল কোর্ট। আরও ছিল ১৪ ফুট গভীর একটি সুইমিং পুল। এমনকি নেভারল্যান্ডের ছিল নিজস্ব একটি ফায়ার ডিপার্টমেন্ট।

মাইকেল জ্যাকসন তার নেভারল্যান্ডে বেশ কিছু বড় বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। এসবের মধ্যে তার প্রিয় বন্ধু এলিজাবেথ টেলরের সপ্তম বিয়ের অনুষ্ঠান উল্লেখযোগ্য। এলিজাবেথের বিয়ে উপলক্ষে নেভারল্যান্ডের সাজসজ্জার জন্য মাইকেল জ্যাকসন প্রায় ১.৩ মিলিয়ন ডলার খরচ করেছিলেন।

নেভারল্যান্ডে মাইকেল জ্যাকসন এবং এলিজাবেথ টেলর; Image Soruce: wideopenpets.com

এলিজাবেথ টেলরের মতো মাইকেলের আরেকজন কাছের মানুষ ছিলেন একাধিকবার অস্কার জয়ী অভিনেতা মার্লোন ব্র্যান্ডো। ব্র্যান্ডোর ছেলের বিয়েও অনুষ্ঠিত হয়েছিল নেভারল্যান্ড র‍্যাঞ্চে।

মাইকেল জ্যাকসনের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকবার শিশু নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছিল। ১৯৯৩ সালে এমনই একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশ মাইকেলের বাসভবন নেভারল্যান্ডে অভিযান চালায়। কিন্তু আগে থেকেই এ ব্যাপারে অবগত থাকায় মাইকেল তার গুরুত্বপূর্ণ সবকিছুই সরিয়ে ফেলেন। ফলে পুলিশ গোটা নেভারল্যান্ড জুড়ে অভিযান চালিয়েও সন্দেহজনক কিছুই খুঁজে পায়নি।

১৮ নভেম্বর, ২০০৩ তারিখে মাইকেল জ্যাকসন লাস ভেগাসে “One more chance” নামের একটি গানের ভিডিও শুটিংয়ে ব্যস্ত ছিলেন। ঐ দিন প্রায় ৭০ জন পুলিশের একটি দল দ্বিতীয়বারের মতো নেভারল্যান্ডে তল্লাশী চালায়। অভিযোগ ছিল একই– শিশু নির্যাতন। এই ঘটনার পর মাইকেল মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। লাস ভেগাস থেকে সোজা চলে যান বাহ্‌রাইনে। পরবর্তীতে তিনি আমেরিকায় ফিরে এলেও নেভারল্যান্ডে আর কখনো পা রাখেননি। তবে তখনো নেভারল্যান্ডের মালিকানা তারই ছিল।

নেভারল্যান্ডে মাইকেল জ্যাকসন; Image Source: architechturaldigest.com

ধীরে ধীরে মাইকেলের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপের দিকে যেতে থাকে। অভিযোগ ছিল তিনি কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছিলেন না। ২০০৬ সালে কর্তৃপক্ষ তাকে ১ লক্ষ ৬৯ হাজার ডলার জরিমানা করে, কারণ তিনি দুই মাস ধরে ৩০ জন কর্মচারীর বেতন পরিশোধ করতে পারেননি। ২০০৭ সালের দিকে নেভারল্যান্ড কর্মচারীবিহীন একটি পরিত্যক্ত খামারবাড়িতে পরিণত হয়। এর বিভিন্ন সুবিধা একে একে বন্ধ হয়ে যেতে থাকে।

নেভারল্যান্ড রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বছরে খরচ হত প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলার। ২০০৭ সালের দিকে মাইকেলের অর্থনৈতিক অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে যায় যে, এই বিশাল অর্থের যোগান দেয়া তার পক্ষে আর সম্ভব ছিল না। ফলে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ঋণের বোঝা। ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ক্যালিফোর্নিয়া কর্তৃপক্ষ একটি নোটিশ প্রকাশ করে, যেখানে বলা হয়, নেভারল্যান্ডের খরচ বাবদ প্রায় দুই কোটি ডলারের মতো অর্থ বকেয়া আছে। মাইকেল এই অর্থ পরিশোধ করতে না পারলে তার নেভারল্যান্ড নিলামে বিক্রি করে দেয়া হবে। অবশ্য পরবর্তীতে কর্তৃপক্ষের সাথে একটি সমঝোতা চুক্তি করে মাইকেল তার নেভারল্যান্ডকে নিলামে ওঠার হাত থেকে রক্ষা করেন।

নেভারল্যান্ডের প্রবেশদ্বার; Image Source: thepinnaclelist.com

২৫ জুন ২০০৯ তারিখে মাইকেল জ্যাকসন তার লস অ্যাঞ্জেলেসের একটি অ্যাপার্টমেন্টে মৃত্যু বরণ করেন। বিশ্বজুড়ে তার অগণিত ভক্ত দাবি করে, তাকে যেন তার স্বপ্নের নেভারল্যান্ডেই চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। কিন্তু মাইকেলের পরিবারের কয়েকজন সদস্যের আপত্তি এবং কিছু আইনি জটিলতার কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে তাকে ফরেস্ট লনের একটি সমাধিক্ষেত্রে সমাহিত করা হয়।

ফরেস্ট লনে পপ সম্রাটের অন্তিম শয়ন হলেও তার ভক্তদের নেভারল্যান্ডে আসা থেকে বিরত রাখা যায়নি। সারা বিশ্ব থেকে হাজার হাজার ভক্ত তাদের প্রিয় গায়ককে শ্রদ্ধা জানাতে নেভারল্যান্ডে ভিড় জমায়। মাইকেলের প্রতি ভক্তদের আবেগাপ্লুত বাণীতে ছেয়ে যায় নেভারল্যান্ডের দেয়াল। নেভারল্যান্ডে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায় বিপুল সংখ্যক ভক্তের পার্ক করা গাড়ির কারণে।

মাইকেল জ্যাকসনের মৃত্যুর পর নেভারল্যান্ডের দেয়াল ছেয়ে যায় মাইকেলের প্রতি ভক্তদের ভালোবাসায়; Image Source: Theme Park Tourist

২০০৮ সালে হওয়া চুক্তি অনুযায়ী নেভারল্যান্ডের কতটুকু শেয়ার মাইকেলের ছিল তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। পরবর্তীতে তিনি নেভারল্যান্ডের কিছু শেয়ার বিক্রিও করে দিয়েছিলেন বলে শোনা যায়। এছাড়াও নেভারল্যান্ডের অন্য অংশীদার ‘কলোনি ক্যাপিটাল’ খামারবাড়িটিকে নতুনভাবে সাজানোর জন্য বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ করে। ফলে নেভারল্যান্ডে মাইকেলের যেটুকুও শেয়ার ছিল তা-ও শেষ হয়ে যায়। তাই মাইকেল জ্যাকসনের মৃত্যুর পর তার পরিবার নেভারল্যান্ডের মালিকানা আর ধরে রাখতে পারেনি।

২০১৫ সালে কলোনি ক্যাপিটাল নেভারল্যান্ডের নাম পরিবর্তন করে পুনরায় সিকামোর ভ্যালি র‍্যাঞ্চ রাখে। পুনরায় বিক্রির জন্য এর মূল্য নির্ধারণ করা হয় ১০০ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু এই মূল্যে কেউ কিনতে রাজি না হওয়ায় ২০১৭ সালের দিকে এসে এর দাম কমিয়ে করা হয় ৬৭ মিলিয়ন ডলার। এরপরও কেউ আগ্রহ না দেখালে ২০১৯ সালে পুনরায় দাম কমিয়ে রাখা হয় ৩১ মিলিয়ন ডলার।

বর্তমানে এই দামেই বিক্রির অপেক্ষায় প্রহর গুনছে মাইকেল জ্যাকসনের নেভারল্যান্ড। নাম পরিবর্তিত হয়ে সিকামোর ভ্যালি র‍্যাঞ্চ হলেও মাইকেলের ভক্তদের অন্তরে এই খামারবাড়ি চিরকালই থেকে যাবে ‘নেভারল্যান্ড ভ্যালি র‍্যাঞ্চ’ হিসেবে। 

This article is in Bengali language. It is about the dream house of the king of pop Michael Jacson - Nevarland Ranch. Necessary references have been hyperlinked inside.

Featured Image : Architechtural Digest 

Related Articles